রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
২৪
সকাল ৬ঃ ৩৩। সাদাসিধা কলেজ ড্রেসে সকাল সকাল রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মায়া। বসন্তের হাল্কা উষ্ণ কুয়াশার আবির্ভাব কাটিয়ে পূর্ব আকাশের সূর্যের লাল ছ’টায় আলোয় আলোকিত পরিবেশ। চট্টগ্রাম মুরাদপুর আবাসিক এলাকা হওয়ায় সকালের পরিবেশটা বেশ শান্ত থাকে এখানকার। কোনো রুপ যান্ত্রিক বা মানুষের কোলাহল তেমন থাকে না সাতসকালে। ব্যস্ততা দেখা যায় একটু বেলা গড়ালে। যান্ত্রিক, পথযাত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র- ছাত্রীদের যাতায়াত দেখা যায় আটটার মধ্যে। মায়া বাসা থেকে বের হয়েছিল আরও ভোরে। বলতে গেলে ছয়টার দিকে। বাসা থেকে এই পুরো রাস্তা হেঁটে আসতে মায়ার পনেরো মিনিট লাগল। বাকি সতেরো মিনিট ধরে সে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। মায়া হাতের ফাইলটা চেপে আশেপাশে তাকাল সচ্ছ চোখে। রাস্তার দু’পাশে দোকান পার্ট গুলো অনেক আগেই খুলে বসে আছে দোকানদারা। সকালের বেচা-কেনা চলছে সেখানে। রাস্তায় যান্ত্রিক গাড়ির চলাচলও ভালোই দেখা যাচ্ছে। এমন মধ্যে মায়া পশ্চিম পাশের রাস্তাটা ধরে ফুটপাতের কিনারায় দাঁড়িয়ে ঠিক রিদের বাবার অফিসের বিল্ডিংয়ের নিচে। কাল মায়া এই অফিসটায় রিদের সঙ্গে দেখা করেছিল। আর আজ সেখানটায় দাঁড়িয়ে আছে মায়া, গোটা সতেরো মিনিট পার হয়ে আঠারো মিনিটে ঠেকল ওর অপেক্ষা প্রহর। রিদ কাল মায়াকে সকাল সকাল আসতে বলেছিল কিন্তু কখনো বলেছিল সেই সময়টা দেয়নি। সেজন্য মায়া সারারাত ছটফটে রাতের ঘুম হারাম করে, কাক ডাকা ভোরে উঠেই কলেজের জন্য একেবারে রেডি হয়ে চলে এসেছে এখানে। রিদের সঙ্গে কথাবার্তা শেষ করে আবার সোজা কলেজের চলে যাবে এমনটা মনোস্থির করা। আজ মায়া শেষ পরীক্ষা। প্রযুক্তি পরীক্ষাটা দিলেই এই যাত্রায় শেষ হবে। বিগত দুই দিন ধরে মায়ার পরীক্ষা গুলো খারাপ যাচ্ছে নিখোঁজ স্বামীর চিন্তা। আজ স্বামীর খোঁজটা নিয়েই পরীক্ষাটা ভালো দিবে মায়া। এতো এতো চিন্তার মাঝে মায়া জুইকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখেই বেড়িয়েছে বাসা থেকে। আরিফও ঘুমে ছিল। দুজনের কাউকেই বলে আসেনি মায়া। এখন মায়াকে ওরা সকাল সকাল খোঁজলে কি হবে কি জানি? মায়া খোঁজে না পেলে নিশ্চয়ই টেনশন করবে? কিন্তু মায়া কাউকে বলে আসতে পারেনি। যদি বলে বের হতে চাইতো তাহলে জুই হাজারটা প্রশ্ন করতো মায়াকে। যার একটা উত্তরও আপাতত মায়ার কাছে নেই। আবার জুইয়ের সামনে মিথ্যা বলেও মায়া পার পায়না। জুই চট করে ধরে ফেলে মায়ার মিথ্যাটা। সেজন্য মায়া ইচ্ছা করেই জুইকে কিছু না জানিয়ে বেড়িয়েছে বাসা থেকে। তবে কলেজে গিয়ে না-হয় জুইকে কিছু একটা বলে বুঝিয়ে বলবে। আপাতত মায়া না-হয় চুপিসারে নিজের কাজটা শেষ করুক! তারপর না-হয় জুই বকা দিলেও শুনে নিবে ওহ। কিন্তু তারপরও কাজটা হোক। তাছাড়া মায়া ওদের বিল্ডিংয়ের পাহারাদার চাচাকে বলে এসেছে সে শ্রেয়াদের বাসায় যাচ্ছে। সেখান থেকে সোজা কলেজে চলে যাবে এমনটা আরিফ বা জুইকে বলতে যদি তাঁরা মায়ার খোঁজে আসে তো? মায়া মনে খানিকটা ভয় কাজ করলো নিজের দুঃসাহসিকতা নিয়ে। আশেপাশে