ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (২৭)

0
608

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(২৭)
রাস্তার পাশে তৃতীয় তলায় জিমনেশিয়াম। তার অপজিটেই ক্যাফে। পুরো শহরে এই একটিই জিমনেশিয়াম থাকায় প্রচুর লোকের আনাগোনা। লাবিবাও তাদের মধ্যে একজন। এতো দিন থেকে এখানে আসছে অথচ আজ যে দৃশ্যের সাক্ষী হলো তা আগে কখনো হয়নি। তানভীর কে এখানে কখনোই এস্পেক্ট করে নি। তার পাশেই আবার ফুটফুটে একটা মহিলা। কোনাকাটা গোলাপী ড্রেসের সাথে কোমড় অব্দি ব্রাউন চুলে অত্যাধিক মর্ডান একজন। তার সাথে মুখোমুখি চেয়ারে বসে সংলাপে ব্যস্ত তানভীর। এক্সপ্রেশন প্রায় প্রায় চেঞ্জ। কখনো সিরিয়াস, কখনো খেয়াল খুশি, কখনো গা ছেড়ে দিচ্ছে চেয়ারে। এতো কমফোর্ট ভাবে কিভাবে কথা বলতে পারে? মুখে মাস্ক পড়েছে দেখে চেনাও যাচ্ছে না। কে হতে পারে? মামাতো বোনদের তো লাবিবার চেনা।‌ তাহলে কি ফ্রেন্ড? গার্লফ্রেন্ড? ফ্রেন্ড থেকেই গার্লফ্রেন্ড এর কথা মাথায় আসা। এতো গর্জিয়াস একজন কে তানভীরের গার্লফ্রেন্ড ভাবা মোটেই অযাচিত চিন্তা নয়। কিন্তু তানভীর এখন বিবাহিত। লাবিবার হাজবেন্ড। তাকে নিয়ে এসব ভাবা ঠিক হচ্ছে না। সন্দেহ রোগ সর্বনাশী রোগ। জীম থেকে বেরিয়ে লাবিবার ক্ষিধে পেয়ে যায়। সেজন্যই ক্যাফেতে ঢুকে। নিজের কফি ঠান্ডা হতে লাগলো। লাবিবার হুস নেই। ধ্যান জ্ঞান সব তানভীর আর ঐ মহিলার উপর। যত সময় ফুরাচ্ছে ততো লাবিবার ছটফটানি বাড়ছে। নিজেকে কোনো ভাবেই আটকে রাখতে পারলোনা। চেয়ার ছেড়ে ছুটলো তানভীরের টেবিলের দিকে। ততোক্ষনে মহিলাটি কেঁদে কুটে তানভীরের কাঁধে কপাল ঠেকিয়েছে। তানভীরও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। তবে কি সত্যিই এ তানভীরের গার্লফ্রেন্ড? কি বলছে সে? গায়ের উপর কেনো ঢলে পড়বে? কাছে যেতেই শুনতে পায় মহিলাটি বলছে,
” প্লিজ তানভীর! আমাকে বাসায় নিয়ে চলো। আমরা বিয়ে করে অনেক হ্যাপি হবো দেখো। বাকি জীবন স্বামী সংসার নিয়েই সুখে কাটাতে চাই। সব ভুল বুঝাবুঝি মিটমাট করার একটা সুযোগ দাও। আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ।”

তানভীর উদাস ভঙিতে অন্যদিকে তাকিয়ে জানায়,
” দেখি। ”

ওদের কথপোকথন এ লাবিবার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। কি সুন্দর বিয়ে করে সংসারের আবদার। আর তার সহজ স্বীকারোক্তি, ” দেখি ”
এজন্যই কি এতো দূরত্ব? তাহলে লাবিবা কে? লাবিবার স্থান কোথায়? দৌড়ে গিয়ে এক ঝটকায় মহিলাটিকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় । আচমকা ধাক্কাতে মহিলা কোনো মতো টেবিলের কোণা ধরে ব্যালেন্স রাখে। নয়তো ফ্লোরে পড়ে কোমড়টা এখনি ভাঙতো। মহিলা চেঁচিয়ে উঠে লাবিবার উপর।

” হে?হাউ ডেয়ার ইয়্যু?”

