অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ #অবন্তিকা_তৃপ্তি #পর্ব_১৫

0
157

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_১৫

তুলি দিনদিন বুঝতে পারছে, শুভ্র তার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তুলি নিজেও ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে শুভ্রর প্রতি। শুভ্রর কথা বলার ধরন, বাচনভঙ্গিমা, ভ্রু নাচানো, দায়িত্ববোধ, তুলির প্রতি স্ত্রী হিসেবে এক আলাদা সম্মান এ সবকিছুই তুলিকে তীব্রভাবে শুভ্রর দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।তুলি আয়নার সামনে দাঁড়ানো। আজ সন্ধ্যায় ছোটখাটো বারবিকিউ পার্টি আয়োজন করেছে সবাই মিলে। তুলি বাসা থেকে আসার সময় কোন শাড়ি আনেনি। কিম্তু এখন শুনছে পার্টিতে নাকি সবাই শাড়ি পরবে।এটা শুনে, কোথা থেকে শাড়ি জোগাড় করে তুলির হাতে ধরিয়ে দিল শুভ্র। তুলি সেই শাড়িটাই পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এসব সাতপাঁচ চিন্তা করছে। তুলি অপেক্ষা করছে, শুভ্র কখন; ঠিক আর কতদিন পর নিজের অনুভূতি কনফেস করবে। তুলি মেয়ে, চাইলেও আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে পারছে না। তাছাড়া তাদের সম্পর্কটা আলাদা ছিলো শুরুতে। সেটাও একটা বাঁধা বলা চলে। তাই তুলি এখানে নীরব। করুক নাহয় আরও অপেক্ষা, তার লজ্জা ভাঙলেই হয়।

তুলি প্রায় তৈরি। শুভ্র কল এলো তখনি। তুলি কল ধরলো। ওপাশে শুভ্র ব্যস্ত ভঙ্গিতে জানতে চাইল,

‘তৈরি তুমি?’
‘হু।’
‘নিচে আসো, আমরা এখানেই আছি। একা আসতে পারবা তো?’
‘পারবো, চিন্তা নেই।’
‘তাহলে আসো। রাখছি।’

শুভ্র কল কাটল। তুলি শেষবারের মতো আয়নায় নিজেকে দেখে নিল। ভালোই দেখাচ্ছে তাকে। তুলি শরীরে ভালো করে আঁচল জড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।

নিচে এসে দেখে শুভ্র আর তার বন্ধুরা মিলে কয়লা পুড়িয়ে বারবিকিউ বানাচ্ছে। তুলি শুভ্রকে দেখলো। কালো রঙের শার্টের হাতা ফোল্ড করা কনুই অব্দি, সামনের দুটি বোতাম খুলে কলার ছেড়ে দেওয়া। ডান হাতে কয়লা লেগে আছে, কপালেও কয়লার ছিটে।তবে তাতেও কী ভয়াবহ সুন্দর দেখাচ্ছিল তখন শুভ্রকে। তুলির তখন মনে হয়েছে, সে এই প্রথমবারের মতো শুভ্রর উপর ক্রাশ খেয়েছে। তুলি হা করে শুভ্রকে দেখছিল। হঠাৎ পাশ থেকে মহু শুভ্রর দিকে চেয়ে চেঁচাল,

‘শুভ্র, ভাই বউ এসেছে তোমার, বউয়ের দিকে একটু মন দাও। মেয়েটা সে কখন থেকে তোমার দিকে চেয়ে আছে। পাগল করে দিয়েছ দেখি একদম তুলিকে।’

কোথাটা শোনামাত্রই তুলি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে ফিরে গেলো। লজ্জায় মনে হচ্ছে ও গলা অব্দি ডুবে যাচ্ছে।এভাবেও কেউ সবার সামনে বলে? ইস! শুভ্র ভ্রু নাড়িয়ে তুলির দিকে মৃদ্যু হেসে তাকাল। লজ্জা পাচ্ছে তুলি বুঝতে পারল শুভ্র। তাই হাতের কাজ ফারহানকে ধরিয়ে দিয়ে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে এগিয়ে আসলো তুলির দিকে।

শুভ্র এগুচ্ছে দেখে তুলি শাড়ির আঁচল খামছে ধরে অন্যদিকে ফিরল। শুভ্র পেছনে এসে দাড়ালো। পেছন থেকেই বললো;

‘কী ব্যাপার? আমাকেই দেখছিলে নাকি এতোক্ষণ, মিস ছাত্রি।’

