আশার_হাত_বাড়ায়|২০| #ইশরাত_জাহান 🦋

0
333

#আশার_হাত_বাড়ায়|২০|
#ইশরাত_জাহান
🦋
শিহাবদের বাসার সামনে বড় বাগান আর তার পাশে ছোট একটি সুইমিং পুল।যেটা দেখতে অনেক সুন্দর লাগলো রিমলির কাছে।সুইমিং পুলের পরিষ্কার পানিতে লাল সাদা হলুদ ভিন্ন রংয়ের ফুলের প্রতিবিম্ব দেখা যায়।বড় বড় কিছু গাছ লাগানো আছে সেখানে। রিমলি ঘর দেখার কথা ভুলেই যায়। সে তার মনের আবেগ দিয়ে পরিবেশ দেখায় ব্যাস্ত।শিহাব লক্ষ্য করলো রিমলি তাদের বাগানটা দেখেই মুগ্ধ।মুচকি হেসে শিহাব বলে,”এটা আমার মায়ের প্রিয় জায়গা।আমার মা ফুল গাছ অনেক ভালোবাসে।বিয়ের আগে নাকি বাবাকে শর্ত দিয়েছিলো ছোট্ট কুড়েঘর হলেও চলবে কিন্তু ফুল বাগান তার চাই চাই।”

রিমলি বেঘোরে বলে,”এমন শর্ত তো আমিও দিতে চাই। আর কিছু না এমন ভিন্ন ফুল গাছ থাকলে মনটা এমনিতেও আনন্দে মেতে ওঠে।মন খারাপের সময়ও ফুলগুলো দেখলে মন খারাপের কথা মনেই থাকবে না।”

শিহাব রিমলির পিছনে দাঁড়ানো। গাছে পানি দেওয়া শেষ করে মালি বলে,”চলো তাইলে ঘর দেখাই।কিন্তু তোমার পরিবার কোথায়?”

“মা ছিলো এতক্ষণ আমার সাথে।এই গলির প্রায় বেশকয়েকটি ঘর দেখেছি।দুটো দেখাই বাকি।মা অসুস্থ হয়ে যায় আর আপু অফিসে তাই আমি একাই এসেছি।ঘর পছন্দ হলে মা আসবে বিকালে।”

“আচ্ছা আসো তাহলে।”

মালির পিছন পিছন গেলো রিমলি আর শিহাব।শিহাবদের তিনতলা বিশিষ্ট বাড়ির দ্বিতীয় ফ্লোরে শিহাবরা থাকে।প্রথম ও তৃতীয় ফ্লোর ভাড়া দেওয়া। শিহাবদের ঘরের সামনেই যে ঘর ওটা ভাড়া দেওয়া হবে। রিমলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো।সবকিছু পারফেক্ট।অবশ্য বাড়িটি খোলামেলা পরিবেশের মধ্যে।চারপাশ ফাঁকা।গাছ গাছালি দিয়ে ভরা পরিবেশ।আশেপাশে থেকে প্রাকৃতিক বাতাস উপভোগ করতে পারবে।সবকিছুই ভালো লাগলো রিমলির কাছে।কিন্তু ভাড়ার কথা মাথায় আসতেই ঘুরে দাড়ালো শিহাবের দিকে।সোজাসুজি বলে,”ঘর মোটামুটি ভালো।কিন্তু ভাড়া কেমন?”

মালি মুখ থেকে বের করেছিল,”তে..”

তাকে কিছু বলতে না দিয়ে শিহাব দ্রুত বলে,”মাত্র সাত হাজার।”

অবাক হলো রিমলি।ভালো করে আবারও ঘরগুলো দেখলো।তারপর শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে,”এটা কি দুই নাম্বার সিমেন্ট বালি দিয়ে গড়া বাড়ি নাকি?অথবা এমন না তো এখানে ভুত প্রেত থাকে?”

“আরে এমন কেনো হবে?এমন হলে আমরা কিভাবে থাকবো?”

