#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_০৭
__________________
” এই যে ভাইয়া শুনছেন? ”
পিছনে থেকে মিষ্টি কোমল মেয়েলি কন্ঠ শুনতে পেয়ে পিছনে ফিরে তাকালো মেহেরাব তন্ময়। পিছনে ফেরার সাথে সাথে ই চোখ মুখে ছেয়ে গেলো এক রাশ অবাকতা।
অপরিচিত একজন ছেলেকে নিজের দিকে এমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে খানিকটা ঘাবড়ালো অরিত্রা। ছেলেটা অতিরিক্ত ফর্সা! প্রথম দেখায় যে কেউ অনায়াসে ব্রিটিশ দের উত্তরসূরী বলে অ্যাখ্যায়িত করতে পারবে। তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে বা হাত দিয়ে ছেলেটার সামনে তুড়ি বাজাতেই নড়েচড়ে উঠলো আবারো,
” ভাইয়া আপনি কি এখানকার ডাক্তার? ”
তন্ময় নিজেকে সামলে বলল,
” আবব না এখনো হই নি তবে ইনটার্ন করছি। বলতে পারেন ভবিষ্যত ডাক্তার ”
অরিত্রা জোড় পূর্বক হেসে বলল,
” ওহহ আচ্ছা। ভাইয়া আপনি কি বলতে পারেন এখানকার কার্ডিওলজিস্ট এর রুম টা কোন দিকে। আসলে আমি বুঝতে পারছি না ”
তন্ময় আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
” কার্ডিওলজিস্টের চেম্বার দোতলায়। আপনি দোতলায় উঠে বা দিকে যেতেই ব্যানার দেখতে পাবেন। ”
” ঠিক আছে। আসি, ধন্যবাদ। ”
বলেই অরিত্রা চলে আসতে নিলে হঠাৎ পিছন থেকে অপরিচিত ছেলেটা পিছু ডাকলো অরিত্রার।
” শুনুন! ”
অরিত্রা কপাল কুঁচকে পিছনে ফিরলো। তন্ময় হাসি হাসি মুখ করে বলল,
” আমি তন্ময় আর আপনি? ”
অপরিচিত কোন ছেলে এভাবে সেধে সেধে পরিচিত হতে আসায় খানিকটা ঘটকা লাগলো অরিত্রার তবুও ভদ্রতার খাতিরে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” অরিত্রা ”
বলেই গটগট পায়ে চলে এলো সেখান থেকে। অরিত্রা চলে আসতে তন্ময় ভ্রু গুছিয়ে আনমনে ই বিরবির করলো,
” একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষের এতো মিল কি করে থাকতে পারে? হাউ ইজ দিস পসিবল? ”
” এই তন্ময়! তোকে ওয়ার্ডে যেতে বললাম না এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ”
বলতে বলতেই তন্ময়ের কাধে হাত রাখলো আরহাব হাওলাদার। সেও বর্তমানে একজন ইন্টার্ন ডক্টর সাথে তন্ময়ের বেস্ট ফ্রেন্ড।
তন্ময় চমকে পাশে তাকাতেই আরহাবের তামাটে বর্নের হাস্যোজ্জ্বল মুখটা নজরে এলো তার। আরহাব গায়ের রং তামাটে বর্ন হলেও শক্ত পোক্ত ব্যক্তিত্বের প্রেমে যেকোন মেয়ে অনায়াসে পড়তে বাধ্য। হাসলে বা পাশে টোল পড়াতে মারাত্মক লাগে দেখতে। তন্ময় কে চমকাতে দেখে অবাক হয়ে বলল,
” কিরে কিছু ভাবছিলি? ”
তন্ময় আরহাবের হাতের উপর হাত রেখে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল,
” তেমন কিছু না। চল যাই ”
আরহাব কথা বাড়ালো না। আর বাড়ালেও লাভ নেই তন্ময় যেচে না বললে তার বাপের ও সাধ্য নেই এই ছেলের মনের খবর জানার।
________________
” কোথায় গিয়েছিলি অরি? ”
হসপিটালের করিডরে মা কে বসিয়ে রেখে অরিত্রা গিয়েছিল ভেতরে। সে আসতে না আসতেই মায়ের প্রশ্নে মুখ তুলে তাকালো। মিষ্টি হেসে বলল,
” ওই কার্ডিওলজিস্ট কোথায় বসে তা জানতে গিয়েছিলাম, এখন চলো ”
নাহিদা বেগম উঠে হাটতে হাটতে বলল,
” তোর উপর বেশি চাপ হয়ে যায় নারে মা!
