তবে_ভালোবাসো_কী ২ #Mehek_Enayya(লেখিকা) পর্ব ০৯

0
406

#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ০৯

কিছু ফাইল চেক করতে করতে মেডিকেলের ভিতরে যাচ্ছিলো আয়াস। আজ তাঁদের একটা প্রাকটিক্যাল এক্সাম রয়েছে। তাই সবাইকে ঠিক সময়ে মেডিকেল ল্যাবে প্রাকটিক্যাল ক্লাসে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। পাশে আয়াসের দুই বন্ধুও রয়েছে। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে আর আয়াস পড়া দেখতে ব্যস্ত। দ্রুত পায়ে হাঁটতে হাঁটতে আচমকা একজনের সাথে ধাক্কা লাগে তার। হাতের বই ছিটকে নিচে পরে যায়। অজ্ঞাত ব্যক্তি অনুতপ্ত কণ্ঠে বলল,
-সরি ভাইয়া আমি খেয়াল করিনি।
কাঙ্ক্ষিত মেয়েলী কণ্ঠস্বর শুনে আয়াস বই তুলে সামনে তাকায়। ভুত দেখার মতো চমকে যায় সে। ঠিক তেমনই সামনের জনও ভয়ংকর রকমের অবাক। আয়াস চোখের চশমা ঠিক করে সরু চোখে তাকিয়ে বলে,
-আপনি এই কলেজেই পড়েন?
-জি। আর আপনিও?
-হুম। আসি আমার ক্লাস আছে।
আয়াস যেতে উদ্যত হতেই সুনহেরা বলল,
-ছুটির পর মেইন গেটের সামনে দাঁড়াবেন।
আয়াস মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। সুনহেরার পছন্দ হলো না আয়াসের ব্যবহার। কোনো পুরুষ তার হবুবউকে এভাবে উপেক্ষা করে! সুনহেরার ফ্রেন্ডরা এগিয়ে এসে জিগ্যেস করলো,
-ছেলেটা কে ছিল? একদম কিউট ডক্টরবয় লাগছিলো কিন্তু!
সুনহেরা বিরক্ত কণ্ঠে জবাব দিলো,
-এমনেই আত্মীয় ছিল।
-এইরকম একজন আত্মীয়র সাথে তো আমাদেরও একটু কানেকশন করিয়ে দিতে পারিস সুনহেরা।
-আমাদের কিন্তু ক্লাসের জন্য দেরি হচ্ছে। চল জলদি।

মাহানুররা দুইটা ক্লাস করে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসে। ক্যাম্পাসে এসে বসে। রাফিন তার বন্ধুদল নিয়ে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। আড়চোখে মাহানুরের দিকে তাকায় সে। সকালে আকাশ উজ্জ্বল থাকলেও এখন ধীরে ধীরে কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। মেঘগুলো এদিকসেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। হালকা বাতাস বইছে। মুহিব ভিজে যাওয়ায় বাসায় চলে গিয়েছিলো। সিয়াম ফোন স্ক্রল করতে করতে অহনাকে বলল,
-তুই কিন্তু বললি না ফুল কিভাবে পেলি!
অহনা ভয়াত চোখে সিয়ামের দিকে তাকায়। থমথমে মুখে বলল,
-আমিই কিনেছি বললাম না তখন।
-আমার তো তোর কথায় বিশ্বাস হয় না।
সন্দীহ কণ্ঠে বলল সিয়াম। মাহানুর বিরক্তকর কণ্ঠে বলল,
-হয়েছে ভাই এখন এই বিষয় বাদ দে। ওয়েদারটা কিন্তু সেই! চল কোথায়ও যাই?
মাহানুরের কথায় সহমত হয়ে সিয়াম বলল,
-ধানমন্ডির লেকে যাই এখানে ভালো লাগছে না।
কিছু মনে পরার ভঙ্গিতে হঠাৎ না না করে উঠলো মাহানুর। বসা থেকে দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
-লেকে না আয়াসের মেডিকেল কলেজে যাবো। গতকাল ও বলেছিলো যেতে। আর আমার তোদের কিছু বলারও আছে কথায় কথায় ভুলে গিয়েছিলাম।
মাহানুরের সাথে সিয়াম অহনাও দাঁড়িয়ে যায়। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে অহনা বলল,
-কিন্তু এখান থেকে তো মোটামুটি ভালোই দূর হবে!
-আমি ড্রাইভার আঙ্কেলকে বলি সে এসে নিয়ে যাবে।
-ওকে।

