#দেওয়ান(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৮১
.
🍂
আয়ন নিজের মাথাটা নাড়িয়ে সুমতি জানা যে বলবে না,, আয়নের সুমতি পেয়ে মায়া হালকা লাজুক হেসে মিষ্টি সুরে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো……..
.
—” আমি তোমার ভাইকে ভালোবাসি…….
.
মায়ার কথা যেন মূহুর্তের আয়ন পাথর মূতি হয়ে যায়, কোথায় আছে, কি হয়েছে, কোনো কিছুই বোধ গমন হচ্ছে না আয়নের,, মুহূর্তেই থমকে গিয়ে পুরো আকাশ সমতুল্য একটা বুঝা যেন আয়নে মাথার ওপর পরে যায়,,, আয়নের প্রথম ভালোবাসার ছিল মায়া সেই সাথে সাথে কোনো নারীকে নিয়ে স্বপ্ন গুলো ছিল প্রথম প্রথম যাহ এখন মায়ার লাস্ট একটা কথার মাধ্যমে ভেঙে গেল,, শুধু যে আয়নের মন ভেঙেছে সেটি কিন্তু নয় সেই সাথে সাথে আয়ন পুরোটাই ভেঙে গুলিয়ে ধংশ হয়ে গেছে এই মূহুর্তে,,, যাকে নিয়ে তার শত শত স্বপ্ন ছিল তাহ এক পলক শেষ হয়ে গেছে সবটাই,,,,,
.
আয়ন শক্ত হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মায়ার কথা গুলো শুনে আয়ন অনুভূতি শূন্য হয়ে পরে জায়গায়, থমথমে পরিবেশ কারও মুখে কোনো কথা নেই, মায়া রিদের সামনে ভালোবাসি কথাটা প্রকাশ করতেই লজ্জায় সিটিয়ে আছে বলে চুপ করে আছে মাথা নিচু করে,, আর রিদ আবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই দিকে,, রিদের চিন্তা ভাবনায় বাহিরের ছিল এমন কিছু, রিদ জানতো ওর বউ ওকে ভালোবাসে কিন্তু কখনো মুখে প্রকাশ করেনি মায়া সেটা কিন্তু এই ভাবে প্রকাশ করবে সেটা পাবতেই পারিনি,, তাই বউয়ের দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিদ…..
.
ভার্সিটির খালি মাঠে তিন জনই তিন রকম অনুভূতি নিয়ে আছে,, আয়ন ভরাক্রান্ত কষ্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও অন্যজন্য বেশখানিকটা আনন্দ সুখিত দাড়িয়ে আছে হতবাক হয়ে,, আর মায়া নিজের লজ্জা ভরা দৃষ্টি লুকানোর সেই চেষ্টায় আছে কারণ হঠাৎ করে কি থেকে কি বলে ফেলেছে রিদের সামনে সেটা বুঝতে পেরে এখন লজ্জা ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,, এমন থমথমে পরিবেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ করে আয়ন মাটিতে হাটু গেড়ে বসে পরে অনুভূতি শূন্য হয়ে,,, মাটির দিকে পলকহীন চোখ তাকিয়ে থেকে,, আয়নকে হঠাৎ করে মাটিতে বসতে দেখে চমকে উঠে রিদও মায়া,, পরে মায়া হঠাৎ করেই আয়নকে এই ভাবে বসতে দেখে ঝটপট এগিয়ে যেতেই পিছন থেকে রিদ বাধা প্রদান করে মায়াকে,, রিদ মায়াকে উদ্দেশ্য করে নিষিদ্ধ সুরে বলে উঠে………
.
—” উহুম Don’t…..
.
মায়ার রিদের এমন কথায় মুহূর্তেই থেমে যায়, পরে রিদের দিকে করুণ দৃষ্টিতে এক পলক তাকিয়ে থেকে আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে আয়নের দিকে তাকায় পরে হঠাৎ করে আয়নের কি হলো বুঝতে না পেরে চিন্তাত সুরে বলে উঠে……
.
