প্রিয়_রুদ্র_ভাই #পর্ব-১৩ #তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

0
190

#প্রিয়_রুদ্র_ভাই
#পর্ব-১৩
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

আপনাকে আমি ভালোবাসি কি না জানিনা! তবে আপনাকে আমি কল্পনাতে ঠিক স্বপ্নের রাজকুমার হিসেবে চিনেছি৷ নিজেকে কখনো জিজ্ঞেস করিনি আমি আপনাকে আদোও ভালোবাসি কি না! আমি ভীষণ স্বার্থপর মানুষ। নিজেকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারবো না কখনো। কিন্তু! আপনার প্রতি আমার এই অনুভুতি হাজার বছরের ভালোবাসাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো! বিশ্বাস করুন! এতো ভালো আমার কাউকে লাগেনি৷ আত্নসম্মানহীন বেঁচে থাকা একজন আমি’র জন্য অনেক কঠিন। আমি আপনি ও আত্নসম্মান এর মধ্যে আত্নসম্মান’ই বেছে নিলাম। আমি জানি না আপনি মোহ নাকি ভালোবাসা। তবে আমি এটা জানি আপনিই সে-ই যাকে ছাড়া আমি কখনো আর কাউকে নিয়ে এতো অদ্ভুত কল্পনা করিনি। মেয়ে মানুষের স্বভাব জানেন তো? নাহ্! আপনি তো আবার ঘরে বসে থাকার মতো মানুষ নন। ঘরের মেয়ের খবর জানবেন কিভাবে? আচ্ছা আপনি এটা জানেন তো? একটা ছেলে মন খারাপ হলে যেমন ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে রিফ্রেশমেন্ট করতে পারে, একটা মেয়ে তা পারে না! জানেন আপনি? আমার হাসিখুশি মুখশ্রীর ভিড়ে লুকিয়ে আছে এক আকাশসম না পাওয়া। কিন্তু সেগুলো আপনাকে পেলে হয়তো পূরণ হয়ে যেতো। এক আকাশসম না পাওয়ার সমাধান আপনি! বুঝতে পারছেন একজন আত্নসম্মানবোধ সম্পন্ন নারীর কাছে আপনি ঠিক কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন? এসব, এই কথা আপনি কখনো জানবেন না। বা আমি কখনো জানতে দিবো না। কিন্তু যদি একটু মূল্যায়ন করতেন তো আপনি আপনার জীবনের সবচেয়ে সেরা উপহার পেতেন। ছেড়ে যাওয়ার যুগে থেকে যাওয়ার মানুষ পেয়ে যেতেন। কিন্তু আপনি মূল্যায়ন করলেন না৷ বিনিময়ে আপনি হারালেন একজন রত্ন! যে আপনার প্রেমিকা হওয়ার সাথে সাথে স্ত্রী হওয়ারও যোগ্যতা রেখেছিল। কিন্তু আপনি তাকে প্রেমিকা হওয়ার জন্যও মূল্যায়ন করলেন না। আপনার জন্য এক পাহাড় দুঃখ হলো আমার৷ আপনি সোনা পেয়ে কাঁচ ভেবে ফেলে রাখলেন! অথচ বুঝলেন না আমি’র থেকে খাঁটি সোনা আপনার জীবনে আর আসবে না!

এতোটুকু লিখে ডাইরি বন্ধ করে রাখলো রুপান্তর। মনে তার বিষাদে ভরা। একতরফা ভালোবাসাটা প্রতিনিয়ত পুড়িয়ে দিচ্ছে তাকে। কিন্তু কাউকে বলতে পারছে না সে। কিছুক্ষণ পরই তাকে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হতে হবে। আজ নবীনবরণ নিজেকে রাঙাতে হবে রঙিন রুপে। কিন্তু মনে তেমন আনন্দ হচ্ছে না তার।

রুপান্তরের মন ভালো করতে কল এলো তটিণী-র। রিসিভ করতেই তটিনী গড়গড় করে বলল, ‘ তোর দেওয়া বইটা আমি ফেরত দিচ্ছি না-রে বেগম রোকেয়া।’

রুপান্তর হাসলো। বলল, ‘কেন আমি কি বন্ধু হওয়ার যোগ্য নই?’

