ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (২)

0
325

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(২)
(❌কপি করা নিষেধ ❌)
বুট জুতোর আওয়াজ তুলে খান বাড়িতে প্রবেশ করে তানভীর। কানে ফোনটা একহাতে চেপে রেখেছে। আরেক হাতে গিফট বক্স । সেন্টার টেবিলের উপর বক্সটা রেখেই সিঁড়ি বেয়ে দুতলায় উঠে। কর্ণারের রুমটা তার। বৃহৎ এবং ওয়েল ডেকোরেট , তবে এই মুহূর্তে অগোছালো। প্রকৃত একজন গোছানো পুরুষ হলেও কলেজে যাওয়ার আগে না চাইতেও রুমটা অগোছালো হবে। নিজের ড্রেস আপ নিয়ে তানভীরের ভীষন কনফিউশন। পোশাকেই যেনো হয় তার ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। নিজের কাছে নিজেকে পারফেক্ট না দেখানো অব্দি ড্রয়িংরুমে পা রাখার ব্যক্তি তিনি নন। রুমটা এখনও গোছানো হয়নি। বিছানায় ফোনটা ছুঁড়ে দিয়ে প্যান্টটা একটু উপরে তুলে সে বিছানার এককোণায় বসে। উবু হয়ে এক পায়ের জুতো খুলেই গলা বাড়িয়ে ডাকে,
” মম ,মম হুয়্যার য়্যা য়্যু ? বেডরুমটা গুছিয়ে দিয়ে যাও প্লিজ।”

কিছুক্ষন পর কফি হাতে প্রবেশ করেন মিসেস সোহানা ইসলাম। ছেলেকে দেখেই কিচেনে গিয়েছিলো কফি বানাতে। সারাদিনের স্ট্রেস নিয়ে বাইরে থেকে আসার পর তানভীরের মাথাটা খুব ধরে। আজ জবেদাও নেই যে কফি নিয়ে ছুটবে। তানভীর হাতে কাপটা নেয়। ধোঁয়া উঠা কফিতে সিপ দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” জবেদা কোথায় মম? আজ এখনও আমার ড্রেস গুছিয়ে দিয়ে যায়নি। ”

” জবেদা ছুটিতে গিয়েছে। আসতে তিন-চার দিন লেট হবে। তুমি ড্রেস গুলো এভাবে না ছড়ালেই তো পারো তানভীর।”

” হাতে একদমই সময় থাকে না। তাড়াহুড়োতে পসিবল না।”

” কতবার বলি আমাকে ডাকবে। তুমি তো কথাই শোনো না। ”

” মম তোমার ড্রেস সেন্স এতোটাও পারফেক্ট না। ”
সোহানা মুচকি হাসে। ভাজ করে ড্রেসগুলো কাবার্ডে রেখে দেয়।

” যার ড্রেস সেন্স পারফেক্ট তাকে নিয়ে আসছো না‌ কেন? তাহলে তো এতোটাও পেরেশান হতে হয়না।”

সোহানার দিকে ঘাড় ঘুরায় তানভীর। এক ভ্রু উপরে ঠোঁট টা ‘চ’ আকৃতি করে তাকায়। কথার মানেটা বুঝে উঠতেই গলা ঝাড়া দেয়। কাপে ফের সিপ দিয়ে‌ রেখে বারান্দায় চলে যায়।

ডিনারে ফ্যামিলির সবাই একসাথে ডাইনিং এ বসে। নিতু ইসলামকে দেখে সৌজন্য হাসে তানভীর। জিজ্ঞেস করে, ” কখন এসেছো খালামনি?”

” এইতো কিছুক্ষণ। তোমার সাথে কথা আছে। দু দিন থেকে ট্রাই করছি। তোমাকে আজকাল পাওয়াই যাচ্ছে না। ”

নিতু ইসলামের চোখে মুখে হতাশা। তৎক্ষণাৎ ফিরোজ খানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“দুলাভাই। তোমার ছেলে দুটো যে দিন কে দিন এতোটা বেপারোয়া হয়ে উঠছে তুমি কেনো কিছু বলছোনা?”

