অবরুদ্ধ_নিশীথ #তেজস্মিতা_মর্তুজা ১১.

0
110

#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মর্তুজা

১১.

রাবেয়া বেরিয়ে গেলেন মায়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে, তখন বেলা এগারোটা বাজছিল। আমজাদ সাহেব রাজি নয় তার এই যাওয়া নিয়ে, অসন্তুষ্টি নিয়ে রাগ করার পরেও তিনি বেরিয়েছেন। বড়ো ভাইয়ের কাছে কিছু ধার পাওয়া গেলে তাও পাওনাদারদের একটু ঠেকানো যাবে, সময় পাওয়া যাবে চাইলে। আমজাদ সাহেবের ভারী, গম্ভীর মুখ দেখেও গেছেন রাবেয়া। অন্তূও চলে এসেছে আব্বুর ঘর থেকে। আব্বুর উদ্বিগ্ন মুখ, আর কাতর চোখের চাহনি ভালো লাগেনা।

বছরখানেক আগে আম্মুর পিত্তথলিতে পাথর ধরা পড়ল। তৎক্ষণাৎ সার্জারি করিয়েছিলেন আমজাদ সাহেব। তখন বোঝা যায়নি, অথচ এখন বের হচ্ছে, সে-সবই করেছেন তিনি ঋণের টাকায়। আব্বু-আম্মু দুজনেরই হাই ব্লাড প্রেশার, ওষুধ পানির খরচা, অন্তূর পড়ালেখা, যাবতীয় দরকার গোটা সংসারের, সবই বইছেন আমজাদ সাহেব। অন্তিক একটা দোকান করেছে বড়ো বাজারের মধ্যে, বড়ো মুদিখানার দোকান। অন্যরা তার চেয়ে ছোটো ব্যবসা করে মাসে লাখ টাকা আয় করছে। অন্তিকের দোকান দিনদিন খালি হচ্ছে, পুঁজিসহ নেই হয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে টাকাপয়সা দেয়না অন্তিক, আমজাদ সাহেবও চাননা। এখনও তিনিই যেন বাড়ির একমাত্র কর্তা, অথচ চাকরি থেকে রিটায়ার করেছেন বহুদিন আগে। তার কর্ম বিশেষ উচ্চপদস্থ ছিল না, স্কুলমাস্টার। পুরো পরিবারসহ অন্তিকের বউয়ের ভারটাও নিশ্চুপ বহন করছেন তিনি। অন্তিক নিজের এই লালবাতি জ্বলা ব্যবসার ব্যাপারে কোনো আলাপ আব্বুর সাথে করেনা।

এই ব্যবসা তার জিদের। কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স থার্ড ইয়ারে থাকা অবস্থায় ওই জেলার মেয়ে বিয়ে করে নিয়ে এলো। অথচ তাকে আমজাদ সাহেব দেশের বাইরে পিএইচডি করতে পাঠাবেন বলে কুড়িগ্রামের জমি রেখেছিলেন। স্বপ্নভাঙা আমজাদ সাহেব মার্জিয়ার সামনে দাঁড় করিয়ে দুটো থাপ্পড় মেরে বলেছিলেন, “খেতে দিবি কোত্থেকে? সেই তো আমার ঘাঁড়েই চড়ে বসবি, অন্য উপায় আছে? আর কতদিকে যাব এই সামান্য কামাই নিয়ে? এই আমিই তোকে জন্ম দিয়েছিলাম, দুই হাতে এতদূর টেনে এনেছিলাম, তোকে নিয়ে রাতভর স্বপ্ন বুনেছি জালের মতো? দেখ, বিশ্বাস করার উপায় রাখিসনি আজ সেসব। ইচ্ছে বহুত ছিল, সেসব এক লহমায় গুড়ো করতে বাঁধেনি তো বিবেকে না? বিবেক থাকলে হয়ত বাঁধতো। বয়স কত হয়েছে, বিয়ে করে এনেছিস? তাও আবার আমার নামের সম্মান ডুবিয়ে? কী কাজ করিস? বউকে খাওয়ানোর মুরোদ আছে? চাকরি-বাকরি করার যোগ্যতা হয়েছে? আমার ছেলে এমন মূর্খ হবে, তা জানলে হয়ত তোকে দুনিয়াতেই আনতাম না!ʼʼ

অন্তূ প্রথমবার সেদিন আব্বুকে নিজের অভিজাত ব্যক্তিত্ব থেকে বেরিয়ে প্রথমবার এমন কমদামী, সাধারণ বাক্যে, মূর্খ-সরল ধরণের কথা বলতে শুনেছিল। এরপরের দিন থেকে আজ অবধি চুপচাপ সব ভার বহন করছেন, কোনো অভিযোগ আর করেননি দ্বিতীয়বার। অথচ অন্তিক বাপের সাময়িক ক্ষোভকে ধরে রেখে কিছু বিচ্ছেদমূলক কাজ করে বসেছিল। সেদিন থেকে একই বাড়িতে থাকে, সামনে দিয়ে আশা-যাওয়া করে, মাথা তুলে তাকায়না, আব্বুর সাথে কথা বলেনা, সামনে আসেনা, ধার ধারে না কোনোকিছুর। সে যে আছে দুনিয়াতে, তার অস্তিত্বের খোঁজ পাওয়া মুশকিল।

