-আমি কোনো মেজর ফেজরকে বিয়ে করবো না বড়বাবা। তোমরা জানো না মেজররা কত ব্যস্ত মানুষ হয়। তারা সবসময় কাজে মগ্ন থাকে স্ত্রী পরিবারকে সময় দিতে পারে না। স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ারও সময় হয় না তাঁদের কাছে। আমি হলাম একজন ভ্রমণ প্রেমী মানুষ। আমার কী আর ঘরবন্দি থাকতে ভালো লাগবে নাকি! এখন বিয়ের কথা তোমরা তোমাদের মাথা থেকে সরিয়ে ফেলো আর আমাকে চট্টগ্রাম যাওয়ার অনুমতিটা দিয়ে দেও।
সকালের নাস্তা করতে করতে একদমে কথাটা বলল মাহানুর। এতো কথা বলায় গলা শুকিয়ে এলো তার। একটু পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো। মাহানুরের বড়বাবা হামজা খান এগিয়ে আসলো। মাহানুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ভোঁতা মুখে বলল,
-তুই তাহলে শপথ করেছিস চট্টগ্রাম না যাওয়া অব্দি বিয়ে করবি না মা?
মাহানুর মুচকি হাসলো। ত্বরিত গতিতে উপর নিচ মাথা নাড়ালো। হামজা খান ভাস্তির এহেন আচরণ দেখে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো। উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকলো মাহানুরের দিকে। মাহানুরের বাবা গম্ভীর ভঙ্গিতে মৃদু আওয়াজ তুলে বলল,
-তোমার সব কথা শুনি বলে এটাও শুনবো এইরকমটা ভেবো না মাহানুর। এতো দূরে আমি কখনই তোমাকে একা যেতে দেবো না।
মাহানুর বাবার কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। নিজ মতো খেয়ে হাত ঘড়িতে সময় দেখে উঠে দাঁড়ালো। কাঁধে ব্যাগ নিতে নিতে বলল,
-এখন আমি আসি ভার্সিটির জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাই বাই সবাইকে।
মাহানুরের বড়মা হাজেরা খান চেঁচিয়ে বলল,
-খাবার তো শেষ করলি না টিফিন দিয়ে দেই?
-না না। ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে নেবো চিন্তা করো না।
কথা শেষ হতে দেরি অথচ মাহানুরের যেতে দেরি নেই। আয়াস (মাহানুরের বড়বাবার ছোট ছেলে) ফিক করে হেসে ফোন টিপতে টিপতে নিজের রুমে চলে গেলো।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও খানদানি পরিবার হিসেবে খান পরিবার অন্যতম। বিশাল বড় দুই তালার ডুপেক্স বাড়িতে সহ পরিবার নিয়ে থাকেন তারা। বর্তমান যুগে এসেও তারা একসাথে থাকতে ভালোবাসে।
মাহানুরের পুরো নাম মাহানুর খান। অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছে সে। মাহানুরের বাবা চাচারা তিন ভাই দুইবোন। তার বড় বাবার নাম হামজা খান। দুই ছেলে তার একজন মেডিকেলে পড়ছে আরেকজন বিয়ে করে বাপ চাচার সাথে ব্যবসায় বসেছে। তারপর তার বাবা মেহরাব খান। একজন মেয়েই শুধু তার। তারপর মাহফুজ খান। যমজ দুই ছেলেমেয়ে তার। মাহানুরের ছোট ফুপ্পি তার পরিবার নিয়ে লন্ডনে শিফট হয়েছেন। বড়জন তার শশুরবাড়িতে।
মাহানুরের জন্মের সময় তার মা মারা যায়। ছোটকাল থেকে সবার অনেক আদরের সে। চাচীদের চোখের মণি, চাচাদের কলিজা আর বাবার প্রাণ সে। তারা সর্বদা চেষ্টা করে মাহানুরের যাতে মায়ের কমতি অনুভব না হয়। তবে মা তো মা-ই হয়! তারা তাঁদের জায়গায় অনেক ভালোবাসে তবুও একটা সময় মাহানুর মায়ের কমতি ভীষণ ভাবে অনুভব করে।
