দেওয়ানা_(আমার ভালোবাসা) #লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাল মায়া #পর্বঃ_১১ .

0
398

#দেওয়ানা_(আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাল মায়া
#পর্বঃ_১১
.

🍂
উনার এমন কাজে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। দৌড়ে গেলাম উনার কাছে টলমল চোখে একবার মূর্তিটাকে দেখলাম তো অন্যবার লোকটাকে। কষ্টে বুক ভারি হয়ে আসায় নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে ভ্যা ভ্যা জোরে জোরে কান্না করে দিয়ে বলে উঠি…

—” আমার পরি! আমার পরি!

বলেই আরও জোরে কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম। ঠিক তখনই দাদী দৌড়ে এসে আমাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠেন..

—” কি করেছিস রিদ এটা? আমার সোনামার পরিটা ভাঙলি কেন? তোকে না কতোবার বলেছি আমার সোনামা থেকে দূরে থাকতে? শুনিস না কেন? তোর কি আর কোনো কাজ নেই আমার সোনামাকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া হ্যা?

রিদ নামটি শুনতে ভয়ে শিহরিত হলাম আমি। আতঙ্কে হিতাহিত অক্ষ হয়ে ছিটকে দাদীর পিছনে গিয়ে লুকিয়ে পরলাম। নিরাপদ স্হানে থেকে কান্না করা ব্যাটার মনে করলাম। কান্না করা থেকে নিজেকে থামাতে পারছি না তবে এবার কান্নাটা কিসের তা আমি নিজের ও বুঝতে পারছি না। আমি ভাবলাম আমার কান্না কারণটা কি শুধুই মূর্তি জন্য নাকি উনার হিংস্রতায় ভয়ে। আমার উনাকে এতদিন ধরে না চিনে উনার নামে উল্টা পাল্টা কথা বলায় সেজন্য কি ভয় কান্না করছি? এই মূহুর্তে নিজের ভিতরকার জাগ্রত ভাবনাটা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। তবে ঠিক তখনই আমার কানে আসল আরও একটা বিকট শব্দ। আমি চমকে দাদীর পেছন থেকে তৎক্ষনাৎ উকি মেরে দেখলাম আমার আরও একটা মূর্তি ভেঙ্গেছন উনি। আমার কান্না সেখানেই থেমে যায় ভয়ে। বাপরে যেহারে আমার প্রতিমাগুলো উনি ভাঙ্গছে না জানি কবে আমাকে ঠিক এইভাবেই ভেঙ্গে দেয়। তাই এবার আর আমি কিছু বলিনি চুপ করে আবারও মুখ লুকালাম দাদীর পিছনে।
~

রিদ প্রচন্ড রেগে কন্ট্রোল হারিয়ে মায়ার দিকে তেড়ে আসতে নিলেই আয়ন তার পথ আটকায় আর বলে উঠে,,,,

—” কুল ডাউন রিদ! কি হয়েছে তোর? এতটা হাইপার হচ্ছিস কেন? মায়া কি করেছে? যে ওর সাথে এত রাগ দেখাচ্ছিস? রিদ প্লিজ এখানে সিনক্রিয়েট করিস না ভাই। একটু আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা কর নিহার শশুর বাড়ির মানুষজন আছে।

রাগান্তিত রিদ মায়ার থেকে চোখ ফিরিয়ে আয়নের দিকে তাকায়। রাগে কটমট করে। এসব উগ্র পরিবেশ তার মাথায় আসে না। তবে এখানে ঝামেলা করতে চায় না বলে তৎক্ষনাৎ প্রস্থান করার জন্য উদ্রিক্ত হলো উপরের দিকে। হাত দুটো তার তখনো মুষ্ঠি করা ফুসফুস নিঃশ্বাসের শব্দে বুঝা যাচ্ছে সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে চাচ্ছে।

