দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা) #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৬২

0
869

#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৬২
🍂
নিহার আপুর সংগীত অনুষ্ঠানে এক পাশে দাড়িয়ে আছি আমি, চারদিকে মানুষে ভরপুর হয়ে আছে, ফয়সাল ভাইয়া পরিবার ও আছে খান বাড়িতে, দুজনের সংগীত অনুষ্ঠানে এক সাথে পরিচালনা করা হচ্ছে খান বাড়িতে, এতে করে মেহমান আনাগোনা ও অনেকটা বেশি, সেই সাথে যেন দুই পক্ষে মধ্যে নাচের কমপিটিশনটাও বেড়ে গেছে জোর তালে, কে কোন পক্ষেকে হারাবে সেই কমপিটিশনে আছে সবাই, এই নাচের কমপিটিশনে বড়রা বাদ যায়নি কোনো অংশে তারাও ছোটদের সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে অংশগ্রহণ করছে নিহা আপুর সংগীতে,,,

.

সারিবদ্ধ ভাবে দল বদল করে একের পর এক জন নেচে যাচ্ছে এই মূহুর্তে, আর আমিও তাদের সাথে এই নাচের অনুষ্ঠানে অংশ করেছি তবে নাচটা এই মূহুর্তে নাচতে পারছি না আমি, কারণ আমার নিজেকে কেমন একটা খালি খালি লাগছে ভিষণ ভাবে মনে হচ্ছে কাউকে খুব বেশি মিস করছি, কিন্তুু কাকে মিস করছি আমি, আমার চোখের সামনে তো সবাই আছে তাহলে আর কাকে চাই আমার, আচ্ছা আমি কি উনাকে মিস করছি মানে আমার স্বামীকে,, এখানে তো উনি ছাড়া বাকি সবাই আছে অনুষ্ঠানে তাহলে কি উনার জন্য মনটা পুড়ছে আমার কিন্তু কেন,,

.

উনাকে নিয়ে কথা গুলো ভেবেই নিরব নিশ্চুপে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আমি,, গত দুদিন ধরে উনাকে দেখি না আমি, আপুর মেহেদী রাতের ঘটনার পর আমাকে আসিফ ভাইয়া বাসায় পৌছিয়ে দেয়, পর পর দুই দিন দুটো অনুষ্ঠান হওয়ার কারণে সবাই সংগীত অনুষ্ঠান একদিন পরে রাখা হয় যাতে করে সবাই একটা দিন রেস্ট নিতে পারে, সেই সুবাদে আমি উনাকে কাল সারাদিন রাত আজকে সারাদিন এখন রাত ১ঃ৪৫ বাজে অব্দি এক পলক দেখতে পারিনি, উনি আজকে নিহা আপুর সংগীত অনুষ্ঠানেও আসেনি,,,

.

হয়তো আমার জন্য আসেনি, আমার সামনে পরতে চাই না বা উনার জন্য আমার আনন্দটা নষ্ট হোক এমন কিছুই চাই না তাই হয়তো উনার দূরে থাকা, উনি আমার সামনে না থাকায় নিজেকে কেমন একটা ভার ভার লাগছে কষ্ট, কষ্টটা যেন হঠাৎ করেই আমার মধ্যে চেপে বসেছে উনার জন্য , আর সেই কষ্টের কাতর হয়ে করুণ চোখ চারপাশে আস্তে করে চোখ বুলিয়ে উনাকে খুঁজে নিলাম আমি উনাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করে আবারও চোখ রাখলাম সামনে স্টেজের দিকে,,

.

সামনে দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল ডলি আপুকে, আমার স্বামীর সাথে সাথে ডলিও আপু আমার ওপর প্রচন্ড রেগে আছেন আমার ফিরে আসাটা নিয়ে, আমার ফিরে আসায় উনি অনেকটাও রেগে গিয়েছিল আমার ওপর আমি উনাকে সবটা বলার পরও কিছুই বিশ্বাস করেনি ডলি আপুর,,, আমি নাকি ইচ্ছে করেই এই বাড়িতে এসেছি উনার সম্পত্তির জন্য আমাকে নাকি উনি শান্তিতে থাকতে দিবে না এটার শেষ দেখে ছাড়বেন,, আমি শুধু অসহায় ভাবে সবটা শুনে গেছি নিরবে, কিছু বলার ছিল না আমার তাই….

.

আমি ডলি আপুর থেকে আস্তে করে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে পাশে তাকাতেই নিজের সামনে বারিয়ে দেওয়া একটা হাত হাজির হয়, আমি ভাবলেসহীন ভাবে হাতটা অনুসরণ করে তাকায় হাতের মালিকের দিকে সাথে সাথে চোখে পড়ল আয়ন ভাইয়া হাসি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যাহ আমার দিকে নিক্ষেপ করা,, আয়ন ভাইয়া আমাকে তার সাথে নাচের জন্য একটা হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,,

.

