ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (৭০)

0
463

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৭০)

তানভীরের উম্মুক্ত বুকে নাক ঢুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লাবিবা। ভোরের নির্মল বাতাসে ছোট চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে। সূর্যের মৃদু আলোতে স্টেট চুলগুলো চিক চিক করছে। তানভীর চুলগুলো একসাথে করে বড় চুলের ভাঁজে নিলো। তারপর দড়ির মতো হাতে পেঁচাতে থাকলো। এখন আর উড়ছে না। কিছুক্ষন পর লাবিবাকে বললো, ” ঠিক আছো?”

” উহু। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সত্যি করে বলুন তো সত্যিই আপনার বুকে ব্যাথা নেই?”

” আপাতত নেই। কারণ ব্যাথার মেডিসিন এই মুহূর্তে আমার বুকে মিশে আছে। ”

” এতো কেন ভালোবাসেন আমায়? ”

” আমার রাণী তুমি, ফোটা লাল গোলাপ। যৌবন শেষ হয়ে গেলেও আমার নিকট তুমি প্রেমিকের ডায়েরীর ভাঁজে যত্নে রাখা শুষ্ক পাপড়ি গুলোর মতোই মূল্যবান থেকে যাবে। তোমার স্থান আমার হৃদয়মহলে। প্রতিটি কোণায় আজীবন তোমার বিচরণ। ”

লাবিবা মুখ তুলে তাকালো। চোখে চোখ রেখে মৃদু হেসে গালে ঠোট ছুঁইয়ে দিলো। ঘাড়ে দু হাত আবদ্ধ করলো।
” ঘুমান নি আপনি না? ”

” উঁহু।”

” কফি খাবেন? বানিয়ে আনি?”

” আমার অন্য কিছু চাই ।”

” চা?”
তানভীর দুষ্টু হাসলো। নাকে নাক ঘষতেই লাবিবার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো । তানভীরের বুকে লজ্জায় নুইয়ে পড়লো। মৃদু স্বরে বললো, ” সকাল হয়ে গেছে তো। ”

তানভীর কোমড় জড়িয়ে লাবিবাকে উপরের দিকে তুলে নিলো। সচ্ছ কাঁচের দরজায় পর্দা টেনে দিয়ে লাবিবাকে বিছানায় ছুড়ে ফেললো। এক অজানা শিহরণে লাবিবা মৃদু কাঁপতে লাগলো। নগ্ন বুকের নিচে লাবিবাকে ফেলে যেনো নিজের সাথে পিষে ফেলতে চাইলো। অত্যাচারিত থুতনি ফের অত্যাচারিত হলো। মাতাল করা ভয়েজে বললো, ” জান! আমি ভীষণ তৃষ্ণার্ত। ”

দিনটা লাবিবার জন্য ঈদের মতো। সমস্ত সুখ যেনো তানভীর তার পায়ের কাছে ঠেলে দিলো। লাবিবাকে কাছ ছাড়া করলো না। জুম্মার নামাজ পড়েই লাবিবাকে নিয়ে ছাদে এসে বসলো। ছাদে বড় ছাতার নিচে গোল করে বসার জায়গা করা আছে। লাবিবার চক্করে পড়ে বাড়ির সবাইকে ছাদেই লাঞ্চ করতে হলো। ফিরোজ খান জানালেন অনেক দিন পর ছাদে এলেন। দুপুরটা খুব ভালো কাটলো। খাওয়া শেষ হলেও লাবিবার মধ্যে নামার কোনো ইচ্ছা দেখা গেলো না। ছাদ খালি করে সবাই একে একে চলে গেলো। লাবিবা হাতের টিস্যু ফেলে দিয়ে তানভীরের কোলে বসে গলা জড়িয়ে ধরলো। তানভীর জিজ্ঞেস করল, ” গরম লাগছে না?”

” উহু। আমার গরম কম। ঠান্ডা বেশি। প্রাকৃতিক বাতাসে বসতে দারুন লাগছে তাইনা?”

