রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
২৫
[ কপি করা নিষেধ ]
কলেজে ঢুকতে ঢুকতে মায়ার নয়টা বেজে গেল। আসিফ রিদের গাড়ি করে মায়াকে এইটুকু পথ দিয়ে গেল। এতক্ষণে কলেজে বেশ ভালোই আনাগোনা হয়েছে স্টুডেন্টের। জুই এখনো কলেজে আসেনি হয়তো একটু পর আসবে। তবে শ্রেয়াকে দেখা গেল কলেজে চত্বরেই। আবাক চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে ছিল সে। হয়তো বুঝার চেষ্টা করছিল মায়া রিদের গাড়িতে কিভাবে আসল? মায়া প্রথমে বুঝল না শ্রেয়ার দৃষ্টির কারণ কিন্তু তারপরে ঠিকই বুঝল যখন শ্রেয়া মায়াকে এই নিয়ে প্রশ্ন করলো সে কিভাবে রিদের গাড়িতে আসল? মায়া খুব স্বাভাবিক নেয় জানালো সে রিদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল সেজন্য রিদের গাড়িতে করে আসা। তবে মায়া বিস্তারিত ভেঙ্গে না বললে শ্রেয়াও বিস্তারিত জানার আগ্রহ দেখাল না। বরং শ্রেয়া যেটা জানার আগ্রহ দেখাল সেটা হলো…
‘ তোর রিদ ভাইকে কেমন লাগে মায়া??
দুই বান্ধবী কলেজ ভবনের দ্বি-তলায় করিডোরে দাঁড়িয়ে। পরীক্ষা দশটায়। জলদি আসায় তাই আপাতত ক্লাসে সামনে দাঁড়িয়ে। শ্রেয়ার কথায় মায়া করিডোরের রেলিঙের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে শ্রেয়ার দিকে কপাল কুঁচকে তাকাল। লহাময় গলায় শ্রেয়ার প্রশ্নটা শুধরিয়ে জানতে চাইল….
‘ কেমন লাগে মানে কি? কি বুঝাতে চাইছিস ঠিকঠাক প্রশ্ন কর। তারপর না-হয় উত্তরটা আশা করিস।
মায়া কথায় কিঞ্চিৎ বিরক্তি হলো শ্রেয়া। তারপরও মায়ার বুঝাতে চেয়ে বলল….
‘ ঠিকঠাক প্রশ্নই তো করলাম। ছেলে হিসাবে রিদ ভাইকে তোর কেমন লাগে?
শ্রেয়ার প্রশ্নে মায়ার কুঞ্জিত কপালের ভাঁজ শীতল হয়। বেশ অবজ্ঞা করেই বলল…
‘ কেমন আবার লাগবে? আট-দশটা ঠিকঠাক মানুষের মতোন লাগে। তবে উনার রাগ, অহংকার, সাথে সাথে লোকটা একটু বেশি সুন্দর। এতো সুন্দর মানুষের বউ গুলোর কপাল খারাপ হয় বুঝলি। সুন্দর পুরুষ গুলা বউকে ভালোবাসতে চাই না। কারণ তাদের নিজের রুপের অহংকারই শেষ হয়না, সেখানে বউদের রুপ তো ডাল ভাত বুঝলি? এই সুন্দর পুরুষ গুলার বাহিরে নজর বেশি থাকে। বিয়ের পর পরকীয়া সম্পর্ক কিন্তু এদের দিয়েই হয়। যদি সবটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। তবে এই কারণে আমার সুন্দর পুরুষে এলার্জি! সহ্য হয়না। আমি-তো নিজের জন্য পারফেক্ট কালো পুরুষই নির্বাচন করবো। যে আমার রুপে প্রশংসা করতে করতে পঞ্চমুখ থাকবে। সারাজীবন আমার আঁচল ধরে ঘুরবে আর বলবে ‘বউ আমাকে একটু ভালোবাসতো। দেখো তোমার ভালোবাসায় আমি কাঙ্গাল হয়ে যাচ্ছি দিনদিন। ভালোবাসায় এতো কৃপণতা করলে চলে বলো? তারপর যেদিন আমি একটু রাগ-টাগ দেখাব, সেদিন সে এসে বলল, ‘বউ ধরো-তো এই পড়া পানিটা খাও! পীরবাবা থেকে এনেছি তোমার জন্য। এই পড়াপানিটা খেলেই তুমি আর রাগ-টাগ করবে না, বরং আমাকে বেশি বেশি ভালোবাসাবে! এটা ভালোবাসা-বাসির পড়াপানি। তুমি বরং খাও খাও!
মায়ার ব্যক্তিগত মতামত আর স্বামীকে নিয়ে অদ্ভুত সব কথা-বার্তায় হতভম্ব হয়ে শ্রেয়া বলে…
‘ ভালোবাসা জন্যও বুঝি কেউ পড়া পানি খাওয়ায়? এটাও সম্ভব বুঝি?
মায়ার দৃঢ় গলার উত্তর আসল তক্ষুনি…
‘ অবশ্যই সম্ভব! সৌলমেট বুঝিস? বিবাহিত জীবনের যারা সৌলমেট পায় তাদের দেখবি এমন ছোটবড় সব পাগলামোই করে বেড়ায় পার্টনাদের জন্য। তাই আমিও আল্লাহ কাছে নিজের জন্য একটা সৌলমেট চায়। সে যেমনই হোক কিন্তু আমার সৌলমেট হোক। আমার বিশ্বাস আমি পাবো। আর সেজন্য সৌলমেট হিসাবে নিজের জন্য একটা কালো ছেলেকে চায়। নয়তো দেখা যাবে, রিদ খানের মতোন সুন্দর কোনো পুরুষ যদি স্বামী হিসাবে কপালে জুটে তখন জামাই আমার পিছনে পিছনে নয় বরং আমি জামাইর পিছনে পিছনে পীরবাবার পড়া পানি নিয়ে ঘুরতে হবে তার ভালোবাসা বাড়ানোর আশায় বুঝলি।
মায়ার চিন্তা ভাবনার ধরণ সবসময় সবার থেকে অদ্ভুত হয়। যেখানে সবাই নিজের জন্য পারফেক্ট রিদ খানের মতোন জামাই চায় সেখানে মায়া এমন ভাবে রিদকে অবজ্ঞা করছে যেন রিদ সুন্দর হয়ে পাপ করে ফেলেছে। মায়ার মতে রিদের মতোন তুচ্ছ জিনিস আর কিছুই হতে পারে না। শ্রেয়া আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল…
‘ আচ্ছা ধর! যদি তোর নিখোঁজ জামাই কোনো ভাবে রিদ ভাইয়ের মতোন সুন্দর কোনো পুরুষ হয় তাহলে কি করবি?
