তবে_ভালোবাসো_কী ২ #Mehek_Enayya(লেখিকা) পর্ব ০৬

0
168

#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ০৬

আকস্মিক ঘটনায় চমকিত মাহানুর খনিকের জন্যে নিজের অস্তিত্ব ভুলে যায়। যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে কম্পিত পায়ে এগিয়ে আসে। আরহাম পকেটে হাত দিয়ে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে মাহানুরকে দেখছে। তার গম্ভীর মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই এই মুহূর্তে সে কতটা ভয়ংকর রেগে আছে। ভালোমতো আগাগোড়া পরোক্ষ করে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। সিয়াম এগিয়ে এসে বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
-আরহাম ভাই! কেমন আছেন?
-এইতো ভালো আছি। আপনারা ভালো আছেন?
-হ্যাঁ। আপনাকে এখানে দেখতে পাবো আশা করিনি!
-আমিও!
স্মিত হাসার চেষ্টা করে বলল আরহাম। বাঁকা চোখে মাহানুরকে আরেকবার দেখলো। কেমন ভয়াত মুখে চোখ ছোট ছোট করে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভীষণ হাসি পেলো আরহামের। অহনা গালে হাত দিয়ে অবিশ্বাস কণ্ঠে বলে,
-আপনি আর্মি! আই মিন মেজর!
আরহাম খানিকটা ঠোঁট প্রসারিত করে কিন্তু উত্তর দেয় না। হানিফ এতক্ষন পর বলে,
-তোমরা স্যারকে আগের থেকেই চেনো?
-হ্যাঁ। (সিয়াম)
-কিভাবে?
-সেটা বিরাট কাহিনী ধীরেসুস্থে একদিন বলবো নে। (সিয়াম )
আরহাম আশেপাশে নজর বুলিয়ে হাত ঘড়িতে সময় দেখে নেয়। হানিফের উদ্দেশ্যে বলল,
-উনারা তোমাদের আত্মীয় হয় নাকি হানিফ?
-হ্যাঁ। আমার চাচাতো বোন অহনার ফ্রেন্ড তারা। হাফসার বিয়ের জন্যে এসেছে।
-ওহ।
মাহানুর ফোনের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনে যে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে এতে তার একটুও ভ্রুক্ষেপ নেই। আরহামকে সম্পূর্ণ ইগনোর করলো সে। হানিফ মাহানুরকে চুপ থাকতে দেখে বলল,
-কি হলো মাহানুর? আরো ভিতরে যাবে না?
মাহানুর ফোন থেকে মাথা তুলে মেকি হেসে আমতা আমতা করে বলল,
-না ভাইয়া এখন বাসায় যেতে হবে।
-এখনই চলে যাবি?
অবাক কণ্ঠে অহনা বলল। আরহাম বুঝলো মাহানুর তাকে দেখে অস্বস্তি অনুভব করছে। মাহানুর ক্ষণেই একবার আরহামকে দেখে ত্বরিত দেখিয়ে বলে,
-হ্যাঁ।
মাহানুরের মস্তিকে এখন একটা কথাই বিচরণ করছে। যেভাবেই হোক জিরাফের সামনে থেকে পালতে হবে। হানিফ মাহানুরের কথায় সহমত হয়ে বলল,
-ঠিক আছে আমি একটু পর বাসায় যাবো তোমাদের গেট পর্যন্ত দিয়ে আসি। চলো।
সবাই হাঁটা ধরে যাওয়ার জন্য আচমকা মাহানুরের জুতোর ফিতা খুলে যায়। রাগে বিড়বিড় করে জুতোকে বকতে থাকে সে। সকলে অনেকটা সামনে চলে গিয়েছে তাই তাড়াহুড়ো করে নিচু হয়ে বসে ফিতা লাগিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সামনে পা বাড়াবে এমন সময় সে তার কানের কাছে কারো গরম নিঃশাস অনুভব করে। ভড়কে যায় মাহানুর।

