#এক_ফালি_প্রণয়|১২|
#শার্লিন_হাসান
এর মাঝে বেশ কয়েক দিন কেটে যায়। সিলেট ভ্রমণ শেষ হয়েছে তাঁদের। রোজকার মতো ব্যস্ত সময় কাটে। তবে রোদের সাথে আজকাল পূর্ণর ভাব চোখের পড়ার মতো। তূর্ণর সাথে ও আজকাল ওতো ভাব নেই। পূর্ণ ও আজকাল রোদ,রোদ করে। বিষয়টা আস্তে ধীরে সবার হজম হচ্ছে। সকাল বলে নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা খাচ্ছে সবাই। পূর্ণ রোদ পাশাপাশি বসা। তারা দু’জন কিছু নিয়ে কথা বলছিলো আর হাসছিল। শরীফ শিকদার চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন আর সবার সক্রিয়তা লক্ষ করছেন।
“তূর্ণ ভাইয়ার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
এরই মাঝে কথাটা বলে পূর্ণ। তখন রোদ উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ” কী সারপ্রাইজ?”
“ওটা তূর্ণ ভাইয়ার জন্য। তোমায় বলবো কেন রোদ?”
“আরে বলো না। ভাইয়া না জানলেই তো হলো।”
“কী সারপ্রাইজ পূর্ণ? ”
ব্রু জোড়া প্রসারিত করে বলে তূর্ণ। তখন পূর্ণ বেশ দাম্ভিকতার সাথে জবাব দেয়, ” নতুন সদস্য আসবে পরিবারে। কী বলো চাচ্চু?”
“হুম তাই। আমি আর ভাবী তো মেয়ে দেখা শুরুও করে দিয়েছি। ”
শরীফ শিকদার জবাব দেয়। তখন তিশা বলে, ” আমার নতুন ভাবী আসবে তাহলে। ”
“হুম আসবে।”
পূর্ণ জবাব দেয়। তখন শারমিন আঞ্জুম বলেন, ” তূর্ণ কে রাজী করাও তাহলেই হবে।”
“ভাইয়া তো রাজীই তাই না ভাইয়া?”
রোদের কথায় তূর্ণ তার চোখের দিকে দৃষ্টি স্থির করে। রোদ চোখাচোখি হতে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। তখন তূর্ণ শুধায়, ‘তোমরা যা ভালো মনে করো। আমি আর না করবো না।”
তূর্ণের মতে সবাই বেশ খুশি হয়। তবে সবার তাড়া থাকায় যে যার স্থানে ছুটে যায়।
পূর্ণ তার দলের লোকদের সাথে এসেছে তাঁদের আওতাধীন থাকা বিল্ডিংয়ের কাজ দেখতে। যেটার জমি নিয়ে নিসাধের সাথে সমস্য হয়েছিলো। সেটা পূর্ণ ঠিক করে দেয়। সেখানেই দোকান হচ্ছে। পূর্ণ গাড়ীর সাথো হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। আশেপাশে তার লোকজনই। পূর্ণ একজনের আইডি স্টক করে তার দেওয়া পোস্ট গুলো পড়ছে আর হাসছে। মেয়েটা বেশ চঞ্চল যেটা পূর্ণর ভীষণ পছন্দের। তবে পূর্ণ প্রকাশ করে না বিষয়টা। এই বয়সে এসব করে বেড়ালে সমস্যা আছে। আইডি স্টক করে মুচকি হেসে নিজের কাজে মনোযোগ দেয় পূর্ণ।
রুশা তার আম্মুর সাথে বসে রাফিকে নিয়ে আলোচনা করছে। রুশা তার মা-ভাই, বাবা তিনজনের প্রতিই বিরক্ত। কী দরকার এসব সম্পত্তি নিয়ে জামেলা করার কী দরকার? রুশার আম্মু রুকমিনি ছেলেকে নিয়ো হায় হুতাশ করছে। রুশার এতে মাথা ব্যথা নেই। তার মতে একবারে ঠিক করেছে পূর্ণ। সে নিজে মেয়ে হয়ে কীভাবে আরেকটা মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার সহ্য করবে? ভাই দেখে তেমন কিছু বলতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা রাফি তাঁদের বড্ড আদরের। সেই হিসাবে রুশা কিছুই না তাঁদের কাছে। রুকমিনি মেয়ের ভাবসাব দেখে মেজাজ হারায়। চোখ রাঙিয়ে বলে, ” ভাই জেলে আর তুমি এমন ভাব নিয়ে বসে আছো জেনো জেলে যায়নি আমার ছেলে পৃথিবী ভ্রমণে গিয়েছে। ওই তাহসিনার জন্যই সব হয়েছে।”
” যা হয়েছে খারাপ হয়নি।’
“রুশা!”
“আল্লাহ যা করে আমাদের ভালোর জন্যই করে মাম্মা। তুমি ভুলে গেলে বাক্যটা?”
