প্রিয়_প্রাণ #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ২৩

0
523

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৩

সকাল সকাল মর্নিং ওয়াকে বেরুলো তুষার। রাজশাহী যতটা গরম মনে হলো তার নিকট ঠিক ততটাও না। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বেশ ঠান্ডা লাগলো তার। এই যে এখন রানে যাচ্ছে তাতে কিছুটা র*ক্ত উষ্ণ হচ্ছে। এক রান দিয়ে থামলো না তুষার পরপর চার পাঁচটা রান দিলো একসাথে। সাথে থাকা বাকিরা সাথ ছেড়েছে সেই কখন অথচ তুষার তার দেহ ঝাঁকিয়ে দৌড়ে চলছে। কর্ণেল তাহের তার রান শেষ করে দেখে যাচ্ছে তুষা’রকে। কেন জানি তার বেশ লাগে ছেলেটাকে। গম্ভীর, স্বল্পভাষী এক পুরুষ। সুপুরুষের সকল লক্ষণ বিদ্যমান অথচ দোষে দোষী সে এক জায়গায় ই। বিয়ে করছে না। বিয়ে করলে এতদিনে মেয়ে ছেলে তার চু চু করতো অথচ এই ছেলে গোঁ ধরে বসে আছে। এবার তিনি ভাবলেন তার মেয়ের জন্য বলবে তুষার’কে। ফেরাতে পারবে না তুষার। তার কোনকথা না শুনে এমন হয়নি কখনো এবারেও তা হবে না এটা বিশ্বাস তার।

রান শেষ হতেই পানির বোতলটা হাতে তুললো তুষার। দুই ঢোক গিলতেই নজর গেলো পাশে। তথ্য জুনিয়র একজনের সাথে হেসে খেলে কথা বলছে। সচরাচর এই দৃশ্য চোখে পরবার নয়৷ তবে আজ যথেষ্ট সুযোগ নিয়ে কথা বলছে তথ্য। তুষার ততটা ঘাটলো না। হেটে নিজ গন্তব্যে চলে গেল সে দায়সারাভাবে। এদিকে তথ্য তখনও কথা বলে যাচ্ছে। হঠাৎ কেউ ডাক পাঠাতেই মুচকি হেসে চলে গেল ও। আশেপাশের অনেকেই কিছুটা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তুষার বাদে এই প্রথম হয়তো কাজের বাইরে কারো সাথে এতটা কথা বললো তথ্য। ভাববার বিষয় এটা। গভীর ভাবনার বিষয়।

_______________

তোঁষা মুখ ফিরিয়ে পাশে তাকাতেই আরহামের চেহারাটা নজরে এলো। এক দৃষ্টিতে সেদিকেই তাকিয়ে রইলো ও। সকাল থেকে কোন কথা বলা হয় নি এই পর্যন্ত। আরহাম চেষ্টা করে নি এমন না। করেছে তবে তোঁষা চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো। এমনটা তোঁষা অনুভব করে নি বা শুনেছে কারো নাক টেনে কান্না’র শব্দ। শুনেছে। তবে না শুনার ভান ধরে পরে ছিলো বিছানায়। আরহাম যখন খাবার আনলো তখন চুপচাপ নিজ হাতে খেয়ে নিয়ে পুণরায় চোখ বুজে রইলো। আরহাম ডাকলেও উত্তর দেয় নি তোঁষা। হাতের দিকে তাকালো তোঁষা। স্যালাইন খোলা হয়েছে একটু আগে। আরহাম এবার তোঁষা’র কাছ ঘেঁষলো। তোঁষা একপলক দেখলেও কথা বললো না। যেই না আরহাম ওর হাতটা ধরলো ওমনি তা ঝামটা মে’রে ফেললো তোঁষা। আহত চোখে তাকালো আরহাম। ঢোক গিলে পুণরায় হাতটা ধরার চেষ্টা করলো। তোঁষা সুযোগ দিলো না বরং উঠে যেতে নিলো। আরহাম আটকে ধরলো নিজের সাথে। অসম্ভব ভাবে বুক কাঁপছে তার৷ তুঁষ’টা কথা বলছে না কতঘন্টা ধরে। মন যে আর মানছে না। শ্রবণ অঙ্গ দুটি পিপাসিত হয়ে আছে প্রাণে’র মুখ নিঃসৃত বাক্য শুনতে অথচ সে কথা বলছে না। কম্পমান স্বরেই আরহাম বললো,

