দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_০৮

0
101

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_০৮
__________________

রাতের শেষে ধরিত্রীতে যখন সূর্য তার পূর্ণ আলো ফেলে সাথে শুরু হয় কর্মজীবি মানুষ দের ব্যস্ততম আরেকটা দিন। ভার্সিটির সেই পুরোনো শিমুল গাছটার নিচে বসে শরৎচন্দ্রের লেখা “দেবদাস ” উপন্যাসে চোখ বুলাচ্ছে অরিত্রা। আজ একটু তাড়াতাড়ি ই চলে এসেছে সে ভার্সিটিতে মাত্র গোটা কয়েক ছাত্র ছাত্রীর আনাগোনা।

অরিত্রা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ভার্সিটির গেইটের দিকে তাকালো। প্রাপ্তি বলেছিলো আট’টার মধ্যে ভার্সিটি তে থাকবে এখন ঘড়ির কাটা আট’টা পেরিয়ে আধ ঘন্টা হয়ে আসছে অথচ এই মেয়ের দেখা নেই।

অরিত্রা পুনরায় দৃষ্টি নামিয়ে বইয়ের দিকে নজর দিলো, উঠতেও পারছে না এখান থেকে পরে এসে যদি না পায় আবার শুরু করবে কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর।

” দোস্ত সরি রে, রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো তার উপর রাস্তার কন্সট্রাকশনের কাজ চলছে রিকশা ও পাই না। প্রায় আধ ঘন্টার মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম ”

প্রাপ্তির কন্ঠ শুনতে পেয়ে ও চোখ তুলে তাকালো না অরিত্রা। রেগে আছে ভীষণ। প্রাপ্তি গভীর দৃষ্টিতে অরিত্রার দিকে তাকালো, মন মেজাজের অবস্থা যে আশঙ্কা জনক তা ভালো ই বুঝতে পারছে।

” এই অরি রাগ করেছিস? ”

অরিত্রা চোখ তুলে এক পলক তাকালো প্রাপ্তির দিকে। বইয়ের দিকে তাকিয়েই বলল,

” নাহ ”

প্রাপ্তি হতাশ কন্ঠে বলল,

” দেখ বনু আমি সত্যিই সরি। আমিই লেট করছি ওসব রাস্তা টাস্তার কাজ ফ্যাক্ট না ”

অরিত্রা স্বাভাবিক চোখে তাকালো প্রাপ্তির মুখের দিকে।

” নিজের দোষ স্বীকার করার সৎ সাহস রাখবি। সবাই নিজের দোষ স্বীকার করতে পারে না বুঝলি? ”

প্রাপ্তি হাস্যোজ্জ্বল মুখ করে অরিত্রাকে জরিয়ে ধরে বলল,

” হ্যা হ্যা বুঝেছি বুঝেছি ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যা সাগরের নাতি। এবার চল ক্লাসে যাই ”

অরিত্রা মুচকি হেসে উঠে দাড়ালো। বইটা ব্যাগে ভরতে ভরতে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,

” তোর জন্য কত আগে আইসা বসে ছিলাম জানিস! লেট লতিফা কোথাকার! ”

প্রাপ্তি দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,

” চরি তো বান্তুপী ”

অরিত্রা প্রাপ্তির বাহুতে চাপর দিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
” অসভ্য মেয়ে কোথাকার! ”

প্রাপ্তি অরিত্রার পিছনে পিছনে যেতে যেতে বলল,

” এই অরি শোননা! ”

” বল ”

” আমি না একটা কথা কিছুতেই বুঝতে পারছি না! ”

অরিত্রা প্রাপ্তির দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকালো। সিরিয়াস মুখ করে আজাইরা ফাউল কথা বলার অসীম ক্ষমতা আছে এই মেয়ের।

” কি কথা? ”