ফিরোজ খান শশা স্লাইজে কামড় দিয়ে নিতু ইসলামের দিকে তাকায়। হাতের উপর আরেক হাত ভাজ রেখে ফিচেল হাসে।
” কিসের কথা বলছো তুমি নিতু? আমিতো কিছু দেখতে পারছি না। ওরা ছেলে মানুষ বাইরেই তো থাকবে।বাসায় ওদের কি কাজ?”

“তাহলে আপনি কেনো বাসায় থাকেন দুলাভাই? এতোবড় রাজনৈতিক ব্যক্তি হয়েও কাজের ফাঁকে সময় পেলেই তো আপনার বাসায় আসাই চাই। ”

” বাসায় আমার একটা বউ আছে নিতু যা তোমার দুই ভাগিনার নাই। বাসায় রাখতে চাইলে পারলে বউ‌ নিয়ে আসো। সেটাতো আর পারছো না। ”

ফিরোজ খানের সোজাসাপ্টা জবাব। দুই ছেলের সামনে এভাবে কোন বাবাই বলতে পারেন‌না। কিন্তু ফিরোজ খান বলতে পারেন। ছেলেদের সাথে এতোকাল যাবৎ মেপে মেপে কথা বললেও বাহিরের ছোটা মুখটা এখন ঘরেও চলে। তারজন্য দায়ী তার দুই ছেলে। নিতু ইসলাম বিরক্তির সাথে তামিমের দিকে তাকায়। অতঃপর তানভীরের দিকে। তানভীর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে এড়িয়ে গেলেও তামিম পারে না। তাড়াতাড়ি এখান থেকে উঠার জন্য গপাগপ খাবার মুখে দিতে থাকে। খালামনির নজর যে এখনো তার দিকে সেটা বেশ বুঝতে পারছে। নিতু ইসলাম রাগন্নিত গলায় প্রশ্ন করে,
” তোমাদের এই বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত কি কোনোদিন সারাজীবন থাকবে? সমস্যা কি তোমার তানভীর?”

তানভীর নিতু ইসলামের দিকে না তাকিয়ে ফিরোজ খানের দিকে তাকায়। ফিরোজ খান খাওয়া থামিয়ে দিয়েছে। তানভীরের উত্তর শোনার অপেক্ষা করছে। গম্ভীর দৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড সেদিকে লক্ষ্য করে তানভীর ফের খাবারে মন দেয়। মুহুর্তেই খাবার টেবিলে নীরবতা বয়ে যায়। রুদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হবার আগেই সোহানা ইসলাম গলা খাঁকারি দেন,
” আগে আমি তামিমের বিয়েটা দিয়ে নিই তারপর তানভীরের বিয়ে নিয়ে ভাববো। নিতু আমাদের তামিম বিয়ের জন্য রাজী হয়েছে। তবে তার একটু সময় লাগবে।”

নিতু ইসলাম প্রসস্ত হাসে।
” তামিম? তা মেয়ের পড়াশোনা শেষ করার উদ্দেশ্যে নাকি? কিসে এখন? ”

তামিম যে লজ্জা থেকে এড়িয়ে যাবার জন্য এতোক্ষণ ধরে উঠার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে অবশেষে যুদ্ধ শেষ না হতেই পরাজিত হয়ে গেলো। ফিরোজ খানের মুখেও চওড়া হাসি। সোহানাকে জিজ্ঞেস করে,
“আমার ছেলের অবশেষে কাউকে মনে ধরেছে এ খবর আমাকে আগে জানানো হলো না কেনো? যাই হোক এখন যেহেতু জানিয়েছো খুশির খবর। সবাইকে মিষ্টি মুখ করাও। তামিম? মাই ইয়াং ম্যান?”

