তবে_ভালোবাসো_কী ২ #Mehek_Enayya(লেখিকা) পর্ব ১০

0
227

#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ১০

আরহামের কথায় ঘুম উবড়ে গিয়েছে রিদের। তার বন্ধু কারো প্রেমে পরেছে এটা মানতেও তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে! এখন বন্ধুও বিবাহিত হয়ে যাবে আর সে সিল মারা সিঙ্গেল বসে বসে সবাইকে বিয়ে করতে দেখবে। বুক ফেটে কান্না আসলো রিদের। মেয়েদের মতো ন্যাকা কান্না করতে মন চাইলো তার। কোনোরকম নিজের ইমোশন্স সাইডে রেখে আরহামকে বলল,
-কীরে কিছু বলছিস না কেনো? মেয়ে কে?
-তুই চিনবি না।
-তুই নাম বল চিনবো আমি।
অনেকটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল রিদ। আরহাম রিদের কথা শুনে তাকে বলল,
-মেয়েদের বিজনেস করিস নাকি তুই?
-তওবা তওবা! এইসব বইলা আমার ফুলের মতো পবিত্র চরিত্রে দাগ লাগাইস না ভাই।
আরহাম এবার শব্দ করেই হেসে উঠলো। গলা ঝেড়ে বলল,
-আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমি সত্যি প্রেমে পরেছি নাকি ওকে জাস্ট পছন্দ হয়েছে!
-আরেহ বেটা, তুই ভালোবাসা আর ভালোলাগার মধ্যে পার্থক্য বুঝোস না? ভালোবাসা হলো তাকে অনুভব করা, তাকে সম্পূর্ণ হালাল ভাবে নিজের করে চাওয়া, তার ছোট ছোট বিষয় ভালোভাবে পরোক্ষ করা। যখনই তুই তার কথা ভাববি তখন তোর অনেক জোস্ অনুভূতি হবে। বুক ৯০ ডিগ্রিতে লাফাবে। আর ভালোলাগা হলো জাস্ট কয়েকদিনের মোহ। তুই কিছুদিন অপেক্ষা করবি দেন এই কিছুদিনে তুই যদি তাকে ভুলে যাস তাহলে বুঝবি সে তোর ভালোলাগা ছিল।
-সত্যি?
-হো। এইযে দেখ আমি যাকে ভালোবাসি বাথরুম গেলেও আমার তার কথা মনে পরে, খাওয়ার সময়ও মাথায় সে ঘুরে আর ঘুমানোর সময়ও ভুত সাইজ্জা স্বপ্নে আসে।
-বাহ্! থ্যাংক ইউ সো মাচ দোস্ত। এখন আমি ফোন রাখছি।
-কিন্তু তুই মেয়ের পরিচয় তো বললি না শা’লা।
কল কেটে দেয় আরহাম। রিদ রাগে ভয়ংকর কিছু গা’লি দিলো আরহামকে। তারপর ভয়ে ভয়ে বিছানায় জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে পরলো।
________________________
একদিন, দুইদিন এভাবেই কেটে যায় কয়েকদিন। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিক। এই ঘাম ঝরানো গরম তো এই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। প্রকৃতির রূপ যেনো ক্ষণে ক্ষণেই পরিবর্তন হয়। এরই মধ্যে আর পাঁচদিন বাকি আয়াসের বিয়ের। যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়াপসির ঘুম নেই!ঠিক তেমনই অবস্থা খান ভিলায়। আয়াস ব্যস্ত তার এক্সাম নিয়ে কারণ বিয়ের এক সপ্তাহ পরই তার এক্সাম আর বাড়িতে চলছে চমকালো আয়োজনের প্লানিং । সবাইকে এক এক কাজ দেওয়া হয়েছে। যার যার নিজ কাজে ব্যস্ত সকলে।
সন্ধ্যা ছয়টা বাজে এখন। মাহানুর বাবা চাচাদের সাথে বসে খাবারের মেনু আর ডেকোরেশন কিভাবে করা হবে এইসব প্ল্যান করছে। অহনাকে আজ সকালে যেয়ে নিয়ে এসেছে মাহানুর। তার ভাইয়ের বিয়ে আর তারই বেস্টফ্রেন্ড কী পাঁচদিন আগে আসবে না! আয়াস আসীনও মাহানুরকে বলেছিলো অহনাকে এখানে নিয়ে আসতে তাই তো মাহানুর আর অপেক্ষা না করে নিজেই যেয়ে নিয়ে আসে। হাজেরা আর লুৎফার সাথে রান্নাঘরে অহনা। তাঁদের থেকে বিভিন্ন ধরণের রান্না শিখছে সে।

-চাচ্চু ভালো করে দেখো এই খাবারগুলো মেনুতে রাখতেই হবে।
খাতা বাড়িয়ে দেয় মাহানুর। মাহফুজ খান নামগুলো দেখে মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন,
-আচ্ছা আম্মা। তারপর ডেকোরেশন কী রঙের লাইট দিয়ে করলে সুন্দর হয়?