“আমরা দেশে স্বামীদের আয়ু এমন ফিনফিনা ক্যান?
বউ হাতে চুরি না পরলে আয়ু কমে। বউ নাকফুল না পরলে আয়ু কমে -কাপড় ধুয়ে সেই পানি বউ নিজের পায়ে ঢাললে আয়ু কমে। চুলের পানি জামাই এর গায়ে লাগলে আয়ু কমে। বউ জামাই এর আগে খেয়ে নিলে আয়ু কমে -জামাই বউ এর কোন কাজ করে দিলে তাদের আয়ু কমে -আর কইতে পারমুনা। হাপাই গেছি।
স্বামীদের আয়ু দেখি পুরাই এয়ারটেলের নেটওয়ার্ক এর মত- জোরে বাতাস আসলেই নাই হয়ে যায়! ”

অরিত্রা ঠোঁট চেপে হাসলো। এই মেয়ের মাথায় আর কি কি চলে খোদা ই জানে।

” তোকে কে বলল? ”

প্রাপ্তি হতাশ কন্ঠে বলল,

” আরে আর বলিস না। আমার চাচাতো বোনের মামাতো বোনের দেবরের খালাতো ভাইয়ের চাচাতো ভাইয়ের মামাতো বোনের শাশুড়ী এমন জঘন্য মহিলা। এরম করে। ওই আপুটারে সারাদিন কাজ করায়। দজ্জাল মহিলা ”

” খুউউব কাছের আত্মীয় তো! ”

অরিত্রার স্বাভাবিক কন্ঠ। প্রাপ্তি কিছু বলল না। বেচারী গভীর চিন্তায় আছে।

” এই জুনিয়র আপুরা দাড়াও দাড়াও! ”

অপরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে পা দুটো থমকে গেলো অরিত্রার। একবার মনে হলো তাকে ডাকছে না পুনরায় কি মনে করে পিছনে তাকালো। দেখে একজন ছেলে এদিকেই আসছে। অরিত্রা চোখ ছোট ছোট করে সেদিকে তাকালো। এই ছেলেকে কখনো দেখেছে কি না মনে পড়ছে না তবে পরিচিত মনে হচ্ছে হয়তো দেখে থাকলেও থাকতে পারে। পৃথিবী টা গোল চলতি পথে দেখা হতে ই পারে।

অরিত্রাকে পিছনে ঘুরতে দেখে প্রাপ্তি ও পিছনে ঘুরতে ই টাস্কি খেয়ে সামনে তাকিয়ে আছে।

” হেই জুনিয়র আপুরা কেমন আছেন? ”

অরিত্রা ছেলেটার দিকে তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। প্রথম দেখায় অনায়াসে সুদর্শন বলে গন্য করা যাবে। অরিত্রা কিছু বলার আগেই পাশ থেকে প্রাপ্তি কাতর কন্ঠে বলে উঠলো,

” হায় মার ডালা! আপনি আপু ডাকছেন কেন ভাইয়া! নাম ধরে ডাকেন! আপনার মুখে আপু ডাকটা বড্ড বেমানান!

ছেলেটা কিছু বলতে নিবে কিন্তু তাকে বলতে না দিয়েই প্রাপ্তি বলে উঠলো,

” কি নাম জানেন না তো! সমস্যা নেই আমি প্রাপ্তি। আর ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অরিত্রা। ”

অরিত্রা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে প্রাপ্তির দিকে তাকালো,
” মেয়েটা সব সময় সব পরিস্থিতি তে বেশি কথা বলে ”

ছেলেটা এক পলক প্রাপ্তির দিকে তাকালো, মেয়েটা অত্যাধিক সুন্দর হলেও তার মতোই বেশি কথা বলে!

মনে মনে কথা টা আউড়ে ই অরিত্রার দিকে তাকালো,

” হেই অরিত্রা। তোমার নামটা কিন্তু তোমার মতোই সুন্দর। আমি সায়র, সায়র মাহমুদ। তোমাদের সিনিয়র ”

অরিত্রা আড় চোখে প্রাপ্তির দিকে তাকালো,
” ওহ আচ্ছা। এই জন্য ই তো উনার এতো লাফালাফি! ক্রাস বয়! ”

মনে মনে কথাটা ভাবতেই আলতো হাসলো সে। সায়রের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আপনার নাম টা সুন্দর ভাইয়া। আনকমন! ”

নিজের নামের প্রশংসা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,

” এই প্রথম! এই প্রথম কেউ আমার নামের প্রশংসা করলো। ”

