এক_ফালি_প্রণয়|১৭| #শার্লিন_হাসান

0
110

#এক_ফালি_প্রণয়|১৭|
#শার্লিন_হাসান

“আসলে ওইদিন রোদকে আমি মা-রতে চেয়েছিলাম নদীতে চুবিয়ে। ছেলেটা আমারই পাঠানো লোক ছিলো। কিন্তু সেদিন তুমি বাঁচিয়ে নিয়েছে ওকে। আমি সব জানি ভাইয়া। এমনকি গতকালকের লোক গুলো তোমার পাঠানো যারা রোদকে রাফির গোডাউন থেকে উদ্ধার করে এনেছে। কিন্তু রোদ জানে ওকে আমি বাঁচিয়েছি গতকাল।

থেমে,
আসলে ভাইয়া আমি বড্ড স্বার্থপর। রোদকে পারলে বলিও আমার থেকে দূরে থাকতে। আমার ভালো মানুষির পরে আমার কুৎসিত বিকৃত কাজ গুলোর কথা জানতে পারলে সইতে পারবে না। আমি জানি তুমি হয়ত ভাবছ রোদ আর আমার মাঝে কিছু আছে। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আমাদের মাঝে কিছু নেই তবে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না।”

“পূর্ণ এসব করে কী লাভ বলতো?”

“এটার পেছনেও আরেকটা কারণ আছে ভাইয়া।”
কথাটা বলে পূর্ণ জ্বলতে,জ্বলতে শেষ হয়ে যাওয়া সিগারেটটা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে দেয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে পুনরায় বলে, ” তাড়াতাড়ি বিয়েটা করো ভাইয়া আমার সিরিয়াল কিন্তু তোমার পরে।”

” সে তো জানি। তা পছন্দের কেউ আছে নাকী?”

প্রসঙ্গ পাল্টে নেয় দু’জনে। তখন পূর্ণ মুচকি হেঁসে শুধায়, ” সময় হলে বলবো।”

“তার মানে কেউ আছে।”

” সে থাকতেও পারে। কত মেয়েরা যে লাইন মারে। দু’একজন থাকতেই পারে।”

তূর্ণ ব্রু কুঁচকে তাকায় পূর্ণর দিকে। দু’জনের কথার মাঝে কোথা থেকে তিশা আসে রোদকে নিয়ে। অনেকটা শব্দ করেই আসে যেটায় তূর্ণ, পূর্ণ বুঝে তাদের বোন আসছে। তিশা পূর্ণর দিকে তাকিয়ে বলে, ” ভাইয়া তোমার কল বাজছে।”

“কই?”

“ফোন তো তোমার রুমে।”

” তা আসার সময় নিয়ে আসলে কী হতো?”

“পারবো না। নিজের কাজ নিজে করা ভালো।”

তিশার ত্যাড়া কথায় তূর্ণ হাসে। রোদ ওদের কান্ড দেখছে দাঁড়িয়ে, দাঁড়িয়ে। তূর্ণ রোদের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। পূর্ণ সেখান থেকে প্রস্থান করতে তিশা, রোদ ও চলে আসে। তূর্ণ একাই ছাঁদে রয়ে যায়। তারা তিনজন যেতে তূর্ণ নিজেও সিগারেট ধরায়। ক্লান্ত মস্তিষ্ক সিগারেট টান দিতে জেনো অনেকটা হালকা হয়ে যায়।
“মেয়ে মানুষ বড়ই অদ্ভূত।”

********

কেটে যায় দুইদিন। আজকে শুক্রবার, সিনথিদের বাসায় যাবে শিকদার পরিবার। বিয়েটা খুব শীঘ্রই হতে চলেছে। তূর্ণ আজকে সরাসরি তার হবু বউকে দেখবে। অবশ্য এর আগেও দেখেছে তাও সে কী ঝগড়ুটে মেয়ে। মনে পড়লে তূর্ণ ভাবে, তার বাকী জীবনটা কী হবে কে জানে।

শিকদার পরিবারের সবাই জোহরের নামাজ আদায় করে রওনা হয় সিনথিদের বাসার উদ্দেশ্যে।
শিকদার পরিবারকে সুন্দর ভাবে বরণ করে নেওয়া হয়। লান্স করে সবাই মিলে বসে। রোদ,তিশা মিলে সিনথিকে নিয়ে আসে। যেহেতু এখন সিনথির কাজিন বা রিলেটিভ তেমন কেউই নেই। তূর্ণর পাশে বসানো হয় সিনথিকে। রোদ তাঁদের পিকচার তুলছে। দু’জনকে বেশ মানিয়েছে।