তানভীর গায়ের শার্ট খুলে ফেললো। তার গরম লাগছে। লাবিবা একটু সরে বসতে চাইলো কিন্তু তানভীর তা হতে দিলে তো? চেপে ধরলো নিজের সাথে। একেবারে মিশিয়ে নিলো।
” এখন গরম লাগছে না? ”

” না। অল্পসিদ্ধ লাগছে। খাওয়ার অযোগ্য। দরকাচাঁ। ”

তানভীরের কথা লাবিবা বুঝলো না। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। তানভীর মাথা ঝাকালো। কপালে ঠুকে দিয়ে লাবিবাকে বললো ” টিউবলাইট।”

লাবিবা প্রতিবাদ জানালো, ” একদম না। ছোট্ট ছোট্ট কথা না বলে পুরো লাইন বললেই তো বুঝে যাই। কথা বলতে কি ট্যাক্স লাগে। ”

” আমার লাগে। ট্যাক্স দাও পুরোটা সিদ্ধ করে দিবো।”

” দেশে টাকার বড্ড অভাব। ”

” সুন্দরী নারীর অভাব নেই। চুমু দাও।”

জবেদা তানভীরকে ডাকতে এসেছিলো। বেচারা চোখের সামনে এমন কিছু দেখবে ধারণা করেনি। আচমকাই চিৎকার করে উঠলো। লাবিবা এক লাফে কোল থেকে উঠে দাঁড়ালো । তানভীর ঘাড় ফিরিয়ে জবেদার দিকে ছোট ছোট চোখে তাকালো। রোমান্সে ডিস্টার্বনেস তানভীরের মোটেই পছন্দ না। বিরক্তি নিয়ে প্রশ্ন করলো, ” এইভাবে মরা চিৎকার দিলে কেনো? জীবনে কোন দিন সাফের আঙ্কেলের কোলে উঠোনি? আশ্চার্য! ”

জবেদা ভিতু চোখে তানভীরের দিকে তাকালো। ফিরোজ খানের ড্রাইভার সাফেরের সাথে যে তার চক্কর চলছে একথা তানভীর কিভাবে জানলো? তাহলে কি সবাই জেনে গেলো? সর্বনাশ!
” ওভাবে দাড়িয়ে আছো কেন ? বাড়িতে দু দুটো বউ এসেছে। মনে রেখো। চলা ফেরা সাবধানে।”

জবেদা মাথা ঝাকালো। মিনমিনিয়ে জানতে চাইলো,
” ছোটভাই জান আপনে কেমনে জানলেন?”

” আমার চোখে কিছু হাইড থাকেনা। পরের হাজব্যান্ড এর দিকে নজর দেওয়া বন্ধ করো। লোকটার সংসার আছে। তোমার সাথে যা হয়েছে অন্য একটা মহিলার সাথে যেনো তা না হয়। কেন এসেছিলে? ”

জবেদা সাথে সাথে উত্তর দিতে পারলো না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের জলে নাকের জলে একেকার করতে লাগলো। তানভীর ধমকে দিতেই চমকে উঠলো। বললো,” বড় সাহেব ডাকে। ”

তানভীর লাবিবাকে নিয়ে ছাদ থেকে চলে আসলো। লাবিবার হাত মুঠোয় নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে এগুলো। আড়চোখে তাকাতেই খেয়ালে এলো লাবিবা গাল ফুলিয়ে রেখেছে। তানভীর হাত ছেড়ে বাহুতে জড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ” কি হয়েছে? বিদেশী টমেটো আমার পছন্দ না। দেশী টমেটোই ঠিক আছে।”

” আপনি বাড়ির সবার সামনেই এভাবে উদোম গায়ে থাকেন?”

