সূচনা_পর্ব #প্রিয়_রুদ্র_ভাই #তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

0
321

‘পাবলিক প্লেসে বাতাস দূষিত করছেন, লজ্জা করছে না?

এহেন প্রশ্নে থমথম খেলো রুদ্র। চোখমুখ যথাসাধ্য কঠিন করে তাকালো তটিণী-র দিকে৷ রুদ্রের কঠিন চাহনি দেখে তেমন ভাবাবেগ হলো না তটিণী-র। নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে বলল, ‘চিল্লিয়ে বলবো? সবাইকে শুনাবো নাকি রুদ্র ভাই?

রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘কি চাই তোর?’

‘তুমি যেখানে ট্যুরে যাবে সেখানে আমাকেও নিয়ে যেতে হবে।’

তটিণী-র আবদারে রুদ্র চোখমুখ কুঁচকে বলল, ‘ট্যুরে শুধু আমরা বন্ধুরা যাবো। তুই গিয়ে কি করবি?

মানলো না তটিণী, বলল- মেয়ে বন্ধু যাবে না?

‘মেয়ে ছেলে সব।’

তটিনী হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো খুশি হয়ে বলল, ‘তাহলে চলবে। আমি যাবো।

রুদ্র হনহন করে তটিণী-র কোচিং সেন্টার থেকে বের হয়ে গেলো। তটিনী মুখ চেপে হেসে ক্লাসে ঢুকে পড়লো।

ঘটনা হলো রুদ্র তটিনীকে কোচিং এ ভর্তি করতে এসেছিল। কোচিং সেন্টারে রুদ্রের পরিচিত স্যার থাকায় সে নিজেই এসেছে ঈশানীর কথায় তটিনীকে ভর্তি করতে। কিন্তু মতলববাজ তটিনী ফাঁদে ফেললো রুদ্রকে।

রুদ্র হলো তটিণী-র বড়ো বাবার ছেলে। রুদ্রের বাবা চাচা দুজন। তাহসিন ইরফান ও তাহের ইফফাত। তাহসিন ইরফানের দুই ছেলে রুদ্র ইরফান ও রাজ ইরফান। তাহের ইফফাতের এক ছেলে ও এক মেয়ে। তটিনী ইফফাত ঐশি ও তুরফান ইফফাত ঐক্য।

রাগে গজগজ করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে রুদ্র। রান্না ঘর থেকে খুন্তি হাতে বের হলেন রোবা নাহার।সম্পর্কে রুদ্রের মা। ছেলেকে এভাবে সিঁড়ি পেরিয়ে যেতে দেখে রোবা নাহার আশ্চর্য হলেন। গলা উঁচু করে বললেন, ‘কি হয়েছে রুদু? এভাবে সিঁড়ি দিয়ে উঠছিস কেন?’

রুদ্রের রাগ তখন আকাশ ছুঁয়েছে। রোবা নাহারের কথা কানে যেতেই যতোটুকু উপরে উঠেছিল ততোটুকু নেমে গেলো। রোবা নাহারের সামনে দাড়িয়ে বলল, ‘নাও নেমে গেলাম। আর উঠছি না সিঁড়ি দিয়ে। লাফিয়েও না শব্দ করেও না।’

রুদ্র হনহন করে নিচতলার স্টোররুমে ঢুকে গেলো। রোবা নাহার হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলেন। তখনই রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন ঈশানী। রোবা নাহারকে রোবটের মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি কাঁধে হাত রেখে ডাকলেন।,

‘কি হয়েছে আপা? রুদ্রের গলা শুনলাম। কিছু নিয়ে রেগে গেছে নাকি?