-আসীন ভাইয়ার কাছে ছবি আছে সে আমাকে গতকাল দেখিয়েছিলো। সাদার মধ্যে নীল কালার লাইট হলে বেশি সুন্দর দেখাবে।
-ঠিক আছে যেভাবে বলবে সেভাবেই হবে।
মেহরাব খান চায়ে চুমুক দিয়ে মেয়ের দিকে তাকায়। তার ছোট মেয়ে আর ছোট নেই এখন! মেয়েরা এতো জলদি কেনো বড় হয়? হামজা খান মাহানুরের এতো সুন্দর প্লানিং দেখে প্রসন্ন হেসে বললেন,
-মেহরাব রে আমাদের মাহানুর বড় হয়ে গিয়েছে এবার তাহলে ব্যবসার ভারটাও নাহয় তাকেই দিয়ে দেই? আমি তো বুড়ো হয়ে গিয়েছি আর এইসব সামলাতে পারবো না।
মেহরাব খান শুধুই হাসলেন। মাহানুর মুচকি হেসে বলল,
-আমি এমনেও কিছু একটা জব করতে চাচ্ছি বড়বাবা। আমিও নিজের পরিচয় নিজে গড়তে চাই।
মাহানুরের কথা পছন্দ হলো না মেহরাব খানের। দ্বিমত পোষণ করে বললেন,
-জব কেনো করবে তুমি? নিজেদের এতবড়ো ব্যবসা থাকতে আমি তোমাকে জব করতে দেবো না মাহানুর।
-বাবা দেখো জব করলে আমি ধীরে ধীরে সাফল্য অর্জন করবো আর নিজেদের অফিসে বসলে সেখানে আমি আর তেমন কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারবো না।
-মাহানুরের কথায় যুক্তি আছে মেহরাব।
বললেন হামজা খান। মাহানুর করুণ চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। হামজা খান পুনরায় বললেন,
-মাহানুর নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে সে নিজেই নিজের দায়িত্ব নিতে পারে। আমি তোর সাথে আছি আম্মা কিন্তু তোর বাবাও ঠিক বলছে। মেয়েকে নিয়ে তারও তো চিন্তে হয়।
মাহানুর কাচুমাচু মুখ করে বসে রইলো। মাহফুজ এতক্ষন সবার কথা শুনে বললেন,
-মাহানুর আম্মার জন্য আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে। তুমি আমাদের অফিসেই কাজ করবে কিন্তু একজন সাধারণ এমপ্লয়ী হিসেবে। আমরা কেউ তোমাকে চিনি না। সাধারণ এমপ্লয়দের মতোই তুমি বেতন পাবে আর কাজের মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করবে।
-ওয়াও গ্রেট আইডিয়া চাচ্ছু! চাচী তোমাকে বাদাম খাইয়ে খাইয়ে ব্রিলিয়ান্ট বানিয়ে দিয়েছে।
স্মিত হেসে বলল মাহানুর। সকলে আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলো। এরই মধ্যে লুৎফা সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসে। তার পিছু পিছু আসে অহনাও। সায়রিন তার বাবার বাসায় বেড়াতে গিয়েছে কাল পরশুর মধ্যে এসে পরবে। অহনা গুটিগুটি পায়ে মাহানুরের পাশে এসে বসলো। লুৎফা মাহানুরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-তা মার্কেটিং করতে কবে যাবে মাহানুর?
-বৃষ্টি না হলে আগামীকালই যাবো চাচী। আর সবাই একসাথে যাবো। বুঝলে?
