ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (৭১)

0
524

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৭১)

তামিম অতিরিক্ত রোগী না দেখে এগারোটা নাগাদ বাসায় ফিরলো। জবেদাকে ডিনার উপরে পাঠিয়ে দিতে বলে রুমে চলে গেলো। রুমে আজ ড্রীম লাইটের আলো জ্বালানো দেখতে পেল না। এল ই ডি লাইটের আলোতে দিনের মতো দৃশ্যমান। তামিম রোজীকে পেলো বই হাতে বসে। নয়টার ঘরে ঘুমোতে যাওয়া রোজীকে জেগে থাকতে দেখে সামান্য অবাক হলো।
” ঘুমাও নি?”

রোজী তামিমের গলা পেয়ে ফিরে তাকালো। চমৎকার হেসে বই বন্ধ করলো। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
” আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আপনার সাথে গল্প করবো। ”

তামিম এই কথা শুনতে একদমই প্রস্তুত ছিলো না। এতোটা চেঞ্জ? মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।
” ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

তামিম সাওয়ার নিলো। হসপিটাল থেকে এসে সাওয়ার না নিলে গা থেকে হসপিটালের স্মেল যেতেই চায়না।

ফিরে এসে দেখে বসেই আছে তার জন্য। তার দু চোখ বন্ধ। তা দেখে তামিমের বেশ খারাপ লাগলো। জেগে থাকতে পারেনা তবুও মেয়েটা তার জন্য কষ্ট করে অপেক্ষা করছিলো। ভাবতে ভাবতেই তামিম থেমে গেলো। বিয়ের আগের কথা মনে পড়লো। তখন তো রোজী এভাবে ঘুমোতো না? এমন ও রাত গেছে সে সারারাত জেগে থাকতো। তাহলে এখন কেনো এমন হয়? রোজীর কি শরীর খারাপ? মেয়েটা তো কিছু বলেও না। তামিম গিয়ে মেডিসিন বক্স চেক করলো। নাতো। ভিটামিন ছাড়া কিছুই পেলো না। ভিটামিন ট্যাবলেট তামিম এনে দিয়েছিলো। রোজী ঠিকঠাক খায়নি দেখে বিরক্ত হলো। বিছানায় বসেই ঝিমুচ্ছে দেখে তামিম রোজীকে ঠিকঠাক শোয়ালো।‌ গাঁয়ের উপর চাদর টেনে নিজেও শুয়ে পড়লো। বেচারার গল্প হলোনা ভেবেই হেসে ফেললো। বিরক্তি রেশ কেটে চোখে ঘুম ভর করলো।

বিয়ের অনুষ্ঠানের পর এই প্রথম কলেজে আসা লাবিবার। ওড়না দিয়ে নাক অব্দি ঢেকে হাঁটছে। মোটেই আসতে চাইছিলো না। তানভীরের ধমক খেয়ে আসতে হলো। সবাই তো সব জানে। এখন কেউ যদি দেখে বলে ” ঐতো, ঐযে প্রিন্সিপালের বউ যাচ্ছে।”

লাবিবার লজ্জা লাগবে না? এতো লজ্জা কোথায় রাখবে ? হলোও তাই। ডিপার্টমেন্টে পা রাখতেই ফ্রেন্ডরা ঘিরে ধরেছে।
” আমাদের ম্যাম ইজ কামিং। ম্যাম আসুন আসুন। আপনি আসবেন আমরা ভাবতেও পারিনি।”

” কেন?”

” ম্যাম আমরা ভেবেছিলাম আপনি যাস্ট এক্সাম হলে এসে এক্সামটা দিয়ে যাবেন। সরি ম্যাম।”

” ম্যাম কে? আপনি কে? লাব্বু কে?”

” আপনি ম্যাম। ম্যাম আসুন। ম্যাম আমরা নোটস করে রেখেছি। আপনি চাইলে নিতে পারেন। ম্যাম কিছু খাবেন?”

লাবিবা ধমক দিলো।
” সেট আপ। আমি লাবিবা। তোদের দোস্ত। ”

” ম্যাম শান্ত হয়ে বসুন।” লাবিবা দাত কটমট করে ধপ করে বসলো। তখনি স্যার প্রবেশ করলো।

” কি হয়েছে? তোমরা একসাথে হয়েছো কেন?”