— কথা বল না তুঁষ।

তোঁষা কথা বললো না বরং নিজেকে ছাড়াতে চাইলো। আরহাম ছাড়তে না চাইলেই সজোরে কামড় পরলো বুকের বা পাশে। “উফ” শব্দ করে ছাড়লো আরহাম। নিজের দিকে না তাকিয়ে তোঁষা’র পানে তাকায় ও। আকুল আবেদন জানায়,

— দয়াকর আমার উপর। কথা বল না তুঁষ।

— বাসায় দিয়ে আসুন আমাকে।

— ত…তুই…

— বলেছি বাসায় যাব। আমার প্রশ্নের উত্তর আপনি দিবেন না আরহাম ভাই। তাই বাসায় চলুন। ওখানে কথা হবে। কেন করলেন এমনটা?

শেষে চিৎকার করে উঠলো তোঁষা। নাকের পাটা ফুলে উঠলো আরহামে’র। তোঁষা পুণরায় চিৎকার করে জানতে চাইলো,

— কেন কেন? আমিই কেন? পরিক্ষা কেন দিতে দিলি না? বাসায় দিয়ে আসবি। এখনই দিয়ে আসবি। ধোঁকা!! আমাকে ধোঁকা দিলো? দিলো না পরিক্ষা দিতে।

চিৎকার গুলো কান্নায় রুপ ধারণ করলো। অল্প কাঁপলো আরহাম। তুঁষটা এভাবে কেন কাঁদে? আর “তুই”? এভাবে তো কখনো সম্বোধন করে নি আরহাম’কে। তাহলে আজ কেন?
আরহাম এগিয়ে এলো তোঁষা’র কাছে। ওর বা হাতটা আলতো করে ধরতে চাইলো তবে আজ হঠাৎ যেন তেঁতে উঠে তোঁষা। হাত পা ছুঁড়ে যখন কান্নায় ভেঙে পরলো তখন আরহাম এক দৃষ্টিতে দেখে গেলো। একা একাই আস্তে আস্তে বলতে লাগলো,

— এমন করিস না তুঁষ। ব্যাথা পাবি তুই। পরে কাঁদবি আবার। জেদ করে এত কেউ? আমার কাছে আয়। এদিকে আয়। তুঁষ? কথা শুন আমার।

তোঁষা’র কানে ও গেলো না কথাগুলো। রাগে মাথা ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম ওর। এদিকে আরহাম ঘাড় কাত করে ওকে দেখে যাচ্ছে। অনেকদিন পর এভাবে কাঁদতে দেখলো তোঁষা’কে। একবার হাসলো আরহাম। কান্না করে কত সুন্দর ভাবে। ঘাড় দুলিয়ে দুলিয়ে হাসলো কিছুক্ষণ। তোঁষা ভীতু চোখে তাকালো ওর দিকে। অস্বাভাবিক লাগলো আরহাম’কে ওর নিকট। এমন করে কেন হাসছে? বিছানা থেকে নামতে চাইলেই আরহাম এক টানে নিজের বুকে নিলো তোঁষা’কে। হাসি নেই এখন মুখে। তোঁষা নিজেকে ছাড়াতে চাইলেই হঠাৎ নজর গেলো আরহামে’র হাতে। বড়সড় একটা ধাক্কা যেন ও এখানেই খেলো। তোঁষা’র মনে হচ্ছে ওর শরীর কাঁপছে। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে রইলো সেখানটায়। ডান হাতটা বাড়াতে ও সঙ্কোচ লাগলো যেন। আরহামে’র হাতটা বুকে চেপে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো ও। আরহাম এবার তোঁষা’কে ছাড়লো।
ওকে নিয়েই শুয়ে পরলো বিছানায়। আদর করে দিলো ওর তুঁষ’কে। ওর প্রাণ’কে। কত কাঁদে প্রাণটা ওর।
.
তোঁষা কাঁদছে। বরাবর মুখ করে শুয়ে আছে আরহাম। ওর বাহুর মাঝেই ওর প্রাণের ক্রন্দন সহ্য হয় না ওর। একহাত গালে ছুঁয়ে দিয়ে আরহাম তপ্ত গলায় বললো,

— আর কাঁদিস না প্রাণ।

— আমার কষ্ট হচ্ছে আরহাম ভাই। আপনি কেন এমন করলেন? উত্তর দিন আমাকে। আম্মু আমাকে বলতো আপনি আমাকে মে’রে ফেলবেন। আজ আমার মনে হচ্ছে আমার ভেতর কিছু একটা ম’রে গেলো। কে মা’রলো? আপনি।

তড়িঘড়ি করে তোঁষা’কে শক্ত করে বুকে চেপে ধরে বললো,

— তোকে মা’রার আগে আমার নিজের প্রাণ নিয়ে নিব আমি তুঁষ। ভুল ভাবিস না আমাকে।

— হাতে এসব কেন করেছেন বলুন? কিসের পাগলামি এসব?

