দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_০৩

0
126

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_০৩
__________________

” এটা কেমন পাগলামি মুনতাসিম! তুই কি খুঁজছিস বলবি তো? কি এমন জিনিস যার জন্য এতোটা মরিয়া হয়ে উঠলি! আজিব ব্যাপার! ”

কথাটা বলেই লাইব্রেরির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো ইফতেখার আলম। কথাটা কতটুকু মুনতাসিমের কানে গেছে খোদা জানে। আকাশের অবস্থা মুটামুটি খারাপ বললেই চলে। বাহিরে ঝিরিঝিরি বাতাস সাথে ফোটা ফোটা বৃষ্টি।

বাহির থেকে দৃষ্টি এনে পুনরায় মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সে। পেশায় সে একজন উকিল। গত দু বছর যাবত প্রতিবার ই মুনতাসিম এই ভার্সিটিতে আসে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে। এসেই কোন দিকে না তাকিয়ে ই লাইব্রেরি তে ঢুকে বই গুলো উলট পালট করে কিছু খুঁজে। তার কিছু ক্ষন পরেই বেরিয়ে যায়। তবে একটা জিনিস ইফতেখার সবসময় নোটিশ করে মুনতাসিম যতটা উৎকন্ঠা নিয়ে লাইব্রেরি তে প্রবেশ করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার মুখ টা অমাবস্যার মতো আধারে ঢেকে যায়! কিন্তু সে আজও জানে না মুনতাসিম আসলে খোঁজে কি!

মুনতাসিম বেশ কিছু ক্ষন খোঁজার পর কাঙ্ক্ষিত জিনিস টা নজরে আসতেই অধর জুড়ে দেখা মিললো এক ঝলক হাসি। এগিয়ে গেলো সেদিকে। হাত উঁচু করে বইটা নামিয়ে ই অবাক হলো। প্রতিবার ই এসে বইয়ের উপর থেকে এক বস্তা ধুলো পরিষ্কার করতে হয় অথচ আজ কেমন ঝকঝকে পরিষ্কার। তার মানে বইটা কেউ পড়েছে? কথাটা মনে মনে আউড়ে ই চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো! মনে মনে ভাবলো, এ কেমন বাচ্চামি! আবেগের বয়সে একটা না হয় চিঠি লিখেছিলোই! এর জন্য কি এতো পাগলামি কেউ করে! মুনতাসিম আর ভাবলো না।

বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা উল্টাতে ই সাদা রঙের কাগজ টা বেরিয়ে আসলো, প্রতিবার থেকে আজ ব্যতিক্রম দেখে মুনতাসিম আবারো হাসলো। তৎক্ষনাৎ কাগজ টা হাতে নিয়ে বইটা নামিয়ে টেবিলের উপর রাখলো। কাঁপা হাতে কাগজটার ভাজ খুললো, এমন শক্ত ধাঁচের মানুষের এমন আবেগী অবস্থা দেখলে নির্ঘাত জনগণ হার্ট অ্যাটাক করবে।

_________________

” প্রিয় শ্যামপুরুষ,

অদ্ভুত ভাবনা আপনার! কালো কাগজে চিঠি লিখে কি বোঝাতে চাইলেন! এই অত্যাধুনিক যুগে বাস করেও বেনামী চিঠি টা নেহাৎ মন্দ হয় নি! আপনার বাক্যব্যয় বিফলে যায় নি, আপনি সার্থক! সব কিছুর তৃষ্ণা যদি মিটেই যেত তবে তো পৃথিবীতে আকাঙ্খা আর আক্ষেপ শব্দটার উৎপত্তি হতো না, থাক না কিছু তৃষ্ণা অন্তরের অন্তস্তলে। অসুস্থ না হলে তো বোঝাই যায় না সুস্থ তা কি! থাকুক না কিছু অসুস্থতা হৃদয়ে! দেখা হবে না কেন! অবশ্যই হবে।
কোন এক পূর্নিমার আলোয় আমাকে খুঁজে নিবেন নীল শাড়ি পড়া খোলা চুলে
তখন আপনার হাত ধরে পাড়ি দেব দিগন্ত থেকে দিগন্তে, অপেক্ষা করেন ঠিক ততদিনের ”