উপস্থিত সবাই রিদের চলে যাওয়ার দিকে করুণ ভাবে তাকিয়ে থাকল কয়েক পলক। কি থেকে কি হলো কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না। রিদ এই এলো ঘূর্ণিঝড়ের মতো, তান্ডবও করল, সবাইকে ভয়ে দেখিয়ে চলে গেল। রিদ কেন হঠাৎ রেগে গেল তাও বুঝতে পারছে না কেউ। আর মায়া? সেতো তখন থেকেই জড়সড় অবস্থায় দাদীর পিছনে লুকিয়ে হিচকি তুলে কান্না করেই চলছে। আজ যেন মায়ার কষ্টা একটু বেশি বেড়ে গেল। আর তার কারণও দুটো, এক মায়ার পরিটাকে রিদ ভেঙ্গেছে। দুই মায়া রিদকে তা না জেনেই তার সম্পর্কে উল্টা পাল্টা কথা বলেছে এতোদিন। এখন রিদ মায়াকে একা পেলে কি করবে সে ভয়ে কান্নাটা যেন আরও বেড়ে গেল।

আয়ান একপলক মায়ার দিকে তাকাল। মায়ার কান্না মিশ্রিত চোখ মুখ যেন তার ভিতরকার অস্থিরতাটা আরও বেশি বাড়িয়ে দিল। মায়া কান্না করাটা অসহ্যের নেয় ঠেকল। হাসফাস করার পরিস্থিতিতে দম বন্ধ লাগলে সে নিজেকে কন্ট্রোল করার প্রায়াশ চালিয়ে শক্ত মনে মায়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে যায়। হেনা খানের পিছন থেকে মায়ার হাত ধরে বের করে সামনে আনল।
কোমল কন্ঠে শুধালো…

—” কান্না থামাও মায়া। রিদ আর কিছুই করবে না তোমার সাথে। আমরা আছি তো তোমার পাশে। কাল আমি তোমাকে আরও অনেকগুলো পরী এনে দিব ঠিক আছে।

আয়ন এক পলক মায়ার কান্না জড়ানো মায়াময় চেহারাযটার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিহার শশুরবাড়ির সবার উদ্দেশ্য করে বলল…

—” আসলে আমরা সবাই আজকের জন্য সরি। সবকিছুই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ঘটা। বিব্রতকর পরিস্থিতির জন্য আমরা সত্যিই অনুতপ্ত।

আয়নের সরিতে পরিবেশ শিথিল হলো। সবাই আগের নেয় ঠিকঠাক বসে নিহা বিয়ের ডেট ফিক্স করল। সময় নিয়ে একত্রে সবাই দুপুরের খাওয়া দাওয়াও শেষ করল। বিকাল করে মেহমানদের বিদায় জানাল আয়ন।এই পুরোটা সময়টায় আয়ন যথেষ্ট মায়ার খেয়াল রেখেছে মাঝেমধ্যে এটা সেটা বলে হাসানোও চেষ্টা করেছে।

সবাই চলে যাওয়ার পর আয়ান মায়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে উপরের দিকে হাঁটা ধরে রিদ এ রুমে দিকে আর ভাবে ,,, না তার আজকে রিদের সাথে কথা বলতেই হবে মায়ের ব্যাপারে,,,, কি চাই ওহ সেটা জানতে হবে,,, আর ওর ফিলিংস সম্পর্কে ও তার জানা জরুরি নয়তো তার ডিসিশন নিতে পারছে না,,,, তাই আজকে ওর সবটা জনতে চাই রিদ সম্পর্কে কারণ মায়ার মনে রিদ এ জন্য কোনো ভালোবাসা নেই সেটা আরও অনেক আগেই বুঝতে পেরেছি,,, আর যেটা আছে রিদ জন্য মায়ার মনে সেটা হল শুধু ভয় যেটা রিদ নিজে তৈরি করেছে মায়ার মনে,,, এই ভয়ে মায়া রিদ এ সাথে কথা তো দূর সামনে ও যেতে চাই না ওর,,, তাহলে এত কি সমস্যা ওর মায়াকে নিয়ে,,,, এ সব ভাবতে ভাবতে আয়ন রিদ এর রুমে দিকে যেতে থাকে,,,,

