তবে_ভালোবাসো_কী ২ #Mehek_Enayya(লেখিকা) পর্ব ০৭

0
384

#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ০৭

এলামের শব্দে সুন্দর ঘুমটা ভেঙে যায় মাহানুরের। আরমোড়া দিয়ে বিছানায় উঠে বসে সে। চট্টগ্রাম থেকে আসার পর কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ। বাসায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত কেউ আর তাকে বিয়ের জন্য জোর করেনি। সকলে মিলে ডিসাইড করেছে মাহানুরের আগে আয়াসের বিয়ে দেবে। আয়াসকে বিয়ের বেপারে জিগ্যেস করলে সে বলে ফ্যামিলির পছন্দে বিয়ে করবে তার নিজস্ব কোনো পছন্দ নেই। তাই এখন সকলে লেগে পরেছে আয়াসের জন্য মেয়ে খুঁজতে।
ফুরফুরে মনে ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে আসে মাহানুর। হাতে তার ফোন। আজ যেহেতু শুক্রবার তাই সকলেই ড্রইংরুমে উপস্থিত। মাহানুর যেয়ে বাবা বড়বাবার মধ্যে বসে পরলো সোফায়। আয়াসের বিয়ে নিয়ে কথা বলছিলো তারা। মাহানুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হামজা খান বললেন,
-আম্মা নাস্তা করে এসো।
-একটু পরে করি বড়বাবা। তোমরা আয়াসের জন্য পছন্দ মতো মেয়ে খুঁজে পেয়েছো?
-মেয়ে তো আমাদের আগের থেকেই খোঁজা ছিল আম্মা। আমার ছোটকালের বন্ধুর মেয়েকে ছেলের বউ করে নিয়ে আসতে চাচ্ছি আমি।
-সত্যি!তাহলে তোমরা আমাকে আগে বলোনি কেনো?
-আগেই বলতাম কিন্তু মেয়ের পরিবার আমাদের প্রস্তাবে রাজি হবে কী না সেটা নিয়ে একটু দ্বিধায় ছিলাম।
মাহানুর ছোট চাচার কথা শুনে বলল,
-এখন রাজি হয়েছে?
-হ্যাঁ। তাঁদের শুধু একটাই চাওয়া মেয়েকে বিয়ের পরও পড়তে দিতে হবে।
-ওওও! এটা আর বড় কী! আমাদের ফ্যামিলিতে মেয়েদের যেভাবে স্বাধীনতা দেওয়া হয় বউদেরও সেভাবেই দেওয়া হবে।
গর্ব করে বলল মাহানুর। হামজা খান মুচকি হাসলেন। সায়রিন নিজের ফোন নিয়ে এগিয়ে আসে। মাহানুরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-মাহানুর ছবি দেখবে মেয়ের?
-হ্যাঁ হ্যাঁ।
সায়রিন তার সেলফোন এগিয়ে দেয় মাহানুরের কাছে। মাহানুর ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। লাল শাড়ী পরনে ফর্সা সুন্দর একটি মুখ তার চোখে ভেসে উঠে। গোলগাল ফেইস কাটিং, বড় বড় চোখ। মুগ্ধ স্বরে মাহানুর বলল,
-ওয়াও! কী সুন্দর দেখতে মেয়েটা। পেটুক এতো সুন্দর বউ পাবে ভেবেই তো আমার হিংসা হচ্ছে!

মাহানুরের কথায় উপস্থিত সবাই একসাথে হেসে উঠে। সায়রিন ফোন নিতে নিতে বলল,
-আজ সন্ধ্যার পর আমরা সকলে মেয়ের বাসায় যাবো বিয়ের ডেট ফিক্স করতে।
মাহানুর বিস্মিত কণ্ঠে বলে,
-এতো জলদি কেনো? তাঁদের কী কোনো তাড়া আছে নাকি?
মাহানুরের প্রশ্নে উত্তর স্বরূপ হামজা খান বললেন,
-মেয়ের বড় ভাই সরকারি চাকরি করে বেশি বন্ধ নিতে পারবে না। তাই একমাসের মধ্যে সে আসলে বিয়ে সেরে ফেলতে চায় তারা।
-ওওও।
মাহানুর আর বেশিকিছু ভাবলো না। বাসায় বিয়ে হবে। অনেক মার্কেটিং, অর্র্যাঞ্জমেন্ট করতে হবে। এইসব বিষয় কথা বলতে বলতে সায়রিনের সাথে ব্রেকফাস্ট করতে চলে যায়। বেচারি মাহানুর জানতেও পারলো না তার কার সাথে দেখা হতে চলেছে!
_________________________

-আমি এখন বিয়ে করবো না ভাইয়া। তোমরা কেনো আমাকে এতো জলদি বিদায় করতে চাচ্ছ? তুমি প্লিস আম্মুকে বুঝাও?

ন্যাকা কান্না করে বলল সুনহেরা। আরহাম বোনের কথায় ধপ করে নিঃশাস ত্যাগ করলো। শান্ত কণ্ঠে বলল,
-শান্ত হয়ে বস সুনহেরা। তুই কাউকে পছন্দ করিস?
-না। কিন্তু আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। আমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নের কী হবে ভাইয়া?
-তোর স্বপ্ন পূরণে কেউ বাঁধা দিবে না আমি কথা দিচ্ছি। আর আমি তো আসছিই দেখি ফ্যামিলি কেমন? আম্মুর কী দেখে ছেলেকে এতো পছন্দ হলো!
-কোথায় এখন তুমি?
-গাড়িতে আছি। কয়েক ঘন্টার মধ্যে এসে পরবো।
-ঠিক আছে আসো তুমি।

এই ভরদুপুরে অহনার সাথে দেখা করতে বের হয়েছে মাহানুর। সিয়ামকে কল করেছিল আসার জন্য কিন্তু সে একটা ফ্যামিলি প্রোগ্রামে যাচ্ছে। তাই মাহানুর এখন উপায় না পেয়ে একা একাই অহনার হোস্টেলে যাচ্ছে। শুক্রবার থাকায় রাস্তায় অনেক মানুষজন। ছেলেরা বন্ধুদের সাথে নামাজ পড়তে যাচ্ছে কেউ বা ছুটি পেয়ে ঘুরছে। মাহানুরের পরনে লং ফ্রক, মাথায় হিজাব.। হাতে একটি শপিং ব্যাগ। সে নিজ হাতে কাচ্চি রান্না করেছে আজ। গোসল করেই কোনোরকম তৈরি হয়ে অহনার জন্যে নিয়ে যাচ্ছে। সামনে তাকিয়ে হাঁটছিলো মাহানুর রিদদের বাসার সামনে আসতেই কয়েকজন ছেলের সাথে তাকে দেখতে পাওয়া যায়। মাহানুর দ্রুত পা চালিয়ে পাশ কেটে চলে যেতে চাইলে রিদ তাকে দেখে দৌড়ে আসে।
-আরেহ শালী সাহেবা যে?
মাহানুর মেকি হাসি দিয়ে বলল,
-আরেহ আমার না হওয়া বখাটে জিজু! ভালো আছেন?
-ভালো আর থাকতে কই দিলো তোমার বান্ধবী।
অনেকটা দুঃখী সুরে বলল রিদ। যেনো কত কষ্ট তার মনে! মাহানুর ভেবছেঁকা খেয়ে থমথমে মুখে বলল,
-ক কী করেছে আমার বান্ধবী? এখন পর্যন্ত তো আপনার নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরালোও না!
-নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরালেও আমার কলিজাটা ঠান্ডা হতো। কিন্তু সে তো আমাকে পাত্তাই দেয় না।
হাসি আসলেও দুই ঠোঁট চেপে হাসি দমিয়ে রাখে মাহানুর। সান্ত্বনা স্বরে বলল,
-আপনি জাস্ট একটু ফিটফাট আর কেয়ারিং হয়ে যান তাহলেই ও আপনাকে পাত্তা দিবে। ওহ অবশ্যই ওর সাথে কথা বলতে আসলে একটু সেন্টমেন্ট দিয়ে আসবেন ভাই।
-তাহলে ও আমাকে পাত্তা দিবে?
-ঐ পাত্তা দিবে ওর মাও দিবে। ফিকার নট।
রিদ একটু লাজুক হাসি দিয়ে বলল,
-ওর মাকে আমার চাই না শুধু ওকেই চাই। ওকে থ্যাংকু শালী সাহেবা।
-মেনশন নট। এখন তাহলে আসি। টাটা।

ছাড়া পেতেই মাহানুরকে আর কে খুঁজে পায়। বড় বড় পা ফেলে হাঁটতে থাকে। কিছুক্ষন হাঁটতেই অহনার হোস্টেলে এসে পরে। রুমের ভিতরে যেয়ে আরাম করে বিছানায় বসে মাহানুর। অহনা এই অসময়ে তাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে,
-এই সময় তুই এখানে আসলি কেন? সব ঠিক আছে তো?
মাহানুর কিছু বলল না। অহনার ছোট বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে। অহনা চিন্তিত হয়ে পুনরায় বলল,
-কিরে কিছু বলছিস না কেনো?
-কিছুমিছু রান্না করেছিলাম তোকে দিতে এসেছি।
এতক্ষনে অহনার নজর পরে ব্যাগের ওপর। বিছানায় বসে ব্যাগ খুলে ভিতরের মাঝারি সাইজের বক্সটি বের করে। ওপরের ঢাকনা খুলে ঘ্রাণ শুকতেই তৃপ্তির আওয়াজ করে উঠলো অহনা। উৎফুল্ল হয়ে বলল,
-বাহ্! কাল রাত থেকে আমার ভীষণ কাচ্চি খেতে মন চাচ্ছিলো দোস্ত। কী সুন্দর সুবাস!
-হয়েছে হয়েছে এখন বেশি তেল মারতে হবে না। আয়াসের বিয়ের কথা বলেছিলাম না? আজ সন্ধ্যায় পাত্রীকে দেখতে যাবো আমরা।
-কে কে যাবি?
-উম সবাই। কথাবার্তা ফিক্স হলে বিয়ের তারিখও ঠিক করে আসবে বলল বড়বাবা।
-যাক তাহলে আমরা আবার একটা বিয়ে এনজয় করতে পারবো।
-হো। শোন বিয়ের সব ফাঙ্কশনে আমরা সেম সেম ড্রেস পরবো।
-ওকে ওকে।
-আমি তাহলে এখন আসি। বাসায় অনেক কাজ আছে।
-আচ্ছা। দেখে শুনে যাবি।
___________________________

বিকাল যেয়ে সন্ধ্যা পেরিয়ে আসছে। আকাশ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই সূর্য ডুবে অন্ধকার করে যাবে চারপাশ। আলমিরা খুলে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে মাহানুর। সকলে তৈরি হয়ে বসে আছে অথচ তার পরার জন্যে ড্রেসই খুঁজে পাচ্ছে না সে। সায়রিন হাজেরা একটার পর একটা জামা মাহানুরের সামনে ধরছে আর মাহানুর বিরক্তে মুখ ছিটকাচ্ছে। মাহানুর ন্যাকা কান্না করে বলল,
-তোমরাই যাও আমি যাবো না গোড়ার ডিম।
-এটা বললে হবে! নিচে তোর বড়বাবা, বাবা দাঁড়িয়ে আছে মা। দেখ এই জামাটায় তোকে ভীষণ সুন্দর লাগবে।
হাজেরার হাতের জামাটা মোটামুটি ভালো লাগলো মাহানুরের কাছে। মাহানুর হাত বাড়িয়ে জামাটা নিয়ে একটু নেড়েচেরে দেখলো। তারপর ডিসাইড করলো এটাই পরবে। ওয়াশরুম যেয়ে জামা পরে এসে হালকা তৈরি হয়ে নেয়। নিচে এসে দেখে সবাই যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। মাহানুর আয়াসের পাশে এসে দাঁড়ায়। মাহানুরকে হাসতে দেখে বিরক্তে আয়াস বলল,
-এভাবে ছাগলের মতো হাসছিস কেনো?
-খুশিতে নাচতে মন চাচ্ছে আমার। আমার আগে তোর বিয়ে হবে। ইয়াহু।
আয়াস বাঁকা চোখে তাকালো। মাহানুর তার কানে কানে বলল,
-মেয়ে দেখতে কিন্তু সেই!
-দেখেছিস তুই?
আগ্রহী হয়ে জিগ্যেস করলো আয়াস। মাহানুর মাথা নাড়ালো। আয়াস বিড়বিড় করে বলল,
-ভাই আমার অনেক নারভাস ফীল হচ্ছে। তুই আমার লগে লগে থাকবি। বুঝলি?
-আমার মতো একজন বোন থাকতে তোর চিন্তার কারণ নেই। বাই দা ওয়ে, তুই মেয়ে নাকি ছেলে রে ভাই? তোর নারভাস ফীল হচ্ছে!
-প্রথমবার বিয়ে করতে যাচ্ছি না তাই এমন হচ্ছে।
আয়াসের কথায় মাহানুর আহাম্মক বনে যায়। এলোমেলো দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
মেহরাব খান, হামজা খান, মাহানুর, আসীন, আয়াস আর সায়রিন যাচ্ছে মেয়ের বাসায়। মাহফুজ খানের কাজ থাকায় সে যেতে পারবে না। হাজেরা আর লুৎফা বাসায় থাকবে ফায়াজ, ফিহাকে নিয়ে। ফিহা যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করছে। মাহানুর আবার ভাইবোনদের কান্না দেখতে পারে না। তাই লুৎফাকে বলল ফিহাকে তৈরি করে তার সাথে দিয়ে দিতে। ফায়াজকে যাওয়ার কথা বললে সে মা ছাড়া যাবে না এটাই বলে। অতঃপর সকলে বেরিয়ে পরে। দুইটি প্রাইভেট কারে সবাই বসেছে। প্রথমটায় মাহানুরের বাবা, বড়বাবা, আসীন আর সায়রিন। দ্বিতীয়টায় মাহানুর, ফিহা আর আয়াস। শোঁশোঁ শব্দ করে চলছে গাড়ি। মাহানুর ফিহার সাথে দুষ্টামি করতে করতে আয়াসকে জিগ্যেস করে,
-তোর হবুবউ কোন ক্লাসে পড়ছে রে আয়াইস্যা?
-মেডিকেলেই পড়ছে নাকি!
-বাবাহ! বাড়িতে দুই দুইটা ডাক্তার থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের আর হসপিটাল যেতে হবে না।

অনেকটা সময় পর নিদিষ্ট স্থানে এসে গাড়ি থেমে যায়। মাহানুর জানালা দিয়ে বাহিরে তাকায়। বিশাল জায়গা জুড়ে দুতালার একটি ডুপেক্স বাসা। বাড়িটা বেশি একটা বড় নয় আবার ছোটও নয়। সাদা রঙ আর মার্বেল পাথর দিয়ে বাড়িটা সুন্দর করে ডিজাইন করা। আশেপাশে বাগানের মতো গাছগাছালি দিয়ে ভরা আর মধ্যে বাসাটি। যেহেতু অন্ধকার নেমে এসেছে তাই মাহানুর আর ততো বেশিকিছু দেখতে পেলো না। ফিহার হাত ধরে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। সায়রিন তাঁদের গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে আসে। মাহানুরের পাশে এসে দাঁড়িয়ে চমকিত নয়নে বলল,
-বাড়িটা কত সুন্দর না মাহানুর? রিসোর্টের মতো একদম!
মাহানুর একই ভঙ্গিতে বলল,
-আয়াইস্যা তোর কপাল! এইরকম সুন্দর একটি বাড়ির মেয়ের জামাই হবি তুই!
-আসলেই!(সায়রিন)
-এইরকম সুন্দর বাড়ির বউ হলে জীবনে আর কী লাগে ভাই!
মাহানুরের কথায় শব্দ করে হেসে উঠলো সায়রিন। আয়াস ভোঁতা মুখ করেই এগিয়ে গেলো। কলিংবেল বাজাতেই একজন রমণী এসে দরজা খুলে দেয়। শাড়ী পরিহিত রমণী হাসি মুখে সালাম দিয়ে সবাইকে ভিতরে প্রবেশ করতে বলে। হামজা খান সালামের উত্তর দিলো। রমণীর সাথে কুশলবিনিময় করতে করতে ভিতরে ঢুকলো। মাহানুর ছোট ছোট চোখ করে আশেপাশে নজর বুলাচ্ছে। সবাই একসাথে ড্রইংরুমে সোফায় বসে পরে। রমণী মাহানুরকে দেখে এগিয়ে আসে। থুতনি ধরে বলল,
-মাহানুর না? মাশাআল্লাহ! কত বড় আর সুন্দর হয়ে গিয়েছে!
মাহানুর একটু সরম পেলো। হালকা হাসার চেষ্টা করলো। রমণী বসে তার বাবা চাচার সাথে কথা বলতে থাকে। ভৃত্যরা একে একে বিভিন্ন ধরণের নাস্তা পানি এনে রাখলো টেবিলে। দ্রুত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো একজন তরুণী। কুলে ছোট একটি বাচ্চা। মাহানুর জানলো সে মেয়ের বড় বোন আর এই সুন্দর রমণী মেয়ের মা। তাঁদের বাবা নেই। আরো কয়েকজন আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিল তাঁদের। পাত্রীর বড় বোনের নাম সনিয়া। মাহানুরদের পাশে এসে বসে সে। রমণী কথায় কথায় মেয়েকে জিগ্যেস করে,
-সনিয়া আরহাম কোথায়? এখনও এলো না যে?
-ভাইয়া আসছে আম্মু।
আরহাম নামটা শুনে কেমন ধক করে উঠলো মাহানুরের চিত্ত। কোনোরকম অশান্ত মনকে বুঝ দিলো এই আরহাম ঐ জিরাফ হবে না। সায়রিন মাহানুরের কানের সামনে মুখ এনে ধীরে ধীরে বলল,
-মাহানুর আমি যেটা গেস করেছিলাম সেটাই হলো। শশুরমশাই তার যে বন্ধুর ছেলের সাথে তোর বিয়ের কথা বলেছিলো তার মেয়েকেই এখন সে আয়াসের বউ বানাবে। তারপর হয়তো তোমার পালা ননদিনি!
-কী নাম ছিল ঐ ছেলের?
কম্পিত কণ্ঠে জিগ্যেস করলো মাহানুর। গলা শুকিয়ে এসেছে তার। সায়রিন ছটপট বলল,
-উমম আরহাম চৌধুরী। আর সে একজন আর্মিও।
-আর্মি না মেজর জিরাফ চৌধুরী ভাবি।

সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে কটমট জবাব দিলো মাহানুর। আবারও এই পুরুষটির সাথে সাক্ষাৎ হবে কল্পনাতেও ভাবেনি সে। আবার, এই লোকের সাথেই নাকি তার বিয়ের কথা বলেছিলো ভাবতেই মাথায় আগুন ধরে গেলো তার। পরিহিত শার্টয়ের হাতা গুটাতে গুটাতে নিচে নামছিলো আরহাম। অন্যমনস্ক হয়ে ড্রইংরুমে তাকাতেই সর্বপ্রথম তার নজর পরে সোফায় তার দিকে তাকিয়েই বসে থাকা মাহানুরের দিকে। চলন্ত পা জোড়া থেমে যায় তার। মাহানুরকে নিজের কল্পনা মনে করে আঁখিজোড়া বন্ধ করে ফেলে আরহাম। মনে মনে বলল,
-সেই জংলী মেয়ে এখন আমার কল্পনায়ও আসা শুরু করেছে! শিট! শ্যাম অফ ইউ আরহাম। শ্যাম অফ ইউ। নিজের হৃদপিন্ডকে শান্ত কর আর ঐ মেয়েকে নিয়ে ভাবা বন্ধ কর।

>>>>চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here