বাবার মুখের দিকে তামিমের মুখটা শুকিয়ে গেছে। কি উত্তর দিবে সে? সোহানা বলে,
“তোমাকে জানাবো কীভাবে? সুখবরটা ছেলে আজ সকালেই আমাকে দিল। তোমরা তো আর কেউ সারাদিন বাসায় ছিলে না।”

নিতু ইসলাম বলে,
” তামিম, তুমি অবশেষে বিয়ে করতে চাইছো শুনে খুশি হলাম। কিন্তু সময় কেন চাইছো বাবা? মেয়ের যদি পড়াশোনা, ক্যারিয়ার জনিত কোনো ব্যাপার থাকে তাহলে ওয়েট করার কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের ফ্যামিলিতে সবাই উচ্চ শিক্ষিত। চাকরী করতে চাইলে বাঁধা নেই। তোমার বয়সটাও তো বসে থাকার নয়। পুরনো কাসুন্দি ছেড়ে এবার নিজের দিকে এবার তাকাও। আমরা তোমার ভালো চাই। তুমি যে নতুন করে আবার জীবন শুরু করতে চাইছো এতে আমরা সবাই হ্যাপি। বাই দ‌্যা ওয়ে, তুমি কি জুনিয়র কাউকে পছন্দ করেছো? তোমাদের এজ ডিস্টেন্স কেমন হবে?”

” উমমমমম.. খালামনি আমি এখনও বিয়েটা নিয়ে কনফার্ম হয়নি। একটু সময় দাও তোমাদের অবশ্যই আপডেট জানাবো।”

“সিওর।”

ডিনার শেষে যে যার রুমে যাওয়ার সময় তানভীর তামিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,” কনগ্ৰাচুলেশনস ভাই।”

তামিম অন্যমনষ্ক ছিলো বিধায় তানভীরের হটাৎ জড়িয়ে ধরায় হকচকিয়ে যায়। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে তানভীরের কাঁধে হাত রাখে।
” ভাই কি কোন বিষয় নিয়ে টেন্সন্ট?”

“হু?”

“কি হয়েছে?”

“পরে বলবো।”

” জানা থাকুক অন্তত।”

তামিম কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলে,
” ফ্লোরা ব্যাক করতে চায়।”

” ঘাটের জল খাওয়া শেষ?”

“ইনটেশন কি বুঝতে পারছি না।”

” ভেবে দেখো। হেল্প লাগলে বলো।”

“হুম।”

তানভীরের রুমে নিতু ইসলামের আগমন। তানভীর বিছানায় নিতু ইসলামকে বসতে বলে। নিতু ইসলাম বিছানায় না বসে রুম জুড়ে দুইবার পায়চারি করে কর্ণারে বিনে বসে। নিতু ইসলামের গতি খেয়াল করে তানভীর জিজ্ঞেস করে,
” খালামনি তুমি কি কিছু বলবে? সিরিয়াস কিছু?”

” হুম। শুনলাম জবেদের ছেলের জন্য কলেজে মেয়ে দেখা হচ্ছে। তুমি আবার মধ্যম ব্যক্তি হয়ে কাজটা করছো। মেয়েটা আমার স্টুডেন্ট।”

“ও আচ্ছা। উনারা আমার অফিসে সরাসরি এসে পরিচয় দেয়। এমনিতেও আমার চেনা মুখ তার উপর নানু বাড়ির এলাকার লোক , আমাকে জানায় যে একটা মেয়ের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে এসেছে। তারপর মেয়েটাকে ডেকে পাঠিয়ে দেখিয়ে দেই। তো রেজাল্ট হচ্ছে যে উনাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে। উনাদের ছেলের ছুটি হবে আগামী মাসের পাঁচ তারিখ। সে আসার পর সরাসরি দেখা দেখি করে বিয়ে ঠিক করে ফেলবে সম্ভবত। আমাকে অনুরোধ করলো সমন্ধটা কাছাকাছি নিয়ে আসতে।”

