ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (৩০)

0
660

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৩০)
তানভীরের জানা ছিল লাবিবার সেলফোন একটি। ইভেন এটা সবাই জানে। জানেনা লাবিবার আরেকটি ফোন আছে। তানভীরও হয়তো জানতো না যদি না লাবিবাকে বই দিয়ে ব্যস্ত রাখতো আর না লাবিবার পরিক্ষা থাকতো। ওয়াড্রোবের থার্ড পার্ট পুরোটাই খালি শুধু পরে আছে ব্লু কভারে ঢাকা ফোনটা। ফোনে লক ছাড়াতে তানভীরের সময় লাগেনি। মেয়েটা বোধ হয় নিজেকে অসম্ভব ভালোবাসে।‌ নামটাকেও। সেজন্য নাম দিয়েই সমস্ত লক দেওয়া। মানুষ আজকাল চালাক হয়ে গেছে। নিজের নামে লক দেওয়া বড্ড কমন। এটা এখন কেউ দেয়না। সেজন্যই উল্টোটাই করেছে সে। এয়ারটেল সিম। শুধু দুটো নাম্বারে কনভারসেশন। দুটো নাম্বারই তানভীরের চেনা।‌ কনভারসেশন স্কল করে দেখতে দেখতে তানভীরের কপালের রগ ফুলে উঠে। তার সহজ সরল বউটার তাহলে এভাবে ব্রেইন ওয়াশ করা হচ্ছে? প্রথম নাম্বারটার কনভারসেশন দেখেই তানভীর রাগ সংবরণ করতে পারলো না। তাই দ্বিতীয়তা দেখার সুযোগ পেলো না। নিজের ফোন বের করে কল লাগালো ফ্লোরার কাছে। ফ্লোরা ফোন কানে তুলেই তানভীর কে ঝেড়ে দিল।
” যখনই তামিমের কাছাকাছি যেতে চাই তখনই তুমি এই তুমিই আমার পথ আটকে ধরো। কারণ কি তানভীর? আর কী চাও তুমি? ”

” তুমি নিশ্চয় এখন বলবে না যে তুমি ভাইয়ার হসপিটালে। ”

” তাছাড়া কোথায় যাব? আমার আশ্রয় একমাত্র তোমার ভাইয়ার কাছেই। ”

তানভীর হাত মুঠো করে নিজের রাগ সংবরণ করে নিলো।
” তুমি আবার আমার ক্ষতি করতে চাইছো। আমার সংসারে নজর দিতে কলিজা কাপলোঁ না তোমার? চোখ তুলে ফেলবো না আমি?”

“আমি সর্বশান্ত তানভীর। আমার সংসার আমাকে ফিরিয়ে দাও। আমি তোমার সংসার সুন্দর করে দিব।”

” নিজের লিমিট ক্রস করোনা প্লিজ। ”

” আমার কোন ভয় নেই তানভীর। বছরের পর বছর আমি ক্ষমা চেয়ে যাচ্ছি। নিজের সংসার ফিরে চাইছি তুমি তো আমাকে হেল্প করছোই না বরং মজা নিচ্ছ। আর কি চাও তুমি? তুমি কি মনে করো তুমি বড় গেমার? তোমার থেকে বড় গেমার একজন আছে। সে তোমার বউ। যার সাধ্য আছে তোমাকে গোল দেওয়ার। তোমার প্রধান দূর্বলতা হবার। আমাকে এর মধ্যে টেনো না। আমি তোমার উপকার করার জন্য বসে আছি না।”

” উপকার চাইনি তোমার থেকে।‌ অপকারও না। প্লিজ দূরে থাকো। তুমি যদি সত্যিই তোমার আমার সম্পর্ক আছে এই মিথ্যেটা আমার বউকে বলে থাকো তোমার তোমার মুখের খুলি ও আমি রাখবো না।”