জড়তায় মিইয়ে আবারও তাকাল। রাস্তার পথচারী অনেকই মায়া দিকে তাকাচ্ছে। হয়তো মায়া এই অসময়ে কলেজে ড্রেসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকায় জন্য পথযাত্রীদের দৃষ্টির ভিড়ে সে। মায়া হাসফাস করলো। চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে পরিচিত কাউকে দেখতে পায় কিনা তাই খোঁজল। যার কাছ থেকে রিদ বা আসিফের খোঁজ করবে এমন কাউকে খোঁজল। মায়া মনে হলো সে বোকামি করে ফেলেছে ভিতরকার অস্থিরতা চেপে রাখতে না পেরে এতো সকাল সকাল চলে আসাতে। মায়া ভাবলো সে কি করবে? চলে যাবে নাকি আরও কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে? চলে গেলে তো আর বের হতে পারবে না, একেবারে কলেজের টাইম ছাড়া। তখন তো জুই, আরিফ ওরা দুজন মায়ার পাশে থাকবে। তখন আর রিদ খানের সঙ্গে মায়ার আলাদা দেখা হবে না। আর না ওর নিখোঁজ স্বামীর তথ্য নিতে পারবে! মায়া ভাবলো আপাতত যায় হোক না কেন? সে দাঁড়িয়েই থাকবে। যাবে না কোথাও। এবার মায়াকে যতো বাজে দেখায় তো দেখাক। অন্তত আসিফের সঙ্গে দেখা না করে যাবে না ওহ। মায়ার অযাচিত সময় আরও পাঁচ মিনিট কাটল দাঁড়িয়ে থেকে তারপর হুট করেই একই বিল্ডিং থেকে তাড়াহুড়ো নামল আসিফ। ফর্মাল গেইপে সে। কানে ফোন চেপে। হয়তো জরুরি আলাপ সারছে সে। তবে সিঁড়ি গোড়ায় আসতেই পাহারাদার একজন লোক বিল্ডিংয়ের গেইট টেনে
ধরতেই আসিফকে বের হতে দেখল মায়া। মূলত গেইটের শব্দে পিছনে ঘুরেছিল মায়া। যার জন্য আসিফের দৃষ্টি পরলো এদিকটায়। সকাল সকাল মায়াকে বিল্ডিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আসিফ দ্রুত কল কেটে এগোল সেদিকে। কয়েক কদমের দূরত্ব গুছিয়ে মায়াকে ডেকে বলল…
‘ আরে ভাবি আপনি এইখানে কি করেছেন? তাও এতো সকালে?
আসিফকে দেখে মায়া চোখ মুখ উজ্জ্বল হলো খুশিতে। কিন্তু আসিফের মুখে ‘ভাবি’ ডাক শুনলো এমনটা মনে হলো মায়ার। প্রথমে অন্যমনস্ক হওয়ায় মায়া ‘ভাবি শব্দটা তেমন লক্ষ হয়নি। আবার হয়তো করেছে। কিন্তু আসিফের মতোন একজন লোক মায়াকে হুটহাট অবুঝের মতোন ভাবি ডাকবে এমনটা শুভা পায়না তাঁকে। আসিফ লোকটা ভালো। তাই মায়ার মনে হলো সে অযাচিত ভুল ডাক শুনেছে হয়তো। কিন্তু তারপরও মায়ার নিজের মনের সংশয় কাটাতে আসিফের করা প্রশ্নের উত্তরে সুন্দর হেঁসে শুধালো…
‘ আপনাদের কাছেই এসেছিলাম ভাইয়া। কাল রিদ ভাইয়া বলেছিল উনার সাথে সকালে দেখা করতে, সেজন্য আসলাম। আপনি তাড়াহুড়ো কোথায় যাচ্ছে ভাইয়া? কোনো কাজে?
ততক্ষণে আসিফ মায়ার সম্মুখে এসে দাঁড়াল। ব্যস্ত গলায় বলল…
‘ জ্বি আপু! আমি আপনাদের কাজেই বাহিরে যাচ্ছিলাম। ভালোই হলো আপনি চলে এসেছেন। রিদ ভাইকে আপনি তিন তলায় পাবেন। আপনি সিঁড়ি ধরে সোজা তিন তলায় চলে যান। এই বিল্ডিংয়টা ভাইদেরই। আপনি বরং উপরে যান।
ব্যস্ত ভঙ্গিতে পিছনে ঘুরে আসিফ ততক্ষণে গেইটের পাহারাদারকে ডেকে উঁচু গলায় মায়াকে সিঁড়ি পথে এগিয়ে দেওয়ার জন্য আদেশ করল। মায়া দিকে ঘুরে মুখোমুখি হয়ে আসিফ বলল..
‘ আপনি যান আপু। দারোয়ান চাচা এগিয়ে দিবে।
মায়া একটু আমতাআমতা করে নিজের মনের অযাচিত প্রশ্নটা করেই ফেলল আসিফকে…
‘ আসলে ভাইয়া! আপনি কি আমায় একটু আগে ভাবি’ ডেকেছেন?
