শ্রাবনে_প্রেমের_হাওয়া। #লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা। #পর্বঃ৩

0
121

#শ্রাবনে_প্রেমের_হাওয়া।
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ৩

— আপনার ঠোঁটটা এভাবে লাল লিপস্টিক দিয়ে ভরে রেখেছেন কেন মিস অর্থি। ন্যাচারাল রাখা যায়না?
এনগেজমেন্টের দিন ওমরের এরুপ কথা শুনে ড্রয়িং রুমের সবাই হা হয়ে ওমরের দিকে তাকিয়ে রইলো যেন। সবথেকে বেশি বিষম খেয়ে গেল অর্থি। যার উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা ছুঁ’ড়েছে ওমর। কি বলবে, না বলবে, খুঁজে পেল না যেন সে। রাগে সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁ’পছে যেন তাঁর।
—হোয়াট?
— সোজা কথা বুঝেন না নাকি? এত মেকআপ করেছেন যে, যারজন্য আসল ফেইস বুঝে ওঠা দুর্লভ হয়ে পরেছে। বিয়ের আগেই এত মেকআপ দিয়ে ভুত সাজার কি আছে বুঝলাম না ঠিক।
ওমরের কাকা রেদোয়ান সাহেবের ঘাম ছুটে যাচ্ছে যেন ওমরের এরমধারা কথা শুনে। বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন তিনি যে, ওমর বিয়েটা ভে’ঙে দেওয়ার জন্য এসব আজ’গুবি বুলি আওরাচ্ছে অর্থির সামনে। রায়ানুল সাহেবের পছন্দ করা পাএী অর্থির সাথে ওমরের এনগেজমেন্ট করাতে ওমর ঢাকায় এসে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই রেদোয়ান সাহেব উমরকে নিয়ে অর্থিদের বাসায় হাজির হয়েছিলেন তাঁর পরিবার সমেত। কিন্তু এখানে এসেই যে ওমর আবারও ফ্লাট করা শুরু করে দেবে এটা সে ভাবেনি। অথচ অর্থির সাথে রায়ানুল সাহেব ওমরের বিয়ে পর্যন্ত ফিক্সড করে রেখেছেন। ব্যাপারটা ম্যানেজ করার জন্য রেদোয়ান সাহেব মৃদু হেসে পকেট থেকে সাদারাঙা রুমালটা বের করে কপালের ঘামটুকু মুছে নিয়ে অর্থির দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললেন।
— ওর কথায় কিছু মনে করবে না মা। ও এই রকমই৷ আজ বাদে কাল তোমাদের বিয়ে হবে। তো দুজনে একটু আলাদা কথা…
— চা বানাতে পারেন? রেদোয়ান সাহেবের পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই ওমরের প্রশ্নে চোখমুখ কুঁ’চকে ফেলল যেন অর্থি। বড়লোক বাবার একমাএ মেয়ে অর্থি। চা করা তো দূর। রান্না ঘরে পা রেখেছে কিনা কোনোদিন, সেটাই বোধগম্য করতে পারছে না সে। এক পলক নিজের ড্যাডের দিকে তাকালে চোখ দিয়ে ইশারা করে থামতে বললেন তিনি অর্থিকে।
— আমি আর চা? আর ইউ ক্রেজি ওমর। ড্যাড তুমি আমাকে চুপ থাকতে বলছো কেন? আমার সম্পর্কেও তো ওমরের জানা উচিত। আফটারঅল সারাটাজীবন থাকতে হবে আমাদের একসাথে। অর্থির কথা শুনে বাঁকা হাসি হেসে উঠলো ওমর। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলে ওমরের কাজিন অপু আর অর্পা দুজনে মিলে মিটিমিটি করে হাসছে যেন। ওমরকে তাঁরা আগেই বলে রেখেছিল যে, তাদের অর্থিকে পছন্দ হয়নি। তাইজন্য ওমর এত কাহিনী করলো অর্থির সাথে।
—কিরে ওমর, দাঁড়িয়ে পরলি যে বড়। এনগেজমেন্টের রিংটা পড়িয়ে দে এবার। রেদোয়ান সাহেবের দিকে দৃষ্টিস্থির করলে তাঁর হাতে থাকা ডায়মন্ডের রিংটা হাতে নিয়ে পকেটে পু’রে নিয়ে শীতল কন্ঠে বললো ওমর।
— এনগেজমেন্ট পরে হবে। আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে চাচ্চু। আমি আসছি। কথাটা বলেই ওমর রুম থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলে রেদোয়ান সাহেব যেন ল’জ্জায় পরে গেলেন নিজের ভাইপোর আচারনে।
.
