আশার_হাত_বাড়ায় |১৭| #ইশরাত_জাহান 🦋

0
98

#আশার_হাত_বাড়ায় |১৭|
#ইশরাত_জাহান
🦋
প্রিন্সিপালের রুমে এসে দাড়ালো ফারাজ।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলো মিমি একটি বেঞ্চে বসে মাথা নিচু করে কান্না করছে। কান্না করার ফলে মিমির চোখমুখ লাল হয়ে আছে।মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো ফারাজের।ভিতরে ঢোকার জন্য প্রিন্সিপালের অনুমতি নিতেই সবাই তাকালো দরজার দিকে।বাবার কণ্ঠ পেয়ে মিমি নিজেও চোখ উপরে করে।দৌড়ে গিয়ে ফারাজকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমি এই স্কুলে পড়বো না।এখানে ম্যাম খারাপ।অন্যের কথা শুনে আমাকে খুব বকা দেয়।আমার মাম্মি খারাপ তাই নাকি আমিও খারাপ।কি কি পঁচা কথা।”

মিমির কথাগুলো শুনে হাত মুঠ করলো ফারাজ।মেয়ের এই কষ্ট তার সহ্য হয় না।চোখমুখ লাল হয়ে এসেছে।মিমিকে এক হাতে নিজের সাথে রেখে রুমে ঢুকে গেলো ফারাজ।প্রিন্সিপালের সামনে বিনা অনুমতিতে চেয়ার টেনে পায়ের উপর পা রেখে বসে।মিমিকে বলে,”তুমি ওই বেঞ্চে বস মা।”

মিমি লক্ষী মেয়ের মতো বসে পড়ে সেখানে।ফারাজ এবার মিমিকে প্রশ্ন করে,”তোমাকে কোন ম্যাম এমন কথা বলেছে?”

মিমি আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেয়।ফারাজ তাকালো ম্যামের দিকে। ফারাজের তাকানো দেখে ভয় পেলো ম্যাম।এতক্ষণ প্রিন্সিপাল তাকে বকেছে।মূলত বকেছে ফারাজের পাওয়ার আছে তাই।ফারাজ ম্যামের দিকে তাকিয়ে কণ্ঠ মোটা করে বলে,”তো কতটুকু জানেন আমার মেয়ের সম্পর্কে?”

ম্যাম থতমত খেয়ে যায়।মাথা নিচু করে বলে,”মূলত আমি প্রথমে কিছু জানতাম না।বেল বাজাতে আমি ক্লাসে যাই।দেখি মিমি আর শান মারামারি করছে।সবার থেকে শুনলাম মিমি আগে শানকে মারতে থাকে।অন্যায়টা মিমির বেশি।এভাবে কারো গায়ে হাত তোলা তো অন্যায়।”

“একজন টিচার হয়ে স্টুডেন্টকে উল্টা পাল্টা কথা বলাটা কোন ধরনের ন্যায়?”

ফারাজের এমন কথায় আতকে উঠে ম্যাম।কারণ ফারাজ গম্ভীর হয়ে কথাগুলো বলছে।ম্যাম আবার বলে,”আমি অভাবে কিছু বলিনি।যা বলার শানের মা বলেছিলো।মিমি ওনার সাথে বেয়াদপি করে তাই আমি বকা দেই।”

ফারাজ এবার মিমির দিকে তাকালো।তারপর ম্যামকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনাদের মতে আমার মেয়ে তার মায়ের মত তাইতো?”

ম্যাম কোনো উত্তর দিলো না।কিন্তু শানের মা বলে ওঠে,”একদমই তো তাই। দেখাই তো যাচ্ছে আমার ছেলেটার হাতের কি অবস্থা।”

ফারাজ দেখলো শানকে।সাথে হাতে হালকা কোনো রকমে ছিলে গেছে।তবে একদিনেই শুকিয়ে যাবে।অতঃপর তাকালো মিমির দিকে।মিমির হাতে আরো বেশি ক্ষত।জায়গায় জায়গায় ছিলে কাচা মাংসের রক্ত দেখা যাচ্ছে।যেটা শানের আঘাতের থেকেও বেশি।ফারাজ এবার মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বলে,”কোন ক্ষতটা দেখতে বলছেন আপনি?আপনার ছেলের হাতের সামান্য ক্ষত নাকি আমার মেয়ের হাতের বড় বড় ক্ষতের সাথে মনের ক্ষতটাও?”