” ওহ কাম অন তানভীর।যেচে পরে কেউ নিজের ক্ষতি করতে যায়না। আমি করেছি তার শাস্তি ভোগ করছি। তার মানে এই না যে আমি আবার ভূল করবো। আমি যে সংসারে ফিরতে চাইছি সে সংসারেরই নতুন মেম্বার লাবিবা। আমার ঝা আর তুমি আমার দেবর। আমাকে কেউ মেরে পিটে এক করলেও তো আমি বলবোনা তোমার সাথে আমার পরকিয়া চলছে।‌ তোমাকে আগেও আমি ছোট ভাইয়ের মতো দেখেছি সারাজীবনই দেখবো । বরং লাবিবাই আমাকে একথা জিজ্ঞেস করেছে তোমার আমার সম্পর্ক আছে কিনা। আবশ্যই আমাদের সম্পর্ক আছে। আমরা এক ফ্যামিলির মেম্বার। আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা? আমি স্বীকার করেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে তোমার ভাইয়াকে, মমকে , পাপাকে, বাড়ির প্রত্যেকটা মেইডকে আমি ভুলতে পারিনি। ভীষণ ভালোবাসি। তুমি আমাকে ভালোবাসো এটাও বলেছি। অবশ্যই তুমি আমাকে ভালোবাসো তানভীর। তোমার ভাইয়ার সাথে সম্পর্কের শুরু থেকে তুমি আমাকে হেল্প করেছ। আপু আপু বলে মাথায় তুলে রেখেছ ।এখনো আমাকে এড়িয়ে যেতে পারো না। আমার সেফটির ক্ষেত্রেও যে তোমার হাত আছে এটা আমার ধারণা। এখনো যদি আমাকে ভালো না বসো তাহলে কোনো মতেই আমাকে এতোটা ইমপর্টেন্স দিতে না। তোমাদের আমি চিনি তানভীর। প্লিজ আমাকে আর নতুন করে চেনাতে এসো না। বরং এটা ভাবো লাবিবা এই কথা কি করে জানে? অন্য এলাকার দুদিনের মেয়ে তোমার লাইফের সিক্রেট কথা জেনে বসে আছে। তুমি বাইরে টেক্কা দিলেও ঘরে লাবিবাই তোমাকে টেক্কা দিবে তানভীর।”

” সেটা একান্তই আমার ব্যপার। তুমি কান খুলে শুনে রাখো লাবিবার সাথে টোটালি যোগাযোগ করবে না।”

” অফকোর্স আমার মনে থাকবে। তবে লাবিবা যদি আসে আমি কিন্তু তাকে ফেরাবো না। ভীষণ মিস্টি মেয়ে।খুব মায়া পড়ে গেছে। আপন মানুষ বলে কথা!”

তানভীর আর ঘাটায় না। ফ্লোরা মিথ্যে বলবেনা। তাহলে কে দিলো লাবিবাকে খবরটা?
” আমি নিজেই জোগাড় করেছি। এতো চাপ নিবেন না।”

লাবিবা তানভীরের সামনে এসে দাঁড়ায়। হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়। তানভীর কে মিস্টি হেসে বলে,
” থামবেন না। প্রেমিকার সাথে কথা বলুন। আর আমার ফোন হাতে নিবেন না। এটা আমার টাকায় কেনা।‌ আপনার টাকায় না।”

তানভীর লাবিবার কথায় মোটেই মাইন্ড করলো না। মুচকি হেসে লাবিবার কনুই চেপে কাছে আনলো। কানের পাশের চুল গুলো আলতো হাতে গুছিয়ে দিলো। লাবিবা সঙ্গে সঙ্গে হাতটা প্রবল বেগে সরিয়ে দিলো। সরে দাঁড়াতে চাইলো। কিন্তু পারলো না। তানভীর দু হাতের বাঁধনে বেঁধে ফেললো।
” উফফফ ছাড়ুন। স্যার।”

” চুপ! কথা বলো না।”

” মুখ আছে কি করতে? ”

” কথা বলতে। আপাতত চুপচাপ আমার কাছে থাকো।”

” স্যার আপনাকে মোটেও সুবিধার লাগছে না। আপনার প্রেমিকার সাথে কি ঝগড়া হয়েছে যে আপনি আমাকে চেপে ধরে রিভেঞ্জ নিচ্ছেন? ছবি তুলে দিব স্যার? কাউকে ডাকি? রতন, এই রতন”

” রতনকে কেনো ডাকছো কেন?”