সেসবের পরদিনই বড়ো বাজারে দোকান নিলো সে। সপ্তাহখানেকের মাঝে সেই দোকানে কমপক্ষে লাখ পাঁচেক টাকার মাল তুলল। টাকা কোথায় পেয়েছে, তার হদিস কেউ জানেনা, আর না জানানোর প্রয়োজন মনে করেছে অন্তিক কোনোদিন। আমজাদ সাহেব বহু খোঁজ চালিয়েও বের করতে না পেরে হাল ছেড়েছেন। অথচ মাসখানেকের মধ্যেই দোকানে ক্ষয় শুরু হলো, উন্নতির জায়গায় ক্রমান্বয়ে অবনতি। বেচাকেনা হয় কিনা কে জানে! কিন্তু একটা পয়সা ঘরে আসেনা, কোথায় যায় কেউ জানেনা। প্রথমে সকলে ভেবেছিল, অন্তিক খারাপ পথে গেছে, নেশা করে হয়ত। সেসবও খোঁজ নিয়ে দেখার পর পাওয়া যায়নি। অন্তিক কেমন যেন হয়ে গেছে। মুখ-চোখ শুকনো, শরীর শুকিয়ে সুদর্শন ছেলেটা একদম ষাট বছরের বুড়ো হয়ে গেছে। সকলে বলতো, অন্তিক অন্তূর চেয়েও দেখতে বেশি ভালো। নায়ক যাকে বলে। আজ দেখলে, কবর থেকে উঠে আসা জীবন্মৃত ছাড়া কিছু মনে হয়না। কারও সাথে কথা বলেনা। খাচ্ছে বাপের ঘাঁড়ে, আছে বাপের পাখার নিচে, অথচ তার আত্মসম্মান নাকি তীব্র অভিমান অথবা অন্যকিছু কে জানে! সেই বাপের সামনে আসেনা। কারও দিকে চোখ তুলে তাকায়না। কোনো মতামত বা উদ্দীপনা নেই তার মাঝে। যা হচ্ছে তার চারপাশে, বাড়িতে, পাশের ঘরে—ঘটনার মতো ঘটনা ঘটছে, সে তার মতো চলন্ত এক মরা। আজব একটা ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছে। এমনকি এই দুই-আড়াই বছরে একটা সন্তান আসেনি তাদের ঘরে। অন্তূ প্রথমদিকে খুব কাছে ঘেষতে যেত ভাইয়ের। খুব কষ্ট পেত মেয়েটা, ভাইকে এভাবে অস্বাভাবিক আর নির্লিপ্ত হয়ে যেতে। অথচ অন্তূ তো অন্তূ! খুব অল্প সময়ে কষ্টগুলো তার ইগোর আঘাতে বদলে গেল। এরপর থেকে কেবল ঘৃণা আর এড়িয়ে চলা। মাঝেমধ্যেই পুরনো অন্তিকের কথা মনে পড়ে, পরক্ষণেই ঢাকা পড়ে যায় অভিমান আর ঘেন্নার নিচে।

দুপুরের রান্নাতে হাত লাগিয়েছে মার্জিয়া। আম্মু যেহেতু সাহায্য করার জন্য থাকবে না, তাই অন্তূ গেল হাত লাগাতে। বেসিনে পড়ে আছে একগাদা থালাবাসন। সেগুলো মাজতে গেলে মার্জিয়া বলল, “অন্তূ! একা ছিলাম, কাজ করতেছিলাম, ভালোই তো ছিলাম। কী দরকার তোমার এখানে আসার? সকাল থেকে রান্না করতে পারতেছি, বাসন মাজতে হাত ক্ষয়ে যাবেনা আমার। রাখো তো, যাও এইখান থেকে।ʼʼ

অন্তূ কথা বলতে চাইল না। তবুও বিনয়ের সাথে বলল, “আপনি চাইলে এখন একটু বিশ্রাম নিতে পারেন, ভাবী। আমিই রান্না করছি।ʼʼ

-“সবচেয়ে বেশি গা জ্বলে কখন জানো?ʼʼ

অন্তূ স্বাভাবিক স্বরে বলল, “জানি না। আপনার বা কখন সবচেয়ে বেশি গা জ্বলে, আমার জানার কথা তো নয়!ʼʼ

মার্জিয়া দাঁত খিঁচে আবার সামলালো নিজেকে, “তোমার সামলে আসলে। তুমি যতক্ষণ সামনে থাকো, আমার গা তিরতির করে পোড়ে। বিশেষ করে তোমার শান্ত, নরম কথায়।ʼʼ