লাবিবা কড়া চোখে দৃষ্টি ফেলে। পাত্তা না দিয়ে তানভীরের দিকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। কলার চেপে ধরে মুখোমুখি আনে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
” ইয়্যু য়্যার মাই হ্যাজবেন্ড। মাই প্রোপার্টি। জীবন দিবো তবুও আমি ডিভোর্স দিবো না। কোন সাহসে আপনি এধরনের চিন্তা মাথায় নিয়ে আসেন?”

আকষ্মাৎ এমন আচরণে তানভীর নিজেও কিছু বুঝতে পারে না। কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
” য়্যা ইয়্যু মেড? ডিভোর্স আসছে কোথা থেকে?”

” আমি প্রেজেন্ট থাকা অবস্থায় আপনি কি করে আবার বিয়ে করতে চান? ক্যাফেতে অন্য মেয়ের সাথে বসে প্রেমালাপ করেন? এই আপনার ক্যারেক্টার?আমি মেনে নিবো এসব? কি ভেবেছেন কি? জীবনেও না।”

” লাব্বু প্লিজ স্টপ। উল্টা পাল্টা কথা বলছো কেনো? এটা পাবলিক প্লেস। ”

” পাব্লিক প্লেসে অন্য মেয়ে নিয়ে প্রেমালাপ করেন কেন? তখন স্টপ যেতে পারেন না? ”

” মাথায় পোকা উঠেছে তাই না? চলো এখান থেকে।”

তানভীর লাবিবাকে টেনে নিয়ে যেতে চায়। মহিলাটি জিজ্ঞেস করে,
” তানভীর? হু ইজ সী? ”

” লাবিবা। ”

” হুয়াট? এই লাবিবা? হাউ ম্যানারলেস সী ইজ!”

” ঐ বুড়ি তুই ম্যানারলেস। অন্যের জামাইয়ের গায়ে ঢলে পড়িস কেন? কাটা কাটা জামা পড়ে আমার জামাইরে ভুলাতে এসছিস। ”

” লাবিবা স্টপ প্লিজ। ” তানভীর ধমকে উঠে।

” আপনি চুপ থাকুন। আপনার সাথে বোঝা পড়া পরে করছি। আগে একে শায়েস্তা করি। ”

” তানভীর! কিসব বলছে! আটকাবে তুমি ওকে?” মহিলাটি বলে।

” আরেকবার আমার জামাইয়ের নাম মুখে নিবি তো মুখ সেলাই করে দিবো। নিকুচি করি তোর স্বামী সংসারের। আমার স্বামী আমার সংসারের দিকে নজর দিস শাকচুন্নী। ”

তানভীর আর স্থির থাকতে পারে না। লাবিবাকে টেনে নিয়ে ক্যাফের বাইরে চলে আসে। লাবিবা হাত পা ছুড়তে থাকে। সিঁড়ির কাছে এনে লাবিবাকে ছাড়ে তানভীর। ধমকে বলে,
” কি শুরু করেছো কি? কাকে কি বলছো? তুমি চেনো ওকে? ক্যাফেতে এসে সিনক্রিয়েট শুরু করেছো কেন? জামাই জামাই বলে মান সম্মান ঢুবিয়ে দিচ্ছো। পাগল তুমি? মাথা খারাপ হয়েছে? ”

” ঐ মহিলা কেন আপনার সাথে মিশবে? আপনার কাঁধে কপাল কেনো রাখবে? ঐ ব্লেজার খুলুন। এতে ঐ মহিলার গন্ধ লেগে আছে। ”

লাবিবা ব্লেজার ধরে পেছন দিকে টান দেয়। তানভীর ব্লেজার উপরের দিকে টেনে ধরে।
” প্রব্লেম কোথায় তোমার? কোথায় লেখা আছে আমার সাথে কোনো মহিলা মিশতে পারবেনা? কাঁধে কপাল রাখতে পারবেনা? তোমার কথায় সব হবে নাকি? ”

লাবিবা ডাইরেক্ট তানভীরের চুল টেনে ধরে। মরণঘাতী খামচি দিয়ে চুল ছিঁড়ে চলে।
” আমার কথায় হবে নাতো কার কথায় হবে? আমি আপনার একমাত্র বউ। আমি আপনাকে উঠতে বললে উঠতেও হবে। বসতে বললে বসতেও হবে। আমি যা বলবো আপনাকে তাই শুনতে হবে। ”