আমি একবার হাতের দিকে তো একবার আয়ন ভাইয়া দিকে তাকিয়ে থেকে পাশ ফিরে দু’হাতে সোফায় বসে থেকে দাদীর কমড় জরিয়ে ধরে বুকে মাথা রাখি আস্তে করে, আমি দাদীকে জরিয়ে ধরতেই দাদীও আমাকে আঁকলে নেয় দু’হাতে জরিয়ে ধরে,, আর আমাকে এমন করতে দেখে আয়ন ভাইয়া ও আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে নিশ্চুপ আমার পাশের সোফায় বসে পরে হয়তো আমার খারাপ লাগাটা বুঝতে পারেছে তাই কিছু বলছে আমায়,,

.
আমি গোল গোল চোখে সামনে দিকে তাকিয়ে আছি আর একমনে উনাকে খুঁজে চলছি, আমার কখনোই এমন লাগেনি উনার জন্য উনি কতবার আমার থেকে দূরে দূরে থেকেছে মাসের মাসও থেকেছে কখনোই আমার চোখ দুটো এতটা কাতর থাকিনি উনাকে দেখার জন্য কিন্তুু আজকে বড্ড কাতর হয়ে ওঠেছে আমার চোখ দুটো শুধু উনাকে এক পলক দেখের জন্য,, উনি কথায় আছে আমার থেকে কতটা দূরে আছে….

.
এমন সব চিন্তা ভাবনায় সারারাত এইভাবে দাদীর বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দেয় আমি একটা সময় ঘুমিয়ে পরি দাদীর বুকেই , আয়ন ভাইয়াও সারাটা রাত আমাদের সাথেই ছিল বসা অবস্থায়,,,,

.

সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে আবিষ্কার করি নিজের রুমের বিছানায় শুয়া অবস্থা, হয়তো দাদী আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে,, তাই ফ্রেশ না হয়েই এলোমেলো অবস্থায় ঘুম ঘুম চোখে ঢুলতে ঢুলতে বাহির হলাম নিজের রুম থেকে, মাথা চুকলাতে চুকলাতে চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম, তেমন কেউই ঘুম থেকে উঠেনি কয়েকটা কাজে লোক ছাড়া, বেশ রাত হয়ে ঘুমানোর জন্য এখনো কেউ ঘুম থেকে উঠেনি কেউ , আমি কাউকে কোথাও দেখতে না পেয়ে আস্তে করে ধীর পায়ে হেঁটে হেটে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছি উদ্দেশ্য বাগানে যাব আমার পরিমার সাথে কথা বলবো অনেক দিন পর,,,,

.

নিচে নামতেই চোখে পড়লো ড্রাইনিং টেবিলেই বসা অবস্থায় আরিফ ভাইয়া ও ফিহার ওপর, ওদের দুজনকে এক সাথে দেখতে চোখ কুচলিয়ে ভালো করে তাকায় আমি, সাথে সাথে চোখে পড়ল ফিহা খুব যত্ন সহকারে ভাইয়াকে নাস্তা দিচ্ছে বারবার এটা সেটা দিয়ে ভাইয়া প্লেট ভরপুর করে দিচ্ছে আর আরিফ ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে সেই গুলো অন্য প্লেট এ রাখছে বারবার,, ফিহা একবার ভাইয়াকে বাতাস করছে তো একবার পানি এগিয়ে দিচ্ছে,, আর আরিফ ভাইয়া ফিহার এমন সব কাজে খুব বিরক্ত বোধ করছে সেটা ভাইয়া ফেস দেখেই বুঝতে পারছি আমি,, তাদের এমন দেওয়া নেওয়ার ভাব দেখে কৌতূহলী হয়ে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে বসি,,,

.

—” ভাইয়া ফিহা তোমাকে খাবার খাওয়াচ্ছে কেন এমন করে,,,

.

পিছন থেকে হঠাৎ প্রশ্ন করায় থমথমে খেয়ে যায় দুজনেই, দ্রততা সঙ্গে দুজন আলাদা হয়ে পিছন ঘুরে তাকায় আমার দিকে, আমাকে ওরা কি বলবে সেটা কিছু বুঝতে না পেরে দুজনেই চোখাচোখি করে নেয়, আমাকে ওদের দিকে কৌতূহলী চোখে তাকাতে দেখে আরিফ ভাইয়া আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে নিশ্চুপ দ্রততা সঙ্গে ড্রাইনিং ছেড়ে বাহিরে চলে যায়, আর আমি ভাইয়াকে এমন তাড়া করে চলে যেতে দেখে, ভাইয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে কপাল কুচকে কৌতূহলী হয়ে আবারও ফিহাকে কিছু বলতে যাব তার আগেই ফিহা ঝটপট তাড়া দিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……

.
—” আমি কিছু জানি না তোর ভাই এই ভাবে কেন চলে,,,
.

ফিহার এমন কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় ওর দিকে পরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠি….

.
—” আমি কি তোর কাছে জানতে চেয়েছি যে তুই ভাই এই ভাবে কেন চলে গেল হুমমম,,,

.

—” আমি জানি তুই কিছু একটা প্রশ্ন করছি তাই আগেই উত্তরটা বলে দিলাম যাতে তোর কষ্ট করে প্রশ্ন করতে না হয় তাই, (আমতা আমতা করে)

.

ফিহার এমন তেড়া উত্তরে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ওর দিকে, কিছু একটা তো আছে ওদের মধ্যে যাহ আমার কাছ থেকে লুকানোর চেষ্টা করছে কিন্তুু সেটা কি হতে পারে… আমাকে এমন করে ওর দিকে তাকাতে দেখে ফিহা খানিকটা নড়েচড়ে ওঠে, আমি ওকে নড়েচড়ে ওঠতে দেখে কিছু বলতে নিব ফিহাও দ্রত আমাকে এড়িয়ে চলে যায় এখান থেকে নিজের রুমে,,, বিষয়টি কি হল কিছুই বুঝতে না পেরে আবারও নিজের মাথা চুকলিয়ে ঠোঁট উলটিয়ে অসহায় চোখে ফিহার চলে যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে থেকে আস্তে করে নিজের মতো করে হেটে চললাম বাহির দিকে,,,
.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here