অন্তূ আস্তে করে বলল, “আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি।ʼʼ

থালাবাসন মাজা হলে রান্নাঘরে ছড়িয়ে থাকা কৌটা, বিভিন্ন জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে লাগল। মার্জিয়া বলল, “আমার চাচাতো ভাইকে পছন্দ হয়নি তোমার?ʼʼ

-“হয়নি এমন নয়।ʼʼ

-“তাইলে কোনো জবাব তো দিলা না!ʼʼ

-“আসলে ভাবী, এখন বিয়েই করতে চাইনা আমি। বিয়ে করার মতো হলে তো আর ভেগে যাব না! আপনারা যেখানে খুশি, ভালোমন্দ বুঝে দেবেন!ʼʼ

-“ভেগে যাবেনা তার গ্যারান্টি কী?ʼʼ

অন্তূ চুপ রইল। মার্জিয়া আবার বলল, “বিয়ে ক্যান করবা না? বয়স কি পনেরোতে পড়ে আছে তোমার, কচি ভাবো নিজেকে? কমপক্ষে বাইশ-তেইশ বছর বয়স চলতেছে। মেয়ে মানুষ কি আবার ত্রিশ বছরে বিয়ে করে?ʼʼ

-“বয়স একটু বাড়িয়ে বললেন। যাহোক, পড়ালেখা অথবা সংসার, দুটোই এককভাবে করতে হয়। আউটসাইড পিছুটান নিয়ে দুটোর কোনোটাই ভালো হয়না। সংসার করলে শুধু সংসার, পড়ালেখা করলে পড়ালেখা। অনার্সের আর দুটো বছর দেখতে দেখতে কেটে যাবে। এরপর এলএলবি করে বার কাউন্সিলর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে একটা নিম্ন আদালতে চাকুরী পেতে হলেও চাপ কম নয়, ভাবী। আমার মনেহয় আমার জন্য খুব উইয়ার্ড হবে ব্যাপারটা, যে আমি এ অবস্থায় বিয়ে করে ফেলব। বিয়ের পর পড়ালেখা নামে হয়, ধরুন মেয়েটা ওই অবধি পড়েছে। এই কথাটা কামানো যায় মাত্র। কোনোকিছু করার জন্য বা আসলেই পড়ালেখার জন্য একক পড়ালেখার উপযোগী জীবন চাই। পড়ালেখা করার সুযোগ আমি এ বাড়ির মতো অন্য কোথাও পাব, এটা মনে করিনা। আমার স্বপ্নপূরণে কোনো ছোটো বাঁধাকেও কনসিডার করার ইচ্ছে নেই আমার।ʼʼ

অন্তূ জানে মার্জিয়া এখন রুষ্ঠ চোখে চেয়ে আছে তার দিকে। সে নরম সুরে বলল, “আপনি কেন এত আগ্রহী আমাকে বিয়ে দিতে?ʼʼ

-“অনেক কারণ আছে।ʼʼ

-“একটু বলুন, আমি শুনতে আগ্রহী।ʼʼ

মশলা কষানোর ঝাঁজ নাকে লাগতেই অন্তূ কেশে উঠে মুখে ওড়না চেপে ধরল। তরকারীতে পানি দিয়ে মার্জিয়া ফিরলো ওর দিকে, “তুমি খুব জাননেওয়ালার নাটক করলেও বহুত কিছুই জানো না। তার ওপর জোয়ান মেয়ে বাড়িতে থাকলে তোমার বাপ মায়ের চিন্তা না থাকলেও আমার হয়। তার ওপর তোমার যে স্বভাব-চরিত্র আর তেজ, ছেলে পাওয়া গেলে হয়। আমার বোনের সংসার নড়বড়ে হয়ে গেছে তোমার জন্য, তোমাকে পড়ালেখা করাতে গিয়ে আমার শ্বশুরের হাতের অবস্থা খারাপ… অন্তূ যাও তো! আমার কথা বলতে মন চাচ্ছে না তোমার সাথে।ʼʼ

খুব অগোছালো লাগল কথাগুলো। অন্তূর মনে হলো, ভাবী যা বোঝাতে চাচ্ছে, তা আসলে পারছে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। খানিক পরে আপন মনেই বলল মার্জিয়া, “একটা টাকা যৌতুক-ফৌতুক কিচ্ছু চায়নি, তোমাকে পছন্দ হয়েছে, আরও পাঁচ-সাত ভরি গহনা দিয়ে নিয়ে যাবে। তাতে অন্তত সংকট কমতো একটু।ʼʼ

অন্তূ ভ্রু কুঁচকালো, “বিক্রি করবেন নাকি আমায়? আর গহনা দিলে তো আমার গায়ে অথবা আলমারিতে থাকবে, সংকট কমবে কী করে? কী এমন সংকট লেগেছে বাড়িতে যে আমায় বিক্রি করা গহনা দিয়ে বাড়ির সংকট কমাতে হবে!ʼʼ

মার্জিয়া কর্কশ স্বরে কিছু বলে ওঠার আগেই বাড়ির দরজায় করাঘাত পড়ল। অন্তূ গেল না, তার গা’টা অকারণেই শিউরে উঠল। কোনো পাওনাদার এসেছে? আম্মা টাকা আনতে গেছে, এই সময়টুকু সহ্য হয়নি? অন্তূর মাঝেমধ্যেই চিৎকার করে আর্তনাদ করতে ইচ্ছে হয় জীবনের এই টানপোড়েনকে সামনে রেখে। এত জটিল কেন জীবনের গণিত?

