দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_১৫

0
373

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৫
__________________

আবহাওয়া টা আজ বড্ড বেশি ভালো, চৈত্রের কাঠফাটা রোদের ঝলকানিতে অরিত্রার মনে হচ্ছে চামড়া ঝলসে যাচ্ছে দেহের। ভার্সিটির মাঠ দিয়ে হাটতে হাটতেই ব্যাগ থেকে তীব্র রিংটোনে ধ্যান ভাঙ্গে অরিত্রার। পা জোড়া থেমে যায় তৎক্ষনাৎ। ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ব্যাগ হাতড়ে ফোন বের করলো সে,
রিমঝিমের মা ফোন করেছে। অরিত্রাকে থামতে দেখে প্রাপ্তিও হাটা থামিয়ে এক পলক দেখলো অরিত্রাকে,

” তুই চলে যাস রে অরি। আমার তাড়াতাড়ি যেতে হবে কাজ আছে বাসায়”

অরিত্রা ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে ইশারায় চলে যেতে বলল প্রাপ্তিকে। প্রাপ্তিও ত্রস্ত পায়ে মাঠ পেরিয়ে গাড়ি ধরলো। অরিত্রা সেদিকে ই তাকিয়ে ছিলো যতক্ষণ না প্রাপ্তিকে দেখা যায়।

” আসসালামু আলাইকুম আপা”

ওপাশ থেকে কিছু বলতেই অরিত্রা হাসি হাসি মুখ করে বলল, ” আচ্ছা আপনারা যান আমি বরং কাল আসবো। আজ থাক! ”

মহিলা ফোন টা কেটে দিলো। অরিত্রা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, আজ আর রিমঝিম দের বাসায় যেতে হবে না ভেবেই শান্তি লাগছে। অরিত্রা ভাবছে আর হাঁটছে হঠাৎ ভার্সিটির এক জায়গায় ভীড় দেখে এগিয়ে গেলো সে। ভীড় ঠেলে সামনে যেতেই দৃশ্যমান হলো মুনতাসিমের ভাবলেসহীন মুখ খানি। অরিত্রা বুঝে পায় না এই লোক কি মুখে সবসময় নিম পাতা গুঁজে রাখে নাকি? নাকি হাসলে টাকা দিতে হবে! আজিব!

মুনতাসিম একটা বড় গাছের নিচে চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে ক্যান টাইপ কিছু খাচ্ছিলো। অরিত্রা কিছু একটা ভেবে সামনে এগিয়ে গেলো। মুনতাসিমের আশেপাশে ছেলেপেলের দল প্রায় বিশ পঁচিশ হবেই। হয়তো কোন কাজেই এসেছে।

ভীড়ের মাঝে থেকে একটা মেয়েকে সামনে এগুতে দেখে সকলের দৃষ্টি স্থির হলো তার দিকে। অরিত্রা হাসি হাসি মুখ করে মুনতাসিমের সামনে দাঁড়াতেই কপাল কুঁচকে তাকালো সে। এই মেয়েকে বিশ্বাস নেই কখন কোন মুসিবতে ফেলে দেয় সে নিজেও জানে না। এখন এর মাথায় কি চলছে সেটা এই তাড় ছিঁড়া আর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

মুনতাসিম চোয়াল শক্ত করে ভ্রু কুঁচকে তাকালো অরিত্রার দিকে। তা দেখে অরিত্র দাঁত কেলিয়ে হেসে লম্বা সালাম দিলো মুনতাসিম কে,

” আসসালামু আলাইকুম ওয়া-রাহমাতুল্লাহী ওবারাকাতুহ ছাত্রলীগের সভাপতি সাহেব মুনতাসিম মাহমুদ ভাইয়া ”

এতো লম্বা সালাম শুনে সন্দেহ আরোও প্রকট হলো মুনতাসিমের, ঠোঁট নাড়িয়ে উত্তর দিলো, ” ওয়ালাইকুম সালাম ”

” কেমন আছেন ভাইয়া? শরীর স্বাস্থ্য ভালো তো?”