মহিলাটি চোখ মুখ ছোট করে।ফারাজ টেবিলে জোরে আঘাত করে বলে,”আমার মেয়েকে নিয়ে কথা বলার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে?”

মহিলাটি একটু কেঁপে উঠলেও খোচা মেরে বলে,”এসবের অধিকার দেওয়া লাগে নাকি।খবরে খবরে এসেছে আপনার বউ পরকীয়ায় লিপ্ত।আপনি তার কেস করেছেন।এই মেয়েও তো তার মাকে নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না।এসব মেয়েদের সাথে মিশলে ভালো স্টুডেন্ট খারাপ হয়ে যাবে।সবাই শিখবে মায়েরা ভালো হয় না।যার মা ভালো না সে কেমন হবে বোঝা যায়।গাছ যেমন ফল তো তেমন হবেই।”

ফারাজ হাতের আঙুলগুলো ফুটিয়ে নিলো।তারপর মহিলাটির উদ্দেশ্যে বলে,”একচুয়ালি আপনি ভুল বলেননি।গাছ যেমন ফল তো তেমন হবেই।এই যেমন আপনি একজন অসভ্য অভদ্র মহিলা আপনার সন্তান তেমন হয়েছে।”

প্রিন্সিপাল ঢোক গিলছে।এই ফারাজ সহজে রাগে না আর রাগলে ছেড়ে দেয় না। স্কুলের সেভেন্টি পার্সেন্ট শেয়ারের আসে ফারাজের তরফ থেকে।তার মেয়েকে আজ হেনস্থা করেছে।স্কুল ভেঙ্গে না গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়।মহিলাটি কম না।মহিলাটি এবার ফুঁসে উঠলো।তেজ দেখিয়ে বলে,”আপনারা পুরো পরিবার খারাপ।বাজে পরিবারের বাজে সন্তান।এদের দ্বারা স্কুলে ভালো কিছু হবে না।দিন দিন এদের এসব বাজে কাজ দ্বারা ছাত্রছাত্রী প্রভাবিত হবে।আমার ছেলে তো খবর দেখেই বলেছিলো এই মেয়ে তার সাথে পড়ে তার মা এমন বাজে!আবার আপনার এক্স ওয়াইফের মুখে জনগণ চুন কালি মেখেছে।এগুলো তো সব পরিবার দেখেছে।যেটা দেখে ওদের কাছে মনে হয়েছে যে মিমির মা খারাপ মহিলা।তাই বাচ্চারা সেটা নিয়ে গসিপ করেছে।আপনারা যেটা দেখাবেন বাচ্চারা সেটাই শিখবে।”