কিছুক্ষণ পর আমজাদ সাহেব ডাকলেন অন্তূকে, “এদিকে আয় তো, অন্তূ!ʼʼ

অন্তূ মাথায় ওড়না তুলে মুখটা ওড়নার প্রান্তে ঢেকে নিলো। আব্বুর ঘরে ঢুকতেই থমকে দাঁড়াল। মুস্তাকিন মহান বসে আছে। অন্তূর বুকের পাঁজরে কাঁপুনি দিয়ে উঠল একবার। কেন এসেছে এই লোক? আব্বুকে কিছু জানাতে? সেদিন সে গিয়েছিল সেই ব্যাপারে কিছু বলতে এসেছে, অথবা অন্যকিছু জানাতে এসেছে! আমজাদ সাহেব মৃদু হাসলেন, “এটা আমার মেয়ে।ʼʼ অন্তূকে বললেন, “ও আমার ছাত্র, হাইস্কুলে পড়তো, আমি তখন ওদের ক্লাসটিচার ছিলাম। সৈয়দ মুস্তাকিন মহান, পিবিআই অফিসার!ʼʼ

মুস্তাকিনের চোখে এক মুহুর্তের জন্য অবাক ভাব দেখা গেলেও পরে স্বাভাবিক লাগল। অন্তূর দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসল মুস্তাকিন। অন্তূর একবার চোখ আঁটকালো। শুদ্ধতম হাসি, পরিপাটি এক সৌম্য চেহারার পুরুষ মানুষ। পরনে পাঞ্জাবী থাকায় কি বেশি আকৃষ্টতা প্রকাশ পাচ্ছে? তার ওপর শীতের আমেজে শাল চাদর জড়ানো। কই সেদিন কার্যালয়ে এমন বিশেষ লাগেনি। হালকা রঙা পাঞ্জাবীতে ফর্সামতো শরীর, পেটানো হাতের ত্বকে কালো বেল্টের হাতঘড়ি নজরে এলো। সুপুরুষের আখ্যা পাবার মতো সবকিছু আছে মুস্তাকিনের মাঝে। ভ্রুটা চটা পড়া, জোড় ভ্রুতে পুরুষ মানুষ এমনিতেই একটু বেশি নেশা ধরানো হয়। হাসিটা চমৎকার সুন্দর! বসে আছে বিনয়ী ভাবে নিজের প্রাক্তন শিক্ষকের সম্মুখে, মুচকি হাসি ঠোঁটে ঝুলছে। এভাবে কোনোদিন আগে পরখ করেনি কাউকে অন্তূ।

এক নজরে বেশ খানিকটা পর্যবেক্ষণ করল। মুস্তাকিন বলল, “আমি জানতামই না স্যার, এটা আপনার মেয়ে। ছোটোবেলায় স্কুলে দেখেছি বোধহয়, এরপর সেদিন ভার্সিটিতে একবার দেখা হয়েছিল। কিন্তু হিজাবের আড়ালে, তার ওপর বড়ো হয়ে গেছে, চিনতে পারার কথা না।ʼʼ সৌহার্দপূর্ণ কণ্ঠস্বর।

আমজাদ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, “ভার্সিটিতে? তুমি কী করছিলে ওখানে?ʼʼ

-“সামাজিক খোঁজখবর থেকে বেশ দূরে চলে এসেছেন, স্যার! একটা ভয়ানক রেপ-কেইস ঘটে গেল আপনাদের এরিয়াতে। জানেন না? সেটার তদন্তে আছি।ʼʼ

-“স্যার স্যার করছিস কেন, বাপ! তোরা কত বড়ো মানুষ হয়ে গেছিস, এসব ডাক শোনার যোগ্যতা পেরিয়ে গেছিস, আমার থেকে বহুত বড়ো হয়ে গেছিস! আগে মনে হতো তুই লম্বা হবি না বেশি, আজ তো দেখছি নকশাই বদলে গেছে দেহের গড়নের!ʼʼ

মুস্তাকিন মাথা নিচু করে হেসে ফেলল, “স্যার, আমি আপনার কাছে চিরদিন নিয়মিত বেতের বাড়ি খাওয়া, মুস্তু। আপনারা কোনোদিন ছোটো হবেন না, আর না আমি বড়ো। এসব কথা বলে আজও সেই একইভাবে লজ্জায় ফেলছেন, যেভাবে স্কুলে পড়া না করে গেলে অপমান করতেন। আজও মুস্তু বলে একবার ডাকুন, আমি নস্টালজিক হয়ে যাব নির্ঘাত! কিন্তু আপনার দীপ্তির সাথে সাথে অভিজাত্য কমে এসেছে, স্যার! কোনো ট্রমাতে আছেন, মনে হচ্ছে!ʼʼ