-এখন যে ভীত মুখশ্রী দেখছি সেটা সেদিন রাতে মিস করেছি! এখন আমিও যদি তোমার মতো তোমার ঘাড়ে নিজের চিহ্ন বসিয়ে দেই তখন তো তুমি বলবে আমি তোমার সাথে অসভ্যতামি করেছি।
মাহানুর ছিটকে দূরে সরে গেলো। পিছনে ফিরে ছোট ছোট চোখে আরহামকে দেখলো। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
-অসভ্যের মতো একটা মেয়ের এতো নিকটে আসতে সরম করলো না আপনার? ভালো করেছি দাগ বসিয়েছি দরকার পরলে পুরো শরীর সেফটিপিন দিয়ে ফুটো করে দেবো। দেন মেয়েদের চড় মারার ইচ্ছে আর পোষণ করবেন না মিস্টার জিরাফ।
আরহাম দু’হাত বুকে গুঁজে টানটান হয়ে দাঁড়ায়। পূর্ণ নজরে আপাদমস্তক মাহানুরকে লক্ষ্য করলো। বাঁকা হেসে ঠোঁটের ওপরের অংশে হাত দিয়ে বলল,
-লাইক সিরিয়াসলি তুমি মেয়ে? কোনোদিক দিয়েও মেয়ে লাগছে না! তোমাকে ছেলে বানাতে চেয়ে ভুল করে মেয়ে রূপ দিয়ে ফেলেছে সৃষ্টিকর্তা।
ধপ করে জ্বলে উঠলো মাহানুর মস্তিক। রাগে কপাল কুঁচকে ফেললো সে। সুন্দর চেহারা রোদ আর ক্রোধের কারণে লাল হয়ে গেলো মুহূর্তেই। বড় বড় নিঃশাস নিয়ে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,
-নিলজ্জ, বেহায়া! আর্মিরা অ্যাকচুয়ালি অভদ্র হয় আজ সেটা নিজ চোখে দেখে নিলাম।
মাহানুর কথা শেষ করেই যেতে উদ্যত হয়। কিছু মনে পরার ভঙ্গিতে পুনরায় পিছনে ফিরে একটু এগিয়ে যায়। আরহামের একদম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোয়াল শক্ত করে এটিটিউড নিয়ে বলল,
-নেক্সট টাইম আমার চোখের সামনে পরলে আপনার এই সুন্দর হৃদপিন্ড সেফটিপিন দিয়ে ক্ষত’বিক্ষ’ত করে দেবো। মাহানুরের বুকের পাঠা অনেক বড় কোনো মেজর হোক বা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হোক কাউকেই সে ভয় পায়।
-তোমার মেয়েলী কোমল গালে চড় মারতে ভীষণ কষ্ট হয় আমার! আই ব্যাল্ডলি উইশ তুমি ছেলে হতে তাহলে এখন আমার হাত তোমার গালে হতো!
নিলিপ্ত ভঙ্গিতে বলল আরহাম। মাহানুর তোয়াক্কা করলো না তার কথা। বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো। হাত মুঠিবদ্ধ করে চোখ বন্ধ করে খুলে ফেলে। আজ যদি মাহানুরের জায়গায় অন্য কেউ হতো তাহলে এতক্ষনে আরহাম তাকে আধমরা বানিয়ে ফেলতো। মেয়ে বলেই এখন ছাড় পেয়ে গেলো মাহানুর। মাথার টুপি খুলে হাতে নেয়। চুলে হাত বুলাতে বুলাতে মনে মনে বলল,
-মেয়েদের এতো এটিটিউড শোভা দেয় না। মেয়ে হবে পদ্ম ফুলের মতো কোমল নাকি এইরকম কাঁচামরিচ! আমাদের আবার দেখা হচ্ছে মিস। আমিও দেখি কিভাবে আমার হৃদপিন্ড ক্ষ’তবি’ক্ষত করেন!

