এক_ফালি_প্রণয়|১৫| #শার্লিন_হাসান

0
103

#এক_ফালি_প্রণয়|১৫|
#শার্লিন_হাসান

অনেক ভাবনা চিন্তার পর সিদ্ধান্ত হয় সিনথিকে শিকদার বাড়ীর বড় পূত্র বঁধু করে আনা হবে। এই নিয়ে সবাই বেয় খুশি। পূর্ণ তূর্ণকে সিনথির পিক দেখাচ্ছে। তূর্ণ দেখে কিছুটা অবাক হয়। এই সেই ইডিয়েট মেয়েটা। তূর্ণ পূর্ণর দিকে তাকিয়ে বলে, ” একে তোরা কোথায় পেয়েছিস?”

“কেন তুমি চেনো একে?”

“এই তোরা মজা নিচ্ছিস না তো?”

পূর্ণর কথার জবাবে তূর্ণ বলে। তখন শূন্য বলে, ” রোদ সহ পিক দেখো না। ওইদিন যে গেলো সিনথি ভাবীকে দেখতে।”

তূর্ণ পিক খেয়াল করে। আর কিছু বলে না। তখন পূর্ণ বলে, ” তাহলে একটা বিয়ে হবে আমাদের বাড়ীতে।”

“হুম!”

তূর্ণ জবাব দেয়। তখন শূন্য বলে, ” ভাইয়া তুমি রাজী?”

“হুম রাজী। কেনো রাজী হবো না বলতো? সনার ভাবী চাই তো! আম্মুর আরেকটা মেয়ে চাই। সমস্যা কোথায়?”

“না সমস্যা নেই।”

তূর্ণ প্রস্থান করে নিজের রুমে চলে যায়। পূর্ণ পায়ের উপর পা তুলে বসে। শূন্যর দিকে তাকিয়ে বলে, ” তা নতুন প্রজেক্টের কাজ সুন্দর ভাবে হচ্ছে তো?”

“হ্যাঁ!”

” ঘরের শত্রু বিভীষণ। বাক্য টা চরম সত্য।”

“এখন আবার শত্রু আসলো কোথা থেকে পূর্ণ ভাই?”

” শত্রুর কী অভাব আছে নাকী? যাই হোক সব খারাে যার শেষ ভালো তার।”

কথাটা বলে পূর্ণ উঠে চলে যায়।

পরের দিন সকালে রান্না শেষ করে সাইখা ইসলাম এবং শারমিন আঞ্জুম সিনথি দের বাড়ী যায়। কল করেই এসেছে। সিনথি শিকদার বাড়ীর বড়দের দেখে গেস করে বিয়েটা হয়ত হবে। রাতে তার মায়ের থেকে শুনেছে ছেলে সম্পর্কে। যতটুকু শুনেছে সিনথির পছন্দই হয়েছে। যদিও পিক দেখেনি। সিনথি প্রেম ভালোবাসা বিশ্বাস করে না। যা হবে বিয়ের পর। হালাল ভাবে! তাই তো বিশটা বছর ধরে নিজের হালাল সম্পর্কের জন্য অপেক্ষায় ছিলো।

শারমিন আঞ্জুম সিনথিকে দেখে বলেন, ” আগামী কালকে তুমি আমাদের বাড়ীতে এসো তোমার গুরুজনদের সাথে।”

” কিন্তু আন্টি এটার তো নিয়ম নেই।”

“নিয়মের কী গেছে মা? তুমি পরিচিত হতে যাবা। আর ভবিষ্যতে ওই মানুষগুলোর সাথেই তো মিলেমিশে থাকবা তাই না? গেলে সমস্যা কোথায়?”

সিনথি তার আম্মুর দিকে তাকায়। আফিয়া ইসলাম হেঁসে বলেন, ” সিনথি শুনেছে আহিয়ান শিকদার তূর্ণ সম্পর্কে। সব ঠিকঠাক হলে নাহয় ওরা মিট করবে। এমনিতে দেখা হবে,পরিচিত হওয়া যাবে। এখন গেলে এটা কেমন বেমানান লাগে।”

তখন সাইখা ইসলাম বলেন, ” আমরা এসব নিয়ে ভাবী না। আর কেউ কিছু বলবে না।”

“ঠিক আছে। গেলে নাহয় যাবে।”

সেখানে কথা বার্তা বলে শারমিন আঞ্জুম তার বালা জোড়া সিনথিকে পড়িয়ে দেন। সিনথি বালা জোড়ার দিকে তাকায়। সম্ভবত গোল্ডের সাথে অন্য কোন দামী পাথরের সংমিশ্রণ করা। তবে বালা জোড়া সিনথির বেশ পছন্দ হয়।

হালকা মুখরোচক খাবার খেয়ে তারা দু’জন বিদায় নেয় সিনথিদের বাড়ী থেকে। আগামী কালকে যেহেতু মেয়ে পক্ষরা আসবে তাই একটু ব্যস্ততা।

বাড়ীতে এসে পূর্ণর হাতে লিস্ট ধরিয়ে দেন সাইখা ইসলাম। যেহেতু বড় ভাইয়ের বিয়ে ছোট ভাই হিসাবে দায়িত্ব আছে। পূর্ণ তার দলের মিরাজ এবং নিসাধকে ডেকে নেয়। লিস্ট জিনিসপত্র ওদের দিয়েই আনায়।

রোদ,তিশা বসে,বসে প্লান করছে তাঁদের পরিবারের নতুন সদস্যর আগমন নিয়ে।

তূর্ণ তার পেন ড্রাইভে সংরক্ষণ করা কিছু পিকচার দেখছে। মনটা ভারী হয়ে আছে তার। সব মানতে কষ্ট হচ্ছে তবুও মেনে নিতে হচ্ছে। পরিবারের বড় ছেলে সে। বাবা নেই! তার উপর মা,বোনেদের আশায় কীভাবে জল ঢালে? পূর্ণর কথা ভাবলে তূর্ণ আর আগাতে পারে না। পূর্ণ রোদকে ভালোবাসে আর রোদ পূর্ণকে এটাই বিশ্বাস করে তূর্ণ। অবশ্য তাদের মেলামেশায় এটাই প্রমাণিত হয়। আর বেশী ভাবে না তূর্ণ।

*********

পরের দিন শিকদার বাড়ীতে আসেন আফিয়া ইসলাম এবং তার বোন আতিয়া এবং সিনথির বাবা সোহানুর রহমান। তাঁদেরকে বেশ সুন্দর ভাবে বরণ করে নেওয়া হয়। পূর্ণ সব কিছু দেখছে। সিনথিকে আনা হয়নি এই নিয়ে সাইখা ইসলাম বেশ রাগ করেছেন।

তূর্ণ সোফায় বসে,বসে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করছে। আজকে নিজেকে লজ্জাবতী নারী মনে হচ্ছে। নাহলে চুপচাপ বসে থেকে সবার কথা শোনা লাগে? রোদ, পূর্ণ তারা মজা নিচ্ছে তূর্ণর সাথে। তিশা,শূন্য ও বাদ যায়নি। পেয়েছে সুযোগ।

তাদের খাওয়া-দাওয়া কথা বার্তার পর্ব শেষ হতে সিদ্ধান্ত হয় দুইদিন পর গিয়ে এন্গেজ মেন্ট হবে। সবাই বেশ হাসিখুশি ভাবেই দিনটা পার করে।

পরের দিন ভার্সিটিতে যায় রোদ। আজকে তিশা আসেনি। রোদ ও আসতো না কিন্তু তার এসাইনমেন্ট ছিলো সেগুলো জমা দিতে হবে। রোজকার মতোই কাজ সেরে গেটের সামনে আসে রোদ। রিকশার জন্য কিছুটা সামনে আসতে পূর্ণর গাড়ীর দেখা পায়। পূর্ণ ভার্সিটিতে আসবে রোদকে তো বলেনি। গাড়ীর আসেপাশে কাউকেই পায়নি রোদ। কাঠখোট্টা রোদের মধ্যে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে রোদেলা।

গাড়ীর পেছনে বসে আছে পূর্ণ। রোদেকে যেতে দেখেছি এদিক দিয়েই। কিন্তু সেসবে তার ইন্টারেস্ট নেই। সে যে কাজে এসেছে তা হলেই চলে যাবে এই প্রাঙ্গণ ছেড়ে।

রোদের সামনে হুট করে একটা কালো মাইক্রো এসে দাঁড়ায়। রোদ কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে ক্লোরোফোম দিয়ে অজ্ঞান করা হয়। গাড়ীতে বসে থাকা একজন কলে বলে, ” কাজ হয়ে গেছে। এবার তুই চলে আয়। তোকে দিয়েই শুভ কাজটা করাবো।”

অপর পাশ থেকে উত্তর আসে, ” এই কাজ ছাড়া অন্য কাজ থাকলে দে। এটা আমি করতে পারবো না।”

“তাহলে ঠিক আছে তোর ক্যারিয়ার শেষ ধরে নে। তোর বাবার তিলে,তিলে গড়া সম্রাজ্য ও শেষ।”

“যা খুশি কর। আমি কারোর হুকুমে চলতে পারবো না। আর ওর গায়ে একটা আঁচড় লাগলে তোদের সব কয়টাকে আমি ক’বরস্থানে পাঠাবো।”

“তোর ক্যারিয়ার!”

অপর পাশের ব্যক্তি কল কেটে দেয়। এপাশের ব্যক্তি গাড়ীতে থাকা রোদের দিকে তাকায়। ঘুমন্ত রোদের চুল টেনে নিজের মুখোমুখি এনে বলে, ” তোর প্রেমিক তোকে আমার হাতে তুলে দিয়েছে। আপাতত তুই ভোগের সামগ্রী।”

*********

সন্ধ্যা গড়িয়ে যায় রোদের ফোন সুইচড অফ। এই নিয়ে সবার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। পূর্ণ শুনেছে ব্যপারটা তবে কোন রকমের রিয়েক্ট করেনি। তিশা বুঝলো পূর্ণ বোধহয় খুশি হয়েছে রোদ নেই। শরীফ শিকদার থানায় ইনফর্ম করেছেন। তূর্ণ অফিসে থাকা কালীন খবর পায়। সে আর বাড়ী আসেনি। ভার্সিটির প্রাঙ্গণ থেকে যতগুলো সিসিটিভি আছে সবগুলোর ফুটেজ চেক দেয়।

থানায় কল দিয়ে জানতে পারে রাফি খান কয়েকদিন আগে ছাড়া পেয়েছেন। তূর্ণর মনে ভয় ঢুকে যায়। রোদের কিছু হয়ে যাবে না তো? কল দিয়ে কয়েক জনকে ধমকাধমকি করে তূর্ণ। থ্রেট দিয়ে বলে, ” এক ঘন্টার মধ্যে শিকদার বাড়ীতে রোদকে চাই আমি। নাহলে সব কয়টার খবর আছে।”

কথাটা বলে তূর্ণ কল কেটে দেয়। তূর্ণ শিকদার বাড়ীতে আসে। তার আম্মু চিন্তা করছে বেশ। তূর্ণ পূর্ণর খোঁজ করতে জানতে পারে সে বাইরে গেছে কোন দরকারে। তূর্ণর রাগ হয়। পূর্ণ এতো ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকে কেন? তার কী দায়িত্ব জ্ঞান কিছু নেই। এতো ত্যাড়া কেন পূর্ণ। রোদের সাথে তার কী শত্রুতা আজকে তূর্ণ জেনে ছাড়বে। অনেক দিন হয়েছে,অনেক দেখেছে আর না। পূর্ণকে বার কয়েক কল দিলেও রিসিভ হয়না। মেজাজ মূহুর্তে খারাপ হয়ে যায় তূর্ণর। আজকে পূর্ণর সাথে তার অনেক বোঝা পড়া আছে। ক্রোধ নিয়ে লিভিং রুমে আসতে দেখে রোদ আর পূর্ণ একসাথে প্রবেশ করছে। রোদের কাধে পূর্ণর হাত৷ পূর্ণ তূর্ণ কে দেখে বলে, ” আরে ভাইয়া তুমি এসে পড়েছো?”

“দেখতেই পারছিস।”

” রেগে যাচ্ছো কেন?”

“তোর সাথে আমার কথা আছে।”

“আপাতত না। একবারে তোমার বিয়ের পর বলিও।”

“পূর্ণ…….”

” রোদ ভেতরে যাও।”

পূর্ণ কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলে। রোদ আর দেরী করেনি ভেতরে চলে যায়। তখন পূর্ণ বলে, ” তোমাকে আমার কিছু বকার ছিলো।”

” তার আগে আমায় কথা শেষ করতে দে।”

” তুমি রেগে আছো?”

” রোদ এতোক্ষণ কোথায় ছিলো?”

” আরে রাফি ওকে কিডন্যাপ করতে চেয়েছিলো। ওটাকে মেরে তোমার ভালোবাসাকে উদ্ধার করে আনলাম। এবার আমায় পুরষ্কিত করো ভাইয়া।”

লাস্ট কথাটা আস্তেই বলে পূর্ণ। তখন তূর্ণ বলে, ” বাজে কথা ছাড় পূর্ণ। আমি নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছি।”

” মজা করছি রে ভাই।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here