গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #পর্বঃ_০৬ #লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার

0
200

#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_০৬
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
রাঙামাটিতে পৌঁছে গেছে সকলে। অনুরাধার সাথে বাস থেকে নামে প্রভা৷ তাদের পিছু পিছু আবির ও রায়ানও নামে। সৌভিক একটু পরে নামে। শিক্ষকরা তাদের একসাথে থাকতে বলে এবং অনুসরণ করতে বলে। তারা তাই করে।

রাঙামাটিতে এসে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে থাকে প্রভা। অন্যদিকে রায়ান ডুবে যায় প্রভার মাঝেই। সৌভিক ব্যাপারটা খেয়াল করে নিজের বন্ধুকে বলে,”তুই তো দেখছি প্রেমের সমুদ্রে একেবারে ডুবে গেছিস রে।”

রায়ান হেসে বলে,”এই সমুদ্রের নাম যদি প্রভা হয় তাহলে আমি হাজারো বার এই সমুদ্রে ডুবতে রাজি আছি।”

“তোর রোম্যান্টিক কথা শুনেই আমি বুঝতে পারছি, তুই অনেক ভালো প্রেমিক হবি।”

“তাই যেন হয়।”

এমন সময় আবির সেখানে উপস্থিত হলো। তার হাতে একটি DSLR ক্যামেরা। আবির এসেই সৌভিক ও রায়ানকে বলে,”কিরে, তোরা ঘুরতে এসে এখানে ঘাপটি মে*রে বসে আছিস কেন? চল, গিয়ে রাঙামাটির সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দী করি।”

সৌভিক বলল,”এই যে, এসে গেছেন আমাদের ক্যামেরাম্যান আবির। রায়ান তুই যাবি নাকি?”

রায়ান প্রভার দিকে তাকিয়ে ছিল। সৌভিকের কথায় তার ধ্যান ভাঙে। মৃদু হেসে বলে,”চল যাওয়া যাক।”

যদিও তার যাওয়ার তেমন ইচ্ছা ছিল না কিন্তু আবিরকে খুশি করতে সে রাজি হলো যেতে। কারণ সে না গেলে আবির অনেক কষ্ট পাবে। আর রায়ান নিজের বন্ধুকে কষ্ট দিতে চায় না।

রায়ানরা যাওয়ার কিছুক্ষণ পর অনুরাধা এসে প্রভাকে বলল,”চল আমরা একটু আশেপাশে ঘুরে দেখি।”

প্রভা বলে দিলো,”আসলে আমার যাওয়ার ইচ্ছা নেই রে।”

“ইচ্ছা নেই বললেই হলো? চল আমার সাথে।”

এসব বলে একপ্রকার জোর করেই প্রভাকে নিয়ে গেল অনুরাধা। তারা দুজনে মিলে আশপাশটা ঘুরে দেখতে লাগল। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ প্রভার সাথে কারো ধাক্কা লেগে গেল। প্রভা চোখ তুলে রায়ানকে দেখল। রায়ান স্থির চোখে তার দিকেই তাকিয়ে। প্রভা কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকায় রায়ান বলল,”আজ সরি বললে না যে?”

প্রভা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। রায়ান প্রভার দিকে একটু ঝুকে এসে বলল,”তোমার কি আমার সাথে ধাক্কা খেতে খুব ভালো লাগে নাকি?”

অনুরাধাও প্রভার পাশে ছিল। সে রায়ানকে বলল,”এই তুমি আমার বান্ধবীকে কি বলছ হ্যাঁ?”

“তেমন কিছু না।”

তাদের কথার মাঝেই আবির চলে এলো সেখানে। আবিরকে দেখে প্রভা হাসিমুখে তার দিকে তাকালো। আবিরও প্রভার দিকে হাস্যোজ্জ্বল দৃষ্টিতেই তাকালো। কিন্তু তাদের মাঝে কোন কথা হলো না। ততক্ষণে সৌভিক সেখানে উপস্থিত হয়ে অনুরাধাকে দেখতে পেল। অনুরাধাকে দেখেই তার মেজাজ বিগড়ে গেল। তার কেন জানি এই মেয়েটাকে সহ্যই হয় না। সৌভিক আবির আর রায়ানকে বলল,”তোরা কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি সামনেও যাবি?”