” লাব্বু চুল ছাড়ো। ব্যাথা লাগছে। ”

” আমারও লাগে। আপনি আমার হাজব্যান্ড হয়ে কেনো পরকীয়া করবেন? ”

” কিসব যা তা বলছো? চুল ছাড়ো।”

” ইইইইইই।”

” আচ্ছা তুমি যা বলবে তাই শুনবো। এবার ছাড়ো।”

” ঐ মহিলা আমাকে ম্যানারলেস বলেছে। আপনি এর প্রতিশোধ নিবেন।”

” নিবো।”

” আমি ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করার ভুত মাথা থেকে সরাবেন। ”

” আমার একটাই বউ রে বাবা। ”

” আমি আপনার কোন জন্মের বাবা?”

” নারে মা ছাড়। ”

” ছেহ!”

” বউ ছাড়ো তো।”

লাবিবা ছেড়ে দিয়ে রাগে ফুঁসতে থাকে। তানভীর মাথায় হাত চেপে লাবিবার কোলে চেপে ধরে। ব্যাথাটা কমে আসে ধীরে ধীরে। বাম পাশের চোখ উঁচিয়ে দেখে লাবিবা ঘামছে। তানভীর ফিসফিসিয়ে বলে,
” রণচন্ডী বাঘিনী। ”

মাথা তুলে কিছু না বলেই হন হন পায়ে বেরিয়ে আসে।

লাবিবার জন্যই এদিকে তানভীরের আসা। ক্যাফেতে হটাৎ ফ্লোরার সাথে দেখা। তার ডাকে সাড়া না দিয়ে তানভীর পারে না। যেহেতু বসতে হবে কিছুক্ষণ ফ্লোরা বসুক সাথে সমস্যা কি? তার কথা শুনা যাক। ফ্লোরার কথা মানেই ইমোশনাল কথাবার্তা। আর তানভীরকে তোষামোদ করা। ব্যপারটা ভালোই ইনজয় করে তানভীর। তাই তাকে বাঁধা দেয়না। কিন্তু আজ ফ্লোরা শুরু করলো অন্যভাবে। নিজেকে নিয়ে নয় লাবিবাকে নিয়ে।
” লাবিবা কেমন আছে?”

তানভীর একটু অবাকই হল। হাসিমুখে উত্তর দিল
“আলহামদুলিল্লাহ।”

” খুব সুন্দরী বুঝি?”

“তোমার থেকে নয়।”

“তাহলে বিয়ে করলে কেন?”

“ভীষণ হট! তাই।”

ফ্লোরা তাচ্ছিল্য হাসে।
” হুহ! ছেলেদের যা লাগে! তাহলে দূরে সরিয়ে রাখ কেন?”

” সব খবরই দেখি রাখ।”

” খবর রাখি। কিন্তু দেখা হয়নি। তোমার ওয়াইফকে দেখার বড্ড ইচ্ছে আমার। ”

“ইনশাআল্লাহ অতি শীঘ্রই মিট করাবো দুজনের। সে আবার বড্ড প্রশ্ন করে। উত্তর সাথে নিয়ে এসো। ”

“এতো লুকোচুরি খেলার কারণটা কি? নাকি লাবিবাই তোমাকে পছন্দ করেনা? শুনেছি যে ছেলেটার সাথে বিয়ে হবার কথা ছিল তার সাথে নাকি মাঝে মাঝে একসাথে দেখা যায়! ”

” হুম। পাশে আমিও থাকি। সে আর যাই হোক তোমার ক্যারেক্টারের না।”

“আমি আজকাল যেচে পড়ে অপমানিত হতে ভালোবাসি তানভীর। ”

তানভীর ফিক করে হেসে উঠে। মুখে চুক চুক শব্দ তুলে ” আফসোস! ” ফ্লোরার দিকে তাকায়।

” লাবিবা একজন পিউর মাইন্ডেড গার্ল। সে এক পুরুষে আগ্ৰহী। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বিলাসীতা করতে গেলেও আমার যা আছে তাই ফুরিয়ে উঠতে পারবে না। তুমি যা ঠিক তার অপজিট।”

” এতো অহংকার ভালো নয় তানভীর। ”

” তোমার মতো সিচুয়েশন না হলেই নয়। ”

এতো অপমান নিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে ফ্লোরা।
” তোমার ভাই এখনও আমাকে লাভ করে। আমি বুঝি তাকে। তার সাথে কথা বলতে গেলেই আমি ফিল করি। তোমরা যদি মতামত দাও তাহলে সে নিশ্চয় আমাকে আবার তার জীবনে এন্ট্রি দিবে।”

“সেটা নয় বুঝলাম। তার আগে বলো তুমি আমার ভাইয়ার পিছু ছাড়ছো কবে?”