তুলি লাজুক হাসল। পরপর নিজেকে সামলে শুভ্রর দিকে ফিরে বেশ ভাব নিয়ে বলল;

‘উহু, আমি আপনাদের রান্না করা দেখছিলাম।’

কথাটা বলে আবার মুখ টিপে হেসে অন্যদিকে মুখ ঘুরালো তুলি। শুভ্র তুলির থুতনি চেপে ধরে নিজের দিকে ফেরাল। ভ্রূ নাচাল,

‘আর ইউ শিউর’

তুলি দ্রুত উপরে-নিচে মাথা নাড়লো।

‘উঁ।’

শুভ্র হেসে ফেলল। তুলির মুখটা ছেড়ে দিয়ে বললো,

‘আচ্ছা বাদ দাও। ক্ষুধা পেয়েছে?’

তুলি স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলো। মৃদু আওয়াজে বললো,

‘এখন অব্দি না।’

শুভ্রও বাম হাতের কব্জি জড়িয়ে থাকা ঘড়ি দেখল। টাইম দেখে নিয়ে বললো;

‘একটু অপেক্ষা কর। ঘণ্টাখানেকে মধ্যে খাবার রেডি হয়ে যাবে আই থিঙ্ক।তুমি মহুদের পাশে গিয়ে গল্প করো। আমি রান্নাতে যাচ্ছি।’

তুলি প্রশ্ন করলো;

‘আমি হেল্প করবো?’

শুভ্র বিস্মিত হলো। পরপর সামান্য হাসলো। তুলির কপালে দু আঙুলে টোকা দিয়ে বললো,

‘আজ্ঞে না। রান্নার জন্যে পুরো জীবন পরে আছে। এই রান্নাটুকু আমাকেই করতে দিন।আপাতত যান গল্প করুন গিয়ে।’

তুলি এভাবে আপনি-আপনি করে শুভ্রর ঠাট্টা করায় হেসে ফেলল। শুভ্রকে পাশ কাটিয়ে দু কদম সামনে যেতেই পেছন থেকে শুভ্র ডাকল,

‘তুলি?’

শুভ্র যখন এভাবে ডাকে, তুলির বোধ হয় হাজারো ফুলঝুরি তুলির কানের কাছে ঝমঝমিয়ে উঠে। তুলি পেছন ফিরে চাইলো। শুভ্র প্রথমে হালকা করে হাসল। তারপর মাথা চুলকে এগিয়ে তুলির মুখোমুখি দাঁড়ালো। তুলি ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করল,

‘কী, কিছু বলবেন?’

শুভ্র গরিমসি করল খানিক। কিছু বলবে বলবে করেও মুখ ফুটে বেরুচ্ছে না। তুলি অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রর কথা শুনবে বলে। শুভ্র গলা খাকারি দিল। তারপর হাতে লেগে থাকা কয়লা আঙুলের ডগায় নিয়ে তুলির কানের পেছন লাগিয়ে দিয়ে বললো,

‘সুন্দর দেখাচ্ছে তোমায়।’

ইস, এভাবেও কেউ বলে? শুভ্র কী জানে, তুলির বুকে ঝড় উঠে এভাবে কথা বললে।মনে হয়, মনে হয় তুলি হারিয়েই জাচ্ছে অতলে, গভীরে। তুলির কথাটা কী যে ভালো লাগল। কানে হালকা করে হাত ছুঁইয়ে তুলি ফিসফিস করে বললো,

‘থ্যাঙ্ক ইউ।’

শুভ্র উত্তরে সামান্য হাসল। তারপর বলল;

‘নেক্সট টাইম থেকে কাজল পড়ো, আমি তখন কয়লার বদলে নজরফোঁটায় কাজল দিয়ে দিব, হবে?’’

