#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(৭২)
একটু সময়ের কথা বলে অনেকক্ষন হয়ে গেছে। তানভীর অপেক্ষা না করে রেস্টুরেন্টেই চলে আসে। লাবিবা ভেতরে বসেই গ্লাসের বাইরে থেকে দেখতে পেলো তীব্র গতিতে ধেয়ে আসছে তানভীর। লাবিবার খাওয়া অফ হয়ে গেলো। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে তানভীরের গতি অনুযায়ী দিক পাল্টালো। লাবিবার পাশে এসে দাড়াতেই উপস্থিত জনের নজর ঘুরে গেলো। আকাশ দাঁড়িয়ে সালাম দিলো।
” আসসালামুয়ালাইকুম ভাই। ”
তানভীর লাবিবার চোখে চোখ রেখেই গ্ৰহণ করলো,
” ওয়ালাইকুমুস সালাম। ”
” ভাই বসো। ”
” একটু ব্যস্ততা আছে। উর্মিলা, নাকিব শেষ হলে চলে যেও। ওকে?”
” ওকে স্যার। ”
আকাশ বললো ,” ভাই তোমার সাথে ভাবী কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। ”
” শুনে নিবো। এসো। ”
লাবিবার হাত মুঠো করে জোর কদম ফেললো। গাড়ির দরজা খুলে চোখে ইশারা করলো, ” বসো।”
লাবিবা ঝটপট উঠে বসলো। তানভীরের অভিব্যক্তি তার বুঝে আসছে না। চুপচাপ কনফিউশন নিয়ে তানভীরকে দেখতে লাগলো । তানভীর গাড়িতে উঠে একবার লাবিবার দিকে চোখ বুলিয়েই স্টার্ট করলো। লাবিবার হাতে সাবওয়ে। বেচারা না খেতে পেরে ফস করে হাতে তুলে নিয়েছে। এখন তানভীরের পাশে বসে খাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। কিছুক্ষন দৃষ্টিতে তানভীর কে
অবজার্ভ করলো। ডাকলো, ” খান সাহেব। ”
” হাতের খাবার ফিনিশ করো। ”
না তাকিয়েই হুকুম দিয়ে দিলো। লাবিবা একটু মুখে দিয়েই জানালা দিয়ে ফেলতে চাইলো। ওমনি তানভীর
হাত ধরে ফেললো।
” ফেলছো কেন ?”
” খাবোনা।”
” ফিনিশ করো। ”
” উহু।”
তানভীর হাত ঘুরিয়ে এনে সাব ওয়েতে কামড় বসালো। শেষ করার পর টিস্যু হাতে মুছে নিলো। ফাঁকা জায়গায় গাছের নিচে গাড়ি থামালো। একটু সামনেই একটা টং দোকান। তানভীর দোকান থেকে গিয়ে পানির বোতল নিয়ে এলো। ততোক্ষনে লাবিবা নেমে দাঁড়িয়েছে গাছের নিচে। কৃষ্ণচূড়া গাছ। ডাল পালা মেলে বড় ছাতার মতো হয়ে আছে। গাছের নিচে পুরোটাই বালুমাটি। লাবিবা ভাবলো যখন কৃষ্ণচূড়া ফুটে এই বালুর উপর পড়ে লেপ্টে থাকবে, উপরেও কৃষ্ণচূড়া নিচেও কৃষ্ণচূড়া কি সুন্দর যে লাগবে! তানভীর লাবিবার ধ্যানের মাঝেই বোতল খুলে হাত টেনে নিলো। তৈলাক্ত মেয়োনিজ পানিতে ধুয়ে দিলো। টিস্যু দিয়ে মুছে দিলো। লাবিবা দুই ঢুক পানি মুখে দেবার পর বললো, ” গাড়িতে উঠো। ”
লাবিবা নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
