গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #পর্বঃ_১১ #লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার

0
196

#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_১১
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। সময় যেন সবকিছু বদলে দেয়। সময়ের আবর্তনে এখন অনেক কিছুই ঠিক তেমনি বদলে গেছে। সৌভিক অনুরাধার সম্পর্ক যত দিন যায় গভীর হয়েছে। এদিকে প্রভার মনের অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। একসময় আবিরের জন্য তার মনে অনুভূতি ছিল। কিন্তু এখন সেই সব অনুভূতি সরে গেছে রায়ানের দিকে। কারণ প্রভা তার প্রতি রায়ানের কেয়ার, দায়বদ্ধতা এসবে মুগ্ধ গেছে। যদিও সে রায়ানকে তার অনুভূতির কথা জানাতে পারে নি। কিন্তু আজ জানালো নিজের বান্ধবী অনুরাধাকে। সব শুনে তো অনুরাধা অনেক বেশি খুশি হয়ে গেল। প্রভাকে বলল,”তুই অনেক ভালো একজনকে বেছে নিয়েছিস প্রভা। প্রথমদিকে আমার রায়ান ভাইয়া, সৌভিক সবার সম্পর্কে খারাপ ধারণা ছিল। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পেরেছি ওরা আসলে কত ভালো। তুই চাইলে আমি সৌভিককে বলব রায়ান ভাইকে তোর ব্যাপারে বলতে।”

প্রভা লজ্জা পেয়ে গিয়ে বলে,”তোর এমন করতে হবে না। সময় হলে আমি নিজেই গিয়ে বলব।”

এমন সময় সৌভিক চলে এলো সেখানে। এসেই অনুরাধার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। অনুরাধাও হাসল তাকে দেখে। প্রভা তাদের দেখে চলে যেতে উদ্যত হলো। কারণ ইতিমধ্যেই সে তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানে। শুধু প্রভা নয় কলেজের সবাই কমবেশি জানে। ঝগড়া দিয়ে শুরু হওয়া সম্পর্ক একটু বেশিই গভীর হয়। সৌভিক আর অনুরাধা কলেজে এত ক্লোজ থাকে যে তাদের বিষয়টা জানতে সবাইকে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। প্রভাকে অবশ্য অনুরাধা নিজেই বলেছিল। প্রিয় বান্ধবী বলে কথা।

প্রভাকে চলে যেতে দেখে অনুরাধা বলে,”কোথায় যাচ্ছিস তুই? থাক না এখানে।”

প্রভা হেসে বললো,”তোরা একটু একান্তে সুন্দর সময় উপভোগ কর। আমি আসছি।”

অনুরাধা লজ্জা পেলো। সৌভিক এসে তার হাত ধরল। অনুরাধা কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,”এভাবে হুটহাট হাত ধরো কেন? কেউ দেখলে কি ভাববে?”

“আমি তো সারাজীবনের জন্য এই হাত ধরতে চাই। কে কি ভাবল তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।”

বলেই অনুরাধার অনেক কাছে চলে এলো সৌভিক। অনুরাধা বলল,”আরে কি করছ?”

সৌভিক নেশাতুর কন্ঠে বলল,”আমার ঠোঁটে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তোমায় চুমু না খাওয়া পর্যন্ত এই উত্তেজনা কমবে না।”

অনুরাধা সৌভিকের শার্টের কলার ধরে টেনে তাকে কিস করতে থাকে। সৌভিকও তার সাথে তাল মেলায়। একসময় অনুরাধা একটু নিচে নেমে সৌভিকের গলায় কামড় খায়। সৌভিক মৃদু আর্তনাদ করে বলে,”এটা কি করলে?”

অনুরাধা বলল,”লাভ বাইট দিয়ে দিলাম। এটা তোমায় সবসময় আমার কথা মনে করিয়ে দেবে। আর যখন অন্য মেয়েরা তোমার পাশে ঘুরবে তখন তাদের এটা দেখাবে আর বুঝিয়ে দেবে যে তুমি সিঙ্গেল নও তোমার হবু বউ আছে।”

সৌভিক অনুরাধার কাধে হাত রেখে বলল,”ও এই ব্যাপার। তার মানে তুমি জেলাস?”

অনুরাধা রেগে বলল,”ঐ রিয়া নামের মেয়েটা সবসময় তোমার গায়ে পড়ে কেন? ঐ দেখ মেয়েটা এদিকেই আসছে। ওকে গিয়ে এই কামড়ের দাগটা দেখিয়ে বলো তোমার হবু বউ আছে। ও যেন তোমার থেকে দূরে থাকে।”

সৌভিক বলে,”এটা করা কি ঠিক হবে?”

“তোমাকে যেটা বলছি সেটা করো। নাহলে ব্রেকআপ করে দেব।”

সৌভিক আর কোন উপায় খুঁজে পায় না। অনুরাধার কথামতো রিয়ার সামনে যায়। নিজের গলার কামড়ের দাগটা দেখিয়ে বলে,”এই দেখ, আমার হবু বৌ আমার ঘাড়ে লাভ বাইট দিয়েছে। তুমি প্লিজ আমার থেকে দূরে থাকো। নাহলে আর কোথায় কোথায় লাভ বাইট দেবে সেটা ভেবেই কান্না পাচ্ছে।”

রিয়া তখন কান্নার সুরে বলে,”ইটস ওকে। আমি অন্য কাউকে খুঁজে নেব।”

বলেই সে চলে যায়। অনুরাধা হেসে বলে,”এভাবেই সব সতীন কাটা দূর করতে হয়।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রভা যখন কলেজের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল তখন হঠাৎ তার সামনে একটি গাড়ি এসে থামে প্রভা উৎসুক দৃষ্টিতে গাড়ির দিকে তাকায়। গাড়ি থেকে নেমে আসেন এলাকার এমপি রুহুল আমিন। প্রভা চেনে তাকে। ইনি তো রায়ানের বাবা। প্রভা তাকে দেখে সালাম দিয়ে বলে,”আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম। তুমি প্রভা না?”

