#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ১৫
ফায়াজের কথা শুনে মাহানুর ভেবছেকা খেয়ে যায়। বড় ভাইয়ের সামনে আবার একটু লজ্জিত অনুভব করলো। সিয়াম বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে বলল,
-কিসের ভুত? কী সব বলছো ফায়াজ ব্রো?
-আরে তোমরা কথা না বলে এসো তো।
মাহানুর, সিয়াম মুহিব আর ফায়াজের সাথে রুমে আসে। মাহানুর রুমের ভিতরে ঢুকে দেখে রুম একেবারে খালি আবার লাইটও জ্বালানো। মাহানুর ফায়াজকে বলল,
-দেখেছো কিছুই নেই তোমরা ভুল দেখেছো। যাও নিচে যেয়ে খেলা কর।
ফায়াজ বোনের কথায় মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। মাহানুর চেঁচিয়ে মুহিবকে বলল,
-তোর সাথে থাকতে থাকতে আমার পিচ্চি ভাইটাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কীসব বলছে ও! মুহিবের বাচ্চা ভালো হয়ে যা সময় আছে।
-আমি সত্যি বলতেসি ভাই এখানে কেউ ছিল।
-চোপ আর একটাও কথা বলবি না। তোদের জন্য শান্তি নাই আমার।
মাহানুর ক্লান্ত হয়ে বিছানায় বসে পরলো। এতক্ষন পর সিয়াম খেয়াল করলো মাহানুরকে। বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলল,
-তুই অহনার মতো ভুত সাজলি না?
-না আমি সিম্পলই ভালো। যা তোরা নিচে যেয়ে দেখ স্টেজ রেডি কিনা। কিছুক্ষন পরই ভাবিকে নিয়ে বসানো হবে।
-আইচ্ছা।
সিয়াম, মুহিব চলে গেলো। মাহানুর বসা থেকে উঠে দরজা লাগিয়ে দেয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বুকের ওড়না খুলে ঠিক করতে থাকে। গাঢ় সবুজ রঙের লেহেঙ্গা পরেছে মাহানুর আর অহনা। মাহানুরের লেহেঙ্গার ওপরের টপ্সটা ছোট। পেট দেখা যাচ্ছে। তাই সে নিজেই ওড়না সুন্দর করে শরীরে পেঁচিয়ে নিচ্ছে। অহনা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। মাহানুর আয়নায় অহনাকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে যায়। অবাক হয়ে বলে,
-তুই রুমে কী করছিস? আমি আরো ভাবলাম নিচে।
-ই ইয়ে মমানে ওয়াশরুম গিয়েছিলাম।
তুতলিয়ে বলল অহনা। চোরা চোখে আশেপাশে তাকাচ্ছে। মাহানুর এবার বুঝলো মুহিবরা আসলে কোন ভুত দেখেছে। নিজের কাজ করতে করতেই বলল,
-তুই ওয়াশরুমে ছিলি আর এখানে কত কান্ড হয়ে গেলো! মিস করলি।
-কী হয়েছে?
-মুহিব আর ফায়াজ নাকি এই রুমে কিছুক্ষন আগেই দুইজন ভুতকে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। ফায়াজ তো বলল ভুতরা নাকি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি’সসি দিচ্ছিলো!
-ছি ছি! কোনো কি’সসি মিসসি করিনি আমরা! ওরা ভুল দেখেছে।
মাহানুর অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। হাসতে হাসতে বিছানায় বসে পরলো। অহনা কাছুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মাহানুরকে এভাবে হাসতে দেখে বলল,
-বইন তুই তো অন্তুত আমাকে বুঝ। হাসিস না।
-আচ্ছা আচ্ছা।
-নিচে যাবি না?