ফারাজ স্মিত হাসলো।তারপর বলে,”আমার মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া সময়টাতে কাউকে কাছে পাইনি।সার্ভেন্ট হিসেবে আপনাকে রাখলে ভালো হতো।ইউ নো আপনি একজন বেস্ট কাউন্সিলর।গড়গড় করে মনগড়া মন্তব্য দিতে জানেন।কিন্তু মিনিমাম কমনসেন্স রাখেন না।আমার মেয়ে একটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিলো।এই পিচ্ছি মেয়েটা তার মাকে ছেড়ে দেয়নি।অন্যায়কে অন্যায়ের নজরে দেখেছে।সে কিন্তু নোংরা লোকের শাস্তি দিতে বাধা দেয়নি।আমার মেয়ে আমার মত হয়েছে।তার মায়ের মত না।একটা কথা ঠিক গাছের ফল গাছের মতোই হবে।কিন্তু আপনারা কোন দৃষ্টিতে গাছকে দেখছেন এটাও একটু ভেবে দেখুন।আমার মেয়ের জন্য আমি প্রকৃত গাছ হয়ে আছি।যে তাকে আকড়ে ধরে রাখবে ছায়া হয়ে পাশে থাকবে ন্যায় অন্যায় শিখিয়ে দিবে বেয়াদপি করলে শাসন করবে।অন্যায়কে আপোষ করে চলেনা এই ফারাজ চৌধুরী।সে তার স্ত্রী সন্তান বা আপনাদের মত বাইরের লোক হোক। আর একটা কথা।কি যেনো বললেন? হ্যাঁ আপনার ছেলে খবর দেখেই এমন মন্তব্য করেছে।বাচ্চারা যেটা দেখবে সেটাই শিখবে। ইউ আর রাইট।কিন্তু আপনি তো বাচ্চা নন।আপনি কি বুঝেন না একটি বাচ্চার মনের উপর দিয়ে এই সময় কি কি যায়?আপনি কি পারতেন না মা হারা মেয়েটার হয়ে আপনার সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে যে ওর মা যেমন হোক ও এই বয়সে অন্যায়কে সাপোর্ট করেনি।এইটুকু বাচ্চা তার বাবার কষ্ট বুঝেছে।সে নিজের জন্য লড়েছে।মিমি একজন ব্রেভ বাচ্চা।এটা কি আপনার সন্তানকে বোঝানো যেতো না?আপনারা এটা করেননি।বাবা মায়ের সঠিক শিক্ষা না পেলে সন্তান কখনও সুশিক্ষা পায় না।ওরা যেটা দেখবে সেটা তো ওদের মাথায় সেট হবেই কিন্তু বাবা মা হয়ে সন্তানকে প্রোটেক্ট তো আপনাকে করতে হবে।আমার মেয়ের জীবনে তার মা যেমন হোক মেয়ে কিন্তু আমার কোনো কু শিক্ষা পেয়ে বড় হয়নি।আমি বাবা হয়ে আমার মেয়েকে যেভাবে বড় করেছি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আপনার ছেলে সেভাবে বড় হয় না।”

মহিলাটি গলা উঁচিয়ে বলে,”কি বলতে চান আপনি?আমি আমার ছেলেকে শিক্ষা দিতে পারিনি।”

ফারাজ এবার শানকে ইশারা করে কাছে ডাকে।শান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।প্রিন্সিপাল বলেন,”তোমাকে ডাকছে শান।কাছে যাও।”

শান আস্তে আস্তে পায়ে ফারাজের কাছে আসে।ফারাজ বলে,”তোমার নাম?”

“শান।”
“রোল কত?”
“সাত।”

“তোমার সাথে মিমির আগে কি নিয়ে কথা হয়েছিলো?”

শান একটু ঘাবড়ে যায়।ফারাজ বুঝতে পেরে বলে,”ভয় নেই।আমি তোমার মায়ের মত চেঁচামেচি করবো না বা মারবো না।”

মিমি এবার কান্নার মাঝেই মিচকি হাসি দেয়।শান নিজেও হাসে।তারপর বলে,”আমরা পিকনিকে যেতে চাই তাই সবাই একেক জিনিস নিয়ে কথা বলি।এর মধ্যে মিমি বলে ওর বিভিন্ন জিনিস নিয়ে যাবে।ওর কাছে ছোট ক্যামেরা থাকে।তারপর আরো অনেক কিছু।যেগুলো নিয়ে কথা বলতে বলতে আমরা ওকে বলি পিকনিকে ওকে নিতে চাই না।এমনিতেও ক্লাসে ওর সাথে মিশি না।”

“কেনো?”

“কারণ বাজে মানুষের সাথে মিশতে নেই।”

“মিমিকে কেনো বাজে মনে হলো ?”

“ওই যে ওকে আমরা খবরে দেখেছি।ওর মাকে তো সবাই মারছিলো।”

শানের হাত ধরে ফারাজ বলে,”যে খারাপ মিমি তাকে শাস্তি দিয়েছে।এটা কি মিমির অন্যায়?”

“না।”

“মিমি যদি অন্যায়কারীকে শাস্তি না দিয়ে মুখ বুজে সহ্য করতে করতে আরো কষ্ট পেতো তখন তোমাদের ভালো লাগতো?”

শান চুপ থাকে।ফারাজ বলে,”তুমি যখন জানলে মিমির মা খারাপ তখন তুমি ওকে দূরে রাখো একবারও ভেবেছো ও কতটা কষ্ট পেয়েছে?ও যে ওর মাকে হারিয়েছে।এটা কি কষ্ট না?”

