রাত্রীপ্রিয়া #পর্বঃ৭ লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

0
100

#রাত্রীপ্রিয়া
#পর্বঃ৭
লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

“নিজের পেট-পিঠ উদাম যৌবন দেখিয়ে ছেলেদের আকৃষ্ট করতে চাইছে, রাত্রিপ্রিয়া ! তাহলে, শাড়ীর আঁচলটা অর্ধেকটা নয় পুরোপুরিই ফেলে দেও। তারাও সরাসরি খোলামেলা ভাবে দেখুক তোমায়।”

বর পক্ষ চলে এসেছে ইতোমধ্যে। সেই উপলক্ষে সবার ভিতর বেশ সো’র’গো’ল চলছে। যুবতী মেয়ে/ছেলেরা গেইটে’র কাছে গিয়েছে, বরকে রিসিভ করতে। সবাই ভীষণ আনন্দে করছে। সেদিকে গেলো না রাত্রিপ্রিয়া। যদিও ননদরা তাকে নেওয়ার জন্য জোরজবরদস্তি করেছে। তবুও যায়নি সে। কেননা সানাম চৌধুরী তাকে যেতে নিষেধ করেছে। ওখানে না গিয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রাত্রী দেখছিলো, সেসব। চারপাশে বেশ লোকজন, বিরাট হৈচৈ! রাত্রী দারুণ এনজয় করছিলো।

এরিমধ্যে আকস্মিক কানের ঠিক অতি নিকটে এহেন কিছু পুরুষালী কণ্ঠে’র বি’শ্রী বাক্য শুনে কেঁপে উঠলো, রাত্রীপ্রিয়া। চটজলদি ভয়ে ভয়ে পিছনে ঘুরে তাকায় সে। ভয়ংকর ক্রো’ধ নিয়ে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে নেতা, সানাম চৌধুরী। এই লোকটা তাকে এসব বলছে? তার সানাম ভাই এসব বলছে তাকে? বিস্মিত! হতবাক রাত্রিপ্রিয়া!
ততক্ষণাৎ বিস্মিত কণ্ঠে মেয়েটা বলে উঠলো,

“নেতা সাহেব!”

আরো নিকটে এগিয়ে আসলো, সানাম চৌধুরী। শক্ত হাতে স্ত্রী’র খোলা পেট খামচে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে শুধালো,

“আমি জাস্ট অবাক হচ্ছি, রাত্রী! মন্ত্রী সানাম চৌধুরী’র স্ত্রী হয়ে তুমি অ’র্ধ’ন’গ্ন হয়ে বিয়ে বাড়িতে এসেছো? আরেহ্! যে ফুলের গায়ে আমি একটা আঁচড় অবধি দেই না নষ্ট হওয়ার ভয়ে, সেই ফুলকে কিছু নোংরা চোখ পিষে দিচ্ছে সজ্ঞানে! আর তুমি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের সুযোগ করে দিচ্ছো, রাত্রীপ্রিয়া? আমার হক নষ্ট করছো?”

হকচকিয়ে নিজের পেটের দিকে তাকায়, রাত্রীপ্রিয়া। বেখেয়ালি’তে কখন জানি তার শাড়ী’র আঁচলটা অনেকটা সরে গিয়েছে । নিজের কাজে নিজেই লজ্জিত রাত্রীপ্রিয়া। তার নেতা সাহেবের এতো রাগের কারণ এবার স্পষ্ট! পরমুহূর্তে মেয়েটা নত মাথা আরো একটু নত করে বললো,

“স্যরি, নেতা সাহেব! আমি একদম খেয়াল করিনি।”

এসব শুনলো না, সানাম চৌধুরী। ভয়ংকর রেগে আছে সে। কিছু জরুরী কাজে এদিকটায় এসেছিলো, সানাম চৌধুরী। এরিমধ্যে খেয়াল করলো কিছু যুবক তার অর্ধাঙ্গিনী’র দিকে বি’শ্রী ভাবে তাকিয়ে আছে। তাদের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে নজর বুলায়, সানাম। তার অর্ধাঙ্গিনী পেট-পিঠ উদাম করে দাঁড়িয়ে আছে এক কর্ণারে।
ওদের এই চোখে ছিলো একরাশ লা’ল’সা। পুরুষ হয়ে সে দৃষ্টি চট করে বুঝে ফেলেছে সে।
অন্যসব মেয়ে হলে হয়তো দু’চারটা বিশ্রী বাক্যও বলতো।কিন্তু, নেতা সানাম চৌধুরী’র স্ত্রী বলে সে সাহস কেউ করলো না। চোখ দিয়ে যতটা সম্ভব গিলছে।
এই যে কিছু লোক তাকে বাজে ভাবে দেখছে, সেদিকে কোনো খেয়াল নেই মেয়েটার। এতো উদাসীন মেয়েটা! তীব্র ক্রোধে থরথর করে কাঁপছে, সানাম। মন চাচ্ছে, এই চোখ গুলো এক্ষুণি উপড়ে ফেলতে। লোকজন কিছু বলেনি। তাদের গিয়ে ধরে ধরে তো আর বলা যায় না, আমার স্ত্রী’কে বাজে ভাবে দেখছিস কেনো? এতো বড় সাহস তোদের?

লজ্জা জনক ব্যাপার! ঝামেলা করলে তারই সম্মান যাবে। অন্য কোথাও হলে, এদের উদাম একটা কেলানি দেওয়া যেতো। এখনে বোনের বিয়েতে সিনক্রিয়েট করলে ব্যাপারটা ভালো হবে না। এটা তাদের সম্মানের সাথে জড়িত। সব দোষ এই মেয়েটার! মেয়েরা অ’র্ধ’ন’গ্ন হয় দাঁড়িয়ে থাকবে আর পুরুষ দেখলেই দোষ না-কি!
পরমুহূর্তেই হন্তদন্ত পায়ে এগিয়ে আসলো, সানাম চৌধুরী। তার এতক্ষণে’র সমস্ত ক্রোধ উগলে নিলো, মেয়েটার উপর। পরমুহূর্তেই নিজের শরীর দিয়ে আড়াল করে নিলো, রাত্রী’কে। এক হাত দিয়ে আলগোছে শাড়ীর আঁচলটা ঠিক করে নিলো। অন্য হাতে এখনো পেটের উপর। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে আরো একটু শক্ত হাতে খামচে ধরলো মেয়েটার নরম পেট। বললো,

“তোমার খেয়াল আজকাল কোথায় থাকে, হ্যাঁ? এখানে খোলামেলা হয়ে নিজের দিকে পুরুষদের আকৃষ্ট করতে এসেছো, তুমি! একদম জানে মে’রে ফেলবো তোমায়। তুমি মানুষটা আগাগোড়া একান্তই সানাম চৌধুরী’র। আমি ব্যাতিতো তোমার দেহে-মনে কারো আধিপত্য চলবে না। চলবে না মানে চলবে না! শালা’রা মাদারবোর্ড এক একটা! ওদের ঘরে কি বউ নেই! আমার জিনিসে নজর দেয়! বে’কু’বে’র দল! দেখে নিবো তোদের!”

পেটে ব্যথা অনুভব করে চোখে জল চলে এলো, মেয়েটার। যা দেখে ততক্ষণাৎ হাত সরিয়ে ফেলে সানাম চৌধুরী। পাশে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে পুনরায় আবারো শুধালো,

“এক্ষুণি ভিতরে যাও, রাত্রী। জাস্ট পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে গাড়িতে উঠবে। আজ থেকে তোমার বাহিরে বের হওয়াই নিষেধ।”

মেয়েটা প্রত্যুওর করলো না কোনো। নত মাথায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। তার কান্নারা দলা পাকিয়ে আসছে। তবুও মুখ চেপে কান্না আটকাতে চাইছে। লোকটার উপর রাগ হচ্ছে, অভিমান গাঢ় হলো। সে তো বললো খেয়াল করেনি। তবুও মানুষটা কি সব বি’শ্রী বাক্য তাকে শোনালো। ছি! রাত্রীপ্রিয়া শুনবে না, এই লোকটার কোনো কথা। একদম কথাও বলবে না! মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো, রাত্রীপ্রিয়া। যা দেখে ততক্ষণাৎ সানাম চৌধুরী তার হাত ধরে নিজেই ভিতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যাত হলো। এমন সময় পিছন থেকে তার শ্বশুর মশাই ডাকলো,

“আব্বা-আম্মা দাঁড়ান! আমি এসেছি।”

পিছনে ঘুরে তাকালো দু’জন। বাবা’কে দেখে দ্রুত চোখ মুছলো রাত্রী। সানাম চৌধুরী নিজেকে ধাতস্ত করে শ্বশুর’কে সালাম দিলো। ততক্ষণাৎ বউয়ের হাত ছেড়ে দিয়ে টানটান সোজা হয়ে পাশে দাঁড়ালো। রাত্রী দ্রুত ছুটে গেল বাবা’র নিকট। গাঢ় কণ্ঠে ডাকলো,

“বাবা…!”

আনোয়ার সাহেব আলতো হাসলো। মেয়ের মাথায় স্নেহেতু হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কেমন আছিস আম্মা?”

“আলহামদুলিল্লাহ! তুমি কেমন আছো, বাবা?”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, আম্মা!”

আনোয়ার সাহেব মেয়ের দিকে মায়াময় চোখে তাকালো। একমাত্র মেয়ে তার। কতদিন পর দেখা হলো মেয়েটার সাথে। হঠাৎ খেয়াল হলো, তার মেয়েটার চোখ চিকচিক করছে। ব্যস্ত হয়ে পড়লো, বাবা। বললো,

“কি হয়েছে আম্মা? তোর চোখে জল! কেঁদেছিস?”

রাত্রীপ্রিয়া কিছু বলার আগেই পাশ থেকে সানাম চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

“বুঝলেন, শ্বশুর মশাই! আপনার মেয়েটা বড়, বোয়ালখালী! তার আজকাল কোনো কিছুতেই খেয়াল থাকে না।”

লোকটার ঠান্ডা মস্তিষ্কের খোঁচা মারা কথাখানা আনোয়ার সাহেব না বুঝলেও রাত্রীপ্রিয়া ঠিকই বুঝেছে। তবুও কিছু বললো না সে। নিরব রইলো! আনোয়ার সাহেব উদ্বিগ্ন কণ্ঠে শুধালো,

“বুঝলাম না। কি হয়েছে, আব্বা? বলতো, আমার মেয়েটার কি হয়েছে? কাঁদছে কেন, রাত্রীপ্রিয়া?”

“আরেহ্, রিলাক্স শ্বশুর মশাই! আপনার মেয়ে একদম ঠিকঠাক। ওই তো এখানে এসেছিলো, কোথা থেকে উড়ে উড়ে চোখে একটা পোকা পড়ে গেলো।”

ডাহামিথ্যে কথাখানা বলে শ্বশুরের অগোচরে বউয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো, সানাম চৌধুরী। চোখ গরম করে তাকালো, রাত্রীপ্রিয়া। এরিমধ্যে আনোয়ার সাহেব মেয়ের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে চোখে হাত রেখে আদুরে কণ্ঠে বললো,

“দেখি আম্মা! কোথায় পোকা? ইশশশ! কিভাবে যে চলাফেরা করো তুমি। একদম নিজের খেয়াল রাখো না। মুখটাও শুকিয়ে গিয়েছে। খাওয়া-দাওয়া করো না ঠিক মতো।”

সানাম চৌধুরী আশ্বাস দিয়ে বললো,

” পোকা আমি উঠিয়ে ফেলছি তো। আর জীবনেও এই পোকা এসে পড়বে না। সে শিক্ষা তাকে দেওয়া হয়েছে।”

আনোয়ার সাহেব তবুও মেয়ের চোখ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো। সব ঠিকঠাক দেখে স্বস্তি পেলো। কিছুসময় মেয়ের চোখে ফুউউ দিয়ে দিলো। জানতে চাইলে,

যন্ত্রণা করছে কি-না। রাত্রীপ্রিয়া মাথা নাড়িয়ে না বললো। এরিমধ্যে সেখানে উপস্থিত হলো, সানজিদা খানম। তারা দু’টো মাএ বোন ছিলো। বড় বোনটা মা’রা গেলে, এখন সে একা।
বোন না থাকলেও কারো সাথে আত্মিয়তার সম্পর্ক নড়বড়ে হয়নি। বড় দুলাভাইকে সে ভাইয়ের মতোই শ্রদ্ধা করে এসেছেন। আনোয়ার সাহেবও ছোট বোনের মতো স্নেহ করে তাকে।

এরিমধ্যে সানজিদা খানম অভিযোগ করলো। যেমনটা একজন বোন তার ভাইয়ের নিকট অভিযোগ করে। সানজিদা খানম গাল ফুলিয়ে বললো,

“এই আপনার আসার সময় হলো, দুলাভাই?”

আনোয়ার সাহেব মৃদু হেসে শালিকা’কে বললো,

“জরুরী একটা কাজে ব্যস্ত ছিলাম, বোন। আরো আগে আসার সময় হয়ে উঠেনি। জানোই তো আমি একেবারে একা। রাগ করো না সানজু। এবার দু’টো দিন তোমাদের সবার সাথে থাকবো।”

সানজিদা খানম আর কথা বাড়ালো না। লোকটা বড়ই দায়িত্বশীল, কাজ পাগল! সানজিদা খানম তাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন। তার সাথে রাত্রীও গেলেন। মেয়েকে আর একা ছাড়লেন না বাবা।
এই মেয়েটা তাদের বড় সাধনার ফল।
বিয়ের বারো বছর তারা ছিলেন নিঃসন্তান। এরপর রবের ইচ্ছেতে,রাত্রীপ্রিয়া’র জন্ম। এরজন্য কম কষ্ট করেননি তারা। এরপর আর তাদের বাচ্চা- কাচ্চা হয়নি। সানজিদা খানম রাত্রীপ্রিয়া’র ছোট খালা হলেও তার মেয়েরা ওর থেকে দু’জনই বড়।

রাত্রীপ্রিয়া বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে বলে বাবা-মায়ের একটু বেশিই আদরের মেয়ে ছিলেন। এরিমধ্যে মা মা’রা গেলো, মেয়েটারও বিয়ে হয়ে গেলো। আনোয়ার সাহেব এখন বড়ই একা। লোকজন, আত্মীয়রা দ্বিতীয় বিয়ে করতে বললেও পুনরায় বিয়ে সংসার করতে নারাজ সে। বউকে ভীষণ ভালোবাসে কি-না! তার অনুপস্থিতিতে তার জায়গাটা আর কাউকে দেওয়া সম্ভব নয়। সব পুরুষ নিজের সুখ খুঁজে না, কিছু পুরুষ দুঃখকে আগলে প্রিয় নারীর স্মৃতি নিয়ে বাঁচে।

সানাম চৌধুরী তাদের সাথে আর ভিতরে গেলো না। খানিকটা দূরে গিয়ে নিজের রাগ সামলাতে একটা সিগারেট ধরালো। দু’টো টান দিতেই সেখানে উপস্থিত হলো, সায়মন। ভাইয়ের ঠোঁটে চাপানো সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললো,

“যে ঠোঁট বউয়ের চুমুতে ভেজে সেই ঠোঁটে আপনি সিগারেট চাপিয়ে পুড়ছেন, সানাম চৌধুরী!
ছি, নেতা সাহেব ছি! আপনার থেকে এমনটা আশা করিনি আমি! আপনি আমার বোনের হক নষ্ট করছেন?

চলবে…….

[প্লিজ, নোটটা সবাই পড়ুন। গল্পে মা’রা’ত্ম’ক একটা ভুল করেছি আমি। ভুলটা হলো, সানজিদা খানম সালাম চৌধুরী’র ছোট বোন সেখানে আমি একমাত্র বোন লিখে ফেলছি। সানজিদা যেমন সানাম চৌধুরী’র ফুপি তেমনি রাত্রীপ্রিয়া’র খালা। কেননা তারা দু’জন আগে থেকেই কাজিন হতো।
সেটা আমি #পর্বঃ৬ এ উল্লেখ করিনি। তাছাড়া, কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন, আমি উওর দিবো। সবাই রেসপন্স করবেন। কেমন লাগছে গল্প?]

রেসপন্স করবেন 🌸

পেইজঃ Bindas Life ✅ ফলো করুন ❤️ ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here