দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_১৩

0
76

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৩
__________________

” অরিত্রা দাঁড়াও”

সদর দরজা দিয়ে বের হতে নিলেই পিছনে থেকে সায়র ভাই ডেকে উঠলো। খাবার খাওয়া থেকে উঠে টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বলল,

” তুমি কি ভার্সিটি যাচ্ছো অরি?”

অরিত্রা ততক্ষণে পিছনে তাকিয়েছে। সায়রের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে একটু ভেবে বলল,

” হ্যা ভার্সিটিই যাচ্ছি ভাই ”

সায়র তাড়া দিয়ে বলল, ” তাহলে তো তুমি আমার সাথে ই যেতে পারো, আমিও তো ভার্সিটিই যাচ্ছি ”

” না ভাইয়া আমি রিকশা দিয়েই চলে যাবো ”

সায়র জোর দেখিয়ে বলল,” বড় ভাইয়ের কথা শুনতে হয় অরি ”

” কিরে সায়র! তোর সোনায় মুড়ানো গাড়ি তে নাকি তুই কাউকে উঠাস না তাহলে আজ অরি কে জোর করে উঠাচ্ছিস কেন হে? ওই দিন এতো করে বললাম, সায়র ভাই আমার তুই তো হাইকোর্টের এদিকেই যাবি আমাকে একটু নামিয়ে দিয়ে আয় না ভাই! এতো তেল মারলাম বান্দার মন গলাতে পারলাম না। সাফ সাফ মুখের ওপর মানা করে দিলো, আমাকে গাড়িতে তুললে নাকি তার গাড়ির টায়ার পান চার হয়ে যাবে, কিরে মাথা মোটা আমাকে দেখতে কি তোর ভুটকি মনে হয়? মীর জাফরের বংশধর কোথাকার! এতো কাজ করে দেই এতো এতো অ্যাসাইন্টম্যান্ট করে দেই আমি এই বান্দার অথচ আমাকে সে সামান্য লিফট দিতে পারবে না। মীর জাফর কোথাকার! ”

লম্বা একটা বক্তব্য শেষ করে মিনু দম নিলো, টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে ঢকঢক করে গিলল পুরো টা। সায়র পকেটে হাত গুঁজে মিনুর দিকে তাকিয়ে বলল,

” তোর ওই টুকু পানিতে হবে না কি রে ভুটকি? আস্ত প্রশান্ত মহাসাগরের পানি দিলেও এক চুমুকে শেষ করে দিবি, হাহ্”

মিনু রাগে গজগজ করতে করতে বলল, ” মাইন্ড ইউর থুতা সায়রার বাচ্চা! তোর থেকে কত বড় আমি জানিস! পড়িস তো মাত্র লাস্ট ইয়ারে আবার আমার মতো প্রফেসনাল উকিলের সাথে এভাবে কথা বলিস! এমন মামলা ঠুকে দেবো না, বিনা বিচারে ফাসি হবে তোর! ”

সায়র দুই হাত তুলে দোয়ার স্টাইলে বলল, ” শকুনের দোয়ায়ে গরু মরে না, আমিন ছুম্মা আমিন ”

অরিত্রা ঠোঁট চেপে হাসছে। সায়র আর মিনুর বয়সের ডিফারেন্ট মাত্র দুই বছর সাত মাসের তাই এদের মধ্যে ঝগড়া সবসময় লেগেই থাকে। অরিত্রার ভীষণ হাসি পাচ্ছে এদের দোয়া আর অভিশাপ দেখে। ঠোট চেপে হাসতে হাসতে ই চোখ গেলো মুনতাসিমের দিকে সাথে সাথে চোখাচোখি হলো দুজনের। তৎক্ষনাৎ অরিত্রা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো সে দিকে। মুখের হাসি সেই কখনই গায়েব হয়ে গেছে। মুনতাসিমের ও ততক্ষণে খাওয়া শেষ। সেও অরিত্রার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো, সেটা দেখে অরিত্রার মাথা দুষ্টুমি চেপে বসলো, সে তৎক্ষনাৎ মুনতাসিমের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে মুখ বাকালো। মুনতাসিম সবে মাত্র পানির মুখে নিয়েছিলো অরিত্রার এহেন কান্ডে পানি মুখে নিয়েই কাশতে কাশতে বিষম উঠে গেলো, কাশতে কাশতে ই অরিত্রার দিকে তাকিয়ে দেখলো অরিত্রার ঠোঁটে কুটিল হাসি সে ভালো ই বুঝতে পেরেছে অরিত্রা এটা ইচ্ছে করেই করেছে তাকে থতমত খাওয়ানোর জন্য।