মাহানুরদের এগিয়ে দিয়ে এসে আরহামের কাছে আসে হানিফ। দুইজন হাঁটতে হাঁটতে ভিতরে চলে যায়। হানিফ কথায় কথায় লাজুক হয়ে প্রশ্ন করলো,
-আরহাম ভাই মাহানুরকে আপনার কাছে কেমন লেগেছে?
আরহাম খানিকটা ভড়কালো। ভাবুক হয়ে বলল,
-মাহানুর কে?
-এইযে কিছুক্ষন আগে দেখলেন যাকে ব্ল্যাক ড্রেস পরা ছিল।
-ওহ ইয়েস। হঠাৎ এইরকম প্রশ্ন জিগ্যেস করার কারণ?
-অ্যাকচুয়ালি আমার তাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে। ভাবছি বিয়ের প্রপোসাল দেবো।
-বাহ্! বেশ তো।
তাঁদের কথার মাঝে উপস্থিত হয় জোবান। একবার আরহাম তো একবার হানিফকে দেখে বলল,
-কে বিয়ে করছে? আর হানিফ ভাই আপনি এখনও বাসায় যাননি?
-এইতো যাবো। স্যার আপনারা কিন্তু আসবেন।
-আরহাম স্যার তো বলল যা,,,,,
জোবান কথা শেষ করতে পারলো না আরহাম তাকে থামিয়ে দিলো। শান্ত কণ্ঠে বলল,
-সুযোগ সুবিধা পেলে অবশ্যই যাবো হানিফ মিয়া।
______________________

তৈরি হয়ে গোমড়া মুখে সোফায় বসে আছে মাহানুর। বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোন টিপছে মুহিব আর সিয়াম। অহনা আয়নার সামনে বসে কানের দুল পরছে। আতিকা অহনার চুল বেঁধে দিচ্ছে। বিয়ে যেহেতু দুপুরে পড়াবে তাই মোটামুটি তাঁদের সকল মেহমান চলে এসেছে। ছাদের ওপর খাওয়া দাওয়ার জড়তর চলছে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে বাসায় আসার পর থেকে কেমন গম্ভীর হয়ে আছে মাহানুর। কেউ কিছু বললে বা জিগ্যেস করলে তার সাথে তেড়া কথা বলছে। কালো রঙের লং ফ্রক পরেছে সে। মধ্যে সিতি করে চুল ছেড়ে রেখেছে, ন্যুড লিপস্টিক আর গাঢ় কালো কাজল দিয়েছে সেটাও অহনার জোরাজোরিতে। সিয়াম ফোনে দৃষ্টি রেখেই বিরক্ত হয়ে বলল,
-বল না মাহানুর কি হয়েছে তোর? কেউ কিছু বলল নাকি? কেনো যাবি না উপরে?
মাহানুর অন্যমনস্ক হয়ে বসে রইলো। মুহিব ফোন পকেটে রেখে ভাবুক হয়ে বলল,
-আমার মনে হয় মাহানুরের পেট খারাপ হয়েছে। সরমে কাউকে বলতে পারছে না তাই ওপরে যাবে না।
মুহিবের কথায় অহনা বিচলিত হয়ে বলল,
-দোস্ত সত্যি তোর পেট খারাপ হয়েছে? ওহ বুঝেছি তাই তখন ক্যান্টনমেন্ট থেকে জলদি চলে আসলি? আমি কি ঔষধ এনে দেবো?
তাঁদের কথা শুনে কান গরম হয়ে এলো মাহানুরের। চোয়াল কঠিন থেকে কঠিনরত্ব হয়ে উঠলো। এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে তেড়ে গিয়ে অহনা আর মুহিবের পিঠে দুইটা কিল বসিয়ে দেয়। তারপর কিড়মিড় করতে করতে বলে,
-আর একটা বাজে বকবি গলা টিপে তোদের দুইটার জান নিয়ে নেবো আমি। আবর্জনা গুলা!
আকস্মিক ঘটনায় কেউ কিছু বলতেও পারলো না। মাহানুর কয়েকবার নিঃশাস নিয়ে বলল,
-আজই চলে যাবো আমরা।
-আজই!
সকলে একসাথে অবাক হয়ে বলল। মাহানুর ঠান্ডা স্বরে বলল,
-বাবা কল দিয়েছিলো বড়বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরেছে তাই সন্ধ্যার পরই আমাকে চলে যেতে বলেছে।
-কাল সকালে যাই? (অহনা)
-তোরা নাহয় কাল সকাল যা আমি একাই আজ চলে যাবো।

