রাত্রীপ্রিয়া #পর্বঃ১৪ ( প্রথম অংশ) লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

0
102

#রাত্রীপ্রিয়া
#পর্বঃ১৪ ( প্রথম অংশ)
লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

ভালোবাসার কাছে পরাজিত হওয়া একটা মেয়ের আ’ত্ম চিৎকারে কেঁপে উঠলো যেন পুরো হসপিটাল। হসপিটালের করিডরে আসা-যাওয়ারত মানুষজন আড় চোখে তাকিয়ে দেখছে বিপর্যস্ত এক, কিশোরীকে। কেউ দাঁড়িয়ে আগ্রহ নিয়ে দেখছে, কেউ বা দেখোও চলে গেলো নিজেদের কাজে। এটা হসপিটাল, এখানে দাঁড়িয়ে রোজ রোজ মানুষ কাঁদে-হাসে। জ্ঞানীরা এ কান্না সেভাবে কেউ গুরুত্ব দিলো না।

দিকবিদিকশুন্য হাঁটু মুড়ে কাঁদছে, পরশ। সেই হৃদয় নিঙড়ানো কান্নার আওয়াজ পেয়ে, কিছুক্ষণ পর ছুটে এলো দু’জন নার্স। মন্ত্রী সানাম চৌধুরীর পরিবারের সদস্য হিসাবে কম বেশি বিভিন্ন জেলের মানুষ তাদেরকে চিনে থাকে। ইয়াং দু’জন নার্স পরশকে দেখে একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো। একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলো,

“এই দেখতো, মেয়েটা মন্ত্রী সানাম চৌধুরী’র বোন না?”

“হ্যাঁ, তাই তো। চল দেখি।”

ওরা দু’জন দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসলো কাছাকাছি। “রামিসা” নামক মেয়েটা আগ্রহ নিয়ে পরশকে জিজ্ঞেস করলো,

“ম্যাম, কি হয়েছে আপনার?আপনার কোনো সমস্যা? আমরা কি ভাবে আপনার হেল্প করতে পারি? বলুন ম্যাম।”

হকচকিয়ে যায় পরশ। এতক্ষণে যেনো তার খেয়ালই ছিলো না, এটা হসপিটাল। এখানে অনেক লোক,তারা তাকে দেখছে। পরিচিত কেউ দেখতে পেলে বিরাট সমস্যা হবে। যদিও তাদের শহর ছেড়ে, দূরে একটা হসপিটালে আছে পরশ। সকালে ক্লাসের নাম করে এখানে এসেছে, মেয়েটা। আরো কয়েকবার আসতে চেয়েও,আসতে পারেনি। একটা না একটা অসুবিধা হতোই। আজ কলেজ ফাঁকি দিয়ে এসেছে।

দূর শহর। তবুও ভয় হয়। কত মানুষ চিনে তাদের। এসব কেউ ঘুনাক্ষরে জানতে পারলে, বিরাট কে’লে’ঙ্কা’রি ঘটে যাবে। ফ্যামিলি জানবে, সমাজ জানবে। তাদের যতোটুকু মানসম্মান রয়েছে, সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।

ভুল যখন সে করেছে, মাশুল তো দিতেই হবে। তবে সে মাশুল, নিরবে চুপিচুপি দেওয়াই শ্রেয়। নিজের সাথে যুক্ত পরমর্শ করে, ততক্ষণাৎ চোখ মুছে ফেললো পরশ। নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়ালো সে। মলিন মুখে সামান্য হেসে বললো,

“কিছু হয়নি, কিছু হয়নি আমার।”

নার্স দু’জন তবুও জানার আগ্রহ দেখালো। নামি-দামি সানাম চৌধুরীর বোন বলেই হয়তো। সাধারণ কেউ হলে, এসব বিষয় পাত্তাই দিতো না তারা। পরমুহূর্তে মিমি নামে মেয়েটা কোমল কণ্ঠে বললো,

