স্নিগ্ধ_প্রিয়া #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_৩৫

0
264

#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৩৫

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

তার উপর অনলাইনে এ তো একদম অপরিচিত। জায়ান তার সেই আইডি থেকে লাইভে আসার সিদ্ধান্ত নিল। অবশ্য শুধুমাত্র ফেসবুকে নয় উইচ্যাটেও একই সাথে লাইভে আসবে সে। বলা তো যায় না আবার মেয়েটা যদি চীনেই গা ঢাকা দিয়ে থাকে কোথাও তবে তো ফেসবুক লাইভ তার চোখে নাও পড়তে পারে। তাই হোস্টেল থেকে আসার সময় চ্যাং এর মোবাইলটা সাথে নিয়ে এসেছিল। আচ্ছা লাইভে গিয়ে এভাবে পূর্বাশাকে চাইলে পূর্বাশা তো ভাইরাল হয়ে যাবে, লোকে কি বলবে? মেয়েটাকে কি খারাপ মন্তব্য করবে? কিন্তু এখানে তো পূর্বাশার কোনো দোষ নেই লোকে তাহলে পূর্বাশাকে খারাপ কেন বলবে? ধূর যা হয় হোক তো। এখন তার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পূর্বাশাকে খুঁজে পাওয়া। পূর্বাশাই যদি তার জীবন থেকে হারিয়ে যায় তাহলে লোকজন দিয়ে বা সে কি করবে? গুলে গুলে পানি খাবে? আর মেয়েটাকে ছাড়া সে বেঁচেও বা থাকবে কি করে? যে করেই হোক পূর্বাশাকে তার চাই ই চাই। নিজের আইডি থেকে দ্রুত ফেসবুক এবং উইচ্যাটে লাইভে এলো জায়ান। জীবনে প্রথমবার লাইভে আসতে কেমন একটা অস্বস্তি তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরলেও নিজেকে সামলে নিল ছেলেটা। পূর্বাশাকে পেতে হলে তার এ ছাড়া আর উপায় নেই কোনো। এই লাইভের মাধ্যমে হয় কেউ একজন পূর্বাশার খোঁজ দিবে, নয়তো তৃষাম ছুটে আসবে পূর্বাশার খোঁজ নিয়ে, আর নয়তো নিজেকে ভাইরাল হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পূর্বাশা নিজেই নিজের খোঁজ নিয়ে ছুটে আসবে। বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করলো জায়ান। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো – আসসালামুয়ালাইকুম আমি জায়ান ইবনে জাফর চৌধুরী। আমাকে আপনারা অর্ধ চাইনিজ অর্ধ বাঙালিও বলতে পারেন অর্থাৎ আমার বাবা একজন বাঙালি এবং মা চীনের স্থানীয়। আমিও ছোট বেলা থেকে চীনেই থাকছি, এখানেই আমার বেড়ে ওঠা। কিন্তু বর্তমানে আমি একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছি ভীষন বাজেভাবে। মেয়েটা বাঙালি, এখানে এসেছিল পড়াশোনার তাগিদে। আর তখনই আমি তার প্রেমে পড়ি। পা’গ’লা কু’কু’রে’র মতো মেয়েটার পিছনে ছুটি বেড়িয়েছি অনাবরত কিন্তু মেয়েটা আমাকে পাত্তাই দিল না।

এইটুকু বলে একটু থামলো জায়ান আবার বলল – আচ্ছা বাঙালি মেয়েরা কি এমনই হয়? কঠোর চিত্তের অধিকারী? হতে পারে, কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা হয়ে পড়ে ছিলাম মেয়েটার পিছনে। কিন্তু মেয়েটা হুট করেই আমাকে না জানিয়ে উধাও হয়ে গেল কোথাও। অনেক খুঁজেছি তাকে পাইনি আমি। আমি তাকে ভুলতে পারবো না কিছুতেই, তাকে না পেলে বাঁচতে ও পারবো না। তাহলে এখন আমার করনীয় কি? মেয়েটার নাম পূর্বাশা। আর কিছু জানি না আমি। তেমন কোনো ছবিও নেই আমার কাছে। যে ধানী লঙ্কা ছবি তুলতে দেখলে আমার আচাড় বানিয়ে ফেলবে তো তাই ঝুঁকি নেইনি। ইতমধ্যে দুই দুইটা থাপ্পর তার হাতে খেয়েছি। আপাতত আরেকটা খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারন এই লাইভ দেখলে নির্ঘাত সে আমার ফর্সা গালে আরেকটা থাপ্পর মেরে লাল করে দিবে। যাই হোক যদি কোনো স্বহৃদয়বান পূর্বাশার কোনো খোঁজ জেনে থাকেন অতি দ্রুত আমার সাথে যোগাযোগ করবেন।