তটিনী হেসে বলল, ‘যোগ্য বলেই তোর দেওয়া বইটা নিজের কাছে রেখে দিচ্ছি। এবার বল, ‘তুই কি আমার বন্ধু হবি?’

রুপান্তর একমুহূর্তের জন্য থমকে গেলো। তটিনী পুনরায় বলল, ‘হবি?’

রুপান্তর অনেক কষ্টে উচ্চারণ করল, ‘হবো।’

কল কে*টে দিয়ে রুপান্তর বিছানায় পড়ে রইলো। নিজের খুশিটা ঠিকঠাক ভাবে প্রকাশ করতে পারছে না সে। মন খারাপি উড়ে গিয়ে রুপান্তরের মনে আনন্দেরা ডানা মেলে উড়ছে। সেই ডানাতে পাখনা মেলে রুপান্তর উড়তে লাগলো কল্পনায়। সে আলমারি ভর্তি সব ড্রেস নামিয়ে ফেললো। সেগুলো থেকে বেছে একটি ড্রেস চুজ করলো পড়ার জন্য। নিজেকে রাঙিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে চললো কলেজের উদ্দেশ্যে।

*

তটিনী আয়নার সামনে দাড়িয়ে লিপস্টিক লাগাচ্ছে। রুদ্র দ্বিতীয় বারের মতো এসে বলল, ‘হয়েছে তোর?

তটিনী লিপস্টিকে রাঙা ঠোঁট উল্টে বলল, ‘এতো তাড়াহুড়ো কিসের রুদ্র ভাই? আমাকে একটু ভালো মতো সাজতেও দিচ্ছেন না আপনি।’

রুদ্র হতভম্ব গলায় বলল, ‘আর কতো সাজবি? দু-ঘন্টা ধরেই তো সেজে যাচ্ছিস তুই।’ কলেজে যাবি কখন? অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে? লেট লতিফ একটা!

তটিনী চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলল, ‘একদম আমাকে লেট লতিফ বলবেন না, আপনার চৌদ্দ গোষ্ঠী লেট লতিফ আমি বাদে।’

রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। গেইটের সামনে দাড়িয়ে রইলো তটিণী-র অপেক্ষায়। কিছু মিনিট পর লম্বা হাই-হিলের শব্দ তুলে তটিণী হেলেদুলে আসলো। রুদ্র একবার চোখ ভুলিয়ে নিয়ে বলল, ‘পা মচকে বাসায় আসিস, তখন তোকে দেখে নিবো।’

তটিনী মুখ ভেংচি দিলো। রুদ্র বাইকে চেপে বসে বলল, ‘এবার আপনি যদি একটু দয়া করে উঠে বসতেন তাহলে আমি আপনাকে পৌঁছে দিয়ে যথাসময়ে ভার্সিটিতে যেতে পারতাম জনাবা।’

তটিনী নিজের শরীরে ফু দেওয়ার ভান করে বাইকে চেপে বসলো। রুদ্র মিনমিন করে বলল, ‘একটা মানুষ এতোটা অভিনয় কিভাবে করতে পারে?’

তটিনী শুনে ফেললো সেটা। নাক ফুলিয়ে বলল, ‘কাকে বললেন আপনি এটা? এখানে তো শুধু আমি আছি, তারমানে আপনি আমাকে বলেছেন?’

রুদ্র একহাতে নিজের গালে তওবা করলো। বলল, ‘আমি আর কোনো কথা বলবো না, প্লিজ চুপ কর এবার মা।’

তটিনী হতভম্ব হয়ে বলল, ‘আপনার নিজের মা ও চাঁচি মা থাকতে আপনি আমাকে মা বানিয়ে দিচ্ছেন কেন? জগৎসংসারে কি ছেলেদের অভাব পড়েছে নাকি? মা হতে হলে আমি নিশ্চয়ই আপনাকে বেঁচে নিবো না রুদ্র ভাই? আপনার মতো দামড়া ছেলের মা হওয়ার কোনো ইন্টারেস্ট আমার নেই। ‘

রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বাইক চালাতে লাগলো। তটিনীকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিবে শাঁইশাঁই করে চলে গেলো গতি বাড়িয়ে। তটিণী মুখ বাঁকিয়ে সামনের চুল পেছনে ফেলে দিলো। তখনই তাকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো রুপান্তর।

নিজেও রুপান্তরকে জড়িয়ে ধরে হেসে ফেললো সে। পিঠ চাপড়ে বলল, ‘কি’বে বেগম রোকেয়া খবর কি তোর?’ আজ দেখি নায়িকা সেজে এসেছিস কাহিনি কি ভাই?’

