এক_ফালি_সুখ🌼 |১৬| #বোনাস_পর্ব

0
182

#এক_ফালি_সুখ🌼 |১৬|
#বোনাস_পর্ব
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
_”তূর্য? আসবো বাবা?”
বিছানায় পা দুলিয়ে বসে হাতে ফোনটা নিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো তূর্য। দরজা খোলাই রেখেছে, ইলমার কণ্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে ফোনটা পাশে রেখে ছোট করে উত্তর দেয়,
_”এসো।”

হাতে থাকা ট্রে টা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন ইলমা। কখন ছেলের মাথায় কি চলে তিনি নিজেই বুঝতে পারেন না, তাই ঘরে ঢোকার আগে জিজ্ঞেস করে নেন। ট্রে টা টেবিলের উপর রেখে তাতে থাকা বাটিটা হাতে তুলে নেন ইলমা। হাসিমুখে তূর্যের পাশে বসে বলে,
_”দেখ,তোর পছন্দের কাস্টার্ড বানিয়েছি।”

আবরাজ এর সেই ইন্টার্ভিউ টা দেখে মেজাজ বিগড়ে আছে তূর্যের,কাস্টার্ড যদিও তার ভীষণ পছন্দ তবে এখন মোটেই খেতে ইচ্ছে করছেনা। তাই অন্যদিকে মাথা ঘুরিয়ে বলে,
_”খাবোনা,নিয়ে যাও।”

চিন্তিত হন ইলমা। বাটিটা পাশে রেখে তূর্যের পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,
_”কেন খাবিনা? একটু আগে তো ঠিকই ছিলি,হঠাৎ কি হলো?”

_”এত প্রশ্ন..”

মায়ের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে যায় তূর্য। কপালের ভাজ সরে যায় তার। অদ্ভুতভাবে মনে পরে যায় পরশুদিন এর একটি ঘটনা। সেটে সবাই বসে টুকটাক কথা বলছিল, মৌরিন ও বসেছিল পাশেই। খুন বেশি কথা না বললেও টুকটাক সাড়া দিচ্ছিল। এমন কথার মাঝেই তন্নি মৌরিন কে জিজ্ঞেস করেছিল,
_”আচ্ছা মৌরিন,তোমার বেস্টফ্রেন্ড কে বলতো?”

সময় নেয়না মৌরিন। মুচকি হেসে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়,
_”আমার মা।”

_”মা তোমার বেস্টফ্রেন্ড?”

_”হুম, মা’ই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। কারণ মায়ের সাথেই আমি নিজের সব কথা শেয়ার করতে পারি,ভালো-মন্দ সব কিছু। আমার মতে মা হলো আমার বেস্ট পথপ্রদর্শক। মায়ের কথা শুনে চলাটাই শ্রেয়। ছোট বেলা থেকে আমার যেকোনো সমস্যার সলিউশন মায়ের কাছেই চেয়েছি। বেশি রাগ হলেও মা’কে বলেছি, খুব খুশি হলেও মা’কে বলেছি। তাই মা’ই হলো আমার সেরা বন্ধু।”

ইলমার ডাকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো তূর্য,হঠাৎ মৌরির এই কথাটা মনে করার কারণটা ধরতে না পারলেও হুট করেই যেন ইলমার প্রতি অদ্ভুত ভালোবাসা জেগে উঠলো তার। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মায়ের দিকে। মৌরি কি ঠিক বলেছে? মা’ই কি সবচেয়ে সেরা বন্ধু? তূর্য একটু বড় হওয়ার পর থেকে কখনোই নিজের কোনো কথা ইলমার সাথে শেয়ার করেনি, বরং তিনি কিছু জিজ্ঞেস করলে দু একটা ধমক দিয়ে বসিয়ে রেখেছে,বাবাও এই নিয়ে কিছু বলেনি। তবুও ইলমা জিজ্ঞেস করেছেন, তূর্যকে অস্থির হতে দেখলে তিনি নিজেও অস্থির হয়ে বারংবার জানতে চেয়েছেন। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, “কি হয়েছে বাবা?”