শ্রেয়ার কথায় মায়া আবারও দৃঢ়তা দেখিয়ে বলল…
‘ উহুম হবে না! আমার জামাই রিদ খানের মতোন এতো সুন্দর হবে না। লোকটাকে আমি সেদিন রাতের আধারে যদিও এতো দেখিনি, তবে আমি গ্যারান্টি, ওয়ারেন্টিসহ দিয়ে বলতে পারি সে এতো সুন্দর হবে না। আমার জামাই লম্বা-সম্বা বলিষ্ঠবান কালো কোনো পুরুষ মানুষ হবে দেখিস। একদম আমার মন মতোন।
মায়া কথায় খানিকটা অসন্তুষ্টি গলা ঝাললো শ্রেয়া। বিরক্তি নিয়ে বলল…
‘ না দেখে এমন গ্যারান্টি ওয়ারেন্টি দিচ্ছিস কিভাবে তুই? যদি সত্যি সত্যি সে রিদের মতোন সুন্দর কোনো পুরুষ হয় তাহলে কি করবি? জামাই সুন্দর বলে ছেড়ে দিবি হ্যাঁ?
এবার মায়ার গলার দৃঢ়তা নুইয়ে আসল। কণ্ঠ খাদে এনে বলল…
‘ এমন ছোটখাটো বিষয়ে জামাই ছাড়লে হবে বল? শত হলেও বউ হয় আমি তাঁর। দায়িত্ব নিয়ে বেশি বেশি পীরবাবা পড়া পানি খাওয়াব আমি এই আরকি।
স্বামীর প্রসঙ্গ আসতে মায়া কেমন গলে গিয়ে পল্টি নিল কথায় কথায়। মায়া কথায় একটা অন্ধ লোকও বলে দিতে পারবে মায়া ওর স্বামীকে কতোটা চায়। আচ্ছা যদি কখনো এমন হয় যে মায়ার ভালোবাসা স্বামী, মায়ারই কোনো অপছন্দের মানুষ বের হলো তখন কি একই ভালোবাসা থাকবে মায়া? যেমনটা এখন দেখাচ্ছে স্বামী জন্য? শ্রেয়ার মনে বেশ কৌতূহল জাগল। আচ্ছা মায়া তো রিদ ভাইকে অপছন্দ করে তাহলে শ্রেয়া কি রিদ ভাইকে দিয়ে একটা উদাহরণ দিবে মায়াকে? মায়া কি উত্তর দেয় অন্তত জানতে পারবে শ্রেয়া…
‘ আচ্ছা মায়া এমনই ধর! জাস্ট কথার কথা জিগ্যেস করছি হ্যাঁ? যদি এমন হয় তোর নিখোঁজ স্বামী কোনো ভাবে তোর অপছন্দের রিদ খান বের হলো, তাহলে তুই কি করবি এটা জানার পর?
মায়া ভাবল না এক মূহুর্ত। চট করে উত্তর দিয়ে বলল…
‘ প্রথমত সে হবে না, নো চান্স! তারপরও যদি মনে করতে বলিস তাহলে যেটা স্বাভাবিক সেটাই করবো বিচ্ছেদ।
‘ মানে তালাক?
‘ হ্যাঁ।
‘ তুই যে এখন এতো ভালোবাসিস সেটা?
‘ ভুলে যাব।
‘ যদি ভাই ছাড়তে না চায়?
‘ ছাড়িয়ে নিব।
‘ তারপর ভাইয়ের সাথে থাকবি না?
‘ না!
মায়া দৃঢ় গলা কথায় শ্রেয়া বুঝতে পারে মায়ার আসলেই রিদকে পছন্দ না। কোনো ভাবেই না। এজন্য অযৌক্তিক ভাবে রিদ ভাইয়ের উদাহরণটা দেওয়াটা হয়তো শ্রেয়ার ঠিক হয়নি। শ্রেয়া বলল…
‘ তোর এতো অপছন্দ কেন রিদ ভাইকে?