মায়ার কথার আমতা আমতা করে বোকা হাসল আসিফ। তখন তাড়াহুড়ো কি বলতে কি বলে ফেলেছিল লক্ষ করেনি আসিফ। মায়ার এখন প্রশ্ন করাতে টনক নড়লো। কিন্তু সেটা মুখে প্রকাশ না করে বরং অস্বীকার করল মায়ার কথার…
‘ না আপু। আপনি হয়তো ভুল শুনছেন।
আসিফের কথায় মায়া খানিকটা লজ্জা পরল। ওর অযাচিত প্রশ্নটা এইভাবে করা ঠিক হয়নি। সেজন্য সরি বলল আসিফকে….
‘ সরি ভাইয়া! আসলে আমার…
মায়ার কথা শেষ করতে দিল না আসিফ। এর মাঝেই কথা কেটে অধৈর্য গলা বলল আসিফ…
‘ ইট’স ওকে আপু। আমি কিছু মনে করেনি। আপনি উপরে যান।
কথাটা বলে আসিফ আর দাঁড়াল না মায়ার সামনে। পিছন ঘুরে উল্টো পথে চলল তাড়াহুড়ো। বলা যায় না বেফাঁস ভাবে আবারও না ভাবি ডেকে ফেললে মায়াকে। তখন রিদ ভাই ওকে আস্ত রাখবে না। মায়া বেশ কয়েক বার আসিফের পিছন ডাকল কিন্তু সে শুনলো না। বরং দ্রুত পা চালিয়ে বিল্ডিংয়ের অপর পাশের থাকা গ্যারেজ দিকে গেল। আপাতত গাড়ি নিয়ে রিদের বলা কাজ গুলো দ্রুত সারতে হবে নয়তো দেরি হলে রিদ ভাই আরও ক্ষেপে যাবে। তাছাড়া মায়া ও চলে এসেছে এতক্ষণে। এবার যদি আসিফ কাজ গুলো করতে দেরি করে তাহলে অবশ্যই শনি নাচবে ওর কপালে। মায়া হতাশায় আসিফের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঘাড় ঘুরাল বিল্ডিংয়ের দিকে। পুরো মাথা উঁচু করে দেখল নাক উঁচু বিল্ডিংয়টা। এই বিল্ডিংয়টা কয় তলা হবে? মায়া গুণে দেখতে? বোকার মতো মায়া গুনে গুনে সাত তলায় গিয়ে ঠেকল। মায়া বুঝতে পারল পুরো বিল্ডিংটা সাত তলা। রিদ খান থাকেন তিন তলায়। মায়ার কি একা যাওয়া ঠিক হবে কোনো ছেলের বাসায় হুট করে? তাও এতো সাতসকালে? মায়া ভাবল রিদ খান কি আর একা থাকবে এই বাসায়? অবশ্যই তার পরিবারের কেউ না কেউ থাকতে পারে। রিদ খানের পরিবারকে তো মায়াকে চিনে। নতুন আত্মীয় হয় ওদের। মায়াকে এতো সকালে নিজেদের ফ্ল্যাটে দেখলে নিশ্চয়ই অবাক হবেন তাঁরা? মায়াকে প্রশ্ন করলে সে কি উত্তর দিবে তাদের? কি জন্য মায়া এগো সকালে এখানে এসেছে? সত্যিটা তো বলতে পারবে না। মিথ্যাই কিছু একটা বলতে হবে। ইতস্তত মায়া হাসফাস করলো। কি এক বিপদে পরলো মায়া নিজের নিখোঁজ স্বামীর খোঁজ করতে গিয়ে। জীবন যে কাজ করার ছিল না সেই কাজ গুলো আজকাল করে বেড়াচ্ছে মায়া। বুকের চাপা শ্বাস ছেড়ে মায়া দ্বিধায় নিয়েই বিল্ডিংয়ের ভিতরের দিকে হাঁটল। দারোয়ানের দেখানো সিঁড়ি ধরে সোজা তিন তলায় গিয়ে দাঁড়াল। বেশ হাসফাস করে জিব দিয়ে শুকনো ঠোঁট বেজাল। জড়তার হাতে বেশ সময় নিয়ে পরপর করিংবেল চাপলো। একবার! দুইবার! তিনবার! পরপর বেশ কয়েকবার করিংবেল চাপল একটু রয়েসয়ে। কিন্তু তারপরও কাউকে দরজা খুলতে না দেখে, মায়া এবার দ্বি-মনা করলো এতোবার করিংবেল চাপাতে। মায়ার মনে হলো সকাল বেলা হওয়ায় বাসার সবাই হয়তো এখনো ঘুমে। আর মায়া এই মূহুর্তে তাদের ঘুমের ডিস্টার্ব করছে এতোবার করিংবেল বাজিয়ে। মায়া মনোস্থির করে আর করিংবেল বাজাবে না। সেজন্য সুইচ বোর্ড হতে নিজের হাতটা গুটিয়ে নিতেই খট করে দরজা খুললো কেউ। তবে ওর সামনে দরজা নয় বরং পিছনের ফ্ল্যাটের দরজা খুলে রাশিভারি গলায় বলল…
‘ এদিকে আসো!