” কিন্তু বাবা আমার মনে হয় না এই বিয়েটা হওয়া উচিত হবে।জবেদের ফ্যামিলি লাবিবার জন্য পারফেক্ট নয়। ”

“কেন খালামনি? ফাহাদ ওয়েল ইডুকেডেট। ইঞ্জিনিয়ার। গভমেন্ট জব, হ্যান্ডসাম,গুড লুকিং। ফ্যামিলিও ফিনিন্সিয়াল দিক থেকে গুড। লাবিবার ফ্যামিলি থেকে বেটার। সব দিক থেকেই পারফেক্ট। তাছাড়া আমার জানা মতে ফাহাদের আদার্স কোন বেড রেকর্ড নেই। সিগারেটের অভ্যাসও নেই। আমি যেহেতু হেল্প করছি দুই ফ্যামিলির সবটা জেনেই করছি। তাহলে প্রব্লেমটা কোথায়?”

” তুমি হয়তো দেখছো উচ্চবিত্ত পরিবার,হ্যান্ডসাম চরিত্রবান ছেলে লাবিবার জন্য পারফেক্ট। কিন্তু আমি বলবো জাবেদের বংশে সব পুরুষই ওয়েল ইডুকেডেট, ভালো পোষ্ট এ জবও করে কিন্তু বাড়ির বউরা একদমই তা নয়। সে বংশের বউরা একেকজন সুন্দরী মেয়েরাই হয় কিন্তু বছর ঘুরতেই সেই সৌন্দর্যের ভাটা পড়ে। আমাদের দেশের মানুষ শিক্ষিত হলেও পুরনো রেওয়াজ এখনো কিছু পরিবারে দাপিয়ে চলছে। সেই বংশের বউদের বিয়ের পর পরই লেখাপড়া ছাড়তে হয়। তাদের জীবন মানে ঘর সংসার বাচ্চা সামলানো। একেকটা ফ্যামিলিতে বউরাই বাড়ির সকল কাজ করে থাকে। ছুটা বুয়া পর্যন্ত রাখা হয়না। বাড়িতে বউ নামে কাজের মেয়ে নিয়ে যায়। বউদের নিজের বলতে কিছুই থাকে না। টাইমলি খাবারের তদারকিটাও কেউ করে না। যদি বলো এখন তো যুবকদের মেন্টালিটি চেঞ্জ হতে পারে, গত বছরই জাবেদের বড় ভাইয়ের ছেলেকে বিয়ে করানো হলো। বউটা ক্লাস টেনে পড়তো । তার আর কলেজের মুখ দেখা হলোনা। অথচ হাজব্যান্ড আই পি এস অফিসার। প্রব্লেমটা হলো লাবিবাকে নিয়ে। আগে তার সম্পর্কে ক্লিয়ার করি। লাবিবা লাস্ট তিন বছর থেকে আমার স্টুডেন্ট। মায়াবী পুতুলের মতো একটা মেয়ে। তাকে দেখে সবাই বলবে চুপচাপ শান্ত শিষ্ট প্রকৃতপক্ষে এই মেয়ে লেজ বিশিষ্ট। ডিপার্টমেন্টে তাকে লেইট লাবিবা বলে সবাই চেনে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। ভীষণ আদুরে। সুযোগ মাত্র আলসে। নয়টা পঁয়তাল্লিশের ক্লাসগুলো কন্টিনিউয়াসলি মিস করে যায়। সাড়ে দশটার আগে কখনোই কলেজে আসতে পারে না। কারণ তার ঘুম ভেঙেছে নয়টা কি সাড়ে নয়টা। যেদিন একটু আগে উঠবে সেদিন মাথা ব্যথায় চোখ তুলতে পারে না। একবার হলো কি? ক্লাসে গভীর ঘুমে বসে বসে ঝিমুচ্ছে। আমি রাউন্ড দিতে গিয়ে দেখি এই পরে যাবে যাবে অবস্থা। ক্লাসে যে একজন এভাবে ঘুমুচ্ছে প্রফেসরের কোন খেয়ালই নেই। ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম।
– য়্যা য়্যু স্লিপিং?
ও চটপট স্বীকার করে নিলো, ইয়েস ম্যাম।
– রাতে ঘুমাওনি? বিয়ে হয়েছে তোমার?
