এক_ফালি_প্রণয়|১১| #শার্লিন_হাসান

0
120

#এক_ফালি_প্রণয়|১১|
#শার্লিন_হাসান

কেটে যায় বেশ কয়েকদিন। পূর্ণ আজকাল বেশ ব্যস্ত। তবে রোদের সাথে তার ভাব আজকাল বেশ বেড়েছে। এই নিয়ে অবশ্য এখন কেউ তেমন মাথা ঘামায় না। পূর্ণ কে আবার বিশ্বাস নেই তবে সবার মনেই ডাউট কী এমন হলো যে পূর্ণ আর রোদ সাপে নেউলে এতো ভাব। নিজের কাজকর্ম সামলে এগারোটার দিকে পূর্ণ খেতে বসে। বাকীরা দশটায় খেয়ে নিয়েছে রাতের ডিনার। পূর্ণ একাই খেতে বসেছে। তখন রোদ আসে এদিকটায়। পূর্ণকে লেট করে খেতে দেখে শুধায়, ” একা,একা খাচ্ছো?”

” কেনে তুমি ও আমার সাথে খাবে নাকী?”

” আরে না! আমি ডিনার করে নিয়েছি।”

“তূর্ণ ভাই করেছে ডিনার?”

“হ্যাঁ করেছে।”

পূর্ণ আর কথা বাড়ায়না। রোদ ফ্রিজ থেকে পানির বোতল নিয়ে রুমে চলে আসে। পূর্ণ খাওয়া শেষ করে তার রুমের দিকে হাঁটা ধরে।

পরের দিন সকালে তিশা,রোদ ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। তূর্ণ তখন ঘুম থেকে উঠেছে সবে। গার্ডেন থেকে উপরে নজর দিতে দেখে দু’জন কথা বলছে। রোদের রোদ পড়া মুখশ্রীর দিকে একনজর তাকিয়ে নজর সরিয়ে নেয় তূর্ণ। কিছু একটা ভেবে সে মুচকি হাসে।

রোদ তিশা মিলে প্লানিং করছে সিলেট। সবকিছু ঠিকঠাক হলে আগামী কালকে তারা রওনা হবে। কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে দু’জন নিচে চলে যায়। ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্য রেডি হয়ে নেয়। সকালের নাস্তাটা সেরে দু’জন ভার্সিটিতে চলে আসে।

পূর্ণ পার্টি অফিসের মিটিং শেষ করে বারোটার দিকে রওনা হয় বাড়ীর উদ্দেশ্য। আজকে তার কিছু কাজ বাকী আছে। যেহেতু ঢাকা থেকে সিলেট যাবে তাই আকাশ পথটাই বেছে নিয়েছে সে।
সিলেটের সাদা পাথরে যাবে সেজন্য রিসোর্ট ও বুক করে নিয়েছে। তার দায়িত্ব সে সুন্দর ভাবে পালন করে নিয়েছে।

অফিসে নিজের রুমে বসে আছে তূর্ণ। এসি চলছে তবুও জেনো শরীর ঘামছে। কিছু একটা ভেবে তূর্ণ চুলে হাত ভোলায়। আগামী কালকে তো সিলেটের উদ্দেশ্য রওনা হবে। এই সুন্দর প্লেসে সুন্দর কিছু মূহুর্ত ও ক্যাপচার করা যায়। কিন্তু এটা কোন ভাবে সম্ভব হচ্ছে না। হবে না! তূর্ণ দ্বিধায় পড়ে যায়। কাজকর্ম তার সব উচ্ছনে গেলো। কাজে মন বসে না আজকাল। সামনে বসে আছোন শরীফ শিকদার। এসেছিলেন কিছু প্রেজেক্ট নিয়ে কথা বলতে। এসেই দেখে তূর্ণ ঝিমাচ্ছে।
শরীফ শিকদার ও বিষয়টা কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছেন। তবে কিছু বলেন না তিনি। বেশ বুঝতে পেরেছেন তাঁদের ছেলেরা বড় হয়েছে। বিয়ে শাদী দরকার। এই বয়সটা অবশ্য বউয়ের সাথে রোমান্স করে কাটানোর। অফিসে বসে কাজকর্ম নিয়ে মুরগির মতো ঝিমা’নুর না।
তূর্ণকে খুশি করানোর জন্য তিনি বলেন, ” বাপ মেয়ে দেখবো নাকী?”