—” ভা……..
.
মায়াকে বলতে না দিয়ে রিদ বলে উঠে……
.
—” No more word, গাড়িতে গিয়ে বসো রাইট নাউ…
.
রিদের এমন শক্ত গলার কথা শুনে মূহুর্তে মায়া বোকা বনে যায়, হঠাৎ করে আবার রিদের কি হতে পারে বিষয়টি ভেবে উঠতে পারছে না মায়া, তাই নিজের দৃষ্টি বদল করে পর পর দুজনের দিকেই এক পলক তাকিয়ে থেকে চুপচাপ ধীর পায়ে এগিয়ে যায় রিদের গাড়ির দিকে,, পরে আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে আয়নকে এক পলক দেখে নিয়ে আস্তে করে গাড়িতে উঠে বসে পিছনের সিটে,, মায়া যেতেই কষ্টে ফুপিয়ে উঠে আয়ন, আয়নকে ফুপাতে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রিদ কারণ রিদ আয়নের মনে অবস্থা বুঝতে পেরেই মায়াকে এসব থেকে দূরে যেতে বলেছে,, রিদ চাইনি মায়ার সামনে আয়নের ফিলিংসটা প্রকাশ পাক, কারণ এতে করে আয়ন ছোট হতো আর মায়া ইতস্তত বোধ করুক,, পরে হয়তো মায়া কখনো আয়নের সামনেও আসতে চাইতো না লজ্জায়,, তাই দুজনের দিকটা বুঝে রিদ মায়াকে আয়নের কাছে আসতে দেয়নি,, আর তাছাড়া আয়নের এই অবস্থা জন্য রিদ কিছুটা হলেও দায়ী,, তাই নিজেকে স্বাভাবিক করে রিদ আয়নের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠে……..
.
—” দেখ বউ নিয়ে শান্তনা দেওয়ার মতো ছেলে আমি না, আমার বউ আমারি,, তবে আজ তোর এই পরিস্থিতি জন্য কোথাও না কোথাও আমি জড়িত আছি,, কারণ আমি নিজের ফিলিংসটা বুঝতে গিয়ে তোকে থামাই নি আমার রিতের সাথে মিশতে, আমার তখনই উচিত ছিল তোকে থামানো কিন্তু কি করবো তোকে দিয়েই তো বুঝতে পারি আমি আমার রিতকে কতটা চাই,, তাছাড়া তোর আশেপাশে আমার রিত ও ছিল অনেকটাই সেইফ তাই আমিও কখনো বাঁধা প্রধান করেনি তোকে, আমি কিন্তু শুরু থেকেই জানতাম তুই রিতকে পছন্দ করিস আমি এটা জানা শর্তেও চুপ করে ছিলাম কারণ আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম আমার রিত আমার অবহেলা পরেও অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে কিনা,,,,
কিন্তু সেটা কখনোই ছিল না রিতে মাঝে আর সেটা আমি অনেক ভাবেই বুঝতে পারি, তোর সাথে হাসি খেলে কথা বলতো যেটা বলতো হয়তো সেটাও করতো,, কিন্তু তুই কি কখনোই লক্ষ করেছিস রিতে সব পাগলামো জুড়ো শুধু আমিই ছিলাম,,, আমি কিন্তু রিতকে কখনো আমার আশেপাশে ঘেঁষতে দিতাম না তারপরও কিন্তু আমাকে ছুঁইতে দ্বিধা বোধ করতে না কখনোই, এই জরিয়ে ধরতো, তোহ এই সবার সামনে কামড় খেতো, আমি সামনে না থাকলে চুপি চুপি আশিকের কাছ থেকে আমার খবর নেওয়া,,, সবকিছু ছিল আমাকে ঘিরে কিন্তু যদি সেটা আমি তোর বেলায় বলি তাহলে রিত কি তোকে কখনো এরকম কিছু করেছে, ওহ কি সহজ ভাবে কখনো তোর হাতটাও ধরেছে হুমম, ধরেনি কারণ ওর সবটা জোড়ে শুধু আমিই ছিলাম এখনো আছি, ভবিষ্যতে আমিই থাকবো…..