” আপনি কি আমার উপর রাগ __ ”
কথা শেষ না করতেই গাড়ির পেছনের দরজা খুলে ধাক্কা দিয়ে সিটের উপর ফেলে দিলো লাবিবাকে। কোমড়ে লাগাতে লাবিবা চিৎকার দিয়ে উঠলো। তানভীর মুখোমুখি হয়ে দাঁত দাঁত চেপে বললো,
” একঘন্টা অপেক্ষা করিয়েছিস আমাকে। তোর কি আমার কাছে আসতে মন চায়না? ”
হিংস্র দৃষ্টিতে লাবিবার কলিজা শুকিয়ে কাঠ। যে মানুষ টা এতোটা ভালোবাসে সে কেনো এতোটা হিংস্র আচরণ করবে? লাবিবা ভাবতে ভাবতেই তানভীরের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। গলা জড়িয়ে নিজের উপর নিয়ে নেয়। কাঁপা গলায় শান্ত করতে চেষ্টা করে।
” হায় আল্লাহ! আপনি আমার সাথে এমন করেন কেন ? আপনার মাঝেই আমার সুখ আপনি তো জানেন আপনার সংস্পর্শেই আমি পরিপূর্ণ। প্লিজ এতো রেগে যাবেন না। ”
তানভীর চোখ বুজে শ্বাস নিলো। লাবিবার গালে কয়েকবার গভীর ভাবে ঠোঁট ছোয়ালো। আদুরে গলায় বললো, “সরি জান।”
” একটা কথা বলি?”
” অনেক গুলো।”
” আপনি যখন রেগে আমাকে তুই ডাকেন শুনতে বেশ লাগে। ”
লাবিবার ঠোঁটে মিটি মিটি হাসি। তানভীর দাঁতে দাত কামড়ে বলে, ” তাই না? দেখাচ্ছি। ”
” এই না। ”
কে শোনে কার কথা? হাতাহাতি করতে গিয়ে লাবিবা ফের চিৎকার করে উঠে,
” ইসসসস আবার কোমড়ে ব্যাথা।”
” ঘুরো। ”
” হুম?”
” দেখি। কোথায় ব্যথা? এখানে?”
” না একটু লেফ্টে। ”
তানভীর বুড়ো আঙুলে চেপে চেপে ম্যাসাজ করে দিলো। ব্যথা কমে গেছে। সিটে বসে লাবিবাকে টেনে বুকের উপর তুলে নিলো। কপালে চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
” আমাকে অপেক্ষা করাবেনা কখনও। অপেক্ষা করাটা খুবই পেইনফুল। অনেক অপেক্ষা করেছি। আর চাইনা।যখন তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করবে তখনি দেখতে চাই। যখন কাছে পেতে ইচ্ছা করবে তখনই চাই।”
” আচ্ছা। ”
” আমার সব সময় চাই। ”
“আচ্ছা। ”
” শুনবেতো আমার সব কথা?”
” আচ্ছা। ”
” ধূর! কাকে বলছি আমি এসব কথা? রীতিমত মজা নিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়াস কথাবার্তা বুঝে না। ”
তানভীরের রিয়েকশনে লাবিবা খিলখিল করে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে পেটে হাত চেপে ধরে একটু ধাতস্থ হয়ে বলে, ” আচ্ছা। ”
তানভীরের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কিন্তু কিছু বললো না। বুকের উপর দুহাতে লাবিবার মাথা চেপে ধরলো। লাবিবাও দুহাতে আকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
” এতো পাগল কেন আপনি? আমি তো কতো খুঁজলাম। পেলাম না কেন?’