‘ তাঁকে অপছন্দ করার অনেক গুলো কারণ আছে। তারমধ্যে একটা হলো রিদ খান কখনো আমার ব্যক্তিগত ঐ মানুষটা হিসাবে আমার কল্পনাতে আসেনি।
শ্রেয়া বেশ হেঁসেই উড়িয়ে দেওয়ার মতোন করে মায়ার পাশ ঘেঁষে করিডোরে রেলিঙ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল…
‘ তোর রিদ ভাইকে পছন্দ না। অথচ আমি তার কার্জিন হয়। আমার চোখের দেখা কতো মেয়ে যে, রিদ ভাইয়ের জন্য মুখিয়ে থাকে। আমি স্কুলে গেলে সিনিয়র আপুরা পযন্ত রিদ ভাইকে চিঠি দিতো আমাকে দিয়ে। আমি কখনো ঐ চিঠি গুলো রিদ ভাইকে দিতাম না থাপ্পড় খাওয়ার ভয়ে। রাস্তায় ডাস্টবিনে ফেলে দিতাম আর আপুদের গিয়ে বলতাম রিদ ভাই ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে। তাছাড়া তুই এখন রিদ ভাইদের নতুন আত্মীয় হয়েছিস। একটু আশেপাশে চোখ ঘুরালেই অবশ্যই দেখবি কতো মেয়ে ভাইকে চাই। এমনকি আমার কার্জিন রিদ ভাইয়ের খালাতো বোন শশী আপুর ক্রেইজ তো তুই এখনো দেখিসনি। বাপরে দেখলে তুই অবশ্যই শকট হবি। আমি এখন বললো না। তুই অবশ্য নিজের চোখেই দেখতে পারবি দ্রুত। তাছাড়া আমি যতটুকু জানি রিদ ভাই আর শশী আপুর মধ্যে নাকি প্রেম-টেম সম্পর্ক আছে। পারিবারিক ভাবে বিয়েও ঠিক। হয়তো সামনে হয়েও যাবে। অথচ তুই বলছিস তোর রিদ ভাইকে পছন্দ না। তোর জায়গায় আমি হলে তো এমন সুন্দর বিয়াই উপর ক্রাশ খেয়ে তার প্রেমে উস্টা খেয়ে পরতাম সেই কখন। কিন্তু তুইতো ইন্টারেস্টই দেখাচ্ছিস না।
রিদের প্রেম-ভালোবাসা সম্পর্কে কথা শুনেও মায়ার তেমন ভাবান্তর হলো না। বিষয়টা পাত্তায় দিল না।যেহেতু রিদকে ওর পছন্দ না তাই রিদের প্রেম- বা বিয়ে নিয়ে ওর মাথা ব্যথা নেই। মায়া রিদের প্রেমের সম্পর্কটা স্বাভাবিক ভাবেই ধরে নিয়ে বলল…
‘ বিষয়টা আসলে ইন্টারেস্টের নয়! বিষয়টা ভালোবাসার। রিদ খান আমার জীবনে আসার আগে থেকেই আমি বিবাহিত ছিলাম। এবং ততদিনে নিখোঁজ স্বামীকে মন দিয়ে ও বসে আছি। সেজন্য আমার কখনো ঐ প্রেম প্রেম চোখে রিদ খানকে বা অন্য কোনো ছেলেকে দেখা হয়নি। আট-দশটা সাধারণ মানুষের মতোই রিদ খানকে দেখে এসেছি। যদি আমি বিবাহিত না হতাম তখন হয়তো সুন্দর বিয়াই হিসাবে রিদ খানের রুপে গলে পানি পানি হতাম। কিন্তু আফসোস! আমি অলরেডি একজনের প্রেমে গলে বসে আছি। সেখানে অন্য কেউ ঢোকা নো চান্স বেবি!
~~
মায়ার পরীক্ষা শুরু হয় দশটায়। স্বাভাবিক নেয় জুইয়ের হাতে বকাঝকা শুনতে হয়েছিল মায়াকে। কিন্তু শ্রেয়ার সাথে মায়া সকালে বের হয়েছিল এমনটা শ্রেয়া বলায় এই যাত্রায় বেঁচে যায় মায়া। নয়তো আজ জুই মায়ার নামে বিচার তুলতো আরিফের কানে। দিন দিন মায়া কেমন বেপরোয়া আচরণ করছে স্বামী খোঁজে। যেটা মায়ার জন্য মোটেও ঠিক নয়। এইতো এখনো মায়া এক অপত্যাশিত কাজ করে বসল। পরীক্ষা চলাকালীন কি মনে হওয়াতে তাড়াহুড়ো মায়া খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে গেল সবার আগে আগে। অথচ পরীক্ষা তখনো ঘন্টা খানিকটা সময় বাকি আছে। ক্লাসের সবাই পরীক্ষা দিচ্ছে আর মায়া তাড়াহুড়ো করে স্যারকে খাতা জমা দিয়ে ফাইল নিয়ে বের হয়ে গেল অসুস্থতার দোহাই দিয়ে। অথচ জুই জানালা দিয়ে ঠিক দেখেছে মায়া দৌড়ে কলেজের গেইট দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। জুইয়ের রাগে দাঁতে দাঁত পিষল। কাল কোচিং থেকে আর আজ পরীক্ষা হল থেকে মায়া বেড়িয়ে গেল অসুস্থতা বাহানা দিয়ে। নিশ্চয়ই মায়া কোথাও কিছু ঝামেলা পাকাচ্ছে নয়তো এমন অদ্ভুত আচরণ কেন করবে? জুইয়ের সন্দেহ বাড়ে। পরীক্ষা শেষ করেই যে জুই মায়াকে ধরে বেঁধে সবকিছুর প্রশ্ন করবে। জানতে চাইবে মায়া কেন দু’দিন ধরে এমন অদ্ভুত আচরণ করছে। কেন পরীক্ষা গুলো খারাপ করছে ইচ্ছাকৃত ভাবে।
মায়া হন্তদন্ত হয়ে রিকশা চড়ে বসল রিদের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে। মায়া অস্থির নেয় ছটফট করছে রিকশায় বসে। মায়া এতো বড় কুৎসিত কাজটা কিভাবে করল? নিজের স্বার্থের জন্য স্বামীকে খোঁজতে গিয়ে তারই একটা কিডনি বিক্রি করার অনুমতি দিয়ে আসল রিদ খানকে। এটা অন্যায় থেকেও জঘন্য পাপ হয়েছে মায়ার। কাউকে ভালোবাসলে তার ক্ষতি করা যায় না। শুধু ভালো রাখার দোয়া করা যায়। মায়া-তো ওর স্বামীকে ভিষণ ভালোবাসে তাহলে লোকটার এতো বড় ক্ষতি কিভাবে করলো মায়া? ওর বুক কাপলো না? মায়া কি আদৌ ওর স্বামীকে ভালোবেসেছে? যদি ভালোবাসতো তাহলে এমনটা মায়া কখনো করতে পারতো না ওর স্বামীর অগোচরে। তীব্র অপরাধ বোধে মায়া রিকশার মধ্যেই বসে ঝরঝর করে কেঁদে উঠল। যে লোকটাকে ওহ এখনো দেখেনি পযন্ত সেই লোকটাকে কতো বড় বিপদে ফেলে দিলো মায়া। সোজা কিডনি বিক্রি করে দিন তার অগোচরে। মায়া কি আদৌ ভালো বউ? ওর মতোন জঘন্য বউ কেউ হতে পারে না এই দুনিয়াতে। মায়া সর্বোচ্চ নিকৃষ্ট বউ হলো ওর স্বামীর। মায়ার হঠাৎ কান্নায় রিকশা চালাক চমকে পিছনে তাকাল। গাড়ি গতি কমিয়ে মায়াকে তিনি কিছু জিগ্যেসা করতে চাইলে মায়া চোখ মুছতে মুছতে রিকশা ওয়ালার উদ্দেশ্য বলল
‘ চাচা একটু দ্রুত চালাবেন গাড়িটা?