________________________
অহনা,,,,,,,,,,,
পিছু ফিরে চাহো না,
অহনা,,,,,,,,
একটু কথা কহো না,,,,,,,
প্রথম দেখাতে আমি
প্রেমে পড়েছি তোমার,,,
দুই চোখে আন্ধার দেখি
ঘুম আসে না আমার,,,,,
অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে মাহানুরের জন্য অপেক্ষা করছিলো তার বেস্টফ্রেন্ড অহনা। পাশে চায়ের টং দোকান থেকে এইরকম গান শুনে ভ্রু জোড়া কুঁচকে যায় তার। এই বিকৃত গানের কণ্ঠস্বরের মালিক এলাকার চেয়ারম্যানের বখাটে ছেলে রিদ। এ আজ নতুন নয় প্রায় তিনমাস ধরে এই বখাটে তার পিছনে পরে আছে। মাহানুর তাকে কয়েকবার সাবধান করেছে তবুও তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। নাছোড়বান্দার মতো পিছনে পরে আছে। পাশ দিয়ে একটা হেংলা’রোগা ছেলে যাচ্ছিলো। অহনাকে দেখে বড় একটি হাসি দিয়ে বলল,
-ভাবিসাহেবা একটু কিনারে চেপে দাঁড়ান। কত গাড়িগোড়া যাচ্ছে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায় তাহলে আমাদের ভাই বিষ ছাড়াই মরে যাবে!
অহনা চোখ মুখ শক্ত করে কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই পিছন থেকে একজন ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,
-ঐ ভাবিসাহেবার বাচ্চা! তোর ভাইকে তো একদিন আমিই বিষ ছাড়া মেরে ফেলবো যদি আর আমার বান্ধবীকে ডিসটার্ব করা না ছাড়ে!
মাহানুরকে দেখে সাহস পেলো অহনা। ছেলেটা ভীত চোখে দ্রুত করে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
অহনা রাগ হওয়ার ঢং করে বলল,
-আসলি কেনো তুই? না আসলেই তো পারতি।
-আর বলিস না দুঃখের কথা! নাস্তা করতে বসলাম আর বাড়ির সবাই আমার বিয়ের পেচাল নিয়ে বসলো।
-আহারে! বড় চাচ্চু তোকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে যা দেখছি!
-দুঃখের কথা আর বলিস না বইন। সিয়াইম্মা আর মুহিব কোথায়? আসেনি?
অহনা চোয়াল শক্ত করে ফেলে। বিরক্ত হওয়ার ভান করে বলল,
-আসলে দেখতি না? অন্ধ টন্ধ হয়ে গেলি নি আবার?
-তোর মুন্ডু।
অহনা আর মাহানুর সামনে পা বাড়াবে এমন সময় তাঁদের পথ আটকে দাঁড়ায় রিদ। অহনা কিছুটা ভীত হয়ে যায়। মাহানুর বুকে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। একদম ফোকফোঁকা গায়ের রঙ রিদের। বিলাই চোখ দিয়ে যখন তাঁদের দিকে তাকায় তখন মাহানুরের মনে হয় তাঁদের সামনে একটা নে’শা’খোর দাঁড়িয়ে আছে। কেমন ঘোলাটে চাহনি!
কালো রঙের শার্টয়ের ওপরের তিনটা বোতাম খোলা। গলায় একটি লকেট। বত্রিশটা দাঁত বের করে একটি হাসি দিলো। মাহানুর কিছুটা দূরে সরে গেলো কারণ রিদের মুখ থেকে গন্ধ আসছিলো। রিদ ভদ্র ভাবে বলল,
-শালিসাহেবা কেমন আছেন? দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
মাহানুর মুখে হাত দিয়ে বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
-দিনকাল তো ভালোই যাচ্ছিলো রিদ ব্রো এখন আপনের মুখটা খুলে দিনকাল গন্ধযুক্ত না করলেও পারতেন!