আমজাদ সাহেব হাসলেন, “কবে শিফ্ট হয়েছিস, দিনাজপুর?ʼʼ

-“মাসছয়েক হলো।ʼʼ

আমজাদ সাহেব অন্তূকে ইশারা করলেন, “যা..ʼʼ

অন্তূ বুঝে বেরিয়ে এলো। হুট করে একটা বাচ্চামানুষের মতো কথা মাথায় আসল, তার ধারণা ছিল, পুলিশ বা সরকারী চাকরিজীবীরা সব আঙ্কেল টাইপের, তেলের ড্রাম মার্কা ভুড়িওয়ালা, টাকলু আর বয়স্ক, দেখতে বিকট ধরণের হয়। আজ মুস্তাকিনকে দেখে মনে হলো, স্বয়ং নব্বই দশকের সুপরিপাটি, সুদর্শন গড়নের এক নায়কের দর্শন করল সে। ঠোঁট চেপে হেসে ফেলল নিজের ভাবনায়। বাচ্চা ভাবনা যায়নি এখনও নিজের মাঝে, বাইরে যতই গর্জন করে বেড়াক।

আমজাদ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, “মামার বাড়িতেই থাকছিস?ʼʼ

-“না, ফ্লাট ভাড়া করে থাকছি।ʼʼ

-“বউমাকে আনলি না? ছেলে মেয়ে কয়টা হয়েছে? কবে মরে-টরে যাব, দেখা করতে এলো না ওরা বাপের বুড়ো স্যারের সাথে?ʼʼ

গম্ভীর মানুষটার এই সহজ দিকটা অনেকের অজানা, অথচ মুস্তাকিন খুব জানে স্যারের এই মুক্তমনা, হাস্যজ্জ্বল রূপকে। হেসে ফেলল ও, “স্যার, আগে এটা তো জিজ্ঞেস করতেন, বিয়ে করেছি কিনা!ʼʼ

আমজাদ সাহেব গম্ভীর হলেন, “বয়স কত তোর?ʼʼ

-“কত বলে মনে হয়, স্যার আপনার?ʼʼ

আমজাদ সাহেব আপাদমস্তক দেখে বললেন, “আন্দাজ করে কথা বলার অভ্যাস নেই আমার। তবে দেখতে বেশ ফিটফাট হয়েছ! আগে তো মুটু ছিলে, শরীরের মেদ নেই হয়ে গেছে, শুধু বড়ো বড়ো চোখ দুটো আছে..ʼʼ

মুস্তাকিন কপালে আঙুল ঘষতে ঘষতে ধীরে ধীরে হেসে ফেলল , “লজ্জা পাচ্ছি, স্যার!ʼʼ

আমজাদ সাহেব বললেন, “কন্যারাশি তোর?ʼʼ

মুস্তাকিন এবার শব্দ করে হেসে উঠল। নিঃশব্দে হাসলেন আমজাদ সাহেবও। মুস্তাকিন মুগ্ধের মতো চেয়ে রইল গৌরাঙ্গ মানুষটির সুলভ হাসির দিকে। কী যে স্নিগ্ধ আর তরতরে তেজী হাসি, স্যারের! মুস্তাকিনের সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক সর্বকালের সব শিক্ষকদের মাঝে। হালকা মেহেদীর রঙে রাঙানো দাড়িতে, সাদা লুঙ্গির সাথে ফতোয়া পড়া লম্বা, আত্মবিশ্বাসী পুরুষটি মুস্তাকিনকে বরাবর মুগ্ধ করে। মুস্তাকিন হাসি সামলালো, “কেন, স্যার? ছেলেদের লজ্জা পাওয়ার অধিকার নেই?ʼʼ

অন্তূ ঘরে ঢুকল। ট্রে ভর্তি নাশতা সাজানো। মুস্তাকিন বলে উঠল, “স্যার! এটা ঠিক হলো না..ʼʼ

আমজাদ সাহেব গম্ভীর হলেন, “হু! এখন তুই আমায় ঠিক-ভুল শেখা।ʼʼ

-“স্যার, তা বলিনি আমি..ʼʼ

-“আপাতত আর কিছু বলতে হবেনা এ ব্যাপারে। তুলে নে এক এক কোরে। আম্মা, পানি দিলি না?ʼʼ

অন্তূ পানি আনতে গেল। আমজাদ সাহেব হুট করে বললেন, “একসাথে দুপুরের খাবার খাওয়ার সময়টুকু হবে?ʼʼ ভারী শোনালো কথাটা।

কথা বলার ধরণ আগের মতোই জটিল, স্যারের। মুস্তাকিন ভ্রু চুলকে হাসল, “এভাবে বললে সময়ের সাহস নেই না হওয়ার!ʼʼ