দুই হাত ভাঁজ করে চোখ ছোট ছোট করে সন্দেহ দৃষ্টি দিয়ে রিমলি বলে,”আমাদের যশোরে পৌরসভার ভিতরে এক একটা উন্নত মানের ফ্ল্যাট তাই নেয় সাত আট হাজার।এখানে তো আরও সুন্দর পরিবেশ সাথে বাড়ির ফেসিলিটি অনেক।তাহলে কিভাবে ঘর ভাড়া এত কম হয়?”

মাথা চুলকাতে থাকে শিহাব।ভেবেছিলো এই মেয়েকে কম ভাড়া বললে খুশিতে ভাড়া নিতে রাজি হবে।এ তো আরও বেশি চালাক।শিহাব তাকালো মালির দিকে।মালি হা হয়ে আছে।যেখানে ঘর ভাড়া তেরো হাজার সেখানে কি না অর্ধেক বলে দিলো শিহাব।আজকে আর গিন্নি মা(শিহাবের মা) তাকে আস্ত রাখবে না।তবে শিহাবের মতিগতি দেখে বুঝতে পেরেছে এই মেয়ের কাছে তার স্যার ফেঁসে গেছে।তাই চুপ আছে সে।শিহাব আমতা আমতা করে বলে,”আসলে এখন ডিসকাউন্ট চলছে তাই।”

“ঘর ভাড়ায় ডিসকাউন্ট চলে!জীবনে প্রথম শুনলাম।”

“সবার জন্য তো ডিসকাউন্ট না।আমার যাকে ভালো লাগে তার জন্যই ডিসকাউন্ট।”

“এহ!”(অবাক হয়ে আছে রিমলি)

“জি।আমি আবার উদার মনের মানুষ।যখন দেখলাম এক পিচ্চি কষ্ট করে ঘর ভাড়া খুঁজছে তখন তাকে তো হেল্প করাই যায়।”

‘ পিচ্চি ‘ এই নামটা শুনে ক্ষেপে গেল রিমলি।একটি আগে একজন পুলিশ তার থেকে প্রেমের এডভাইস নিলো কি না বয়স্ক ভেবে এখন আরেকজন পিচ্চি বলে।তেজ দেখিয়ে বলে,”আমাকে আপনার পিচ্চি মনে হয়?আমি কোন জায়গা দিয়ে পিচ্চি?এসএসসি দেওয়া কমপ্লিট আমার।আমি অনেক ভালো রেজাল্ট করেছি।ইনফ্যাক্ট আমি লে..”

না বলে থেমে গেলো রিমলি।শিহাব বলে,”থেমে গেলে কেনো?”

“কিছু না।কিন্তু ভুলেও আমাকে পিচ্চি বলেবন না।কানা কোথাকার।”

এবার রিমলিকে শান্তনা দিতে মালি বলে ওঠে,”আচ্ছা আচ্ছা এসব বাদ দেও।আসলে আমাদের স্যার অনেক ভালা।সহজ সরল মন তো।মনে যা আসে তাই বলে দেয়।পেচ রাখে না।তুমি কি ঘরটা ভাড়া নিবা?”

“আম্মুকে নিয়ে এসে দেখাবো। আর বাড়ির ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছি।বাসায় কথা বলে দেখি কি বলে।এমনিতে সব ঠিক আছে।কিন্তু ভাড়া নিয়ে ঘাবলা আছে।”

শেষ কথাটি শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে।শিহাব অসহায় ফেস করে বলে,”এত ভালো একটা সুযোগ হাতছাড়া করবে?ভেবে দেখো এমন সার্ভিসে এমন ঘর পাওয়া মুশকিল।(সাথে হবু বর)বিড়বিড় করে।”

ভ্রু কুঁচকে রিমলি বলে,”আপনার মধ্যে আসলেই ঘাবলা আছে।একটুতেই বিড়বিড় করেন।আচ্ছা আমি বাসায় যেয়ে আম্মুকে বলছি।বিকালে আসবে আম্মু।”

“ওকে।”
চলে গেলো রিমলি।শিহাব তাকিয়ে আছে সেদিকে।রিমলি যাওয়ার পর শিহাব নিজের ঘরের দিকে যাবে দেখলো মালি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।শিহাব বলে,”তোমার আবার কি হলো?”