” ছবি তুলে দিবে । তারপর আপনি আপনার প্রেমিকার কাছে পাঠাবেন। আমাদের দুজনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে আপনার প্রেমিকার বুকে চিনচিন চিনচিন ব্যথা শুরু হবে। বুক চেপে ধরে দৌড়ে আপনার কাছে চলে আসবে। তানভীর! মাই সুইট হার্ট! আহ।”

ব্যথায় কুঁকড়ে যায় একদম। তানভীর ছাড়েনি এখনো থুতনিটা। একদম বসিয়ে দিয়েছে সামনের দাঁতগুলো। ছেড়ে দিতেই দু হাতে চেপে ধরে। দু পা পেছোতে চায় সেটাও পারেনা তানভীর আগলে নেয়। জল ছলছল চোখ দুটোর সাথে চোখ মেলায়।‌
” কেমন অনুভব হয়? বুক চিনচিন ব্যথা! মাত্রাতিরিক্ত না? ফ্লোরার সাথে দেখে একদমই সহ্য করতে পারোনি। চুলগুলো ধরে কি টানা টাই না টানলে। দেখ মাথা মাঝখানে কয়েকটা জায়গা ফাঁকা। সব গুলো চুল তুলে ফেলেছ। ছয়টা দিন ব্যথা করেছে। মুখ ঢেকে আছো কেন? হাত সরাও। দেখি কতটা দাগ হল?”

” রা-রাক্ষস!”

” আমার ভালো মানুষীও তো তোমার পছন্দ না। ”

” ছাড়ুন আমাকে। আমি আপনার সাথে থাকবো না।”

” এতো অভিমান কিসের? আমি কি তোমাকে ছেড়ে গেছি? যায়নি তো। নাকি তোমার খেয়াল রাখি না?”

” কোনটাই করেন না।”

” ছেলেমানুষী করে না বউ। ট্রাই টু আন্ডারস্টেন্ড মি। আম হেয়ার না? ট্রাস্ট মি। তোমাকে ছাড়া আমি কোথাও যাচ্ছি না।”

” সরবেন আপনি? সহ্য হচ্ছে না এসব আমার। আপনাকেও না। কি চান আপনি? হুট করে জেঁকে বসবেন। মানিয়ে নিতে চাইলে ভালোবাসতে চাইলে দূরে দূরে থাকবেন আবার যখন আপনাকে মুক্তি দিতে চাইছি তখন কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছেন। ফাজলামি পেয়েছেন? বের হন আমার বাড়ি থেকে। এক্ষুনি বের হন। ”

” লাবিবা মাথা খারাপ করোনা। শান্ত হও। কথা শুনো আমার।”

” কিচ্ছু শুনবোনা। আপনি যাবেন এখান থেকে। আমি তো আপনার বাসায় যেতে চাইছি না।”