ও বললো, রাতে ঘুম কম হয় ম্যাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আর কোন সমস্যা? ও বললো ভীষণ মাথা ব্যথা। কি বলবো? কঠিন হয়ে বললাম তুমি যেহেতু ক্লাসে আছো ক্লাস করার ইচ্ছা থাকলে চেষ্টা করো নাহলে ‌বাইরে গিয়ে ঘুমাও ।
সে কি উত্তর দিলো জানো? বাইরে রোদ ঘুমাতে পারবো না। থ্যাংকস ম্যাম এখানেই ঘুমাই।
বলতে দেড়ি উঠে দাঁড়াতে দেড়ি নেই। ছয়টা ডেস্ক পটাপট এক করে শুয়ে পড়লো। আমাকে গুড নাইট ম্যামব লে চোখ বন্ধ করলো। আমি ডিপার্টমেন্ট হেড আমাকে বিন্দু মাত্র ভয় পেলো না। এতোটা বেয়াদবি আমি সহ্য করতে পারলাম না। পরবর্তীতে নিজেই বোকা বনে গেলাম। কারণ সে যে বেয়াদবিটা করলো কিন্তু বেয়াদবিটা ঠিক কোনটা সে জানেই না। তার বাবা তারপর এসে আমাকে ব্যপারটা ক্লিয়ার না করলে জানতেই পারতাম না। একবার তার মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে হসপিটালে ভর্তি হলো। তার বাবাও তার মাকে রেখে বাড়িতে ফিরতে পারলো না। লাবিবাকে নিজেই নিজের কাজ, নিজের রান্না করতে হলো। দুদিনেই মেয়েটা হাত কেটে নখ উপড়িয়ে পা কেটে বসে রইলো। ক্লাস টেস্ট দিতে এসেছে আমিতো তার হাত মুখ পা দেখে অবাক। কি অবস্থা! শুকনো মুখটা দেখে জিজ্ঞেস করতেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো। পুরো একদিন না খেয়ে মেয়েটা। তারপর তাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাই। হসপিটালে তার মাকে দেখতে যাই।তার বাবা তো হসপিটালেই থাকে। ভদ্রলোকের দৌড়া দৌড়িতে যা তা অবস্থা। উনাকে বলে ছয়দিন লাবিবাকে আমার বাড়িতেই রাখি। সাথে ওর ট্রিটমেন্টও করাই। এই ছয়দিন মেয়েটাকে দেখে যা বুঝলাম মেয়েটা মুড অনুযায়ী প্রচুর কথা বলে, ভীষণ চতুর, প্রচন্ড জেদী, আদর পেলে একদম গলে যায়। একদমই ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না। একটু অবহেলা নিতে পারে না। ডিপ্রেশনে চলে যায়। অদ্ভুত ,ছন্নছাড়া ব্যপার গুলোও তার মধ্যে দেখা যায়। বৃষ্টিতে ভিজে আইসক্রিম খেয়ে এই মেয়ের ঠান্ডা লাগে না অথচ দুই তিন ঘন্টা আগুনের সামনে থাকলেই ঠান্ডা লেগে যায়। রোদ বৃষ্টি দূর্বলতা তাকে জ্বরে আক্রান্ত করতে পারে না অথচ কারো হাতে একটা চড় খেলেই জ্বরে দুই তিন দিন বিছানা ছাড়তে পারে না। টানা পাঁচদিন একবার সে কলেজে আসে না। আমি তার বাবাকে ফোন করলাম। তিনি জানালো লাবিবা হসপিটালে ভর্তি। ভাদ্র মাসের গরমে গিয়েছিলো চরে এক আত্মীয়ের মৃত্যু খবর শুনে। নিয়ম আছে তিন দিনের আগে মরা বাড়ি থেকে ফেরা যায়না। দুই দিনেই এম্বুলেন্সে করে লাবিবাকে হসপিটালে ভর্তি করাতে হয়। অতিরিক্ত গরমে তার গায়ে ফোস্কা পড়ে গেছে। চামড়ায় লাল ছোপ ছোপ দাগ উঠেছে। কী অবস্থা! এরকম একটা মেয়ে ঐ ফ্যামিলিতে কিভাবে সংসার করবে?”