“এতক্ষণ যে সার্ভিস দিলেন মাইয়াটারে।গিন্নি মা আইলে কিন্তু কইয়া দিমু আপনি মাইয়ার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে কম দামে ঘর ভাড়া দিছেন।”

“এই একদম না।মাকে যা বলার আমি বলবো।তুমি একদম চুপ থাকবে।”

“তাহলে দেন আমর বখশিশ দেন।আমি চুপ কইরা থাকমু।”

“লজ্জা করে না একজন পুলিশের থেকে ঘুষ নিতে?”

“আপনার লজ্জা করে না পুলিশ হইয়া ঘুষ নিতে?পুলিশের কাম ঘুষ নেওয়া।আমি ওই ঘুষ আলার থেকেই ঘুষ নিচ্ছি।আমার কেন লজ্জা করবে?”

“এই আমি ঘুষ নেই না।আমি সততার হয়ে কাজ করি।”

“আইছে আমার সততা! বন্ধুরে ঘুষ দিয়ে বাজার করান আমাকে ঘুষ দিয়ে আপনার ঘরের সামনের গাছগুলো কাইট্টা ফেলান।গিন্নি মা জানে না আপনি তার শখের ফুলগুলো আপনার ঘরের পাশ থেকে কাটিয়ে নেন।জানলে ওখানেই আপনি শেষ।”

শিহাব ঘর থেকে কিছু টাকা এনে মালিকে দিয়ে বলে,”ভুলেও মাকে কিছু বলবি না। আর এবার থেকে তোকে আমার ঘরের পাশের গাছগুলো ছাঁটাই করতে হবে না।ওখানেই আরো বেশি বেশি গাছ লাগাবি।”

টাকাগুলো গুনে মালি তার শাড়ির আঁচলের কোনায় শক্ত করে বেধে নেয়।তারপর বলে,”মাইয়াডা দেখতে ভালই আছে।আপনার পছন্দের তারিফ করা লাগে।”

শিহাব হেসে দিলো।মনে মনে ভাবলো,”আগে দেখি বুঝি তারপর না হয় আগাবো।মেয়েটা এখনও ছোট।ওকে এখনও নিজের মতো পড়াশোনা নিয়েই থাকতে হবে।প্রাপ্ত বয়স হলে নাহয় দেখা যাবে।আপাতত চোখের আড়াল না হলেই হয়।”

মালি চলে গেছে।দরজা লাগিয়ে শিহাব ভাবতে থাকে কিভাবে তার মাকে সব বুঝিয়ে বলবে।

******
আজকে অফিসে তিনজন মডেল আসার কথা।তিনজনের মধ্যে দুজন অনেক আগেই এসেছে মিস তৃষা আর মিস সুনেহরা।কিন্তু যার জন্য পুরো চৌধুরী পরিবার এসেছে সে এখনও আসেনি।সিনথিয়া নামের মেয়েটি অনেক ভালো নাম করেছে মডেলিং করে।বলা যায় বাবা মায়ের নাম যশ থাকার কারণে সে এতটা উন্নত।চারপাশে বিভিন্ন অ্যাড বা প্রমোটের জন্য তার সাথে অনেক আগে থেকে ডিল করা লাগে।কিন্তু একমাত্র ফারাজ চৌধুরী বাদে এই নিয়ম তার জন্য। ফারাজের প্রতি আলাদা টান আছে সিনথিয়ার মনে।আফসোস ফারাজ তাকে পাত্তাই দেয় না।সে সবসময় একটা কথাই বলতো,”আমার মেয়ে আর আমার বউ আমার জীবন।আমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ জুড়ে এরাই আছে।”