-হ্যাঁ আমিও সেটাই বলতাম।
মাহানুর কিছুটা ভাবুক হয়ে জিগ্যেস করলো,
-ফুপ্পিরা কবে আসছে? আর গেস্টরা?
-তোমার ছোট ফুপ্পি আসতে পারবে না আর বড় ফুপ্পি বিয়ের তিনদিন আগে আসবে। রইলো বাকি আত্মীয়রা তারা হলুদের আগের দিন এসে পরবে।
-ফুপ্পি এতো দেরিতে কেনো আসবে চাচী? আসীন ভাইয়ের বিয়েতে না এক সপ্তাহ আগে এসে পরেছিল!
-তোমার বড় ফুপ্পি তোমার বাবা চাচাদের ওপর রেগে আছেন। বিয়ে ঠিক করার সময় তাকে বলেনি তাই সে দেরি করে আসবে।
-ওহ।
সকলে অগোচরে মাহানুর মুখ ভেংচি কাটলো। বড় ফুপ্পি রিনাকে তার একটুও পছন্দ না। কেমন যেনো ঝগড়াটে মহিলা টাইপ লোক! যখনই তাঁদের বাসায় আসে তার বিয়ে নিয়ে তারপর আরো নানান বিষয় তাকে কথা শোনায়। যেটা মাহানুরের অপছন্দ। নিজের মেয়েদের মানুষ করতে পারেনি তাই অন্যের মেয়ের সাথে লাগতে আসা স্বভাবের তিনি। তার দুইটা মেয়ে এক ছেলে। ছেলে ইরাফ পড়াশোনা শেষ বাবার বিজনেসে বসেছে। বড় মেয়ে ইকরা এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। আর ছোট মেয়ে ইরা ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ছে। ইরাফ যথেষ্ট আদর্শ পুরুষ কিন্তু ইকরা আর ইরা একটু অভদ্র। তারা অতিরিক্ত মর্ডান হতে গিয়ে নিজের ভিতরের নারীত্ত্ব সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে প্রায়। মাহানুরের অপছন্দের তালিকায় তারাও আছে।

কাজ শেষ হলে নাস্তা করে অহনাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে মাহানুর। বাহিরে এক দুই ফোঁটা বৃষ্টি পরছে। অহনা মাহানুরের বেলকনির দোলনায় যেয়ে বসে পরলো। সুনহেরা কল দিয়েছে মাহানুরকে। দুইজনের মধ্যে বেশ খাতির এখন। টানা অনেকক্ষণ কথা বলে কল কেটে দেয় মাহানুর। রুমের ভিতর থেকে চেঁচিয়ে বলল,
-অহনা বেলকনিতে কী করছিস? আবার বসে বসে কোনো হ্যান্ডসাম ছেলেকে দেখছিস নাকি?
অহনার কোনো উত্তর না আসতে দেখে মাহানুর মৃদু পায়ে বেলকনিতে এসে উপস্থিত হয়। অহনাকে বাহিরের দিকে তাকিয়ে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো মাহানুর। সন্দীহান কণ্ঠে বলল,
-কীরে কী হয়েছে তোর? জামাই মরে টরে গেলো নাকি?
-দুর যা বা’ল সবসময় শয়তানি ভালো লাগে না।
মাহানুর অহনার পাশে বসে পরলো। পরিহিত টি-শার্টটা টেনেটুনে ঠিক করে পূর্ণ দৃষ্টিতে অহনার দিকে তাকালো। শান্ত কণ্ঠে বলল,
-বাসার কথা মনে পরছে?