.
কথা গুলো বলেই রিদ হালকা থেমে আবারও বলে উঠে……
—” দেখ তুই আমার বউকে পছন্দ করিস, আর আমার বউকে পছন্দ করে এমন ছেলেকে আমি বসে বসে শান্তনা দিব এতটাও পাগল আমি নয়,, যদি বলার হয় তো তাকে মেরে দুনিয়া ছাড়া করতে পারি বউয়ের পিছনে পরার জন্য, কিন্তু তোকে করবো না কারণ তুই আমার অনেক হেল্প করেছিস রিতকে কাছে পেতে তাই তোরটা ছাড়,, তুই ভাই বলেও কথা বউয়ের জন্য ভাই তো আর মারতে পারি না 😎,, তোকেও মারবো না যাহ এখন বাসায় যাহ নিজেকে ঠিক কর তাড়াতাড়ি কারণ আমার বউয়ের জন্য কষ্টটাও আমিই পাবো অন্য কেউ নয়,, সেটাও আমি কারও সাথে ভাগ করতে চাই না, Because I medley love her,, এতটাই ভালোবাসি যতটা তোর চিন্তা শক্তি বাহিরে, One Kind of Dewana,, বউ ছাড়া আমি অচল তাই বউ নিয়ে দ্বিতীয় কোনো কথা শুনব না,,,, যেটা হয়েছে সেটা ভুলে যাহ চললাম……
.
কথায় গুলো বলেই রিদ উঠে দাঁড়ায়, কিন্তু আয়ন তখনও স্তব্ধ হয়ে বসে দিল মাটিতে অনুভূতি শূন্য হয়ে, রিদ কিছুটা পথ এগিয়ে নিজের গাড়ির সামনের আসতেই পিছন থেকে আয়ন ঐ ভাবেই বসে মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে রিদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……..
.
—” আমার ভালোবাসাটা সাথে সাথে যদি মায়ার ভালোবাসাটাও যুক্ত থাকতো আমার জন্য তাহলে কি যেতে দিতি মায়াকে.?……..
.
আয়নের এমন প্রশ্নের সাথে সাথে রিদ জায়গায় দাঁড়িয়ে পরে নিজের দুহাত রাগে সাথে সাথে মুষ্টি বদ্ধ করে নিয়ে পিছন ফিরে আয়নের দিকে না তাকিয়ে শক্ত গলায় বলে উঠে………..
.
—” মেরে দিতাম আমি দুজনকেই,, নিজের ব্যবহার করা টিস্যুতেও অন্যে টাচটা পছন্দ নয় সেখানে বউ তো অনেক দূরে……
.
কথাটা বলেই রিদ আর এক মূহুর্তেও দাঁড়ায়নি চোখে পলকেই মায়াকে নিয়ে গাড়িতে করে উধাও হয়ে যায় ভার্সিটি থেকে রিদের গন্তব্য আপাতত নিজের বাড়িটাই কারণ আজ অনেক কিছুই হয়ে গেছে তাছাড়া এখন মায়াকে প্রটেক্ট করতে হবে আগে পরে নাহয় বাকি সবকিছু নিয়ে ভাবা যাবে, আর আয়ন আহত মনটা নিয়ে বাদ ছাড়া কান্নায় ভেঙে পরে নিজের ভালোবাসার জন্য কার সাথে লড়াই করবে সে নিজের ভাই সাথে নাকি নিজে ভাগ্যে সাথে, কেন তার সাথে এমন হলো সেতো কোনো দোষ করেনি কাউকে ভালোবেসে, যদি ভাগ্যে লিখায় না ছিল তো কেন মায়ার প্রতি আয়নের ভালোবাসাটা সৃষ্টি হলো আর যদিও হলো তো মায়াকে কেন তার থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে কেন দুই ভাইকে একটি মেয়ের ভালোবাসায় প্রতি আকৃষ্ট করেছে ভাগ্য, টেলাশ, এই কোন খেলা খেলছে নিয়তি তার সাথে……..