ইতি আপনার অপরিচিত
কৃষ্ণবতী
________________

মুনতাসিম হাসলো, চিঠি টা আবার পড়লো। আবারোও পড়লো। কি অদ্ভুত তার বাচন ভঙ্গি! পকেটে হাত গুঁজে কালো রঙের কাগজ আর সাদা কালির কলম বের করে টেবিলে বসে পড়লো।
মিনিট দুয়েক ভেবে খসখসে কাগজে কিছু একটা লিখে ভাজ করে আবারো বইয়ের ফাঁকে রেখে দিলো। আজ মন টা ভীষণ ভালো, অদ্ভুত কারনেই ভালো।

লাইব্রেরির আরেক প্রান্তে বসে ইফতেখার বই পড়ছিলো, সামনে কেউ বসতেই মাথা তুলে সে দিকেই তাকালো সে। মুনতাসিমের মুখে হাসি দেখে কিছু টা নয় অনেক বেশিই অবাক হলো সে, যেই ছেলেকে বোম ফাটিয়েও হাসানো যায় না কি এমন হলো সে এমনিতেই হাসছে! ডাল মে কুস কালা হায় ”

” কি ব্যাপার হাসছিস যে!”

মুনতাসিম ভ্রু কুঁচকে তাকালো,

” অমাবস্যার চাঁদ দেখলি মনে হচ্ছে ইফু ”

ইফতেখার বই বন্ধ করে সামনে রাখলো, বিদ্রুপ কন্ঠে বলল,

” অমাবস্যার চাঁদ থেকে ও দুর্লভ বস্তু! ”

মুনতাসিম বসা থেকে উঠতে উঠতে বলল,

” হয়েছে চল বাসায় যাবো, চল উঠ ”

ইফতেখার উঠে বইটা বুক শেলফ এ রাখতে রাখতে বলল,

” আমি কোথায় যাবো? ”

” কেন আমার বাসায়! ”

ইফতেখার ভ্রু বাকালো, ঠোঁট বাকিয়ে বলল,

” পাগল নাকি! আমি যাবো তোর বাড়িতে! তোর ওই জল্লাদ বাপ চাচাদের সামনে! নো নেভার! কাভি নেহি হো সাকতা! তোর বাপের পুরোপুরি ধারনা তোকে রাজনীতি করতে আমি উস্কেছি! সে তো আর জানে না তার গুনধর পুত্র সেই কলেজ লাইফ থেকেই গুন্ডামী…

মুনতাসিম ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাতেই ইফতেখার দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বললো,

” সরি সরি রাজনীতি হবে! প্রিন্টিং মিসটেক না সরি টাইপিং মিস্টেক হয়ে গেছে। ”

মুনতাসিম লাইব্রেরি থেকে বের হতে হতে বলল,

” থাক যাওয়া লাগবে না। তুই থাক আমিই গেলাম, আজ আবার শুনলাম মেধা আসবে। এতো ক্ষনে মনে হয় এসেও পড়েছে। থাক তোর যাওয়া লাগবে না ”

ইফতেখার লাফিয়ে উঠে মুনতাসিমের কাধ জাপটে ধরে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,

” তুই আমার জানে জিগার বন্ধু, তুই তো জানিস কতটা ভালোবাসি তোকে! তুই যখন এতো করে বলছিস আমি ইফতেখার তোর কথা কি ফেলে দিতে পারি! লাভ ইউ দোস্ত! ”

বলেই নাক টানার অভিনয় করলো, মুনতাসিম মুখ টা স্বাভাবিক করে বলল,

” আমি এতো বার কখন বললাম? আমি তো জাস্ট একবার বললাম, যেতে চাইলে চল না হলে থাক যাওয়া লাগবে না ”

” এই না না যাবো! কে বলল যাবো না! কতদিন আন্টির হাতের রান্না খাই না! চল চল ”

বলেই ইফতেখার আগে আগে চলে গেলো। মুনতাসিম বাহিরে আসতেই দেখলো ইফতেখার আর সায়র দাঁড়িয়ে আছে। ভাইকে দেখতেই সায়র এগিয়ে এলো সেদিকে, মুনতাসিমের কাছে গিয়ে লম্বা করে সালাম দিলো,

” আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহী ওবারাকাতুহ ভাইজান ”

মুনতাসিম ভ্রু কুঁচকে এক পলক সায়রের দিকে তাকিয়ে গাড়ির দিকে যেতে যেতে বলল,

” অতিভক্তি চুরের লক্ষ্মণ ”

মুনতাসিম গাড়ি তে উঠে সাথে সাথেই স্টার্ট দিলো ইঞ্জিন। গাড়ির শব্দ শুনে দুজন তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো গাড়িতে। বলা তো যায় না এই ঘাড়ত্যাড়া টা আবার রেখেই চলে যায়!

প্রায় বিশ মিনিটের মাথায় মুনতাসিমের গাড়ি প্রবেশ করলো একটা বিশালাকৃতির গেইট দিয়ে। চোখ ধাধানো সৌন্দর্য বাড়িটার। পুরনো আমলের জমিদার বাড়ির মতো!

পাথরের রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করেই কিছু টা সামনে এগিয়ে গাড়ি টা থেমে গেলো। নেমে এলো মুনতাসিম, তার পিছু পিছু ভাইয়ের লেজ ধরে এগিয়ে এলো সায়র। তার পিছনে ই ইফতেখার।

মুনতাসিম ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই কারো গম্ভীর কন্ঠে পা দুটো থেমে যায় তার।

” কোথায় ছিলে সকাল থেকে? আজ থেকে না তোমার অফিসে জয়েন করার কথা ছিলো! ভুলে গেলে? ”

মুনতাসিম ভ্রু কুচকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো মেহেরাব মজুমদারের দিকে। সাদা পান্জাবি আর পাজামা পরিহিত গাল ভর্তি সাদা দাড়ি আর গম্ভীর মুখশ্রী। তার পাশেই বসে আছে তার নিজের বাবা মাহমুদ মজুমদার। আর তার পাশেই কাচুমাচু করছে তার ছোট চাচা মাহফুজ মজুমদার। ইফতেখার ঢুক গিললো, এখন নিজের কপাল নিজেই চাপরাতে ইচ্ছে করছে, জেনে শুনে সিংহের গুহায় পা দিয়েছে সে! সায়র ভাইয়ের আড়ালে দাঁড়িয়ে ঢুক গিলছে, বড়বাবা যে বেজায় চটেছে তা বোঝার বাকি রইলো না। অথচ যাকে বলল তার ই কোন ভাবাবেগ নেই, সে নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে।

” কি হলো কথা বলছো না কেন? অফিসে যাওনি কেন? বলেছিলাম না আমি?”

মুনতাসিম এক ভ্রু উচিয়ে চুল্কাতে চুল্কাতে নলল,

” পার্টি অফিসে ছিলাম, সেখান থেকে পার্লামেন্টে মিটিং ছিলো। সময় হয় নি অফিস যাওয়ার। আমি তো বলেছিই আমি অফিসে যাবো না, এসবে কোন ইন্টারেস্ট নেই আমার, প্লিজ এসবে আমাকে টানবেন না মিস্টার মেহেরাব মজুমদার, মাই ডিয়ার বড়বাবা”

তৃষা বেগম এগিয়ে এলেন মুনতাসিমের দিকে। মেহেরাব মজুমদারের দিকে তাকিয়ে মুনতাসিমের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

” আহহ কি শুরু করলেন ছেলেটা আসতে না আসতেই!