রিকশা চালাক আর প্রশ্ন করলো না মায়াকে বরং তিনি মায়ার কথায় স্বাভাবিক নেয় থেকে দ্রুত গাড়িটা টানল মায়ার দেওয়া ঠিকানায়। মায়া রাস্তা পথের দিকে তাকাল রিদকে আশেপাশে দেখা যায় কিনা তা দেখতে। মায়াকে আজ সকালে আসিফ কলেজে ড্রপ করার সময় বলেছিল ওরা আজ ঢাকা ব্রেক করবে। এবার ফিরতে মাস দুয়েক সময় নিবে। রিদ দেশের বাহিরে যাওয়ার কথা। এমনত অবস্থায় যদি মায়া এখন রিদের কাছে পৌঁছানোর আগে রিদ চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যায় তাহলে মায়ার আর নিষেধ করা হবে যে, ওর স্বামীর কিডনি দিয়ে কোনো ডিল-টিল করতে চাই না ওহ। মায়াকে যেন রিদ সকালের উকিলের দেওয়া ডিলের কাগজ গুলো ফের দেয় এটাও বলবে। মায়া এখন আর ওর স্বামীকে খোঁজবে না। যেদিন মায়া দু’লাখ টাকা যোগাড় করতে পারে সেদিন খোঁজবে নয়তো থাক। মায়া এবার নিজেই খোজে নিবে ওর স্বামীকে তারপরও রিদের সাথে স্বামীর কিডনি দিয়ে কোনো রুপ ডিল করবে না। করবে না মানে না-ইই। এই যাত্রায় মায়ার ভাগ্য ভালো হওয়ায় রিকশা থেকে থেমেই রিদের বিল্ডিংয়ের নিচে আসিফকে দেখল গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হয়তো অল্পক্ষণে চলে যাবে। আসিফের সঙ্গে ড্রাইভারসহ আরও দশ-বারোটা মতোন ছেলেপেলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল মায়া। মায়া সেদিকে এগিয়ে যেতেই রাহাত সালাম দিল। আসিফ মায়াকে এই অসময়ে দেখেও কিছু বলল না। বরং মায়া কিছু বলার আগেই আসিফ স্বাভাবিক নেয় জানাল ‘ রিদ নিজের উপরে আছে। এবং রেডি হচ্ছে!
মায়া সিঁড়ি ভেঙ্গে দ্রুত উপরে উঠলো। দরজা নক করতে দেখলো ভিতর থেকে দরজাটা খোলা। হয়তো রিদ বেড়িয়ে যাবে বলে লাগানি। মায়া চাপানো দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে দেখল রিদ সোফায় বসে সুজ পরছে। কারও উপস্থিতি টের পেতেই রিদ বেখেয়ালি ভাবে চোখ তুললেই দৃষ্টি মিলল মায়ার সাথে। মায়াকে এই অসময়ে দেখে খানিকটা কপাল কুঁচকাল। তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি ঘুরিয়ে তড়াক করে তাকাল দেয়াল ঘড়ির দিকে। এক পলক সময়টাও দেখে নিল। মাত্র দুপুর বারোটা পাঁচ মিনিট। তারমানে মায়ার পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি, রানিং। তাহলে এই মেয়ে, এই অসময়ে পরীক্ষা রেখে রিদের বাসায় কি করছে?
রিদ পুনরায় নিজের সুজ পরায় স্থির হলো….
‘ কি চাই?