হিজাবের উপর দিয়েই তানভীর মাথায় পর পর কয়েকটা চুমু দিলো।জানালার গ্লাস তুলে দিয়ে বললো,
” সানগ্লাস পড়ে ছিলে তাই পাওনি। এখন কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকো। ”
রোজীর দিকে তামিমের সন্ধানী দৃষ্টি। রোজীকে অস্বাভাবিক লাগে। আগেও এমনই ছিল কিন্তু তামিম কোনো গুরুত্ব দেয়নি। গুরুত্বহীন মানুষটা যত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ততোই বেশি নজর পড়ছে। একটু আগেও রোজী বসে বসে ঝিমুচ্ছিল। লাবিবা যদি মাঝে মাঝে কোনো জোকস বলে তখন একটু হাসে। বাকিটা সময় মুখ বেজার করে রাখে। অতি স্বাভাবিক দেখায়। কিন্তু তামিমের নিকট বিষয়টা ঠিক লাগে না। তামিম রোজীকে বললো,
” রোজ আমার মনে হয় তুমি সিক। আমি তোমার কিছু টেস্ট করাতে চাই।”
রোজী চমকে উঠলো। জানতে চাইলো,
” কিসের টেস্ট?”
” এইতো নরমাল বডি চেকাপ। ”
” কেন?”
” তোমার অস্বাভাবিক আচরনের জন্য। আরো কিছু জানতে চাও? ”
রোজীর ভেতরে ভয় ঢুকে গেলো। তামিমের শক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নানা রকম সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা করলো। কিছু সময় পরে নিজে নিজেই আঁতকে উঠলো। দুহাত নাড়িয়ে নিষেধ করলো।
” না না না। ডাক্তার সাহেব আপনি যেটা ভাবছেন তেমন কিছুই না। আমার ভেতরে কোন রোগ নেই। আমি তো চেষ্টা করি আপনার জন্য অপেক্ষা করার কিন্তু হয়ে উঠে না।”
” শান্ত হও। ”
রোজী প্রায় কেঁদে ফেললো। ”
ডাক্তার সাহেব আমার ম্যারিড লাইফ এতোটাও সুখের ছিলোনা। আমার পাওনার কোটা খুবই অল্প। আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেভাবেই চলবো। তবুও এরকম কিছু সন্দেহ করবেন না। ”
” কি সন্দেহ করেছি আমি? এইচ আইভি পজিটিভ? একজন হেলথ কনসিয়াস মানুষ ও তো অল বডি চেকাপ করায়। আর তোমার মাথায় এটাই এলো। কি নেগেটিভ চিন্তা!”
রোজী চুপসে গেলো। তামিমের কথা শুনে যতোটা না লজ্জিত হলো তাঁর ও বেশি লজ্জা পেলো তামিমকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে। তামিম মাথা নাড়ালো। শুধু বললো, ” বুদ্ধির ঘট খালি। ”
রোজীর মোটেই তেমন মনে হয়না। এমনিতেই ফাটা বাঁশ হয়ে আছে। কখন শক্ত আঠা লাগবে সেই অপেক্ষায়। রোজী গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে তামিমের নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে বুকে মাথা রাখলো। তামিম বিরবির করলো, ” হুম। শুধু এসবই পারো। ”
রোজী তৎক্ষনাত পিঠ ছেড়ে গলা জড়িয়ে ধরলো। তামিম মৃদু হেসে একবার পিঠে হাত রেখে জড়িয়ে ধরলো। সাবধানে থাকতে বলে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
বিছানার উপর বার বার ফোন বাজছে। লাবিবা শুনেও ফোনটা তুলতে যেতে পারছেনা। লাবিবার কনুইয়ের উপর তানভীরের প্যান্ট। দুই হাতে এখন যে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে। তার মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানভীর। তানভীরকে সে আর ঘর নোংরা করতে দিবে না। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েই দেখে দুটো শার্ট সোফাতে পরে আছে। দেখতে দেখতেই চোখের সামনে আরো তিনটা শার্ট তানভীর ছুড়ে দিল। এতোক্ষনে লাবিবার হুস এলো। জবেদা নিজ দায়িত্বে লাবিবাকে জানিয়ে গেছে তানভীরের এই ড্রেস সিলেক্টের ব্যাপারটা। আরো জানিয়ে গেছে এবার থেকে লাবিবা গুছাবে। সে আর গোছাতে আসবে না এ ঘরে। লাবিবা তাড়াহুড়ো কে তানভীর কে আটকালো। নিজের আন্দাজে সিলেক্ট করে বললো,
” এটা পরে নিন। ভালো লাগবে। ”
” পরিয়ে দাও। ” বলে তানভীর সামনে এসে দাঁড়ালো। লাবিবা ঝটপট পরিয়ে দিতে লাগলো। খুব মনোযোগ দিয়ে বোতাম লাগাচ্ছে তানভীর মনে মনে হাসতে লাগলো। প্যান্টটাও নিজে পড়লো না। মোজা পর্যন্ত লাবিবাই পড়িয়ে দিলো। ঠিক ঠাক ইন করার পর তানভীর সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
” দেখোতো ঠিক ঠাক?”