মুনতাসিমের কাশি দেখে মুনারা আক্তার মুনতাসিম কে আরেক গ্লাস পানি দিয়ে পিঠে হালকা থাপড় দিতে দিতে বলল, ” সাট সাট সাট, এতো তাড়াহুড়ো করো কেন মুনতাসিম, ধীরে সুস্থে খাও ”

মুনতাসিমের কাশি কমলে সে রাগী দৃষ্টিতে অরিত্রার দিকে তাকালো, তাকে তাকাতে দেখে অরিত্রা তৎক্ষনাৎ চোখ ঘুড়িয়ে অন্যদিকে তাকালো, এতোক্ষণ সে মুনতাসিমের দিকে ই তাকিয়ে ছিলো। মুনতাসিম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বিরবির করে বলল,
” বেয়াদব, অসভ্য মেয়ে ”

” সায়র ভাইয়া আপনি কি যাবেন নাকি আমি চলে যাবো, আমার কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে ”

অরিত্রার কথায় তৎক্ষনাৎ সায়র পকেটে থেকে চাবি বের করে বলল, ” চলো চলো এবার সত্যি লেট হয়ে যাবে ”

বলেই চলে গেলো বাইরে। অরিত্রা সবার থেকে বিদায় নিয়ে সেও বাইরে গেলো। সে গিয়ে দেখে সায়র ড্রাইভিং সিটে বসে তার জন্য দরজা খুলে বসে আছে। অরিত্রা উঠে বসতেই সায়র বলে উঠলো, ” দরজাটা জোরে টান দাও, আস্তে দিলে লাগবে না ”

অরিত্রা দরজা জোরে টান দিতেই স্ব শব্দে দরজাটা লেগে গেলো। সায়র সিট বেল্ট লাগিয়ে অরিত্রার টাও লাগিয়ে দিয়েছে, সায়র আগে থেকে ই জানতো অরিত্রা এসব পারে না তাই অরিত্রাকে লজ্জায় না ফেলে সে নিজেই কাজ করে দিলো।

সায়র গাড়ি স্টার্ট দিয়ে প্রায় পনেরো মিনিটের মাথায় ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকলো। অরিত্রা ভার্সিটির গেইটেই নেমে গেলো কারণ ওখানেই প্রাপ্তি তার জন্য অপেক্ষা করে। সায়রের গাড়ি থেকে অরিত্রাকে নামতে দেখে অনেকেই অবাক, তাদের মধ্যে সবচেয়ে অবাক হয় প্রাপ্তি। সে তৎক্ষনাৎ এগিয়ে এলো সে দিকে,

” কিরে অরি তুই এই গাড়ি তে কেনো”

প্রাপ্তির কৌতুহল অরিত্রা বুঝতে পারলো সে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, ” ভাইয়ের গাড়ি তে বোন থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক ”

প্রাপ্তি হাফ ছেড়ে বাচলো, ” ওহ তাই বল, আমার কলিজা খানা তো গলায় আইসা পড়ছিলো”

অরিত্রা হাসলো, প্রাপ্তি একটু এগিয়ে গিয়ে গাড়ির কাঁচে টোকা দিতেই সায়র গাড়ির কাচ নামালো, ” হাই ছাইয়া? কেমন আছেন? ”

সায়র আনমনেই বলল, ” ভালো ” হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই সে প্রাপ্তির দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো দেখে প্রাপ্তি ঠোঁট কামড়ে হাসছে, ক্ষনিকের জন্য সায়র থমকে যায় পরক্ষণেই নিজেকে সামলে মুখে রাগী রাগী ফেইস করে বলল, ” এই মেয়ে কি বললা তুমি? ”

প্রাপ্তি খানিকটা দুরে সরে গিয়ে বলল, ” ছাইয়া বলেছি গো ছাইয়া, মানে হচ্ছে প্রেমিক আর আরো ভালো বোঝার জন্য জামাই বলেছি ইংরেজি তে যাকে বলে হাফপ্যান্ট থুক্কু সরি হাসব্যান্ড। ” বলেই ঠোঁট দুটো চোখা করে চুমু দিয়ে অরিত্রার হাত ধরে ভৌ দৌড়, প্রাপ্তিকে আর পায় কে। দৌড়ে বারান্দায় এসে পেট চেপে হেসে উঠলো প্রাপ্তি। অরিত্রা চোখ বড়ো বড়ো শ্বাস নিয়ে বলল, ” কি ছিলো এটা! ”

প্রাপ্তি হাসতে হাসতে বলল, ” কড়া ডোজের ঔষধ! আহারে বেচারার মুখটা দেখার মতো ছিলো ”

অরিত্রাও হেসে দিলো প্রাপ্তির বাচ্চামি দেখে।

এদিকে সায়র কিছু ক্ষন ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থেকে হুট করে হেসে ফেলল, ” ইন্টারেস্টিং! ”

_____________

মিনু একটা লাগেজ টানতে টানতে নিচে নেমে এসে তৃষা বেগমের সামনে দাঁড়ালো। তৃষা বেগম ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল, ” কিরে কোথাও যাচ্ছিস নাকি মিনু? ”

মিনু হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ” হ্যা গো বড় মা, একটু রাজশাহী যাবো, একটা কাজে একদিনেও হতে পারে দু দিন ও লাগতে পারে। একদম সময় নেই হাতে, দশটায় ট্রেন অলরেডি সাড়ে ন’টা বাজতে চলল ”

বলেই দৌড়ে রান্না ঘরের দিকে গেলো, সেখানে অরুনা বেগম আর মুনারা আক্তার কাজ করছেন, মিনু গিয়ে দাড়ালো দরজায় ” মেঝো মা আর আপন মা দুজনকেই বলছি আমি একটু রাজশাহী যাবো একটা কাজে, দুইদিন সময় লাগতে পারে একদিনেও হয়ে যেতে পারে। হাতে সময় নেই এসে আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিবো, এখন আসি আল্লাহ হাফেজ ”

বলেই দৌড়ে এসে লাগেজ নিয়ে সোজ সদর দরজার বাইরে। বাহিরে এসে দেখে একটাও গাড়ি নেই, তাদের চার চারটা গাড়ি থেকেও একটাও নেই এখানে কি কপাল! নিজের কপাল নিজে চাপড়ে রাস্তায় বের হলো, ভাগ্য সহায় ছিলো বলেই হয়তো দাড়ানোর সাথে সাথে ই সিএনজি পেয়েও গেলো, সোজা ট্রেন স্টেশন।

মিনু লাগেজ টানতে টানতে নামিয়ে সিএনজি ভাড়া দিতেই মিনুর সামনে কেউ এসে দাড়াতেই মিনু বত্রিশ টা দাঁত বের করে জড়িয়ে ধরে বলল, ” আমার জানু মনু! আমি জানতাম তুই আসবি, কই আমার টিকেট কই জাফু? ”

জাফরিন রাগী দৃষ্টি তে তাকালো মিনুর দিকে, মিনুর এখানে থাকার কথা ছিলো সাড়ে ন’টায় এখন বাজে সমান দশটা ভাগ্য ভালো এটা বাংলাদেশ, নয়তো আজ পাক্কা ট্রেন মিস করতো এই মেয়ে।

জাফরিন মিনুর কলেজ লাইফের বান্ধবী। মিনুই কাল জাফরিন কে ফোন দিয়ে টিকেট কাটতে বলেছিলো, নাকের ডগায় দম নিয়ে কাজ করা মিনুর স্বভাব। অনলাইনে টিকিট না পেয়ে ব্ল্যাকে কিনতে হয়েছে তাকে কিন্তু এই ব্যাপারে জাফরিন মোটেও রেগে নেই, রাগ হলো এই মেয়ের টাইম সেন্স নিয়ে, তাও সে আবার উকালতি পড়ছে, ভবিষ্যতে কি আছে ভাগ্যে খোদা জানে!

” কিরে দে টিকিট! ”

” ক’টা বাজে? ”

মিনু জাফরিনের হাতে ঘড়ি দেখতে পেয়ে বলে, ” তোর হাতে তো ঘড়ি আছেই দেখে নে, নাকি টাইম নষ্ট ? ”

জাফরিন কথা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ” কানের গোড়ায় ঠাস ঠাস করে দিলে তোর বাঁদরামো বের হবে মিনু”

হুট করে মিনু জাফরিন দুজন ই ট্রেনেই হুইসেল শুনতে পেলো মানে ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে। মিনু আর জাফরিন দুজন দু’জনের দিকে তাকিয়ে জাফরিনের হাত থেকে টিকিট নিয়ে ছুট লাগালো সে দিকে। মিনু লাগেজ নিয়ে দৌড়াতে হিমসিম খাচ্ছে তাও প্রান পনে ছুটে চলছে।

মিনু যতক্ষণে ট্রেনের কাছে এলো ততক্ষণে ট্রেন চলতে শুরু করেছে, মিনু স্টেশন দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে নিজে উঠতে পারছে না, ততক্ষণে ট্রেন ভালোই চলছে, দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে মিনুর রাগ হলো, জোরে চেচিয়ে বলল, ” আরে কানা ধর আমারে নয়তো পড়ে যামু ”

ছেলেটা ততক্ষণে হাত বাড়িয়ে দিতেই নিজের লাগেজ দিলো, ছেলেটা সেটা রেখে আবার হাত বাড়াতেই মিনু উঠে এলো, এতো লম্বা স্টেশন পুরোটা সে দৌড়ে ই পার করলো। হাপাতে হাপাতে বাহিরে তাকাতেই জাফরিন কে দেখতে পেলো, মিনু তাকাতেই জাফরিন চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, ” সাবধানে যাস মিস ফকিন্নি ”

মিনুও মুচকি হেসে বিদায় জানালো। মিনু দরজা দিয়ে ঢুকতে ই ছেলেটাকে নজরে এলো তার তামাটে বর্ণের সুদর্শন পুরুষ কে দেখে মনে হলো এই ছেলেই তাকে উঠতে সাহায্য করেছে, মিনু মুচকি হেসে লাগেজ নিয়ে এগিয়ে এসে বলল, ” ধন্যবাদ আপনাকে। ঐ সময় মাথা ঠিক ছিলো না তাই ওভাবে বলেছি ”

বলেই ভেতরে চলে গেলো। আরহাব ভ্রু কুঁচকে তাকালো সে দিকে, মনে মনে ভাবলো, ” এতো সুন্দর একটা মেয়ের নাম কেউ ফকিন্নি রাখে নাকি! অদ্ভুত! ”

বলেই সেও ভেতরে গেলো নিজের সিট খোঁজার জন্য, টিকিট দিয়ে নিজের সিট খুজে বের করতে ই দেখলো তার সিটে কেউ বসে আছে, সে আর কেউ না তখন কার সেই মেয়েটি। মেয়েটা কানে হেডফোন গুঁজে আরামসে গান শুনছে।

” এই যে মিস ”

মিনু শুনতে পায় নি, তাই আরহাব আরেকটু জোরে বলল, ” এই যে মিস শুনতে পাচ্ছেন? ”

মিনু তবুও শুনতে পেলো না দেখে আরহাব বিরক্ত হয়ে মিনুর কান থেকে হেডফোন খুলে খানিকটা চিৎকার করেই বলল,

” এই যে মিস ফকিন্নি, আপনি আমার সিট দখল করে আছেন, আমাকে আমার সিট ফিরিয়ে দিন ”

আরহাব লক্ষ্য করলো, মিনু সহ ট্রেনের অধিকাংশ যাত্রী তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আরহাব খানিকটা লজ্জায় পড়ে গেলো। মিনু নিজের নামের এমন বিকৃতি শুনে রাগে গজরাতে গজরাতে উঠে দাড়ালো।

চলবে..

[ আজকের পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন আর সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here