‘ আমি সকালে আমাদের মধ্যকার ডিলের কাগজ পত্রগুলো ফেরত চাই ভাইয়া। আমার স্বামীর ক্ষতি করে কোনো কিছু করবো না আমি। আপনি আমাকে সকালের কাগজ গুলো ফিরত দিন প্লিজ। আপাতত কোনো চুক্তিতে যেতে চাই না আমি। যেদিন আপনার চাওয়া টাকা যোগাড় করতে পারব সেদিন ঐ লোকটাকে খুঁজবো নয়তো না। তারপরও আমি আমার স্বামীর কিডনি দিয়ে কোনো রকম চুক্তিতে জড়াব না।
মায়া রিদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে দৃঢ়তা দেখিয়ে কথা গুলো বলল। রিদ সুজ পরতে পরতে মায়ার কথা গুলোর যথাযথ অর্থ বুঝতে চাইল। ডিলের নামে করে রিদ যে, সকালে মায়ার থেকে কায়দা করে কাগজ গুলোতে সাইন নিয়েছিল? তার সবগুলোই তো ছিল তাদের বিয়ের রেজিস্টি পেপার আর কিছু বিয়ের সত্যায়িত প্রমাণ পত্র। কোনো কিছুই তো চুক্তিপত্র ছিল না। এখন এই বোকা মেয়েকে কে বুঝাবে সেই কথা? এই নারী বুঝবে? রিদ কি এখন নিজের কিডনি বিক্রি করবে নাকি আজব? রিদ মায়ার কথায় তেমন পাত্তা দিল না। শুনতে না পাওয়ার মতো করে সুজ পরে উঠে দাঁড়াল। মায়াকে আদেশ করে বলল…
‘ ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে আসো।
রিদের হুটহাট আদেশে মায়া বিরক্তি সাথে সাথে উপচে পরা রাগও হলো। মায়ার সিরিয়াস মোমেন্টে রিদের হেয়ালি আদেশ ওর গা জ্বলে উঠল রাগে, তারপরও সেটা চেপে গেল, প্রকাশ করলো না। কারণ এই মূহুর্তে মায়া রিদের কাছে ধরা। ডিলের কাগজ গুলো নিতে হলে অবশ্যই মায়ার রিদের আদেশ গুলো শুনতে হবে। মায়া তাড়াহুড়ো রিদের দিকে না এগিয়ে উল্টো হাঁটল কিচেনে দিকে। মায়াকে কিচেনে দিকে যেতে দেখে রিদ পকেটে হাত গুজাল। ছোটখাটো একটা নীল ডায়মন্ডের বক্স বের হয়ে আসল তাতে। সকালে দুজনের বিয়ে হয়েছে অথচ রিদের এখনো মায়াকে তেমন কিছুই দেওয়া হয়নি। কাবিননামার মূল্য যদিও উশুল করে বিয়েটা করেছিল রিদ। কিন্তু এতো কিছু আপাতত বউকে বলা যাবে না। দেখা যাক এই লুকোচুরি খেলাটা আর কতোদিন এইভাবে চলে। এই হাইডেন্সি খেলার শুরু তার বউ করেছিল এবার শেষটাও তার বউকেই করতে হবে। রিদ এই ব্যাপারে কোনো সাহায্য করবে না বউকে। যেভাবে হারিয়ে গিয়েছিল রিদকে না বলে ঠিক সেভাবে বউ তাকে খোঁজে বের করতে হবে। ততদিন রিদ শুধু তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা পালন করবে এই বিষয়ে। রিদ হাতের বক্সটার দিকে এক পলক তাকাল। বউকে দেখার জন্য আপাতত দুটো জিনিস আছে রিদের কাছে। তারমধ্যে একটা হলো তার হাতের এই বক্সটা। কিন্তু সেটাও এই মূহুর্তে দিলে গেলে তার বউ বেশ উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করবে তাঁকে। যার উত্তর এই মূহুর্তে রিদের কাছে নেই। হাতের মুঠোয় বক্সটা চেপে রিদ সামনে তাকাল। মায়াকে দেখল রিদের জন্য পানি নিয়ে এগিয়ে আসতে। দুজন মুখোমুখি হতেই মায়া রিদের দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিতে দিতে আওড়াল…
‘ নিন’
‘ খাও!
রিদের আদেশ মায়া চমকে উঠে অবুঝ গলায় শুধালো…
‘ আমি? আমি কেন? এটা তো আপনার। আপনি খান। নিন!
‘ কুইক!
মায়া একটু আমতা আমতা করল। তারপর
রিদের আদেশ অনুযায়ী তরতর করে সবটা গ্লাসের পানি এক চুমুকে শেষ করে হাতে নিল গ্লাসটা। ঠান্ডা পানিটা গলা দিয়ে নামার সময় মায়ার মনে হয়েছিল এই মূহুর্তে, এই পানিটুকু সত্যিই মায়ার বড্ড দরকার ছিল। তৃষ্ণায় কেমন গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। টেনশনে, দুশ্চিন্তা, আর অস্থিরতার জন্য মায়া এতক্ষণ যাবত ঠাহর করতে পারেনি। কিন্তু রিদ কিভাবে টের পেল মায়ার তৃষ্ণা গুকিয়ে যাওয়া গলাটা সম্পর্কে? মায়ার জানা নেই। আর না জানতে চাই। তবে এই মূহুর্তে রিদকে একটা ধন্যবাদ দিতে দরকার বলেই মায়া ছোট করে বলল….
‘ ধন্যবাদ!
রিদ হাল্কা ঝুঁকে সোফা টেবিলে উপর থেকে ফ্ল্যাটে চাবির রিংটা হতে নিতে নিতে মায়া মুখে ‘ধন্যবাদ শব্দটা শুনল। তাতে হ্যাঁ বা না তেমন কিছুই বলল না সে। কেবল চাবির রিং হতে একটা এক্সট্রা চাবি খুলে হাতে নিল। আর সেটা মায়ার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল…
‘ এটা তোমার। টেইক দিস!
বিষন্নে মায়া চমকিত চোখে রিদের হাতের দিকে তাকিয়ে, নিজের হাতের পানির গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে চাবিটা নিল। বড় সাইজের একটা চাবিকাঠি সেটা উল্টে পাল্টে দেখে রিদের উদ্দেশ্য বলল….
‘এটা কিসের চাবি?
‘ এই ফ্ল্যাটের!
‘ তো এটা আমাকে দিচ্ছেন কেন? এটা দিয়ে আমি কি করবো?