অরিত্রা আবারো হাসলো।

” আচ্ছা ভাইয়া আসি। ক্লাস শুরু হয়ে যাবে ”

সায়র আড় চোখে প্রাপ্তির দিকে তাকালো। মেয়েটা ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তার দিকে ই তাকিয়ে আছে। সায়েরের কাশি উঠে গেলো।

” ঠিক আছে। তোমরা যাও, কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবে কেমন? ”

প্রাপ্তি ফটাফট বলে উঠলো,

” আপনাকেই জানাবো ছাইয়া সরি ভাইয়া ”

বলেই দাঁত কেলিয়ে হাসি দিলো। অরিত্রা প্রাপ্তির হাত ধরে নিয়ে আসতে আসতে বলল,

” ফাজিল মেয়ে! কি বলিস! ছাইয়া কে তোর? ”

প্রাপ্তি আনমনেই বলে উঠলো,

” ভাইয়া থেকে ছাইয়া। দোস্ত আ’ম অলসো ক্রাস্ড!”

অরিত্রা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। এই মেয়ে কে নিয়ে যে আর কি কি দুর্ভোগ পোহাতে হয় খোদা জানে।

সায়র ভ্রু কুঁচকে অরিত্রা আর প্রাপ্তির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আনমনে বিরবির করে বলল,

” ডেঞ্জারাস! ”

____________

পড়ন্ত বিকেলের সময় টা অরিত্রার বেশ ভালো লাগে। রক্তিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেও ভালো লাগে কিন্তু সময় কোথায়! একটার পর একটা টিউশনি লেগেই আছে। বিকেল সাড়ে চারটা থেকে
ছ’ টা পর্যন্ত আরেকটা বাচ্চাকে পড়াতে হয় তার। মেয়েটা নার্সারী তে পড়ে নাম ইশিতা আলম। ভীষণ পাকা! কথা গুলোতে “ত” উচ্চারণ বেশি করে তাই শুনতেও ভালো লাগে অরিত্রার। আপাতত সে ইশিতাদের বাসার উদ্দেশ্যেই হাটছে। ছয় মাস হলো অরিত্রা ইতিতাকে পড়ায়।

ইশিতাদের বাসায় পৌঁছে ইশিতার পড়ার রুমে ঢুকতেই অরিত্রার নজর গেলো পড়ার টেবিলের দিকে ইশিতা চুপচাপ বসে আছে। অরিত্রা মুচকি হেসে চেয়ারে বসলো।

” এই যে ইশু ম্যাম কেমন আছেন আপনি? ভালো? ”

ইশিতা চুপচাপ মাথা নাড়ালো মানে সে ভালো আছে। অরিত্রা হেসে বলল,

” কাল কে যে আপনাকে পড়া দিয়েছিলাম অ থেকে ঔ পর্যন্ত পড়তে আপনি কি পড়ছেন? ”

ইশিতা আবারো মাথা নাড়ালো মানে সে পড়ছে।

” তাহলে বলুন তো দেখি ”

ইশিতা চুপচাপ বসে আছে।

” কি হলো বলো ”

” চাততু বলেতে গানি মানুচ বেতি ততা বলে না, তাই ইতিতা তুপ, ততা নেই ”

অরিত্রা ভ্রু কুঁচকালো,

” কিহ, জ্ঞানী মানুষ বেশি কথা বলে না? তাই তুমি চুপ করে আছো! আর এটা তোমার চাচ্চু মানে ইফতেখার ভাই বলছে? ”

” হু ”

” তুমি তো বেশি কথা না তুমি তো কথায় বলছো না! আমি কিন্তু তোমার আম্মুর কাছে বলব তুমি পড়া পারো না ”

” না না না, পালি তো ”

” তাহলে বলো ”

” না ”

” আহহা কি মুশকিল! ” অরিত্রা বিরক্তিকর নিঃশ্বাস ফেলল।

” কি ব্যাপার আমার আম্মা পড়ছে তো? ”

দরজায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে ভেতরে ঢুকলো ইফতেখার। ইশিতা তার বড় ভাইয়ের মেয়ে বড্ড আদরের!