সিনথি আশপাশে তাকিয়ে তূর্ণর দিকে একনজর তাকিয়ে মুখটা গোমড়া করে নেয়। তূর্ণর ব্যপারটা নজরে আসলোও পাত্তা দেয়না। সে ফুল ভাব নিয়ে বসে আছে। সিনথি বসে,বসে তূর্ণর গুষ্টি উদ্ধার করছে। সেদিন ভালো করে উদ্ধার করতে পারেনি। দু’জন দু’জনের দিকে এভাব তাকাচ্ছে জেনো কত বছরের শত্রুতা আছে। পূর্ণ বসে,বসে তার ভাই আর হবু ভাবীকে দেখছে। একটু পর তূর্ণ এবং সিনথি দু’জনের হাতে রিংয়ের বক্স দেওয়া হয়। তূর্ণ হাত এগিয়ে দিলে সিনথি উঠে দাঁড়ায়।

” উনি আমাকে স্যরি না বললে এই এনগেজমেন্ট পানির নিচে হবে।”

“কিসের জন্য স্যরি বলবো?”

তূর্ণ নিজেও উঠে দাঁড়ায়। বাকীরা তাকিয়ে আছে। তখন সিনথি বলে, ” সেদিন তো তেজ দেখিয়ে চলে গেলেন। তা যদি আপনার জন্য আমি মা-রা যেতাম তাহলে এন্গেজমেন্ট কী আমার ভূতের সাথে করতেন? সেদিনের কাজের জন্য স্যরি বলেন।”

“ইম্পসিবল। আপনি দেখে শুনে চলতে পারেন না রাস্তায়?”

“আপনি দেখে শুনে গাড়ী চালাতে পারেন না রাস্তায়?”

“রাস্তাটা কী আপনার নাকী যে আমায় আপনার হুকুম মানতে হবে। আমার গাড়ী আমার ইচ্ছে।”

” রাস্তাটা আপনার ও না। তাই আমি কীভাবে হাঁটবো না হাঁটবো আমার ইচ্ছে।”

এরই মাঝে সিনথির বাবা ধমকে সিনথিকে বলেন, ” এবার তো চুপ যাও। সব জায়গায় ঝগড়া করতে হয়না সিনথি।”

“আরে ভাইয়া স্যরি বলে দাও। নাহলে বিয়ের পর কত ধানে কত চাল বুঝবা।”

মাঝখান দিয়ে পূর্ণ কথাটা বলে। তখন সাইখা ইসলাম বলেন, ” আসল ঘটনাটা কেউ বলো। তাহলে এটার সমাধান করবো। যে ভুল করেছে সেই স্যরি বলবে। দ্যান এনগেজমেন্ট হবে।”

তখন সিনথি বলতে শুরু করে, ” ওইদিন বিকেলে আমি বাইরে গিয়েছিলাম একটা দরকারে। রাস্তা দিয়েই হেঁটে আসছিলাম। আমি সাইডে ছিলাম কোথা থেকে উনি এসে উনার গাড়ী দিয়ে আমায় ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। আমি হাতে ব্যথা পেয়েছিলাম। উনি একবার ও স্যরি বলেনি উল্টো তেজ দেখিয়ে চলে গেছে।”

“ঘটনা কী সত্যি?”

শারমিন আঞ্জুমের কথায় তূর্ণ আমতা,আমতা করে বলে, ” আমি স্যরি বলতাম কিন্তু উনি আমায় ডিটারজেন্ট ছাড়া ধুয়েমুছে দিয়েছে।”

“তাহলে থাক এটা তোমরাই সমাধান করো বিয়ের পর। এখন শুভ কাজটা সেরে নেও।”

দু’জনে পুনরায় বসে। সিনথি হাত এগিয়ে দিতে তূর্ণ রিং পড়ায়। তূর্ণ হাত এগিয়ে দিতে সিনথি রিং পড়ায়। এরপর দু’জনে মুখটাকে থমথমে করে বসে ছিলো। জেনো জোর করে তাঁদের বিয়ে দিচ্ছে বাবা-মা।

তূর্ণ উঠে পূর্ণর পাশে গিয়ে বসে। রোদ সিনথির পাশে বসে। তারা গল্পগুজব করছে। তখন শূন্য এসে দুই ভাইয়ের পাশে বসে। সিনথি আর রোদকে দেখিয়ে বলে, ” তোমাদের মাইন তো তোমাদের লাইফ সাইন করবে,করছে। আমাকেও একটা মাইন খুঁজে দাও না? বলছিলাম সিনথি ভাবীর বোন থাকলে যদি…..”