‘ এই চাবির গুরুত্ব ও মূল্যায়ন দু’টোই ভবিষ্যতে বুঝতে পারবে তুমি। প্রয়োজন পরবে তোমার।
রিদের সিরিয়াল কথাটাও মায়ার নিকট কেমন হেয়ালি ঠেকল। সে বুঝল না বিষয়টা। ভবিষ্যতে মায়ার রিদের ফ্ল্যাটের কি এমন প্রয়োজন পরবে আশ্চর্য। অনিচ্ছায় শর্তেও মায়া নিজের পরীক্ষার ফাইলের ভিতরে চাবিটা ঢুকিয়ে রাখল। আপাতত এই একটা চাবি নিয়ে রিদের সঙ্গে কথা বাড়াতে চাই না মায়া। একটা চাবিই তো। সেটা আর কি এমন জিনিস। লোহার একটা ছোট পদার্থ ফেলে দিলেই শেষ। রিদের হাতে মায়ার জন্য আনা দ্বিতীয় উপহারের বক্সটা সেটা আর দিল না। বরং অতি সর্তপণে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল। হঠাৎ মনে হওয়ার মতোন করে তাড়াহুড়ো মায়া বলল…
‘ ভাইয়া প্লিজ আমাকে ডিলের কাগজ গুলো ফিরত দিয়ে দিন। আমি কোনো ডিলে যেতে চাই না।
মায়া কথায় রিদ বাম হাতে সময়টা দেখে নিয়ে পকেটে দুহাত গুজাতে গুজাতে বলল…
‘ তুমি কিছু বললেই যে আমাকে সেটা শুনতে হবে এমনটা তো ডিল হয়নি। কাগজ পত্র গুলো অলরেডি কোর্টে সাবমিট করা হয়ে গেছে। ডিল ক্যানসেল করা যাবে না। তুমি এখন আসতে পারো। আমি বেরোব।
রিদ মায়াকে কৌশলে এড়াতে চেয়েছিল তাড়িয়ে দিয়ে। কিন্তু মায়া বের হলো না। স্বামীর জন্য মায়ার ছটফট, অস্থিরতা রিদের চোখে পড়ার মতোন ছিল। বউয়ের এতো ভালোবাসা, এতো অস্থিরতা সব-তো রিদের জন্যই তাইনা? রিদের ভিতরটা হঠাৎ পৈশাচিক আনন্দে শীতল হলো। অনাঙ্ক্ষিত ভাবে কারও দিশেহারা, ছটফটে কারণ হতে পেরে রিদ ভিতরে অদ্ভুত আনন্দ বোধ করল। খুব কাছ থেকে মায়ার ছটফট দেখতে পারছে রিদ। আর সেটাই যেন রিদের পৈশাচিক আনন্দের কারণ হলো। কিন্তু রিদের পৈশাচিক আনন্দ বেশিক্ষণ ঠিকল না মায়ার পরবর্তী আচরণে। রিদ ডিল ক্যানসেল করতে অস্বীকার করাতে দিশেহারা হলো মায়া। ঝরঝর করে কেঁদে উঠে তৎক্ষনাৎ রিদের পায়ে উপর পরলো। দু’হাতে রিদের দু’পা চেপে ধরে আকুতি মিনতি করে বলল…
‘ ভাইয়া প্লিজ প্লিজ আপনার পায়ে পরছি আমি। প্লিজ আমাকে কাগজ গুলো ফিরত দিয়ে দেন। লোকটা এসবের কিছু জানে না। আমি লোকটার ক্ষতি করতে কোনো ডিল করেনি। আমার দ্বারা উনার কোনো ক্ষতি হলে সেটা আমি সহ্য করতে পারব না। মরে যাব। ভাইয়া প্লিজ আপনি লোকটার কোনো ক্ষতি করবে না। লোকটার কিডনিও নিবেন না। প্লিজ আমাকে ডিলের কাগজ গুলো ফেরত দিয়ে দিন। প্লিজ প্লিজ।
রিদ হতভম্ব! ভিষণ হতবাক! স্তব্ধতা নেয় হতবুদ্ধি হয়ে ঠায় জায়গায় দাঁড়িয়ে। মায়া হুট করে রিদের পায়ে পরে যাবে এমনটা রিদের ঘুনাক্ষরে ধারণাতে ছিল না। মায়া কান্না, আহাজারিতে রিদের মনটা হুট করেই কেমন নরম আর শীতল হয়ে গেল। বউয়ের ভালোবাসায় ভিতরটা ঠান্ডা অনুভব করলো। রিদ ভাবল সে হয়তো একটু বেশিই করে ফেলেছে বউয়ের অনুভূতি নিয়ে খেলা ঠিক হয়নি। সত্যিটা বলে দেওয়া উচিত ছিল। রিদ কোমল হাতে মায়ার বাহু চেপে দাঁড় করাল। মায়া তখনো রিদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হাত জোর করে আকুতি মিনতি করে কাঁদছে ওর স্বামীর কোনো ক্ষতি না করতে। ডিলের কাগজ গুলো মায়াকে ফেরত দিয়ে দিতে। রিদ ঠোঁট গোল করে ভিতরকার অস্থির নিঃশ্বাস ছাড়ল। কপালের একপাশ চুলকে মায়ার ক্রন্দনরত মুখটার দিকে তাকাল। স্বামী হিসাবে রিদ নিজের পরিচয় এই মূহুর্তে দিলে মায়া সেটা কিভাবে গ্রহণ করবে তাও খানিকটা ভাবল। রিদ নিজের সংশয় দূর করে মায়ার হিজাবের উপর দিয়ে মাথায় নিজের ডানহাতটা রাখল। স্বামী হিসাবে অধিকার খাঁটিয়ে এই প্রথম রিদ মায়াকে স্পর্শ করলো। যত্ন নিয়ে একটু মায়ার মাথায় আদুরে হাতটা বুলিয়ে দিল। রিদ আবারও একই অস্থিরতার চাপা নিঃশ্বাস ফেলে বলল…
‘ যাকে তুমি খোঁজছ, তাঁকে খোঁজা বাদ দিয়ে আমাকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করলে চলবে না তোমার?