স্যারের গলা পেয়ে যে যার জায়গায় তাড়াহুড়ো করে বসে পড়লো। প্রেজেন্ট নেওয়ার সময় লাবিবার অনুপস্থিতি দেখে বললো,” ম্যাম আপনি অনেক দিন মিসিং। ৭৫% এটেন্ডেন্স থাকলে খুব ভালো হয়। ”

লাবিবা মাথা জাঁকালো। স্যার তাকে সম্মান দিলো নাকি মনে মনে হাসলো বুঝতে পারলো না। ডিপার্টমেন্টের মামা থেকে শুরু করে দারোয়ান পর্যন্ত প্রত্যেকটা কর্মচারী যখন লাবিবাকে ম্যাম বলে সম্মান দিতে লাগলো তখন লাবিবা বড্ড অসহায় ফিল করলো। হুট করেই সবার সাথে ফাজলামি করা ছোট মানুষটাকে যখন এমনভাবে সম্মান দিতে থাকে তখন নিজের সাথেই নিজের প্রব্লেম ক্রিয়েট হয়। লাবিবার অবস্থা দেখে মজা নিচ্ছে উর্মিলা নাকিব। হুট করেই নাকিব চেহারা পাল্টে ফেললো। দুঃখী মানুষের এক্সপ্রেশন দিলো।
” আমি স্যারের একমাত্র বড় শেলক। তাদের কি উচিত না আমাকে একটু খানি সম্মান দেওয়া? স্যার না ডাকুক ভাইজান বলে তো সম্মোধন করতে পারে। তোকে বিয়ে দিয়ে কি হলো লাব্বু? যদি কোনো এডভান্টেজই না পাই?”

নাকিবের কথা শোনে উর্মিলা চেতে গেলো।
” কিহ? কত্তো বড় মিথ্যুক তুই। এডভান্টেজ খুজঁছিস? গতকালই তুই স্যারের সাথে খালি পেটে রেস্টুরেন্টে ঢুকেছিলি বের হয়ছিস ভরা পেটে সেটা কি ভুলে গেলি?”

” তোর জন্য যে বার্গার নিয়ে এলাম তার বেলায়?”

” এই তোরা থামবি? খান সাহেব কোথায়? খুঁজতে হবে।এতোদিনের পরিচিত কলেজ আমার হুট করেই অপরিচিত লাগছে।”

” নো খুজাঁখুজিঁ। আরো দুটো ক্লাস বাকি। ”

” আমার পরের ক্লাস গুলো আজ করছিনা । চলে যাচ্ছি। ”

লাবিবা উর্মিলার হাত টেনে ধরলো। ” কোথায় যাস?”

নাকিব হাসতে হাসতে বললো, ” কোথায় আর যাবে? ঐ রেস্টুরেন্টে। ডেট শেষ হলে আমার জন্য পার্সেল নিয়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে জাস্ট একটা কল দিস একদম হাজির।”

লাবিবা জানতে চাইলো, “কাহিনী কি?”

” ঐ যে আছে না?”

” কি আছে?”

” আরে তোর কেমন জানি দেবর আকাশ। এরপর আকাশ বাতাস থেকে আমার ট্রিট পাওয়া শুরু হবে। লালে লাল বান্ধুবীদের মাল!”

” এতোদূর!”

উর্মিলা অপরাধী লুক দিলো। মিন মিন করে বললো,
” বেশী না দোস্ত। ঐ খাওয়া দাওয়া করতেছি আর কি।”

“একা একা খাওয়া ভালো না দোস্ত। চল আজ একসাথেই খাবো।”

উর্মিলা ভেবেছিলো লাবিবার দেবর যেহেতু লাবিবা হয়তো কোনো রিয়েক্ট করবে। তা না তার সাথে তাল মেলালো। খুশিতে আত্মহারা হয়ে লাবিবার হাত চেপে ধরলো।
” দোস্ত চল। অনেক ক্ষন থেকে ওয়েট করছে। আজকে মালটাকে ঢালাবো।”

লাবিবা, উর্মিলার পেছন পেছন নাকিব ও দৌড় দিলো।

লাবিবাকে দেখে আকাশের ভাবী ভাবী বলে মুখ থেকে যেন ফুলচন্দন পড়ছে। উর্মিলাকে কিছুক্ষনের ভুলেই গিয়েছে। উর্মিলা কড়া চোখে আকাশের আদিক্ষ্যেতা দেখছে আর ফুঁসছে। পাশ থেকে কানের কাছে মুখ নিয়ে নাকিব পিন্চ কাটে,
” সুন্দরী মেয়ে দেখলে এর কি গলে যাওয়ার অভ্যাস আছে? সত্যি করে বলতো তুই জেনে শুনে পটলি কিভাবে?”

” কথা বলিস না।”

” এর ড্রামা তো শেষ হচ্ছে না। কিছু একটা করতে হবে।”

” ফ্রিতে ড্রামা দেখ। চুপ যা।”

নাকিব উর্মিলার কথা কানে তুললে তো! মাথার উপর হাত বাড়িয়ে নাড়ায়,” হ্যালো ব্রাদার, আমরাও আছি। খাবার কি পাবো নাকি চলে যাবো?”

এ কি ধরনের আচরণ? লাবিবা পেছন ঘুরেই নাকিবের মুখে টিস্যু ঢুকিয়ে দিলো। মান সম্মান শেষ। এই ছেলেটা তানভীরের ক্লোজ। এর কাছেই নিজের বন্ধু খাবার চেয়ে ছ্যাড়ডামি করছে! নাকিব মুখ থেকে টিস্যু বের করে ফেললো। এমন ভাব যেনো তাকে আচমকাই এট্যাক করা হয়েছে। ” খাবার খেতে এসেছি,জীবাণু কেন মুখে ঠেলে দিচ্ছিস ব্রো?”

” তুই ঐ টেবিলে গিয়ে বস। যত ইচ্ছা খা। সব বিল আমি দিবো। যা। এক্ষুনি যাবি। উঠ। ”

আকাশ লাবিবাকে থামালো। ” আরে ভাবী কুল। নাকিব অনেক ফানি । আমি সেটা জানি। নকিব অর্ডার করো। আজকের ট্রিট আমার হচ্ছে। ভাবী স্পেশাল ট্রিট।”

উর্মিলার মেজাজ তুঙ্গে চলে গেলো। বসা থেকে লাফ দেবার প্রস্তুতি নিয়েছিল। ওমনি লাবিবা হাত টেবিলের নিচে হাত চেপে ধরলো। ছেড়ে দিয়ে হাতে দুবার হাত স্পর্শ করলো। নাকিব নিজের মতে ফাস্ট ফুড অর্ডার করে খেতে লাগলো। এদিকে উর্মিলা রাগে ফুসফুস করছে। মনে মনে আকাশকের গোষ্টী উদ্ধার করছে। ভেবেছিলো মজা নিবে। এখন কদিনের ভাবী পেয়ে নিজেই মজা লুটছে। পারিপার্শ্বিক অনেক আলাপের পর আকাশ বলে, “তো ভাবী বলছিলাম কি। শুনলেনই তো বাবা অনেক স্ট্রীক পার্সন। আমার কথার ধার ধারে না। সাহসের জন্য বলতেও হয়তো পারবো না। আপনি তো জেনেই গেছেন উর্মি আর আমার সম্পর্কের কথা। আপনার বান্ধুবী আর দেবরের জন্য কিছু করবেন না?”

” কি করবো?”

” জাস্ট ভাইকে ভালো ভালো কথা বলে জানিয়ে রাখবেন। ভাইয়ের মন যেন চেঞ্জ না হয়। বাবা যদিও কারো কথা মাথায় নেয় না। তবে ভাই বললে একবার হলেও চিন্তা করে দেখবে। ”

আকাশের কথা শুনে উর্মিলা তো অবাক হয়ে গেলো । সে তো টাইম পাস করছিল। আর এই ছেলে দেখি পুরো সিরিয়াস! এতোক্ষন ভাবী ভাবী বলে এজন্য মুখ থেকে মধু ঝড়ছিল? উর্মিলা ভেবেছিল যে ভাবে চপরচপর করে কেরেক্টারের প্রব্লেম আছে। আর এদিকে এই ছেলে তার বিয়ের প্রসেস শুরু করছে।

তানভীর লাবিবাকে কলেজে পেল না। যেহেতু এখন সবাই তার স্ত্রী বলে জানে সেহেতু লাবিবার সব খবরই তার কানে চলে আসে। জাফর স্যার নিজে এসে জানিয়ে গেছে এটেন্ডেন্সে লাবিবা থাকলেও ক্লাসে নেই।
ক্লাস ছেড়ে কোথায় যাবে? যেখানেই যাক জানিয়ে যাবে না? তানভীরের রাগ হতে লাগলো। ফোন চেক করলো নো কল নো টেক্সট। ছুটির পর তানভীর বেরিয়ে বাড়িতে একটা কল করলো। জবেদা ফোন তুলেছে। জিজ্ঞেস করলো, ” লাবিবা ফিরেছে?”

” না। তয় বড়বউ ফিরেছে। ”

” আচ্ছা।”

ফোন কেটে লাবিবার নাম্বারে কল করলো। রিং হয়ে অফ হয়ে গেলো। পর পর তিনবার না পেয়ে নাকিবকে কল করলো। নাকিব জানালো,
” স্যার আমরা রেস্টুরেন্টে আছি।”

” কলেজে ফিরে আসো এক্ষুনি। ”

” একটু সময় দিন স্যার। জরুরী আলোচনা চলছে। সুন্দরী উর্মিলার বিয়ে নিয়ে। ঘটক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন আপনি। ”

নাকিবের কথা শুনে তানভীর হুট করে বিষম খেল। নিজের সাদা গাড়িটির বনেটে চোখ ঘুরে গেলো। প্রায় বছর খানেক আগের এক ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো। এখানেই এমন সময়েই কালো মার্কারে গুটি গুটি অক্ষরে লাবিবার লেখা দেখতে পেয়েছিল,
” আমি ভার্সিটির মেয়েদের ধরে ধরে বিয়ে দেই, ঘটক মি. তানভীর খান। ”

( গল্পটি সম্পূর্ণরুপে কপি পোস্ট করা নিষেধ। তবে শেয়ার দিতে পারেন। অনান্য আইডি বা পেইজে কপি, ওয়েবসাইটে পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও বা থিম কপি করার অনুমতি নেই। )
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here