ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (৮)

0
594

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৮)
অপ্রত্যাশিত কিছু হুট করে পেয়ে গেলে একটু চমকে যাওয়াটা স্বাভাবিক। তানভীর খানকে প্রথমে লাবিবা অপ্রত্যাশিত ভেবেই চমকালো। পরক্ষনেই মনে পরলো আজ সে যে কাজের জন্য এখানে উপস্থিত হয়েছে তানভীর খান হচ্ছে সেই মাধ্যম। দৃষ্টি তার নড়বড়ে। সরাসরি তাকানোর সাহস হয়ে উঠেনি। চোখ দুটো এখনো উরুর উপর রাখা লম্বা আঙুলের হাতকে ছাড়িয়ে যায়নি। বরং দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। লাবিবাকে কেউ কখনো কোন ছেলের দিকে অন্য নজরে তাকাতে দেখেনি। শত চার্মিং বয় ও যদি একবার চোখে পরে ফের ঘুরে দ্বিতীয় বার তাকে কখনোই দেখাবে না। এতসব চার্মিং,হ্যান্ডসাম, বডি ওয়ালাকে লাবিবা ভয় পায়। আকর্ষন খুবই খারাপ জিনিস। বিরাট ভাবে জেঁকে বসে। ধীরে ধীরে অতলে টেনে নেয়। সমাজ ধর্মে কলুষিত করে। এতো সাবধানতা সত্ত্বেও সে একজন যুবতী। বিপরীত লিঙ্গের দিকে তার কিছু কিছু দূর্বলতা আছে। সেই দূর্বলতাকে এড়িয়ে গেলো লাবিবা। চোখ দুটো তার এই মুহূর্তে বন্ধ। নিজেকে বকে বকে দমাতে ব্যস্ত। তার এই রুপ দেখার পর আশেপাশে কি হচ্ছে সে জানতেও পারলো না ।

উপস্থিত মহলে মুরুব্বি , তানভীর ব্যতীত দুজন অবিবাহিত যুবক। একজন ফাহাদ আরেকজন ফাহাদের চাচাতো ভাই। মুরুব্বিরা মাশাআল্লাহ বলে আলাপে মগ্ন হতেই ধ্যান ভাঙে তানভীরের। চোখ সরে যায় লাবিবার থেকে। এতোক্ষন কোথায় ছিলো ভেবেই ক্রোধে ফেটে যায়। পরক্ষনেই আবার লাবিবাকে দেখেই শরীরের রক্ত হীম হয়ে আসে। তানভীর উঠে দাঁড়ায়। হুংকার ছেড়ে লাবিবাকে বলতে ইচ্ছে করে,
” এই মেয়ে এতোটা নির্লজ্জের মতো এসেছো কেন? তোমার শাড়ি পড়া একদমই উচিত হয়নি। যাও চেঞ্জ করে আপাদমস্তক ঢেকে আসো।”

কিন্তু কিছুই মুখ থেকে বের করতে পারলো না। জাভেদ তানভীরকে ডাকে।
“ভাগিনা! কোনো সমস্যা?”

তানভীর ডানে বায়ে মাথা নাড়ায়।
“না মামা।”