“জ্বি, আঙ্কেল। কিছুদিন আগে কলেজের ফাংশনে আপনি এসেছিলেন। তখন রায়ান ভাইয়া আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।”

“হ্যাঁ, মনে পড়েছে। আসলে আমি রায়ানের জন্যই এখানে এসেছি। রায়ান খুব অসুস্থ সেইজন্য আজ কলেজে আসতে পারেনি। ও তোমাকে দেখতে চাই।”

প্রভা উত্তেজিত হয়ে বলে,”কি হয়েছে রায়ান ভাইয়ার?”

“আরে তেমন কিছু হয়নি। সামান্য জ্বর হয়েছে। কাল বৃষ্টিতে ভিজেছিল তো।”

প্রভার মনে পড়ে কাল বৃষ্টি হয়েছিল খুব। প্রভা ছাতা আনে নি জন্য রায়ান তাকে নিজের ছাতা দিয়েছিল এবং সে কিছুটা ভিজে গাড়িতে গিয়ে উঠেছিল। এজন্যই বোধহয় তার জ্বর এসেছে। প্রভার খুব খারাপ লাগে রায়ানের জন্য। ছেলেটা তার কথা ভাবতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। তাই প্রভা আর সময় নষ্ট না করে রুহুল আমিনের সাথে যেতে রাজি হয়।

রুহুল আমিনের সাথে রায়ানদের বাড়িতে যায় প্রভা। পথে যেতে যেতে রুহুল আমিন রায়ানের ব্যাপারে প্রভাকে অনেক কথা বলেন। তিনি বলেন,”জানো রায়ান আমার অনেক আদরের সন্তান। আমার আর আমার স্ত্রীর বিয়ের দীর্ঘ ১২ বছর আমাদের কোন সন্তান হয়নি। তারপর আল্লাহর কাছে অনেক কান্নাকাটি করে আমরা রায়ানকে পাই। ও আমাদের নয়নের মণি ছিল। কিন্তু ওর যখন মাত্র ৪ বছর বয়স তখন ওর মা আমাদের ছেড়ে চলে যায়। তারপর আমি রায়ানকে একা বড় করি। ও ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। তাই ওকে অনেক আদরে বড় করেছি, গায়ে একটা ফুলের টোকা লাগতে দেই নি।”

রায়ানদের বাড়িতে এসে তার রুমে যায় প্রভা। রুহুল আমিনই তাকে নিয়ে যায়। তারপর রায়ানকে বলে,”দেখ রায়ান তোমার সাথে দেখা করতে কে এসেছে।”

রায়ান প্রভাকে দেখে অনেক খুশি হয়। প্রভা রায়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”আপনি এখন কেমন আছেন?”

রায়ান হেসে বলে,”এতক্ষণ অসুস্থ বোধ করছিলাম কিন্তু তুমি আসার পর নিজেকে অনেকটা সুস্থ মনে হচ্ছে।”

প্রভা এমন উত্তরে কি বলবে বুঝতে পারবে না। কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে বলে,”ওষুধ খেয়েছেন?”

রায়ান হ্যাঁ বোধক ইশারা করে। প্রভা বলে,”চিন্তা করবেন না। আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।”

রায়ান আবারো হেসে বলে,”তুমিই তো আমার মেডিসিন। তোমাকে যখন দেখেছি তখন আমি নিশ্চয়ই সুস্থ হবো।”

রুহুল আমিনের সামনে এমন কথা বলায় প্রভা অনেক অস্বস্তিতে পড়ে। সে মুখ লুকানোর যায়গা খুঁজছিল। রুহুল আমিন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে প্রভার কাছে এসে বলে,”আমি কিছু মনে করিনি মা। ও তো অসুস্থ তাই এসব ভুলভাল বকছে।”

তারপর তিনি রায়ানকে বলেন,”তোমার তো ওকে দেখা হয়ে গেছে। তাহলে ওকে আমি ওর বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসি। নাহলে ওর পরিবারের লোকজন আবার চিন্তা করবে।”

রায়ান বলে,”হ্যাঁ, ওকে সাবধানে নিয়ে যেও। আর দেখবে ওর যেন কোন অসুবিধা হয় না।”

রুহুল আমিন রায়ানের কানে কানে বলে,”তুই চিন্তা করিস না বেটা৷ তোর বাপ তার বৌমাকে নিরাপদেই বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে।”

রায়ান এবার প্রাণখুলে হাসে যা দেখার মতো ছিল। এরপর সে প্রভাকে বলে,”সাবধানে পৌঁছে যেও। আমি এরপর কলেজে ফিরেই তোমাকে অনেক বড় সারপ্রাইজ দিবো।”

(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়

(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here