অহনা না বোধক মাথা নাড়ালো। মাহানুর আবারও জিগ্যেস করে উঠলো,
-তাহলে মন খারাপ কেনো? কেউ কিছু বলেছে তোকে? কে আমার ললিতাকে কী বলল জাস্ট একবার বল তার মাথা ফাটিয়ে দেবো।
মাহানুরের এইরকম কথায় প্রত্যেকবার অহনা হেসে উঠে কিন্তু এখন হাসলো না। মাহানুর নিজেও বুঝলো না অহনার হঠাৎ কী হলো। অহনার মুখের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো টপ টপ করে অশ্রুকণা গড়িয়ে পরছে অহনার গাল বেয়ে। মাহানুর বিচলিত কণ্ঠে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অহনা তাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। ঝাঁকি দিয়ে কেঁপে উঠলো মাহানুরের শরীর। কান্নারত্ব অস্পষ্ট স্বরে অহনা বলল,
-আমি ভালোবেসে ফেলেছি মাহানুর। আমি এভাবে একজনের প্রেমে পরে যাবো কল্পনাতেও ভাবিনি।
মাহানুর আলগোছে অহনাকে ধরে সোজা করে বসায়। বিরতিহীন কেঁদেই চলেছে অহনা। মাহানুর নরম কণ্ঠস্বরে বলল,
-এইটুকু একটা বিষয় কেউ কান্না করে পাগল। তুই আগে শান্ত হয়ে বস।
অহনার মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা গেলো না মাহানুরের কথায়। মাহানুর ধমকের স্বরে আবারও বলল,
-চুপ একদম চুপ। কান্না বন্ধ করে বল কে সেই ব্যক্তি নাহলে এখান থেকে লা’থি মেরে নিচে ফেলে দেবো।
-রিদ।
মাহানুর কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া করলো না। সে আগের থেকেই বুঝতে পেরেছিলো অহনার মনে রিদের জন্য ফিলিংস আছে। অহনা নাক টেনে কাঁপাকাঁপি কণ্ঠে বলল,
-কয়েকদিন ধরে ভার্সিটির সামনে রিদ আগের মতো দাঁড়িয়ে থাকে না। বিভিন্ন নাম্বার দিয়ে কল দিয়ে ডিসটার্ব করে না! যখন থেকে উনি আমাকে অবহেলা করা শুরু করেছে তখন থেকে আমি অনুভব করছি আই লাভ হীম। বাট সে হয়তো আমার সাথে টাইমপাসই করেছে। এখন যখন আমার ওপর থেকে ইন্টারেস্ট চলে গিয়েছে এখন আর আমার দাম নেই।
ডুকরে উঠলো অহনা। মাহানুর চুপচাপ অহনার কথা শুনলো। খানিকটা রাগ দেখিয়ে বলল,
-আগে তুই এভাবে ফেচ ফেচ কান্না বন্ধ কর। আর শুন আমার মনে হয় না সে তোর সাথে টাইমপাস করছে! আই থিঙ্ক মুলা মানে রিদ ভাই সত্যি তোকে লাভ করে।
-যদি করেও থাকে তাহলেও আমি তাকে কখনই পাবো না। কোথায় তারা নামিদামি পরিবার আর কোথায় আমি গ্রাম্য মেয়ে। ওর ফ্যামিলি আমাকে মানবে না।
-উফফ! তুই বর্তমান যুগে থেকেও আদিম যুগে বসবাস করছিস!
মাহানুরের কথার মানে বুঝলো না অহনা। ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে রইলো শুধু। মাহানুর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
-ঐ পুরুষই কী যে ফ্যামিলির অজুহাত দেখিয়ে ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে দেয়! পুরুষ তো সে, যে শত বাঁধা বিপদ পেরিয়ে শেষ নিঃশাস পর্যন্ত ভালোবাসার মানুষটির হাত শক্ত করে ধরে রাখে।
-রিদ কী আমাকে ভালোবাসে? উনি কী আমাকে ছেড়ে দিবেন?
-যদি সত্যি ভালোবাসে তাহলে তোকে বিয়ে করেই দম নিবে। এখন এইসব নিয়ে চিন্তা করে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানেই নেই। আমার সাথে ফেইসবুকে রিদের অ্যাড আছে মেসেজ দিবো?