এই টুকু বলেই মাত্র কয়েক মিনিটের মাথায় লাইভ বন্ধ করলো জায়ান। এই টুকু বলতেই তো তার দম বেরিয়ে যাচ্ছিলো। কেমন অগোছালো বাচ্চাদের মতো কথা বলেছে সে। যা তার ব্যক্তিত্তেরর সাথে কোনো কালেই যায় না। তবুও আজ সে বলেছে। এত বছর ধরে যারা জায়ানকে চিনে বা জানে তারা এই লাইভ দেখলে নিশ্চই আশ্চর্য হবে। কেমন মেয়েদের মতো লজ্জা লাগছে জায়ানের। কিন্তু উপায় যে ছিল না কোনো। এখন পূর্বাশার খোঁজটা পেলেই হলো শুধু।

****

পূর্বাশা শুয়ে ছিল তার হোস্টেল রুমেই। সেদিনের পর পায়ে ব্যথা, ওষ্ঠে ব্যথা, মাথা ব্যথাতে জর্জরিত হয়ে পড়েছিল মেয়েটা। তাই বাইরে বেরুতে পারেনি সে। তার বাহির থেকে প্রয়োজন পড়লে সেনজেই, জেফি আর সুজাই এনে দিয়েছে। তাছাড়া তার একটু সময়েরও প্রয়োজন ছিল। জায়ানকে বিশ্বাস করতে, নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে। একবার যে ভুল সে করেছে দ্বিতীয় বার সে ভুল মোটেই করা উচিৎ হবে না তার। তার উপর সেদিন জায়ান আর মিসেস শীওর কথাপকথনে অনেকটা রহস্যের গন্ধ পেয়েছে সে। বেশ ভালোই বুঝেছে জায়ান কোনো এক সীমাহীন ব্যথায় দগ্ধ। আগে সবটা জানতে হবে তাকে। তারপর না হয় কিছু একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। কিন্তু সেই সময় জায়ান তাকে দিলে তো। মোবাইলে অনাবরত মেসেজ আর নোটিফিকেশনের শব্দে কান ঝালাপালা হলো মেয়েটার। এই জন্যই সবার কাছে পরিচিত সিমটা খুলে রেখেছিল। কিন্তু এই সিমে আবার মেসেজ করছে কারা। তাছাড়া উইচ্যাটের নোটিফিকেশনের শব্দও আসছে অনাবরত। উইচ্যাটে আবার লাগলো কি? হুট করে ক্রা’শ করেনি তো আবার। চড়ম বিরক্তি নিয়েই মোবাইলটা হাতে নিল পূর্বাশা। মোবাইলে আসা নোটিফিকেশনের উপর ক্লিক করতেই চোখ ছানাবড়া তার। মস্তিষ্ক যেন থমকে গেছে কিছু সময়ের জন্য। জায়ান এসব কি করেছে? তার মান ইজ্জত নিয়ে ভরা মাঠে নেমে টানাটানি শুরু করেছে যে। না এটাকে থামাতে হবে। নয়তো এ পুরুষ তার মান ইজ্জতের পিন্ডি চটকে ছাড়বে দিনকে দিন। পূর্বাশা হন্তদন্ত হয়ে খুঁজে বের করলো জায়ানের নাম্বার। নিজের মোবাইলে থাকা শান্তির সিমটা যা কারো কাছে নেই সেই সিম থেকেই কল লাগালো জায়ানের নাম্বারে। বার দুয়েক রিং হতেই কলটা ধরলো জায়ান। গম্ভীর কন্ঠে বলল – আসসালামুয়ালাইকুম, কে বলছেন?