পরমুহূর্তেই আবার লাবিবার দিকে দৃষ্টি মেলে। মেয়েটা এসে দাঁড়িয়েছে। ঠিক ঐ মুহুর্তে ই তাকে দেখে তানভীরের মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। লজ্জায় নুইয়ে পড়েছে। বারবার মাথা থেকে ঘোমটা পড়ে যাচ্ছে। সে ভয়ে হাত উঁচিয়ে কপালের দিকে ঘোমটাটা টেনে দিচ্ছে। ঠিক তখন তখনি উম্মোচিত হচ্ছে পেটের কিছু অংশ। কালো শাড়িতে সৌন্দর্য যেনো দ্বিগুন ফুটে উঠেছে। কালো কাপড়ের উপর সাদা কোমল চামড়া উকি ঝুঁকি দিচ্ছে। এই দৃশ্য ফাহাদের দৃষ্টি এড়ালেও ফাহাদের কাজিনের এড়ায় না। ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে সে। ফাহাদ ও কম যায়না। যদিও লাল পড়তে বলেছিলো সে তবে কালোতে যে এতোটা সুন্দর লাগবে সে না দেখলে বিশ্বাসই করতো না। লাবিবার রুপে সকলে মুগ্ধ হলেও তানভীর বিন্দু মাত্র হলো না। মেজাজ তার প্রথমেই চটে গেছে। এরপর লাবিবার দিকে ভুল করেও চোখ রাখলো না। সুন্দরী মেয়েদের সুন্দর দেখাবেই। এতে এতো বেহায়া হবার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যার প্রয়োজন সে ঠিকই বেহায়া হয়ে উঠেছে। লাবিবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। প্রথমে গলা খাঁকারি দিলো। কাজ হলো না। পা নাড়ালো। কাজ হলোনা। উপায় না পেয়ে উর্মিলার দিকে চোখ রাখলো। উর্মিলা ফাহাদের দৃষ্টিতে পড়ে মুচকি হাসলো। ফাহাদ ইশারা করলো। তখন উর্মিলা লাবিবাকে ঝাঁকি দিলো। লাবিবার দৃষ্টিচ্ছেদ হলো। মুখ ঘুরিয়ে উর্মিলার দিকে তাকাতেই উর্মিলা ফাহাদের দিকে ইশারা করলো। লাবিবা কোন আগ্ৰহ দেখালো না। মাথা নিচু করতেই তার দুর্বলতা তাকে আবার বেহায়া বানালো। ফাহাদ ইশারা করলো আবার। উর্মিলাকে বুঝালো লাবিবার সাথে কথা বলতে চায়। উর্মিলা কাকীকে ইশারা করলো। কাকী একটু অপেক্ষা করতে বললো। আলোচনা বাড়তেই লাগলো। তানভীরের ফোনটা হুট করেই বেজে উঠলো। আলোচনা থেকে বেরিয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোন হাতে নিলো। সেই ফাঁকে একবার সামনে দিক তাকাতেই দৃষ্টি আটকালো। লাবিবার ডাগর ডাগর চোখদুটো কে অনুসরণ করে নিজের গোড়ালীতে আটকালো। ফোন বেজে আবার কেটে গেলো। তানভীর তাতে মন দিলোনা। বরং মিনিট দুয়েক লাবিবার পানে দৃষ্টি রেখে ব্যপারটা বুঝার চেষ্টা করলো। দুর্বলতা! উইকনেস! এ দৃষ্টি ভয়াবহ। তানভীর একটু নড়ে চড়ে উঠলো। ফের ফোন বাজতেই তানভীর দ্রুত উঠে গেলো। এতো দ্রুত জায়গা ত্যাগ করলো যে লাবিবা ধ্যানচ্যুত হলো। সামান্য ভড়কেও গেলো। দৃষ্টি উঠালো। নিবদ্ধ হলো তানভীরের মুখপানে। এতোক্ষণে তানভীর সিউর হলো। ফোন কানে চেপে পকেটে হাত ঢুকিয়ে ড্রয়িংরুম ছাড়লো।

প্রস্তাবটা লাবিবার কাকীই রাখলো । “ভাইজান, লাবিবা ফাহাদ দুজন একটু নিজেদের মধ্যে কথা বলুক।” সকলেই সম্মতি রাখলো। লাবিবার উঠতে ইচ্ছা হলোনা। উর্মিলা ধাক্কিয়েই উঠিয়ে নিলো। নিজের রুমের দিকে যেতে নিলে লাবিবা আপত্তি জানালো।
” রুমের অবস্থা খারাপ। পুরোটাই অগোছালো। সেখানে ফাহাদকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।”

“কোথায় যাবি তাহলে? ছাদে?”