সিয়াম তপ্ত নিঃশাস ছাড়লো। মাহানুর অকারণে এইরকম ব্যবহার করে না অবশ্যই কিছু একটা হয়েছে। মনে মনে ভাবলো সে। তারপর বলল,
-একসাথে এসেছি একসাথেই যাবো। অহনা তুই নাহয় কিছুদিন থেকে তারপর আয়।
-না। একসাথেই যাবো।
মাহানুর আর কিছু বলল না। সবাইকে রেখে সে একাই চলে যায় বাহিরে। মুহিব কপালে হাত দিয়ে বলল,
-ভাই আমার মনে হয় মাহানুরকে ভুতে ধরেছে!কেমন ডায়নিদের মতো আচরণ করলো!
-হোপ শা’লা। (সিয়াম)

ছাদে এসে সবাই মিলে বউয়ের সাথে ছবি তুললো। তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে চেয়ার পেতে এক কিনারে বসলো। মাহানুর এখন যখন একটু স্বাভাবিক হচ্ছিলো এমন সময় কাঙ্ক্ষিত একটি মুখ দেখে মেজাজ গরম হয়ে যায় তার। তবুও নিজেকে বুঝ দিলো যেভাবেই হোক স্বাবাবিক থাকবে। এইরকম মেজর ফেজর তার সুন্দর মুডকে নষ্ট করতে পারে না। এবার লাগতে আসুক একদম চোখে সেফটিপিন ঢুকিয়ে দেবে জিরাফের। আগের মতোই হাসাহাসি করতে লাগলো সে। তাঁদের কথায় ফোড়ন কেটে অহনা বলল,
-হায়য়য়য়! ইয়ার এতো হ্যান্ডসাম কেনো সে!
-কোন ছাগলরে দেখে আবার ক্রাশ খাইলি তুই?
মুহিবের কথায় ঝাঁঝালো কণ্ঠে অহনা বলল,
-সামনে তাকা গাধা।
মুহিবের সাথে বসা সকলেই সামনে তাকায় শুধু মাহানুর বাদে। পার্পল রঙের শার্ট আর সাদা রঙের পেন্ট পরেছে আরহাম। হানিফের বাবা মা সহ সকলে বেশ আদিখ্যেতা করছে তাকে নিয়ে। আরহামও রুক্ষ মুখে স্মিত হেসে সকলের সাথে কথা বলছে। এতো মানুষের ভিড়ে আচমকা তার নজর আটকে যায় কিছু দূরে বসা মাহানুরের দিকে। ফোনে কিছু একটা দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে সে। কালো জামায় খারাপ লাগছে না কিন্তু কিছু একটার কমতি মনে হলো আরহামের। তবে ওয়েস্টার্ন থেকে দেশি লুকই বেস্ট! আরহাম নেত্রপলব সরিয়ে ফেলতে চাইলে সকলের অগোচরে তার বেহায়া দৃষ্টি সেখানেই যাচ্ছে। কীসের জন্যে এই গোমড়া মুখো মেয়েটা এতো হাসছে ভীষণ জানতে ইচ্ছে হলো তার। হানিফ আরহামকে টেনে অহনাদের ঐখানে নিয়ে যায়। অহনা আরহামকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। দুইটা চেয়ার এনে দুইজন বসে পরে। আরহাম প্রথম একটু অস্বস্তি অনুভব করলেও ধীরে ধীরে সবার সাথে বেশ ভাব হয়ে যায় তার। মুহিব আরহামকে জিগ্যেস করলো,
-ভাই আপনি এই বডি কিভাবে বানালেন? একদম সেই কিন্তু।
-তার ফিটবডি হবে না তো কার হবে! সকাল, দুপুর, রাত যখনই সে সময় পায় তখনই ব্যায়াম করে।
হানিফের কথায় মুহিব অবাক হলো। মাহানুরকে পূর্ণ নজরে দেখে হানিফ বলল,
-তোমাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে মাহানুর।
-ধন্যবাদ হানিফ ভাইয়া।
বড় একটি হাসি দিয়ে বলল মাহানুর। হানিফ এখন আর চুপ থাকলো না ভাইয়া ডাক শুনে। মনে মনে ভাবলো এখন মাহানুরকে তার মনের কথা বলে দেবে। তাই আহত হয়ে বলল,
-ভাইয়া বাদে অন্যকিছুও তো বলতে পারো মাহানুর!
-ওওওওওওও!
সবাই একসাথে বলে উঠলো। হানিফ খানিকটা সরম পেলো। মাহানুর একই ভঙ্গিতে বলল,
-আপনি আমার বড় নাম ধরে কিভাবে ডাকি বলেন?
মাহানুরের ন্যাকামো দেখে অকারণেই বিরক্ত লাগতে শুরু করলো আরহামের। আবার হানিফের ওপরও কেমন যেনো একটা চাপা রাগ অনুভব করলো। সকালেও তো হানিফ তাকে বলল সে মাহানুরকে প্রপোস করবে তাহলে এখন তার কেনো বিরক্ত, রাগ উঠছে! হানিফ পুনরায় বলল,
-সত্যি বলতে আমি এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না। তোমাকে বিয়ে করতে চাই আমি।
মাহানুর শুকনো ঢোক গিললো। মনে মনে হাসলেও বাহ্যিক দিয়ে চমকিত হওয়ার ভান করলো। আরহাম চোয়াল শক্ত করে রুদ্ধদার দৃষ্টিতে মাহানুরকে দেখছে। সিয়াম, মুহিব, অহনা জানে এখন মাহানুর একটা মিথ্যা রিলেশনশিপ এর কথা বলবে। যখনই কেউ তাকে প্রপোস করে সে এটাই করে।
-সরি ভাইয়া আমার বিএফ আছে।
ব্যথার্ত নয়নে তাকিয়ে রইলো হানিফ। আরহামের মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো না। হানিফ উৎকণ্ঠা হয়ে বলল,
-নাম কি তোমার বফের?
-রাফিন।
কোনো নাম খুঁজে না পেয়ে রাফিনের নামটাই বলল মাহানুর। হানিফ আরো কিছুক্ষন কথা বলে আরহামকে নিয়ে চলে যায়। এখানে থাকায় সে ভীষণ অপমানিত বোধ করছিলো তাই দ্রুত চলে যায়। তারা যেতেই অহনা বলল,
-তুই কি আর নাম পেলি না!রাফিন শেষমেষ!
-আরেহ! মাথায় কোনো নাম আসছিলো না।
-হানিফ ভাইয়া ভালো ছিল একজন লাইফ পাটনার হিসেবে।
-থাক ভাই আর্মিদের বিয়ে করবো না। ভুলে ও না।
অহনা মুখ ভেংচি কেটে বলল,
-তোর কিসমতে একটা ভয়ংকর আর্মি জুটবে দেখিস।