” ঠিকই তো লাগছে। আমি অত বুঝি না। আপনি মিররে দেখে নিন।”
” প্রয়োজন নেই। তুমি বলো। ”
লাবিবা মুচকি হেসে বলল,” পারফেক্ট।”
” আজ থেকে দায়িত্ব তোমার। আমার কাজ কমে গেলো।”
” আচ্ছা।”
লাবিবা ভেবেছিলো ড্রেস সিলেক্টের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু না। তানভীরের প্রত্যেকটা কাজ এখন লাবিবাকেই করতে হয়। প্রত্যেকটা সকালে তানভীর কে রেডি করানো, ব্রেকফাস্টে পাশে থাকা থেকে শুরু সবকিছুতেই তাকে থাকতে হয়। বলেছিলো সব সময় চাই। যতক্ষন সাথে আছে একটু এদিক ওদিক যাওয়ার সুযোগ নেই। লাবিবা অবশ্য খুব আগ্ৰহ নিয়েই সবকিছু করে। রাতে তানভীর বাড়ি ফেরার পর গোছল করার সময় ডেকে নিয়ে বলে, ” মাথায় শ্যাম্পু করে দাও।” লাবিবা কোমড়ে শাড়ি গুঁজে নিয়ে ভেজা চুলে আঙুল গুঁজে দেয়। ছোটবেলায় সাবিনা লাবিবাকে গোছল করানোর সময় ছোট ছোট চুলে শ্যাম্পু করে দিত। চোখে ফেনা লাগতে না লাগতেই লাবিবার চিৎকার শুরু হতো। সেসব কথা মনে করেই লাবিবা মুচকি মুচকি হাসে। বন্ধ চোখ ছোট ছোট করে খুলে তানভীর দেখে লাবিবা হাসছে। বাহুতে কোমড় পেঁচিয়ে ভেজা শরীরের সাথে চেপে ধরতেই লাবিবা চেঁচিয়ে উঠে।
” এই এই আমার শাড়ি ভিজে গেলো। ”
” যাক।”
” খান সাহেব। ছাড়ুন।”
লাবিবাকে তো ছাড়লোই না। উল্টে সোজা হয়ে বসে অর্ধ ভেজা শাড়িটা পুরোটাই ভিজিয়ে দিলো। বুকের উপর মাথা রেখে আদেশ করলো,
” নিজের কাজ করো। ”
লাবিবা কিছু মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলো। তারপর ঝটপট শ্যাম্পু শেষ করে দিলো। তানভীর থেকে সরে দাঁড়িয়ে দেখলো শাড়িতেও ফেনা লেগে আছে। এমনিতেই শাড়ি ভিজে আছে তাই পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলো। তানভীরকে বললো,
” আপনি তাড়াতাড়ি আসুন আমি চেঞ্জ করি গিয়ে।”
তানভীর যেতে দিলো না। আঁচল টেনে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পরলো।
” কোথায় যাচ্ছো? আমরা এখন একসাথে সাওয়ার নিবো।”
( গল্পটি সম্পূর্ণরুপে কপি পোস্ট করা নিষেধ। তবে শেয়ার দিতে পারেন। অনান্য আইডি বা পেইজে কপি, ওয়েবসাইটে পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও বা থিম কপি করার অনুমতি নেই। )
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা