#এক_ফালি_প্রণয়|১৪|
#শার্লিন_হাসান
সময়ের সাথে সূর্য পূর্ব দিগন্তে হেলান দিয়েছে। পৃথিবী সেই আলোয় আলোকিত হয়ে, একটি দিনের সূচনা করেছে। গাছে পাখি ডাকছে। সকালের স্নিগ্ধ বাতাস বইছে। নিমিশেই এই নগরীতে ব্যস্ততা বেড়ে গিয়ে ব্যস্ত নগরীতে রুপ নিবে। আজকে সব ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়েছে রোদ। তার দুই মামীর সাথে মেয়ে দেখতে যাবে। তার ছোট মামু একটা মেয়ের সন্ধান দিয়েছে। তাকেই দেখতে যাবে তারা। রোদের ইচ্ছে নেই কিন্তু তার দুই মামীর জন্য না করতে পারেনি। দু’জনই রোদকে চেপে ধরেছে।
শরীফ শিকদার, তূর্ণ সহ তারা নাস্তা করতে বসেছে। তূর্ণ শুনেছে আজকে তার জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়া হবে। ব্যপারটা খুব তাড়াতাড়ি হবে ভাবতে পারেনি তূর্ণ। তবে নতুন কেউ তার জীবনে আসবে এই ধারণা জ্ঞাপন করেছে মনে, মস্তিষ্কে। চুপিসারে নাস্তা সেরে গাড়ীতে গিয়ে বসে তূর্ণ। শরীফ শিকদার আর শূন্য আসতে ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দেয়। তূর্ণ বাইরে তাকিয়ে আছে। পাশে শূন্য তার বাবার সাথে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলছে।
তূর্ণর এসবে মনে নেই। পুরোনো দিনের স্মৃতি আর সময়টাকে তূর্ণ ভীষণ মিস করছে। খুব করে ফেলে আসা দিনে ফিরে যেতে মন চাচ্ছে। সে যদি মেয়ে তো?তাহলে এখন কী করতো? না তো! সে তো মেয়ে না। মেয়ে হলে নাহয় কেঁদে কেটে ভালোবাসি বলতে পারতো। সে যে ছেলে! পাথর বুকে পুষে রেখে অনিচ্ছাসত্ত্বেও থাকা সত্ত্বেও বিপরীত কারোর সাথে গোটা জীবনে নিঃশব্দে পার করে দিবে।
দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ফোর্থ ফ্লোরে যায় তূর্ণ। নিজের ডেস্কে বসে আছে আনমনা হয়ে।
এগারোটার দিকে রওনা হয় সাইখা ইসলাম, রোদ,শারমিন আঞ্জুম। বাড়ীতে প্রবেশ করে মেয়ের মায়ের সাথে কুশলাদি বিনিময়ের মাধ্যমে সোফায় বসেন তারা। কিছুক্ষণ পর মেয়েকে আনা হয়। শারমিন আঞ্জুম ‘সিমথি’ কে পাশে বসান। এটা ওটা জিজ্ঞেস করে। রোদ সিনথির দিকে পলকহীনভাবে তাকায়। মেয়েটা মাশাল্লাহ। রোদ ভাবছে তূর্ণর সাথে বেশ মানাবে। তার মামীদের ও হয়ত পছন্দ হবে।
টুকটাক কথা বলার মাধ্যমে বিদায় দিয়ে গাড়ীতে বসে তারা তিনজন। তখন সাইখা ইসলাম বলেন, “সিনথি কে বেশ লাগছে। তোমার কেমন লাগলো রোদ?”
“আমার ও ভালো লেগেছে। কিন্তু আমাদের ভালো লাগা না লাগায় কিছু না। তূর্ণ ভাইয়ের পছন্দ হলেই সব ঠিক হবে।”
“তূর্ণর কেমন মেয়ে পছন্দ?”
শারমিন আঞ্জুমের কথায় রোদ শুধায়, ” আজকে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করবো।”
“ঠিক আছে। তবে আমি ছোট ভাইয়ার সাথে কথা বলবো। আমাদের সবার মত থাকলে তূর্ণ না করবে না আশা করি।”
রোদ আর কিছু বলেনা। সাইখা ইসলাম এনং শারমিন আঞ্জুম কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেন বাড়ী ফেরার রাস্তাতেই।
*******
“আরে ভাই চোখে কী সমস্যা? এতো বড়লোক ভাইব নিয়ে গাড়ী চালান তো রাস্তা টাও কিনে ফেলুন না? তাহলে মানুষ গাড়ী চাপা দিয়ে মে’রে ফেললে জেলের যেতে হবে না। বলতে পারবেন আমার রাস্তা দিয়ে আমি গাড়র চালিয়েছি। কাউকে বলিনি আমার রাস্তা দিয়ে হাঁটতে। কীসব মানুষরে বাবা! আমার মতো ইনোসেন্ট মেয়েটাকে মে’রে ফেললে কী হবে বলুন তো? এমন মেয়ে খুঁজে পাবেন জীবনে?”