আবির বললো,”হ্যাঁ, চল।”

রায়ান যেতে চাইল না কিছুতেই। তার ইচ্ছা করছে প্রভার দিকে তাকিয়ে থাকতে। মেয়েটাকে দেখলে সে যে অদ্ভুত শান্তি পায়। অনুরাধা প্রভাকে অন্যদিকে টেনে নিয়ে গেলো। তারা যাওয়ার পর সৌভিক এসে রায়ানের কাধে হাত রেখে বললো,”আমার তো মনে হয় এই অনুরাধা নামের মেয়েটা যতদিন আছে ততদিন তোর ভাবিকে নিজের করতে পাওয়া হবে না। ভাবিকে পেতে হলে তোকে আগে এদের বন্ধুত্ব ভাঙতে হবে।”

রায়ান একবাক্যে বলে দেয়,”যদি ঐ সাধাসিধা মেয়ে আমার ভাগ্যে থাকে তাহলে ওকে আমি এমনিই পাবো। ওকে পাওয়ার জন্য কোন ছলচাতুরী করা বা কারো বন্ধুত্ব ভাঙার প্রয়োজন হবে না।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রায়ান ও আবির ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিল৷ সৌভিক একটু আলসে টাইপ। তাই সে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যায়। এইজন্য সে আর ওদের সাথে না ঘুরে ক্যাম্পের কাছে ফিরে আসছিল। এমন সময় হঠাৎ কারো কান্না শুনে সে থেমে যায়। কান্নার আওয়াজ অনুসরণ করে সামনে গিয়ে দেখতে পায় অনুরাধা কাঁদছে। সৌভিকের ভ্রুজোড়া কুচকে যায়। সে অনুরাধার কাছে গিয়ে বলে,”এভাবে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছ কেন? কি সমস্যা তোমার?”

অনুরাধা কান্না থামিয়ে বলে,”অনেক বড় সমস্যা হয়ে গেছে। আমি প্রভাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।”

“খুঁজে পাচ্ছ না মানে? ও তো তোমার সাথেই ছিল।”

“হ্যাঁ, আমার সাথে ছিল কিন্তু আমার ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। এইজন্য আমি ওকে এখানে অপেক্ষা করতে বলে ওয়াশরুমে যাই। তারপর এসে থেকে আর ওকে খুঁজে পাচ্ছি না। কি করব কিছুই বুঝছি না। আমি আন্টিকে কথা দিয়েছিলাম ওর খেয়াল রাখব। এখন যদি ওর কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি আন্টিকে কিভাবে মুখ দেখাব?”

এসব বলে আরো কাঁদতে থাকে অনুরাধা। সৌভিক বিরক্ত হয়ে রাগী গলায় বলে,”স্টপ। এভাবে কাঁদলে কোন সমস্যার সমাধান হবে না। তার থেকে ভালো চলো আমরা আশেপাশে ওকে খুঁজে দেখি।”

“আমি ওকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু ওকে কোথাও পাইনি।”

“এতটা ইউজলেস কেউ কি করে হতে পারে? চলো আমার সাথে স্যারদের জানাতে হবে। এভাবে বসে থাকলে হবে না। আমরা কেউ এখানকার কিছুই চিনি না। না জানি তোমার বান্ধবী কোন বিপদে ফেসে গেছে।”

তখনই আবির আর রায়ানও সেখানে চলে আসে। রায়ান এসে বলে,”কার বিপদের কথা বলছিস তুই?”