আজ ও তেমনটাই হলো। ইলমা তূর্যের মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
_”কি হয়েছে বাবা?”

প্রতিবার এর উত্তরে ধমক দিলেও আজ আর ধমক দেওয়া হলোনা তূর্যের। ইলমা তাতে খুব একটা খেয়াল না করে বাটিটা আবার হাতে নিয়ে বলেন,
_”ঠিক আছে,বলতে হবেনা। কিন্তু এটা খেয়ে নে, মা কত ভালোবেসে বানিয়েছি বল তো? তোর বাবা বলেছে খুব মজা হয়েছে, তুই খেয়ে দেখ এবার।”

ইলমার হাতে থাকা বাটিটার দিকে তাকালো তূর্য। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে ইলমার উদ্দেশ্যে বলে বসলো,
_”তুমি খাইয়ে দাও।”

বিস্মিত চোখে তূর্যের দিকে তাকালো ইলমা,ঠোঁটজোড়া তার আপনা আপনি পৃথক হয়ে গেলো। একটি বড় হওয়ার পর থেকেই তূর্য কারো হাতে খেতে চায়না। অসুস্থ হলেও সে নিজের হাতেই খাবে। একবার ভীষণ জ্বর হওয়ায় ইলমা জোর করে খাইয়ে দিয়েছিল তাকে,তখন ও সে নিজ হাতেই খেতে চেয়েছিল কিন্তু সেই অবস্থাতে ছিলো না।

একহাত নিয়ে তূর্যের কপাল স্পর্ষ করে দেখলেন ইলমা। অবাক হয়ে বললেন,
_”কি হয়েছে তূর্য? জ্বর তো নেই,তাহলে?”

অযথাই হাসি পেলো তূর্যর,অথচ কয়েক মিনিট আগেই তার মাথা গরম ছিলো। তূর্য ঠোঁটজোড়া প্রশস্ত করে হেসে বললো,
_”খাইয়ে দিলে দাও,নাহলে নিয়ে যাও ওটা।”

ইলমা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললেন,
_”ওমা,দেবোনা কেন? অবশ্যই দেবো, কতদিন বাদে তুই আমার হাতে খেতে চেয়েছিস! আর আমি খাইয়ে দেবোনা?”

খুব যত্ন করে ছেলেকে কাস্টার্ড খাইয়ে দিলেন ইলমা। কয়েক চামচ খাইয়ে বললেন,
_”ভালো হয়েছে?”

_”হুম,ভালোই হয়েছে।”

আরো খুশি হলেন ইলমা, চোখেমুখে তার আনন্দের আভা ফুটে উঠলো। তূর্যও চুপচাপ খেয়ে নিলো পুরোটুকু। অন্যদিনের চেয়েও যেন একটু বেশিই মজা হয়েছে। সত্যিই কি তাই? নাকি মা খাইয়ে দিচ্ছে বলে অন্যরকম শান্তি লাগছে? এই ভাবনাগুলো আগে তো কখনো তূর্যের মাথায় আসেনি,ভাবতেই চায়নি। তাহলে আজ কেন আসছে? বেশি করে ভাবতে ইচ্ছে করছে কেন? মৌরিন এর শান্ত কণ্ঠে বলা কথার কি এতই জোর?

_”আরেকটু নিয়ে আসি?”

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় তূর্য। ইলমা তৎক্ষণাৎ গিয়ে আরো এক বাটি কাস্টার্ড নিয়ে এসে খাইয়ে দিতে লাগলেন তূর্যকে। এর মাঝেই জিজ্ঞেস করলেন,
_”হুট করে রেগে গিয়েছিলি যে? সব ঠিক আছে তো?”