সন্তুষ্টচিত্তে ট্রের দিকে ইশারা করলেন আমজাদ সাহেব। কেকের একটা পিস উঠিয়ে নিলো মুস্তাকিন। হাতে রেখে বলল, “অন্তিকের কী খবর?ʼʼ

-“আমি ভেবেছিলাম না তুমি প্রসাশনে ঢুকবে।ʼʼ

মুস্তাকিন বুঝল, “স্যার কথা এড়াতে চাইছেন। সেও আর গেল না ওদিকে, আমি নিজেও ভেবেছিলাম না, অথচ ছোটো চাচার বদৌলতে হয়ে গেল, আর অমত করিনি।ʼʼ

-“বিয়ে-শাদী করবি না?ʼʼ

স্যার একবার তুমি বলছে, একবার তুই। বেশ উপভোগ্য লাগল বিষয়টা। কেকের টুকরো চিবিয়ে জবাব দিলো, “ভাবিনি এখনও।ʼʼ

-“ভাবার সময় আসছে, না যাচ্ছে?ʼʼ

-“সময় কোথায় সংসারকে সময় দেবার মতো? সারাদিন দৌড়ের ওপর আছি। আম্মা তো জিনের মতোওপর ঘাঁড়ে ভর করে আছে, তিনবেলা ফোন করে কান চিবোচ্ছে। ʼʼ

দুপুরের খাবার বেড়ে দিতে মার্জিয়া এলো না। আশাও করেনি কেউ, সে আসবে। অগত্যা অন্তূকে তদারকি করতে হলো। আব্বুই তুলে তুলে খাওয়াচ্ছিল, সে হাতে হাতে সাহায্য করল। মাঝেমধ্যেই আব্বুর পুরোনো ছাত্ররা আসে আব্বুর কাছে। তবে মুস্তাকিন যেন বিশেষ ছাত্র আব্বুর, আব্বুর মুখ দেখে তাই মনে হলো। এরকম সচরাচর দেখা যায় না, ছাত্ররা সচরাচর শিক্ষকদের ভুলে বসে। অথচ আমজাদ সাহেব শিক্ষকের চেয়েও বড়ো কিছু তার ছাত্রদের কাছে। মুরগীর মাংস আজকের রান্না করা, ফ্রিজে থাকা রান্না করা গরুর মাংস গরম করা হয়েছে। মুস্তাকিনকে শুধু মুরগীর মাংস খেতে দেখে অন্তূ গরুর মাংস তুলে দিলো তার প্লেটে। সঙ্গে সঙ্গে মুস্তাকিন মুখ তুলল, “গরুর মাংসে সমস্যা আছে আমার। খাইনা..ʼʼ

আমজাদ সাহেব বললেন, “শুনে দিবি তো! আচ্ছা, আরেকটা পরিষ্কার প্লেটে নতুন কোরে ভাত তুলে দে।ʼʼ

মুস্তাকিন বাঁধা দিলো, “ব্যাপার না, তার প্রয়োজন হবেনা। আপনি শুধু মাংস তুলে নিন।ʼʼ

অন্তূ একটু অপ্রস্তুত হলো, মাংস কী করে তুলবে? চামচ দিয়ে তুলতে গেল, মুস্তাকিন হাসল, “হাত দিয়ে তুলুন না! পাত থেকে চামচ দিয়ে মাংস তোলা যায়?ʼʼ

প্লেট থেকে হাত দিয়ে মাংস তুলে নেয়ার পর অন্তূর শরীরে অস্বস্তি জেঁকে বসল। খাওয়া শেষ করে হাত মোছার জন্য গামছা চাইল মুস্তাকিন। অন্তূর মনে হলো, আগে যে দু’দিন মুস্তাকিনকে দেখেছে, খুব পেশাগত, শক্ত লেগেছিল। আজ একদম তা লাগছে না, সহজ, মিশুক ও ব্যক্তিসুলভ লাগছে। তোয়ালেতে হাত মুছে সেটা আবার অন্তূকে ফেরত দেবার সময় অন্তূর দিকে তাকিয়ে ছিল মুস্তাকিন। বেশ বেলেহাজ দৃষ্টি। অন্তূর মুখ দেখতে পাওয়া যাচ্ছেনা, এই বিষয়টাই যেন মুস্তাকিনের কৌতূহল ও অনুরাগ বাড়িয়ে তুলল অন্তূর দিকে মনোযোগী হতে। অন্তূর চেয়ে বেশ খানিকটা লম্বা মুস্তাকিন। প্রসাশনের লোকদের একটা নির্দিষ্ট লম্বা উচ্চতা থাকে। একটা ঢোক গিলল মুস্তাকিন, ওড়নায় আড়াল করা মুখের ওপর দেখতে পাওয়া চোখদুটোকে গিলে নিলো বোধহয়। বেশ অস্বস্তিতে পড়ল অন্তূ। আমজাদ সাহেব হাত ধুতে রান্নাঘরে উঠে গেছেন, ভিমবার লাগিয়ে হাত ধোয়ার উদ্দেশ্যে।