রিদ কথাটা শেষ করতে যতটুকু দেরি হলো ব্যস এতটুকুই কিন্তু মায়ার রিয়াকশন দেখা গেল তৎক্ষনাৎ। মূহুর্তে মাঝে রিদের হাতটা ঝাড়া দিয়ে মাথার উপর থেকে ফেলে দিল তীব্র রাগে। তেতে উঠে বলে মায়া…
‘ আমি আপনার কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। উপদেশ নয়। তৃতীয় পক্ষ হয়ে একদম আমার ব্যক্তিগত জীবনে ঢুকার চেষ্টা করবেন না। আমি কাকে খোঁজব? কাকে খোঁজব না। সেটা আমার ব্যক্তিগত মতামত হবে, আপনার না। আমাকে দূর্বল ভেবে একদম সুযোগ নেওয়া চেষ্টা করবেন না। আমি ঐ টাইপের মেয়ে নয়, যারা আপনার রুপ আর টাকা-পয়সা দেখে আপনার পিছনে ঘুরে বেড়াব। আর না আমার ভালোবাসা এতো ঠুকনো যে কারও কথায় নিজের স্বামীকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে গ্রহণ করবো। একদম নিজের লিমিটে থাকবেন। আমার আপনাকে পছন্দ না।
মায়া রাগ, মায়া দৃঢ়তা রিদকে মুগ্ধ করার কথা ছিল কিন্তু রিদ মুগ্ধ হতে গিয়েও নড়ে উঠল। রিদ যে মায়াকে বুঝাতে চেয়েছিল সে মায়া স্বামী হয়। এই কথাটা তো মায়া মানতেই নারাজ। বিশ্বাস করবে কখন? রিদের মস্তিষ্ক হঠাৎ করে জ্বলে উঠল কিছু একটা আপত্তি জানিয়ে। মায়া নিজের স্বামীকে যতোটা পাগল পাগল হয়ে ভালোবাসে ঠিক ততটাই রিদকে অপছন্দ করে। এতটাই অপছন্দ করে যে রিদ মায়ার স্বামী হতে পারে এটা এই মেয়ে কল্পনাতেও রাখেনি। রিদ তো শুধু প্রাথমিক অবস্থায় এই মেয়েকে একটু করে বুঝাতে চেয়েছিল ‘রিদ মায়ার স্বামী হতেও পরে। পুরপুরি রিদ সত্যটা বলেনি। অথচ মায়া অল্প কথা শুনেই রিয়েক্ট করলো। রিদের কথাটা বিশ্বাস করা তো দূর উল্টো ভুল বুঝে বসল। এইভেবে রিদ তার বউয়ের সুযোগ নিচ্ছে। আজব সে সুযোগ কেন নিবে? মেয়েটি তার বউ হয়। যদি রিদের কখনো মনে হয় তার বউকে দরকার তাহলে সে সোজা বেড রুমে নিয়ে ফেলবে এই মেয়েকে তারপরও বাউতা বাজি করে বউকে ছুবে না সুযোগ নেওয়া উদ্দেশ্য। এমনটা করা রিদের দরকারও নেই। রিদের মনে তীব্র প্রশ্ন জাগল! আচ্ছা এই মেয়ে যখন জানতে পারবে রিদ মায়ার স্বামী হয় তখন কি করবে? এতো এতো ভালোবাসা থাকবে তো এই নারী তার প্রতি? নাকি রিদ এই নারীর স্বামী হয় বলে সে এতো ভালোবাসাকে মূহুর্তে ঘৃণায় রুপান্তর করবে? দূরে সরে যেতে চাইবে রিদ থেকে? অসম্ভব! রিদ এতো সহজে ছেড়ে দিবে বউকে? তাঁকে এতো আগ্রহ নিয়ে পাগল বানিয়ে শেষে কিনা ছেড়ে যেতে দিবে এই নারীকে? অসম্ভব! জানে মেরে ফেলবে না সে এই নারীকে। তারপর ছাড়বে না। এতক্ষণের ভালো লাগাটুকু হুট করেই কেমন বিতৃষ্ণা ঠিকল রিদের নিকট। মায়ার শক্ত অনলের দিকে তাকিয়ে রিদ তেতু গলায় বলল…
‘ নিজের লিমিটেই আছি আমি। এমনটা যাতে না-হয় তুমি নিজের লিমিট ক্রস করে একটা অপছন্দের মানুষের সাথে নিজের সারাটা জীবন শেয়ার করতে হলো।
‘ আপনার সাথে আমার একটা চকলেট পযন্ত শেয়ার করবে। সারাজীবন তো দূর।
‘ শুধু চকলেট না, নিজের সবকিছুই আমার সাথে শেয়ার করবে তুমি তাও সেচ্ছায়। আই প্রমিস!
‘ অসম্ভব!
‘ অসম্ভব বলতে কিছু নেই। তোমার বাসরেও আমাকে পাবে। তোমার বাচ্চাদের বাপও আমি হবো। এবার আউট।
‘ আপনার মতোন নোংরা মানসিকতার মানুষ আমি জীবনেও দেখিনি। আমাকে চুক্তিপত্র কাগজ গুলা ফেরত দিন। আমি চলে যাব।
মায়ার উল্টা পাল্টা কথায় রিদের রাগ বাড়ছে। রিদ দাঁতে দাঁত চেপে মায়াকে শুধালো…
‘ এই যাবে তুমি এখানে থেকে? ভালো লাগছে না আমার। কোনো ডিলের কাগজ টাগজ দিব না আমি। যাও! তারপরও যদি স্বামীর প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে দিয়ে কাজ চালাও। ফুল সার্ভিস দিব। তারপরও এখন বের হও। ভিষণ রাগ লাগছে আমার। কন্ট্রোল হারালে খুব হবে তোমার। যাও।
রিদের কথায় মায়া রাগান্বিত চোখে জেদ ধরে দাঁড়িয়ে রইল। রিদের মতোন এতো খারাপ ভাষায় কেউ আমাকে কুপ্রস্তাবে দেয়নি। মায়া রাগটা যে কোথায় হচ্ছে বলা দায়। রিদ মায়াকে যেতে না দেখে তেতে উঠে। রিদ বেশ বুঝতে পারছে মায়া রিদকে ভালোবাসে না। এমনকি ভবিষ্যতে স্বামী হিসাবে রিদের পরিচয় পেলেও যে মায়ার এই ভালোবাসা থাকবে না। সেটাও রিদ বেশ বুঝতে পারছে। তাহলে এখন এতো আগ্রহ নিয়ে যে এই নারী তাকে পাগল বানাচ্ছে সেটা কে দেখবে? রিদ জাস্ট পাগল হয়ে যাচ্ছে এই নারীর জন্য। এই নারী আর কিছুক্ষণ রিদের সামনে থাকলে নিশ্চিত সে রাগে কন্ট্রোল হারাবে।
‘ কি হলো শুনতে পাওনি? দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও! তোমার এই নাটক দেখানো ভালোবাসার আমি অলরেডি বুঝেছি? আর কাহিনি করতে হবে না। যাও! আর হ্যাঁ স্বামীর দেখা তুমি এহ জীবনে আর পাবে না। মনে করো তোমার স্বামী মৃত। তাঁকে আমি মেরে ফেলেছি এবার আমাকে গ্রহণ কর….