অরিত্রা মায়ের দিকে গম্ভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,
” তোমাকে কে বলল আমার উপর চাপ পড়ে! আমি কোনদিন বলেছি? পরিবারের জন্য কাজ করা কি চাপের মধ্যে পরে? আজাইরা ফাও কথা বলবা না তো ”
অরিত্রা রাগে নাক ফুলিয়ে সামনে হাটতে লাগলো। মেয়ের এমন ভাবমূর্তি দেখে নাহিদা বেগম কিছু বলার সাহস করলো না। কিছু ই বলা যায় না এই মেয়েকে। সাপের মতো ফোস ফোস করে।
” ডাক্তার সাহেব আসবো? ”
” এসো ”
ডাক্তারের অভয় বানী পেয়ে ধীর পায়ে অরিত্রা আর নাহিদা বেগম ভেতরে ঢুকলেন। ভেতরে চল্লিশোর্ধ একজন ভদ্রলোক বসা। গায়ে এপ্রোন আর গলায় স্ট্যাথোস্কোপ ঝুলানো। ডাক্তার ওদের দেখেই বললেন,
” বসেন ”
অরিত্রা আর তার মা বসতেই ডাক্তার দুজনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
” কি সমস্যা? ”
অরিত্রা জীভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল,
” সমস্যা টা আমার মায়ের। বুকে ব্যথা ”
” ব্যথা টা কি সবসময় হয় নাকি মাঝে মাঝে যেমন ধরুন টেনশনে থাকলেও হতে পারে ”
নাহিদা বেগম ধীর কন্ঠে বললেন,
” জি মাঝে মাঝে হয়। টেনশন করলেও হয় তবে অল্প ”
ডাক্তার মাথা ঝাকিয়ে কিছু ক্ষন ভাবলেন পরে প্রেসক্রিপশনে লিখতে লিখতে বললেন,
” নাম কি? ‘
” নাহিদা বেগম ”
” বয়স? ”
” জি চল্লিশ ”
প্রেসক্রিপশনে কিছু ঔষধের নাম লিখে অরিত্রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
” আপাতত কোন পরীক্ষা দিচ্ছি না, ঔষধ গুলো খেয়ে দেখো যদি আবার ব্যথা হয় তাহলে পরীক্ষা করাতে হবে আর শরীরের উপর চাপ দিয়ে কোন কাজ করবেন না, রেস্ট করবেন পরিমিত ”
অরিত্রা মাথা নেড়ে ওঠে দাড়ালো।
” আসি ডক্টর, ধন্যবাদ”
বলেই কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেলো অরিত্রা তার পিছনে পিছনে নাহিদা বেগম। অরিত্রা হেটে যেতে যেতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” শুনেছো তো ডাক্তার কি বলল। রেস্ট করতে হবে ”
” তুই আমাকে কোন কাজ করতে দিস অরি? আমি তো রেস্ট ই করি সারাদিন ”
” আমি এতো কিছু জানি না এখন থেকে টোটালি রেস্ট এ থাকতে হবে ”
নাহিদা বেগম কথা বাড়ালেন না। চুপচাপ হাটতে লাগলেন মেয়ের পাশে পাশে।
___________
” ভাই আছেন? ”
পড়ন্ত বিকেলের আকাশের রক্তিম আভা শেষ পর্যন্ত বিলীন হওয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে অবলোকন করছিলো মুনতাসিম। হাতে তার ধোঁয়া উঠা কফির কাপ। ভ্যাপসা গরম না থাকলেও সূর্যের পুরোপুরি প্রভাব টা ছিলো শেষ বিকেল অব্দি। বাহিরে তেমন কোন কাজ না থাকায় নিজের রুমে বসেই কাজ করে এখন আপাতত মাইন্ড ফ্রেসের জন্য বারান্দায় দাঁড়িয়েছে মুনতাসিম। হঠাৎ রুমের বাহিরে থেকে জাহিদের কন্ঠ শুনতে পেয়ে খানিকটা অবাক হলো সে। জাহিদ তো খুব বেশি দরকার না পড়লে তার বাড়িতে আসে না তার অবশ্য কারণ ও আছে। তার বাপ চাচারা যেই লেভেলের রাগী আর বদমেজাজি! জাহিদের মতো দশটাকে এক নিমিষেই শ’কয়েক আছাড় দিতে পারবে। তারও আবার কারণ একটায়, রাজনীতি!