হানিফের গোমড়া মুখ দেখে একটু মায়া হলো আরহামের। ক্ষণেই মাহানুর হানিফকে রিজেক্ট করেছে এটা ভেবে মনে অন্যরকম একটা শান্তিও অনুভব করলো। সহজে কোনো মেয়ের প্রেমে পরার মতো পুরুষ সে না। ইন্টারে থাকাকালীন একজনকে পছন্দ করতো। দুর্ভাগ্য সে এখন বিবাহিত। তারপর থেকে আর কোনো মেয়েকে পছন্দ করার ইচ্ছেই হয়নি তার। আর যদিও কখন কারো প্রেমে পরে তাহলে চটজলদি ওই মেয়েকে তুলে এনে বিয়ে করে ফেলবে। আলা মেয়ে রাজি থাকুক বা না থাকুক! এটাই আরহামের সিদ্ধান্ত। হানিফকে সান্ত্বনা স্বরে বলল,
-মন খারাপ করো না হানিফ। এইরকম অনেক মেয়ে আসবে যাবে।
-বাট আমি মাহানুরকে সত্যি পছন্দ করেছিলাম। বুঝি না ভাই আমি যাকে পছন্দ করি সে-ই কেনো মিঙ্গেল হয়!
-সব চাওয়া পাওয়া হয় না। হয়তো তুমি তার থেকে বেস্ট কাউকে পাবা।
-হয়তো আর কি! মন চাচ্ছে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলি।
-ঐ মেয়ে তোমারও হবে না ওর বিএফেরও হবে না। আর যাকে পাবে না তাকে নিয়ে ভাবাও বন্ধ করো।
অন্যমনস্ক হয়ে কথাটা বলে ফেললো আরহাম। হানিফ কিছু না বুঝলেও কথার পাল্টে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়।
________________________