” হুম। তো কি হয়েছে? বাড়িই তো। ”

” বাড়িতে জবেদা আপু,এখন আপনার নতুন ভাবীও আছে। আপনি আর নির্লজ্জ মতো শার্টলেস থাকবেন না। না চাইতেও কখনও কখনও মানুষের নজর লেগে যায়। ”

” সেজন্যই তো বিয়ে করে নজরফোটা আনলাম যাতে কেউ আর নজর না লাগাতে পারে। তুমিই আমার নজরফোটা। ”

লাবিবা কথায় ভুললো না। কনুইয়ে রাখা শার্টটা নিজেই পড়িয়ে দিলো। শার্টলেস তানভীর কে দেখে সে নিজেই তো সিডিউস হয়ে যায় ‌‌। কেউ নজর না লাগাক লজ্জা পাওয়া তো বাদ যাবে না। তার মধ্যে এগিয়ে লজ্জার গোডাউন রোজী।

তানভীর আসতেই কিছু বাক বিতন্ড কানে গেলো। বসতেই ফিরোজ খান জানালো তামিম ব্যবসায় বসবে। অতি শীঘ্রই তামিম গোল্ডের বিসনেসের দায়িত্ব নিতে চায়। এতোদিন এই ব্যবসা তানভীরের আয়ত্বে ছিলো ‌ । সে যেনো তামিমকে সবটা বুঝিয়ে দেয়। সোহানা দাবী জানালো আগে তার ছেলে হানিমুন থেকে ফিরে আসবে তারপর এসব ব্যবসা ট্যাবসাতে ঢুকবে তার আগে নয়। কিন্তু হানিমুন নিয়ে তামিমের কোনো মতামত নেই। ব্যবসার ক্ষেত্রে একটাই উত্তর পাপা যা বলে তাই।
তানভীর তাদের বাক বিতন্ডে উত্তর‌ করলো না। বরং তামিমের দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকালো যে তামিম একবার চোখে চোখ রেখেই চোখ ঘুরিয়ে নিলো। দ্বিতীয় বার আর তাকালো না। তানভীর চট করে লাবিবার দিকে তাকালো। ফের রোজীর দিকে দৃষ্টি ঘুরালো। মাথাতে একটা কথাই এলো,” এই মেয়েটা এমন মরে যাচ্ছে কেন?”

রোজীকে কখনও হাসতে দেখেনি তানভীর। মায়াবী একটা মুখ। এই মুখে হাসি থাকলে বেশ মানাতো। প্রান্তবন্ত দেখাতো রাণীর মতো।
” ভাবীর কি মতামত?”

হুট করে রোজীকে প্রশ্ন করাতে রোজী চমকে গেলো। সকলের দৃষ্টি রোজীতে আটকালো। রোজী আমতা আমতা করে বললো, ” আমি আবার কি বলবো?”

সোহানার দিকে চোখ পড়তেই ইশারায় সোহানা তার কথাতে মত দিতে বললো। রোজী অনেক চেষ্টা করেও বলতে পারলো না। কি বলবে? শ্বশুড় দেবরকে বলবে স্বামীর ব্যবসায় বসা পরে আগে আমাদের হানিমুন? কি লজ্জা জনক ব্যাপার। রোজীর প্রতি সোহানা বিরক্ত হলো। মেয়েটাকে তার বিশ্বাস হতে চায়না। অক্ষম মেয়ে একটা। আজ পর্যন্ত একদিন ও দেখলো না সকালে গোছল সেড়েছে। সংসার ভাঙা ছেলে ফের সংসারে না বসলে বউয়ের প্রতি যত্নশীল না হলে কি ভবিষ্যত হবে ছেলের? মায়ের যে কি চিন্তা তা মা ই জানে। কি হবে এতো সুন্দরী হয়ে যদি এতোদিনেও স্বামীকে বশ না করতে পারে? কি কপাল সোহানার! অনান্য শ্বাশুড়ি চায় ছেলেকে বউয়ের আঁচলের নিচ থেকে বের করতে আর সে এই বয়সে চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে ছেলেকে বউ আঁচলে বাঁধতে পারে না কেনো সেজন্য। বড় ছেলের ঘরের নাতী নাতনির মুখ দেখা তার হবে কিনা কে জানে? তার ছেলের ভবিষ্যত কিভাবে আসবে? সোহানার মনে হয় এই মুহূর্তে মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে। বাড়ির এক বউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ম্যানম্যান করছে আরেক বউ বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতেই পারলোনা। তার পাশে বসে আছে। সোহানা কপালে হাত দিতেই লাবিবা লক্ষ্য করলো। উপস্থিত বর্গের সামনে কোনো বাক্য ব্যয় করলো না। সোহানার হাত সরিয়ে দিয়ে নিজেই কপালে ম্যাসাজ করতে লাগলো।
তানভীর বললো,
” আগে হানিমুন থেকে ঘুরে আসো ভাবী। কাজের চক্করে পরে কবে সময় পাওয়া যাবে সে ঠিক নেই। ব্যবসা, ডাক্তারি একসাথে ট্যাকেল দেওয়া সহজ নয় ‌। দেশেই কোথাও ঘুরে আসো। এখন এবরড যাওয়ার প্রয়োজন নেই।”