“না। আমার পছন্দের জায়গায় ঐ ফাকাদ কাকাদ কে নিবো না।”

“এতো মান করে লাভ নেই। সেই মানুষ টাই দেখবি একদিন তোর পছন্দের হয়ে উঠবে।”

উর্মিলা এদিক ওদিক তাকালো। ফাহাদের চোখে চোখ পড়তে আবার একটু হাসলো। লাবিবার হাত ধরে টান দিলো।
” চল বাইরে বারান্দায় গিয়ে বসবি। সেখানে চেয়ার পাতাই আছে। ”

তানভীর কথা শেষ করে বাসায় প্রবেশ করতেই লাবিবা ফাহাদ কে নিরিবিলিতে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখে দাঁড়ালো। তাঁদের দুজনকে পাস করেই ভেতরে ঢুকতে হবে। তানভীর যাবে কি যাবে না দু মনা করলো। যেতে চেয়েও পা এগোলো না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। দেয়ালের এপাশ ওপাশ বিধায় লাবিবা ফাহাদের গল্পের সম্পূর্ণাংশ কানে এলো।

ফাহাদ একটু বেশীই এক্সাইটেড। লাবিবার হাত ধরতে চাইলো। হাত এগুতেই লাবিবা সোজা হয়ে বসলো। ফাহাদ হাত গুটিয়ে দাত বের করে হাসলো। মোহিত গলায় বললো,
” প্রথমে লাল পড়োনি জন্য রাগ করেছিলাম। কিন্তু তোমাকে দেখে রাগ পালিয়ে গেলো। খুব ই সুন্দর লাগছে। কারো নজর না লাগুক।”

” থ্যাংকস। ”

” তোমার বান্ধুবীটা অনেক ভালো। ইশারায় বেশ পটু। কারো সাথে কি কোন চক্কর চলছে নাকি তার?”

” চক্কর চললেই যে ইশারায় পটু হবে এটা কে বললো?”

“ওহ। তার মানে বলতে চাইছো সিঙ্গেল!”

“হ্যা। কেনো পছন্দ হয়েছে?”

“তাতো অবশ্যই। তুমি না থাকলে তার দিকেই ঝুকতাম। কিন্তু এখন আর যাচ্ছিনা। ”

লাবিবা মৃদু হাসলো। ফাহাদ বললো,
” আমি ফ্রী মাইন্ডে কথা বলি। তুমি কিছু মাইন্ড করোনা। তোমার বান্ধবী যথেষ্ট সুন্দরী। তার দিকে আমাদের মতো কম বয়সী যুবকরা নজর দিবে নাতো কে দিবে? তবে আমি কিন্তু দিচ্ছি না। কারণ আমার নজর তোমাতেই আবদ্ধ হয়ে গেছে। ”

ফাহাদের কথাতে লাবিবার মনে বিষাদ ছুঁয়ে গেলো। বুঝার পর থেকে যে ভয়টা এতো দিন পেয়ে এসেছিলো সে ভয়টা সত্যি হতে চলেছে। অথচ লাবিবা সবসময় আল্লাহর কাছে চাইতো এমন যেনো কখনোই না হয়। ভাবতে ভাবতে আনমনেই বলে উঠলো।
” ব্যক্তিগতভাবে আমি কম বয়সী যুবকদের জীবনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ করিনা । কম বয়সী যুবকদের থাকে দ্বিধাবোধ, গুড থেকে বেস্ট খোঁজার তাড়না। হৃদয় ভাঙার অভ্যাস। তারা অধিকাংশই থাকে কনফিউজড। আমার চাই একজন আপাদমস্তক পুরুষ। সত্যিকারের সুপুরুষ। তারা ডালে ডালে ঘুরে না। অবলম্বন খুঁজে নেয়। শেষ বয়স অব্দি বাঁচার অবলম্বন।

(আজ এটুকুই)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here