রুপান্তর হেসে বলল, ‘তুই নিজে আমার থেকে আরও বেশি সেজেছিস, তাহলে তোর কাহিনিটা কি মামা?

দুজন হাসলো। মাঠ পেরিয়ে স্টেজের দিকে যেতে যেতে বলল, ‘আজ চল ছেলেদের সাথে ফ্লাট করবো।’

রুপান্তরের প্রস্তাবে তটিনী দাঁত বের করে হেসে বলল, ‘করা যায়।’

দুজন স্টেজের দিকে গিয়ে ফ্লাট করার জন্য বেছে নিলো তাদের মতোই নতুন আরেকটি স্টুডেন্টকে। ছেলেটির চোখে সাদা ফ্রেমের চিকন চশমা। তটিনী হাত দিয়ে হাই বলে ইশারায় ডাকলো। ছেলেটি যথেষ্ট ভদ্রভাবে এসে দাড়ালো। কথা শুরু করলো রুপান্তর। বলল, ‘হেই কিউট বয় হোয়াটস ইউ’র কিউট নেইম?’

ছেলেটি নিজের চশমা ঠিক করে নিয়ে বলল,, ‘আমি মজনু, আপনি?’

রুপান্তর নাক হাওয়া দেওয়ার ভান করে বলল, ‘ওমা তুমি মজনু? তোমার লায়লি কই?’

ছেলেটি মাখা চুলকে হেসে বলল, ‘কোনো লায়লি নেই আপু।’

তটিনী ফুসফুস করে বলল, ‘একদম আপু ডাকবে না, নাহলে আমরা তোমাকে কাকু ডাকবো।’

ছেলেটি অবাক কন্ঠে বলল, ‘কেন?’

তটিনী দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল, ‘সেম ইয়ারের হয়ে আপু ডেকে কি বুঝাতে চাও? আমরা তোমার মা কাকিমার বয়সী?’

মজনু জিহ্ব কে*টে বলল, ‘একদমই না আপু স্যরি আপনাদের নাম?’

তটিনী ও রুপান্তর নিজেদের নাম বললো। মজনু হেসে বলল, ‘ঠিক আছে তটিনী ও রোকেয়া বলে ডাকবো।’

ক্ষেপে গেলে রুপান্তর, বলল, ‘দরকার নেই, তুমি আমাকে রুপান্তর বলে ডাকবে।’

মজনু আবারও অবাক হয়ে বলল, ‘রোকেয়া বললে কি হবে?’

তটিনী ভাব নিয়ে বলল, ‘ওটা শুধু আমি ডাকি বুঝেছো?’

রুপান্তর তটিণী-র কানে ফিসফিস করে বলল, ‘ডেকেছিলাম ফ্লাট করতে কিন্তু ছেলে তো বোকাসোকা। ফ্লাট করার দরকার নেই ছেড়ে দে ভাই।’,

তটিনী দাঁত বের করে হাসলো। মজনুর চোখের চশমা খুলে ফেললো। নিজের চোখে পড়ে বলল, ‘দেখো তো আমাকে কেমন দেখায়?’

মজনু মন খারাপ করে বলল, আমি তো চশমা ছাড়া কিছু দেখতে পারি না, সেজন্য বলতে পারবো না।’ কিন্তু আপনাকে ঝাপসা দেখে এতোটুকু বলতে পারবো মন্দ লাগছে না।

তটিনী চোখের চশমা মজনুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘তোমার চশমা তোমার কাছেই রাখো, কিন্তু নেক্সট টাইম আপু ও আপনি বললে কাকু ডেকে মানসম্মান শেষ করবো।

তটিনী ও রুপান্তর মুখ বাকিয়ে চলে গেলো স্টেজের দিকে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here