-না থাক প্রয়োজন নেই। তার মন চাইলে সে নিজ থেকে এসে আমার সাথে যোগাযোগ করবে।
-ডেটস মাই গার্ল। এইরকম স্ট্রং থাকবি সিচুয়েশন যেমনই হোক না কেন।
মাহানুর নিজ হাতে অহনার চোখের পানি মুছে দেয়। দুইজন মিলে কিছুক্ষন কথা বলে সেখানে বসে। মাহানুর বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে বান্ধবীকে হাসাতে। আর সে সফলও হয়।
______________
পরেরদিন মার্কেট যাওয়ার প্ল্যান থাকলেও বৃষ্টির কারণে সকালে তারা বাসা থেকে বের হতে পারলো। সন্ধ্যার পর আবার মাহানুর, অহনা আর সায়রিন রওনা হলো সুনহেরাদের বাসার উদ্দেশ্যে। সকালে হামজা খানকে ফোন করেছিল জয়া বেগম। কেনাকাটার বিষয় কিছু কথাবার্তা থাকায় বিকেলে মাহানুরদের পাঠাতে বলে তাঁদের বাসায়। হামজা খান মাহানুরকে এটা বললে সে তো এক পায়ে রাজি হয়ে যায়। যেহেতু মিস্টার জিরাফ নেই সেহেতু তার কোনো প্রবলেমও নেই। ভেজা রাস্তায় শোঁশোঁ শব্দ করে চলছে গাড়ি। অহনা সায়রিন কথা বলছে মাহানুর একমনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। তার একটু সরমও করছে ঐ বাসায় যেতে। কেমন এক অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই গাড়ি এসে থামে চৌধুরী ভিলায়। মাহানুর মুখে হালকা হাসি এনে অস্বস্তি ভাব লুকানোর প্রয়াস করলো।
ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছে সকলে। জয়া বেগমের সাথে আলাপ করছে মাহানুর। ক্ষণে ক্ষণে কথা আটকে যাচ্ছে তার। অহনা বুঝতে পারে মাহানুরের মনোভাব। সনিয়া মাহানুরের আরেকপাশে এসে বসলো। জোর করে জুসের গ্লাস হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-তা মাহানুর বিয়ে নিয়ে তোমার প্ল্যান কী? নেক্সট তো তোমারই পালা।
-আসলে আপু বিয়েটিয়ে নিয়ে আমার তেমন কোনো প্ল্যান নেই সামনে জব করতে চাচ্ছি। আর ইচ্ছে আছে একজন টুরিস্ট হবো।
জয়া বেগমের হাসি হাসি মুখ চুপসে যায়। সনিয়া মাহানুরকে মজার ছলে বলল,
-তাও বিয়েটা করে নেও ট্যুরের পাটনার পেয়ে যাবে।
মাহানুর সনিয়ার কথা হেসে উড়িয়ে দেয়। সায়রিন তার ফোন বের করে বিভিন্ন শাড়ী, লেহেঙ্গা দেখাতে থাকে সুনহেরা আর সনিয়াকে। সবাই মিলে গতকাল একসাথে মার্কেট যাবে এটাও তারা প্ল্যান করলো। জুস খাওয়ার সময় অসাবধানতায় কিছুটা জুস মাহানুরের পরিহিত ফ্রকে পরে যায়। ত্বরিত বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় মাহানুর। বেবিপিঙ্ক কালার ড্রেস হওয়ায় দাগ স্পষ্ট বসে যায়। জয়া বেগম নিজে মাহানুরের ড্রেস ঝেড়ে দেয়। সুনহেরা মাহানুরকে বলল,
-ড্রেস তো নষ্ট হয়ে গেলো আপু। এই ড্রেস পরে আপনি বাসায় কিভাবে যাবেন!
-সমস্যা নেই বাসায় যেতে পারবো জাস্ট একটু পানির ছিটে দিলেই হবে।
জয়া বেগম বিচলিত হয়ে বলল,
-সুনহেরা মাহানুরকে তোমার রুমে নিয়ে যাও।
-ঠিক আছে আম্মু। আপু আসেন।

মাহানুর সুনহেরার সাথে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে। আকস্মিক সুনহেরার ফোনে কল আসে। আর কেউ নয় বরং আয়াসই তাকে কল করেছে। সুনহেরা মনে মনে বিরক্ত হলো আয়াসের ওপর। কল দেওয়ার কী আর সময় পায় না নাকি! মাহানুর অহনার ফোন বাজতে দেখে বলল,
-আয়াস কল দিয়েছি নিশ্চই? তুমি আগে তার সাথে কথা বলে নেও ভাবি।
সুনহেরা লাজে আরষ্ঠ হয়ে উঠলো। মিনমিনে কণ্ঠে বলল,
-ঠিক আছে আপু। আপনি বাম সিডের একদম শেষের আগের রুমে যান আমি এখনই আসছি।
-ওকে।

সুনহেরা ফোন নিয়ে অন্যপাশে চলে আসে। কল রিসিভ করেই চাপা স্বরে চেঁচিয়ে বলে,
-এমনে তো একবারও কল দেননা না ভাই এখন ফ্যামিলির সামনে কল দিয়ে ভালো সাজতে চাচ্ছেন?