“তাহলে আপনি এভাবে কাঁদছেন কেনো, ম্যাম? আপনাকে দেখতে কেমন, অস্বাভাবিক লাগছে।”

পরশ একটা অযুহাত দাঁড় করালো। মিছেমিছি বললো, “আমার বান্ধুবী খুব অসুস্থ। ওর খুব বিপদ। খুব ক্লোজ ফ্রেন্ডতো, আমার খুব কান্না পাচ্ছে। আমি এখন যাই।”

নিজের কথা শেষ হতেই ওদের পাশ কাটিয়ে হসপিটাল ছাড়লো, পরশ। নার্স দু’জনকে প্রতুত্তর করার সুযোগ অবধি দিলো না।
.
.
আকাশে আজ ঝলমলে রোদ। এ রোদে প্রখরতা বেশ। গা পু’ড়ে যাচ্ছে। মধ্য দুপরে সেই রোদকে উপেক্ষা করে এলোমেলো পায়ে হাঁটছে, পরশ৷ দুনিয়ায় কোনো কিছু তার বোধগম্য হচ্ছে না আজ। বাবার ঘরের আদুরে মেয়ে সে। সচারাচর এসি গাড়ী ছাড়া চলাফেরা করে না। আজ সঙ্গে করে গাড়ী আনেনি, মেয়েটা। কাউকে কিচ্ছুটি না বলেই, গোপনে এসেছে এখানে।

অচেনা শহরে, অচেনা রাস্তায় পরশ দুপুরের কড়া রোদে, নির্দ্বিধায় হাঁটছে।
চোখে জল টলমলে, হাতে মুঠোফোন। একনাগাড়ে কল করে যাচ্ছে, মুশফিক’কে। ভালোবাসার মানুষ, প্রিয় মানুষ, তার সন্তানের বাবা।

কিন্তু প্রতিবার ব্যর্থ সে। কল ঢুকছে না। ব্লকড করে রেখেছে, বোধহয়। যে করেই হোক আজ সরাসরি লোকটার সাথে কথা বলতে হবে। জানাতে হবে তাদের অনাগত সন্তানের কথা।
সন্তানের কথা শুনলে, নিশ্চয়ই লোকটা আগের মতো তাকে মায়া করবে, ভালোবাসবে। পরশ একটুখানি আশার আলো নিয়ে চলে গেলো একটা লোডের দোকানে। অচেনা নম্বর দিয়ে কল করলো, মুশফিক’কে। সঙ্গে সঙ্গে কল ঢুকে গেলো।

নতুন গার্লফ্রেন্ডের সাথে ডেটে এসেছে, মুশফিক। হঠাৎ অচেনা নাম্বারের ফোন পেয়ে, কিছুট বিরক্ত হলো। ফোন রিসিভ করে কর্কশ কণ্ঠে শুধালো,

“হ্যালো,কে?”

পরিচিত সেই কণ্ঠ স্বর শুনে, সকল দুঃখ’কে উপেক্ষা করে হাসলো পরশ। হাসি-হাসি মুখে জানান দিলো,

“আমি, আমি পরশ।”

পরশ নামটা শুনেই মুখ বিকৃত করে ফেললো, মুশফিক। বিরক্তিকর কণ্ঠে বললো,

“তুমি, তুমি কল করেছো কেনো আমায়?”

“এভাবে কথা বলছো কেনো, মুশফিক? আমি কি তোমায় কল করতে পারি না?”

“না পারো না, আমি ডিস্টার্ব ফিল করছি। তোমাকে তো বললামই, এই সম্পর্ক ভুলে যাও, ভুলে যাও আমাকে। তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমি এই সম্পর্কের দাড়ি কমা টেনে দিলাম।”

প্রিয় পুরুষের থেকে এমন কথা শুনে চোখে জল চলে আসলো, পরশের। অবাক হয়ে জানতে চাইলো,

“সবকিছু কি এতোই সহজ?”