মাহানুরের কথায় রিদ দূরে সরে দাঁড়ায়। মুগ্ধ দৃষ্টি অহনার ওপর নিবদ্ধ রেখে বলল,
-ক্ষমা করেন শালিসাহেবা আজ সকালে আপনার বান্ধবীকে দেখতে আসার তাড়ায় মুখ ধুতে ভুলে গিয়েছিলাম।
-ছি! এইরকম খচ্চরকে আমার বান্ধবীর জামাই বানাবো না।
-এটা বলিয়েন না শালিসাহেবা! আমি এখনই যেয়ে দাঁত ব্রাশ করে আসছি।
-থাক ভাই আর করতে হবে না। আপনি জাস্ট আপনার চেলাপেলাদের অহনাকে বিরক্ত করতে না করবেন। ওর ভালো লাগে না এইসব।
-ঐটা বিরক্ত নাতো ওরা শুধুই আমার বেগমকে পাহারা দেয়।
বিরক্তে মুখ দিয়ে চ শব্দ বের হলো অহনার। পারে না এই মুলাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে! মাহানুর ভেবছেঁকা খেয়ে যায়। আহামক্কের মতো হেসে বলে,
-ওরে বাবা! আপনের কী মনে হয় আমি থাকতে আপনের বেগমের পাহারার প্রয়োজন? কোনো ছেলে তো আসুক একদম নাকমুখ ফাটিয়ে দেবো।
রিদ চুলে হাত বুলিয়ে লাজুক হাসি দিলো। মাহানুর অহনা একে ওপরের দিকে তাকায়। তারা বুঝলো না রিদের সরম পাওয়ার কারণ। মাহানুর ছোট ছোট চোখ করে জিগ্যেস করলো,
-আপনি হাসছেন কেনো বখাটে জিজু?
আরো লাজুক হয়ে উঠলো রিদ। ফর্সা মুখ মেয়েদের মতো লাল হয়ে গেলো। মাহানুরের ভীষণ হাসি পাচ্ছে। সে পারছে না গলা ফাটিয়ে হাসতে। রিদ কিছুক্ষন সময় নিয়ে বলল,
-তুমি আমাকে বখাটে জিজু বললে না তাই অনেক সরম করছে আমার! এক কাজ করিও তুমি আমাকে এটা বলেই ডেকো শালিসাহেবা।
মাহানুর অনেক কষ্টে হাসি চেপে দুইপাশে মাথা নারায়। অতঃপর রিকশায় উঠে বসে দুইজন। গাড়ি নিয়ে চলাচল করা মাহানুরের একদম অপছন্দ। রিকশায় ঘুরা তার ভীষণ পছন্দের। রিকশায় বসতেই অট্টহাসিতে ফেঁটে পরে মাহানুর আর অহনা। মাহানুরের হাসি থামার নাম নেই। বড় বড় নিঃশাস নিয়ে কোনোরকম হাসি আটকায়। বিড়বিড় করে অহনাকে বলে,
-ললিতা তুই এই মুলার গন্ধযুক্ত ঠোঁটে ভবিষ্যতে কিস করবি কিভাবে? সেটা ভেবেই আমি ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি!
অহনা রাগে কিড়মিড় করে উঠে। দুই চারটা কিল দেয় মাহানুরের পিঠে। মাহানুর আবারও হাসতে থাকে।
ভার্সিটির মেইন গেটের সামনে আসতেই দুইজন নেমে পরে রিকশা থেকে। তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলো তাঁদের বন্ধু সিয়াম আর মুহিব। রোদে ঘেমেনেয়ে একাকার দুইজন। পরিহিত শার্ট শরীরের সাথে চিপকে রয়েছে একদম। মাহানুর এগিয়ে গিয়ে সিয়াম নামক শ্যামবর্ণের যুবককে জোরে একটা চাপর মারে হাতের বাহুতে। ব্যাথা পাওয়ার ভনিতায় আর্তনাদ করে উঠে। অহনা মাথার হিজাব ঠিক করতে করতে বলে,
-তোরা আজ চলে আসলি কেনো আগে আগে? আমরা কতক্ষন অপেক্ষা করলাম কু’ত্তার দল।
সিয়াম হাতের বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
-উইযে মুহিবের জন্য জলদি আসতে হয়েছে। শা’লায় তার পাঁচ নম্বর গফের সাথে মিট করতে জলদি এসেছে।
-ওওওও!