মায়া চমকে পিছনে তাকাল। দেখল রিদ দরজা ধরে ঘুমন্ত চেহারায়, এলোমেলো চুলে দাঁড়িয়ে। দেখে বুঝায় যাচ্ছে করিংবেলের চাপে সদ্য ঘুম থেকে উঠে এসেছে সে। মায়াকে এই মূহুর্তে দেখে রিদ আবাক হয়েছে কিনা তার চেহারা দেখে মায়া ঠাহর করতে পারল না। তাঁকে স্বাভাবিক মনে হলো মায়ার। তবে মায়া বেশ চমকিত রিদের এলোমেলো চুল আর ঘুম জড়ানো চেহারায়। মায়ার মনে হয় এই প্রথম সে রিদ খানকে দেখল সে গুছালো নয়, পরিপাটিও নয় বরং এলোমেলো এক সুন্দর পুরুষকে দেখল। যে দেখতে শুধু আকর্ষণী নয়। বরং বিপদ জনক মোহিত। মায়া বিবাহিত না হলে, বা স্বামী জন্য মায়ার মনটা না কাঁদলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই রিদ খানের এই রুপে গলে পরতো সে? তবে মায়া মানতে বাধ্য লোকটা আসলেই মাত্রাতিক সুন্দর আর নজরকারা সুদর্শন। রিদ মায়াকে ড্যাবড্যাব করে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে দরজা ধরেই হাল্কা কপাল কুঁচকায়। মায়ার অপলক দৃষ্টি, ওর মনোভাব বুঝতে দেরি হলো না রিদের। স্বাভাবিক নেয় রিদ দরজা ছেড়ে ভিতরে দিকে যেতে যেতে মায়ার উদ্দেশ্য বলল…
‘ ভিতর থেকে দরজাটা লক করে দাও।
রিদ চলে যেতেই মায়ার টনক নড়লো। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিলো রিদকে বেহায়া নজরে দেখায়। ছিঃ জীবনে সুন্দর ছেলে দেখেনি মায়া? এইভাবে কারও দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়? লোকটা নিশ্চয়ই মায়াকে খারাপ ভাবছে? এমনই এই লোক মায়াকে খারাপ খারাপ প্রস্তাব দেয়। পরকীয়া করতে চাই। এখন মায়ার বেহায়া দৃষ্টিতে লোকটা নিশ্চয়ই মনে করবে মায়া তার রুপে গলে গিয়ে পরকীয়া সম্পর্কে রাজি হয়েছে? মায়া বেশ অসহায় মনে করলো নিজের ভাবনায়। আজকাল ওর নিজের সাথে কি হচ্ছে সেটাই ঠাহর করতে পারছে না সে। মায়ার মনে হচ্ছে ওহ অদৃশ্য কোথাও আটকে গেছে। কেউ ওর ফিলিংস নিয়ে খেলছে। কিন্তু কে? তা জানে না মায়া। আর এখানেই মায়া অসহায় হয়ে পরে। চাপা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মায়া রিদের পিছন পিছন ফ্ল্যাটের ভিতরে ঢুকল। রিদের কথা মতো দরজা লাগিয়ে পিছনে ঘুরতে চোখে পরলো ভিতরকার সাজানো গুছানো সুন্দর একটি ফ্ল্যাট। মায়া আবাক নেত্রে চারপাশে তাকাল। পুরো তিনতলা সমন্বয়ে এই ফ্ল্যাটটি তৈরি। এপাশ ওপাশ দুপাশ মিলিয়ে একটা ফ্ল্যাট এটা। যার জন্য মায়া তখন দুটো ফ্ল্যাট ভেবে বিপরীত পাশের দরজাটাতে করিংবেল চাপছিল। কিন্তু রিদ অপরদিকে দরজা খুলেছিল। প্রথমত বাহির থেকে কেউই বুঝতে পারবে না এখানে দুটো ফ্ল্যাট নয় বরং একটাতে গড়া। মায়া ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে চোখ ঘুরাল বিলাসিতায় ভরপিন্ড ফ্ল্যাটটি সৌন্দর্য্যের দিকে। এতো সাজানো গুছানো সুন্দর ফ্ল্যাটটিতে রিদকে ছাড়া আশেপাশে আর কাউকে চোখে পরলো না মায়া। মায়া চোখ যখন ফ্ল্যাটের আবিজাত্য মাপতে ব্যস্ত তখন রিদ মায়ার ধ্যান ভেঙ্গে পুনরায় বলল…
‘ এতো সকালে আসলে যে?
মায়া অল্প চমকে রিদের দিকে তাৎপর করে তাকাল জড়তার চোখে। জামাই খোঁজে দিশেহারা হয়ে থাকতে না পেরে সকাল সকাল আপনার কাছে চলে এসেছি তাঁর তথ্য নিতে এটা বলবে মায়া? এটা বললে নিশ্চয়ই রিদ খান মায়াকে পাগল-ছাগল মহিলা ভাববে। আবার জামাই পাগলও বলতে পারে ওকে। তখন বিষয়টা ভালো দেখাবে না বলে মায়া মিথ্যা বলে মিনমিন স্বরে বলল…
‘ কাল আপনি আমায় সকালে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু কয়টা আসবো সেটা বলেন নি। সেজন্য আন্দাজে এখন চলে আসসাম। আসলে একটু পর আমার তাড়া আছে তো তাই। আটটায় আমার পরীক্ষা আছে, সেজন্য এখন না আসলে পরে আর সময় পেতাম না।
দৃঢ় কন্ঠে বলল…
‘ কিন্তু আমার জানা মতে তোমার পরীক্ষার খাতা দেয় নয়টা পয়তাল্লিশে, আর শুরু হয় দশটায়। রাইট?
মিথ্যা বলে ধরা পরে যাওয়ার মায়া এবারও মিনমিন করলো। তারপর নিজের হয়ে গাই গুই করে ফের মিথ্যা বলে বলল…
‘ আমার আটটায় কলেজে একটা কাজ আছে। দ্রুত যেতে হবে বলেই এতো সকালে আসলাম।
রিদ নিজের এলোমেলো চুলে দু’হাতে ব্রাশ করে পিছনে ঠেলে দিতে দিতে চোখ উঁচিয়ে তাকাল দেয়াল ঘড়ির দিকে। ৬ঃ ৪২ বাজে! রিদের দৃষ্টি অনুসরণ করে মায়াও সেদিকে তাকাল। রিদ জানে মায়া মিথ্যা বলছে। স্বামীর খোঁজে যে সকাল সকাল তার কাছে চলে এসেছে সেটাও বুঝল। তবে সে ধরা দিল না। এই মূহুর্তে ধরা দিলেই সমস্যা। এই মহিলা তখন রিদের সুন্দর একটা মূহুর্তে, দারুণ একটা প্ল্যানিংটা নষ্ট করে দিবে। রিদ ঘড়ির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফের মায়ার দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো দুজনের। মায়াও তখন সবে দেয়াল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রিদের দিকে তাকিয়েছিল। দুজনের দৃষ্টি মিলাতে মায়া ইতস্ততায় নত মস্তিষ্কের হলো। জড়তার গলায় বলল…
‘ বাসায় আর কেউ নেই?
‘ আপাতত নেই।
মায়া চমকে রিদের দিকে তাকাল। সেকি মায়া কি ভুল করে একা একটি ছেলের ফ্ল্যাটে ঢুকে পরেছে? এখন কেউ ওদেরকে একত্রে দেখে নিলে কি হবে? নিশ্চয়ই মায়ার নামে বদনাম উঠবে দুই ছেলে-মেয়ে একা এক বাসায় থাকায়। তাছাড়া রিদ খান কেমন না কেমন চরিত্রের মায়াও ঠিকঠাক জানে না। যদি কোনো মেয়ে ঘটিত বিষয় আজ পযন্ত মায়ার জানাশুনা বা চোখের মধ্যে পরেনি কিছু। তারপর মায়া রিদ খানকে ভালো বলতে পারছে না। তার কারণ অন্যসব মেয়েদের সাথে রিদ খান কেমন তা জানা নেই, তবে মায়ার সাথে এই লোক ভিষণ খারাপ। মায়াকে উল্টাপাল্টা কথা বলে, পরকীয়া প্রস্তাব দেয়। হুটহাট কাছে চলে আসে, আবার বাজে ইঙ্গিতও দেয়। আবার গা ঘেঁষে বসেও পরে। এমন লোকের চরিত্র কি ভালো হবে? মায়ার জন্য রিস্ক না? মায়া ভাবলো দ্রুত সে রিদ থেকে তথ্য গুলো নিয়ে চলে যাবে। সেজন্য সোজা কথায় বলল…
‘ লোকটার খোঁজ পেয়েছেন?
‘ ব্ল্যাক কফি! চিনি ছাড়া। কিচেন ঐদিকে।
মায়ার কথার বিপরীতে রিদ কথাটা বলেই আঙ্গুল তুলে ফ্ল্যাটের কিচেনটা দেখাল। মায়া থেকে অনুমতি নয় বরং আদেশ করলো তাঁকে কফি করে দেওয়ার। রিদের কথার মাঝে মায়া তীব্র অধিকার বোধ মনে করলো। কিন্তু কিসের এতো অধিকার রিদের? সম্পর্কে বিয়াইন হয় বলে? হয়তো! তাছাড়া নতুন মেহমান বাসায় আসলে তাকে দিয়ে কেউ কাজ করায়? উল্টো রিদ খানের উচিত মেহমান হিসাবে মায়াকে চা-নাস্তা করে খাওয়ানো। সেই জায়গায় মায়া এই লোকের জন্য কফি করবে? মায়া আবাক হওয়া সুরে জানতে চাইল…
‘ আমি?
‘ প্রায় পনে সাতটা। এতো সকালে নিশ্চয়ই খেয়ে আসোনি? আপাতত দুজনের জন্য নাস্তা বানাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
আবাকে মায়ার চোয়াল ঝুল পরলো। একটা পর একটা অর্ডার? সেকি এই লোকে কাজের মহিলা হয় নাকি তার বউ যে এতো অধিকার দেখিয়ে অর্ডার করলো? মায়া হতবুদ্ধি হয়ে আওড়াল…
‘ এ্যাঁ?
‘ তৈলাক্ত খাবার পছন্দ না আমার। সাদামাটা কিছু বানাবে। !