রাত এগারোটা। ঝমঝম শব্দ করে চলছে ট্রেন। চারপাশে অন্ধকারে অচ্ছন্ন হয়ে আছে। মেঘে ঢেকে আছে আকাশে অগণিত তাঁরা ও চাঁদ। ক্ষণে ক্ষণে মেঘেরা ভয়ংকর গর্জন করে উঠছে। এক দুই ফোঁটা বৃষ্টি পরছে। প্রকৃতির এমন থমথমে আবহাওয়া ট্রেনের জানালার পাশে বসে বেশ উপভোগ করছে মাহানুর। রাত আটটার দিকে অহনার চাচার বাসা থেকে রওনা হয়েছে তারা। সকলে অনেক জোরাজুরি করেছিল আজ রাতটা অন্তত থেকে যাওয়ার জন্যে। কিন্তু অস্বস্তি আর হানিফের সামনে পরতে হবে ভেবে আর দেরি করলো না তারা। ট্রেনে উঠার পর থেকেই শুরু হয় টিপটিপ বৃষ্টি আর হালকা বাতাস।

অন্ধকারে বাহিরে তেমন কিছু একটা দেখা যাচ্ছে না। মুহিব ফোনে কারো সাথে কথা বলছে আর সিয়াম অহনা ছবি দেওয়া নেওয়া করছে। মাহানুরের একটু শীতল অনুভব হওয়ায় পরনে ওড়নাটা সুন্দর করে শরীরে পেঁচিয়ে নেয়। যেহেতু সম্পূর্ণ একটি ক্যাবিনই তারা বুক করেছিল সেহেতু ভীড় গেঞ্জাম বা চু’রির তেমন একটা ভয় নেই।
সিয়াম আর মুহিব তাঁদের বন্ধু হলেও মাহানুর আর অহনার মনে হয় তারা চার যমজ ভাইবোন। আজ পর্যন্ত কখনই বান্ধবী হিসেবে তাঁদের সাথে কোনোরূপ অসভ্য ব্যবহার করেনি। অন্যদের কাছে ছেলে ফ্রেন্ড খারাপ মনে হলেও মাহানুরের মতে সিয়াম আর মুহিবের মতো ফ্রেন্ড একজন মেয়ে ফ্রেন্ড থেকেও বেস্ট। সবাইকে ব্যস্ত দেখে মাহানুর বোরিং হয়ে বলল,
-গাইস ভীষণ বোরিং লাগছে আমার। আয় না কিছু খেলি।
ফোনে দৃষ্টি রেখেই অহনা জিগ্যেস করলো,
-কী খেলবি?
-আয় ট্রু এন্ড ডেয়ার খেলি। সেই মজা হবে।
সিয়ামের কথায় সহমত মাহানুর। সবাইকে যার যার ফোন ব্যাগে রেখে দিতে বলল। মুহিব রাখছে না দেখে অহনা কেড়ে নিয়ে নেয় তার ফোন। ব্যাগ থেকে বোতল বের করলো সিয়াম। যেহেতু টেবিল নেই তাই সিটের মধ্যেই ঘুরাবে যার দিকে পরবে তাকেই ট্রু ডেয়ার নিতে হবে। প্রথম বোতল ঘুরায় মাহানুর। অহনার দিকে থামে। অহনা অসহায় মুখ করে তাকালে সিয়াম দাঁত বের করে হেসে জিগ্যেস করে,
-ট্রু নাকি ডেয়ার?
-ট্রু।
-আমাগো মুলা জিজুরে তোর কেমন লাগে?
অহনা মুখ বাঁকালো। বিরক্ত দেখিয়ে বলল,
-সব কিছু যেমন তেমন কিন্তু ওর ভাষা শুনলে আর গুন্ডা গুন্ডা ভাব দেখলে অসয্য লাগে।
-ওওওওও!তার মানে এমনে ভালো লাগে!
সুর টেনে বলল মুহিব। অহনা কিছু বলতে পারলো না লাজুক ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে রাখলো। তারপর বোতল ঘুরালে মুহিবের দিকে থামে। মুহিব দাঁত বের করে হেসে বলে,
-ইয়ো ব্রো এখন আমার পালা। আমিও ট্রু নিলাম।
-মেয়েদের হাতে কয়বার থাপ্পড় খেয়েছিস?(মাহানুর)
-উমম চার পাঁচবার খাইছি রে ভাই!মাইয়ারা আমার নরম গালটায় শুধু মারতেই থাকে।
অনেকটা দুঃখী দুঃখী মুখ করে বলল মুহিব। অট্টহাসিতে ফেটে পরলো বাকি তিনজন। সিয়াম হাসতে হাসতে নিচে গড়াগড়ি খায়। মাহানুর কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলে,
-তোরে যে ঝাড়ু দিয়ে পিটায় না এটাই অনেক মা’ইগ্গা।