রিদের বাকি কথাটা শেষ করার আগেই মায়ার অনাকাঙ্ক্ষিত আক্রমণের শিকার হলো রিদ। টেবিলের উপর রাখা সেই পানির গ্লাসটা তুলে মায়া হঠাৎ ছুড়ে মারল রিদের দিকে। রিদের অপরাধ সে মায়ার স্বামীকে মৃত বলেছে। আকস্মিক ঘটনায় রিদ নিজেকে সরানোর সুযোগ পায়নি। সে কেবল নিজেকে বাঁচাতে মুখের উপর আড়াআড়ি হাত বাঁধল রক্ষা করতে। যার দারুণ মায়ার ছুড়ে দেওয়া ভারি গ্লাসটা রিদের হাতের কব্জায় আর কপালে লাগল। এতে করে রিদের হাত ঘড়ির কাঁচ ভেঙ্গে মূহুর্তে হাত কেটে রক্ত বেড়িয়ে কব্জাতে চড়াল। কপালটাও গ্লাসের কাঁচে লেগে আংশিক রক্ত গড়াল। রিদ মুখের উপর হাত বেঁধে ঝুকে রইল কয়েক সেকেন্ড। মূলত পুরো বিষয়টা রিদের বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগল। যখন বুঝতে পারল বিষয়টি কি হয়েছে তার সাথে, ঠিক তক্ষুনি দপদপ করে তীব্র রাগে জ্বলে উঠলো রিদের মস্তিষ্ক। তাঁকে কেউ আঘাত করলে সেটা সহ্য করতে পারে না সে। কন্ট্রোলের বাহিরে চলে যায় তখন সবকিছু। মায়া না চাইতে সেই কাজটা করে ফেলে, রিদের চেপে রাখা রাগটা আর বাড়িয়ে দিল নিজের অজান্তে। কয়েক সেকেন্ডের নিস্তব্ধ পরিবেশটা হুট করে কেমন অশান্ত তান্ডবে পরিণত হলো। সুন্দর ফকফকা ড্রয়িংরুমে ছড়িয়ে পরলো অসংখ্য কাচের টুকরো। রিদ রাগের বশে মূহুর্তে মাঝে সোফা টেবিল মাথার উপর তুলে আচাড় মারলো স্বজোড়ো। তীব্র শব্দে অসংখ্য কাঁচ ভাঙ্গা ছড়িয়ে পরলো চারপাশে। মায়ার পায়েও গিয়ে বিঁধল সেই কাঁচের টুকরো কিছু। এবার রক্ত মায়ার পা থেকেও বেরুলো। ভয়ে মায়া মৃদু চেচিয়ে উঠলো। রিদের এতো রাগের শিকার হয়নি কখনো। আতঙ্কিত মায়া কেঁদে উঠে ছিটকে দূরে সরতে চাইলে রিদের ভয়ে। কিন্তু তার আগেই রিদের শক্ত থাবার পিষ্ট হয় সে। মূহুর্তে মাঝে রিদের শক্ত হাত চালান হয় মায়ার গলায়। চোখের পলকে সেই হাত মায়াকে ছিটকে ফেলল সোফার উপর। ছটফট করা মায়া দু’হাতে রিদের হাতটা গলা থেকে ছাড়তে চাইলে রিদের হাতের বাঁধন আরও দৃঢ় হয়। মায়ার উরু পাশে সোফায় রিদ এক পা তুলে তাতে হাতের ভর দিয়ে মায়ার উপর ঝুকে পরে রাগে রি রি করে দাঁতে দাঁত পিষে বলল….
‘ নাটক করিস? কাকে তেজ দেখাস তুই? এতো আগ্রহ দেখিয়ে আমাকে পাগল বানিয়ে এখন আঘাত করিস? আমাকে চিনিস তুই? কি মনে হয়? একটু নরম-সরম হয়ে কথা বলেছি দেখে, এমনই আমি ভালো মানুষ হয়ে গেলাম? আর তুই সেই সুযোগে আমাকে আঘাত করবি? তোর বাপ-দাদার চৌদ্দ গুষ্ঠিকে নখের উপর তুলে মেরে ফেললেও কারও বাপের ক্ষমতা নাই ঠাহর পাওয়ার। সোজা গায়েব করে দিব। আজকেই শেষবার! নেক্সট টাইম এই একই ভুল করবি, তো তোর এই সুন্দর শরীরটা আগে ছিঁড়ে খাব, তারপর তোর পরিবারের কাছে তোকে পার্সেল পাঠাব, তাদের জানাতে যে আমি কতোটা খারাপ। মনে রাখিস।
#চলিত….