দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_১৪

0
86

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৪
__________________

” এই, এই মিয়া কি বললেন আপনি? কোন এঙ্গেলে আমাকে আপনার ফকিন্নি মনে হয়? আমার কি কোন জায়গায় জামা ছেঁড়া, ফাটা? নাকি আমার মুখের কোথাও বা কপালে লেখা আমি ফকিন্নি। কোন যুক্তিতে আপনি আমাকে ফকিন্নি বললেন? আপনি ফকিন্নি দেখছেন কোন দিন? তারা কেমন হয় ধারণা নাই? না থাকলে কমলাপুর রেলস্টেশনে লাইন করে যারা বসে থাকে তাদের ফকিন্নি বলে, যারা ভিক্ষা করে তারা ফকিন্নি! আমি কি ভিক্ষা করি? আপনি কোন যুক্তিতে এসব আলতু ফালতু নামে আমাকে সম্বোধন করেন? নেহাৎ ট্রেনে উঠতে সাহায্য করেছিলেন নয়তো এই মিনু কি জিনিস বোঝাতাম আপনাকে। আপনাকে আজ ছেড়ে দিলাম নেক্সট টাইমে যেন এমন না হয়। হলে আপনাকে কিন্তু আর ছেড়ে কথা বলব না। আজ কিছু বললাম না ”

বলেই দম নিলো মিনু। সামনে থাকা আরহাব চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিনু বলে উঠলো, ” কি হলো ওভারে তাকিয়ে আছেন কেন আজব? ”

” আপনার মাথার ঠিক কয়টা স্নায়ু বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে আমাকে বলবেন?”

আরহাবের স্বাভাবিক কন্ঠে মিনু খানিকটা হকচকিয়ে উঠলো।

” মানেহ? ”

“ট্রেনের বাইরে থেকে একজন মেয়ে আপনাকে এই নামে ডাকছিলো তাই ভাবলাম আপনার নামটাই হয়তো এমন উদ্ভট! তাই বলে আপনি একাত্তরের ভাষণ শুরু করবেন! ”

মিনু নাকের পাটা ফুলিয়ে বলল, ” আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন। সাহায্য করছেন বলে এই নয় যে যা মুখে আসে বলে ফেলবেন। ”

আরহাব ঠোঁট দুটো গোল করে শ্বাস ফেলে ধীর কন্ঠে বলল, ” ওকেহ্, ওকেহ্ আপনি আপনার জায়গায় যান আমাকে বসতে দেন। আমি আপাতত ঝগড়া করার মুডে নেই। আমি ক্লান্ত! ”

মিনু পাশের সিটে সরে বসতে বসতে ঠোঁট বেঁকিয়ে বিরবির করে বলল, ” এহহ আমি যেনো বসে আছি উনার সাথে ঝগড়া করতে! নিজেকে কি মনে করে! রানী ভিক্টোরিয়ার জামাই নাকি! হাহ্ ”

আরহাব সিটে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে বলল, ” আপনার ওই টেপ রেকর্ডারের বাজনা যদি আমার কানে আবার আসে তাহলে একদম ঢিল মেরে জানলার বাইরে ফেলে দিবো, চুপচাপ বসে থাকেন ”

মিনু চোখ বড়ো বড়ো করে আরহাবের দিকে ঘুরে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলল, ” আমার মুখ, আমার মন, আমার ইচ্ছে আমি যা মনে চাই তাই বলব কারো যদি সমস্যা হয় সে যেনো নিজ দায়িত্বে জানলা দিয়ে লাফ দেয়। আরেকটা বাজে কথা বললে একদম মুখে স্ট্রেপলার মেরে দিবো। এমন মামলা ঠুকে দেবো না এই জীবনে বাইরের আলো বাতাস খাওয়া লাগবে না। ”

” পাগলের সুখ মনে মনে! ”
আরহাবের কথায় মিনু রাগী দৃষ্টি তে তার দিকে তাকিয়ে বলল,

” আপনি আমার সাথে এতো পাওয়ার দেখাচ্ছেন! আপনি জানেন আমি কে?”

আরহাব সোজা হয়ে বসলো, ” যে নিজেই তার পরিচয় জানে না আমি অসহায় বান্দা কি করে জানবো , আজিব ব্যাপার! ”

” আই এম এ্যা লইয়ার ”

” আমি আগেই বুঝতে পেরেছি আপনি লায়ার। এটা এভাবে ঘটা করে বলার কি আছে ” বলেই আরহাব ঠোঁট চেপে হাসলো।

মিনু দাঁতে দাঁত চাপলো, ” ওটা লায়ার না লইয়ার। মানে উকিল ”

আরহাব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল, ” ওই একই হলো, যেই লাউ সেই কদু ”

” আপনার মাথা ”

” আপনার মুন্ডু ”

বলেই মিনু জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো, আরহাব ও ঠোঁট কামড়ে হেসে পুনরায় মাথা হেলিয়ে দিলো পিছনে।

_________________

অরিত্রা হাঁটছে পাশে প্রাপ্তি, আপাতত ক্লাস করার ইচ্ছে নেই! কেন ইচ্ছে নেই কেউই জানে না তবে ইচ্ছে নেই। হুট করে অরিত্রার চোখ যায় তিন তলায় থাকা লাইব্রেরির দিকে মনে পড়ে যায় সেই অপরিচিত চিঠির কথা। আনমনেই ঠোঁটে ভেসে উঠে স্বল্প হাসির রেখা।

অরিত্রা প্রাপ্তির হাত টেনে লাইব্রেরির দিকে নিয়ে যেতে লাগলো, হুট করেই অরিত্রা হাত চেপে ধরায় হকচকিয়ে উঠলো সে। এক গভীর চিন্তায় মত্ত ছিলো এতোক্ষণ।

” এভাবে গরুর মতো টানছিস কেন? কোথায় যাচ্ছিস? ”
,” গোয়াল ঘরে ”

অরিত্রার অকপটে জবাবে প্রাপ্তি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো তার দিকে। পুনরায় সামনে তাকিয়ে দেখে এটা লাইব্রেরি যাবার রাস্তা। প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হাটতে লাগলো সে জানে আপাতত তারা কোথায় যাচ্ছে।

অরিত্রা লাইব্রেরি তে ঢুকেই প্রাপ্তিকে ছেড়ে এগিয়ে গেলো শেষ কর্নারের বুক শেলফের কাছে। বেগুনি রঙের মলাটের উপন্যাস টা দেখতেই মুখ চকচক করে উঠলো তার। কেমন উত্তেজনা কাজ করছে তার মনে।

অরিত্রা পা দুটো উঁচু করে বইটা হাতে নিয়ে শেষ পৃষ্ঠা উল্টালো, সাথে সাথে চোখের সামনে ভেসে উঠলো কালো রঙের কাগজ। অরিত্রা খুশি মনে কাগজ টা হাতে নিয়ে বইটা তাকের উপর রেখে টেবিলে বসলো।

ধীরে ধীরে কাগজের ভাজ খুলে চোখের সামনে ধরলো অনাকাঙ্ক্ষিত চিঠি টা। পড়তে শুরু করলো তা,..

,_____________

ওগো কৃষ্ণবতী,

কালো রঙের কাগজে সাদা রঙের কালি মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে চেয়েছি। তুমি আমার আধার জগতের স্বল্প আলোর ছটাক। যা দিয়ে আমি নিজেকে খুঁজে পাই।
সময়ের দৈর্ঘ্যে কুড়ি দিন কোনো মহাকাল নয় বটে! তবে, খুব বড় কিছু বিপত্তি ঘটানোর জন্যে কুড়ি সেকেন্ডই ঢের যথেষ্ট! এই কুড়ি দিনে বড় কোনো যজ্ঞ না হলেও বদলে দিয়েছে কারও কারও পৃথিবী; সে তুমি মানো আর না মানো। কুড়ি দিনে সূর্যও ওঠেনি উঠোন পরে, চাঁদও দ্বিধায় ছিল আলো বিলোতে। এমনই অন্ধকার এসে গ্রাস করেছিল গত মাসের শেষ সপ্তাহে।

তবু আমি অপেক্ষায় ছিলাম। কী নিদারুণ উৎসাহ নিয়ে যন্ত্রণাময় সেই প্রতীক্ষা উদযাপন করেছি! কতবার বই উলোট পালোট করে দেখেছি অপেক্ষায় আবার নিজেকে প্রশ্নও করেছি বার বার কার জন্য অপেক্ষা করি আমি? কেউ কি আমায় বেঁধেছে অলক্ষ্যের রঙে? কুড়ি কুড়ি করে কত দিনে মনের এই বহুধায় কত কুড়ি যোজন যোজন দূর সমুদ্র পাড়ি দিয়েছে অচেনা গাঙের তরী, তার হিসেব কেউ না কেউ হয়তো রেখেছে! কারণ, তারই যে কেবল দায়!

একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস স্থবির হয়ে পড়ে রইল বুকের ভেতর, ঘাটের মরার মতো। ঘড়ির কাঁটায় চেপে রইল জগদ্দল পাথর। ঘুমের ঘোরেও টের পাই, সময়েরা আর হাঁটছে না সময়ের ধারাপাত ডিঙিয়ে! সবকিছুই উথাল-পাতাল, ছড়ানো-ছেটানো, এলোমেলো। ঠিক টর্নেডোর পরের অবস্থা! হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টির মতো তোমার আগমনী বার্তায় আবারো সজীব হলো আমার অন্তঃকোণ। তোমাকে স্বাগতম আমার হৃদয় প্রাঙ্গনে। না বলা কথা হবে বহু ক্ষন। বহু কথা জমে আছে হৃদয় আকাশে।

ইতি তোমার অতি অপরিচিত
শ্যামপুুরুষ।

________________

অরিত্রা এই নিয়ে পাঁচ বার পড়লো, ইসস কি সুন্দর বাচনভঙ্গি, কি সুন্দর ভাবনা তার!

অরিত্রা চিঠি টা ভাজ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে কাগজ কলম বের করে খসখস করে কিছু লিখে আবারো ভাজ করে উঠে দাড়ালো। চিঠিটা নিয়ে বইয়ের ভেতর রেখে পুনরায় আগের জায়গায় রেখে দিলো। লাইব্রেরি তে অনেক মানুষ থাকলেও এদিক টায় তেমন কেউ আসে না।

অরিত্রা হাঁটতে হাঁটতে সামনে এসে দেখলো প্রাপ্তি টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে একটা বই উল্টে পাল্টে দেখছে। ওর কাজ ই এটা লাইব্রেরি তে এসে জীবনেও বই পড়বে না কিন্তু একটার পর একটা উল্টো পাল্টা করে ঘাটবে।

” চল যাই, আজ আর ক্লাস করব না, বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে টিউশনি তে যাবো ”

প্রাপ্তি আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাড়ালো, ব্যাগ কাঁধে নিতে নিতে বলল, ” হুম চল, বাড়িতে গিয়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার বাকি আছে ”

বলেই মিটমিট করে হাসতে লাগলো। অরিত্রা তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ ভাবতে লাগলো, এই পাগলের মনে কি কি চলছে আল্লাহ মালুম! ”

চলবে…

[ আজকের পর্বটা কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here