রোবা নাহার কাঁদোকাঁদো মুখ করে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি কি এই সংসারের কাজের বেটি? বাপও সবকিছুর রাগ আমার উপর ঝাড়ে। ছেলেও এখন বাপের পথ ধরেছে। থাকবো না এ সংসারে। তোরা বাপ ছেলেই থাক। আমি বলেই এতোদিন সংসার করেছি। অন্য কেউ হলে কবেই সব ফেলে চলে যেতো।’

রোবা নাহার নাকের জল চোখের জল এক করতে লাগলেন। ঈশানী থমথমে মুখশ্রী নিয়ে স্টোররুমে প্রবেশ করলেন। রুদ্র তখন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে চেয়ারে। মায়ের সব কথা তার কানে এসেছে সেটা মুখের ভাব দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ঈশানী চুলের ভাজে হাত রেখে বললেন, ‘কি হয়েছে রুদ্র বাবা? কি নিয়ে রেগে আছো?

রুদ্র নাক ফুলিয়ে বলল, ‘কিছু না চাঁচি।

ঈশানী রুদ্রের মুখ উপরে তুললেন। স্নেহময় কন্ঠে বললেন, ‘চাঁচি আম্মাকে বলা যায় না রুদু?’

রুদ্র চোখমুখ লাল করে বলল, ‘তোমার মেয়ে আমাকে অপমান করেছে চাঁচি আম্মা!’

ঈশানী অবাক হয়ে বললেন, ‘তটিনী?’ কেন?’

রুদ্র ফুসফুস করে বলল, ‘ঐশিকে আমি তোমার কথাতে কোচিং সেন্টারে নিয়ে গেছি। ভর্তি করিয়ে বের হয়ে আসবো ঠিক তখনই ও আমাকে অপমান করে।’

‘কি বলে অপমান করে?’

রুদ্র কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। চোখ নিচের দিকে নিয়ে বলল, ‘কিছু না চাঁচি বাদ দাও। আমি মায়ের উপর রাগ ঝেড়েছি। মা নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছে?

ঈশানী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘হ্যাঁ যাও তাকে গিয়ে স্যরি বলো। আজ তটিনী আসুক। তোমাকে অপমান করার শাস্তি ও পাবে।’

রুদ্র স্টোররুম থেকে বের হয়ে গেলো। রোবা নাহার সোফায় মাথা হেলিয়ে বসে আছেন। রুদ্র মায়ের পাশে বসে জড়িয়ে ধরলো। রোবা নাহার স্বভাবতই আবেগি একজন মানুষ। সন্তানদের যেমন ভালোবাসেন তেমনি সন্তানদের কোনো ব্যবহারে কষ্ট পেলে অভিমান করেন ভীষণ। রুদ্র মায়ের কপালে চুমু খেয়ে বলল, ‘আমি অনেক অনেক স্যরি মা। প্লিজ অভিমান করে থেকো না। তোমার রুদু অনেক অনেক স্যরি।’

রুবা নাহার নাক টেনে বললেন, ‘কিরকম স্যরি?

রুদ্র হেসে বলল, ‘কানে ধরে ওঠবস করার মতো স্যরি।’ তুমি যদি চাও আমি কানে ধরে ওঠবস করবো। করি?’

রোবা নাহার হেসে ফেললেন। রুদ্র মন খারাপ করে বলল, ‘আমি অনেক খারাপ তাই না মা? তোমাকে অনেক জ্বা*লাই অনেক কষ্ট দেই। তুমি বলেই হয়তো মেনে নাও।

রোবা নাহার ছেলের চুলের ভাঁজে হাত ভুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘পাগল ছেলে আমার। ছাড় রান্না করতে হবে।’

তখনই ঈশানী ট্রেতে করে কফি ও বিস্কুট নিয়ে আসলো। সবকিছু ঠিকঠাক করে রেখে বললেন, ‘মা ছেলে আপাতত এগুলো খান। রান্নাঘর আমি সামলে নিচ্ছি।’

ঈশানী চলে যেতেই রুদ্র রোবা নাহারের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমার মেয়ের কপালে আজ শনি আছে মা। রাগের মাথায় তো বিচার দিয়ে ফেলেছি। তুমি প্লিজ বাচিয়ে নিও। চাঁচি আজ ছাড়বে না ওকে!

রোবা নাহার অবাক হয়ে বললেন, ‘কেন? কি করেছে আমার মেয়ে?’