অনেকটা সুর তুলে বললো অহনা। মুহিব দূর থেকে চেঁচিয়ে বলে,
-মুখ বন্ধ রাখ পঁচা মুলার তারছেড়া বেগম।
অহনা কটমট দৃষ্টিতে মুহিবের দিকে তাকালো। মাহানুর এতক্ষনে মুহিবের পিছনে দৌড়ানো শুরু করে দিয়েছে তাকে মারার জন্য। সিয়ামের কথা শুনে মাহানুর দাঁত বের করে হাসি দিয়ে উঁচু স্বরে বলল,
-মুহিবের বাচ্চা পাঁচ নম্বর গফ কেমন ছিল রে? মেয়ে ছিল তো নাকি আবার কোনো ছেলে মেয়ে রূপে এসেছিলো?
মাহানুরের কথায় ভার্সিটির আর আশেপাশে সকল মানুষ মুহিবের দিকে তাকিয়ে থাকে। কয়েকজন দাঁত কেলিয়ে হেসে চলে যাচ্ছে। মাহানুর শয়তানি হাসি দিয়ে নিজের পরিহিত লং ফ্রক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লালা লা লালা লা বলে নাচার অভিনয় করছে। মুহিব মাথা চেপে সেখানেই হাঁটুমুড়ে বসে পরে। নাক ফুলিয়ে মাহানুরের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
-যেটুকু সম্মান ছিল আজ সেটাও ডুবিয়ে দিলো মাহানুরের বাচ্চা মাহানুরে!
অতঃপর চারজন মিলে ক্যান্টিন থেকে হালকা পাতলা খাবার খেয়ে ক্লাসরুমে চলে আসে। সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় মাহানুরের দেখা হয় একজন বেহায়ার সাথে। মাহানুর কপাল কুঁচকে ছেলেটার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে বাধা দেয়। একটু ঝুঁকে বাঁকা হেসে বলল,
-ইগনোর করছো?
-হ্যাঁ করছি।
নিলিপ্ত ভঙ্গিতে বলল মাহানুর। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো সিয়াম আর মুহিবের। অহনা দুইজনের হাত ধরে দমিয়ে রাখলো। ছেলেটির নাম রাফিন। একসাথেই পড়ে। ভার্সিটির নাম্বার ওয়ান প্লেবয় এন্ড হ্যান্ডসাম ছেলে সে। বেশ কয়েকদিন ধরেই মাহানুরের পিছনে লেগেছে। মাহানুরের তেজি রুপ, ঝাঁঝালো কথা সবই ভীষণ এট্রাক্টিভ মনে হয় রাফিনের। এখনও মাহানুরের কাঠিন্য মুখের কথা শুনে বুকে হাত দিয়ে রাফিন বলল,
-হায়য়য়য়! কলিজায় লাগে আমার তোমার এই ধরণের কথা!
মাহানুর কিছু বলল না। রাফিন পুনরায় বলল,
-এভাবে তাকিয়ে থেকো না জান বুকে লাগে।
-জান নিয়ে হাতে ধরিয়ে দেবো বুঝতেও পারবি না চান্দু।
মাহানুর রাফিনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে যায়। রাফিন সেদিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। সিয়াম শক্ত চোখে একবার পিছনে ফিরে তাকায়। হাতের ইশারায় নজর সরিয়ে ফেলতে বলে। সেটা দেখে রাফিনের হাসি মুছে যায়। মাহানুরের এই বন্ধু নামক সো কলড চামচাদের দু চোখে সহ্য করতে পারে না সে। এখনও রাগে হাত মুঠি করে ফেলে।
বিকালে ছাদের দোলনায় বসে বই পড়ছিলো মাহানুর। অবসর সময় ভুতের উপন্যাস পড়তে ভালোবাসে সে। গুঁটিগুঁটি পায়ে দশ বছরের একটি মেয়ে এসে মাহানুরের ওড়না ধরে টানাটানি করতে থাকে। মাহানুর বিরক্ত হয়ে বললো,
-ফিহা দুষ্টামি করে না।
বাচ্চাটি তবুও স্থির হয়ে বসলো না। মাহানুরের আশেপাশে ঘুরতে থাকলো। মাহানুর শান্ত স্বরে বললো,
-ফিহা দিনে দিনে পঁচা হয়ে যাচ্ছে ফায়াজই ভালো ছেলে। একদম গুড বয়।
ফিহা আর ফায়াজ মাহানুরের ছোট চাচার যমজ ছেলেমেয়ে। দুইজনই পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে। ফায়াজ একদম শান্ত কিন্তু ফিহা একটু চঞ্চল প্রকৃতির।
এখনও মাহানুরের কাছে চকলেট দেওয়ার জন্য বায়না করছে। তার আবার দাঁতে পোকা। চকলেট খেতে ডাক্তার সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে তাই মাহানুর তাকে চকলেট দিচ্ছে না। ফিহা ছোটমোটো হয়ে মাহানুরের সাথে দোলনায় বসে পরে। কিউট ফেইস করে মাহানুরকে মানানোর চেষ্টা করে। মাহানুর আড়চোখে তাকে দেখে কিছু বলতে যাবে সেইসময় ছাদে উপস্থিত হয় মাহানুরের বড় চাচার বড় ছেলে আসীনের বউ সায়রিন।
অনেক বেশি ঢংঙ্গি আর স্টাইলিশ এই মেয়ে। সবসময় মুখের মধ্যে কতগুলো আটাময়দা মেখে রাখে। অথচ সে এমনেই অনেক সুন্দরী। মাহানুরকে দেখে এগিয়ে এসে বলে,
-ননদিনী বিয়েসাদি নাকি ঠিক হচ্ছে শুনলাম!
-কতবারই তো ঠিক হলো আর কতবারই তো আমি ভেঙে ফেললাম ভাবিজান।
মাহানুর বইয়ের মুখ ডুবিয়ে রেখেই জবাব দিলো। সায়রিন বললো,
-তা পছন্দ টছন্দ আছে নাকি হুমম?
-না ভাবি। এত জলদি বাপেরবাড়ি থেকে বিদায় হতে চাই না ভাবি। আরো কিছুদিন সবার ঘাড় মট’কি’য়ে খেতে চাই।
মাহানুর হালকা হেসে অনেকটা রসিকতার স্বরে বললো। সায়রিন হাতের ফোনে নজর রেখে বললো,
-শশুরমশাইয়ের বন্ধুর ছেলে কিন্তু অনেক হ্যান্ডসাম মাহানুর। কাল রাতে তার পিক দেখালো তোমার ভাই। তুমিও চাইলে একবার দেখতে পারো।
-আমার হ্যান্ডসাম ভাই থাকতে আপনার চোখে আবার অন্য ছেলেকে ভালো লাগে! ইটস ভেরি ব্যাড ভাবি।
-না সত্যি ছেলেটা সুন্দর! না তারিফ করে পারলাম না। অনেক লম্বা।
-লম্বা তো খাম্বাও হয়! আমার চোখে কোনো ছেলেকেই ভালো লাগে না আমার ভাই আর বাপ চাচাদের বাদে। বুঝলেন ভাবি?
-তুমি একবার পিক দেখবে ছেলেটার?
