গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #পর্বঃ_০৮ #লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার

0
181

#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_০৮
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
রাঙামাটি থেকে ফেরার সময় পাশাপাশি সিটে যায়গা হলো প্রভা ও রায়ান। রায়ান এতে অনেক খুশি হলেও প্রভার কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগল না। সে চাইছিল আবিরের পাশাপাশি থাকতে। অন্যদিকে সৌভিকের পাশে যায়গা পেয়েছে অনুরাধা। এতে অবশ্য প্রথমে অনুরাধা নাখোশ হয়েছিল। সৌভিকের পাশে বসতেও চাইছিল না। কিন্তু পরে আর কোন উপায় না পেয়ে বসে গেছিল। তবে বসার পর থেকে সে মুখ লটকিয়ে ছিল।

রায়ান প্রভার পাশে বসে থাকায় কিছুক্ষণ পরপরই সে প্রভার দিকে তাকাচ্ছিল। প্রভার দিকে তাকাতেই অদ্ভুত প্রশান্তি এসে বাসা বাঁধে রায়ানের মনে। সে যেন নিজের মনে খুঁজে পায় স্বর্গীয় সুখ। রায়ান নিজের বুকের বা পাশে হাত দিয়ে খুবই আস্তে বলে,”আমি জানি না, কখন এবং কিভাবে তুমি আমার এখানে স্থান পেলে। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি তোমাকে আমি কতোটা চাই।”

প্রভা রায়ানকে বলল,”ভাইয়া কিছু বললেন?”

“না, সাধাসিধা মেয়ে। আমি কিছু বলিনি।”

প্রভা আর কিছু বলে না। সে পিছনের দিকে তাকিয়ে একবার অনুরাধাকে দেখে নেয়। অনুরাধা তার দিকে অসহায় চোখে তাকায়। অনুরাধার থেকে চোখ ফিরিয়ে সে তাকায় আবিরের দিকে। আবিরও সেইসময় প্রভার দিকে তাকিয়ে ছিল। দুজনের চোখাচোখি হতেই প্রভা দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। আবির প্রভার এই কাণ্ডে বেশ অবাক হয়। আবির ভাবতে থাকে,”প্রভা আমার দিকে তাকিয়ে এভাবে চোখ সরিয়ে নিলো কেন? তাহলে ও কি কোনভাবে আমায় পছন্দ করে?”

ব্যাপারটা ভাবতেই হাসি ফুটে ওঠে আবিরের মুখে। ব্যাপারটা তার কাছে অনেক ভালো লাগতে থাকে। আবির বলে,”প্রভা যদি আমায় পছন্দ করে তাহলে ব্যাপারটা অনেক দারুণ হবে। সেই প্রথম দেখার পর থেকেই তো আমি মেয়েটাকে পছন্দ করি। যা আজ অব্দি আমি কখনো ওকে বলতে পারিনি।”

~~~~~
তখন একটু রাত হয়েছে। বাসের মধ্যে অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সৌভিকেরও ঘুম পাচ্ছিল। এমন সময় সে খেয়াল করে তার কাধে কারো মাথা। সৌভিক চমকে ওঠে। নিজের কাধের দিকে তাকিয়ে অনুরাধাকে দেখে আরো বেশি চমকে যায় সৌভিক। অনুরাধাকে নিজের এত কাছে দেখে তার হৃদস্পন্দন হঠাৎ করে খুব দ্রুত বেড়ে যায়। আগে কখনো কোন মেয়েকে নিজের এত কাছে দেখে নি সে। সৌভিক চোখ বন্ধ করে বড় করে শ্বাস নেয়। সে হাসফাস করছিল কিন্তু অনুরাধা ঘুমিয়ে থাকায় কিছু করতে পারছিল না। সে চাইছিল না অনুরাধার ঘুম ভাঙাতে। এর মাঝে অনুরাধা হঠাৎ কেশে ওঠে। সৌভিক বুঝতে পারে জানালা খোলা থাকায় হাওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে। তাই সে খুব সাবধানে জানালাটা বন্ধ করে দেয়। অনুরাধা তবুও কাশছিল। সৌভিক খেয়াল করে অনুরাধার গায়ে কোন ভারী পোশাক নেই। তাই সে আর কোন উপায় না পেয়ে নিজের ব্যাগ খুলে তার সাথে আনা চাদর জড়িয়ে দেয় অনুরাধার গায়ে। তারপর অনুরাধার দিকে অনিমেষ তাকিয়ে থাকে। ঘুমন্ত অনুরাধাকে কতোই না ইনোসেন্ট লাগছে। সৌভিক অনুরাধার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,”কে বলবে এই মেয়ে জেগে থাকলে কিরকম ঝগড়া করে? মেয়েটাকে কিন্তু আসলেই অনেক মিষ্টি দেখতে।”

প্রভাও ঘুমিয়ে পড়েছে রায়ানের কাধে মাথা রেখে। রায়ান ব্যাপারটাকে অনেক বেশি এনজয় করছে। প্রভাকে নিজের এত কাছে দেখে সে অনেক খুশি। অন্যদিকে আবির দূর থেকে এটা দেখে অনেক বেশি জেলাস হয়ে যায়। আবির ভাবে যদি প্রভা তার সাথে বসতো তাহলে কতোই না ভালো হতো। একটু ভেবেই সে বলে,”রায়ানকে আমার মনের কথাটা জানিয়ে দিতে হবে। ওর মনে তো আর প্রভাকে নিয়ে কোন অনুভূতি নেই। রায়ান তো আমার ছোটবেলার বন্ধু। ও যখন আমার মনের কথা জানতে পারবে তখন নিশ্চয়ই সাহায্য করবে আমাকে আর প্রভাকে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য। তাছাড়া প্রভাও তো আমাকেই পছন্দ করে।”

এটা ভেবেই খুশি হতে থাকে আবির। তবে সে তো আর জানে না রায়ানের মনে প্রভাকে নিয়ে অনুভূতি করতো প্রখর। যেটা দিনকে দিন আরো গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছিল।

অনুরাধার ঘুম হঠাৎ করে ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে সে নিজের গায়ে চাঁদর দেখে অবাক হয়। আবার জানালার দিকে তাকিয়েও অবাক হয়। কারণ সে যখন জেগেছিল তখন তো দেখেছিল জানালা খোলা। অনুরাধার নজর যায় সৌভিকের দিকে। ছেলেটা শীতে কাপছিল। অনুরাধা হালকা কেশে সৌভিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,”এই চাদরটা কি তোমার?”

“হ্যাঁ।”

“তোমার তো ঠান্ডা লাগছে। তুমি এটা নিতে পারো।”

“না, থাক। আমার কোন সমস্যা নেই।”

সৌভিকের এই ব্যাপারটা অনুরাধার অনেক ভালো লেগে যায়। কারণ সে স্পষ্ট বুঝতে পারছিল সৌভিকের ঠান্ডায় অনেক প্রব্লেম হচ্ছে কিন্তু তবুও সে অনুরাধার কথা ভাবছে। অথচ সে কখনো সৌভিকের সাথে ভালো ভাবে কথা পর্যন্ত বলে নি। অনুরাধা এবার চাদরের কিছু অংশ দিয়ে সৌভিকের শরীর ঢেকে দিয়ে বলে,”এবার তো ঠিক আছে তাই না? আমারও হলো আর তোমারও।”

সৌভিক অনুরাধার দিকে তাকায়, অনুরাধাও তাকায় সৌভিকের দিকে। কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার পর দুজনেই প্রচণ্ড লজ্জায় আবার চোখ সরিয়ে নেয়।
~~~~~
ভোর ৬ টায় সকলে পৌঁছে যায় চট্টগ্রামে। তাদের কলেজের সামনে এসে বাস থামে। সকলের হুড়োহুড়ির শব্দে প্রভার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে যখন সে বুঝতে পারে সে রায়ানের কাধে মাথা দিয়ে রেখেছে তখন দ্রুত স্বাভাবিক হয়। রায়ানকে বলে,”সরি ভাইয়া। ঘুমের মধ্যে কোন খেয়াল ছিল না তাই..”

