তবে_ভালোবাসো_কী ২ #Mehek_Enayya(লেখিকা) পর্ব ১১

0
197

#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ১১

বিস্মিত মাহানুর বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো সামনের মানুষটির দিকে। সে এভাবে আরহামের ওপরে পরবে তার কল্পনাতেও ছিল না। মাহানুরের মস্তিকে এখন শুধু একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। আরহাম না চট্টগ্রামে তাহলে এখানে কিভাবে এলো? আবার ঐ জিরাফের ভুত তো নয়!
অপরদিকে আরহামের অবস্থাও একই। বিকালে অনেক কষ্টে ছুটি নিয়ে বাসায় এসেছে সে। ছোট বোনের বিয়ে। কত দায়িত্ব তার। এমন্ত অবস্থায় সে কিভাবে সেখানে বসে থাকে। এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে একটা ঘুম দিয়েছিলো। ক্লান্ত থাকায় শোয়ার সাথে সাথেই ভয়ংকর ঘুমে তলিয়ে যায়। গভীর তন্দ্রায় আচমকা নিজের ওপর কাউকে অনুভব করতেই চট করে উবড়ে যায় ঘুম। ফোনের লাইট জ্বালিয়ে মাহানুরকে দেখে সে বড়োসড়ো একটা ঝটকা খায়। ক্ষণেই কিছু সময় অতিবাহি হয়ে যায়। মাহানুর কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-একশো কেজির শরীর নিয়ে আপনি আমার ওপর থেকে সরছেন না কেনো? মেয়ে দেখলেই শুধু তাঁদের সাথে শুয়ে থাকতে মন চায়!

তপ্ত নিঃশাস ত্যাগ করে নিজেকে শান্ত করে আরহাম। এক তো মাহানুর তার রুমে এসেছে আবার তাকেই উল্টাপাল্টা কথা শোনাচ্ছে! আরহামের ভয়ংকর রাগ হলো। হাত বাড়িয়ে সুইট চেপে রুম আলোকিত করে দিলো। আরহামকে একই ভঙ্গিতে শুয়ে থাকতে দেখে মাহানুর খানিকটা চেঁচিয়ে বলল,
-কী হলো সরুন! বরফের মতো জমে গেলেন নাকি! আবার যে,,
-চুপ।
মাহানুরের ওষ্ঠে নিজের আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো আরহাম। খানিকটা কেঁপে উঠলো মাহানুর। তিরতির করে কাঁপতে থাকলো মাহানুরের ওষ্ঠজোড়া। আরহাম মাহানুরের থমথমে মুখ দেখে বাঁকা হাসে। নিলিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
-তুমি এতো ভদ্র মেয়ে তাহলে একজন অচেনা মানুষের রুমে কিভাবে আসলে?
-আমি সুনহেরা ভাবির রুমে এসেছিলাম। কিন্তু কে জানতো এই রুমে আপনি ঘুমাচ্ছেন!
-এটা আমারই রুম।
-হয়েছে ভাই! সরি আমার ভুল হয়েছে আপনার রুমে আসা এখন উঠবেন নাকি আমি নিজের মতো করে সরাবো?
আরহাম কুটিল হেসে ধীরেসুস্থে সরে গেলো। মাহানুর ছাড়া পেতেই ত্বরিতগতিতে জামা ঠিক করে যেতে উদ্যত হতেই আরহাম বিছানায় আধশোয়া হয়ে বলল,
-যে কাজের জন্যে এসেছিলে সেটা সম্পূর্ণ করেই যাও।
মাহানুর পিছনে ফিরে তাকায়। আমতা আমতা করে বলল,
-মানে?
-তোমার ড্রেস।
মাহানুর হকচকিয়ে গেলো। কী নজর আরহামের এতক্ষনে ড্রেসের দাগও খেয়াল করে ফেললো! মাহানুরকে মৌন থাকতে দেখে আরহাম পুনরায় বলল,
-ঐপাশে ওয়াশরুম।
-ধন্যবাদ তবে আপনার সাহায্যের দরকার নেই আমার। নেক্সট দেখা না হলেই আমি বেশি খুশি হবো।
চোয়াল শক্ত করে বলে মাহানুর। আরহাম দ্রুত বিছানা থেকে নেমে ছোট ছোট চুলে হাত বুলাতে বুলাতে মাহানুরের স্মুখীন এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ আরহামকে এতো কাছে দেখে মাহানুর একটু ভীত হয়ে গেলো। আরহাম ভরাট কণ্ঠস্বরে বলল,
-আমি বাহিরে যাচ্ছি তুমি নিজের কাজ শেষ করেই এসো। আর আপসোস তুমি না চাইলেও আমাদের দেখা হবে। বার বার হবে। তাই ডিয়ার মাহানুর খান কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ।

গটগট করে চলে গেলো আরহাম। মাহানুর হাত মুঠি করে আরহামকে বকতে থাকে। রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে যায়। জামার দাগ অংশ হালকা হাতে ওয়াশ করে বেরিয়ে আসে। সব জায়গায়ই শুধু ছেলেদের ব্যবহারের জিনিস। মাহানুর ভুলে যায় এটা যে একটা ছেলেরা রুম! আয়নার স্মুখীন দাঁড়িয়ে মাথার হিজাব খুলে। চুল ঠিক করে পুনরায় সুন্দর করে হিজাব পরে নেয়। ভালোভাবে নিজেকে পরোক্ষ করে রুম থেকে বের হয় সে।
_________________
পরেরদিন সকালে সবাই একসাথে নাস্তা করছিলো খান ভিলার। মাহানুর আর আয়াস নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলো। ফোনে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসলো হামজা খান। চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ চিন্তিত সে। কথা শেষ হতেই কল কেটে চেয়ার টেনে বসে। মাহফুজ খান ভাইয়ের চিন্তিত মুখ দেখে জিগ্যেস করলেন,
-কিছু হয়েছে বড়ভাই? আপনাকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো?
-আর বলিস না! এখন আরহাম কল দিয়েছিলো।
-কী বলল সে?
মেহরাব খান প্রশ্ন করলো। হামজা খান তপ্ত কণ্ঠে বললেন,
-সুনহেরার ইচ্ছে বিয়ে কোনো খোলামেলা জায়গায় অনুষ্ঠিত হবে। তাই এখন বোনের মন রক্ষার্থে আরহাম একটি রিসোর্ট বুক করেছে। রিসোর্ট নাকি অনেক বড় তাঁদের আমাদের সকল আত্মীয়স্বজনের থাকার জায়গা হয়ে যাবে।
-তাহলে অনুষ্ঠান একসাথে করতে চাচ্ছে?
-হুম।
আরাম করে বসে জুস খাচ্ছিলো আয়াস। বাবার কথা কর্ণকুহর হতেই শান্ত মেজাজ গরম হয়ে যায় তার। ক্ষিপ্ত কণ্ঠে চিবিয়ে বলল,
-বিয়ের চারদিন আগে তাঁদের এইসব কথা মাথায় আসলো! একটা আয়োজনেরও তো বেপার সেপার আছে না কী! সব কী তাঁদের কথা মতো হবে?
-আয়াস খামোখা রাগ করো না। আমরা তো এখন পর্যন্ত ডেকোরেশন শুরু করিনি তাহলে সমস্যাও নেই।
-তাও বাবা তাঁদের উচিত ছিল আগে জানানো। আরহাম চৌধুরীই বা এতো বেখেয়ালি কিভাবে হয়?
হামজা খান ছেলেকে ধমকের স্বরে বলল,
-চুপ করো আয়াস। আরহাম সম্পর্কে তোমার বড় ভাইয়ের মতো হয় তাই কথাবার্তা বুঝেশুনে বলবে।
আয়াস ক্ষেপা মেজাজে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। লাথি দিয়ে চেয়ার দূরে সরিয়ে দিয়ে গটগট পায়ে চলে যায় না খেয়ে। হাজেরা পিছন থেকে ছেলেকে বললেন,
-আব্বা নাস্তা তো করে যা।
আয়াস সে কথার তোয়াক্কা করলো না। মাহানুর শান্ত ভাবে বসে সবটা পরোক্ষ করলো। সকলে আর মাথা ঘামালো না এই বিষয়। হামজা খান খেতে খেতে বললেন,
-বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হচ্ছে বলে ভালোই হয়েছে রে মেহরাব। নাহলে এখন আমাদের অনেক কসরত করতে হতো।
-তাও বড়বাবা তারা এইরকম হঠাৎ ডিসিশন নিয়ে ভালো করেনি। আমরা যে বাবুর্চি, ডেকোরেশন করানোর মানুষকে বলে রেখেছিলাম এখন তাঁদের কী বলবে?
ব্রেডে কামড় দিয়ে চিবুতে চিবুতে বলল মাহানুর। মোটামোটি সেও আরহামের ওপর একটুআরেকটু রাগ। হামজা খান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-তাঁদের না করে দেবো। আর যদি বাড়াবাড়ি করে তাহলে আমরা সামলে নেবো তুই এইসব নিয়ে চিন্তা করিস না আম্মা। ভাইয়ের বিয়ে নিজের যত্ন নে আর ইচ্ছে মতো মার্কেটিং কর।
-ঠিক আছে। বড়মা আয়াসের খাবার দেও আমাকে। ওর আজ টেস্ট এক্সাম আছে না খেয়ে গেলে আন্ডা আনবে জনাব।
হাজেরা মুচকি হাসি দিয়ে ট্রে তে খাবার সাজিয়ে দেয়। অহনা আর সায়রিন তৈরি হতে রুমে চলে যায়। কিছুক্ষন পর সব মহিলাগন মিলে মার্কেটে যাবে। মাহানুর নরম পায়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে। আয়াসের রুমে এসে হয়রান হওয়ার ভঙ্গিতে শ্বাস নেয়। হাঁটুমুড়ে বিছানায় বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছে আয়াস। মাহানুরকে দেখে রাগ দেখিয়ে বলল,
-তুই এসেছিস কেনো?
-এতো কষ্ট করে খাবার নিয়ে এলাম কোথায় বসতে বলবি তা না করে তুই আমার ওপর রাগ দেখছিস শয়তানের নানা!
-তোকে আনতে কে বলেছে?
মাহানুর আয়াসে সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। সহসা ল্যাপটপটা হাতে নিয়ে বন্ধ করে দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল,
-উঠে আগে খেয়ে নে তারপর ল্যাপটপ পাবি।
-মাহানুর বাড়াবাড়ি করছিস কিন্তু তুই! ল্যাপটপ দে।
মাহানুর ল্যাপটপটা বুকে জড়িয়ে আয়াসের পাশে বসে পরলো। আড়চোখে আয়াসের রাগী মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-আচ্ছা আজ যদি সুনহেরার জায়গায় আমি হতাম। বিয়ের একদিন আগে বলতাম আমি কোনো সুন্দর রিসোর্টে গিয়ে বিয়ে করতে চাই। তখন আমার বাবা চাচা দেন ভাইরা কী আমার ইচ্ছে পূরণ করতো না?
-আমাদের বোনের ইচ্ছে যেভাবেই হোক আমরা পূরণ করতাম। কারণ সবকিছুর উর্ধে বোন।
স্মিত হাসলো মাহানুর। আয়াসকে বলল,
-তো সুনহেরার ভাই ও তার বোনের ইচ্ছে পূরণ করেছে। মানছি তাঁদের আগে জানানো উচিত ছিল হয়তো তারা ভুলে গিয়েছে। এখন এইরকম ছোট বিষয় রাগ করে কোনো লাভ হবে বল?
আয়াস ভোঁতা মুখে দুইপাশে মাথা নাড়ায়। মাহানুর প্রসন্ন হেসে আয়াসের গাল টেনে দিয়ে বলল,
-তো এখন এইরকম ফালতু কারণে মুড নষ্ট করে থাকিস না। নাস্তা কর তারপর মেডিকেলে যা উড বি দুলহা। আমরাও আবার একটু ভার্সিটি যেতে হবে নোট আনতে।
-তো মার্কেট যাবি না তোরা?
-হ্যাঁ যাবো তো। বড়বা ভাবিরা মার্কেট চলে যাবে আমি আর অহনা ভার্সিটি থেকে যাবো।
-ওহ আচ্ছা।
আয়াস বিছানা থেকে নেমে সোফায় বসে গপগপ করে নাস্তা করতে থাকে। মাহানুর সেটা দেখে শব্দহীন হাসে। এটাই হলো তার মেজিক। সে যেকোনো মানুষকে খুব সহজেই মানাতে পারে। এইরকম মুহূর্তেই মাহানুর অনুভব করে তাকে সবাই কত ভালোবাসে আর সে সবার কত প্রিয়।
___________
না চাওয়ার সত্ত্বেও মাহানুরদের ভার্সিটি আসতে হলো। সামনে তাঁদের এক্সাম আর আজ নাকি নোট দিবে তাই অহনাই তাকে টেনে নিয়ে এসেছে। ক্যাম্পাসে বসে পড়া নিয়ে আলোচনা করছিলো তারা। অহনার মুড অফ। আজও সে রিদকে দেখেনি। কী এমন কাজে ব্যস্ত যে তার সাথে দেখা করারও সময় পাচ্ছে না!মনে মনে ভাবলো অহনা।
-কীরে অহনার বাচ্চা মুখ কালো করে বসে আছিস কেনো?
বলল সিয়াম। অহনা মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,
-এমনেই।
-আজকে আমি আর অহনা ফুল ক্লাস করতে পারবো না মার্কেটে যেতে হবে।
ফোন টিপতে টিপতে বলল মাহানুর। মুহিব মাহানুরকে বলল,
-ঠিক আছে তোরা দুইজন চলে যাইস আমরা নোট দিয়ে দেবো।
-আই লাভ ইউ দোস্ত।
বড় একটি হাসি দিয়ে বলে মাহানুর। মুহিব ভেংচি কাটে। সময় হয়ে যাওয়ায় সবাই যার যার ক্লাসে চলে যায়। মাহানুর মনোযোগ দিয়ে প্রফেসরের কথা শুনছিলো পাশে ফিরতে দেখে রাফিন চোরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বিরক্তে কপাল কুঁচকে ফেললো মাহানুর। কোনোরকম তিনটা ক্লাস করেই বের হয়ে যায় মাহানুর আর অহনা। ভার্সিটির গেটের বাহিরে আসতেই পানির পিপাসা লাগে মাহানুর। ব্যাগ থেকে বোতল বের করে পানি খেতে থাকে। এমন সময় তাঁদের সামনে এসে দাঁড়ায় রাফিন। মাহানুরের ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে যায়। অহনাও কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। রাফিন অনুতপ্ত কণ্ঠে বলল,
-সেইদিনের জন্য আই এম সরি মাহানুর। আমি আসলেই ভুল করে ফেলেছিলাম। প্লিস আমাকে মাফ করে দিও।
মাহানুর অবাক হলেও বাহ্যিক রূপে প্রকাশ করলো না। স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
-তুমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক।
-ক্ষমা করেছো আমায়?
-হ্যাঁ করেছি। নেক্সট আমি কেনো অন্য মেয়ের সাথেও এইরকম আচরণ করবে না আশা করি।
-অবশ্যই। তোমরা বাকি ক্লাস করবে না?
-না একটু দরকার ছিল তাই এখনই যেতে হচ্ছে।
-ওহ।
-আসি তাহলে।
মাহানুর অহনাকে নিয়ে সামনে হাঁটা ধরে। কিছুটা দূরে যেতেই অহনা দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
-আমার কেনো জানি রাফিনের ব্যবহার কোনো নাটক লাগছে!
মাহানুর প্রতিউত্তরে কিছু বলল না। রোদে ক্লান্ত নজরে স্মুখীন তাকাতেই এক শীতল হাওয়া ছেয়ে যায় অহনার মনে। চিত্তের গহীনে যেনো হারমোনিয়াম বাজছে তার। অহনার দৃষ্টি পরোক্ষ করে মাহানুরও সামনে তাকায়। রিদকে তাঁদের দিকেই আসতে দেখে মনে মনে খুশি হয় মাহানুর। চমৎকার একটি হাসি দেয়। কিছু বলতে যাবে তখনই তার রিদের পিছনে নজর পরে। চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে সে। হাতের সি’গা’রেটটা ফেলে বড় বড় পা ফেলে তাঁদের দিকে এগিয়ে আসছে আরহাম। অহনা প্রফুল্ল হেসে রিদকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে আরহামের কাছে যায়।
-আরহাম ভাইয়া আপনি ঢাকায় কবে আসলেন?
-গতকালই এসেছি। ভালো আছো?
-হ্যাঁ। আপনার সাথে এইভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি!
-সেম। আমি তো আরো আমার বেস্টফ্রেন্ড রিদের ভালোবাসার মানুষকে দেখতে এসেছিলাম!
অনেকটা মজার ছলে বলে আরহাম। অহনা পিটপিট করে তাকিয়ে প্রশ্ন করে উঠলো,
-মু মানে এনার বন্ধু আপনি?
-জি।
শান্ত ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো আরহাম। রিদ কোমরে হাত দিয়ে আহাম্মক ভনিতায় দাঁড়িয়ে আছে। একবার আরহামকে দেখছে তো একবার অহনাকে। কেউই তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। রিদ কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
-আরে ভাই কেউ আমাকেও তো পাত্তা দেও! আমিই তো তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেবো।
অহনা মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। আরহাম রিদের কাঁধে হাত দিয়ে বলে,
-তোর বেগমের সাথে আমি আগের থেকেই পরিচিত দোস্ত এখন নতুন করে পরিচয় করাতে হবে না।
-যাক আমার কাজ তাহলে একটু কমে গেলো।
মাহানুর একটু দূরে যেয়ে ফোনে কথা বলছিলো। কথা শেষ হতে এগিয়ে আসতে আসতে ক্ষোপ কণ্ঠে বলে,
-আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন বখাটে জিজু? জানেন না আমার বেস্টু আপনার বিরহে পাগল প্রায়!
অহনা রাগী চোখে মাহানুরের দিকে তাকিয়ে আছে যেনো কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। রিদ বিস্ময়বিমূঢ়। চমকিত কণ্ঠে বলল,
-তুমি যেটা বলছো সেটা কী সত্যি শালীসাহেবা?
-আবার জিগায়! এখন বলেন কোথায় ছিলেন?
-আরহামের বোনের বিয়ে মানে আমার বোনেরই বিয়ে। সেই কাজকর্মে একটু ব্যস্ত ছিলাম।
-বাহ্! তাহলে আপনি আমার জিজুর সাথে দেখছি বিয়াইও হন!
-হ্যাঁ আরহাম বলল সব কাহিনী।
রিদ পিছনের চুল হাতিয়ে অহনার পাশে যেয়ে দাঁড়ায়। অহনা তাকে দেখে আরেকটু সরে যায়। মাহানুর আর আরহাম তাঁদের দুইজনের কার্যকলাপ দেখে মিটমিট হাসছে। রিদ অহনাকে বলল,
-জান আই এম সরি। আমার ভুল হয়েছে আমাকে ক্ষমা করে দেও।
অনেকটা নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল রিদ। অহনা লাজে লাল হয়ে যায়। ত্বরিত দেখিয়ে মাহানুরকে বলে,
-মাহানুর আমাদের দেরি হচ্ছে চল জলদি।
-হ্যাঁ।
মাহানুর সামনে হাঁটা ধরে। রিদ অসহায় মুখ করে তাকিয়ে রইলো অহনার দিকে। মাহানুর ভুল করেও একবার পিছনে ফিরলো না। তারা চলে যেতেই আরহামের মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন হয়ে যায়। রাগে পুরুষালি চোয়াল কঠিন্য হয়ে উঠে। তারা প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে এখানে দাঁড়িয়ে ছিল। মাহানুরের সাথে রাফিনকে কথা বলতেও দেখেছে সে। রিদকে ছেলেটার নাম জিগ্যেস করলে রিদ রাফিনের পুরো ডিটেলস দিয়ে দেয়। সেই মুহূর্তেই রাফিন নাম শুনে আরহামের শান্ত মস্তিকে এলোমেলো হয়ে যায়। রাগে ভিতরের সত্ত্বা ফোঁস ফোঁস করে উঠে। কোনোরকম মাহানুরকে দেখানোর জন্য নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখেছিলো এতক্ষন।
কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সি’গারে’ট টানছে আর ফোনে কারো সাথে কথা বলছে রাফিন। এতক্ষন তার দৃষ্টি এইখানে মাহানুরের ওপরেরই ছিল। যেই মাহানুর চলে গিয়েছে আর নজরও সরে গিয়েছে।
শার্ট টেনে ঠিক করে আরহাম আশেপাশে তাকায়। রিদ বন্ধুর মনোভাব দেখে বলে,
-রাফিন মাহানুরের বিএফ নয় ও শুধু একতরফা পছন্দ করে মাহানুরকে। নিজের ক্রোধ দমিয়ে রাখ বেটা।
আরহাম পেন্টের পকেটে হাত দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল,
-বিএফ হলেও সমস্যা হতো না কিন্তু আরহামের জিনিসকে ও কেনো পছন্দ করতে যাবে! তুই দারা আমি আসছি।
-আরেহ তুই তো দেখছি কয়েকদিনেই আমার শালীসাহেবার প্রেমে ভিলেন হয়ে উঠেছিস! বেটা কোথায় যাচ্ছিস তুই?
-ওর কলিজা কত বড় সেটা একটু মেপে আসছি।

>>>>চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here