আরহাম তোঁষা’র কানে চুমু খেলো৷ তোঁষা দমলো না। তার উত্তর চাই। আরহাম কেন নিজের হাতে এভাবে কেটেছে। কাটাছিটা গুলো পুরো তাজা। এসবের কারণ কি? তোঁষা ভেবে কুল পাচ্ছে না। যতই ভাবছে ততই আতলে হারাচ্ছে যেন। আরহাম ওর গলায় দিকে আগাতে নিলেই তোঁষা আটকালো৷ শক্ত গলায় বলে উঠলো,

— উত্তর দিন আমার। হাত কেন কেটেছেন এভাবে? আর কেনই বা আজ এমন করলেন? হয় উত্তর দিবেন নাহয় আজ আমি……

আরহাম বলতে দিলো না ওর তুঁষ’কে। আলতো চুমু দিলো ঠোঁটে। গরম শ্বাস পরলো তোঁষা’র চোখেমুখে। ঘন পল্লবগুলো কাঁপলো বুঝি। আরহাম কথা গুছালো। তোঁষা’কে গলাতে আগে আদর লাগিয়ে কথা বলতে হবে। মাইন্ড গেইম কে ভালো পারবে আরহাম থেকে। যেখানে পুরো তুঁষ’টাকে ওর চেনা সেখানে ওকে ম্যানুপুলেট করা সহজ বটে।
আরহাম তোঁষা’র কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,

— তোর হাতে যেমন ব্যাথা, আমার হাতেও তেমন ব্যাথা। তুই কষ্টে তো আমিও কষ্টে। তুই সুখী তো আমিও সুখী। তোর দেহ থেকে যদি র*ক্ত ঝড়ে তাহলে আমার দেহ থেকে ও ঝরবে।

ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে তোঁষা। ডান হাতে আরহামে’র গলা জড়িয়ে ধরা হাতটা ধরে বলে,

— আমার হাতে তো একটা কাটা। আপনি কেন এভাবে কেটেছেন? অনেক র*ক্ত বের হয়েছে না?

— উহু। একটু কষ্ট হয় নি এটাতে যতটা কষ্ট হয়েছিলো বাইশ তলা দৌড়ে উঠতে। যতটা কষ্ট হয়েছিলো তোকে ঐ অবস্থায় দেখে। যতটা কষ্ট হয়েছিলো তুই যখন আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইলি। যতটা কষ্ট হয়েছিলো তুই যখন কথা বললি না। যতটা কষ্ট হয়েছিলো তুই যখন তোকে ছুঁতে দিলি না। আরো হচ্ছে কষ্ট। এখনও হচ্ছে। কারণ তুই আমাকে বিশ্বাস করে উঠতে পারছিস না।

তোঁষা কথা বললো না। আরহাম ওর কপালে চুমু খেয়ে একটু ঝুঁকে বললো,

— আজ যদি তোকে নিয়ে বের হতাম কোনদিন ফেরত পেতাম না তুঁষ। তোর বাপ-চাচারা সব কেন্দ্রের আশেপাশে ছিলো। আমি একা কিভাবে তোকে নিয়ে ফিরতাম। তারা দিত না তোকে। আমার প্রাণ, তোকে পাওয়ার জন্য আজ স্বার্থপর হয়ে গেলাম৷ তুই কি এই স্বার্থপরকে ছেড়ে যাবি? আমি তো যেতে দিব না। আমার প্রাণ’কে পেতে আমি পাগলের খেতাম পেয়েছি। আমি নাহয় তোকে পেতে পাগল ই রইলাম।

তোঁষা তাকিয়ে রইলো আরহামে’র দিকে। ঠিকঠাক ভাবে বুঝে উঠতে পারে না আরহাম’কে। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো ওর গাল। মনমরা কণ্ঠে বললো,

— তারা তোমাকেও ভালোবাসে।

— বাসে না।

— সত্যি বলছি। চাচ্চু’কে কাঁদতে দেখেছি তোমার জন্য। একা ছাদে কাঁদে। কেউ দেখে না।

— ওসব ভুল দেখেছিস। তারা সবাই শুধু ছিনিয়ে নিতে চায় তোকে আমার থেকে। ধোঁকা দিয়েছে আমাকে। আদনানের সাথে তোকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো। আমি ভুলি নি তুঁষ। ভুলব না কোনদিন।

— ভুলতে পারছি না।

— আমি ভুলিয়ে দিব সব। আমার হয়ে থেকে যা না প্রাণ। প্লিজ। তোকে ছাড়া আমি আরহাম কিভাবে বাঁচব?