-হুম চল।
উঁচু স্বরে গানবাজনার আওয়াজে পরিবেশ আরো গমগম হয়ে উঠলো। অনেক বড় স্টেজ করা হয়েছে। মেহেদী ফাঙ্কশন যেহেতু তাই ছেলেদের আকর্ষণ কমই। আয়াস কিনারে বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। মাহানুর, সায়রিন, ইকরা সহ বাকি সব মেয়েরা সুনহেরাকে ধরে ধরে নিয়ে আসে। আয়াস ঘাড় ঘুরিয়ে একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। স্টেজে বসানো হলো সুনহেরাকে। মেহেদী দেওয়ার আর্টিস্টরা চলে এসেছে। সুনহেরার দুইহাতে দুইজন মেহেদী দিতে বসে। মেয়েরা নিজেদের মতো করে নাচছে। মাহানুর আবার মেহেদী দেওয়া ভীষণ অপছন্দ করে। মেহেদীর স্মেলই সে সহ্য করতে পারে না। তাই জোর করেও কেউ তাকে মেহেদী দিতে পারলো। মাহানুর আর সায়রিন মেহেদী নিয়ে দৌড়ে গেলো আয়াসের কাছে। আয়াস তাঁদের দেখে বলল,
-ছেলে মানুষরা মেহেদী দেয় না ভাবি।
-ঐ তোকে কে বলেছে ছেলেরা মেহেদী দেয় না! ভাবি ওকে জোর করে দিয়ে দেও।
-হ্যাঁ দেবার জি একটু চুপচাপ দাঁড়ান।
সায়রিন সুনহেরার নাম লিখে দেয় আয়াসের হাতে। তারপর সবাই স্টেজে এসে বসে। সুনহেরার কাজিনরা মাহানুকে টেনে তাঁদের সাথে নাচতে নিয়ে যায়। সুনহেরার পাশে অহনা বসেছিল। সেও মেহেদী দিচ্ছে। ইকরা আশেপাশে তাকিয়ে আরহামকে খুঁজছে। কোথায়ও না পেয়ে সুনহেরাকে জিগ্যেস করলো,
-সুনহেরা তোমার ভাইয়া কোথায়?
-ভাইয়া একটু কাজে বাহিরে গিয়েছে। এসে পরবে।
-ওহ আচ্ছা।
মুখ ছোট করে ফেললো সে। সুনহেরা অহনার কানে কানে জিগ্যেস করলো,
-অহনা আপু রাতের প্রয়োজনীয় সব কিছু আনা হয়েছে?
-অল ডান। তোমার যাহাবাজ ননদ থাকতে এইসব ছোট বিষয় টেনশন করতে নেই ভাবি।
-ওকে। আই এম সো এক্সসাইটেড।
মেহেদী ফাঙ্কশন শেষ হয় রাত বারোটায়। সবাই একসাথে ডিনার করে যার যার রুমে চলে যায় রেস্ট করতে। ছেলেরাও ক্লান্ত থাকায় ঘুমোতে চলে যায়। মাহানুর, অহনা কোনোরকম জামা পরিবর্তন করে কতগুলো বড় বড় ব্যাগ নিয়ে মৃদু আলোতে পা টিপে টিপে সুনহেরার রুমে আসে। রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দরজা লাগাতেই একসাথে কয়েকজন “ইয়াহু” করে উঠলো। মেয়েদের আগের থেকে প্ল্যান ছিল তারা একটা গার্লস পার্টি করবে। সবাই আনকমন ড্রেস পরবে, গানবাজনা হবে, উরাধুরা নাচ হবে আর হ্যাঁ একটুআরেকটু ড্রিংক্স করা হবে। এইসব কিছু প্ল্যান করেছে মাহানুর আর সায়রিন মিলে। আর জিনিস এনেছে মাহানুর। রুমে উপস্থিত আছে মাহানুর,সায়রিন, অহনা, সুনহেরা, ইকরা, ইরা, সুনহেরার বেস্টফ্রেন্ড তোহফা, সুনহেরার দুইজন কাজিন সেফা, শিখা, আর আয়াসের মামাতো বোন হুমায়রা। তোহফা, অহনা আর ইরা মিলে রুম সাজাতে থাকে। একটু পার্টি রুম বানাচ্ছে। মাহানুর আর সায়রিন মিলে খাবারের যাবতীয় জিনিস বের করছে। পার্টিতে একটা টুইস্ট আছে যেটা সুনহেরার প্ল্যান করা। সে কতগুলো কাগজের চিট বানিয়েছে। এই চিট গুলোর মধ্যে কে কিভাবে সাজবে বা ড্রেসাপ করবে সেটা লিখা আছে। সবাই একটা একটা করে চিট তুলবে। তারপর যার ভাগ্যে যেটা পরবে তাকে ঐ লুকই ক্রিটেড করতে হবে। সুনহেরা চিট গুলো বের করে সবার আকর্ষণ পাওয়ার জন্য বলল,
-হ্যালো গাইস। সবাই এখানে আসেন এখন আমাদের পার্টির মেইন থিম দেওয়া হবে।
সবাই একসাথে জড়ো হয়। সুনহেরা সবাইকে একটি চিট তুলতে বলে। মাহানুর অনেক ভয়ে ভয়ে চিট তুলে। কাজল খুলতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় তার। অহনা নাচতে নাচতে বলে,
-ইয়ে আমাকে প্রিন্সেস সাজতে হবে। মাহানুর তোর টা কী?
মাহানুর ভোঁতা মুখে কাগজ অহনার হাতে ধরিয়ে দেয়। অহনা কাগজে চোখ বুলিয়ে উঁচু স্বরে বলল,
-গাইস সবচেয়ে ক্লাসিক হলো মাহানুরের টা। আমাদের ঘাড়তেড়া মাহানুরকে আজ আইটেমগার্ল সাজতে হবে।
সুনহেরা বলল,
-ইয়েয়। আমি এটা স্পেশালি মাহানুর আপুর জন্য লিখেছিলাম। আরেকটা ক্লাসিক জিনিস ছিল ঐটা কে পেয়েছে?
ইকরা মুখ কালো করে হাত উঁচু করে। থমথমে কণ্ঠে বলল,
-আমাকে ডন সাজতে হবে।
সবাই একসাথে হেসে উঠলো। মাহানুর মাথায় হাত দিয়ে বলল,
-না ভাই আমার ধারা এটা হবে না।
-আপু প্লিস না করবেন না। আমার জন্য রাজি হয়ে যান। প্লিস।
সুনহেরার ইনোসেন্ট মুখ দেখে আর না করতে পারলো না মাহানুর।
সবাই নিজেদের পোশাক পরে অল মোস্ট রেডি। মাহানুর বসে বসে সবাইকে দেখছে। সুনহেরা জলপরী সেজেছে। অনেক বেশি কিউট লাগছে তাকে। ইকরাকে দেখে মাহানুর ফিক করে হেসে দেয়। অহনা কোমরে হাত দিয়ে মাহানুরের সামনে এসে দাঁড়ায়। জোর করে বসা থেকে উঠায়। হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুম পাঠিয়ে দেয়। ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে ড্রেস বের করে মাহানুর। লাল রঙের ফিনফিনে পাতলা একটি শাড়ী। মাহানুর মুখ বাঁকায়। ব্লাউজ দেখে তো তার চোখ বড় হয়ে গেলো। বিড়বিড় করে বলল,
-দুর বা’ল ইকরার চিট আমার ভাগ্যে পরলেও খুশিতে হতাম।
কোনোরকম শাড়ীটা গায়ে জড়িয়ে বের হয় মাহানুর। রুমের রূপই চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। কোনো ক্লাব থেকে কম লাগছে না। দুইটা বেড একসাথে করে স্টেজ বানানো হয়েছে। রঙবেরঙের লাইট। মাহানুর ওড়না পেঁচিয়ে রেখেছে বুকে। অহনা মাহানুরকে আয়নার সামনে বসিয়ে দিলো। ইকরা একদম নিজের মন মতো করে সাজিয়ে দেয় মাহানুরকে। পুরাই আইটেমগার্ল লাগছে মাহানুরকে। মাহানুর অহনাকে বলল,
-দোস্ত একটা বোতল দে।
-মাহানুর আপু ড্রিংক করতে পারো?
অহনা বোতল এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
-এনার অভ্যাস আছে বুঝলে ভাবি।
মাহানুর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঢোক ঢোক করে এক চুমুকে সম্পূর্ণ বোতল খালি করে দেয়। সুনহেরা অবিশ্বাস নয়নে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইল। মাথা হ্যাং হওয়ায় মাহানুর মাথা চেপে ধরলো দুইহাত দিয়ে। খানিকটা সময় অতিবাহি হতেই মাহানুর মাথা সোজা করে উঠে দাঁড়ায়। হেলেদুলে হাঁটছে সে। নে’শা ধরে গিয়েছে মাহানুরের। উপর থেকে ওড়না ফেলে দেয়। বেডের ওপর মানে স্টেজের ওপরে উঠে বলল,
-গার্লস লেটস স্টার্ট দা পার্টি। মিউসিক প্লিস।
সবাই একসাথে খুশিতে চিৎকার করে উঠলো। গান শুরু হয়ে গেলো। যে যার মতো নাচছে। সবাই একসাথে ড্রিংক করে। উরাধুরা নাচতে থাকে। নাচতে নাচতে এক পর্যায় সুনহেরা ক্লান্ত স্বরে বলল,
-গাইস এখন আমাদের সবার মনোরঞ্জন করবে আমাদের আইটেমগার্ল এন্ড মিস্টার ডন। তালি প্লিস।
মোটামুটি সবারই নে’শা চড়ে গিয়েছে। একসাথে তালি দিচ্ছে সবাই।
সহসা গান বেজে উঠে “উলা লা”।(আমি গানটান পারি না তাই বলতে পারলাম না )। মাহানুর স্টেজের ওপরে উঠে গানের তালের সাথে নাচতে থাকে। ইকরা ছেলেদের মতো নাচছে আর মাহানুর মেয়ের মতো। নাচের তালে মশগুল মাহানুর শাড়ীর আঁচল কোমরে গুঁজে কোমর দুলিয়ে নাচছে। সবাই বেশ এনজয় করছে। এভাবেই তাঁদের নাচগান চলতে থাকে।
__________________
ভোর পাঁচটায় রিসোর্টে আসে আরহাম। পেন্ট আর টি-শার্ট পরা সে। অনেক তাড়াহুড়ো করে এসেছে তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চারপাশ অন্ধকার। এখনও সম্পূর্ণ আলো ফুটেনি। আরহাম আশেপাশে তাকিয়ে নিচতলা পেরিয়ে দোতালায় উঠে। লম্বা বারান্দা দিয়ে হাঁটার সময় আচমকা সে কারো শব্দ শুনতে পায়। বারান্দার একদম কর্নারের দাঁড়িয়ে কেউ বমি করছে। আরহাম অন্ধকারে মৃদু আলোতে মানুষটির মুখ দেখতে পেলো না। ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে কিছুটা সামনে যেতেই ব্যক্তিটিকে চিনে ফেললো আরহাম। লাইট বন্ধ করে ধুপধাপ পা ফেলে এগিয়ে গেলো।
-মাহানুর!
মাহানুর কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। ব’মি করতে করতে কাহিল সে। আরহাম মাহানুরের বেসভূষ দেখে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। মাহানুর ব’মি করে ক্লান্ত হয়ে নিচে বসে পরতে নিলে আরহাম তাকে জড়িয়ে ধরে। মাহানুর আরহামকে দেখে হাসতে হাসতে বলল,
-আরেহ! আমার কিউট ভাবি জিরাফ ভাই।
মাহানুরের কথাবার্তাও কেমন যেনো ঘটকা লাগলো আরহামের। ভালোভাবে তাকাতেও পারছে না মাহানুর। আরহাম মাহানুরের গালে হাত দিয়ে মৃদু চাপর দিয়ে বলল,
-মাহানুর উঠো। নিজের রুমে চলো।
মাহানুর একা একাই হাসছে। আরহামের টি-শার্ট মুঠি করে ধরে রেখেছে। অন্যমনস্ক হয়ে হাসতে হাসতে বলল,
-এক দুই তিন, সুনহেরার ভাই বাজায় বীন। জিরাফ দা সাপুড়ে!
আরহামের শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো। মাহানুরের মুখ থেকে কেমন একটা স্মেল পেলো সে। পূর্ণ দৃষ্টিতে মাহানুরের দিকে তাকাতেই আরহামের মস্তিক এলোমেলো হয়ে এলো। কেমন উদ্ভুত ভাবে শাড়ী পরেছে মাহানুর! পেট, কোমর সবই দৃশ্যমান। আরহাম চোয়াল শক্ত করে মাহানুরের কোমর থেকে আঁচল খুলে শরীরে জড়িয়ে দেয়। মাহানুর আরেকদফা ব’মি করে দেয়। তবে এবার আরহামের টি-শার্টয়ের ওপরে করে। আরহাম দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজের টি-শার্টয়ের দিকে তাকায়। ব’মির নি’কৃষ্ট গন্ধ আসছে। মাহানুর জ্ঞান হারিয়ে পরে যায় আরহামের পায়ের কাছে। আরহাম চোখ মুখ শক্ত করে পরিহিত টি-শার্ট খুলে ফেলে। একবার আশেপাশে পরোক্ষ করে মাহানুরকে পাঁজকোলে তুলে নেয়।
ঠিক সেইসময়ই রুমের দরজা খুলে বের হয় আয়াস বড় খালা। এইরকম একটি দৃশ্য দেখতেই তার মাথা চোরা দিয়ে উঠে। মাথায় উল্টাপাল্টা ভাবনা আসে তার। মনে মনে ভাবলো এখনই সুযোগ তাঁদের দুধে ধোয়া তুলসীপাতা মেয়েকে সবার সামনে খারাপ প্রমান করার। তারাও দেখুক এই মেয়ে কিভাবে পর পুরুষের সাথে ডলাডলি করে। কুৎসিত হাসি দিলো সে। আরহাম চিন্তিত ভঙ্গিতে মাহানুরকে তার রুমে নিয়ে আসে। লাইট জ্বালিয়ে বিছানায় উঠে ধীরে ধীরে মাহানুরকে শুয়ে দেয়। গ্লাসে করে পানি নিয়ে মাহানুরের মুখে ছিটায় আর শান্ত কণ্ঠে ডাকলো,
-মাহানুর। মাহানুর উঠো।
অন্যদিকে আয়াসের খালা দৌড়ে হাজেরার রুমে আসে। ঘুমিয়ে ছিল তারা। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তার। হামজা খানও উঠে যায়। হাজেরা দ্রুত এসে দরজা খুলে দেয়। বোনকে দেখে বিচলিত হয়ে বললেন,
-কী হয়েছে এতো সকালে এভাবে ডাকছিস!
-কী হয়েছে না হয়ে গিয়েছে আপা! দুলাভাই কোথায় তাকে আসতে বলো আগে।
অনেকটা চেঁচিয়ে বলল সে। হামজা খান এগিয়ে এসে জিগ্যেস করলেন,
-কী বেপার রোকসানা?
আয়াসের খালার চেঁচামেচিতে পাশের রুমের মেহরাব খান, মাহফুজ খান, রিনা খান, জয়া বেগমও নিজেদের রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। রোকসানা সবাইকে দেখে মনে মনে পৈশাচিক হাসি দেয়। চেঁচিয়ে বলে,
-কী হয়েছে! ওপরে যেয়ে দেখেন আপনাদের সম্মান, আপনাদের আদরের মেয়ে পর পুরুষের সাথে রাত কাটিয়ে আসছে।
হামজা খান চোয়াল শক্ত করে ফেললেন। হাজেরা বোনের ওপর রাগ দেখিয়ে বললেন,
-কীসব বলছিস তুই? আর কার কথা বলছিস?
-তোমাদের মাহানুরের কথা বলছি আমি। মাত্রই রুম থেকে বের হয়ে আমি দেখলাম আয়াসের বউয়ের ভাইয়ের কোলে তোমাদের মেয়ে। তাও আবার কিরকম অবস্থায়! ছি ছি! আমার তো বলতেও লজ্জা লাগছে।
-মুখ সামলে কথা বলো রোকসানা। তোমরা মাহানুরকে পছন্দ করো না মানলাম তাই বলে এইসব বলবে!
ধমকের স্বরে বললেন হামজা খান। মেহরাব খানেরও ক্রোধে হাত পা কাঁপছে। রোকসানা তার থেকেও দ্বিগুন চেঁচিয়ে বললেন,
-আমার কথা তো আপনাদের বিশ্বাস হবে না জানি। যান ওপরে গিয়ে দেখে আসুন নিজেদের মেয়ের কু’কর্ম।
জয়া বেগম অবিশ্বাস কণ্ঠে বললেন,
-আমার আরহাম কখনই এইরকমটা করবে না। আমার ওর ওপর ভরসা আছে।
-আচ্ছা আমরা নাহয় রোকসানা আপার কথায় যেয়ে দেখেই আসি তাহলেই তো সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
রিনা খানের কথায় একমত হলো জয়া বেগম। সবার আগে সে-ই ছুটে যেতে লাগলো ওপরে। তার পিছু পিছু বাকি সবাই। রোকসানা মনে মনে শয়তানি হাসি দিচ্ছে।
এদিকে মাহানুরেরও জ্ঞান ফিরছে না। অবস্থা বেশি একটা ভালো নয়। আরহাম চিন্তা করে পাচ্ছে না কী করবে। মনে মনে ভাবলো এখন সুনহেরা বা কাউকে ডেকে আনবে। একজন ছেলে হয়ে সে বেশিকিছু করতেও পারছে না। বিছানায় ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় সে। পিছনে ফিরতেই আরহাম দরজায় নিজের মাকে ছলছল নজরে তাকিয়ে থাকতে দেখে হতবাক হয়ে যায়। ক্ষণকাল স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে। একবার বিছানায় শুয়িত মাহানুরকে দেখে আরহাম সামনে তাকায়। সবাইকে দেখে আরহাম বুঝলো সে যেটার ভয় পাচ্ছিলো সেটাই হলো। রোকসানা চেঁচিয়ে বললেন,
-দেখেছেন। আপনাদের মেয়ের আসল রূপ। হাজেরা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে। মাহানুরকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে তার বুক মোচড় দিয়ে উঠলো। কাঁথা দিয়ে ঢেকে দিলো মাহানুরকে। জয়া বেগম ছেলের স্মুখীন এসে দাঁড়ায়। ছলছল নয়নে প্রশ্ন করে,
-এইসব কী আরহাম? উনি বিধ্বস্ত অবস্থায় মাহানুরকে তোমার কোলে দেখেছে। এটা কী সত্যি?
-হ্যাঁ সত্যি।
সোজাসুজি উত্তর আরহামের। ঠাস করে একটি চড় পরলো তার গালে। আরহাম তখনও একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। জয়া বেগম কান্নারত্ব কণ্ঠে বললেন,
-আমি জানি তুমি আমার রক্ত ওর সাথে খারাপ কিছু করবে না। তবে আজ তোমার জন্য আমার আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছে! তোমার একটি ভুলের কারণে আজ আমার আদরের হীরের টুকরো ছেলেকে অন্যরা দুশ্চরিত্র বলছে!
আরহাম কোনো উত্তর দিলো না। সে জানে এখন যদি সে কিছু বলে কেউই বিশ্বাস করবে না বরং তাকেই খারাপ প্রমান করতে উঠে পরে লেগে যাবে।
-এই তোমাদের আদরের প্রতিদান ভাই? আমি বলেছিলাম মেয়েকে বেশি মাথায় তুলো না বিয়ে দিয়ে দেও। কিন্তু তোমরা আমার কথা শুনো নি। এভাবে তোমাদের মুখ কালো করাবে কল্পনাতেও আমি ভাবিনি।
নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল রিনা। হামজা খান চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে এসে আরহামকে জিগ্যেস করলো,
-আমি তোমার মুখে সবটা জানতে চাই আরহাম।
-আমি পাঁচটা বাজে বাসায় এসেছি। নিজের রুমে যাচ্ছিলাম বারান্দায় মাহানুরকে ব’মি করতে দেখি আর তার অবস্থা বেশি একটা ভালো ছিল না। কোনোদিক না ভেবে আমি তাকে তার রুমে নিয়ে আসি। আমার টি-শার্টয়ে ব’মি করেছিল তাই খুলে ফেলেছি।
-এটা সত্যি নাকি নিজের দোষ ঢাকতে বলছো?
-আমার বলার কাজ আমি বলেছি সত্যি মানলে ভালো। মিথ্যে মানলে কিছু করার নেই।
আরহামের কটমটে জবাব। রোকসানা চেঁচিয়ে বলল,
-ছেলে মিথ্যে বলছে। তাছাড়াও ওর কী দোষ! মেয়েকে দেখো কত রঙ চং করে সেজে গিয়েছে। দেখো গা সারারাত একসাথে,,,,
কথা শেষ করতে পারলো না রোকসানা। বিকট আওয়াজে চিৎকার করে উঠলো মেহরাব খান।
-মুখ বন্ধ করো রোকসানা। আর একটা শব্দ তুমি মুখ থেকে বের করলে আমি ভুলে যাবো তুমি আমার মা সমতুল্য ভাবির বোন।
সবাই ভীত হয়ে গেলো মেহরাবের কথায়। জয়া বেগম চলে গেলেন। একে একে আত্মীয়স্বজন সবাই জেনে গেলো কাহিনী। সবাই মাহানুরকেই খারাপ ভাবছে। তাঁদের নামে কটু কথা বলছে। মেহরাব খান কম্পিত পায়ে আরহামের স্মুখীন এসে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
-তোমাকে আমি সুপুরুষ ভেবেছিলাম। আমার মেয়ের জামাই বানানোর স্বপ্নও দেখেছিলাম তবে আজ তুমি আমার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছো। তোমার জন্য আজ আমার মেয়েকে মানুষ দুশ্চরিত্রা বলছে। আমি কোনোদিনও তোমাকে মাফ করতে পারবো না।
আরহাম মাথা নত করে ফেললো। সে মেহরাব খানের অনুভূতি বুঝলো। একজন পিতার জন্য তার মেয়ের চরিত্রে দাগ লাগা এর থেকে ভয়ংকর আর কিছুই হতে পারে না। আরহাম চুপ থেকে শুধু শুনলো। পিছনে ফিরে একবার মাহানুরকে দেখে বলল,
-ও ভীষণ অসুস্থ চিকিৎসার প্রয়োজন।
আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না আরহাম। গটগট পা ফেলে চলে গেলো। আসীন দ্রুত ডাক্তার নিয়ে আসে। ডক্টর খানিকক্ষণ সময় নিয়ে মাহানুরের চেকাপ করে। মাহানুরকে জ্ঞান ফেরানোর জন্য ইনজেকশন দেওয়া হয়। রুমের বাহিরে আসতেই সবাই হস্ততন্ত হয়ে ডাক্তারকে জিগ্যেস করলো মাহানুরের অবস্থা। ডাক্তার শান্ত কণ্ঠে বলল,
-শি ইস টু মাচ ড্রাঙ্ক! আমি ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি জ্ঞান ফিরলে উনাকে লেবুর শরবত খাওয়াবেন আর যত্ন নিবেন।
-ঠিক আছে ডক্টর।
আসীন ডাক্তারকে এগিয়ে দিয়ে আসতে গেলো। আয়াস মাহানুরদের পার্টির বিষয় টুকটাক জানতো। তাই সে বেশি মাথা ঘামালো না।
কিছু সময়ের মধ্যে কী থেকে কী হয়ে গেলো সব যেনো তার মাথায় ঘুরছে। আরহামের ওপর তার ভীষণ রাগ হচ্ছে। ঐ লোকটার জন্য আজ মাহানুরের এতো বদনাম হলো। মাহানুরের আপনজনরা শুধু আরহামের দোষ দেখছে আর আত্মীয়স্বজন, মেহমানরা মাহানুরের।
বেলা দশটা বাজে। মেয়েদের ঘুম ভেঙেছে কিছুক্ষন পূর্বেই। সবাই মাথার ব্যাথায় অতিষ্ট। আয়াস তাঁদের জন্য লেবুর শরবত পাঠিয়েছিল। সবাই সেটা খেয়ে নিলো। কিছুটা আরাম পাওয়া গেলো তাতে। অহনা, সুনহেরা বাহিরে এসে থমথমে পরিবেশ দেখে ভ্রু কুঁচকালো। আজ তো হলুদের ফাঙ্কশন তাহলে এতো নির্জন কেনো রিসোর্ট! সবাই কী কোনো শোক পালন করছে না কী! সুনহেরা আয়াসকে জিগ্যেস করার জন্য ডাক দিলে আয়াস তাকে ইগনোর করে চলে গেলো। সুনহেরা বুঝলো না হটাৎ আয়াসের এমন ব্যবহারের কারণ। অহনা নরম পায়ে হেঁটে রিদের কাছে যায়। সবসময় হাসিখুশি থাকা রিদও গম্ভীর হয়ে আছে। অহনা তাকে প্রশ্ন করলো,
-কী হয়েছে? সবাই এতো চুপচাপ কেনো?
রিদ মাথা ঘুরিয়ে তাকায়। সকালের কাহিনী সবটা খুলে বলে অহনাকে। অহনা আশ্চর্য। মানুষ এতো জঘন্য কিছু কিভাবে বলতে পারে তাও আবার বানিয়ে! অহনা ছুটে গেলো মাহানুরের রুমে। মাত্রই জ্ঞান ফিরেছে মাহানুরের। নিভু নিভু নয়নে আশেপাশে তাকাচ্ছে। হাজেরা তার পাশে বসে আছে। আস্তে আস্তে উঠে বসে মাহানুর। নিজের গায়ে অন্য জামা দেখে বুঝলো হাজেরা পরিবর্তন করে দিয়েছে। মাহানুর মাথা চেপে ধরলো রাতের তেমন কিছুই তার মনে নেই। রুমেই বা কী করে আসলো সে! চুল আঁকড়ে ধরে জিগ্যেস করলো,
-বড় মা আমি রুমে কিভাবে আসলাম? আমরা তো সুনহেরা ভাবির রুমে ছিলাম।
-আরহাম নিয়ে এসেছে তোকে।
মাহানুর গোল গোল চোখে তাকায় হাজেরার দিকে। চমকে গিয়ে বলল,
-মানে? ঐ বদমাইশ বেটা আমাকে কেনো নিয়ে আসবে?
হাজেরা কাঁপাকাঁপি কণ্ঠস্বরে বললেন,
-ভোর সকালে তুই অসুস্থ হয়ে পরেছিলি আরহাম তোকে দোতলার বারান্দায় দেখে এই রুমে নিয়ে আসে। রোকসানা আবার তোদের দুইজনকে একসাথে দেখে ফেলে। তারপর,
আর কিছু বলতে পারলো না হাজেরা। গলা ধরে এলো তার। মাহানুরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরলো সে। মাহানুর অকেজো হয়ে গেলো। তার সমস্ত শরীর শিরশির করে কাঁপছে। ঘোলাটে নয়নে একবার হাজেরা তো একবার লুৎফার দিকে তাকায়। যা বোঝার সে বুঝে গেলো! আয়াসের খালা যেহেতু দেখেছে তাহলে নিশ্চই এতক্ষনে বিরাট কাহিনী বানিয়ে ফেলবে। মাহানুর হাত মুঠি করে শক্ত হয়ে বসে রইলো। রিনা খান আর অহনা রুমে আসে। অহনা মাহানুরের পাশে এসে বসলো। রিনা খান দুঃখী হওয়ার অভিনয় করে বলল,
-কিরে তোর বাপ চাচারা না তোকে নিয়ে কত গর্ব করতো এইভাবে তাঁদের নাক না কাটালেও পারতি! ছি ছি! আমাদের ফ্যামিলির মেয়ে এইরকম হবে আমার কল্পনাতেও ছিল না!
মাহানুর আজ নিশ্চুপ। কী বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হলো তার বাবা আর চাচারা। ছোটকাল থেকে সে সর্বদা চেষ্টা করতো কোনোভাবেই যাতে তাঁদের মাথা নিচু না হয়। তারা কখনই যাতে তার জন্য বদনাম না হয়। আর আজ তার জন্য তারা এতো জঘন্য ভাবে লজ্জিত হলো! মাহানুরের মনে হচ্ছে কেউ তার হৃদপিন্ডে ছু’রিঘাত করছে। মেহরাব খান হামজা খান এসে রিনা খানকে ধমক দিয়ে রুম থেকে বের করে। মাহানুর আজ আর চোখ তুলে বাবার দিকে তাকাতে পারলো না। চোখ দিয়ে এক ফোঁটা দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরছে তার।
মেহরাব খানের বুক ধক করে উঠলো। তার আদরের মেয়ের চোখে পানি দেখে। এগিয়ে গিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন মাহানুরকে। মাহানুরের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না। এখন একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য সবাই তাকে খারাপ ভাববে! খারাপ বলবে! মেহরাব খানকে সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায় মাহানুর। রাগে আঁখিজোড়া লাল হয়ে গিয়েছে তার। মাথায় ধপ ধপ করে আগুন জ্বলছে। কেউই বুঝতে পারলো না আসলে মাহানুর কী করতে চাচ্ছে। সবাইকে উপেক্ষা করে মাহানুর বড় বড় পা ফেলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। তার পিছনে পিছনে সবাই যেতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে আরহামের রুমের স্মুখীন এসে দাঁড়ালো সে। দরজায় ঠোকা দিতেই আরহাম দরজা খুলে টান টান হয়ে দাঁড়ালো। মাহানুর কোনোদিক না তাকিয়ে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিলো আরহামের গালে। আরহাম নিজে যেমন অবাক হলো আশেপাশের সবাইও তেমনই অবাক হলো। আরহামের চোখ মুখ কঠিন্য রূপ ধারণ করলো। নাকের পাঠা ফুলে উঠলো তার। মাহানুরের গলা চেপে ধরে মে’রে ফেলবে এমনই রাগ উঠলো তার। হাত মুঠো করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস চালালো। মাহানুর দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,
-আমার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমনটা করেছিস না তুই? ইচ্ছে করে আমার চরিত্রে দাগ লাগিয়েছিস! এতটা নিচে নামবি আমি ভাবতেও পারিনি।
চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে মাহানুরের। আরহাম ক্রোধে কিছু বলতে যেয়েও মাহানুরের রূপ দেখে চুপ হয়ে গেলো। নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে মাহানুর দৃঢ় কণ্ঠে আঙুল তুলে বলল,
-তোর মতো নিকৃষ্ট মানুষের জন্য এই একটা চড়ও খুব ক্ষুন্ন! আজ তুই মেয়ে হলে বুঝতি একটা মেয়ের কাছে তার চরিত্র কত বড় সম্পদ! আমার সাথে যা করেছিস এটার শাস্তি তুই পাবি।
মাহানুর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই চলে গেলো। আরহাম অতিরিক্ত ক্রোধে চোখ বন্ধ করে ফেলে। রিদ, আরহামের অন্য বন্ধুরা মিলে আরহামকে টেনে রুমে ভিতরে নিয়ে যায়। তাকে শান্ত করতে থাকে। আরহাম সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে কপালে এক আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে রুক্ষ, কাঠিন্য কণ্ঠস্বরে বলল,
-রিদ কাজী নিয়ে আয়।
-কাজী! কাজী দিয়ে কী হবে?
না বুঝে প্রশ্ন করলো রিদ। আরহাম শক্ত মুখে বলল,
-সবার মতে আমার জন্য ওর চরিত্রে দাগ লেগেছে তাই আমিই দাগ মুছে দেবো সারাজীবনের জন্য। তোকে যেটা বলেছি সেটা কর।
-আরহাম তুই যেটা করতে চলেছিস সেটা কিন্তু কোনো ছেলে খেলা না।
-আমি সব ভেবেচিন্তেই করছি। তুই যা।
-আচ্ছা।
>>>>>চলবে।