অপর থেকে তপ্ত নিশাসের আওয়াজ শোনা গেলো। গম্ভীর মুখে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,
-আপনি কী ভালোভাবে সাধারণ মানুষের মতো কথা বলতে পারেন না? আন্টি বোধহয় জন্মের পর আপনাকে মধু খাওয়াতে ভুলে গিয়েছিলেন!
-ঐ বেডা শাট আপ। হবু বউয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় এতটুকু জ্ঞানও দেখছি আপনার মধ্যে নেই!
-দুঃখিত বোন আপনার সাথে তর্কে জড়াতে যাওয়াই আমার ভুল। মা জিগ্যেস করতে বলেছিলো গতকাল কী একসাথে মার্কেটে যাচ্ছেন?
-জি। আপনি ভুলেও আসবেন না। কোনো চশমা বা’ন্দ’রকে আমি দেখতে চাই না।

মাহানুর লং ফ্রক ধরে বিড়বিড় করতে করতে এগিয়ে যায়। একদম শেষের রুমে এসে সে কনফিউশ হয়ে যায় কোন রুমে যাবে। মনে মনে বলল,
-সুনহেরা না আমাকে একদম শেষের রুম বলল! নাকি তার আগের টা বলল! দুর শেষেরটাই তো বলল।
মাহানুর কনফিউশন দূর করে শেষের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজা ভেড়ানো ছিল। হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। অন্ধকার রাজ্যে ডুবে আছে পুরো রুম। এসির হাওয়ায় ভয়ংকর রকমের ঠান্ডা অনুভব করলো মাহানুর। গরমেও তার পুরো শরীর ঠান্ডায় বরফ হয়ে গেলো যেনো। সুনহেরা কী এসি অন করেই রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো নাকি! এটা এখন রুম নয় যেনো ম’র্গ হয়ে আছে! মনে মনে বলল মাহানুর। ধীর পায়ে ভিতরে প্রবেশ করে। অন্ধকারে কিছুই ঠাওর করতে পারলো না সে। কোথায় ঘরের বাতির সুইচ? কোথায় ঘরের ফার্নিচার? আর কোথায়ই বা ওয়াশরুমের দরজা! অন্ধকারে হাতড়ে কিছুটা দূর যেতেই আচমকা কিছুর সাথে পা লেগে ধপাস করে পরে মাহানুর। যেহেতু মেঝেতে পরেনি তাই মাহানুর বুঝলো সে বিছানার ওপরে পরেছে। কিন্তু বিছানা এতো উঁচুনিচু কেনো? আবার এতো শক্ত বিছানায় সুনহেরা ঘুমায়ই বা কী করে? এইরকম হাজারো প্রশ্ন ঘুরতে লাগলো মাহানুরের ছোট মস্তিকে। বিছানায় পরায় স্বস্তির শ্বাস নিলো মাহানুর। তবে বেশিক্ষন তার স্বস্তি রইলো না। ক্ষণেই যখন সে অনুভব করলো তার পিঠে বড় সাইজের পোকার মতো একটি বলিষ্ঠ হাত এসে ঠেকলো। ভয়াত মাহানুর গলা কাঁপিয়ে চিৎকার দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তার পূর্বেই হাতের মালিক অন্ধকারে তার মুখ চেপে ধরে বিছানায় শুইয়ে দেয়। মাহানুরের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো ভয়ে। অজ্ঞাত হাতের মালিক পাশ থেকে ফোন নিয়ে ফ্ল্যাশ লাইট অন করে মাহানুরের মুখে ধরে।
হঠাৎ মুখে আলো পরায় চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে মাহানুর। কিছু মুহূর্ত ব্যয় হতেই নিভু নিভু নেত্রে স্মুখীন তাকায়। অন্ধকারে আবছা আলোয় মাহানুর অস্পষ্ট একটি ঘুম কাতুর মুখশ্রী দেখতে পেলো। স্পষ্ট কণ্ঠে উচ্চারণ করে উঠলো,
-আরহাম চৌধুরী!

>>>>চলবে।
(আসসালামু ওলাইকুম। আজকে আমি একবারও রি-চেক দেওয়ার সময় পাইনি। তাই ভুলক্রুটি হলে একটু ক্ষমা করে দিয়েন। আর সবাই মন্তব্য করবেন। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে বলবেন। ধন্যবাদ। ❤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here