তোঁষা ঝট করে আরহামে’র বুকে ঢুকলো। টিশার্ট’টা খাঁমচে ধরে গুনগুন করে বললো,

— মাফ করে দিন৷ রাগ করে বলেছি। কোথাও যাবে না তোঁষা। এখানেই থাকবে তার প্রাণে’র বুকে। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি আরহাম ভাই। আপনার দেয়া কষ্টগুলো তাই সহ্য হয় না।

— বল শুধু আমার থাকবি?

— থাকব।

আরহামে’র কপাল কুঁচকে এলো কিছুটা। তোঁষা’র মুখ থেকে লালা গড়িয়ে পরছে সাথে কেমন কেমন ঢোক গিলছে। ডান হাতটা দিয়ে খামচে ধরা হাতটা তীব্র হলো। আরহাম অস্থির হয়ে ডাকলো,

— তুঁষ? এই কি হয়েছে? কথা বল।

বিছানায় কাতরায় তোঁষা। মুখটা তুলে আরহামে’র গলার কাছে গুজে কেঁদে উঠলো শব্দ করে। কোনমতে বুঝা গেলো ওর মাথা ব্যাথা করছে। আরহাম ভয় পেয়ে যায় সাথে সাথে। এমনটা হওয়ার কথা তবে এত তারাতাড়ি না। পরক্ষণেই মনে হয় আজ তোঁষা’কে ইনজেক্ট করা হয় নি। উঠতে নিবে এমন সময় ই সেজোরে নিজের ব্যাথা কমাতে কামড়ে ধরে তোঁষা আরহামে’র ঘাড়ে। ঠোঁট কামড়ে ধরলো আরহাম৷ মুখটা ব্যাথায় যেন নীল হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। তোঁষা’কে ছাড়াতে ছাড়াতে বলতে লাগলো অস্থির হয়ে আসা গলায়,

— ব্যাথা কমিয়ে দিব তুঁষ। এখনই কমিয়ে দিব। একটু ছাড়। এখনই কমে যাবে।

— আ…ম্মু আমার ম…মাথা ব্যাথা করে। আ…আরহাম ভা..আই। আমার মাথা….

কাতরাতে কাতরাতে এতটুকুই বললো তোঁষা।তোঁষা’কে ছাড়িয়ে উঠে যেতে যেতেই ধাম করে একটা শব্দ হলো। পিছু ঘুরতে ঘুরতেই আরহামের চোখ বড় বড় হয়ে এলো। এসব কি হচ্ছে? কেন হচ্ছে?

#চলবে……

[গল্প আগাচ্ছে না। এক জায়গায় আটকে আছে।
উত্তরঃ কোথায় আটকে আছে। সেটা বলুন। আরহাম তোঁষা’র বিয়ে হলো৷ কেন হলো? কিভাবে হলো? বিয়ের রহস্য? পরিবারের রহস্য? ছোট বেলার চরিত্র? আরহামে’র রহস্য কিছুটা হলেও জানালাম। এছাড়াও ওদের বিবাহিত জীবনও আটকে নেই। আরহাম সাইকো। সেটাও প্রাকশ পাচ্ছে। তোঁষা’র চরিত্র প্রাকশ পাচ্ছে। এমনকি ওদের মা-বাবার বিয়ের কাহিনি ও জানালাম।
তুষার, তথ্য এদের কাহিনি আগাচ্ছে তবে ধীরে ধীরে। আর কত আগাব ভাই?? মানলাম পর্ব অনেক হচ্ছে তবে পর্বগুলোর সাইজ কত ছোট একবার দেখুন। আমি তো এবার বড় পর্ব লিখতে পারছি না। সেই হিসেবে হয়তো সব মিলালে ১৩/১৪ পর্ব হয়েছে। ইজেন্ট ইট ইনাফ??]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here