“সহজ-কঠিন সে তোমার ব্যাপার। রাখছি। আর কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করো না, পরশ।”

“প্লিজ, কল কেটোনা! শোনো, আমার কথা?”

“কি বলবে, তাড়াতাড়ি বলো?”

‘আর একটি বার দেখা করবে, আমার সাথে? প্লিজ! একবার দেখা করো আজ। তোমাকে কিছু বলার আছে।”

কি অসহায় শোনালো মেয়েটার সে আবদার। অপর মানুষটি সে কণ্ঠ শুনলো না, বুঝলো না মেয়েটাকে। মুশফিক কল কেটে দিতে গিয়েও দিলো না। বললো,

“আজ সময় হবে না। আগামীকাল বিকেলে পার্কে এসো।”

বলেই মুখের উপর খট করে কল কেটে দিলো, মুশফিক। প্রিয় মানুষের অবহেলার কাছে, মেয়েটার গাল বেয়ে আরো একদফা লোনাজল গড়িয়ে পড়লো। আশাহত মনটা নিয়ে পুনরায় ফিরলো বাড়িতে।
.
.
রাত এগারোটা। এরিমধ্য একে একে চৌধুরী বাড়ির সকলে, নিজ কর্ম স্থান থেকে ফিরলো। বাড়ির পুরুষেরা ফিরতেই ডাইনিং এ খাবারে ব্যাবস্হা করলো, রাত্রীপ্রিয়া। তাকে হাতে হাতে সাহায্য করছে, তানিয়া চৌধুরী ও রোকসানা চৌধুরী।
মিনিট পাঁচেক যেতেই সকলে উপস্থিত হলো, ডাইনিং টেবিলে। সকলে ইতোমধ্যে খেতে বসেছে। সালাম চৌধুরী লক্ষ্য করলো, পরশ আসেনি খেতে। তাই উনি জিজ্ঞেস করলো,

“পরশ কোথায়’রে? ও এখনো আসছে না কেন?”

তানিয়া চৌধুরী বললো, “ডেকেছি। তোমার মেয়ে আসছে না, খাবে না বলে দিয়েছে।”

সালাম চৌধুরী খানিকক্ষণ কিছু একটা ভেবে রাত্রী’কে জিজ্ঞেস করলো,

“পরশের কি হয়েছে, তুই কিছু জানিস রাত্রী? মেয়েটাকে কিছুদিন ধরে অন্য রকমের লাগছে। আমার আগের সেই চঞ্চল মেয়েটা কেমন দিনদিন নিরব হয়ে যাচ্ছে। কিছু জিজ্ঞেস করলেও, কিচ্ছুটি বলে না। আমার মনে হচ্ছে, মেয়েটা আমাদের থেকে কিছু লুকাতে চাইছে। ওর কি কোনো অসুখ হয়েছে?”

“হ্যাঁ মামা! আপনি ঠিক ধরেছেন, আমাদের পরশ ভালো নেই। তার খুব বড় রকমের এক অসুখ হয়েছে। এ অসুখ মনের, ভালোবাসার। সেই সাথে ঘটেছে ভয়াবহ এক ঘটনা। এতো বড় অসুখের খবর, আপনাকে দেওয়ার মতো দুঃসাহস আমার নেই, মামা। বাবা হয়ে আপনি মেয়ের এতবড় অঘটন, সহ্য করতে পারবেন না।”

মনে মনে কথাগুলো বললো, রাত্রীপ্রিয়া। মুখে বললো,

“ওর কি হয়েছে আমি জানি না, মামা। আমাকে সেভাবে কিচ্ছুটি বলেনি।”

চলবে…….

[পর্বটা রিচেক করা হয়নি। মাত্রই লিখে পোস্ট করে দিলাম। কেমন হয়েছে জানাবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here