মুনতাসিম রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
” কাম জাহিদ”
জাহিদ রুমে ঢুকেই একটা দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বলল,
” কেমন আছেন মুনতাসিম ভাই? ”
মুনতাসিম জাহিদের দিকে তাকালো। ছেলেটাকে মুনতাসিমের ভালোই লাগে। কিন্তু কথা হলো ছেলেটা সারাক্ষণ হাসে। কারণেও হাসে অকারণে ও হাসে। সবচেয়ে বিরক্তিকর হলো সিরিয়াস কথার মাঝে ও হাসবে। তবে হাসলে ছেলেটাকে বেশ ভালোই লাগে। লম্বা চওড়া সুঠাম দেহের অধিকারী। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ। হাস্যোজ্জ্বল একটা ছেলে।
” দাঁত বন্ধ করো জাহিদ ”
মুনতাসিমের স্বাভাবিক কন্ঠ। জাহিদ তৎক্ষনাৎ ঠোঁট দুটো একত্রে করে ফেলল।
” কি ব্যাপার হঠাৎ আমার বাড়িতে? ইমার্জেন্সি কিছু? ”
জাহিদ আমতা আমতা করে বলল,
” আসলে ভাই পার্টি অফিসে গিয়েছিলাম আপনি ছিলেন না তাই ভাবলাম বাড়িতেই থাকবেন ”
” কেন হঠাৎ আমাকে দরকার পড়লো”
মুনতাসিম প্রশ্ন টা করেই ভ্রু কুঁচকালো।
” স্যার আপনি যেই লোক গুলোর ইনফরমেশন নিতে বলেছিলেন তাদের ইনফরমেশন নিয়েছি ”
মুনতাসিম তর্জনি দিয়ে ভ্রু চুলকাতে চুলকাতে বলল,
” তারপর? কি পেয়েছো? ”
” স্যার মেয়েটার নাম অরিত্রা মাহাবুব, অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী। মেয়েটার মা নাহিদা বেগম উনি একজন স্কুল শিক্ষক। মেয়েটার দুই ভাই শেহরান মজুমদার আর শেহজাদ মজুমদার। ”
” আর বাবা? ”
মুনতাসিমের কন্ঠে স্পষ্ট কৌতুহল। জাহিদ মাথা চুলকে বলল,
” মেয়েটার বাবা মারা গেছে প্রায় চার বছর। টিউশনি করিয়ে টাকা রোজগার করে, কিন্তু কি অদ্ভুত লোকটা নাম আপনাদের সবার নামের সাথে মিল এমন কি পদবী ও মিল। ‘”
” নাম কি? ‘
” মাহাবুব মজুমদার পেশায় তিনি একজন ড্রাইভার ছিলেন। শুনলাম হঠাৎ কোন সড়ক দুর্ঘটনায় স্পট ডে*থ হয় তার ”
মুনতাসিম থমকালো ক্ষন কালের জন্য মূর্তি বনে গেলো। কার উপর এতো অভিমান করে আছে সে ! যে কি না গত চার বছর আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে! কেন কোন খোঁজ রাখে নি সে তার চাচার! শেষ দেখাও তো দেখতে পারলো না। বড্ড আফসোস হচ্ছে আজ! কেনো করলো না?
ঠোঁট মুখ শুকিয়ে আসছে বারংবার। শুকনো ঢুক গিলে বলল,
” ওদের সংসার চলে কিভাবে জানো? ”
জাহিদ অবাহ হলো ভীষণ। মুনতাসিম কে কখনো কোন বিষয়ে এতোটা আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখে নি সে।
” ওনার স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা আর অরিত্রা নামের মেয়েটা বেশ কয়েক টা টিউশনি করে। এভাবেই চলে ওদের সংসার! ”
মুনতাসিম চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। পরক্ষণেই চোয়াল শক্ত করে বলল,
” তুমি এখন যেতে পারো জাহিদ! ”
চলবে…
[ কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু ]