ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (২৬)

0
566

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(২৬)
লাবিবার জল্পনা কল্পনা কে মিথ্যে করে দিয়ে তানভীর কিছুই বললো না। রুটিন বের করে নিজের ফোনটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে লাবিবার ফোনটা হাতে তুললো। সিম টা বের করে নতুন সিমটা তুলে দিলো। বিছানায় রেখে লাবিবার দিকে তাকাতেই দেখলো লাবিবা মাথায় হাত দিয়ে বসেছে। তানভীর তাচ্ছিল্য সুরে হাসলো।
” বিশেষ কাউকে মাথায় তুলে রাখলে তাকে সরিয়ে এখন এক্সামের চিন্তা মাথায় ঢুকাও।”

” আপনাকেও?”

” আমাকেও কি?”

” কিছুনা। ”

লাবিবা নিজের হুয়াটস এপ এ রুটিনটা সেন্ড করে দেয় ‌ ।ফোনটা তানভীরের হাতে দেয়। তানভীর পকেটে ঢুকিয়ে রুম ত্যাগ করে। লাবিবা বন্ধ করা দম ছাড়ে। এতোক্ষন শুধু শুধু টেনশন করছিলো। কত ভালো জামাই! কিছুই বললোনা তাই নিজেকেই খানিক বকা দিলো। রুম থেকে বের হয়ে তানভীর কে খুঁজলো। না পেয়ে সাবিনার কাছে গেলো।
“আম্মু উনাকে দেখেছো?”

সাবিনা কেমন যেনো মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। লাবিবার দিকে তাকালোও না। হলোটা কি?
” আম্মু? উনি কি চলে গেছে?”

এবার সাবিনা লাবিবার দিকে তাকালো। এগিয়ে এসে গো ধরে বললো,
” হ্যা। চলে গেছে। বাঁচা গেছে। ভীমরতি যখন ছাড়বে প্লিজ ডেকে নিয়ে ভালো ভাবে থেকো। আমার যেন কখনো মাথা না হেড হয়। ”

লাবিবা বুঝলো কেন এতো রাগ! তানভীর নিশ্চয় সব বলে দিয়েছে। ভয়ে ভয়েই বললো,
” উনি কি কিছু বলেছে তোমাকে? আম্মু বিশ্বাস করো আমি কিছুই করিনি। ”

” তোমার কি করে মনে হয় তানভীরের মতো ছেলে এরকম একটা ব্যাপারে আমাকে বলতে আসবে? তার শিক্ষা দীক্ষা তোমার থেকে অনেক উপরে। তোমার সেই ফাহাদের বাবা ফোন দিয়েছিলো। ক্ষমা চেয়েছে।”

” ফাহাদ কিভাবে আমার হয় আম্মু? তাকে তো তোমরাই ধরে এনেছিলে। ”

” এনেছিলাম যেমন তারিয়ে দিয়ে ভালো ছেলে দেখে বিয়েও দিয়েছি। তারপরেও তুমি আড়ালে কিভাবে তার সাথে দেখা করতে যাও তাও আবার ক্লাস ফাঁকি দিয়ে?”

” দেখা হয়ে গিয়েছিলো আম্মু। আমি নিজে থেকে দেখা করিনি। ”

” আচ্ছা যাই হোক। এমনটা যেনো আর না হয়। যাও নিজের রুমে যাও। পড়াশোনা করো। ”

” তুমি কেন উনাকে আটকালেনা আম্মু ?” বলেই লাবিবা হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলো। ফুফাতে ফুফাতেই পেটের কথা বলে দিলো।
” উনি আমার উপর রাগ করে আরো দূরে সরে গেলো আম্মু। একটু ভালো করে কথা না বলেই চলে গেল আম্মু। দায়িত্ব পালন করেই তো গেল ।আর কি লাগে?”

লাবিবার হটাৎ এমন ব্যবহারে হকচকিয়ে গেলো সাবিনা। কিন্তু তার রাগ কমলো না।‌ ধমকে বললো,
” কান্না থামাও। কান্না করার মতো কিছু হয়নি। এখন রাগ করেছে, রাগ পরে গেলে ঠিকই আসবে। রুমে যাও তোমাকে ক্লান্ত লাগছে।”

লাবিবা জেদ ধরলো, ” তোমাদের জামাইকে এক্ষুনি ডাকো আম্মু । আমার উনাকে লাগবে। ”

” চুপ কর বেশরম মেয়ে। মুখে কিছুই আটকায় না। কয়দিন থেকে দেখছি এরকম অভস্য কথা বলতে। মুখে লাগাম টানো এবার। বিয়ে দিয়েছি ‌। আল্লাহ আমার মেয়েটার বোধ বুদ্ধি হোক।”

বুঝলো না। লাবিবার ভয়, লাবিবার আহাজারি কেউ বুঝলো না। মাকে বেশরমের মতো বলেও বোঝাতে পারলোনা। ব্যর্থ লাবিবা। নতুন সিম তাই কারো নাম্বার ও খোঁজে পেলোনা। পেলে হয়তো উর্মিলার সাথে শেয়ার করতে পারতো। তানভীরের নাম্বার মুখস্থ বিধায় তাকেই কল দিলো। ধরলো না। একে একে পাঁচ বার কল দিলো। তাও ধরলোনা। ছয়বারের সময় ধরলো। লাবিবাই প্রশ্ন করলো,
” কোথায় চলে গেলেন?”

” যাইনি। ”

” এখন কোথায়?”

” আছি। উঠোনেই। ”

এই উত্তর টুকুই যথেষ্ট ছিল লাবিবার জন্যে। আর দিক বেদিক তাকালো না। দৌড়ে কেচি গেইট খুলে চলে গেলো উঠোনে। ঠান্ডার মাঝেই টুলে বসে সিগারেট ফুকছে তানভীর। সাথে আরেকজনও আছে। কবির। কবির আগে থেকেই চেইন স্মোকার। তার থেকেই তানভীরের আজকের স্মোক করা। লাবিবাকে দেখেই প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া সিগারেট টা ফেলে পায়ে পিষে দিলো। তানভীর বিষয়টা খেয়াল করলো। ঘাড় ঘুরিয়ে লাবিবাকে একপলক দেখলো। কিছু না বলে উঠে গেইট পেরিয়ে বাইরে চলে গেলো। এদিকটায় অন্ধকার। বাল্ব লাগানো হয়নি। লাবিবাও পিছু পিছু গেলো। গেইটে দাড়াতেই সাদা গাড়িটি চোখে পড়লো। গাড়ির আড়ালে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছে তানভীর। একহাতে সিগারেট আরেকহাত প্যান্টের পকেটে। আবছা আলোয় লাবিবা খেয়াল করলো তাকে। সাদা শার্ট কালো প্যান্ট ফর্মাল গ্যাটাপে হাতে সিগারেট। কি অভাবনীয়! এই প্রথম চির অপছন্দের সিগারেট টাকেও যেনো লাবিবার ভালো লাগলো। এই সিগারেট উদ্ভাবন ই হয়েছে তানভীরের হাতে শোভা পাওয়ার জন্য। লাবিবার মোটেই গা ঘিন ঘিন করলো না। বমিও পেলোনা। যেটুকু খারাপ স্মেল পাচ্ছিলো সেটুকুও নাক চেপে বন্ধ করে দিলো। লাবিবার অস্তিত্ব বুঝতেই তানভীর ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। লাবিবা যেন একবার হার্টবিট মিস করলো। অন্যরকম একটা ফিলিংস কাজ করলো। তানভীরের আশেপাশে এলেই সময় অসময়ে এমন ফিলিংস হয়। নবযৌবনের প্রথম প্রেমে পড়ার ফিলিংস। সেটা জেনেই চলে লাবিবার পদক্ষেপ।‌ লাবিবার সবাইকে ডেকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে,
” এইযে জলন্ত সিগারেট হাতে দাঁড়ানো মানুষটি, সে আমার স্বামী। আমার ব্যক্তিগত পুরুষ। আমার অর্ধাঙ্গ। জান্নাতের সাথী। আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি। কারণ ছাড়াই ভালোবাসি। ”

