রাত্রীপ্রিয়া বোনাস পর্ব #পর্বঃ৯ লেখনীতে ঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

0
90

#রাত্রীপ্রিয়া বোনাস পর্ব
#পর্বঃ৯
লেখনীতে ঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

বিয়ে বাড়ি এখন দারুণ নিরব, নিস্তব্ধ। এতক্ষণের সেই কোলাহল আনন্দ হারিয়ে কোথাও যেন মিলিয়ে গিয়েছে। কন্যাকে শ্বশুর বাড়িতে বিদায় দিয়ে বাবা-মা দু’জনই অনেকটা ভেঙে পড়ছে। বেলা গড়িয়ে নিকাষ কালো আঁধারে মিলিয়ে গিয়েছে প্রকৃতিতে। সেই সাথে রঙিন আলোকসজ্জা ও কৃত্রিম সাজসজ্জা খুলতে ব্যস্ত ডেকোরেটরের লোকজন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কাজের তদারকি করছে সানাম চৌধুরী ও সায়মন। বারবার বলছে,

“সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে করো, কোনোকিছু যেন রয়ে না যায়। ”

বিয়ে বাড়িতে ওরা দু’জনই সমানে বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেছে। তাদের পরিচালনায় সুস্থ ভাবেই বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়েছে।

কনে বিদায় হওয়ার সাথে সাথেই বিয়ে বাড়িতে মানুষের আনাগোনা কমে গিয়েছে।
নিকটতম আত্মীয়রাও যে যার বাড়িতে চলে গেলো। শুধু রয়ে গেলো, চৌধুরী পরিবার ও দূরান্ত কিছু লোক। রাত্রীপ্রিয়া এসে বাসার নিরিবিলি ছাদের দাঁড়ালো। ভারী শাড়ী-গয়না খুলে একটা ছাই রঙা নরমাল থ্রি-পিস পড়েছে সে। মুখে প্রসাধনী নেই কোনো, চুল গুলো হাত খোঁপা করে রেখেছে।
ছাদে হালকা নীল রঙের একটি রঙিন বাতি জ্বলছে। মেয়েটা সেদিকে তাকিয়ে রইলো খানিকক্ষণ। ফর্সা মুখখানায় নীল আভা ছড়িয়ে পড়ছে। জ্বলজ্বল করছে মেয়েটার রুপ। এরিমধ্যে নিচ থেকে আওয়াজ এলো,

“সন্ধ্যা বেলা একা একা ওখানে কি করছো, রাত্রীপ্রিয়া? নিচে নামো দ্রুত।”

সানাম চৌধুরীর কণ্ঠ স্বর। নিচে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে লোকটা। যা লক্ষ্য করে মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে তাকালো রাত্রী। তাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বললো,

“আমি যাবো না। আপনার কি সমস্যা? আপনি আপনার কাজ করুন।”

“আমি আসবো ছাদে না-কি তুমি নামবে?”

কথাটায় বেশ কাজ হয়েছে। রাত্রীপ্রিয়া ততক্ষণাৎ সুড়সুড় করে নিচে নামলো। কেননা স্বামীর সাথে অভিমান করে মনেমনে পণ করেছে,

“লোকটার মুখোমুখি সে আর হবে না। কথাও বলবে না, কখনো কাছাকাছিও যাবে না। বদ লোক একটা! একদম তার কাছে যাবে না রাত্রীপ্রিয়া।”

হলোও তাই। সেই থেকে আজ সারাটাদিন তাকে সম্পূর্ণ ভাবে উপেক্ষা করছে এই মেয়েটি। যতবার কথা বলতে গিয়েছে ঠিক ততবারই তাকে এড়িয়ে গিয়েছি। সারাক্ষণ বাবা’র কাছাকাছি থেকেছে। শ্বশুরের কাছ থেকে’তো আর বউ’কে তুলে আনা যায় না। বিয়ে বাড়িতে থেকে মন্ত্রী সানাম চৌধুরীও বউয়ের মান-অভিমান ভাঙানোর সেভাবে সুযোগ পায়নি।
বউয়ের হনহনিয়ে চলে যাওয়ার দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে রইলো, সানাম চৌধুরী। কি একটা অবস্থা! বউয়ের সাথে কথা না বলে কি থাকা যায়? আশপাশ করছে নেতা সাহেবের বক্ষ। কতদিন, কতক্ষণ লাগে বউয়ের এই রাগ ভাঙতে কে জানে….

তান্মধ্যে, তাকে ডাক দিলো সায়মন। বললো,

“কিরে, সানাম! ওদিকে তাকিয়ে কি দেখছিস? এদিকে আয়। ওপাশের সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি-না দেখতো?”

সানাম চৌধুরী বিরক্তিকর মুখে সায়মনের দেওয়া কাজে চলে গেলো। ওদের জন্য একটু বউকে একটু মন ভরে দেখা যাবে না। আশ্চর্য!

সারাদিন খাটাখাটি করে রাত নয়টায় বাসার ভেতর গেলো, সানাম চৌধুরী। এসেই ফ্রেশ হয়ে নিলো আলগোছে। তার এখন তীব্র তৃষ্ণা পেয়েছে। এই মুহূর্তে বউকে প্রয়োজন তার। কিন্তু তাকে চোখে পড়ছে না। রুমেও নেই। সানাম চৌধুরী রুম থেকে বের হয়ে বউয়ের সন্ধান করলো।
সে আছে তার ননদদের সাথে, সেতুর রুমে। সেখানেও অনেক মানুষ, মা-চাচিরা বোনেরা রয়েছে। সবাই মিলে কথা বলছে। তাদের সামনে গিয়ে বউকে নিজের রুমে ডাকাটা শোভনীয় আচরণ নয়। আশাহত মনটা নিয়ে পুনরায় নিজের নিদিষ্ট কক্ষে চলে গেলো, সানাম চৌধুরী। চটজলদি কল করলো, রাত্রী’কে। ফোন রিসিভ হলো না, কেটে দিয়েছে মেয়েটা। পরমুহূর্তে কল না করে তাকে মেসেজ করলো,

“বউ! একটুখানি দেখা করো আমার সাথে, রুম থেকে একবার ঘুরে যাও। আমার বড় প্রেম প্রেম পাচ্ছে গো! তোমার গোলাপি ঠোঁটের পরশ চাইছে আমার নির্লজ্জ ঠোঁট। সারাদিনে বউয়ের চুমু না পাওয়ার তৃষ্ণায় শুকিয়ে খা’ক হয়ে আছে ওষ্ঠদ্বয়। প্লিজ, জান! একবার রুমে আসো।”

মেসেজ খানা পড়ে লজ্জায় গোলাপি হয়ে গেলো রাত্রীপ্রিয়া। ছি! ছি! মানুষটা কতটা নির্লজ্জ! মেসেজে কেউ এসব লিখে? রাত্রীপ্রিয়া দ্রুত নিজের ফোন বন্ধ করে ফেললো। মিনিট দশেক সময় অপেক্ষা করেও যখন বউয়ের রেসপন্স পেলো না। বাধ্য হয়ে সেখানে উপস্থিত হলো, সানাম চৌধুরী। এসেই চারপাশে একবার তাকিয়ে রাত্রী’কে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,

“আমাকে একটা কফি করে দেও তো রাত্রী।”

যা শুনে ততক্ষণাৎ তানিয়া চৌধুরী বললো,

“রাত্রী তুমি বসো, উঠতে হবে না তোমার। সানাম তুই তোর রুমে যা। আমি তোকে কফি বানিয়ে দিচ্ছি। সময় মতো কফি তোর রুমে পৌঁছে যাবে।”

বলতে বলতে উনি উঠে দাঁড়ালো। ছেলের জন্য কফি বানাতে চলেও গেলেন। মায়ের কথায় যেন বিনা মেঘে ব’জ্র’পা’ত পড়লো সানাম চৌধুরী’র মাথায়৷ মা’কে চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করলো,

“আমার কফির প্রয়োজন নেই মা, আমার বউ প্রয়োজন। কফি তো একটা বাহানা মাত্র।”

কিন্তু চক্ষু লজ্জায় সেসব বলা গেলো না। মা’কে কি আর এসব বলা যায়। সানাম চৌধুরী, একবার অসহায় হয়ে তাকালো স্ত্রীর মুখপানে। মেয়েটা যা দেখে ঠোঁট টিপে হাসছে। তান্মধ্যে তানহা বললো,

“ভাই তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও এখন থেকে। আমরা সিক্রেট একটা কথা বলছি। তোমার সামনে বলা যাবে না।”

পাংশুটে মুখে পুনরায় নিজের রুমে চলে গেলো, সানাম চৌধুরী।

চলবে……

[এতোদিন কিছু সমস্যার জন্য গল্পটা দিতে পারিনি, তার জন্য আমি দুঃখিত! আপনাদের অভিযোগে, ছোট করে হলেও আজ দিলাম। সবাই রেসপন্স কইরেন। এখন থেকে জলদি জলদি দিয়ে দিবো। ]

পেইজঃ Bindas Life ✅ ফলো করুন ❤️ ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here