“আরে চাচ্চু আমি কিছু বলেছি নাকী?”

“শূন্যকেও বিয়ে দিবো। তুমি বড় তাই তোমার সিরিয়াল আগে। এমনিতে ভাবীর সাথে এই বিষয়ে কথা হয়েছে আমার। তুমি চিন্তা করোনা। ”

তূর্ণ কিছু বলেনা। পরবর্তীতে তারা তাঁদের মেইন টপিকে মনোযোগ দেয়।

*********
পরের দিন সবাই রওনা হয় সিলেটের উদ্দেশ্য। ঢাকা থেকে সিলেট যাবে। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এসে পৌঁছায় দশটার দিকে। সাড়ে দশটায় তাঁদের প্লাইট। পঞ্চাশ মিনিটের মতো সময়ের ব্যবধানে তারা সবাই ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরন করে।

সেখান থেকে বাস ধরে রিসোর্টে পৌঁছায় সবাই।
তূর্ণ, শূন্যর জন্য এক রুম হলেও পূর্ণর জন্য আলাদা রুম। সে সবার সাথে মানিয়ে নিতে পারে না সহজে। তাঁদের সবারই পাশাপাশি রুম। আজকে আসতে,আসতে লান্স টাইম পেড়িয়ে গেছে। তাই সবাই লান্স করে রেস্ট নেয়। আগামী কালকে সাদা পাথরে যাবে।

রোদ রুমের বেলকনিতে যায়। জায়গাটা বেশ সুন্দর। তবে সিলেট আসার কোন ইচ্ছে ছিলো না তার। বারণ করতে পারেনি, পূর্ণ, তূর্ণ তাকে ধমকাধমকি করবে।

রিসোর্টের সামনে আড্ডা দেওয়ার মতো জায়গা আছে সেখানেই সবাই আড্ডা দিতে বসে। তাঁদের মধ্যে শূন্যকে বলা হয় গান গাওয়ার জন্য। তার ভয়েস মোটামুটি ছিলো। শেষমেশ সবাই পূর্ণকে চেপে ধরে গান গাওয়ার জন্য। এর আগে নাকী তূর্ণ শুনেছিলো কোন ভাবে। বেশ ভালো গায় প্রশংসা ও করলো। তবে বাকীরা কেউই শোনেনি বা শোনার মতো সৌভাগ্য হয়নি। সবার মাঝেই বেশ এক্সাইটেড ভাইব চলে এসেছে। পূর্ণ কেনো জেনো না করেনি। আজকাল তার মাঝে এতো পরিবর্তন নিজেকেও ভাবাচ্ছে। অতঃপর কাঙ্ক্ষিত মূহুর্তে পূর্ণ গায়,
হতে পারে কোনো রাস্তায়
কোনো hood তোলা এক রিকশায়
আমি নীল ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে, তুমি দেখলে না
রোদে পোড়া এ রোমিও চেহারা
তুমি বুঝলে না আমার ইশারা
মন বলে যদি থামতে, তুমি থামলে না

তোমার জুলিয়েট হাসি হেসে
যদি ডাকতে ভালোবেসে
আমি তোমার চোখে তাকানোর সাহস পেতাম না
আমার জড়সড় এই শরীরে
তোমার হাওয়ায় লাগছে ফুরফুরে
প্রেম নাকি পাগলামি, বলতে পারব না

লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না। (২)
তোমার পিছু ছাড়ব না

সবাই বেশ মুগ্ধ হয় গান শোনে। পরবর্তীতে পূর্ণ নিজেই আরেকটা গান গায়,

ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে
আমার মনের ঘরে চাঁদের আলো চুইয়া চুইয়া পড়ে
পুষে রাখবো রাখবো রে বন্ধু তোমায় যতনে

দুধে আলতা গায়ের বরণ রূপ যে কাঁঞ্চা সোনা
আচল দিয়া ঢাইকা রাইখো চোখ যেন পড়ে না
আমি প্রথম দেখে পাগল হইলাম
মন যে আর মানে না
কাছে আইসো বন্ধু প্রেমের কারণে
ভালোবাইসো রে বন্ধু আমায় যতনে