বোরিং হয়ে যেতো সিনথিয়া।এখন ফারাজ সিঙ্গেল লাইফে ব্যাক করেছে।মুক্ষম সুযোগ আছে সিনথিয়ার হাতে।এছাড়া মিসেস জিনিয়া তো সিনথিয়াকে মাথায় করে রাখে।সিনথিয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে জিনিয়া আর অতসী।সিনথিয়া হলো অতসীর বোন।জিনিয়া ও অতসীর এখন একটাই চাওয়া।এটা হলো ফারাজ আর সিনথিয়ার বিয়ে।সিনথিয়া নিজেও তাই চায়।লাঞ্চ টাইম শেষ হলো কিন্তু সিনথিয়া এখনো আসেনি।হাতঘড়ি দেখে নিলো ফারাজ।এখনও কেউ দুপুরের খাবারটাও খায়নি।এমনিতেই আজ অল্প খেয়ে দৌড় দেয় শ্রেয়া।তারপর আবার লিফটের মধ্যে কষ্ট হয়েছিলো।এখন তার ক্ষুধায় পেট গুরমুর দিচ্ছে।অসহায় হয়ে বসে আছে।ক্ষুধার অতিরিক্ত চাপ বাড়লে চোখে ঘুমের আভাস দেখা দেয়।অনেকক্ষণ ক্ষুধা চেপে রাখতে রাখতে এখন হামি দেওয়া শুরু করলো শ্রেয়া।মিমি এটা দেখে শ্রেয়ার কাছে আসে।শ্রেয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,”তুমি কি ঘুমাবে?”

হকচকিয়ে গেলো শ্রেয়া।আশেপাশে তাকিয়ে মাথা নিচু করে না বোঝায়।মিমি বলে,”কিন্তু আমি ঘুমাবো।দুপুরে এখনও খেতে পারিনি। আর কতক্ষন অপেক্ষা করব?ওই ডিস্কো আন্টি আসতে অনেক দেরি করে।অনেক বেশি মেকাপ করে।আবার আমাদের কাছে এসে কি বলে জানো?”

“কি বলে?”

মিমি ওর মাজাটা সিনথিয়ার মত করে হেলিয়ে বলে,”ওহ হ্যান্ডসাম আই এম সো সরি।বাসায় এত ড্রেস এত জুয়েলারি যে আমি কনফিউজড হয়ে যাই কোনটা রেখে কোনটা পরব।আমাকে কি পারফেক্ট লাগছে?”

শ্রেয়া অনেক কষ্টে নিজেকে থামিয়ে রেখেও শেষ অব্দি সাকসেস হলো না। হো হো করে হেসেই দিলো।কেবিনের দরজা খোলা থাকায় শ্রেয়ার হাসি বাইরে চলে যায়।মিমি নিজেও হেসে দেয়।অর্পা অপলক দৃষ্টিতে দেখছে। ফারাজের দৃষ্টিতেও এসেছে।কিন্তু পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজ করছে।শ্রেয়া মিমির মুখে হাত রেখে বলে,”তুমি খুব দুষ্টু মিমি।”

“ওই ডিস্কো আন্টি আসলে দেখো কেমন করে।একদম নেচে নেচে কথা বলে। আর আমার গ্র্যান্ডমা তো অনেক মডার্ন সেও ওই আন্টিকে নিয়ে জামা কাপড়ের দাম নিয়ে শুরু করবে।”

হাসি যেনো থামেই না শ্রেয়ার।অফিসে আসার পর কিছুক্ষনের জন্য বাইরে বের হয়।মিসেস জিনিয়াকে দেখেছিলো কিছুক্ষণ।অর্পার সাথে ক্ষিপ্ত সুরে কথা বলেন তিনি।এই বিষয়টা দেখে খারাপ লাগে শ্রেয়ার।বাচ্চা দেওয়ার মালিক আল্লাহ।জন্ম বিয়ে মৃত্যু এগুলো ভাগ্যে লেখা থাকে।এগুলো নিয়ে এভাবে সবসময় ক্ষিপ্ত থাকলে তো অর্পা নিজেও ভেঙ্গে পড়বে।শুধুমাত্র মিরাজের জন্য অর্পা নিজেকে স্ট্রং রাখতে পারে।মিসেস জিনিয়ার চলাফেরা আধুনিক মায়েদের মত।তবে মিসেস অহি স্বাভাবিক আছেন।শ্রেয়া যখন জানতে পারলো মিসেস অহি হলো অহনার মা কিছুক্ষন থ হয়ে ছিলো। অহিকে দেখে মায়া লাগলো শ্রেয়ার।কেমন মনমরা হয়ে থাকেন।হয়তো ফারাজ আর অর্পার জোরাজোরিতে এসেছে এখানে।সবাই যে যার মতো ব্যাস্ত।তিনি একটি চেয়ারে বসে আছে আর চারপাশ দেখছে।শ্রেয়ার সব ফাইল চেক করা শেষ।সিনথিয়া আসার অপেক্ষা শুধু। ফারাজের কেবিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো।ফারাজ কাজ করছে নিজ মনে।হয়তো কারো সাথে কথা বলছে।লাইভে কনভারসেশন করলে ফারাজ পাশের এক্সট্রা লাইট অন করে।আজকেও তাই।এই জন্য মিমি এখনও না খেয়ে আছে।যেহেতু শ্রেয়ার এখন কাজ নেই তাই মিমিকে নিয়ে শ্রেয়া চলে গেলো অহির কাছে।অহির পাশে বসে শ্রেয়া বলে,”আমি আর মিমি এখন লাঞ্চ করব।মেয়েটা না খেয়ে আছে।আমার মনে হয় মিস সিনথিয়া আসতে লেট হবে।চলুন আপনি আমার সাথে।একসাথে লাঞ্চ সেরে চলে আসব।”

অহি তাকালো শ্রেয়ার দিকে।শ্রেয়ার বিষয়ে জানে অহি।তার মেয়ের জন্যই যে সংসার নষ্ট হয়েছে এটা ভেবেই এখন শ্রেয়ার দিকে তাকাতে পারছে না।একটু দেখেই চোখ সরিয়ে নিলো।শ্রেয়া ভেবেছে অহি কিছু জানে না।তাই অহির এমন চুপ থাকা দেখে অবাক হয়।অর্পা এসে শ্রেয়াকে দূরে নিয়ে যেয়ে বলে,”আসলে আমার কাকি শাশুড়ি অনেক নরম মনের।সাথে জীবনে অনেক কিছু সহ্য করেছে।তোর সংসার যে ওনার মেয়ের জন্য ভেঙেছে তাই উনি এখন ইতস্তত বোধ করছেন।বড় ভাইয়ের সাথেও তেমন কথা বলতে পারে না।এমনিতেই চুপচাপ থাকে কিন্তু এখন কারো দিকে চোখ তুলে তাকায় না।”

শ্রেয়া দেখলো অহিকে।তারপর অর্পার দিকে ফিরে বলে,”এতে আন্টির দোষ কোথায়?আমাদের বাবা মা আমাদেরকে সুশিক্ষা দিতে চায়।আমরা যদি এই শিক্ষা অর্জন করতে ব্যার্থ হই তাহলে বলতে হয় আমরা ব্যর্থ সন্তান।বাবা মা না।”

মলিন হেসে অর্পা বলে,”এখানে ব্যার্থ বাবা মা তো তারা।সন্তান শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ তো পেলই না।বরং শিক্ষা না পেয়ে নোংরা পথে গেছে।”

“মানে?”

শ্রেয়াকে সংক্ষিপ্ত আকারে অহনার বিষয়ে বলে দিলো অর্পা।তারপর বলে,”তাই কাকিয়া তোকে দেখে ইতস্তত বোধ করছেন।তুই ফ্রেন্ডলি হয়ে কথা বললে কাকিয়া আর এই ইতস্তত থাকবে না।”

“আচ্ছা।আয় তাহলে তাড়াতাড়ি লাঞ্চ শেষ করি।মিস সিনথিয়া আসলে ওনাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবো আবার।”

অর্পা মাথা নাড়ালো।শ্রেয়া এসে অহির হাত ধরে।অহি আবারও তাকালো শ্রেয়ার দিকে।শ্রেয়া আলতো হেসে বলে,”আপনি আমাকে দেখে এমন করবেন না প্লিজ।আমিও তো আপনার মেয়ের মতো।যা ভাগ্যে লেখা ছিল তাই হয়েছে।শুধু শুধু নিজেকে এভাবে মাথা নত রেখে চলবেন না।আপনি তো আমার থেকেও বড়।আমার মত জীবন পার করেছেন অনেক আগে।আমরা আপনাদের থেকে এখন বাস্তবতা শিখবো।সেখানে কেনো আপনি মাথা নিচু করে নিজেকে আড়াল রাখবেন?”

অহির চোখ বেয়ে পানি পড়লো।শ্রেয়া সেই পানি মুছে দিয়ে বলে,”কান্নাকাটি করে জীবনে এগিয়ে যাওয়া যায় না।আমরা সবাই জীবনে ঘটে যাওয়া বাজে ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি।এখন জীবনের মোড় পাল্টে দিতে এগিয়ে যাচ্ছি।আপনি কেনো জীবনটাকে এখানে থেমে রাখবেন?আপনাকেও এগিয়ে যেতে হবে।পুরোনো অধ্যায় শেষ করে নতুন অধ্যায় শুরু করুন।”

কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে অহি বলে,”পুরোনো অধ্যায় যে আমার থেকে সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে।আমি কিভাবে নতুন অধ্যায় শুরু করবো?”

“নতুন অধ্যায় হয়তো আপনাকে ভালো কিছু ফিরিয়ে দিবে।এই জীবনে কেউ থেমে থাকে না।সুযোগ যখন আছে কেনো নতুন রূপে নতুন অধ্যায়ে আগানো যাবে না?জীবনটা যদি পরিপূর্ণ ভাবে ভরে থাকতো তাহলে মানুষ দুঃখী থাকতো না।সবাই সুখে জীবন কাটাতো।সুখ দুঃখ মিলেই জীবনের প্রতিটি অধ্যায়।এটাকে নিজের মতো করে গড়তে না পারলে এভাবেই হারাতে হয়।যেটা আমি বুঝেছি আমার জীবন দিয়ে।”

“আমি নিজেও বুঝেছি মা।নিজের হাতে কোনো কিছু গড়ে তুলতে না পারলে জীবনে সর্বস্ব হারাতে হয়।জীবন থেমে থাকে না কিন্তু থেমে যায় জীবনে করা মুহূর্তগুলো।এই মুহূর্তে যেমন আমি থেমে গেছি।”

“এবার আবার নতুন করে শুরু করুন।ভেঙ্গে ফেলুন সকল ইতস্ততা।আমি আপনি আমাদের উচিত সমাজের সামনে নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখা।যতদিন নিরব হয়ে অন্যায় সহ্য করবো ততদিন অবহেলার জীবনটাই পাবো।এর থেকে ভালো তো নিজ মনোবল শক্তি দিয়ে অবহেলাকে উপেক্ষা করা।”

অহি এবার মাথা নাড়িয়ে শ্রেয়ার মাথায় হাত রেখে বলে,”জীবনে সফল হও মা।আমাদের মত যারা মুখ বুঝে সহ্য করে আসে তাদেরকে জাগ্রত করার জন্যই হয়তো তোমরা আছো।তোমার থেকেও অনেক নারীর কিছু শেখার আছে।”

শ্রেয়ার হাতে রনির দেওয়া আঘাতের কালশিটে ক্ষত এখনও দেখা যায়।যেটা দেখেই অহি এই কথাটি বলে।শ্রেয়া বুঝে যায়।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মলিন হেসে বলে,”চলুন আন্টি।কিছু খেয়ে নেই। মিমির তো কষ্ট হচ্ছে এখন।”

“হুম চলো।”

সবাই মিলে ক্যান্টিনে চলে যাচ্ছে।এতক্ষণের দৃশ্য চোখ এড়ায়নি ফারাজের।থাই গ্লাসের দরজা দিয়ে দেখছে মিমিকে নিজের সাথে আঁকড়ে নিয়ে ক্যান্টিনে যাচ্ছে শ্রেয়া।মিমি শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে আর শ্রেয়া মিমিকে নিয়ে দুষ্টুমি করতে থাকে।কিছু একটা ভেবে ফারাজ কনভারসেশন শেষ করলো।তারপর ক্যান্টিনের সিসি ক্যামেরা অন করল।আজ দেখতে চায় মিমি কেমন মজা করে সবার সাথে।মেয়ের এই সুখটাও ফারাজ নিজের চোখে দেখতে চায়।

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here