মুস্তাকিন অন্তূকে জিজ্ঞেস করল, “কোনো ইয়ারে পড়ছেন?ʼʼ

-“সেকেন্ড ইয়ারের ইয়ার ফাইনাল দেব।ʼʼ

-“কোন অনুষদে?ʼʼ

-“এলএলবি।ʼʼ

-“বাপরে, হবু উকিল মেডাম!ʼʼ

অন্তূর কী হলো জানা নেই, কেমন আড়ষ্ঠতা ভর করল। মাথাটা নত করে মৃদু হেসেও ফেলল। এই প্রথম বোধহয় সে আর পাঁচটা মেয়ের মতো কারও সামনে বেশ অপ্রস্তুত আর সংকুচিত হয়ে পড়েছে। মুস্তাকিন নিচু আওয়াজে বলল, “এজন্য সমাজের কুকীর্তি নিয়ে বেশ ক্ষোভ আছে আপনার মাঝে।ʼʼ

অন্তূ কথা ঘোরালো, “আমি আপনার অনেক ছোটো বোধহয়। আপনি বলছেন, শুনতে ভালো লাগছে না।ʼʼ

ঘাঁড় চুলকালো মুস্তাকিন, “খুব বড়োও না। মানে অতটা অন্তত বড়ো না, যে চোখে লাগবে। আমি যখন এইটে পড়তাম, আপনি থ্রি অথবা ফোরে ছিলেন বোধহয়। তাছাড়াও আমি মেয়েদের তুমি বলতে পারিনা, নিজের কাছে খুব লেইম লাগে ব্যাপারটা। এরা মায়ের জাত, এদের সামনে খুব কুঁকড়ে যায় আমার তেজ, আর শক্তি। বলা চলে মেয়ে জাতিকে ভয় পাই আমি, মানে ধরুন, কী থেকে কী হয়ে যাবে, কোথাও অসম্মান বা তাদের মনঃকষ্টের কারণ হবে আমার কোনো কথা বা আচরণ। অভ্যাগত কারণে হলেও আপনি থেকে তুমিতে আসা খাটুনির কাজ হবে।ʼʼ

মুস্তাকিনের বলার ধরণটা অবলীল ও সরল ছিল, অন্তূর কেন যেন ভালোই লাগল শুনতে। হাসি পেল অল্প। আব্বুর ছাত্রের মুখে আব্বুর আদর্শের কথা শোনাটা চমৎকার একটা অনুভূতি বলে মনে হলো অন্তূর। এই আদর্শই তো সে ছোটোবেলা থেকে দেখেছে আব্বুর মাঝে! পাঞ্জাবীর হাতা গুটাতে গুটাতে আমজাদ সাহেবের পেছনে গেল মুস্তাকিন।

আমজদ সাহেব আবার বসলেন নিজের জমিজমার সমস্যার কথা তুলে। সব খুলে বলেছেন, আবারও একবার মনে করালেন। চলে যাবার সময় দরজা অবধি গেলেন আমজাদ সাহেব, “আবার আসবি কিন্তু। অবসর সময়টা কাটতে চায়না, আজকাল।ʼʼ

মুস্তাকিন বাড়ির ভেতরে চোখ ঘুরালো। কিছু খুঁজে চলল তার চোখদুটো। অকারণেই বোধহয় এই অযাচিত, অপ্রাসঙ্গিক চোখের চাহিদা! ব্যতিক্রমে মস্তিষ্ক মনোযোগী হয়। এ তো বড় স্বাভাবিক। মুস্তাকিনের সাথে তাই হচ্ছে। সেদিন অন্তূ কার্যালয় থেকে আসার পর বেশ কয়েকবার খেয়ালে এসেছিল অবশ্য এই আলাদা ধাঁচের অপরিচিতার কথা। কিন্তু কাজের সুবাদে ভুলে বসেছিল। সে ভাবার অবকাশ পায়নি, যে এভাবে আমজাদ স্যারের বাড়িতে তারই রক্তে গড়া মেয়ে হিসেবে সেই অদ্ভুত, ব্যতিক্রম অপরিচিতাকে আবার দেখতে পাবে। আলাপও হবে টুকটাক! বারবার মন ডেকে বলছে, অন্তূ আর সবার মতো নয়, কিছু একটা অন্যরকম আছে, কোনো একটা সম্ভাবনা আছে নারীটির চোখের পাপড়ির দুলুনিতে।

দেখা পেল। টিবিলের ওপর ছিটিয়ে থাকা থালাবাসন গোছাচ্ছে। স্যারকে বিদায় বলে সামান্য গলা উঁচিয়ে অন্তূকে বলল, “আসি, উকিল মেডাম! মন দিয়ে পড়ুন, আউটসাইডের চিন্তা না করলে বোধহয় আপনার জন্য ভালো। সমাজ দেখার জন্য আমরা আছি, আপনার পুরো ফোকাস এখন বইয়ের পাতায় হতে হবে।ʼʼ

