ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (২৫)

0
551

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(২৫)
সম্পর্কের সুতো গুলো কেমন যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। লাবিবার প্রতি তানভীরের মোহ কাজ করে। টান কাজ করে। এটুকু লাবিবা নিশ্চিত। চোখের সামনে যে কোন সুন্দরী মেয়ে থাকলে যদি সে হয় স্ত্রী ! তাহলে তো আকর্ষণ কাজ করবেই। লাবিবার সব সময় মনে হতো তার প্রতি তানভীরের কোনো আকর্ষণ নেই । যদি বিন্দুমাত্র থাকতো এখনো লাবিবা আনটাচড থাকতো না। একটা বিচ্ছিরি পরিস্থিতিতে পড়েই তানভীর লাবিবাকে বিয়ে করেছে। আর তাকে কনভিন্স করেছে ইসসমাইল লাবিবার ধারণা। সেজন্যই তো আব্বুর সাথে মনোমালিন্য তার। হুট করেই তো একটা লোক আনমেরিড দেখে তার কাছে মেয়েকে গছিয়ে দিবেনা যদি না তার আগে থেকেই সেই টার্গেট করা থাকে। লাবিবার মনে হয় তার আব্বু খুবই সহজ সরল। কিন্তু মাঝে মাঝে তাকে অত্যন্ত ধূর্তবাজ কেউ মনে হয় আর সেগুলো লাবিবার বিষয়েই। একটা লোক যে লাবিবাকে তেমন দৃষ্টিতে দেখেই না। ভালোই বাসে না কিন্তু দায়িত্ববান বড়লোক। তা দেখেই বিয়েটা দিয়ে দিলো। আর মানুষটাও কি সুন্দর নিজের সমস্ত দায়িত্ব নিখুঁত ভাবে পালন করে যাচ্ছে। ভালোবাসাটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। লাবিবার বিশ্বাস ধীরে ধীরে সে তানভীরের হৃদয়ে দখল নিবে। তার দৃষ্টি নিজের করে নিতে সে সক্ষম। আজকের ঘটনায় লাবিবা তানভীর খানকে নতুন ভাবে চিনেছে। পুরুষ জাতির উপরে সমাজে একটা সত্য রটনা আছে। পুরুষ মানুষ বড়ই অধৈর্য্য। কিন্তু সবক্ষেত্রেই হাতের পাঁচ আঙুল যে সমান নয় এটাও সত্য। তানভীর মানুষটাই যেনো আলাদা। সংযতপূর্ণ ! কোনো পুরুষ ই এভাবে বউকে ফেলে চলে যেতে পারতো না। সে পেরেছে। খুব সুন্দর ভাবে সামলে নিয়েছে। কিন্তু লাবিবাই নুইয়ে পড়েছে। লাবিবার যত সাহস, শক্তি, জেদ, উদ্যোম এইটুকুন ছোঁয়াতেই নিঃশেষ! তাহলে তানভীর যখন লাবিবাকে ভালোবেসে পুরোটাই দখলদারিত্ব করবে তখন কি লাবিবার চিহ্ন টুকু পাওয়া যাবে? চেনা যাবে তাকে? কেউ জানবে? লাবিবা নামের একটা মেয়ে ছিল, জম্ম হয়েছিলো তার ইসমাইলের ঘরে!

নানান চিন্তায় লাবিবার সময় চলে যায়। নতুন নতুন প্রেমে পড়লে যা হয়! দিন দুনিয়া খেয়াল থাকে না। খাবার খায় না। সাবিনা বকা বকি করলে আলু ফ্রাই হাতে নিয়ে বলে,
” জামাই আদর করে না। খাবারে স্বোয়াদ পাই না।”

পড়তে বসে না মোটেও। ঘুর ঘুর করে বেড়ায়। বকাবকি করতে করতে যাও বই নিয়ে বসায়, বইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
” এতো পড়ে কি হবে? জামাই তো ভালোবাসে না। ”

কলেজে যেতে বললে বলে,
” কলেজে গিয়ে কি হবে? জামাই তো ক্লাস নিবে না।”