“তোকে আমরা অন্য জেলায় বিয়ে করাবো।”

পূর্ণর কথায় শূন্য বলে, ” অন্য জেলায় কোন জেলায়?”

“চাঁদপুর জেলায়। এক কাজ কর চাঁদপুরে মেয়ে খোঁজ।”

“অন্য জেলার কথা বলো। চাঁদপুর ছাড়া।”
শূন্যার কথায় পূর্ণ তার পিঠে চাপড় মেরে বলে,

“কেন ভাই? চাঁদপুরের চাঁদ কন্যা কেউ কী তোমায় ধোঁকা দিলো?”

” আসলে প্রেম করে বিয়ে করার শখ হলে অন্য জেলায় খুঁজো। চাঁদপুরের মেয়েদের বিশ্বাস করা দায়। ওরা বেশী পূর্তিবাজ হয়। চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে ঠাস করে ছেড়ে দিবে।”

“কী জানি। হয়ত!”

তাদের কথাবার্তা শেষ হতে ডেট ফিক্সড করা হয়। সোম মঙ্গল হলুদ আর মেহেদী নাইট। বুধবার তাঁদের বিয়ে। সবকিছু ঠিকঠাক করে শিকদার পরিবারের লোকেরা বিদায় নেয়। পূর্ণ, রোদ,তিশা,শূন্য তারা পূর্ণর কারে করে রওনা হয়। গাড়ীতে বসে চারজন তূর্ণ, সিনথির ঝগড়ার কথা বলছে। তিশা তখন বলে, ” আমার চুপচাপ থাকা তূর্ণ ভাই কবে যে এতো ঝগড়ুটে হলো।”

” সব ছেলেরাই ঝগড়া পারে। শুধু একটু নাড়াচাড়া দিয়ে দেখো।”

রোদের কথায় পূর্ণ জবাব দেয়, ” সে মেয়েদের থেকে শিখেই ছেলেরা ঝগড়ুটে হয়।”

” তা তুমি বুঝি রোদের থেকে শিখে ঝগড়ুটে হয়েছো?”

মাঝখান দিয়ে শূন্য কথাটা বলে। তখন পূর্ণ শুধায়, ” আমার বিয়ের পাত্রী টা শূন্যই দেখিস। তোর পছন্দেই বিয়েটা করবো।”

” শো অফ করো না। বাড়ী গেলে যদি হাত একটা ভা’ঙা থাকে সেটার দায় ভার আমি নিতে পারবো না।”

“তোর সন্দেহ আর জীবনেও গেলো না।”

“আমি এমনই। যতদিন পর্যন্ত স্বীকার না করবে ততোদিন এভাবেই বলবো।”

” তাহলে মুড়ি খাও তুমি।”

তখন প্রসঙ্গ পাল্টাতে রোদ বলে, ” ভাবছি সিনথি ভাবী যা, বিয়ের পর স্যরি বলার হিসাব চুকাতে গিয়ে না জানি তূর্ণ ভাইয়ার ভবিষ্যত অন্ধকার করে দেয়।”

“আরে কিছু করবে না। দুই একদিন মিষ্টি,মিষ্টি কথা বললে গলে যাবে। নারীরা নরম মনের হয়।”

“বেশ এক্সপেরিয়েন্স আছে দেখি পূর্ণ ভাইয়ার। তা রোদকে বুঝি এভাবেই ইমপ্রেস করেছো।”

পূর্ণ এবার গাড়ী ব্রেক কষে। না তার ভাই বোনেরা এভাবে ধরেছে। এক কথা বারবার ভাল্লাগে না পূর্ণর। তাই রাগের বশেই লজ্জা শরম ত্যাগ করে পূর্ণ বলে,
“উইল ইউ লাভ মি রোদ?
লাইক দ্যাট লাভ দ্যা মুন ইন ডার্ক স্কাই। উইল ইউ লাভ মি রোদ?”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here