.
রিদ পুরো রাস্তায় খুশি মনে বার বার মায়ার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েছে কারণ আজ মায়া নিজের মনে কথাটা হুট করেই রিদের সামনে বলে ফেলেছে আর তার জন্য এখন রিদের সামনে লজ্জা সিটিয়ে যাচ্ছে রিদের এমন করে বার বার তাকানোতে,, আর সেটাই উপভোগ করছে রিদ ভিষণ ভাবে,, রিদ মায়াকে লজ্জা পেতে দেখে ঠোঁট কামড়িয়ে দুষ্ট হেঁসে আরও বেশি করে মায়াকে লজ্জায় ফেলাচ্ছে,, একটা সময় রিদ হঠাৎ করেই মায়ার হাত ধরে টেনে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে দেয়,, আকস্মিক ঘটনায় মায়া ভয় পেয়ে সাথে সাথে নড়াচড়া করে উঠতেই রিদ বামহাতে মায়াকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে শক্ত করে,,,
মায়াও রিদের বুকে মধ্যে জায়গায় পেয়ে আর নড়াচড়া করার প্রয়োজন বোধ হয়নি ঘ্যাপ্তি মেরে বসে থাকে রিদের কোলের ওপর,,,
.
.
🍁
খান বাড়িতে বিরাট প্রশ্ন সমহীন হয়ে বসে খান পরিবারের সদস্যরা সবাই,, রিদের দাদা-দাদি, ফুপা-ফুপি, ফিহা, আরিফ, বাড়ির সব সার্ভেন্ডরা,,, থমথমে পরিবেশ কারও মুখে কোনো কথা নেই, সবাই খানিকটা চিন্তিত হয়ে বসে আছে,, সবার এতো এতো চিন্তা কারণ হলো ফিহা আর আরিফকে নিয়ে কারণ কিছুক্ষণ আগে ফিহা আর আরিফকে একসাথে দেখেছে হেনা খাঁন,, একসাথে দেখেছে বললে ভুল হবে ফিহা আরিফরের কোলের ওপর উঠে ভালোবাসার কথা বলছিল আর আরিফ ফিহার থেকে বাচার জন্য রিকুয়েষ্ট করেই যাচ্ছিল আর সেটাই দেখে ফেলেছে হেনা খাঁনের,,,,,,
.
আর তখন থেকে খান বাড়ির ড্রয়িংরুমে সবাইকে নিয়ে আলোচনা সভা বসে,, এই আলোচনা গিয়ে আরিফের মনে যতটা ভয় কাজ করছে,, সেটার ছিটা ফোটাও কাজ করছে না ফিহার মধ্যে,, কারণ সবার এতো এতো চিন্তা প্রধান কারণটাই হচ্ছে ফিহা ও তার বলার প্রতিটা কথা,,,,
.
ড্রয়িংরুমে যখন সবাই এক সাথে জড়ো হয় তখনই ফিহাকে এমনটা কেন করেছে জিগ্যেসা করতেই ফিহার উত্তরে বলে উঠে ফিহা আরিফকে ভালোবাসে আর ওকেই বিয়ে করতে চাই কয়েকদিনের মধ্যে নয়তো সে আরিফের জন্য কিছু একটা করে বসবে,,, ফিহার এমন সব পাগলামোতে সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে কিন্ত সবাই এমন তাকানো মধ্যে দিয়েই আরিফ বলে সে নাকি ফিহাকে বিয়ে করতে চাই না,, ওদের এমন চাওয়া পাওয়ার জন্যই এখন সবাই মাথায় হাত রেখে চিন্তাত হয়ে বসে আছে যে কি করবে বা কি করা উচিত, কার কথা শুনবে বা কার কথা শুনবে নাহ,, সবাই এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝেই হঠাৎ করে রিদ মায়াকে কোলে করে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে ……
.
.
.
চলবে…………