প্রচন্ড অপমান নিয়ে বের হয়ে যায় তানভীর। সাবিনা বুঝতে পেরে আটকানোর চেষ্টা করে তানভীরকে। কিন্তু পারে না।‌ বাকি পরিক্ষা গুলোতে তানভীর একদমি খোঁজ নিতে আসেনা। অতি শোকে কাতর লাবিবাও রেজাল্ট ভালো করতে পারেনা। এই প্রথম তিনটি সাবজেক্টেই ফেল আসে। একটুর জন্য ইয়ার লস হয়না। অনান্য সাবজেক্টে সি ডি ও রেজাল্ট আসে। এতটা খারাপ রেজাল্ট পেয়ে লাবিবার কোনো হুস নেই। লাবিবার রেজাল্টে চটেছে অনেক জনই। ইসমাইল বকে যাচ্ছে এক নাগাড়ে। শুধু লাবিবাকে নিয়ে পড়লেও একটা ব্যাপার ছিলো কিন্তু লাবিবাকে কম তানভীরকে দোষারোপ টা বেশী করা হচ্ছে। ইসমাইলের ভাষ্যমতে বিয়ে দিয়েই মেয়ের বারোটা বাজিয়েছেন। তানভীরের কারণেই আজ লাবিবার পড়াশোনার এই অবস্থা। মেয়ের পড়াশোনাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন সব সময়। পড়াশোনার যেনো ক্ষতি না হয় সে অনুযায়ী লাইফ স্যাট করার চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু এ পর্যায়ে যেনো হেরে গেলেন। এতোটা অধঃপতন হবে ভাবতে পারেন নি। তানভীরকে যতটা ধৈর্য্যশীল স্ট্রেট পার্সোনালিটি হিসেবে জানুক না কেনো আদতে সে তার মেয়ের জন্য উপযুক্ত মনে হচ্ছে না। লাবিবার যথেষ্ট পরিবর্তন তিনি খেয়াল করেছেন। এতোদিন তিনি গুরুত্ব না দিলেও এবার বাধ্য হয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর একটা সমাধান উনি করবেন বলে ঠিক করেছেন।

লাবিবার মন খারাপের দিনে তানভীর আর সাথী হলো না। হবেও না। কারণ লাবিবার এই অবস্থার জন্য সে নিজে দায়ী। একটু মনে হয় বেশীই নিজেকে অবহেলা করেছিলো তানভীরকে না পাওয়ার যন্ত্রনা সহ্য করতে গিয়ে। ফ্লোরা কিন্তু লাবিবার সাথে এখনো লেগে আছে। লাবিবা একটা বিষয় খেয়াল করেছে।‌অতি অহংকারী বলতে জানা এই মেয়েটার মনে অহংকারের ছিটেফোঁটাও নেই। আবার দূর্দান্ত তেজের সাথে কথা বলে। লাবিবার মন খারাপের দিনগুলো বিষিয়ে তুলতে সর্বদা উপস্থিত থাকবে। প্রথমেই দু চারটে এমন বাক্য আওড়াবে যাতে লাবিবার হৃদয় বিষিয়ে যাবে। অবশ্যই তা তানভীর আর তাকে মিলিয়ে লাবিবাকে কটাক্ষ করে। তার পরেই তার গল্পের ঢালা নিয়ে বসবে। প্রথম প্রথম খেয়ল না করলেও ইদানিং লাবিবা খেয়াল করে। ফ্লোরার প্রথম বাক্য গুলোর পর আর কোনো বাক্যে তানভীরের অস্বিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার! বরং ফ্লোরার পুরো গল্প তামিম কে নিয়ে। ফ্লোরা যে লাবিবাকে উস্কিয়ে দেবার জন্যই বলে এটা লাবিবা ধরতে পেরেছে। লাবিবার মনে সন্দেহের বীজ বপন হয়। ফ্লোরা আসলে চায় টা কি? তানভীরের সাথে তার কিসের শত্রুতা? লাবিবার সাথেই বা তার কি? এমন বিহেব করে যেনো লাবিবা তার আপনজন। লাবিবার মন ভালো করার জন্য তার আর তামিমের প্রচুর ফানি মমেন্ট শেয়ার করে। এমন এমন জোকস্ বলে যে হাসতে হাসতে লাবিবার চোখের কোনে জল চলে আসে। কোনভাবেই তাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। এখন মনে হচ্ছে আর পারবেও না। বরং ফ্লোরা যেভাবে চলতে বলে লাবিবার মনে হয় সেই পথ ই ঠিক। আর লাবিবা সেই পথেই চলে। তানভীরকে আর দূরে সরিয়ে দেয়না। বরং তানভীরকে পাশে রাখে সবসময়। বাধন ছাড়া মানুষের মতো তানভীরের সামনেই যা ইচ্ছা তাই করে।

চলবে ___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here