রুকমিনি আর জবাব দেয়না। রুশাকে এসব বলে লাভ নেই। তিনি উঠে তার ভাইকে কল লাগায়। রাফিকে কীভাবে জামিন দেওয়া যায়। তার ছেলে বাড়ী নেই জেনো কিছুই ভালো লাগছে না রুকমিনির।
********
অফিস শেষে বাড়ী ফিরছে তূর্ণ। আজকে আনমনা হয়ে রিকশায় করেই বাড়ী ফিরছে। সময় সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসা। তূর্ণ ইচ্ছে করেই লেট করে বাড়ী ফিরছে। এই সন্ধ্যায় রাস্তার পাশে কিছু দম্পতি দেখতে পেলো তূর্ণ। আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেয় সে। এখনআর কিছু তেই আগ্রহ কাজ করে না তার।
বাড়ী আসতে নিজেই ফ্রিজ থেকে পানির বোতল নিয়ে রুমে চলে যায় তূর্ণ। লিভিং রুমে তার ভাই,বোনের বসে কথা বলছে।
রোদ সবার জন্য চা বানিয়েছে। নিজ হাতে সবাইকে সার্ভ করছে। শূন্য তূর্ণ কে ডেকে আনে লিভিং রুমে। রোদ তূর্ণর কাপটা এগিয়ে দিতে তূর্ণ কিছুটা ব্যস্ততা দেখিয়ে বলে, ” এখন চা খাবো না রোদ। আমার কাজ আছে।”
“আরে ভাইয়া আমি বানিয়েছি চা।”
“হ্যাঁ জানি রোদ ভালো চা বানায়।”
মুখ ফসকে বলে কথাটা। তখন রোদ শুধায়, “তুমি এর আগে কখনো আমার হাতে বানানো চা খেয়েছ?”
“না খাইনি। কারণ তুমি এর আগে চা বানাওনি কারোর জন্য।”
“বানাই না কারণ আমি বাজে চা বানাই। চাই না সেগুলো কেউ খেয়ে আজীবন আমায় বকা দিক।”
“তো আজকে বানালে যে?”
রোদ হাসে কিছুই বলেনা। তূর্ণ আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসে। রোদ নিজের কাপটা নিয়ে সোফায় বসে৷ তিশা, শূন্য রোদ,তূর্ণর কথার মানে বুঝা ট্রাই করছে। তবে শূনঢ় কিছু আন্দাজ করেছে। পূর্ণর এসবে মনোযোগ নেই। সে তার মতো করে রোদের বানানো চা টেস্ট করছে। তখন রোদ পূর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলে, “পূর্ণ ভাইয়া আমার বানানো চা কেমন হয়েছে?”
“মুখে তোলার মতো। তবে আর কাউকে এই চা বানিয়ে খাওয়াতে যেও না।”
” আরে যেমনই হোক একটু তো প্রশংসা করো।”
“করবো একদিন অপেক্ষা করো।”
কথাটা বলে পূর্ণ উঠে চলে যায়। তিশা রোদের দিকে তাকিয়ে বলে, “কী ব্যপার রোদ আমার ভাবী হওয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছো বুঝি?”
“কোন ভাইয়ের বউ?”
“কী জানি!”
“এই তিশা তুমি বেশী বুঝো না তো!”
“হুহ্! বুঝাই যায় না বুঝে কই যাবো?”
তাদের কথার মাঝে শূন্য বা হাত ঢুকিয়ে বলে, “আসলে রোদ তুমি কার? একজন মানুষ ভাব সাব অনুযায়ী তিনটি মানুষ তার দাবিদার।”
তখন রোদ শূন্যর মাতায় গাট্টি মেরে বলে, “শূন্য ভাই আমি আসলে কারোর না। আমি তো তোমার তাই না ভাইয়া?”
“মজা করো না রোদ। এটা অনেক মারাত্মক লেভেলের সিরিয়াস বিষয়।”
“সি আইডি গিরি বন্ধ করে অফিসের কাজে মনোযোগ দাও। সামনে নতুন প্রজেক্ট আছে।”
“হ্যাঁ অনেকগুলো প্রজেক্ট আছে। কারোর বিয়ের প্রজেক্ট, কারোর প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক উদঘাটনের প্রজেক্ট, বিজন্যাসের প্রজেক্ট। সব মিলিয়ে ওয়াও,ওয়াও টাইপের ব্যস্ততা আর সারপ্রাইজ।”
“তিশা শূন্য আসলে কার মতো হয়েছে? এতো খোঁচা মা-রা কথা শিখলো কবে থেকে?”
তখন শূন্য রোদের দিকে তাকিয়ে বলে, ” মন দিলে একজনকে দিও। বুঝে শুনে দিও কিন্তু।”
রোদ উঠে চলে আসে নিজের রুমে। না তার ভাই বোনের যেভাবে পিছু পড়েছে। সত্যি কথা পূর্ণর সাথে রোদের সম্পর্ক নেই তাও সবাই কেন সন্দেহ করে?