কী দুর্দান্ত আবদার! তুলি মৃদু হাসল। তারপর বললো,

‘ঠিকাছে।’

শুভ্র তুলিকে মহুদের পাশে বসিয়ে রান্নায় চলে গেলো। মহু এবং দিয়া গল্প করছে। পাশে তুলি তাদের গল্প শুনছে। গল্প শুনছে বললে ভুল হবে, সে ঘুরেফিরে বারবার শুভ্রকে দেখছে। শেফ শুভ্রকে দেখতে তুলির চমৎকার লাগছে। বারবার মনে পড়ছে, কিভাবে শুভ্র কয়লায় ফোঁটা তুলির কানের পেছনে ছুয়ে দিয়ে নজরবন্দি করে রাখল। তুলির তখন বলতে ইচ্ছা হচ্ছিলো, আপনি কালো শার্টে এভাবে আমার পাশে দাঁড়ান। আজ সকালের মতো এভাবে আমার হাতটা একটু একটু করে ছুয়ে ফেলুন। হয়ে যান আপনিই আমার নজরফোঁটা। কয়লা বা কাজল কিচ্ছু লাগবে না। যদি আমার পাশে আপনি এভাবে দাঁড়ান, দুনিয়ার কেউ,কোন কিছু আমায় নজর দিতে পারবে না, আপনি কী সেটা জানেন? তবে তুলি বলতে পারেনি, লজ্জায়!
_____
খাওয়া-দাওয়া সময় এলো। আজ পুরুষরা মহিলাদের খাবার সার্ভ করল। শুভ্র তুলির প্লেটে চিকেন বারবিকিউ তুলে দিয়ে ফিসফিস করে বললো,

‘ভালো করে খেও, এত শুকনা হলে চলে?’

তুলি শুনে মাথা তুলে শুভ্রর দিকে তাকাল। ইয়াসমিনও এভাবে তুলির প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে একই কথা বলেন। শুভ্র মৃদু হেসে ইশারা করল,

‘খাও।’

বলে চলে গেলো অন্যপাশে। তুলি হালকা হেসে খেতে মন দিল। পাশ থেকে মহু বললো,

‘এত কেয়ারিং শুভ্রকে আমি এই প্রথম দেখলাম তুলি। তুমি আসায় আজকাল ওকে অনেক খুশি দেখাচ্ছে। আই থিঙ্ক হি লাভস ইউ! ছাত্রী স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা জন্মাচ্ছে বেচারার।’

তুলি লজ্জা পেয়ে হেসে উঠলো। তারপর খেতে খেতে বললো,

‘বুঝি আমি।’
‘ভালোবাসে?’
‘হু।’
‘কনফেস করেছো দুজন?’
‘এখনো না।’

মহু অবাক হলো। প্রশ্ন করলো;

‘কিম্তু কেন? তোমাদের উচিত কনফেস করা একে অন্যকে। শুভ্রর অবশ্য এতে এগিয়ে আসা উচিত।’

তুলি এইবার কথা বললো না। শুধু হাসল। মহু বললো,

‘তুমি কী অপেক্ষা করছ শুভ্রর কনফেসের? আমি হেল্প করবো?’

তুলি এইবারও উত্তর দিলো না। শুধু লাজুক হাসলো।কী বলবে সে? নিজ মুখে স্বীকার করবে কিভাবে? কিম্তু সেও তো তাই চায়। শুভ্র এগিয়ে আসুক আগে, তুলি তখন ঝাপটে ধরবে তাকে। মহু যা বোঝার বুঝে গেলো। তারপর কানেকানে তুলিকে শুনিয়ে দিল কয়েক কথা। তুলি শুনল, তারপর হা করে শুভ্রর দিকে চেয়ে আবার মহুর দিকে তাকাল। বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করল,

‘আমার এসব করাই লাগবে?’
‘ইয়েস,করা লাগবে। শুভ্রকে বাঘে আনতে অবশ্যই করা লাগবে। ও যা চাপা ছেলে, সহজে ধরা দিবে না। দেখো গিয়ে, ভালোবেসেই লজ্জায় মরে যাচ্ছে বেচারা। ইস, শুভ্রর ওয়ান থার্ড লজ্জাও যদি আরিফের মধ্যে থাকত। জীবন ধন্য হয়ে যেত! বাট তোমার জীবন ধন্য তুলি।বাকি ধন্য করতে তোমাকে এটা করতে হবে। ইউ গট ইট?’

তুলি শুনল। তারপর কিছু একটা ভাবলো। শুভ্রর দিকে আবারও চাইলো। দূর থেকে শুভ্র তুলির তাকানো দেখে ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জানতে চাইল; কী? তুলি না বোধক মাথা নাড়লো। শুভ্র হালকা হেসে আবার খাওয়ায় মন দিল। তুলি নিজের ভাবনায় ডুবে চুপচাপ থাকল বাকিটাক্ষণ।

#চলবে
আইডিয়া কী হতে পারে? আন্দাজ করতে পারবেন? দেখি কারটা খাপে খাপে মিলে ছক্কা তুলে। লেটস গো❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here