রোজী মাথা নাড়ালো। চোখাচোখি হলো তামিমের সাথে। সিদ্ধান্ত সেটাই নেওয়া হলো। সোহানা নিজে ঠিক করলো হানিমুন প্লেস। শ্রীমঙ্গলে রিসোর্ট বুক করলো। তার চেষ্টার কমতি নেই। হানিমুনে পাঠালে যদি তাদের মধ্যে সবটা ঠিকঠাক হয়।

বৃহষ্পতি , শুক্র, শনি তিনদিনের জন্য দুটো কটেজ বুক করা হলো। দুই ছেলেকেই পাঠাবে সে হানিমুনে। সোহানার এমন কাজে ফিরোজ খান ঘর কাঁপিয়ে হাসলো। সোহানা মিথ্যা মিথ্যা চোখ পাকালো। তারপর নিজেই হেসে দিলো। ফিরোজ বললো,
” মাই ডার্লি তুমি কি পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাইছো?”

” তোমার মনে আছে নেতা সাহেব আমাদের একসাথে কাটানো সময় গুলোর কথা? এখান থেকে ওখানে উড়ে উড়ে বেড়াতাম দুজন মিলে। তোমার রাজনীতির স্টার্টিং এ আমাকে নিয়ে কতো ভয়! একদম চোঁখের আড়ালে রাখতে চাইতেনা। আলাদা ক্যারিয়ার না গড়ে তোমাকে নিয়েই ক্যারিয়ার গড়লাম। মহিলা সংঘের লিডার হলাম। তোমাকে ঘিরেই আমার সব। দু সন্তানের জননী হলাম। কত সুন্দর ছিলো সময় গুলো। এখনো মনে হয় এইতো কিছুদিন আগের কথা। আমাদের মধ্যে বন্ডিং বিশ্বস্ততা ভালোবাসার জোরে আমরা আজো কত সুখী। তোমার সাথে এতোগুলো বছর কাটিয়ে দিতে পেরেছি। আমরা যদি এতো ভালো সময় কাটাতে পারি আমার ছেলেরা কেনো পারবেনা? এক ছেলে ভালোবাসা হারিয়ে উম্মাদ হয়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিলো আরেক ছেলে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতগুলো বছর লড়াই করে গেলো। তাদের জীবন এতো কঠিন কেনো? কেনো সহজ হয়না? তারা কেনো সুখী হবেনা বলতে পারো?”

সোহানা বলতে বলতেই ইমোশোনাল হয়ে পড়লো। ফিরোজ খান সোহানাকে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বললো। সোহানা আরার বলতে লাগলো,
” বয়স তো কম হলোনা। এই বয়সে তোমার বন্ধুরা অনেকেই আজ নেই। আল্লাহ আমাদের মেয়ে দেয়নি। দু দুটো ছেলে। তাদের সুখ দেখে যাবো না? নাতি নাতনির মুখ কি দেখা হবে না? আমি মা। আমার সন্তানদের সুখের চেয়ে বড় আমার কাছে আর কিছুই না।”

” বউ শান্ত হও। দোয়া করো সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের সন্তানরাও একদিন অনেক সুখী হবে।”

(গল্পটি সম্পূর্ণরুপে কপি পোস্ট করা নিষেধ। তবে শেয়ার দিতে পারেন। অনান্য আইডি বা পেইজে কপি, ওয়েবসাইটে পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও বা থিম কপি করার অনুমতি নেই। )
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here