তাঁদের গানের আড্ডা শেষ হতে রুমে যাওয়ার তাড়া দেখায় রোদ। কেউই আর তেমন কিছু বলেনি।

রাতের ডিনার টা শেষ করে বেলকনিতে যায় পূর্ণ। আজকাল তার মাঝে পরিবর্তন এসেছে। পূর্ণ তো এমন ছিলো না! এতটা পরিবর্তন আশা করেনি পূর্ণ।

পরেরদিন,
রিসোর্ট থেকে ভোলাগঞ্জ বাজারের উদ্দশ্যে রওনা হয়।
মাথার ওপরে তুলোর মতো মেঘ। সীমান্তের দিকে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো সবুজ পাহাড়। নিচে পানি-পাথরের সংমিশ্রণ। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঠান্ডা পানির স্রোত। যদিও সিলেট জুড়েই সবুজের হাতছানি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেট। যেই প্রকৃতির দৃশ্য দেখার জন্য ছুটেছে এক ঝাক তরুণ,তরুণীরা। পাহাড় গুলোকে মুড়িয়ে রাখা চা-বাগান,আকাশ,সবুজ ক্ষেত,ছোট বড় নদী।
চায়ের রাজ্য, বুনো বন, পাথুরে নদী, পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা ঝরনা, বিস্তৃত নীল জলধারা, হাওরসহ আছে দৃষ্টিনন্দন আরও পর্যটনকেন্দ্র। এর মধ্যে অনেকের প্রিয় ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর।

এ পাথরের উৎস ধলাই নদ। ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে প্রচুর পরিমাণে পাথর ঝরনার পানিতে নেমে আসে।
ভোলাগঞ্জ বাজার থেকে এক কিলোমিটারের ভেতরেই সাদা পাথরে যাওয়ার ঘাট। রোদ,তূর্ণ, পূর্ণ সহা তারা সবাই ঘাটে এসে নামে। সাদা পাথরের মনোরম দৃশ্যে যেনো চোখ জুড়িয়ে গেলো। সাদা পাথরের স্বর্গরাজ্য পাথর বিছানার উপর দিয়ে ধেয়ে যাচ্ছে ঝরনার পানি।

দু’দিকে পাথর, মাঝখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ জলধারা। রোদ,তিশা আর দেরী করেনি। ঠান্ডা স্বচ্ছ পানিতে পা ভিজিয়ে বসে রয়। বাকীরাও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে। এছাড়াও সুন্দর, সুন্দর মূহুর্ত গুলো তারা ক্যামরা বন্দী করে নিচ্ছে।

পূর্ণ তাঁদের থেকে কিছুটা দূরে বসা। এক পলকে সে রোদ,তিশার কান্ড দেখছে। সিলেটের সাদা পাথরের সৌন্দর্য উপভোগ করবে কী! সামনে বসে থাকা অপরুপ কন্যার প্রকৃতি বিলাস দেখেই জেনো চোখ জুড়াচ্ছে।

সবাই মিলে গ্রুপ পিকচার তুলে। পূর্ণ, তূর্ণ তাঁদের একমাত্র বোন তিশাকে পিক তুলে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পূর্ণর তো মাথা থেকে উড়ে গিয়েছিলো তার যে একটা বোন আছে। মনে,মনে রোদকেই দোষারোপ করলো সে। তূর্ণ বেচারায় নিজের বিয়ের চিন্তায় তিশা,রোদ,পূর্ণ সবার কথাই ভুলে গেছে। তবু তিশার আবদার গুলো আপাতত সে মাথা পেতে নিচ্ছে।

সবাই মিলে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে সময় কাটিয়ে পুনরায় রওনা হয় রিসোর্টের উদ্দেশ্য।
( লোকেশন গুগল থেকে কালেক্ট করা। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

#চলবে

( 🫤 কিছুই হচ্ছে না ক্যাননন!! ওঁদের ক্যামিস্ট্রি কেমন পানসে একটুও মিষ্টি হচ্ছে না। আগামী পার্ট থেকে চেষ্টা করবো একটু মিল দেওয়ার। বুঝতে পারছি না আমি নিজেই কী পানসে হয়ে গেলাম নাকী? 🤷‍♀️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here