এদিকে 💞
রিদ তার রুমের সাথে অ্যাটাচ করা সুইমিং পুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টি তার নীল পানি ওপর, পকেটে হাত দু হাত গুজিয়ে কিছু একটা ভেবে চলছে এক মনে,,, তখনই নিঃশব্দে পাশে এসে দাঁড়ায় আয়ন প্রশ্ন করে, মায়াকে ভালোবাসিস,, তারও দৃষ্টি সুইমিং পুলের নীল পানির উপর,,,(পকেটে দু হাত গুজিয়ে স্টং হয়ে দাঁড়ায় রিদ এর মতো)
এদিকে রিদ আয়ন এর দিকে না তাকিয়ের স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে ওঠে,,, “না”” (গম্ভীর ভাবে)

তাহলে ভয় দেখাচ্ছিস কেন ওকে,,, এরকম রাগ করিস কেন ওর সাথে,,, (আয়ন)

ওহ আমার অবাধ্য হচ্ছে তাই,, আর আমার অবাধ্য কোন কিছুই পছন্দ না,,, ওহ যত আমার অবাধ্য হবে আমি তত ওকে বাধ্য করবো,,, (না তাকিয়ে) (রিদ)

আয়ন ভ্রু কুঁচকে তাকাই রিদের দিকে,,, মায়া তর কোন কথায় অবাধ্য হয়েছে যে তুই ওকে বাধ্য করতে চাস,,, আর তুই বা কি চাস মায়া থেকে,,, তুই মায়াকে বল তুই কি চাস, নয়তো মায়া কিভাবে বুঝবে যে তুই কি চাস,,,, (আয়ন)

ওকে বুঝতে হবে এবং আমাকেও বুঝাতে হবে,,, ওর কাজের মাধ্যমে আমাকে যেমন অস্থিরতায় ভুগচ্ছে,, ঠিক তেমন ওর কাজে মাধ্যমে আমাকে বুঝাতে হবে যে আমি কি চাই,,, এবং আমার এই অস্থিরতাটা কিসের,,, যেভাবে আমাকে অস্থিরতায় ভুগচ্ছে ঠিক তেমন ভাবে ও আমাকে স্থির করতে হবে,,, নয়তো আমি ওর আবাধ্য কাজে বাধ্য করবোই,,, (রিদ)

অস্থিরতা,,,! সত্যি ওহ অস্থিরতার রানী একটা,, মানুষকে প্রচন্ড অস্থিরতায় ফেলে দেয় ওহ,,, বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে,,,, আবার বলে উঠে,,,, মায়াকে ভালবাসিস না, অথচ অস্থিরতায় ভুগছি এটা কেমন কথা,,, আর তাছাড়া তুই মায়ার জন্য বডিগার্ড ঠিক করেছিস তাই না,,,, যাতে কোনো ছেলে ওর সাথে মিসতে না পারে তাই না,,,, (সামনে দিকে তাকিয়ে)