লাবিবার মনে হয় তানভীরের চোখ দুটো লাল। রক্তিম লাল। সে চোখে চোখ রাখতে লাবিবার অস্বস্তি হচ্ছে। লাবিবা উশখুশ করে উঠে। তানভীর ভাবে লাবিবার কষ্ট হচ্ছে। তাই পিছিয়ে যায়। অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা গলায় বলে,” বাসায় যাও। তোমার কষ্ট হচ্ছে। ”

” আপনি রেগুলার স্মোক করেন?”

” উহু। আমি সিগারেট খাই না। ”

লাবিবার হাসি পেয়ে যায়। হাসতে হাসতেই বলে,
” তো এখন কি খাচ্ছেন?”

” ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে। ”

” সিগারেট কখনও তেষ্টা মেটায় না। পানি আনবো আপনার জন্য? ”

” না। তোমার ঠোট দুটো চুষতে দাও। আমার তেষ্টা মিটে যাবে। ”

লাবিবার হাসি মুখ নিমেষেই বুঝে যায়। কি অসভ্য কথা! উপস্থিত লাবিবা উল্টোপিঠে কি জবাব দিবে আমতা আমতা করতে থাকে। ঝটপট কথা ঘুরিয়ে ফেলে।
” আপনার চোখ এতো লাল কেনো? ”

” দিবে? ”

আবার সেই প্রসঙ্গ। লাবিবা একবার তানভীরের চোখে চোখ রাখতে চায়। কিন্তু ব্যর্থ হয়। পাশ ঘুরে তাকায়। জোর গলায় বলে,
” প্লিজ আপনি ওভাবে তাকাবেন না। আমি আপনার চোখে চোখ রাখতে পারছিনা। আমার ভীষণ ভয় করে।”

” ভীতুর ডিম।‌”

” মিথ্যা।”

” সত্যটা কি? লজ্জাবতী লাবিবা ?”

” একদম না।”

” কিন্তু আমি তো দেখছি তোমার গাল দুটো ক্রমশ লাল হয়ে উঠছে। বিশ্বাস হচ্ছে না? ওয়েট। ”

তানভীর গাড়ির ভেতরকার লাইট জ্বালিয়ে দেয়। বাইরেও আলো এসে পরে। গ্লাসে আঙুল দিয়ে দেখায় ।
” লুক। নিজেই নিজেকে দেখে নাও।”

লাবিবা চোখ তুলে তাকানোর ফুরসৎ ও পায়না। পৃথিবীর সব লজ্জা তাকে চাঁপা দিয়ে দেয়। সদা নিলজ্জ লাবিবার ভাগ্যে এতোটা লজ্জা জমা ছিলো কে জানতো? তানভীর না এলে জানাই হতো না। লাবিবা নিজেকে আড়াল করতে দৌড় দেয়। তানভীর চেঁচিয়ে বলে,
” আমাকে তেষ্টা মেটাতে না দিলে আমি কিন্তু বাসায় যাবো না।”

লজ্জানত লাবিবা শুনলো। কিন্তু পাত্তা দিলে তো! সেদিন কার একটু চুমোর দৃশ্যই সে ভুলতে পারেনা। প্রতিরাতে মনে পড়তেই বালিশ চাঁপা দেয় মুখের উপরে। আর এভাবে সরাসরি নির্লজ্জ ভাবে প্রপোজাল! লাবিবার আর এ অঞ্চলে থাকার ইচ্ছে থাকলেতো? রুমে ঢুকে সে কম্বলে নিজেকে লুকালো।

ঘন্টাখানেক পর নিজেকে সামলে বেরিয়েও এলো। শুধু কবিরকেই পেলো।
” ভাইয়া উনি কোথায় গেলো?”

” চলে গেলো বললো। ”

” ফোন দাও না একটা।”

কবির তানভীরকে কল করলো। প্রথম বারেই রিসিভ হলো।
” হ্যালো। কোথায় তুই?”

” গাড়িতে আছি। ”

” বাসায় আয়। লাবিবা ওয়েট করছে। ”

” চলে এসেছি। আর যাচ্ছিনা। ”

কবির লাবিবার দিকে তাকায়। লাবিবার উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে। কবির মুখ চেপে হাসে।
” দোস্ত তুই না এলে একজনের কষ্ট হবে।”

” হোক। ”

” নিষ্ঠুর শালা! আমার বোনকে কষ্ট দেওয়া?”

” সরি। আমি আমার বউকে ছাড়া কাউকে কষ্ট দেই না।”

” আসবিনা?”

” নাহ।”

কবির অসহায় মুখ করে তাকায়। তারই বা কি করার আছে? লাবিবা ভীষণ ব্যথিত হয়। আরেকটু আগে এলেই তো আটকানো যেত। কবির তাড়া দেয়।
” ঘরে যা। তানভীর আসবে না।”

লাবিবার মনে একটা প্রশ্নের উদয় ঘটে। প্রশ্নটার উত্তর জানতে চায়।
” ভাইয়া তুমি স্যারকে দোস্ত বলে সম্বোধন করলে কেন? তোমার সব ফ্রেন্ডদের তো আমি চিনি। স্যার তো তোমার সিনিয়র হয়। ”

” হ্যা। ঐতো ফ্রেন্ড হয়ে গেলো। ”

” কই আমি তো জানিনা? সমন্ধি হয়ে একসাথে সিগারেট ফুকছো। তোমরা তুই তুকারি করেও কথা বলছো। উনি কিভাবে তোমার ফ্রেন্ড হলো?”

” তোর জন্যই তো হলো। ”

” তুমি উনাকে তাহলে আগে থেকেই চেনো? আমাকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর পরই যে বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিলে এর জন্যই তো । তুমি বলো স্যার তোমাদের চেনা জানা ছিলো। তোমার মনে মনে তাহলে এই ছিলো! ”

লাবিবার কথায় কবির প্রাণবন্ত হাসে। লাবিবা অস্থির হয়ে উঠলো। কবিরের হাত চেপে ধরলো। উত্তেজিত হয়ে জানতে চাইলো,
” ভাইয়া সেদিন হসপিটালে কে এই বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছিল? কোনো আগাম কথা বার্তা ছাড়া হুট করেই স্যারের সাথে আমার কিভাবে সমন্ধের কথা উঠতে পারে? স্যারের সাথে আমার তো অনেক ফারাক। সবদিক থেকেই ফারাক। আব্বুর হাতে তখনো কত অপশন! স্যারই কিভাবে রাজি হলো? আমি বুঝতে পারছি তুমিই এসব করেছো। তবুও তুমি বলো। আমি জানতে চাই ভাইয়া। আমার বিয়েটা কিভাবে হলো?”

” তানভীর খানকে বোন জামাই হিসেবে কার না পছন্দ?”

” এই প্রপোজাল তাহলে তুমিই রেখেছো।”

” কাকা যখন বেশ অসুস্থ তোকে নিয়ে চিন্তিত, আমি তানভীরের নামটা উত্থাপন করতে চাইলাম। তানভীর তোকে বিয়ে করতে প্রস্তুত কিনা সেটাও জানার বিষয় ছিলো। বুদ্ধি করে নিতু ম্যামকে মাধ্যম হিসেবে নিলাম। মেডাম তো তুই বলতে অজ্ঞান! সাথে ছিলো তামিম ভাই। কাকার ও রিজেক্ট করার কোনো অপশন ছিলো না। একদম চেপে ধরা হয়েছিল।”

” স্যার কেন রাজি হলো?”

” তোর জন্য। পরিস্থিতিটাই সেরকম ছিলো। সব দিক বিবেচনা করেই তোকে একদিনের ভেতরেই সাদামাটা ভাবে বিয়েটা করে নিলো।”

চলবে __

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here