দশ মিনিটের মধ্যেই মাহানুরদের ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হয় তাঁদের ভার্সিটির গেটের সামনে। একে একে তিনজন গাড়িতে বসে পরে আরাম করে। মাহানুর ড্রাইভারকে বলল,
-আঙ্কেল মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান।
-আচ্ছা আম্মা।
অহনা মাহানুরের হাত ধরে ঝাঁকিয়ে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,
-তুই না কী বলতি?
-ওহ ইয়েস।
মাহানুর সামনের চুলগুলো সরিয়ে বাঁকা হাসে। সিয়াম অহনা কেউই বুঝলো না মাহানুরের হাসির কারণ। সিয়াম বিরক্ত হয়ে বলে,
-বলবি গোড়ার ডিম?
-গতকাল আমি তোদের প্রিয় একজন ব্যক্তিকে দেখেছিলাম।
-কাকে?
-মিস্টার জিরাফ এই মিন আরহাম চৌধুরীকে।
মাহানুরের কথায় অকস্মাৎ চমকে উঠলো দুইজন। অহনা গালে হাত দিয়ে হেয়ালি করে বলে,
-রিয়েলে দেখেছিস নাকি আমার মতো স্বপ্নে? আমি তো স্বপ্নে রোজ তাকে দেখি।
মাহানুর মুখ বাঁকায়। ভেংচি কেটে বলল,
-ছি! আমি এতো কূ’রুচি সম্পূর্ণ ব্যক্তি নই তোর মতো! আয়াসের উড বি ওয়াইফ সুনহেরার বড় ভাই আরহাম। আর তাঁদের বাবা আমার বড়বাবার বন্ধু ছিল যেটা আমি কালই জানলাম।
-সত্যি!
অবিশ্বাস স্বরে বলল অহনা। মাহানুর নাক ফুলিয়ে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,
-বুঝতেছি না ভাই এতো অবাক হওয়ার কী আছে! সে জাস্ট একটা মানুষই।
-তুই সেটা বুঝবি না। ওহ মাই গড! এখন আয়াস ভাইয়ের বিয়েতেও আমি তাকে দেখতে পাবো!
____________________________
এক্সাম শেষ করে ভবন থেকে বেরিয়ে আসে আয়াস। মুখের মাক্স খুলে ব্যাগে ভরে নেয়। বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে সামনে এগোচ্ছে। বড় মাঠের মতো উঠানে আসতেই তার নজর পরে মেইন গেটের দিকে। ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুনহেরা। আয়াস তার বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে এগিয়ে যায়। দূর থেকে সুনহেরাও আয়াসকে দেখতে পায়। চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়ায় সে। আয়াস কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করলো,
-কিছু বলতেন আপনি?
-আপনার এই ভালো মানুষী, সংস্কারি রূপ কী শুধু আমাকে দেখাতে অথবা ইমপ্রেস করার জন্য করছেন নাকি আপনি সত্যি এতো ভালো মানুষ?
ঝটপট প্রশ্ন সুনহেরার। আয়াস শান্ত ভাবেই সামনের দিকে তাকিয়ে উত্তর স্বরূপ বলল,
-আপনি আমার গার্লফ্রেন্ড নন যে আপনাকে আমার ইমপ্রেস করতে হবে। আপনি আমার বউ হবেন। তাই আমি আপনাকে নিজের আহামরি বাহ্যিক রূপ দেখাতে চাচ্ছি না এখন আমাকে যেমন দেখছেন তেমনই আমি।
সুনহেরা পিটপিট চোখে তাকিয়ে থাকলো। একদিনের এতো পরিবর্তন কিভাবে হলো! গতকাল না তার মুখ দিয়ে কথাও বের হচ্ছিলো না আর আজ ফটাফট উত্তর দিচ্ছে! মনে মনে ভাবলো সুনহেরা। আয়াসের সামনে নিজেকে যথাসম্ভব কঠিন রাখার চেষ্টা করলো সে। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-হোয়াটেভার। তো আমি আপনাকে যেটা বলতে চেয়েছিলাম আপনার আর আমার মধ্যকার সম্পর্ক মেডিকেলের কাউকে জানানো প্রয়োজন নেই।
-সিক্রেট রাখতে চাচ্ছেন?
-হ্যাঁ।
-ঠিক আছে সিক্রেট থাকবে। আপনি চিন্তা করবেন না।