শান মাথা নাড়ালো।ফারাজ আবারও বলে,”মিমির সাথে যেটা হয়েছে এটাতে মিমির দোষ নেই।এটা ওর ডেস্টিনি। আর ও ব্রেভ গার্ল হয়ে লড়াই করেছে।এর জন্য আমাদের কি উচিত জানো?আমাদের উচিত মিমিকে আরো বেশি ভালোবাসা।ওর তো এখন কষ্টের সময়।ওকে এর ভিতর আরো কষ্ট দেওয়া কি ভালো হবে?”

শান এবার মাথা নাড়িয়ে বলে,”না।”

“তাহলে আজ থেকে মিমির সাথে বন্ধুত্ব করে রাখবে তো?”

“হ্যাঁ।”

মিমি খুশি হলো।প্রিন্সিপালের দেহে আত্তা ফিরে এলো।ফারাজ এবার শানের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”শানের সাথে আমি মাত্র পাঁচ মিনিট কথা বলেছি।এই পাঁচ মিনিটে শান ছেলেটা কিন্তু আমাকে ভয় পেয়ে চলেনি।বরং বন্ধুত্বের মতো মিশেছে।ইনফ্যাক্ট মিমির প্রতি ভুল ধারণা দূর হয়েছে।কিন্তু আপনি মা হয়ে এই কাজটা করতে পারলেন না। সরি টু সে আপনাদেরকে বলা উচিত ব্যার্থ মা।যে সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দেয় না।তারা ভাবে সময় হলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু না বাচ্চাদের ছোট থেকেই সবকিছুর প্রতি জ্ঞান অর্জন করাতে হয়।ওরা ছোট থেকে যেটা শিখবে বড় হয়ে ওটা মেনে চলবে।আজকাল বাবা মা বাচ্চাদের সামনে খাবার রেখে একটি ফোন ধরিয়ে দেয়।বাচ্চারা ফোন দেখে খেতে থাকে।”

কথার মাঝে শান বলে ওঠে,”আমিও ফোন দেখে খাই।আম্মু টায়ার্ড হয়ে যায়।তাই একটু রেস্ট নেয়।”

ফারাজ স্মিত হেসে বলে,”মিমি কিন্তু আমার সাথে খায়।এই যে এখন অফিসে যাবে আমরা ক্যান্টিনে একসাথে খাবো।ও কিন্তু ফোন অভ্যস্ত না।ও ছোট থেকেই পুতুল নিয়ে খেলে।এখন বয়সটা তুমি যেভাবে তোমার সাথে পার করবে বড় হয়ে সেভাবেই মেমোরি করে রাখতে পারবে।”

প্রিন্সিপাল এবার শানের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”আই মাস্ট সে।শান যেভাবে বড় হচ্ছে এতে করে বাচ্চাদের উপর বাজে প্রভাব পড়ে কিন্তু মিমি মেয়েটার জীবন চলা কঠিন হলেও সে কিন্তু বাজে প্রভাবের উপর দিয়ে যাচ্ছে না।তার বাবা একাই তাকে সঠিক শিক্ষা দিচ্ছে।যেটা আপনারা স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে এক সন্তানকে দিতে পারছেন না।”

শানের মা এবার মাথা নত করে।ফারাজ এবার উঠে দাড়ায়।তারপর বলে,”আমি আমার মেয়েকে বুঝিয়ে বলব। কাল থেকে ও স্কুলে নরমাল থাকবে।কিন্তু বাকিরা কেমন চোখে আমার মেয়েকে মেনে নিবে এটা আমার দেখার বিষয় না।এই বিষয়ে আপনাদের উপর দায়িত্ব দেওয়া আছে শুরু থেকেই।যেহেতু উনি নতুন টিচার তাই আজকের মতো বিষয়টা আগালাম না।”

বলেই মিমির হাত ধরে চলে যেতে নেয় ফারাজ।কিছুদূর হেঁটে ফারাজ বলে ওঠে,”কথায় কথায় লাভ লস না ভেবে অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়ার চেষ্টা করুন।শিক্ষক হয়ে যদি সঠিক শিক্ষা না দিয়ে গার্জিয়ান ডাকতে হয় তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান না থাকাই শ্রেয়।আমার সাথে এই স্কুল জড়িয়ে আছে বলেই যে আমাকে আপনি সাপোর্ট করবেন এটা অন্যায়।আপনাকে দেখতে হবে কে অন্যায় করে কে অন্যায় করে না।এটা দেখা আপনার কর্ম নয় যে কে পাওয়ার নিয়ে চলে আর কে পাওয়ার নিয়ে চলে না।”

কথাগুলো প্রিন্সিপালের উদ্দেশে বলে ফারাজ।বলেই চলে যায়।গাড়িতে উঠে মিমি অবাক।শ্রেয়াকে দেখে বলে,”তুমি এসেছো?”

শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে বলে,”হ্যা।”

চোখ ছোট ছোট করে মিমি বলে,”ভিতরে যাওনি কেনো?”

ফারাজ সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে নিজে থেকে বলে,”আমি বলেছি তাই।”

ঠোটটা একটু উচু করে মিমি বলে,”ওহ।”

শ্রেয়া মিমির এই ভঙ্গি দেখে হেসে দেয়।গাড়ি চলতে থাকে।শ্রেয়াকে কিছুক্ষণ দেখতে থাকে মিমি।তারপর শ্রেয়াকে উদ্দেশ্য করে মিমি বলে,”Can I hug you?”

শ্রেয়া দুই হাত মেলে বুঝিয়ে দেয় হ্যাঁ।মিমি এসে জড়িয়ে ধরে শ্রেয়াকে।শ্রেয়া মিমির মাথা থেকে ক্লিপ খুলে দেয়।তারপর মিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।এই দৃশ্য সামনের ছোট আয়না দিয়ে দেখতে থাকে ফারাজ।ভাবতে থাকে অহনা থাকলে হয়তো এভাবে আজ মিমিকে ফেস করতে হতো না।আবার মিমি পারফেক্ট ফ্যামিলি পেতো।ভেবেই দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকে।

*******
চোখমুখ খিটমিটে ভাব করে কাজ করছে অহনা।সেই সকাল থেকে গরু খাটা খাটতে থাকে। ফোলা ফোলা দুটো রুটি আর সবজি ভাজি খেয়েছে সকালে।এখন আবার ভাত মাছ রান্না করতে হবে।তারপর মিসেস নাজমাকে নিয়ে শাওয়ারে যেতে হবে।এটা শুনেই মন মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।এসব কাজে অভ্যস্ত না সে।মিসেস নাজমা এসেছে অহনার কাছে।অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”কতদূর?আজান দিয়েছে তো।আমাকে গোসলে নিয়ে যাবে না?নামাজ পড়তে হবে তো আমার।”

তেজ দেখিয়ে অহনা বলে,”নিজে নিজে গোসল করেন না!আমাকে কেনো বলছেন?”

“ভারী বেয়াদপ মেয়ে তো তুমি।তোমাকে টাকা দিয়ে রাখছি কেনো?আমার আয়া হয়ে থাকবে বলেই তো।নাকি তুমি ভাবছো আমার ছেলের বউ বানাবো বলে পুতুল সাজিয়ে রাখবো?এমন ভুল করো না মেয়ে।আমার বড় এক নাতি আছে।এসএসসি দিয়েছে এখন ইন্টার পড়ে।”

পেঁয়াজ হাতে নিয়ে কাটার চেষ্টায় ছিলো অহনা।মিসেস নাজমার কথায় বিরক্ত হয়ে বলে,”আমার না শখ নেই আপনার ওই বুইড়া ছেলেকে বিয়ে করার।মাথার চুল থেকে দাড়ি সব তো সাদা।বুইড়া ব্যাটা বিয়ে করতে নাকি আমি লাফাচ্ছি!”

“বেয়াদপ মেয়ে।তোমাকে বাবা মা কিছু শেখায় নি?”

“নাহ আমাকে কেউ কিচ্ছু শেখায়নি।আপনার সমস্যা?”

“শর্তে কিন্তু ছিলো বাজে ব্যবহার করতে পারবে না।এখন কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করছো তুমি।মাসের টাকা কেটে নিবো।”

এমনি পাঁচ হাজার টাকা তার উপর যদি কেটে নেয় তাহলে থাকে না কিছুই।এগুলো ভেবে অহনা চুপ হয়ে যায়।মিসেস নাজমা কঠিন সুরে বলেন,”আমি একজন মেয়েকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।ও শিখিয়ে দিবে তোমাকে কিভাবে কাজ করতে হয়।ভালোভাবে রান্না শেষ করে আমাকে ডাক দিবে।”

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here