অচেনা মেয়েটার কথায় ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যায় তূর্ণ। এক দমে এতো গুলো কথা কেউ বলতে পারে? তাও এমন অগোছালো ভাবে? তূর্ণকে চুপ থাকতে দেখে সিনথি আবারো বলে, ” স্যরি বলুন এক্ষুণি।”
“স্যরি বলবো কেনো?”
তূর্ণর ত্যাড়া কথায় সিনথি পুনরায় শুধায়, ” একটু আগে আমায় মে’রে ফেলতে যাচ্ছিলেন। দেখুন আমার হাতে ব্যাথা পেয়েছি।”
“আপনি রাস্তায় দেখে শুনে চলতে পারেন না সেটা কী আমার দোষ? হর্ণ দিলেও সরেন না। ত্যাড়াদের মতো হাঁটতে থাকেন।”
“এই আপনায় আমি জ্ঞান দিতে বলিনি।”
“আপনাকেও আমি বলিনি নিজের ঢাক ঢোল পেটাতে। তাও অচেনা একজন মানুষের কাছে। ”
“আমার লেট হয়ে যাচ্ছে বলে ছেড়ে দিলাম আপনায়।নাহলে বুঝিয়ে দিতাম আমি কী জিনিস।”
“আমার ও তাড়া আছে দেখে ছেড়ে দিলাম আপনায়। নাহলে গাড়ী চাপা দিয়েই বুঝিয়ে দিতাম আমি কী জিনিস।”
কথাটা বলে তূর্ণ গাড়ীতে উঠে যায়। আপাতত তূর্ণর মেজাজ গরম। হর্ণ বাজিয়েছিলো মেয়েটা সরতে লেট করেছে তাই গাড়ী লাগিয়ে দিয়েছে। দোষটা আসলে তূর্ণর তবে এসবে ইন্টারেস্ট আসছে না তূর্ণর। মেয়েটাও দেখো এক নাম্বারের ঝগড়ুটে। একবারে নোবেল প্রাপ্ত ও বলা যায়।
সন্ধ্যার পর,পরে বাড়ী ফিরে তূর্ণ। তখন তিশা তাকে কোল্ড ড্রিং এগিয়ে দেয়। তূর্ণ নেয়না সেটা। সোজা রুমে চলে যায়। এই নিয়ে তিশা খানিলটা রাগ করেছে। তার ভাই গুলো ও না। আজকাল কেমন জেনো রাগ চটা হয়ে গেছে। তিশা বোঝেনা কার রাগ তারা কার উপর দিয়ে ঝাড়ছে।
মাথা ঠান্ডা করে তূর্ণ লিভিং রুমে আসে। কেউই নেই আপাতত এখানে। তূর্ণ ভালোই লাগলো। এটলিস্ট একা থাকতে পারবে কিছুক্ষণের জন্য। তখন আবার কোথা থেকে রোদ ছুটে আসে। তূর্ণর কাছে এসেই রোদ স্থির হয়ে বলে, ” তূর্ণ ভাইয়া একটা কথা বলার ছিলো।”
“টাকা লাগবে?”
” আরে না। টাকা পূর্ণ ভাইয়াও দেয়। আর এতো টাকা দিয়ে আমি কী করবো?”
“কিছু না। এবার বলো কী বলবে?”
” বলছিলাম ভাইয়া বিয়ে করবে তো। আচ্ছা বলো তো তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ?”
“এই কথা বলার জন্য এভাবে ছুটে আসা লাগে?”