” মৃত্যু হলে। ভালো থাকার অধিকার সবার আছে তানভীর। আমি ভুল পথকে চুজ করেছিলাম। বুঝতে পেরে ফিরে এসেছি। এবার আমি ভালো থাকতে চাই। আমার অধিকার যা হারিয়েছি ফিরে পেতে চাই। এতো কেনো শাস্তি দিচ্ছো আমাকে? আমি আর পারছিনা প্লিজ। তোমার সাথে অন্যায় করেছি আমি। আমি ক্ষমা চাইছি। ক্ষমা না করলে আজ শাস্তিও চাইছি। আমাকে শাস্তি দাও তাও বঞ্চিত করো না। ”

” তুমি যে বার বার আমার সামনে এভাবে এসে কাঁদো আমার ভীষণ ভালো লাগে মিস্ ফ্লোরা!”

” প্লিজ তানভীর! আমাকে বাসায় নিয়ে চল। আমরা বিয়ে করে অনেক হ্যাপি হবো দেখো। বাকি জীবন স্বামী সংসার নিয়েই সুখে কাটাতে চাই। সব ভুল বুঝাবুঝি মিটমাট করার একটা সুযোগ দাও। আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ।”
শেষ কথাগুলো শুনে লাবিবা অন্যকিছু ভেবে নিয়েছে। রিয়েক্ট করে বসেছে তৎক্ষনাৎ।

লাবিবা চুপচাপ বসে থাকে। কি করে ফেললো রাগের মাথায়! ভীষণ খারাপ লাগে। কিন্তু মহিলাটি কে? লাবিবা উঠে চটপট ক্যাফেতে যায়। সেখানে আর দেখতে পায় না মহিলাটিকে। ভরক্রান্ত মন নিয়ে বিল্ডিং ছেড়ে আসে। অদূরে তানভীরের সাদা গাড়িটা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দৌড়ে যায়। তানভীর বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল। চুলগুলো আর এলোমেলো নেই। একদম সেট করা। লাবিবার খারাপ লাগে ভীষন। কত কষ্ট দিলো সে! তানভীর লাবিবাকে ইশারায় গাড়িতে উঠে বসতে বলে। লাবিবা উঠে বসতেই পাশে তাকিয়ে চমকে যায়। ফেমাস হিরোইন ফ্লোরা স্বয়ং তার পাশে বসা। লাবিবা ফ্লোরা বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। ভেতর থেকে উৎফুল্ল ভাব বেরিয়ে আসে। পর পরই ফ্লোরার গেটাপ নজরে পড়তেই মুখটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। ফ্লোরা নিজ ঠোঁটে আঙুল চেপে বসে।
” চুপ। আমি তোমার এক্স জা। সামনে তাকাও।একদম চেঁচাবেনা। ”

এতোক্ষণ যে সন্দেহে পাগলামি করেছে সেই সন্দেহ তার দিক পরিবর্তন করে দুশ্চিন্তা কেও সাথে নিয়ে ধাবিত হয়। অতিরিক্ত চাপে লাবিবা এবার নিস্তেজ হয়ে পড়ে। চোখের জল ছাড়া আর কিছুর অস্তিত্ব নতুন করে পাওয়া যায়না।

অনেক দিন পরে লিখতে বসেছি। ভাবনা সহ আঙুল কেমন যেনো গুটিয়ে আসছে। ঠিকঠাক পারছিনা। আশাকরি পরের পার্ট লিখতে গিয়ে ঠিক হয়ে যাবে ‌। বেশী বেশী রেসপন্স করবেন। হ্যাপি রিড়িং ♥️

চলবে____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here