তূর্যও সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো,
_”আমার ট্যালেন্ট অনেকে স্বিকার করতে পারছেনা আম্মু, আমার পপুলারিটি দেখে হিংসে হচ্ছে তাদের।”

ইলমা অতি শান্তভাবে মৃদু হেসে বললেন,
_”এটাতো জগতের নিয়ম, কেউ কাউকে উপরে যেতে দেখতে পারেনা। তাকে টেনে নিচে নামানোর চেষ্টা করে। তবে জয়টা শেষ পর্যন্ত পরিশ্রম এরই হয়। সবাইকে সম্মান করলে দু একজন এর কটূক্তি কানেই নিতে হবেনা বুঝলি?”

তূর্য বাঁকা হেসে বলে,
_”সম্মান? হাহ, সম্মান মাই ফুট। আমি শুধু একটা কথাই জানি, আই নিড টু গো অন দা টপ। আর আমার সেই যোগ্যতা আছে অভিয়াসলি, সবার উপরে আমিই থাকবো।”

তূর্যর এই কথাটা খুব একটা পছন্দ না হলেও কিছু বললেন না ইলমা। এই এক জিনিস, এই অহংকার জিনিসটা ছোটবেলা থেকেই বাসা বেধেছে তূর্যর মনে। সে নিজেই মনে করে,সে সকলের থেকে বেস্ট,সবার উপরে থাকার অধিকার একমাত্র তারই আছে। ইলমাও নিজের ছেলেকে উপরে উঠতে দেখতে চান,তবে এই অহংকার টা যদি বাদ দিতে পারতো তূর্য!
এই নিয়ে মাথা ঘামালেন না ইলমা,সে আজ ভীষণ খুশি। তাই অন্য কথা ভেবে চিন্তা করার কোনো দরকার নেই।

_______
আবারো সেই গতদিনের মতো ছাঁদের দোলনায় বসে আছে তূর্য। সঙ্গে ফোনের স্ক্রিনে ঘুরছে মৌরিন এর আইডি। একবার উপরে যাচ্ছে তো একবার নিচে। মেয়েটার কথাবার্তা কেমন অদ্ভুতভাবে আঘাত করে তাকে, এত ধারালো কেন তার কথাগুলো? প্রতিটা কথাই যেন গাম্ভীর্যতাপূর্ণ,একবার কানে গেলে তা পারবার মনে পরতে বাধ্য। এটাকি বাকি সবার ক্ষেত্রেও হয়েছে? নাকি কেবল তূর্যের ক্ষেত্রেই এমনটা হচ্ছে?
আপাতত সেসব ভাবার ইচ্ছে নেই তূর্যের। বর্তমানে তার ইচ্ছে কেবল একটাই, মৌরিন কে জানা। তবে সামনাসামনি তার সঙ্গে কথা বলতে চাওয়া অসম্ভব। একটা প্রেস্টিজ আছে তূর্যের,সঙ্গে তার মধ্যকার ইগো নামক বস্তুটিও প্রখর। কখনোই সে মৌরিন কে সামনাসামনি কিছু জিজ্ঞেস করতে পারবে না, এটা তার ইগোতে লাগবে।

তাই বাধ্য হয়ে বেছে নিলো ভার্চুয়াল পন্থা। তবুও নিজের আইডি থেকে মৌরিন এর সঙ্গে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করলো তূর্য, কোনোভাবে মৌরিন যদি বুঝতে পেরে যায়? সেটা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবেনা, তাই নিজের সেকেন্ড আইডি থেকেও মৌরিনকে মেসেজ দিলোনা তূর্য। নতুন নামে খুললো একটি ফেইক আইডি। তার দ্বারাই মৌরিন কে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালো তূর্য।

#চলবে?

[যেহেতু আজ দুটো পর্ব দিয়েছি,তাই ছোট বলবেন না আশা করি। রিচেইক করা হয়নি,ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here