অভাবেই একজন একজন করে ট্রু ডেয়ার নিচ্ছে। কখন হাসিতে ফেটে পরছে তো কখনও বাঁকা চোখে একজন আরেকজনকে দেখছে। অনেক সময় পর আবার অহনার পালা আসে। এবার তাকে জিগ্যেস করলে সে ডেয়ার নিতে রাজি হয়। মাহানুর শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,
-ডেয়ার হিসেবে তুই এখন বখাটে জিজুকে কল করবি।
-এটা বাদে অন্য ডেয়ার দে না ভাই। তাছাড়াও ওর নাম্বার নেই আমার কাছে।
সিয়াম নিজের ফোন বের করে ত্বরিত দেখিয়ে বলল,
-আমার কাছে আছে। নে এই ফোনেই কল দে।
-কিন্তু গাইস,
-চুপ ডেয়ার ইস ডেয়ার। জলদি
শেষে না পেরে ফোন হাতে নেয় অহনা। করুণ চোখে একবার সিয়াম, মাহানুর আর মুহিবকে দেখে নাম্বাররে কল দেয়। মাহানুর সাউন্ড বাড়িয়ে দেয়। তিনজন উস্কোখুস্ক হয়ে ফোনে কান পেতে থাকে। তারা ভীষণ এক্সসাইটেড রিদের ঢাকাইয়া ভাষার কথা শুনতে। সহসা কল রিসিভ করে। অহনা ঢোক গিলে কিছু বলতে উদ্যত হবে তার পূর্বেই ঐপাশ থেকে রিদ বলতে শুরু করলো,
-ঐ বেটা তুইও কী আমার মতন সিঙ্গেল নি এতো আন্দাকানা রাইতে কল দিছত! যদি পোলা হয়ে থাকিস তাইলে কল রাখ শা’লা আর মাইয়া হইয়া থাকলে শুনেন আমার না হওয়া বউ আছে আর কল দিয়া ডিসটার্ব করবেন না বড় আপা। নইলে একদম চান্দের দেশে পাঠাইয়া দিমু বইলা দিলাম।

মুখে কাপড় দিয়ে হাসছে মাহানুর। সিয়াম মুহিব হাসতে হাসতে নিচে বসে পরেছে। থমথমে মুখ করে বসে আছে অহনা। একসাথে এতকিছু বলবে তার ভাবনায়ও ছিল না। অহনাকে কিছু বলতে না দেখে রিদ ঘুমাকাতুর কণ্ঠে বিরক্ত হয়ে বলল,
-কিরে ভাই, তুই কী হি’জ’লা নি কোনো কথাই বলছিস না?
অহনা রাগে কটমট করে বলল,
-তুই হি’জ’ড়া তোর চোদ্দগুষ্টি হি’জ’ড়া মুলার বাচ্চা মুলা।
কথা শেষ করে ধপ করে কল কেটে দেয় অহনা। রাগে বড় বড় নিঃশাস ফেলছে সে। মাহানুর হাসছে তো হাসছেই। সিয়াম মুহিবকে দেখে তার হাসি যেনো থামছেই না। আরেকটু হলেই হাসতে হাসতে পেট ফেটে হয়তো মারা যাবে সে!

>>>>চলবে।
(আসসালামু ওলাইকুম। একটু অসুস্থ থাকায় দুইদিন গল্প দিতে পারিনি। প্রথম প্রথম গল্পটা অনেকেরেই বোরিং লাগতে পারে তবে একটু ধয্য ধরে পড়ুন আশা করি সামনে ভালো লাগবে। যেহেতু এই গল্পটা একাধিক জুটি নিয়ে সাজানো তাই একটু এলোমেলো মনে হতে পারে। কেমন হয়েছে বলবেন। ধন্যবাদ। ❤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here