গম্ভীর ছিল মুস্তাকিনের কণ্ঠস্বর এবার। অন্তূ তাকালো একবার। আমজাদ সাহেব কপাল জড়ালেন হালকা, এরপর মৃদু হাসলেন, “দোয়া করিস, বাপ! একই জেলায় আছিস, তোদের জুনিয়র, দেখেশুনে রাখিস রাস্তাঘাটে। যেসব কিছু ঘটছে ভার্সিটিতে, চিন্তা হয় ওকে নিয়ে। খুব বেপরোয়া হয়েছে, বেপরোয়াপনা সাধারণত আজাব বয়ে আনে।ʼʼ

মুস্তাকিন আবার একবার তাকালো অন্তূর দিকে, “আপনার মতোই হয়েছে, স্যার! আসি। ফ্লাটে যাবেন সময় কোরে, এককাপ চা খেয়ে আসবেন ছাত্রর হাতের।ʼʼ

অন্তূ এবার তাকিয়ে দেখল বাইরের দিকটা। শালটা কাধের ওপর তুলে, রোদচশমাটা পরে নিলো মুস্তাকিন। অন্তূর চোখের সামনে জয় এসে দাঁড়াল। ঘৃণায় মুখে বিরক্তির রেখা ভাঁজ আকারে পড়ল। এই শাল, রোদচশমা, পাঞ্জাবী সব বেশেই জয়কে দেখেছে অন্তূ, অথচ এমন সুপুরুষ লাগেনি। পুরুষত্ব একটু হলেও আছে মুস্তাকিনের মাঝে, অন্তত নারীকে সম্মান করার মনুষত্বটুকু আছে। হুট করে দুজনের তুলনা করে ফেলল কেন অন্তূ, জানে না। কিন্তু আজকাল জয়ের নোংরামিগুলো মাথায় এঁটে থাকা অবস্থায় ব্যতিক্রম এক পুরুষ চরিত্রে উপস্থাপন, একটু ভাবতে বাধ্য করল ওকে।

অন্তূর একা খেতে বসে খাবারে অনীহা এসে যাচ্ছিল। আম্মু অথবা আব্বুর সাথে বসে খাওয়া হয়। যতক্ষণ সে এসে না বসবে, বিরক্ত ধরিয়ে দেয় দুজন মানুষ ডেকে ডেকে। আজ মুস্তাকিন থাকায় ডাকেনি। খেয়ে গিয়ে আব্বুর কাছে বসার লোভ জাগলো। মানুষ মন ফুরফুরে করার, বা মুগ্ধতা উপলদ্ধি করার কত পন্থা বেছে নেয়, তাদের বোধহয় অন্তূর মতো আব্বু নেই, অথবা অন্তূর আর আব্বুর মতো সম্পর্ক নেই নিজেদের বাপের সাথে।

ভাবীর ঘরে গিয়ে দেখল, ভাবী উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ডাকল, “ভাবী! আসুন খেয়ে নিই, দুপুর পেরিয়ে যাচ্ছে।ʼʼ

-“আমি খাব না, মাথা ধরেছে খুব। ডেকো না আমায়।ʼʼ

অন্তূ একটা শ্বাস ফেলে বলল, “শরীর খারাপ নাকি আপনার? জ্বরটর আসবে হয়ত। চা বানিয়ে দেব, খাবেন?ʼʼ

মার্জিয়া জবাব দিলো না। অন্তূ খাবার মাখিয়ে গালে তুলতে গিয়ে উঠে এসেছিল। একা খাবার মুখে তুলতে রুচি আসছিল না। খুব অসহায় বোধ হচ্ছিল হঠাৎ-ই। এঁটো হাত ধুয়ে ছোটো পাতিলে পানি গরমে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল চুলার পাশে। আপনমনেই একটা পরিচিত কল্পিত দৃশ্য ভেসে উঠল চোখের সামনে, তার পরনে সাদা শাড়ি, তার ওপর এডভোকেটের বিশেষ কালো পোশাকটা। সে কয়েকটা ফাইল হাতে নিয়ে রিক্সা থেকে নেমে সুপ্রিম কোর্টের ফটক পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ভেতরে।

ভাবনা ভঙ্গ হলো, পানি ফুটে গেছে। চা পাতি ঢেলে দিয়ে আরেক ভাবনায় মন গেল। চোখের সামনে চিরাচরিত কল্পিত একটা দৃশ্য এসে দাঁড় হওয়া, আর বাস্তবে তার সুপ্রিম কোর্টের উকিল হিসেবে ভেতরে হেঁটে এগিয়ে চলার মাঝে দূরত্ব কতটুকু? আর সেই দূরত্বের রাস্তাটা সহজ কতটা? ঝঞ্ঝাট আর ঝড়ো হাওয়ার বেগ কেমন? কম না বেশি? রাস্তায় বিছিয়ে আছে রক্তগোলাপের কাঁটা নাকি রক্তরঙা কৃষ্ণচূড়ারা? তবে রাস্তার রঙটা লালচে, এটা কল্পনায় এলো অন্তূর।

চলবে..

[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here