অরিত্রা ইফতেখার কে দেখে আবারো বিরক্তিকর নিঃশ্বাস ছাড়লো। ইফতেখারের দিকে তাকিয়ে বলল,

” ইফতেখার ভাইয়া আপনি নাকি ইশিতাকে বলেছেন কথা না বলতে? ”

ইফতেখার অবাক হয়ে বলল,

” আমি কখন বললাম? ”

” তুমিই তো বলেতো গানি মানুত ততা তম বলে। ”

” আরে আম্মা আমি তো বলেছি কথা কম বলে। কিন্তু ম্যাম যা জিজ্ঞেস করে তার উত্তর দিতে তো মানা করি নি, ম্যাম যা পড়ায় তুমি সুন্দর করে পড়ো কেমন? চাচ্চু আসার সময় তোমার জন্য চকলেট নিয়ে আসবো কেমন? ”

ইশিতা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ালো,

” আততা ”

ইফতেখার অরিত্রার দিকে তাকিয়ে বলল,

” তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে না তো অরিত্রা? প্রাপ্তি আমার মামাতো বোন হলেও ওকে আমি আমার আপন বোনের মতোই ভালোবাসি সেই হিসেবে তুমিও আমার ছোট বোন। কোন সমস্যা হলে এই অধম ভাইটাকে জানাবা কেমন? ”

অরিত্রা অমায়িক হাসলো, ইফতেখার কে তার ভালোই লাগে বেশ রসিক মানুষ আর বেশ ভালো মানুষ ও বটে।

হঠাৎ ইফতেখারের ফোন বাজতেই ইফতেখার পকেটে থেকে ফোন বের করে দেখে মোবাইল স্ক্রিনে “মনু” লিখা।

ইফতেখার ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে অরিত্রার উদ্দেশ্যে বলল,

” তাহলে অরিত্রা তুমি ওকে পড়াও আমি আসছি ”

অরিত্রা মাথা নেড়ে সায় জানালো।

” হ্যা মনু বল, হঠাৎ ফোন করলি যে! ”

মুনতাসিমের চোয়াল শক্ত হলো, দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,

” এক থাপ্পড়ে মাথার ব্রেন আউট করে দেবো বেয়াদব! তোকে কতবার বলেছি এসব ইউজলেস নামে আমাকে ডাকবি না! ”

মুনতাসিম জীভে দাঁত কাটলো। আমতাআমতা করে বলল,

” মনে নাই রে মুনতাসিম ভাই ”

মুনতাসিম ক্ষন কয়েক চুপ থাকলো, পুনরায় বলল,

” তুই ফোন ধরে কাকে কি বলছিলিস? ”

ইফতেখার ভ্রু কুঁচকালো,

” কখন? ”

” অরিত্রা কে? ”

ইফতেখার বুঝলো মিনতাসিম কি নলতে চাইছে!

” ওহ অরিত্রা! ও তো ইশিতার টিউটর। মেয়েটা অনেক ভালো, আমি ওকে ভাইয়ের মতোই আদর করি ”

মুনতাসিম চুপ থেকে বলল,

” পুরো নাম কি? ”

” অরিত্রা মাহাবুব ”

মুনতাসিম কিছু একটা চিন্তা করে বাঁকা হাসলো,

” ঠিক আছে। তোকে একটা কাজ দিবো এন্ড এটার ফুলফিল কাজ কমপ্লিট হওয়া চাই উইথআউট এনি এক্সকিউজ! ”

ইফতেখার কিছু বলতে নেবে তার আগেই মুনতাসিম বলে উঠলো,

” তোর থেকে মতামত চাই নি। আমার টা জানিয়ে দিলাম ”

বলেই খট করে ফোন টা কেটে দিলো এদিকে ইফতেখার কিছু বলতে হা করতেই টুট টুট আওয়াজ হলো।

” যা বাবা কেটে দিলো! অসভ্য! বড়দের সম্মান করে না। বেয়াদব কোথাকার! ”

চলবে…

[ সবাই চুন্দর চুন্দর কমেন্ট করবা, কেমন!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here