“আরে বলো।”
” খুব একটা চঞ্চল না। একটু নিরব টাইপের। তবে তার পার্সোনালিটি স্ট্রং হতে হবে। মেয়েটা দেখতে যেমনই হোক তার মন মানসীকতা ভালো হলেই হবে। সর্বোপরি রোদ পাখির মতো কেউ হলে মন্দ হয়না।”
” রোদ বা’জে মেয়ে। রোদের থেকে বেটার মেয়ের অভাব নেই। আই উইশ তাদের মধ্যে কোন তিনজন আমার তিন ভাইয়ের বউ হবে।”
“গুড।”
রোদ আর কথা বাড়ায়না। রুমে এসে সোজা দরজা বন্ধ করে দেয়।
********
“রাফি খান যাতে আরো ছয়মাস জেলে পড়ে থাকে। তার ব্যবস্থা করো। কিছুতেই একে জেল থেকে বের করা যাবে না।”
কলে কথাটা বলে পূর্ণ। অপরপাশ থেকে একজন শুধায়, ” কিন্তু স্যার খামোখা একে জেলে রেখে কী হবে? এমনিতে তার বাবা রাজিব খান এসেছে। কয়েকদিনের মধ্যপ তার জামিনের ব্যবস্থা করবে।”
” টাকা যাক। আমি টাকা দিতে রাজী তবুও একে আমি জেলে দেখতে চাই।”
” রাজিব খান ও টাকা দিয়ে তার ছেলের জাবিন করাতে রাজী। কিন্তু স্যার একে ছয়মাস জেলে রেখে কী হবে?”
” কিছু না আমি একটু বিয়ে করবো।”
কাঠকাঠ গলায় উত্তর দেয় পূর্ণ। ওপর পাশের ব্যক্তি পূর্ণর রাগ বুঝতে পেরে বলে, ” বিষয়টা ক্লিয়ার করে বলুন স্যার।”
“আমার কাজটা হয়ে গেলে রাফি বাইরে আসলে সমস্যা নেই। এখন আসলে নতুন জামেলা। খুব ছলে বলে কৌশলে একে ফাঁসিয়েছি। এর পেছনে অবশ্য কারণ আছে।”
“আপনি!”
“দেখো আমার কিছু করার নেই। আমি আমার ক্যারিয়ার, সাজানো সম্রাজ্য শেষ হতে দিতে পারবো না। আমার বাবার পরিশ্রমের ফসল টিকিয়ে রাখার যখন আমায় যত নিচে নামতে হয় আমি নামবো। তবে হ্যাঁ, এই গেমের খেলোয়াড়কে আমি নিজ হাতে খু’ন করবো আমার প্রতিজ্ঞা এটা।”
” আচ্ছা স্যার চেষ্টা করে দেখি কী করা যায়।”
“দেখো।”
পূর্ণ কল কেটে দেয়। ফেসবুক স্ক্রোল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পূর্ণ। আবারো সেই আইডিটাতে যায় পূর্ণ। যেই আইডির পোস্ট গুলো তার পছন্দের। কিন্তু আইডির মালিককে সে পাত্তা দেয়না। কিছুক্ষণ আইডি স্টক করে অফলাইন হয়ে যায় পূর্ণ।
রাতের ডিনার শেষ করে সিনথি তার ফ্রেন্ড রুশাকে আজকের ঘটনা বলে। বিকেলে বাইরে বের হয়েছিলো সিনথি। কোথা থেকে গাড়ীটা এসে তাকে ধাক্কা মারে। হাতে ব্যথা পেয়েছে তবে লোকটাকে এক নাম্বারের অভদ্র মনে হয়েছে তার। ম্যানার্স শিখেনি মনে হয়। একটা বার স্যরি বলার প্রয়োজন মনে করেনি। তাড়া থাকায় এবারের মতো ছেড়ে দিয়েছে। নাহলে বুঝিয়ে দিতো সিনথি কী জিনিস। মনে,মনে চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দিয়েছে। এই জন্য বেশী একটা ক্ষোভ নেই মনে।
সিনথির থেকে সব কথা শুনে রুশা হাসে। বেচারি সিনথি বান্ধুবীর হাসি দেখে গা জ্বলছে তার। তেজ দেখিয়ে বলে, ” সব রা’জাকারের সাথেই কী আমার পরিচয় হয়?”
“এ্যাই এখানে রা’জাকার আসলো কোথা থেকে?”
” আকাশ থেকে টপকে এসেছে।”
“শোনলাম তোর বিয়ে হতে যাচ্ছে।”
” আরে ভাই দেখলেই কী বিয়ে হয়ে যায়?”
” তাও ঠিক।”
” দোয়া কর যাতে বিয়েটা হয়ে যায়। আমার পড়ালেখা ভালো লাগে না।”
” হয়ে যাবে দেখিস।”
“তাই জেনো হয়।” তিন বার আমিন!”
#চলবে
আগের পার্টের লিংক,
https://www.facebook.com/share/p/P4cmdZMPA6udwigG/?mibextid=oFDknk
গ্রুপ লিংক,
https://facebook.com/groups/582123563029858/
আমার পার্সোনাল আইডির লিংক,
https://www.facebook.com/profile.php?id=100076559331822