মাত্রই মাহানুরদের গাড়ি এসে থামে মেডিকেলের সামনে। গাড়ির ভিতর থেকেই মাহানুর দেখতে পায় আয়াস আর সুনহেরাকে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকতে। যেহেতু দুইজনই ডাক্তারি পড়া পড়ছে তাই একই মেডিকেল কলেজ হতেই পারে। দরজা খুলে বেরিয়ে আসে তিনজন। আয়াসও তাঁদের দেখেছে। মাহানুর এগোতে এগোতে বলে,
-বাহ্! দুইজন এক জায়গায় পড়ছো নাকি তোমরা!
সুনহেরা একটু সরম পাওয়ার ভনিতায় মাথা নত করে ফেললো। ইতস্তত মুখে দাঁড়িয়ে রইলো। আয়াস মাহানুরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-ঐ আর কী! এতো দেরি হলো কেনো আসতে?
-রাস্তায় জ্যাম ছিল। ভাবি কেমন আছো?
-জি ভালো আছি আপু। আপনি আমার অনেক বড় তাই আমার নাম ধরেই ডাকতে পারেন ভ মানে আপু।
নরম কণ্ঠে বলল সুনহেরা। মাহানুর বড় একটি হাসি দিয়ে বলল,
-সমস্যা নেই আমি তোমাকে ভাবি বলেই ডাকবো।
মাহানুর তার ফ্রেন্ডদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো সুনহেরার। সুনহেরা তার ভাইয়ের মতো গোমড়া মুখো না। মুহূর্তেই সকলের সাথে বেশ খাতির জমিয়ে নেয় সে। পরিচয় পর্ব ঢুকিয়ে সবাই মিলে একটি রেস্টুরেন্টে যায়। দুপুরের লাঞ্চ সেখানেই করে পাঁচজন। আয়াস আড়চোখে সুনহেরার দিকে তাকাচ্ছে। হাসি যেনো মুখ থেকে সরছেই না তার। খাওয়ার এক পর্যায় কথায় কথায় সুনহেরা বলে,
-আপনার সাথেই আমার ভাইয়ের বিয়ের কথা বলেছিলো না মাহানুর আপু?

সুনহেরার আকস্মিক কথায় খাবার গলায় আটকে গেলো মাহানুরের। কাশতে থাকে অস্বাভাবিক ভাবে। অহনা পানি এগিয়ে দেয়। বিড়বিড় করে বলে,
-কীরে তোর জিরাফই কী তোর বড়বাবার সেই বন্ধুর ছেলে যার সাথে তোর বিয়ে দিতে সে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলো?
মাহানুর কিছু বলতে পারলো না। গোলগোল চোখ করে শুধু তাকালো অহনার দিকে। সুনহেরা মাহানুরের শান্ত মস্তিক এলোমেলো করে দিতে পুনরায় বলল,
-আমার আম্মুর ছেলের বউ হিসেবে ভীষণ পছন্দ হয়েছিলো আপনাকে। আমাদের যখন বলতো মাহানুরকেই সে ছেলেরা বউ করবে তখন আমরা ভাবতাম কী আছে সেই মেয়ের মধ্যে যে আমার আম্মুকে পাগল করে দিয়েছে। সত্যি গতকাল যখন আপনাকে দেখলাম তখন আম্মুর মতো আমারও পছন্দ হয়ে উঠলেন আপনি। অনেক কিউট দেখতে আপনি।
মাহানুর প্রতিউত্তরে কিছু বলার ভাষা পেলো না। মেকি হাসি দিয়ে শুধু পানি গিলতে লাগলো রাজঁহাসের মতো।
________________________