মুনতাসিমের দিকে তাকিয়ে বলল,

” যা তো বাবা ফ্রেস হয়ে টেবিলে আস, আমি খাবার বাড়ছি”

পুনরায় সায়র আর ইফতেখারের দিকে তাকালো,

” তোমরা ও আসো ”

মুনতাসিম মাথা দুলিয়ে বলল,

” যাচ্ছি বড় মা ”

বলেই গটগট পায়ে সিড়ি ভেঙে নিজের রুমে চলে গেলো মুমতাসিম। সায়র কাচুমাচু দৃষ্টিতে চার পাশ দেখে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সিঁড়ির দিকে, অমনি পিছনে থেকে কেউ বলে উঠলো,

” এই যে ভাইয়ের চামচা! আপনি ও কি পার্টি ফার্টির অফিসে গিয়েছিলেন নাকি? ”

নিজের বাবার মুখে অমন কেস খাওয়া মার্কা কথা শুনে দাঁত দিয়ে জিভ কাটে সায়র। লোকটা আর কেস খাওয়ানোর সময় পেলো না, মুখে অদৃশ্য কিছু গালি আসলেও নিজেকে সামলে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল,

” কি যে বলো না বাবা, তওবা তওবা, আসতাগফিরুল্লাহ! কি বলো এসব! আমি করবো রাজনীতি! পাগল নাকি! আমি তো মাত্র ই ভার্সিটি থেকে আসলাম, যাই বাবা ফ্রেস হয়ে আসি ”

বলেই সায়র এক রকম দৌড়ে পালালো। ইফতেখার ও পা টিপে টিপে পালিয়ে এসে কোন ভাবে সায়রের রুমে ঢুকে হাফ ছেড়ে বাচলো।

ইফতেখারের অবস্থা দেখে সায়র গা দুলিয়ে হাসলো, বেচারা এতো ভয় পায় তার বাপ চাচাদের। ভয় পাবেই বা না কেন! একেক জন তো একেকটা বাঘ।

মুনতাসিম কেবল মাত্র রুমে ঢুকে অ্যাস কালারের শার্ট টা খোলার জন্য বোতামে হাত লাগালো, হঠাৎ পিছনে থেকে কেউ মিষ্টি স্বরে ধীর কন্ঠে বলল,

” মুনতাসিম ভাই আসবো? ”

” নাহ ”

রুক্ষ কন্ঠ শুনতে পেয়ে ও মেয়েটার কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না, এ যেনো তার প্রতি দিন কার রুটিন।

রুমে প্রবেশ করেই মিষ্টি হাসলো সে। মুনতাসিম বিপরীত দিকে মুখ করে ই বলল,

” মানা করা সত্যেও আমার ঘরে প্রবেশ করার সাহস তুই কোথায় পেলি মিনু? ”

মিনু সহাস্যে উত্তর দিলো,

” তোমার কিছু দরকার মুনতাসিম ভাই? ”

মুনতাসিম রক্ত চক্ষু নিয়ে মিনুর দিকে ফিরলো, চোখে মুখে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

” আমার হাতের ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় খেতে না চাইলে এখান থেকে বের হো বেহায়া মেয়ে! এতো বেহায়া মেয়ে কিভাবে হতে পারে মানুষ! ছোট বাবা কি কিছু ই শেখাতে পারলো না তোকে! শিক্ষার অভাব আছে তোর, এই বয়স কত তোর? ”

মুনতাসিম ধমকে উঠলো, সাথে ইষৎ কেঁপে উঠলো মিনুও। চোখ দুটো ছলছল করছে তার। কি করবে সে, ভালোবাসে তো এই মানুষ টাকে! যার নামে উনিশ টা বসন্ত পার করেছে এতো সহজে ই কি তাকে ভুলে থাকা যায়!

চোখের কোনে জমে থাকা পানি টা বুড়ো আঙুল দিয়ে মুছে ত্রস্ত পায়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
মিনু বের হতেই মুনতাসিম মাথার চুল টেনে ধরলো, রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললে বিপদ। খু*ন করলেও হাত কাঁপবে না তার। এই মেয়েটা কেন বোঝে না! সে তো তাকে বোন ছাড়া অন্য কোন নজরে দেখেই না। কোন অনুভুতিও আসে না!

কি হবে তবে সামনে?

চলবে…

[ কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here