নিজের কথা শেষ করেই রিদ ড্রয়িংরুম পার হয়ে নিজের রুমের দিকে গেল। রিদকে চলে যেতে দেখে মায়া তাড়াহুড়ো পিছন ডাকল রিদকে….
‘ আরে এই যে কোথায় যাচ্ছেন আপনি? আমার কথাটা তো শুনুন? ঐ লোকটার খোঁজ পেয়েছেন আপনি?
রিদ মায়ার কথার উত্তর করলো না। বরং চলে যেতে যেতে নিজ বাক্যে বলল…
‘ কিচেনে সব রাখা আছে। চেক ইট!
মায়া রিদের চলে যাওয়ার দিকে বিস্ময়ে তাকাল। ভারি অদ্ভুত লোক। সাতসকালে ডেকে কাজের মহিলা বানিয়ে দিল? একবার মায়াকে পযন্ত করলো না সে আদৌও রান্না-টান্না পারে কিনা? মায়া রিদের চলে যাওয়ার দিকে আরও একবার তাকিয়ে হাতের পরীক্ষার সাদা ফাইলটা সোফা টেবিলের উপর রাখল। রিদের দেখনো কিচেনে ঢুকতে দৃষ্টি বিস্মিত হলো। বেশ বড়সড় আর সুন্দর গোছানো কিচেন। দেয়ালের ওয়াল-কেবিনেটের উপরে জায়গায় জায়গায় ছোট কাগজের টুকরো নাম লেখা কোথায় কোন জিনিস আছে। মায়া ভ্রু উঁচাল। বড়োলোকি কারবার সারবার। এই রিদ খানের আরও কয়টা বাড়ি আছে কে জানে? ঢাকা টু চট্টগ্রাম এই নিয়ে মায়া তিনটা বাড়িতে গেল মায়া। বজ্জাত লোক চট্টগ্রামে এসেও পরিবারের সাথে না থেকে এই খালি বাড়িতে পরে আছে। মায়া শুনেছে রিদ খান নাকি ঢাকার খান বাড়িতেও থাকেন না। আলাদা নিজের বাড়িতে থাকে। এই আলোকে কি এমন দুঃখ থাকতে পারে যে পরিবারের সাথে না থেকে আলাদা বাড়িতে থাকেন। হিংসুটে লোক। আসলে বেশি মানুষ পছন্দ করে না বলেই এমনই সমাজ-ছাড়া ছন্নছাড়া আলাদা থাকেন। এই লোকে বিয়ে করলেও হয়তো এমন বগুরে মেয়ে দেখে বিয়ে করবেন। যার মাথার তার ছিঁড়া হবে। সহজ ভাষা উল্টো বুঝবে। আল্লাহ জানা কোন মেয়ের কপাল ফাটাবে যার রিদ খানের মতোন ঘাড় ত্যাড়া মানুষ স্বামী হিসাবে জুটবে। মায়া তো এখনই রিদ খানের বউয়ের জন্য মায়া হচ্ছে।আহারে বেচারী!
সেল্ফ খুজে খুঁজে নুডলসের আয়োজন বের করল। অল্প ঝালে হাতে হাতে কাজ চালিয়ে নুডলস বানাল। মায়া জানা রিদ ঝাল খেতে পারে না একবার শুনেছিল। সেজন্য কম ঝালের আয়োজন করলো। আপাতত নুডলসের থেকে বেশি কিছু মায়া বানাতে পারবে না। কারণ অন্যের বাসায় এসে যা খুশি রান্না করা যায় না। বিষয়টা খারাপ দেখায়। তাছাড়া কিছু রান্না করতে গেলে বেশ সময়ে প্রয়োজন দরকার যেটা আপাতত মায়ার হাতে কম। তাছাড়া মায়ার জলদি জলদি রিদের সঙ্গে কথা বলে বেড়িয়ে পরতে হবে বলেই। এতো সময় নিয়ে দুটো মানুষ একই ফ্ল্যাট দরজা লাগিয়ে থাকাটা ভালো দেখায় না। মায়া রান্না শেষ করে বড়ো বাটিতে নুডলস ঢেলে ডাইনিংয়ে রাখতে রাখতে রিদের রুমের দিকে উঁকি মারলো। দরজা এখনো বন্ধ। ছেলে মানুষ এতো কি আয়োজন করে ফ্রেশ হয় আল্লাহ জানে? মায়া নুডলস বাটি রেখে ফের কিচেনে গেল। রিদের জন্য ব্ল্যাককফি বানিয়ে ডাইনিংয়ে আসতে আসতে রিদের মুখোমুখি হলো। ততক্ষণে রিদ গোসল সেড়ে সাদা পাঞ্জাবি পরে ডাইনিংয়ের চেয়ার টেনে বসল। একদম গোছানো আর পরিপাটি রিদ খান। সকালে ঘুম থেকে উঠা এলোমেলো রিদ খান নেই আর। মায়া রিদের দিকে তাকাতে তাকাতে হাতের কফিটা রিদের দিকে এগিয়ে দিল। রিদ কফিটা হাতে নিয়েই মায়ার দিকে তাকিয়ে চুমুক বসাল।
‘ এতো সকালে নুডলস খাব? নুডলস ছাড়া আর কিছু বানাতে পারো না
রিদের কথায় মায়া চেয়ারের পিছনে দাড়িয়ে মিনমিন করে বলল…
‘ পারি।
‘ তাহলে বানালে না কেন?
‘ অন্য কিছু বানাতে সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু আমাকে তো এখন চলে যেতে হবে। সেজন্য নুডলস ছাড়া আর কিছু দ্রুত বানাতে পারিনি।
রিদ কিছু বলল না মায়াকে। আপাতত কিছু বলার ইচ্ছা নেই তাঁর। মায়ার অন্য চিন্তা। কাজ সুন্দর ভাবে শেষ হলেই হয়। রিদ হাতের কফিটাতে চুমুক বসাতে বসাতে মায়ার উদ্দেশ্য বলল…
‘ প্লেটে সার্ভ করো!
মায়া চমকে গোল গোল চোখে তাকাল রিদের দিকে। আশ্চর্য মায়া এই লোকে বেড়ে খাওয়াবে কেন? এই লোকের কে হয় মায়া? কিছুই তো না! অথচ এমন অধিকার দেখাচ্ছে যেন মায়ার উপর সবথেকে বেশি অধিকার এই লোকের। আজব সামনে রাখা আছে অথচ মায়াকে বলছে বেড়ে খাওয়াতে। মায়া মনে মনে চাইলো রিদের মুখের উপর মানা করে দিবে। সে বলবে আমি আপনাকে বেড়ে-টেরে খাওয়াতে পারবো না। রেঁধে এনেছি এবার নিজের হাতে খেলে খান নয়তো খাওয়া লাগবে না। অথচ মনের কথা গুলো মায়া মনে বলতে পারলো না রিদের কাছে সাহায্য চেয়েছে বলে। মায়া যদি সামান্য বেড়ে খাওয়াতে মানা করে তাহলে রিদও মায়াকে ওর নিখোঁজ স্বামী তথ্য দিবে না বলে। মায়া বাধ্য হয়ে রিদকে প্লেটের নুডলস তুলে দিয়ে চামচ এগিয়ে দিল। রিদ নুডলসের প্লেটে চামচ দিতে দিতে মায়ার উদ্দেশ্য বলল…
‘ দ্রুত খাওয়া শেষ করো। মানুষ আসবে।
‘ কিসের মানুষ?
রিদের কথায় চমকে মায়া কথাটা বলল। রিদ তখনো মায়ার দিকে তাকাল না। সে ততক্ষণে নুডলস চামচে মুখে তুলে ফেলেছে। রিদের অল্প অল্প কথা মায়াকে মাঝেমধ্যে ভিষণ রাগ দেয়। মায়া উত্তেজনায় রিদকে ফের প্রশ্ন করবে তখনই দরজার করিংবেল বেজে উঠে আচানক। মায়া চমকে ভয়ার্ত মুখে দরজার দিকে তাকিয়ে রিদের দিকে তাকাল। লোকটার কোনো ভাবান্তর নেই। সে চুপচাপ খেয়েই যাচ্ছে। বাসা কে আসল? ওদের দুজনকে একত্রে দেখলে কি হবে সেটার টেনশনে মায়া ভয়ে অস্থির হলো। দরজার দিকে তাকিয়ে মায়া অস্থির চিত্তের বলল…
‘ কে জানি এসেছে? আমাদের দুজন দেখে যদি খারাপ ভাবে?
মায়ার কথায় রিদ বেশ বিরুক্ত হলেও মায়ার দিকে তাকাল না। বরং খেতে খেতে ভারি গলায় বলল…
‘ আসিফ হবে।
‘ সত্যি?
রিদ আর উত্তর করলো না। সে আপাতত খাবারটা শেষ করতে চাচ্ছে। পরপর করিংবেল বাজাতে মায়া ইতস্তততা করে দরজা খোলে দিল। চোখে পরলো কালকের সেই রাহাত ছেলেটি যে মায়াকে রাকিবের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল। মায়া এই ছেলেকে সকাল সকাল রিদের ফ্ল্যাটের দরজা সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মায়া ভয় পেল। যদি মায়াকে খারাপ মেয়ে ভেবে রাহাত রাকিবকে বলে দেয় তাহলে রাকিব ভাই নিশ্চয়ই আরিফকেও বলে দিবে। মায়া ভয়ার্ত মুখে রাহাতের হাসিহাসি মুখটার দিকে তাকিয়ে ভীতু গলায় বলল…
‘ ভাইয়া আপনি?
রাহাতের ছটফট উত্তর আসলো তক্ষুনি। হাতের প্যাকেট গুলো মায়ার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল…
‘ জ্বি ভাবি আমি। আসিফ ভাইয়া আপনাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছেন। নিন।
মায়া ভয়ে ভয়ে খাবারের প্যাকেট গুলো হাতে নিতেই রাহাত তাড়া দেখিয়ে চলে যেতে যেতে বলল…
‘ আসি ভাবি। কিছু প্রয়োজন হলে ডাকবেন। আমি নিচেই আছি। আসসালামু আলাইকুম।
গমগমে পায়ে দ্রুত সিঁড়ি ধরে নিচে নেমে গেল রাহাত। মায়া সেদিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। যাক ছেলেটা মায়াকে খারাপ চোখে দেখেনি। ভয় কাটলো। মায়া দরজা লাগিয়ে ফের ডাইনিংয়ের আসল। হাতের প্যাকেট গুলো টেবিলে উপর রাখতে রাখতে বলল….