সুন্দর একটি রিসোর্টের রুমের বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে রিদ। পরনে তার শার্ট আর লুঙ্গি। শার্ট যেমন তেমন লুঙ্গিটা পছন্দ হলো না তার। এতো সুন্দর জায়গায় কেউ এইরকম পোশাক পরে নাকি! সহসা তার নজর পরে বেলকনিতে অপূর্ব একটি নারী হলুদ রঙের শাড়ী পরে দাঁড়িয়ে নিজের ভেজা চুল ঝাড়ছে। রিদের পছন্দের রঙ আবার হলুদ। হঠাৎ রমণী লাজুক দৃষ্টিতে পিছনে ফিরে তাকায়। রিদ ছোটোখাটো একটা হার্টএট্যাক করলো। এ আর কেউ নয় বরং তার ভবিষ্যত বাচ্চা মা অহনা। কয়েক মুহূর্তের জন্য নিঃশাস নিতেও ভুলে গেলো রিদ। ঘোরের মধ্যে থেকেই বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় আবেদনময়ী অহনার কাছে। অহনার পিছনে যেয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকপলক ভারী ভারী নিঃশাস নেয়। হাত গলিয়ে দেয় অহনার শাড়ীর ভিতরে কোমল পেটে। আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ের কেশ সরিয়ে সেখানে মুখ ডুবায়। লাজে আরষ্ঠ অহনা পিছনে ফিরে রিদকে জাপ্টে ধরে। রিদের চোখ মুখে অস্থিরতা কাজ করছে। নরম হাতে অহনার গাল ধরে মুখ উঁচু করে। নয়নজোড়া বন্ধ করে কাঁপছে অহনা। রিদ ওষ্ঠ মিলনের জন্য নিজের মুখ এগিয়ে নিলে আকস্মিক অহনা গল গল করে বমি করে দেয় রিদের শার্টয়ের ওপর। ছিটকে দূরে সরে গিয়ে ভয়ংকর ক্রোধে চেঁচিয়ে বলে,
-তোর এই গন্ধযুক্ত মুখ নিয়ে আমাকে লি’পকি’স করতে আসবি না মুলার ঘরে মুলা। তোর ঐ ছাগলের মতো ঠোঁট আমি এখনই চা’কু দিয়ে কেটে ফেলবো।
বলেই দাঁত বের করে ভয়ংকর হাসি দিয়ে উঠলো অহনা। চুলগুলো পাগলের মতো ছড়িয়ে পরলো। চোখ দিয়ে রিদকে গিলে খাবে এমনই অবস্থা। ঠোঁটের পাশ দিয়ে ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে র’ক্ত পরছে। পিছনের একহাত সামনে আনতেই রিদ দেখতে পায় অহনার হাতে বড় একটি চা’কু। এই চা’কু দিয়ে শুধু তার ঠোঁট নয় তাকেও কে’টে টুকরো টুকরো করে ফেলা যাবে। এমন বীভৎস দৃশ্য দেখে রিদের হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলো। কম্পিত কণ্ঠে বলল,
-আমার বাচ্চার মা তোমার কী হলো!আমি তোমার প্রিয় সোয়ামি। আমাকে তুমি আঘাত করতে পারো না।
অহনার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না। সে এক পা দু পা করে এগিয়ে আসতে লাগলো। রিদ এবার ভয়ে বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। অহনা যখনই চা’কুটা তার মুখের সামনে আনবে তখনই জ্ঞান হারিয়ে ধপাস করে মেঝেতে পরে যায় রিদ।

-ওওওও মাগো, ওওও বাবাগো তোমার আদরের পোলারে চা’কু দিয়া কা’ই’টা ফালাইতাছে আমার ভবিষ্যত বাচ্চা মা। বাঁচাও আমারে। বাঁচাও।
ঘুমের মধ্যেই আর্তনাদ করে উঠলো রিদ। রিদের আওয়াজ পেয়ে ভয় পেয়ে যায় তার ফ্যামিলির সদস্যরা। দৌড়ে আসে সকলে। দরজায় লাগাতার থাপ্পড়ানোর আওয়াজে ধরফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে রিদ। বিচলিত মস্তিক ধপ ধপ করছে তার। বড় বড় নিঃশাস নিলো। ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখলো ঠোঁট ঠিক আছে কিনা। তারপর বিছানায় উঠে বসে ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দেয়। একবার শার্ট এ চোখ বুলালো কোথায়ও বমি লেগে আছে কিনা দেখতে। বাহিরে যে বাড়ির সকলে চিন্তিত হয়ে তার রুমের দরজা প্রায় ভেঙে ফেলছে সেদিকে তোয়াক্কা করলো না রিদ। বিছানায় অবহেলায় পরে থাকা ফোনটাও বেশ অনেকক্ষণ ধরেই বেজে চলছে।
রিদ কোনোদিক না তাকিয়ে ঘরের আনাচে কানাচে অহনাকে খুঁজতে লাগলো। কোথায়ও না পেয়ে বুঝলো সে এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিলো। বিড়বিড় করে বলল,
-না হওয়া বউ এখন আমারে ঘুমাইতেও দিচ্ছে না!মাগো কী ভয়ংকর স্বপ্ন ছিল!
ধপ ধপ পা ফেলে দরজা খুলে দেয়। রিদের মা, বাবা, বড় ভাই, মেজো ভাই,ভাবি সকলে একসাথে হুড়মুড়িয়ে তার রুমে ঢুকে যায়। রিদ আশ্চর্য হয়ে বলল,
-এমা! তোমরা কী এখন আমাকে রাতেও একটু শান্তিতে ঘুমোতে দেবে না নাকি! মানলাম আমার বউ নাই তাই বলে যখন তখন আমার রুমে এসে পরবা! ঘড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে তো কেউ কারো রুমে আসে। দেখছি তোমরা সবাই বুড়ো হচ্ছ আর মেনার্স ভুলে যাচ্ছ! যাক এখন আমাকে তোমাদের মেনার্স শিখাতে হবে।
-চুপ তুই। রাত একটায় তুই এইরকম ভুতের মতো চিৎকার করলে আমরা ঘুমাবো কিভাবে?
বলল রিদের মেজো ভাই। রিদ পাল্টা জবাবে বলল,
-আব্বাকে বলো আমাকে বিয়ে করিয়ে দিতে। বউ আসলে আর চিৎকার করবো না।
রিদের বড় ভাই ছোট ভাইয়ের এহেন কথায় সরম পেয়ে চলে যায়। তার সাথে তার বউও চলে যায়। রিদের বাবা রাগী মুখে বললেন,
-তোর মতো বখাটে, অধম, বেকারকে আমি তো ভুলেও বিয়ে করাবো না। পরে দেখা যাবে মেয়ের পরিবার এসে আমাকে ধরবে এইরকম ছেলে জন্ম দেওয়ার জন্য।
রিদ ডোন্ট কেয়ার ভাব দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। বাঁকা চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে নিলিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
-আমি বিয়ের পর ভালো হয়ে যাবো আব্বা। তুমি উনত্রিশ বছরে দুই বাচ্চার বাপ হয়ে গিয়েছিলে আর আমি উনত্রিশ বছরে এখনও সিঙ্গেল! আমার মতো মাসুমের ওপর একটু দোয়েয়া করো।
রিদের বাবা কটমট দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন?
-দেখেছো তোমার বেশরম ছেলের অবস্থা! আরো বেশি করে আদর-আল্লাদ দিয়ে মাথায় তুলো এনাকে।
রিদের মা মুখ ভেংচি দিয়ে বললেন,
-আমার ছেলেকে এতো বকেন না তো আপনি।
-না তাকে বকবো না বরং মাথায় তুলে নাচবো!
রিদ বাবা মায়ের কথায় বিরক্ত হয়ে বলল,
-উফফ তোমরা বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করো না। আর আব্বা আমাকে জলদি বিয়ে দিয়ে দেও প্রমিস করছি নিম্নে হলেও পাঁচটা বাচ্চার দাদা বানিয়ে তোমার বংশ এগিয়ে নিয়ে যাবো।

শেষের কথাটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল রিদ। রিদের বাবা সরমে আর থাকতে পারলো না। সবাই চলে যেতে রিদ দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে। বিছানায় বসে অনবরত বেজে চলা ফোন হাতে নেয়। প্রিয় একজনের নাম দেখে কল রিসিভ করে বলল,
-ওই শা’লা কল দেওয়ার কী আর সময় পাস না তুই? এই রাইতবিরাইতে তুই আমারে কল দেস কেন? তোর মতলব তো ভালো ঠেকাইতাছে না!
অপরপাশের জন ধমকের স্বরে বলল,
-তোর মতো গে* না আমি যে মাথায় সারাক্ষন উল্টাপাল্টা চিন্তা ঘুরবে!
-হইছে মামা আমারে বুঝাও কম তুমি। তা এতদিন পর কী মনে করে কল করলি আরহাইম্মা?
-কয়েকমাস অনেক ব্যস্ত ছিলাম কাজ নিয়ে। আমার এখন আপসোস হয় কেনো তোর মতো বখাটের লাইন ধরলাম না! স্বপ্ন পূরণও হলো আমার জীবনটা তেনাতেনাও হলো।
-জানতাম এর লেগাই তো আমি আর তোর সাথে যাইনি। ঢাকায় আসবি কবে?
-এসেছিলাম তো কয়েকদিন আগে। সুনহেরার বিয়ে ঠিক হয়েছে সেই কথাবার্তার জন্যই তাড়াহুড়ো করে এসেছিলাম আবার ঘন্টাখানিকের মধ্যেই চলে গিয়েছি।
রিদ অভিমান দেখিয়ে বলল,
-ভালোই তো বে’টা এসে চলেও গেলি! একটু দেখাও করলি না বললিও না!
-সরি মামা তখন তাড়াহুড়ো ছিল তাই বলতে পারিনি।
-বুঝলাম। এখন বোনের বিয়ের তারিখ কবে? আর তুই বিয়ের জন্য আসছি না?
-এইমাসের পঁচিশ তারিখে। আমি চেষ্টা করবো তিনদিন কি চারদিনের জন্য আসার। তাছাড়া তোকেই কিন্তু সব দায়িত্ব নিতে হবে আমার হয়ে।
রিদ খানিকটা এটিটিউড দেখিয়ে বলল,
-চিন্তা নাই মে হু না।
আরহাম হাসলো রিদের কথা শুনে। মাস যাবে, বছর যাবে কিন্তু এই ছেলে আর পরিবর্তন হবে না। আরহাম উৎসুক হয়ে বলল,
-এবার বল তোর খবর কী? বিয়েটিয়ে করছিস কবে তুই?
রিদ মুখে দুঃখী ভাব এনে ঠোঁট উল্টায়। অসহায় কণ্ঠে বলে,
-বিয়ে তো আমি এখনই করতে চাই কিন্তু আব্বা রাজি হয় না।
-মেয়ে খোঁজা আছে?
-তোকে বলেছিলাম না একটা মেয়ের কথা? আমি ওকেই বিয়ে করবো।
-বাহ্! জলদি বিয়েটা কর আমাকেও বেস্টফ্রেন্ডের বিয়েতে এনজয় করার সুযোগ করে দে।
রিদ পাংসুটে মুখে আরহামের কথার জবাবে বলল,
-তাইলে আমার কী হবে? আমিও তো তোর বিয়ায় এনজয় করতে চাই। কিন্তু তুই যে আজীবন দেবদাস হয়ে থাকার শপথ নিয়েছিস!
আরহাম শব্দ করে হেসে উঠলো রিদের কথায়। চোখ বন্ধ করতেই তার মন মস্তিকে ভেসে উঠে মাহানুরের রাগী মুখশ্রী। চিত্ত ধক ধক করে উঠে। আঁখিজোড়া খুলে বড় একটি নিঃশাস নিয়ে বলল,
-বহুকালের শপথ ভঙ্গ করেছি কয়েকদিন আগে।
-মানে? তুই প্রেমে পরেছিস মামা? কে সেই মেয়ে? কখন দেখলি? কিভাবে কী হলো ভাই? জলদি বল।

>>>চলবে।
(আসসালামু ওলাইকুম। আগামী একমাস হয়তো নিয়মিত গল্প দিতে পারবো না। রোজা থেকে শরীর ক্লান্ত লাগে অনেক সময় লেখালেখি করতে মন চায় না। তাই আগের থেকেই সরি বলে রাখছি।
আজকের পর্ব কেমন হয়েছে বলবেন। ধন্যবাদ। ❤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here