-না না ভাই! আপনার না বোন আছে? তার সাথেই নাহয় সেই হ্যান্ডসাম ছেলেটার বিয়ে দিয়ে দেন।
কথা শেষ করেই বই আর ফিহাকে নিয়ে মাহানুর ছাদ থেকে চলে যায়। সায়রিন দাঁড়িয়ে থেকে ভাবতে থাকে মাহানুরের কথা। আসলেই তো, তারও ছোট বোন আছে বিয়ের বয়সের। নিজের বোনের সাথে এই ছেলেকে কেমন লাগবে মনে মনে ভাবতে থাকলো সায়রিন। একসময় বড় একটি হাসি ফুটে উঠে তার মুখে।
মাহানুর বিরক্তে চোখ মুখ কুঁচকে সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর বিড়বিড় করে বলছে,
-যেখানেই যাই শুধু বিয়ে আর বিয়ে!এখন পর্যন্ত আমার স্টাডিই শেষ হলো না অথচ সবাই বিয়ের জন্য লেগে পরেছে! আমি যে এখনও একটা অবুঝ শিশু সেটা হয়তো সবাই ভুলেই গিয়েছে। ধেৎ ভালো লাগে না কিছু।
__________________________
কাশ্মীর,,,,,,,,,,,
-হ্যালো হ্যালো। মেজর আরহাম চৌধুরী হ্যালো।
ওপর পাশ থেকে কোনো আওয়াজ এলো না। শুধু একজনের ভারী নিঃশাসের শব্দ শোনা গেলো। অজ্ঞাত লোক কিঞ্চিৎ বিচলিত হয়ে পুনরায় বললো,
-হ্যালো, মেজর চৌধুরী আর ইউ হেয়ার মি?
এবারও কোনো উত্তর এলো না। অজ্ঞাত আঁতকে উঠলো। ওয়াকিট্যাকি মুখের সামনে ধরে অস্থির হয়ে কিছু বলতে যাবে এমন সময় ওপর পাশ থেকে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি বলে উঠলো,
-মেজর আরহাম চৌধুরী স্পিকিং।
-স্যার আপনি ঠিক আছেন? এখানের সবাই আপনার জন্য চিন্তিত।
উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললো অজ্ঞাত। আরহাম কয়েকবার গরম নিঃশাস ত্যাগ করলো। নাক থেকে চুঁয়ে চুঁয়ে পরা র’ক্ত বাম হাতের আঙুল দিয়ে মুছে রুক্ষ স্বরে বললো,
-আই এম ওকে। সেখানের সবাই ঠিক আছে?
-নো স্যার। অর্ধেকের বেশি মানুষ ইনজুরেড। ক্যাপ্টেনও ভীষণ আঘাত পেয়েছে।
ফোঁস করে দম নিলো আরহাম। তারপর বললো,
-এখন হেডঅফিস থেকে কল এসেছিলো?
-ইয়েস স্যার। বড় স্যার সবাইকে নিয়ে এখন ফিরে যেতে বলেছে বাংলাদেশে। আমাদের অনেক কম সৈন্য সুস্থ আছে তাঁদের নিয়ে মিশন সাকসেসফুল হবে না।
-ওয়েল। আজই বের হতে হবে তাহলে।
-জি স্যার। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে দেখা হচ্ছে।
-ইয়েস। যাত্রা শুভ হোক।
-খোদা হাফেজ স্যার।
-খোদা হাফেজ।
ওয়াকিট্যাকি বিছানার পাশে রেখে পা ছড়িয়ে বসে আরহাম। মাত্রই লুকিয়ে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে এসেছে সে। এই নিয়ে তিনবার চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। ভাবতেই বক্ষ মোচর দিয়ে উঠে তার।
তপ্ত মেজাজে পিটানো শরীর থেকে ইউনিফর্ম শার্ট খুলে ফেলে। ক্রোধে শার্টটা আছড়ে ফেললো মেঝেতে। পরোক্ষনেই এক লাথি মারলো বিছানার কাঠে। তোয়ালে নিয়ে ধপাধপ পা ফেলে ফেলে চলে গেলো শাওয়ার নিতে। এখন একমাত্র পানিই পারবে তার গরম মস্তিকে শীতল করতে।
>>>>চলবে?
#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#সূচনা_পর্ব
(আসসালামু ওলাইকুম। অবশেষে এই গল্পটা লেখা শুরু করলাম। সিজন ২ পড়ার জন্য সিজন ১ পড়তে হবে না। কাহিনী সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে শুধু ফ্যামিলি মেম্বার গুলো সিজন ১ এর মতোই থাকবে।
সূচনা পর্ব আপনাদের কেমন লাগলো বলবেন। নেক্সট পর্ব জলদি দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ।❤)