রুদ্র নাকমুখ কোঁচকে বলল, ‘তোমার মেয়ে আজ আমাকে মারাত্মক অপমান করেছে। সেজন্য আমার মুড খারাপ ছিল। চাচিকে সব বলে দিয়েছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বলা ঠিক হয়নি।’

রোবা নাহার ছেলের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি নিশ্চয়ই কিছু করেছো যার জন্য আমার মেয়ে তোমাকে অপমান করেছে? কি করেছো তুমি রুদু?’

রুদ্র অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি তো বিশ্বাস করবে না আমার কথা, তাই ও বাসায় আসলে জিজ্ঞেস করো কি বলছে আমারে। যতোই হোক তোমার সত্যের রানীর মতো মেয়ে তো কখনো মিথ্যা বলে না!’

রোবা নাহার কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘যাই করুক, আমার মেয়ে কখনো মিথ্যা বলে না। দশটা না পাঁচটা না তিন ভাইয়ের একটা মাত্র বোন। আগলে রাখবি তা না তিনটাই ওর পিছনে লাগিস। কেন রে? তোদের কি খেয়ে কাজ নেই?’

রুদ্র গরম কফিতে চুমুক দিয়ে ঠোঁট পুড়িয়ে ফেললো। মেকি হেসে বলল, ‘হ্যাঁ আমিই তো ওর পেছনে লাগি! তোমার ছেলে তো বসে থাকে তাই না মা?’

রোবা নাহার গম্ভীর হলেন। ভেবে বললেন, ‘রাজ আর ও না-হয় সমবয়সী সেজন্য লেগে যায়, তুমি তো বড়ো ভাইয়ের মতো রুদু!’

রুদ্র সবে গরম কফি মুখে নিয়েছে, মায়ের কথায় কাশি উঠে গেলো তার। কাশতে কাশতে রুদ্র এবার সত্যিই বায়ু দূষণ করে ফেললো। ঠিক তখনই দরজা ঠেলে বাড়িতে ঢুকলো তটিনী। রুদ্র ভাইয়ের এহেন বায়ু দূষণে চোখ বড়বড় হলো তার। রুদ্র অসহায় চোখে তটিণী-র দিকে তাকিয়ে রইলো। তার ইচ্ছে করলো ম*রে যেতে। মায়ের সামনে এভাবে মানসম্মান যাওয়ার বাকি ছিল!

রোবা নাহার নাক চেপে ধরে বললেন, ‘ব্যাপার না এরকম কতো কি করেছিস ছুটো বেলায়।

রুদ্র লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারলো না।তটিনী এগিয়ে এসে রোবা নাহারের আরেক পাশে বসলো। বিচার দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল, ‘কোচিং এ রুদ্র ভাই একই কান্ড করেছেন। সেজন্য আমি তাকে বলেছি ‘পাবলিক প্লেসে বায়ু দুষণ করছেন কেন?’সেটার জন্য তিনি রাগ করে চলে আসলেন। শুধু তাই নয় বাড়িতে এসে মেবি মাকে বিচারও দিয়ে দিছে। এখন মা আমার পিঠের ছাল তুলবে বড়ো মা। তোমার ছেলের দোষ আর দোষী হলাম আমি, এসব কি মানা যায়?’

রোবা নাহার ছেলের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি এসবের জন্য রেগে ছিলে রুদু? কোথায় ঈশানী? আসো দেখি কেমন করে মা*রো আমার মেয়েকে তুমি। এতো বড়ো সাহস তোমাদের। একজন বিচার দিচ্ছো তো আরেকজন মা*রতে চাইছো। বলি আমি কি ম*রে গেছি?

তটিনী বাঁকা হেসে রোবা নাহারকে জড়িয়ে ধরলো। আহ্লাদ করে বললো, ‘আমার বড়ো মা কত্তো ভালো।

(চলবে)

#সূচনা_পর্ব
#প্রিয়_রুদ্র_ভাই
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here