“কোন ব্যাপার না। আমি কিছু মনে করি নি।”

প্রভা সৌজন্য সূচক হাসি দিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ে। বাস থেকে নামতেই সে দেখতে পায় অনুরাধাকে। অনুরাধা সৌভিককে তার চাদর ফিরিয়ে দিয়ে বলে,”গতকাল রাতের জন্য ধন্যবাদ। আর আগের সব বেয়াদবির জন্য সরি। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি অনেক ভালো ছেলে।”

সৌভিক হেসে বলে,”আমার মাও আমাকে তাই বলে যে আমি গুড বয়। কিন্তু তোমার কাছে ব্যাড বয় হয়ে থাকতেই আমার ভালো লাগছিল।”

প্রভা অনুরাধার নাম ধরে ডাক দেওয়ায় সে আর কথা না বাড়িয়ে সৌভিকের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। সৌভিক অনুরাধার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে থাকে।

রায়ান এসে সৌভিকের কাধে হাত রেখে বলে,”কিরে সৌভিক?! ঐ ঝগড়ুটে মেয়েটার সাথে রাত কেমন কা”টল।”

সৌভিক মুখ ফুসে বলে ফেলে,
“বিন্দাস।”

“কি?”

সৌভিক দ্রুত জিভ কে’টে বলে,”কি আর বলবো দুঃখের কথা মেয়েটা যা নাক ডাকে। একেবারে কুম্ভকর্ণের মতো। ওর নাক ডাকার শব্দে তো আমি রাতে ভালো করে ঘুমাতেই পারিনি।”

“তাহলে একটু আগে হেসে হেসে কথা বলছিলি কেন?”

সৌভিক প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বলে,”আরে তেমন কিছু না। আচ্ছা, তুই আমায় বল সারারাত ভাবির পাশে কেমন কা’টলো? আমি তো খেয়াল করেছি ভাবি তোর কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিল।”

রায়ান গতকাল রাতের কথা ভেবে হাসতে থাকে। গতকাল রাত সত্যি তার কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছিল যে। রায়ানের ভাবনায় ছেদ পড়ে আবিরের ডাকে। আবির দূর থেকে দৌড়ে দৌড়ে তাদের দিকেই আসছিল। রায়ানের সামনে এসে সে হাফাতে থাকে।

আবির সৌভিক আর রায়ানকে বলে,”তোরা সবসময় আমাকে রেখে কি গোপন কথা বলিস রে এত?”

সৌভিকঃআরে তেমন কিছু না।

রায়ান বলে,”তুই জানতে চাস তো আমরা কি কথা বলি?”

“তোর কথা পরে শুনব রায়ান। আগে তুই আমার একটা গোপন কথা শোন। যেটা আমি তোকে বলতে চাই। তুই আমার সাথে আয়। এখানে বলা যাবে না। এটা তোর আর আমার গোপন কথা।”

সৌভিক বলে,”আমাকে বলা যাবে না?”

আবির বলে,”না, আগে আমি রায়ানকে বলব তারপর সবাইকে।”

এটা বলে সে রায়ানকে নিজের সাথে টেনে নিয়ে যেতে থাকে আর মনে মনে বলে,”আজ আমি রায়ানকে প্রভার প্রতি আমার ভালো লাগার কথা বলে দেব। রায়ান নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবে এই ব্যাপারে।”

(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়

(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here