পার্কে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
” পার্কে এসেই কি হবে? জামাই তো প্রেম করতে চায়না।”

সাবিনার হয়েছে যত জ্বালা। মেয়ের মুখের বেড়িবাঁধ নেই। কখন কি বলে! মাঝে মাঝে দু একটা উত্তর করলেও এমন এমন সময় নিজেই লজ্জা পেয়ে মেয়েকে গালা গালি করে বসে। এদিকে জামাইটাও আসছে না। ঝগড়া হলো নাকি? মেয়েটা এসব বলে কেনো? মায়ের মন ভয় পায়। ইসমাইলকে বললে ইসমাইল শান্তনা দেয়। উল্টো বুঝায়,
” তুমি তো বাপের বাড়ি গেলে আসতেই চাইতে না। মাস দেড় দুয়েক না থেকে পা বাড়াতে না।আমি কি গিয়ে পরে থেকেছি? লজ্জায় এক দুদিনের বেশি থাকতেই পারিনি। জামাই আমাদের নতুন। লজ্জা পাবে এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে আকাশ পাতাল চিন্তা করোনা। মেয়ে আমার যোগ্য ছেলের হাতেই গিয়েছে। ওরা ভালোই থাকবে।”
সাবিনা চিন্তা দূর করে।

ফাহাদটা আজকাল বেশ জ্বালাচ্ছে। লাবিবা বিয়ের পর পরই সিম পাল্টে নিয়েছে। নতুন নাম্বারটা কিভাবে যেনো ফাহাদের হাতে চলে গিয়েছে। এখন বেশ জ্বালাচ্ছে। তানভীর কে নিয়ে তার যতযত খারাপ কথা!লাবিবা এসব কথা কানেও তুলে না। প্রতিপক্ষ যখন ক্ষেপে যায় তখন সত্যের চেয়ে মিথ্যার রেশ ই বেশী আসে। মন্দ কথায় কানে নিতে নেই। লাবিবা জানে তানভীর খান কে। তার প্রতি দিন দিন শ্রদ্ধাবোধটা বেড়েই যাচ্ছে। লাবিবার সুবিধার্থে যে এ বাড়িতে আসছে না সেটাও জানে। কিন্তু যোগাযোগ ঠিকই রেখেছে। প্রতিদিন রাতে ফোন করে খোঁজ নেয় লাবিবা কি করছে ? কি খবর! বেশ খানেক সময় করে কথা হয় তাদের। হৃদয়ে এক বুক প্রেম জমিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় প্রতি রাতে। আগে কিছু অনুভব না করলেও এখন করে। হাতে গুনা তিন চারদিন ভাগ্যে জুটেছে তানভীরের বুকে ঘুমাতে। সেই সময় টুকু আর এই দূরত্বের সময়টুকুর মাঝে প্রচুর ফারাক। লাবিবা প্রতি সকালে ঘুম থেকে উঠে দোয়া করে যেনো তানভীর লাবিবাকে ভালোবাসে। ভোরের দোয়া কবুল হয়। লাবিবার এই যে অসহায়ত্ব, মন খারাপের সময়, ছটফটানো সব কিছুর শোধ তখন তুলবে। কাউকে ভালোবেসে যখন তাকে হাতের কাছে রেখেও না পাওয়া যায় তখন ঠিক কেমন লাগে লাবিবা তখন হারে হারে তানভীরকে বুঝাবে। লাবিবার জীবনে ভালোবাসাটা এসেছে পবিত্রতার মাধ্যমে। সে কোন পরপুরুষ কে ভালোবাসেনি। স্বামীকে ভালোবেসেছে। তিন কবুলের জোরেই ভালোবেসেছে। এই ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই। লাবিবা চায় তানভীর ও তাকে ভালোবাসুক। লাবিবা নামক মানুষটাকে ভালোবাসুক।

লাবিবা ছোট্ট থেকেই গুলুমুলু। স্বাস্থ্যবতী। এই স্বাস্থ্য টুকুর জন্যই তাকে বেশ আদুরে লাগে। কিউটনেস ও বেড়ে গেছে তিনগুণ। উজ্জ্বল শ্যামা রংটায় তাকে বেশ মানিয়েছে। সব সময় গাউন পড়ে থাকায় তাকে পুতুলের মতো দেখায়। শত শত মেয়ের মাঝে তার এই অসামান্য সৌন্দর্য তাকে নির্ধিধায় আলাদা করে দেয়। প্রেমে পড়ার পর থেকেই তার মাঝে নিজেকে নিয়ে বেশ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নিজেকে আয়নায় দেখে কিছুতেই সেটিসফাইড হতে পারে না। যেখানে তানভীর টল ফিগার, সুন্দর ফেস কাটিং,সিল্কি চুল, পেটানো শরীর, ফর্সা গৌঢ় বর্ণের অধিকারী সেখানে তার ধারণা সে এই চেহারায় কোনো দিক থেকেই তানভীরের সাথে যায়না। যদিও সে জানে সৌন্দর্য মোহর সৃষ্টি করে সম্পর্ক মজবুত করার খুঁটি না। তবুও মনকে বোঝাতে পারে না। সপ্তাহে তিন দিন কলেজ শেষে প্রাইভেট পড়ে আসার আগে ঘন্টা দেড়েক করে জিমে ঘাম ঝড়িয়ে আসে। ইসমাইল ই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যদিও লাবিবা নিজে গিয়ে বলেনি। সাবিনার মাধ্যমে বলেছে। ইসমাইল বেশ খুশিই হয়েছে। আলসে মেয়েটা একটু ক্যালরি ক্ষয় করে আসুক। রোজগার তো কম ক্যালরি গিলছে না! যত ক্যালরি পূর্ণ খাবার তার ম্যানুতে থাকে। এসব খাবার খেয়ে জিম করলে স্বাস্থ্য মোটেই কমবে না। বরং শরীর সুস্থ থাকবে। এই ব্যাপারে ইসমাইল খুশি। তিনি মোটেও চাননা তার মেয়ের স্বাস্থ্য কমুক। স্বাস্থ্য কমার আগে মুখটাই শুকিয়ে ছোট হয়ে যায়। এতে মোটেও ভালো লাগেনা। বরং এই স্বাস্থেই মেয়েটা সুন্দর। কিন্তু লাবিবা বুঝলেতো। গুগুল করে কিসব কিসব ডায়েট চার্ট তৈরি করেছে। সেসব আবার সাবিনাকে বানিয়ে দিতে হয়। যেভাবে বানায় ঠিক সেভাবেই বাটিতে পড়ে থাকে। পেটুক লাবিবা পচা টেস্টের সেসব খাবার মুখে দিয়ে গিলতে পারলে তো! ছেহ! এসব কিভাবে খায়! ইসপগুলের ভুসি! পেটা পেটা! দেখেই বমি চলে আসে। দু একবার বমিও করে। তবুও প্রতিদিন তার চাই চাই টেবিলে। গরম জলে লেবুর রস! কোনো ভাবে গিলতে পারলেও সারাদিন তুত গ্যাস উঠে, এসিডিটি হয়। তবুও আপ্রাণ চেষ্টায় আছে। কিভাবে হিরোইন রা জিরো ফিগার বানিয়েছে সেসব দেখে দেখে চিন্তায় ঘুম হারাম করে দিয়েছে। হিরোর মতো জামাই তার ! নিজেকে তো হিরোইন বানাতেই হবে।

এক্সামের রুটিন দিয়ে দিয়েছে। লাবিবার পড়াশোনা কতদূর তা দেখতে তানভীর আজ শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। বড্ড অসময়! বেলা এগারোটার দিকে। লাবিবা কলেজে নেই যেহেতু সেহেতু বাড়িতেই আছে। কিন্তু পথিমধ্যে এমন কিছু দেখবে ভাবতেও পারেনি। ফাহাদের ফ্যামিলির চেপ্টার তো সে কবেই ক্লোজ করে এসেছে। এখন কিভাবে ফাহাদ লাবিবার সাথে? তাও এমন একটা নিরিবিলি রাস্তার পাশে! লাবিবা অবশ্য মাস্ক পড়েছে । তাতে কি? তানভীর কি চিনবে না তার বউকে? তানভীর কিছুটা দূরে গাড়ি পার্ক করে। কি হচ্ছে এখানে তার জানতে হবে। লাবিবার সাথেই বা কি কথা বলে? বেশ কৌতুহল জাগে। নিশ্চিন্ত বিষয় নিয়ে আবার অনিশ্চিন্ত হতে কে বা চায়! তানভীর অনেকটাই কাছে চলে আসছে। এখান থেকে ফাহাদের গলা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। দু হাত নাড়িয়ে লাবিবাকে বোঝাচ্ছে,
” উত্তরায় চার বেডরুমের ফ্ল্যাট নিয়েছি। সেখানে তোমার কোনো অসুবিধাই হবেনা।‌ প্রতি সপ্তাহে তোমাকে নিয়ে বেরোবো। তুমি আমি আমরাই থাকবো শুধু।”

লাবিবা মিন মিন করে কি বললো বোঝা গেলো না। ফের ফাহাদ বললো,
” তুমি দুঃস্বপ্নের জগতে আছো। দুঃস্বপ্ন দেখা এবার ছাড়ো। আকাশ পাতাল চিন্তা করছো এখন সব কিছু জেনেও। ”

এবারও লাবিবার গলা স্পষ্ট শুনলো না। তবে রেগে রেগে যে কথা বলছে সেটা ঠিকই বুঝতে পারছে। তানভীর কাছাকাছি আসতে আসতেই ফাহাদ লাবিবার হাত ধরে ফেলে। ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে।লাবিবা হাত ছাড়িয়ে নিতে চায়। কিন্তু ফাহাদ আবার চেপে ধরে।এই ঘটনা তানভীরের সহ্য হলোনা।তেড়ে এসে লাবিবার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো। হাতটা এমনভাবে মুচড়ে দিলো যে ফাহাদ ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠলো।
” জ্বালাতন করবি কর। কথা বলবি বল। দেখা করবি কর। বউয়ের হাত কেনো ধরবি? বউ টা কার?তোর নাকি আমার? ”

” স্যার ছাড়ুন ব্যথা পাচ্ছি। আপনি সম্মানিত লোক তাই এখনো সম্মান দেখাচ্ছি। এরপর কিন্তু আমি সম্মানটা দেখাতে পারবো না।”

” ঐ চুপ সালা। তোকে না সাবধান করেছি এই এলাকায় পা না মাড়াতে! তার পরেও তুই এসেছিস। আমার বউয়ের হাত ধরার সাহস কি করে হয় তোর?তোর বাপকে ফোন লাগাচ্ছি দারা। তোর বাপকে ফোন লাগা। এক্ষুনি ফোন বের কর। ”

লাবিবা হটাৎ তানভীরের আগমনে ভয় পেয়ে যায়। এভাবে ধরা খাবে ভাবতেও পারেনি। ফাহাদের হাতটা এখনো ছাড়েনি। ফাহাদের মুখটা ব্যথায় কুঁকড়ে আছে। ইসস রে! মোচড় টা কি বেশী লাগলো? উৎসুক হয়ে লাবিবা ঘাড় বাঁকিয়ে তানভীর যে জায়গায় ফাহাদের হাত ধরেছে সেদিকে ঝুঁকলো। সর্বনাশ! এই হাত মনে হয় না কোনদিন সোজা করতে পারবে। বেচারা! লাবিবার দুঃখ অনুভব হলো। সেটাও সাথে সাথে ঘুচে গেলো। তানভীর বড় সড় এক ধমক দিলো। সেই ধমক খেয়েই লাবিবা ছিটকে গেলো। ধমকটা লাবিবাকে দেয়নি। দিয়েছে ফোনের ওপাশে কাউকে।
” হারামজাদার বাপ! আপনার ছেলে এ মুখো কোন সাহসে হয়েছে? শালা আমার বউয়ের হাত ধরে। এই হাত আমি টুকরো টুকরো করবো তারপর তোর ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন। কলিজায় ডর নেই না? তানভীর খানের কথা অমান্য করার শাস্তি কি হয় আজ হাড়ে হাড়ে বুঝবে।”

ভয়ঙ্কর রাগী এই তানভীর খানকে দেখে লাবিবার হাতপা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করলো। আজ তার কপালে শনি আছে ভাবতেই ঘামতে লাগলো। চুরি করে দেখা করা! সাধ মিটবে। ফাহাদের হাত দেখে নিজের হাত চোখের সামনে তুলে ধরলো। এই হাতটা ঠিক এইখানে ধরেছিলো। আস্ত থাকবে তো?

তানভীর ফোন কান থেকে নামিয়ে নিয়েছে। লাবিবা হাত পা সোজা করে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে সাহস সংগ্ৰহ করছিলো। না তাকে কিছুই বলতে পারবেনা। আব্বুর সামনে যদি রাগ দেখাতে আসে তাহলে আব্বু আচ্ছা বকে দিবে। সেই সাহস ছুটে যায় আরেক ধমকে। এইবার ধমকটা লাবিবাকেই দিয়েছে।
” কি করছো তুমি ফাহাদের সাথে? লীলা শুরু করেছো? হাত ধরে টানাটানি? আব্বুকে জানাচ্ছি। আজকে তোমার একদিন কি আমার একদিন। ”

লাবিবা কি আরো সেখানে থাকবে? জুতো খুলে দেয় দৌড়। মনে মনে দোয়া পড়তে থাকে। ফরিয়াদ জানায়। আল্লাহ আব্বুকে যেনো কিছু না বলে। এমনিতেই বিয়ের পর থেকে জেদের বশে লাবিবা বেশী বেশী করছে তার উপর যদি এই কথা ক্ষুনাক্ষরেও কানে যায় তাহলে আর আস্ত রাখবেনা। দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়িই চলে এসছে। ট্রেড মিলে দৌড়ে দৌড়ে এখন আধঘন্টার এই দৌড়ের রাস্তা সে অনায়াসেই দৌড়ে এসেছে।আর পারছেনা। উঠোনে বসেই হাঁপাচ্ছে। কবির এসেছিলো ইসমাইলের সাথে দেখা করতে। বেরোনোর সময় দেখে লাবিবা টুলের উপর বসে হাপাচ্ছে। কবির এগিয়ে যায়। সামনে টুল টেনে বসে। লাবিবা হকচকিয়ে যায়। কবির কে দেখে স্বস্তি নেয়।
“ওপপ ভাইয়া। ”

“কিরে ম্যারাথনে জয়েন করবি নাকি? নাকি প্রাইজ টা জিতেই এলি”

” তা আর কম কিসে? যার সাথে বিয়ে দিয়েছো ! কত কাঠখড়ি পোড়াতে হচ্ছে আমাকে!”

” কি করলো আবার তানভীর?”

” কি করেনি বলো? বাব্বাহ! কি রাগ! ফাহাইদ্দা শুধু আমার হাতটা ধরেছে। সেজন্যই ফাহাইদ্দার হাতটা সোজা অকেজো করে দিবো? এটা কোনো কথা?”

ফাহাদের কথা শুনে কবিরের মুখটা থমথমে হয়ে যায়।হাসি খুশি মুখটা গম্ভীর হয়ে উঠে। লাবিবার হাত টেনে ধরে।
” ফাহাদ তোর হাত ধরবে কেন? তোর সাথে ফাহাদের দেখা হলো কিভাবে? যোগাযোগ করিস তুই? লাবিবা? উত্তর দে। ”

“ভাইয়া।”

” ঐ তোর ফোন দে। ”

কবির হাত পাতে।
” দিবি?'”

লাবিবা জোরপূর্বক হাসে। বলে,
“আমার কোন দোষ নেই ভাইয়া। ঐ আমাকে কল দেয়। ডিস্টার্ব করে। ”

” কবে থেকে?”

” শুরু থেকেই। ”

” কি বলে?”

” খারাপ খারাপ কথা উনার সম্পর্কে।”

” উনি কে?”

” উনি। স্যার। তানভীর স্যার।”

” কি বলে ডাকিস?”

” স্যার।”

” ঐটাতো কলেজে তোর স্যার। বাসায় কি ডাকিস?”

“স্যার।”

” থাপ্পড় খাবি। কলেজেও স্যার। বাড়িতেও স্যার। সব জায়গায় স্যার হলে সারাজীবন ঐ শিক্ষক ছাত্রীর সম্পর্কই বয়ে বেড়াতে হবে। ডাকের মধ্যেও একটা ব্যাপার আছে। নয়তো সম্পর্ক এগোবেনা।”

” তাহলে কি ডাকবো? ভাবীর মতো হেগো? ওগো? প্রাপ্তির আব্বু? নাকি যখন রোমান্স মুডে থাকে, কবির মাই হার্ট!”

কবির খুক খুক করে কেশে উঠে। গলা খাঁকারি দিয়ে শাসন করে,
” লাবিবা! বড় হয়েছিস। বিয়ে দিয়েছি। বড় ভাইয়ের সামনে মুখে লাগাম দে। ”

” আমার কি দোষ! ভাবীই তো ।”

” চুপ। ”

” আচ্ছা।”

” তানভীরকে জানিয়েছিস এসব কথা?”

” ওরে আল্লাহ! আস্ত রাখবে না। ”

” দোয়া করি তুই আস্ত থাক। আমি তানভীর কে বোঝাবো।”

” আব্বুর কানে যেনো না যায়। ”

” কাকাই তো ঝামেলাটা বাঁধায়। তোর ইন্টার পাশের পরেই বললাম বিয়েটা দিয়ে দিতে। তখনি তানভীরের সাথে বিয়েটা দিলেই হয়ে যেত। ”

” তখন তো বিয়ের ঘর আনতো ও পাড়ার মধু, সেই গ্ৰামের মোল্লার ছেলে, শহুরে বাবু! স্যারকে কোথায় পেতে? উনার কলেজে ভর্তি হবার আগে আমি উনাকে দেখেছি নাকি?”

” তুই দেখিসনি তো কি হয়েছে? আমরা তো দেখেছি। এমপি মহোদয়ের ছেলে! তাকে কে না চেনে?”

” তাও ঠিক। তোমরাই চিনো। আমার কিছু চিনতে হবেনা। ওসব রাজনীতি ঠাজনীতি আমার দেখে কাজ নেই। আমার শুধু বই আর মলের খবর রাখলেই হবে। ”

” পরশু ঢাকা যাচ্ছি। তোর আনকমন কি লাগবে বলিস।”

” সরি ব্রো! আমার জামাইয়ের অনেক টাকা! সো এখন আর তোমাদের টাকা লাগবেনা।”

অনেক টা ভাব দেখিয়েই বলে লাবিবা। কবির ভাব দেখে হাসে। মাথায়া গাট্টা মেড়ে চলে যায়। কবির চলে যাওয়ার পর লাবিবার মাথায় প্রশ্নটা নড়েচড়ে উঠে। ডানে বামে মুখ বাকায়।
” এ্যাহ! ইন্টার পাশের পর বিয়ে দিয়ে দিতো। তাও আবার এমপি মহোদয়ের ছেলের সাথে। মগের মুল্লুক! বোনকে কি আসমানের হুর ভাবে নাকি? কই এতো এতো বিয়ের সমন্ধ এলো একটাও তো ঐ লেভেলের সমন্ধ এলো না। ভাগ্যের ফেরে বিয়েটা হয়েছেতো এখন এমপি মহোদয় কি? মাটিতে পা পরছেনা। এমন ভাবে বলছে যেনো হাতের মোয়া! ”

কবির এখানে থাকলে শুনিয়ে দিতো কথাটা। লাবিবা হতাশ হয়। মুখে হাওয়া লুফে ফুস করে ছেড়ে দেয়।
” উফফ আমি সত্যিই লেইট লাবিবা! ”

চলবে __

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here