সবটা শুনে তানভীর কী বলবে ভেবে পেলো না। কপাল কুঁচকে নিতু ইসলামের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর বললো,
” খালামনি সব ফ্যামিলি তো এক না। যে ফ্যামিলিতেই যাকনা কেনো মেয়েটা কি সংসার করবেনা? এটাতো স্কিপ করতে পারবেনা।”

” কি বলতো বাবা! কিছু কিছু মেয়েরা ভীষণ নাজুক হয়, ফুলের মতো। তাদের যত্ন নিয়ে পাউডার মেশানো পানি ভর্তি ফুলদানি তে ঠান্ডা পরিবেশে রাখতে হয়। তবেই বেশি সময় তাজা থাকে। বেশী সময় তার সুগন্ধ, সৌন্দর্য উপভোগ করা পাওয়া যায়। বুঝতে পেরেছো ?”

” জি খালামনি।”

” লাবিবা তার বাবা মা’র একমাত্র ভবিষ্যৎ। একমাত্র অবলম্বন। তারা নিশ্চয় তাঁদের মেয়েকে যতটা ভালো রেখেছে তার থেকেও বেশি তাদের মেয়ে জামাই ভালো রাখবে সেটাই চাইবে। তাইতো ছেলে পছন্দ করেছে ইঞ্জিনিয়ার,চরিত্রবান। ভেতরের ব্যপারটাতো আর হাইলাইট করছেনা। যেহেতু মধ্যম স্তরে আছো এদিক থেকে সেদিক হলে নিজেকে অপরাধী মনে হবে। ভেবে দেখো। গুড নাইট বাবা। ঘুমিয়ে পরো, দেড়ি করো না। ”

” জি খালামনি।”

নিতু ইসলাম চলে যায়। তানভীর বিছানা ছেড়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। কপালে গাড় হয়ে পরে চিন্তার ছাপ। কিছুক্ষণ ঠান্ডায় বসে থেকে তারপর রুমে চলে আসে। বালিশের পাশ থেকে সেলফোনটা তুলে নেয়। গ্যালারিতে ঢুকতেই দৃশ্যমান হয় হিজাবে আবৃত গোলগাল একখানা মায়াবী মুখ। হরিণ টানা চোখ, আদুরে গাল, তুলিতে আঁকা থুতনি, ছোট্ট দু ফালি ঠোঁট তার ডানপাশে গাঢ় কালো তিল! তানভীরের চোখে ভেসে উঠে অফিসে সেই ভীতু চোখে তাকানো। বার বার নিজেকে সংকোচন। নাকের ডগায় ছুঁইয়ে দেওয়া লজ্জা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাল্কা কেঁপে কেঁপে উঠা। অসস্তিতে পায়ের নখে খুঁটানো লাল কার্পেট।
হালকা হাসে তানভীর। ফিসফিসিয়ে নামটা উচ্চারণ করে,
” লাবিবা।”

চলবে ___

{সবাই রেসপন্স করবেন।প্রত্যেকেই কমেন্ট করার চেষ্টা করবেন।হেপি রিডিং।}

®লাবিবা তানহা এলিজা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here