‘ আসিফ ভাই খাবার পাঠিয়েছেন আপনার জন্য। নিন।
কথা গুলো বলতে বলতে প্যাকেটের ভিতর হতে খাবার বক্স গুলো খুলে রিদের সামনে রাখল।
‘ আমার অলরেডি ডান। তুমি শেষ করো।
‘ সমস্যা নেই আমি ঠিক আছি। খাওয়া লাগবে না। আমি কলেজ গিয়ে কিছু খেয়ে নিব।
‘ ওকে।
রিদ বিরক্তি কন্ঠে কথাটা বলল। মায়া বেশ লজ্জিত হলো রিদকে এইভাবে বলতে দেখে। আরে মানুষতো দুই একবার এমনিতে সাধে খাওয়ার জন্য। অথচ এই লোক মায়াকে একবারও সাধলো না মায়ার না করাতে? মায়ার তো সত্যি ক্ষিদে পেয়েছে। মায়া লজ্জিত হয়ে যেতে নিতে রিদ পিছন ডেকে বলে…
‘ আমার কথা আছে বসো এখানে।
মায়া ভাবলো ওর স্বামীর বিষয়ে কিছু বলবে সেজন্য চেয়ার টেনে সঙ্গে সঙ্গে বসে পরলো রিদের পাশে। তীব্র আগ্রহ নিয়ে রিদের মুখের দিকে তাকাতেই রিদ একটা প্লেটে মায়ার জন্য আসিফের আনা খাবার বক্স গুলো থেকে খাবার তুলে বেড়ে মায়ার সামনে প্লেট রাখতে রাখতে বলল…
‘ নিসেন! আমি ফ্রীতে কিছু করি না। করা ইচ্ছাও নেই। মানবদরদী কিন্তু আমার বাবা আমি নয়। সেক্ষেত্রে বিনিময় ছাড়া কোনো কাজ আমার হাতে উঠে না। তোমার ক্ষেত্রেও তাই। আমার কাছে সাহায্য চেয়েছ আমি অবশ্যই করবো। কিন্তু তার বিনিময়ে আমাকে দিতে হবে। সোজা কথা বলতে গেলে একহাতে নিন, অন্যহাতে দিন। মানে হাতে হাতে সম্পর্কের বিষয়টা। কিন্তু তুমি আমার চাহিদা অনুযায়ী পারিশ্রমিক দিতে পারবে না কারণ তোমার কাছে এতো টাকা নেই। নাই থাকতে পারে। ছোট মানুষ তুমি। এতো টাকা থাকার কথাও না। সেজন্য আমি অফার করেছিলাম তোমার দুটো কিডনির থেকে একটা কিডনি আমাকে নিয়ে দিতে। আমি তা বিক্রি করে দু’লাখ এমনই পেতাম। কিন্তু তুমি তাতে রাজি নও কারণ তোমার ধারণা তুমি মরে গেলে তোমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে। আসলে এমনটা আমিও ধারণা বউ মারা গেলে স্বামী আরেকটা বিয়ে করায় উচিত। আচ্ছা যায় হোক! তুমি যখন তোমার একটা কিডনি দিতে না ইচ্ছুক নয় সেজন্য আমি ভাবলাম তোমার না-হয় তোমার স্বামীর একটা কিডনি ঢিল ডান করি। আমি তাঁকে খুঁজে পেলে তাঁর একটা কিডনি আমি রেখে দিব আমার পাওনাদার দু’লাখ টাকা দায়ে। এতে তুমিও মরবে না, তোমার সংসারে দ্বিতীয় নারী আসবে না। আমাদেরও পরকীয়া সম্পর্কটা থাকল। তবে ভয় নেই একটা কিডনি দিয়েও কিন্তু মানুষ বাঁচে অনেক বছর মরে না।
রিদের মুখে আবারও পরকীয়া প্রস্তাবটা পেয়ে মায়া নাক মুখ কুঁচকাল। দুনিয়াতে এতো সম্পর্কে থাকতে মায়া কেন এমন বাজে একটা প্রস্তাব দেয় মায়া বুঝে না। তারপর মায়া এখন গলা উঁচিয়ে রিদের সাথে তর্ক করতে চাইল না। যেহেতু রিদ এখন মায়াকে ডেকে নিশ্চয়ই কিছু বলবে। তাছাড়া কিডনি মায়ার যাক বা ওর স্বামীর একইতো কথা। লোকটাকে খোঁজে পেলেই তো হলো। মায়া রিদের কথা ঘাড় বেঁকে সম্মতি দিলো। মায়া সম্মতি দিতে দেখে রিদ একটা ভ্রু উঁচাল। নারী আসলে সব পারে। স্বামীর কিডনি তার অগোচরে পযন্ত বিক্রি করে দিতে পারবে তারপরও নিজের সংসারে পরনারী চায় না। রিদ মায়াকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখতে দেখ