সৌভিক তাদের সব কথা খুলে বলে। সব শুনে আবির ও রায়ান দুজনেই ভীষণ ঘাবড়ে যায়। দুজনেই একসঙ্গে ছুট লাগায় প্রভাকে খোঁজার জন্য।

~~~
প্রভা একটা বড় চাপালিশ গাছের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অনুরাধা তাকে রেখে ওয়াশরুমে চলে যাবার পর সে একা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বোর হচ্ছিল এইজন্যই আশেপাশে একটু ঘুরে দেখতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে সে একটা বনের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তারপর কখন যে বনের গহীনে চলে আসে সেটা বুঝতেই পারে না। আর যখন বুঝতে পারে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। এখন এই বনটা তার কাছে পুরো গোলকধাঁধা লাগছে। এখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুরেফিরে সেই চাপালিশ গাছটার সামনেই আসছে। প্রভার এখন ডুকরে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।

এমন সময় হঠাৎ সে সামনে থাকা ঝোপের আড়ালে নড়াচড়ার শব্দ শোনে। সাথে সাথেই সে অনেক ঘাবড়ে যায়। না জানি বনের কোন ভয়ানক প্রাণী হবে। প্রভা মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে।

সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপণে দৌড় দেয়। কিছুদূর সামনে গিয়ে হঠাৎ গাছের শিকড়ে পা আটকে পড়ে যায়। যার ফলে প্রভার পায়ে চোট লাগে এবং রক্ত পড়তে থাকে। সে গোঙাতে থাকে। বাঁচার জন্য চিৎকার করতে থাকে। এমন সময় কেউ তার সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রভা মাথা তুলে দেখতে পায় রায়ানকে। বলে ওঠে,”আপনি!”

রায়ান বলে,”ভেবেছিলাম তুমি শুধু সাধাসিধা এখন দেখছি তুমি যতটা না সাধাসিধা তার থেকেও বেশি গাধী। তাড়াতাড়ি আমার হাত ধরে উঠে এসো।”

প্রভা রায়ানের হাত ধরে উঠে পড়ে। কিন্তু তার পায়ে চোট লাগায় ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছিল না। রায়ান প্রভার এই অবস্থা দেখে বলে,”তোমার কি মিনিমাম সেন্স নেই? কি করে এসব বিপদ বাধালে?”

“সরি।”

“আমাকে সরি বলছ কেন? আজ যদি আমি তোমাকে খুঁজে না পেতাম আর তুমি এই বনে হারিয়ে যেতে তাহলে কি হতো ভাবতে পারছ? এত কেয়ারলেস কেউ হয়?”

“সরি।”

“তুমি সরি বলা বন্ধ করবে?”

প্রভা আর কিছু বলে না। রায়ান চারপাশে তাকিয়ে বলে,”আমিও তো তোমার খোঁজে কোন কিছু না ভেবেই বনের মধ্যে চলে এলাম। এখন এই বন থেকে বের হবো কি ভাবে?”

“আপনিও কি রাস্তা ভুলে গেছেন?”

“সেটাই তো মনে হচ্ছে।”

“তাহলে আমাদের কি হবে?”

“তুমি চিন্তা করো না সাধাসিধা মেয়ে। আমি কোন উপায় বের করছি। তুমি আমার সাথে এসো।”

প্রভাকে সাথে নিয়ে রায়ান হাটতে থাকে। কিন্তু প্রভার পায়ে চোট লাগায় সে ঠিকমতো হাটতে পারছিল না। তার উপর তার পা থেকে অনবরত রক্ত পড়ছিল। এইজন্য রায়ান নিজের টি-শার্টের কিছু অংশ ছিড়ে প্রভার পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। আর কিছু জঙ্গলি গাছ এনে দেয় যাতে রক্তপড়া বন্ধ হয়। তারপরেও প্রভার হাটার সমস্যা হওয়ার কারণে প্রভাকে কোলে তুলে নেয়। প্রভা হতবাক হয়ে বলে,”এ কি করছেন?”

রায়ান শান্ত অথচ কড়া গলায় বলে,”হুশ। নো মোর ওয়ার্ডস। আমি আর কিছু শুনতে চাই না।”

বলেই সে প্রভাকে কোলে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। আর প্রভা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়

(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here