রিদ ভ্রু কুঁচকে আয়ন এ দিকে তাকিয়ে, আবার সামনে দিকে তাকায়, তারপর স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে ওঠে,,, না আমি মায়াকে ভালবাসি না,,, আর তাছাড়া মায়া আমার অস্থিরতা ভালোবাসা না,,, আর রইলো বডিগার্ড দেয়ার তার পেছনে যথেস্ট কারণ আছে,,,, তা হল ওর সেফটি,,, কারণ ওর মধ্যে দাদা-দাদীর প্রানটা লুকিয়ে রয়েছে,,,, আমি ওদের সময় দিতে পারি না ব্যস্তার জন্য কিন্তুু মায়া আসায় ওদের জীবনে আলো ফুটে উঠেছে,,,, আর মায়ার মাধ্যমে দাদী তার অসম্পূর্ণ সপ্নগুলো পূরর্ণ করছে যেটা আমার বা ফুপি মাধ্যমে করতে পারিনি,,,, কারণ যখন ফুপি ছোট ছিল দাদী তখন তার চাকরি কাজে ব্যস্ত থাকায় ফুপিকে সময় দিতে পারিনি,,, আর নিজে হাতে মেয়েকে সাজিয়ে তুলতে পারিনি তার পুতুল মতো করে মেয়েকে সাজানো তাকে নিজের হাতে বড় করা এবং তার সব কাজ নিজের হাতে করা, যা কিছুই করতে পারেনি দাদী আর আমিও ছেলে হওয়ায় দাদীর সপ্নগুলো দমে যায়,কিন্তুু মায়া এ বাড়িতে আসার পর থেকে দাদীর মনে আবার অসম্পূর্ণ সপ্নগুলো জেগে ওঠে,,,,, তাই দাদী মায়াকে আগলে রাখে সবকিছু থেকে,,, এমনকি আমার থেকেও,,,,, তাই আমার কাছে মায়ার বেঁচে থাকাটা জরুরি,,, কারণ আমার বিজনেস ও পলিটিশিয়ানের শত্রু অনেক সাথে দাদাভাই ও,,,,, আর সেই শত্রুতার রেশ ধরে মায়ার ক্ষতি করা চেষ্টা করবে,,, যেটা মায়ার জন্য হানিকারক হতে পারে,,, সেজন্য আমি ওর সেফটি দিয়েছি অনেক আগেই ,,, কারণ দাদাভাই বাহিরে গেলে তার সাথে করে বডিগার্ড নিয়ে যায়,, আমিও বাহিরে গেলে বডিগার্ড নিয়ে যায়,,, আর দাদী সারাক্ষণ বাড়ির ভিতরে থাকে এবং বাড়ির আশেপাশে অসংখ্য বডিগার্ড থাকে তাই দাদী সেফ,,,, কিন্তু মায়া যখন বাহিরে যায় তখন আমাদের শত্রুরা ওকে এটাক করতে পারে তাই আমি ওর ভার্সিটি ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি,,, আর ওহ যে আমাদের ফ্যামিলির একজন সদস্য তা আমাদের শত্রুদের মধ্যে অনেকেই জেনে গেছে তাই আমি মায়াকে নিয়ে কোনো রকম রিক্স নিতে পারবোনা এতে ওর ভালো লাগুক বা না লাগুক এতে আমার কিছু যাই আসে না,,,, ওকে আমার বুন্দিনী হয়ে তাকাতেই হবে,,, আর এখানে আমি ভালোবাসা কিছুই দেখছি না,,, আমি মায়াকে ভালোবাসি না এটাই সত্যি,,,, কথা গুলো বলেই রিদ তার রুমে গিয়ে বারান্দায় চলে যায় এবং থাই গ্লাসের উপরে এক হাত রাখে আর অন্য হাত পকেটে গুজিয়ে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে দৃষ্টি তার স্থির করে, যেখানে মায়া বাগানের মূর্তিটাকে জরিয়ে ধরে হিচকি তুলে কান্না করে চলছে আর মূর্তিটাকে কানে কানে কিছু বলছে, আর অন্য হাত দিয়ে নাড়িয়ে নাড়িয়ে রিদের ভেঙে দেওয়া মূর্তিটাকে দেখাচ্ছে,,,,, যা রিদ পলকহীন চোখে দেখছে পরে কিছু একটা ভেবে নিচে মায়ার দিকে পা বাড়ায় রিদ,,,,,,

আয়ন তার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায় রিদ থেকে,,, রিদ নিজের মুখে বলা কথা গুলো আয়নকে মায়ার দিকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়,,, বিশেষ করে রিদ এর বলা এই কথাটি মাধ্যমে যে আমি মায়াকে ভালোবাসি না,,,,,
এখন কি হতে চলছে মায়ার জীবনে,,, আর কিহ বা মুড় নিবে এ তিনটি জীবনে,,,
মায়ার জীবনে কে আসবে আয়নে ভালোবাসা, নাকি রিদ এ অস্থিরতা, আর সাথে ভয়,,, কে মায়ার সবটা জুড়ে থাকবে রিদ নাকি আয়ন,,,,

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here