রোদ ভেবে পায়না। তবে ডায়েরি হাতে বেলকনিতে যায় রোদ। দোলনায় বসে ছোট্, ছোট বাক্য সাজায়।
❝তোমাকে পারিনি আপন করতে,পারিনি হৃদয় সায়রে জমে থাকা ভীষণ কঠিন একটা বাক্য শোনাতে। তবে তোমায় আমি রেখেছি, খুব যতনে আমার এক ফালি প্রণয়ের রঙে।❞
লেখা:#শার্লিন_হাসান (কপি করা নিষেধ)
‘অপ্রিয় পুরুষ’
❝প্রণয়ের স্বপ্নে তোমায় সাজাই, পরিনয়ের রঙে তোমায় রাঙাই, তবে বিচ্ছেদের ভয়ে তোমায় হারাই।❞
লেখা:#শার্লিন_হাসান (কপি করা নিষেধ)
রোদ আকাশের দিকে তাকিয়ে ভানে পূর্ণর সাথে তার মেলামেশা, কথাবলার শুরুটা নিয়ে। রোদ ডুবে যেতে,যেতে বেঁচে যাওয়ার দুইদিন পর ছাঁদে দাঁড়িয়েছিলো। তখন কী মনে করে পূর্ণ আসে ছাঁদে। দেখে মনে হয়েছিলো রোদকেই খুঁজছে। রোদ নিজেকে যথেষ্ট ঠান্ডা রাখে। পূর্ণর উল্টাপাল্টা কথায় মেজাজ হারালে আবার ঝগড়া হবে তাঁদের। তখন পূর্ণ বলেছিলো, ” এখন কেমন ফিল করছো?”
তখন রোদ শুধায়, ” দুইদিন পর তো সুস্থতাই অনুভব করবো। আর আমায় দেখলেও বুঝা যায় সুস্থ হয়ে গেছি। যখন খোঁজ নেওয়ার তখন নেওনি এখন আলগা দরদ দেখাতে হবেনা।”
রোদের ত্যাড়া কথায় পূর্ণর মেজাজ বিগড়ে যায়। রাগী স্বরে বলে, ” এই জন্যই তোকে আমি এভয়েড করি। তোর সাথে আমার একটুও যায় না। এক মূহুর্ত ও না। তুই আমার বিপরীত একদম বিপরীত। যাই হোক ভুল হয়েছে আমার তোকে কথাটা জিজ্ঞেস করা।”
” গুড। আমি মরে যাচ্ছি। হায় আল্লাহ তাহিয়ান শিকদার পূর্ণ আমায় পাত্তা দিচ্ছে না। তার ইগোর আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি। তার থেকে এটেনশন পাওয়ার আশায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। প্লিজ কেউ এটেনশন এনে দাও।”
“এই চুপ থাকবি?”
” তোমার সাথে আসলেই আমার যায় না।”
পূর্ণ তেজ দেখিয়েই প্রস্থান করে সেদিন। রোদ বিরক্তি নিয়ে তার যাওয়া দেখছে। এরপর ও বেশ কয়েকবার তাঁদের ঝগড়া হয়। তবে হুট করেই পূর্ণ চেঞ্জ হয়ে যায়। রোদের ত্যাড়া কথায় ও সে সুন্দর ভাবে উত্তর দিতো। পূর্ণর ব্যবহার,কেয়ার রোদ আর ত্যাড়ামী করতো না। গলে যায় পূর্ণ প্রতি। এখনো গলা অবস্থাই আছে। তবে রোদের ভীষণ ভয় হয়। সে নিজের সত্তাকে হারাতে চায় না। ছোট হতে চায় না কারোর কাছে। নিজের অবস্থানের জায়গা ব্যতীত আর কিছুই নেই তার কাছে তবে সেই অবস্থানের জায়গাটা কেড়ে নেওয়ার জন্য মানুষের অভাব নেই। সবাই ভালো কিন্তু মানুষ জাতিকে বিশ্বাস করা বড্ড দায়। কে কখন আপন সেজে পেছন থেকে ছুরির আঘাত করে বলা যায় না।
#চলবে
(দ্রঃ সবাইকে রমজানের শুভেচ্ছা। সবাই সুস্থ থাকুন, আল্লাহর রহমতে থাকুন এবং আমার জন্য একটু দোয়া করুন।❤️
আমি হারিয়ে যাইনি তবে ব্যস্ততা গুছিয়ে ভার্চুয়ালে ফিরতে একটু লেট হয়ে গেলো। যেহেতু রমজান মাস এবং এই মাসটা ইবাদত পালন করে কাটানোর মাস। পাশাপাশি, প্রাইভেট,ক্লাস তো মাস্ট। এই নিয়ে ব্যস্ততার শেষ নেই আমার।লেট করার জন্য ক্ষমা প্রার্থী আমি।😑)
আগের পার্টের লিংক,
https://www.facebook.com/100077548442342/posts/440324445229167/?app=fbl