– ওয়ালাইকুমুস সালাম। কে বলছি পরে জানবেন আগে লাইভ ডিলেট করুন।

জায়ানকে আর পরে জানতে হলো না তার মোবাইলে কলদাতার পরিচয়। কন্ঠ শুনেই সে বুঝে নিয়েছে পূর্বাশাকে। ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠলো তার। লাইভ শেষ করার মাত্র এতটুকু সময়ের মধ্যেই তার উদ্দেশ্য কার্যকর হয়ে গেল? পাখি নিজেই এসে ধরা দিল তার কাছে? জায়ান উৎফুল্ল কন্ঠে বলল – তুমি! তুমি চীনে আছো পূর্বাশা? কোথায় আছো?

দাঁতে দাঁত চাপলো পূর্বাশা,‌‌ বলল – জা’হা’ন্না’মে’র চৌ’রা’স্তা’য় আছি। আপনি আগে লাইভ ডিলেট করুন।

– করবো না।

পূর্বাশা যেন তেতে উঠলো। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল – কি শুরু করেছেন কি আপনি? কার অনুমতি নিয়ে আপনি আমাকে নিয়ে লাইভ করেছেন?

একটু থামলো পূর্বাশা দাঁতে দাঁত চেপে আবার বলল – আমি কিন্তু এখন আর আগের পূর্বাশা নেই যে সব কিছু সহ্য করে নেব।

জায়ান ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। শান্ত কন্ঠে বলল – আমি জানি তুমি এখন আর আগের পূর্বাশা নেই। এখন তুমি শুধুমাত্র আমার কৃষ্ণময়ী।

– একদম বাজে কথা বলবেন না। আপনি লাইভ ডিলেট করুন।

– আচ্ছা করবো তবে আমর একটা শর্ত আছে।

ভ্রু কুঁচকালো পূর্বাশা। সন্দিহান ভঙ্গিতে শুধালো – কি?

– এখন এই মুহূর্তে তোমাকে আমার সাথে দেখা করতে হবে।

পূর্বাশা ঠোঁট কামড়ে ভাবলো কিছুক্ষণ অতঃপর বলল – কোথায় আছেন আপনি?

– ফ্ল্যাটে।

– আচ্ছা আমার হোস্টেলের সম্মুখে আসুন দেখা করছি।

জায়ান অবাক হলো যেন। পূর্বাশা যে এত তাড়াতাড়ি তার কথ মেনে নিবে আশা করেনি। এতদিন লুকিয়ে থেকে এখন বলল দেখা করতে আর সহজে মেনেও নিল? মনে মনে আনন্দিত হলো ছেলেটা। আনন্দিত কন্ঠে বলল – আমি এক্ষুনি আসছি।

কথাটা বলেই কলটা কাটলো সে। হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো কলেজের দিকে। ক্ষানিক বাদেই সে পৌঁছালো কলেজে। দেরী না করে ছুটলো পূর্বাশার হোস্টেলের দিকে।

হোস্টেলের কাছাকাছি আসতেই থমকে দাঁড়ালো জায়ান। দূর থেকেই সে দেখতে পেল তার প্রিয় রমনীকে। সে আগে থেকেই তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে হোস্টেলের সম্মুখে। হলদেটে এক সালোয়ার কামিজে আবৃত করে রেখেছে নিজের ছোট খাটো দেহ খানা। মুখটা কেমন চুপসে গেছে মেয়েটার। দেখেই কেমন অসুস্থ অসুস্থ লাগছে। এ কয়দিনেই কেমন শুকিয়ে গেছে পূর্বাশা। জায়ান আর অপেক্ষা করতে পারলো না। জায়ান আর অপেক্ষা করতে পারলো না। হুট করেই দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো পূর্বাশাকে। এই কয় দিনেই যেন মনে হচ্ছে কত বছর পর সে মেয়েটার দেখা পেয়েছে। ছুঁয়ে দিতে পেরেছে একটু।

আকস্মিক এভাবে পুরুষালী বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চমকে উঠলো পূর্বাশা। কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিল মেয়েটা। হাজার বার চড় থাপ্পর খাওয়ার পরও অনুমতি ব্যতীত হুট হাট তাকে ছুঁয়ে দেওয়ার সাহস কে রাখতে পারে তা আর বুঝতে বাকি নেই তার। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো পূর্বাশা অতঃপর বলল – ছাড়ুন আমাকে। এভাবে হুট করে জড়িয়ে ধরেছেন কেন? সবাই দেখছে তো।

জায়ানের বিরক্তিবোধ করলো। তবে ছেড়ে দাঁড়ালো পূর্বাশাকে। বিরক্তিভরা কন্ঠেই সে বলল – দেখলে দেখুক। আমি কোনো লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করছি না বা ভালোবাসছি না। আবার দুই দিন পর তোমাকে ছেড়ে দেব বা তুমি ছেড়ে দিলেই আমি তোমাকে যেতে দেব তেমন কোনো চিন্তা ভাবনাও নেই যে লোকজন দেখলে ভয় পাবো। আমি তোমাকে ভালোবাসি, পুরো দুনিয়াকে জানিয়েই ভালোবাসি তোমাকে।

পূর্বাশা শুনল জায়ানের কথা তবে প্রতিউত্তর করলো না কোন। কি উত্তর দিবে সে? এই উ’ন্মা’দ পুরুষের ভালোবাসা নিয়ে আর কতবার প্রশ্ন তুলবে সে? নক্ষত্র! সেই ঠ’ক’বা’জ পুরুষের জন্য সে জায়ানকে আর অবিশ্বাস কিংবা কষ্ট দিতে পারে না। পূর্বাশা আড় চোখে তাকালো জায়ানের পানে। কথা ঘুরানোর জন্য বলল – লাইভ ডিলেট করেছেন?

– না।

ভ্রু কুঁচকালো পূর্বাশা। চক্ষুদ্বয় ছোট ছোট করে শুধালো – কেন?

জায়ান ভাবলেশহীন নির্বিকার ভঙ্গিতেই জবাব দিল – লাইভ ডিলেট হয়ে গেছে দেখে যদি আবার দেখা না করো। তোমাকে তো বিশ্বাস নেই আবার।

পূর্বাশা দাঁতে দাঁত চাপলো, বলল – এক্ষুনি লাইভ ডিলেট করুন আমার সামনে দাঁড়িয়ে।

জায়ান নিজের পকেট থেকে তার আর চ্যাং এর মোবাইল দুটো বের করলো। পূর্বাশাকে দেখিয়ে ডিলেট করলো লাইভ। স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল মেয়েটা। জায়ানকে কিছু না বলেই পাশ ফিরে হাঁটা ধরলো অন্য দিকে। জায়ান পিছু নিল তার, প্রশ্ন করলো – কোথায় যাচ্ছো?

পূর্বাশা হাঁটতে হাঁটতেই উত্তর দিল – আপনার মায়ের কাছে।

– কেন?

– নাচতে।

জায়ান মৃদু হাসলো। পূর্বাশার পিছু যেতে যেতে বলল – তুমি যে নাচতে পারো জানা ছিল না তো আমার। চলো আমিও যাচ্ছি। একটু নাচ দেখি তোমার দেখি কেমন নাচতে পারো তুমি।

পূর্বশা আর কথা বাড়ালো না। কথায় কথা বাড়ে। তাছাড়া সে যাই বলুক না কেন এই পুরুষ তার প্রতিউত্তর যেন তৈরী করে সব সময়। এর সাথে মুখ লাগা মানেই সময় নষ্ট। পূর্বাশা লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে এলো কলেজের মেডিকেল সেক্টরে। দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে টোকা দিল দরজায়। অনুমতি নিতে বলল – আসবো ম্যাম!

সাথে সাথেই ভিতর থেকে মিষ্টি কন্ঠে উত্তর এলো – এসো।

পূর্বাশা ভিতরে ঢুকলো, পিছু পিছু আবার জায়ানও ঢুকেছে। মিসেস শীও তাকে দেখে হাসলেন ওদের একসাথে দেখে। হাস্যজ্জ্বৌল চোখ মুখেই বলল – আমি তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। এত দেরী হলো কেন তোমাদের আসতে?

পূর্বাশা ক্ষানিকটা অবাক হলো। সে তো বলেনি সে এখানে আসবে। জায়ানকেও তো আগে থেকেই জানায়নি যে সে আজ এখানে আসবে। তাহলে মিসেস শীও জানলো কিভাবে? পূর্বাশা কিছুটা অবাক কন্ঠেই শুধালো – আপনি জানতেন আমি আসবো?

চলবে…….

ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here