” হুম ” মুনতাসিমের গম্ভীর কন্ঠ। অরিত্রার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিড়বিড় করে বলল, ” অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ ”

” ভাইয়া আপনি তো ছাত্রলীগের সভাপতি। অনেক ক্ষমতা নিয়ে চলেন আবার আপনার দলের লোক এইবার মেম্বারেও দাঁড়াবে যদি বাই এনও চান্স পাস করে আপনাদের তো আর নাগাল পাওয়া ই যাবে না। আসলে আমি একটা কথা ভাবছি, আপনার মতো এতো দায়িত্ববান লোক থাকতে ভার্সিটির এই দশা কেন! ”

” এই মেয়ে কি বলছো তুমি? আর ভাইকে এসব বলার তুমি কে? যাও এখান থেকে! ”

অপরিচিত ছেলের কন্ঠে এমন কথা শুনতে পেয়ে বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকালো অরিত্রা। বিড়বিড় করে বলল, ” আসছে ভাইয়ের চামচা! ”

” আপনি চুপ থাকেন! আপনার সাথে কথা বলছি আমি? নিজের কাজ করেন! ”

অরিত্রার ধমকে ছেলেটা থতমত খেয়ে চুপ করে গেলো। পুনরায় মুনতাসিমের দিকে তাকিয়ে বলল, ” কি বলছিলাম যেনো! ওহ হ্যা, আপনি একবার ভার্সিটির চারপাশ দেখছেন? কি নোংরা! ইয়াক! ভার্সিটির সামনের রাস্তা দেখছেন? মনে হয় কত হাজার বছর যাবত মেরামত করা হয় না! দায়িত্বের প্রতি এতো হেলা ফেলা করলে কি করে ভাবেন জনগণ আপনাদের ভোট দিবে! রাস্তা ঘাটে মেয়েদের তো নেই কোন নিরাপত্তা! কে দেবে তা? নেই কোন বিচার ব্যবস্থা। আপনারা রাজনীতি করে দেশের কি উপকার করছেন ভেবে পাই না। আমার কথা গুলোতে যদি কোথাও ভুল হয়ে থাকে আমাকে ক্ষমা করবেন। তবে আমার মনে হলো এসব কিছু তে নজর দেওয়া আপনাদের দায়িত্বের অংশ।

আমার কথা গুলো শুনে মনে করবেন না আপনাদের রাজনৈতিক নেতাদের অপমান করার জন্য বলেছি আমি মোটেও ওরকম বলি নি শুধু মাত্র আমাদের চাহিদা গুলো তুলে ধরেছি। সময় হলে ভেবে দেখবেন। আজ আসি”

বলেই অরিত্রা পিছনে ঘুরে ভীড়ের মাঝেই অদৃশ্য হয়ে গেলো। মুনতাসিম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অরিত্রার যাওয়ার পানে। মেয়েটা এক বিন্দু খারাপ কথা বলে নি। প্রতিবাদী মেয়ে মানুষ। এই জন্যই মেয়েটাকে মুনতাসিমের ভালো লাগে।

” ভাই আপনি কিছু মনে করবেন না, আমি মেয়েটাকে উচিত শিক্ষা দেবো! বলা নেই কওয়া নেই দুম করে এসে একটা কথা বললেই হলো! ”

মুনতাসিম চোয়াল শক্ত করে তাকালো ছেলেটার দিকে। মুনতাসিমের তাকানো দেখে তৎক্ষনাৎ নিভে গেলো ছেলেটা। মুনতাসিম গমগমে গলায় বলল,

” এদিকে আয় ”

ছেলেটা এদিক সেদিক তাকিয়ে ঢুক গিলল। সে কি অসময়ে বেফাস কথা বলে ফেলেছে? ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো মুনতাসিমের দিকে। ছেলেটা কাছে যেতেই মুনতাসিম ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দিলো ছেলেটার বাম গালে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হকচকিয়ে উঠলো ছেলেটা। সাথে আঁতকে উঠল উপস্থিত সকলে। মুনতাসিমের রাগ সম্পর্কে কম বেশি সবাই ই অবগত।

মুনতাসিম উঠে দাড়ালো, চোয়াল শক্ত করে গম্ভীর কন্ঠে বলল, ” আমার এলাকার দুর্বলতা আমার ওই মেয়ের কাছ থেকে কেন শুনতে হবে? তোদের আমি কেন পালি? রঙ্গ করার জন্য? চোখ কি আকাশে নিয়ে ঘুরিস তোরা? আমি আজকের মধ্যে কাজ শুরু করা দেখতে চাই। প্রথমে ভার্সিটির আশেপাশের নোংরা ডাস্টবিন পরিষ্কার করাবি, রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা করবি, প্রতিটা মোড়ে মোড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা সেটআপ করবি। আর এর ও যদি কোন সমস্যা হয় সোজা কথাটা যেন আমার কানে আসে। কাজ নিয়ে হেলাফেলা আমার পছন্দ না, মনে থাকে যেন! ”

জাহিদ এগিয়ে এলো, মাথা দুলিয়ে সায় জানিয়ে বলল, ” জ্বি ভাই কাজ হয়ে যাবে ”

মুনতাসিম হাঁটতে হাঁটতে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।

______________

ভীড় ঠেলে বেরিয়ে এসে অরিত্রা বড়ো বড়ো করে শ্বাস নিয়ে সামনে পা বাড়ালো। প্রথমে এগিয়ে ছিলো মজা করার জন্য পরক্ষণে মনে হলো মজা করার থেকে কাজের কথা বললেই ভালো হবে, সব সময় তো এমন সুযোগ পা-ওয়া যায় না।

অরিত্রা সামনের দিকে পা বাড়াতেই পুনরায় ফোন টা স্ব শব্দে বেজে উঠলো, অরিত্রা ফোন রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিলো,

” আসসালামু আলাইকুম ”

” ওয়ালাইকুম সালাম অরিত্রা। আমি প্রাপ্তির আম্মু বলছিলাম। কেমন আছো মা? ”

” জি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি? ”

” আমিও ভালো। মা তুমি একটু আমাদের বাসায় আসতে পারবে? ”

অরিত্রা কপাল কুঁচকালো, ” আন্টি কোন সমস্যা? প্রােপ্তির কিছু হয়েছে? ”

” না না ও ঠিক আছে। আসলে আজ ওকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে কিন্তু ও কিছু তেই ওদের সামনে যাবে না। বিয়ে না করুক এটলিস্ট সামনে তো যাবে। মান সম্মানের ও তো একটা কথা আছে তাই না মা! তুমি যদি এসে একটু বোঝাতা! “.

অরিত্রা কিছু একটা ভেবে বলল, ” আচ্ছা আন্টি আমি আসছি ”

প্রায় পনেরো মিনিটের মাথায় অরিত্রা এসে পৌঁছালো প্রাপ্তিদের বাসায়। ক্রলিং বেল দিতেই প্রাপ্তির মা এসে দরজা খুলল,

অরিত্রা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে ই চারপাশে তাকালো, বেশ সৌখিন পরিবারের মেয়ে প্রাপ্তি। অরিত্রা মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো প্রাপ্তির দরজার দিকে। দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে উত্তর এলো, ” মা তোমাকে না বললাম আমি ওদের সামনে যাব না তাও জোর করছো! ”

অরিত্রা গলা পরিষ্কার করে বলল, ” আমি তোর মা না, দরজা খোল প্রাপ্তি! ”

অরিত্রার কন্ঠ শুনতে পেয়ে তৎক্ষনাৎ দরজা খুলে বের হলো প্রাপ্তি, অরিত্রার দিকে তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ” তুই এখানে কেন? ”

অরিত্রা মুচকি হেসে প্রাপ্তিকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলো। প্রাপ্তিও দরজা অফ করে অরিত্রার পিছনে পিছনে গিয়ে বলল, ” তুই আমার বাসায় আসছস কেন? ”

” কেন আসা যাবে না? ”

” দেখ অরি আমি মোটেও যাব ওদের সামনে। ”

অরিত্রা ঠোঁট টিপে হেসে বলল, ” তুই যাবি, বিয়ে ভাঙার জন্য কি কি করতে পারিস আমিও দেখবো ”

প্রাপ্তি আড়চোখে তাকিয়ে বলল, ” চ্যালেন্জ করছিস নাকি? ”

,” ধরে নে তাই ”

কথা বলতে বলতে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলো অরিত্রা। আলমারি থেকে নীল রঙের শাড়ি বের করে প্রাপ্তির হাতে দিয়ে বলল, ” নে এবার ফটাফট রেডি হো তো দেখি ”

প্রাপ্তি ঠোঁট ফুলিয়ে শ্বাস ফেলে বলল, ” বের হো ”

অরিত্রা মিটিমিটি হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। কি জানি এই মেয়ে আবার কোন আকাম করে! সেটাই দেখার পালা।

চলবে…

[ আজকের পর্বটা কেমন হ’য়েছে জানাবেন কিন্তু আর গঠন গত মন্তব্য করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here