ঘুম থেকে উঠে সকাল-সকাল কফি না পেয়ে রাদিফের বড় বোন লাবনি চিৎ’কার চেঁ’চা>মে’চি জুড়ে দিল যেন বাড়িতে।
— এখন কি নাজ মহারানীর পা ধরে কফির অর্ডার করতে হবে নাকি। এমনেই সারাটারাত ঘুমাতে পারিনি ঠিকঠাক ভাবে। আম্মা চলে গেছেন বলে কি মহারানীর রোজকার রুটিন পাল্টে গেল নাকি? কথাগুলো বলতে- বলতে বিছানা ছেড়ে রান্না ঘরে এসে নাজকে না দেখতে পেয়ে চোখ মুখ শক্ত করে ফেলল যেন লাবনী মনে-মনে ঠিক করলো, আজ একটা জব্বর শা’স্তি দিবে নাজকে সে।
লাবনীর চেঁ’চামে’চি’তে রাদিফের ঘুম ভে’ঙে গেল যেন। সকাল-সকাল বোনের চিৎ’কার শুনে মে’জাজটা কেমন বিগড়ে গেল যেন তাঁর। বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল রাদিফ।
এদিকে লাবনীও এসে হাজির হলো রাদিফের রুমের সামনে। নাজকে না দেখতে পেলে বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলে কিছুক্ষণ পর রাদিফ ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসলে খানিকটা উঁ’কি দিল সেদিকে লাবনী। দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে ক’ট>ম’ট কন্ঠে বললো।
— তোর বউ কই। আমার কফির কথা কি ভুলে গেছে সে, নাকি? লাবনীর কথায় রাদিফের থেকে যেন কোনো প্রতিত্তর আসলো না। আলনায় নাজের হাতে গোছানো টাওয়ালটা নিয়ে মাথাভর্তি ভেজা চুলগুলো মুছে নিয়ে নীল রাঙা শার্ট পরতে-পরতে এবার মুখ খুললো যেন সে।
— তাড়িয়ে দিয়েছি আ’পদটাকে৷ নিজের কফি নিজে করে নেও এখন। আমারও একটা লাইফ আছে আপা৷ আমারও সুখী থাকতে ইচ্ছে করে। রোজকার নাজ নামক এই অ’শান্তি আর ভালো লাগে না। অফিস যাচ্ছি আমি, বাহিরে খেয়ে নেব। তুমি নিজের খাবার নিজে করে নিও। কথাটা বলতে-বলতে চুলগুলোতে সাই দিতে-দিতে অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেল রাদিফ। লাবনী যেন রাদিফের কথায় চোখমুখ বিকৃ’ত করে ফেলল। এক দিক থেকে ভালোও লাগছে এটা ভেবে যে, নাজ নামক গ’লার কাঁ’টাটা বিদায় হয়েছে। অপরদিকে এই রান্না-বান্নার কথা চিন্তা করে ক’ষ্টও লাগছে। নিজে-নিজেই রাদিফের উদ্দেশ্যে আওরাতে থাকলো সে।
— এখন এই এত-এত রান্না-বান্না, বাসন মাজা, এগুলো করবে কে? তুই করবি। আল্লাহ না করুক নাজের রান্নার হাতটা তো চমৎকার ছিল। বউ না হোক, বাড়ির আয়া করে তো রাখতে পারতি! ছা’গল যেন কোথাকার। কথাগুলো বলতে-বলতে চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল লাবনী।
.
সন্ধ্যা নামিয়ে নামলো তুমুল ঝড় বৃষ্টি। সারাটাদিন পুরো ঢাকার শহরে সাই দিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে ওমর। অনেক বছর পর নিজ শহরে পা পরেছে যে তাঁর। ওমরের জন্ম ঢাকাতে হলেও সিলেটে ঘুরতে যাওয়ায় ফিরতি পথে একটা রোড এক্সি’ডেন্টে ওমরের মা মিনারা বেগম মা’রা যাওয়ায় রায়ানুল সাহেবের সিলেটের প্রতি একটা পিছুটা’ন রয়ে গিয়েছিল। যার কারন সরুপ রায়ানুল সাহেবের সিলেট নিবাসে বাড়ি কেনা। কিন্তু কাজের খাতিরে রায়ানুল সাহেব বিদেশেই নিজের বিজনেস করেন বর্তমানে।
“তুমুল বেগে বর্ষনপাত হতে থাকলে হালকা মিউজিক প্লে করে দিল ওমর।

~কেন রোদের মতো হাসলে না,
আমায় ভালো বাসলে না
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না….

গানের মাঝখানে ফোনটা বেজে উঠলে বিরক্ত হলো যেন ওমর। পাশের সিটের উপর থাকা ফোনটার স্কিনের দিকে তাকিয়ে ড্যাড লেখা দেখে শুকনো ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিল ওমর। কানে ব্লুটুথ গুঁ’জে নিয়ে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ওপাশ থেকে রায়ানুল সাহেবের কন্ঠ শোনা গেল।
— এনগেজমেন্ট না করে তুমি ও বাড়ি থেকে চলে এসেছো নাকি ওমর? রায়ানুল সাহেবের থ’ম>থ’মে কন্ঠস্বর শুনে মৃদু হাসলো ওমর। গম্ভীর কণ্ঠে বললো সে।
— আমি এ বিয়ে করছি না ড্যাড। ওমরের কথা শুনে যেন বিরক্ত হলেন রায়ানুল সাহেব। দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে শান্ত স্বরে বললেন।
— দেখো ওমর। আমি সবকিছু ফিক্সড করে ফেলেছি৷ অর্থির বাবার কত সম্পত্তি, কত প্রপার্টি আছে তুমি জানে? সব তোমার হবে। অর্থির সঙ্গেই তোমার বিয়ে হচ্ছে। আর আমি কথা দিয়ে ফেলেছি অর্থির বাবা সমরেশকে।
—সেটা তোমার প্র’বলেম ড্যাড। এখানে আমার কিছু করার নেই। তুমি জানো, মেয়েটা সামান্য চা অব্দি করতে জানে না। তাঁর যেমন স্টাইল, তেমন তাঁর কথাবার্তা। আমি এমন মেয়ে পছন্দ করিনা ড্যাড।
—কিন্তু…
— লাইফটা আমার ড্যাড। মানসিক শান্তি বলেও একটা কথা আছে জানোতে? যেটা আমি আম্মা মা’রা যাওয়ার পর থেকে সেই ছোটবেলা থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। একটা কথাকি জানো? তুমি আমাদের মাঝে কখনো ছিলেই না, তোমার সবকিছুর আগে টাকা, প্রপার্টি, বাংকব্যালেন্স, এসবই মিশে রয়েছে। কিন্তু সামান্যতম ভালোবাসা তোমার মাঝে নেই।
কথাগুলো বলেই ফোনটা কেঁ’টে দিলে ওপাশ থেকে রায়ানুল সাহেব যেন থ’ম মে’রে দাঁড়িয়ে গেলেন নিজের ছেলের কথা শুনে। চোখদুটি ছলছল করে উঠলে তাঁর এসিস্ট্যান্ট জেরিন বলে উঠলেন।
—স্যার আপনার মিনিংটা কখন শুরু করবেন?
— আজ ক্যান্সেল করে দেও। অন্য একদিন। শীতল কন্ঠে কথাটা বলেই গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলেন রায়ানুল সাহেব। ছেলের কথাটায় হয়তো কোনো না কোনো ভাবে আ’ঘাত হেনেছে তাঁকে।
.
একরাশ কান্না নিয়ে ট্রেন স্টেশনের বেঞ্চির উপর বসে রয়েছে নাজ। চোখদুটি বেয়ে ঝড়ে পরেছে তাঁর আষারের তুষারপাত। আজ সারাটাদিন এই ট্রেন স্টেশনে কাঁ’টিয়েছে সে। বাড়ি ফেরার মতো দুঃশা’হস তাঁর আর হয়ে উঠলো না মেহরুম বেগমের ফোনকল পেয়ে।
সকালে বাস থেকে নেমে সিএনজি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলে হুট করেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ফোনকল এসেছিল তাঁর। মেহরুম বেগম এখনও অব্দি সুলেখা বেগমের মৃ’ত্যুর কথাটা জানেন না। একপ্রকার ভাবে নাজ ইচ্ছে করেই জানায়নি তাঁর মাকে। চরম আনন্দে উৎকন্ঠার স্বরে বলেছিলেন তিনি।
— কেমন আছিসরে আম্মা আমার। জানিস, অনেক দিন পর তোর কথা খুব করে মনে পরেছে আমার। কিরে ওদিকে সব ঠিকঠাক তো। আমার বুকের ব্যা’থাটাও কমে গেছে বুঝলি। ডাক্তার বলেছে স্ট্রেস না নিতে। তাহলে নাকি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাব। মেহরুম বেগমের কথাটা শোনা মাএ চোখ বেয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরেছিল নাজের। নিশ্বব্দে কেঁদেছে শুধু সে। মেহরুম বেগম সত্যিটা জানলে হয়তো ধা’ক্কাটা নিতে পারবেন না। তাই বুকে পাথর চে’পে সত্যিটা আড়াল করে মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলেছিল।
—এদিকে সব ঠিক আছে।
—তোর গলাটা আজ কেমন যেন শোনাচ্ছে নাজ। মেহরুম বেগমের কথায় হেসেছিল শুধু নাজ। বলেছিল।
— আমাদের এখানে না,খুব ভালো নাটক হয় জানেতো আম্মা। তাই ইমোশনাল হয়ে গেলাম আরকি। কথাটা বলেই ফোনটা কেঁ’টে দিয়ে বিতৃ’ষ্ণা’র সহিত চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলল সে।
.
দীগন্ত আজ বর্ষনের উল্লা”সে মে’তে উঠেছে যেন। বিদ্যুৎ চমকানোর সহিত প্রখর বর্জ’নপাতে ধরনীতে এসে বা’রি খেয়ে যাচ্ছে যেন। আকাশের কোলে ঘেঁষে আপনমনে ভেসে চলা কালোরাঙা মেঘদ্বয় গুলো যেন আজ নাজের মতো বিষ’ন্ন পরে রয়েছে আকাশপারে।
হাতের উল্টো পিঠে চোখের৷ পানি মুছে ফেললেও আবার যেন এসে হু’মরি খেয়ে পরছে তাঁর চোখের কোনে।
“রাত এখন ১২ নাগাদ। ট্রেন স্টেশনের সামনে দিয়ে গাড়ি পার্কিং করতে নিতে অচেনা এক অনুভূতি ঝঁ’কে বসলো যেন ওমরকে।” হুট করেই গাড়িটা থামিয়ে দিলে নিজেই অবাক হলো নিজের এরুপ কান্ড দেখে। হৃৎস্পন্দনের গতি বাড়তে থাকলে বুকের বাম পাশে শীতল হাতের স্পর্শ ছোঁয়ালে বুকের মধ্যকার ছন্দের হাড়ে ধুকপুক আওয়াজের সহিত কারো মৃদু কান্নার রেশ কানের কাছে এসে পৌঁছাতে ভ্রুদ্বয় কি’ঞ্চিৎ পরিমান ভা’জ হয়ে এলো ওমরের। চার পাঁচেক নিশ্বাস টে’নে নিল ওমর। গাড়ির কাঁচটা নামিয়ে দিলে বাহিরের বর্ষনপাতের রেশ ওমরের চোখেমুখে এসে উ’পচে পরতে থাকলো যেন। ট্রেন স্টেশন পুরো জনশূন্য। ভাবা যায়, ঢাকা শহরে এত জনশূন্য ট্রেন স্টেশন। হয়তো বৃষ্টি পাতের কারনে এমন। হঠাৎ করেই চোখটা আঁ’টকে গেল ট্রেন স্টেশনে বসে থাকা মেয়েটাকে দেখে। হলুদরাঙা ল্যামপোস্টের মৃদু আলোয় কালো রাঙা বোরকা পরিহিত মেয়েটাকে দেখে অবাক হয়ে গেল যেন ওমর। মুখ থেকে বেড়িয়ে আসলো শুধু অস্পষ্ট কন্ঠের রেশ।
—বোরকাওয়ালি…! কিন্তু এত রাতে এই নির্জন জনশূন্য ট্রেন স্টেশনে বসে করছেনটা কি তিনি। আবারও বিষ্ম’য় খেল যেন ওমর।
ছাতা বীহিন গাড়ি থেকে নেমে পরে বৃষ্টিতে ভিজতে-ভিজতে ধীর পায়ে এসে নাজের পাশে বসে পরলো ওমর। নাজ তাঁর উপস্থিতি টের পেয়েছে কিনা, ঠিক বোধগম্য হলো না ওমরের। পিনপ’তন নীরাবতা ফেলে দিয়ে পকেট থেকে টিস্যু বের করে নাজের সামনে ধরে ধীর কন্ঠে বললো।
—আপনার প্রয়োজন হবে।
নাজ খানিকটা চুপ থেকে আশপাশ খেয়াল না দিয়ে টিস্যু পেপারটা হাতে নিয়ে নাক মুছতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো যেন। ঘোরের মধ্যে রয়েছে যেন সে।
নিমেষেই ভ্রুদ্বয় কুঁ’চকে ফেলল যেন ওমর।এই প্রথমবারের মতো ওমরের খেয়ালে আসলো নাজ নেকআপটা উপরে উঠিয়ে রেখেছে। কিন্তু পাশ ফিরে বসে থাকায় চেহারাটা দেখতে পারলো না সে।
বুকের মাঝে অদ্ভুত এক জ্বা’লার অনুভব করতে পারলো যেন ওমর। মেয়েটার কান্নভেজা মুখশ্রী না দেখলেও মনের মাঝে কেমন ঝড় তুলে দিয়েছে তাঁর। ধীর কন্ঠে নাজের উদ্দেশ্যে বললো।
— আপনি একা এই ফাঁকা রেলস্টেশনে কি করেন মিস? ওহ সরি, মিসেসও হতে পারেন। ওমরের কন্ঠস্বর শুনে ঘোর কাঁ’টলো যেন নাজের। পাশ ফিরে তাকিয়ে অচেনা কাউকে দেখে ভ’রকে যাওয়ারই কথা। ভয়া’র্ত দৃষ্টি নিয়ে ওমরের দিকে নিক্ষেপ করে বিরবির করে অ’স্পষ্ট স্বরে বললো।
— টিস্যু দেওয়া জন্য থ্যাংকস।
নাজের গোলাপিরাঙা মসৃণ মুখশ্রী দেখার সৌভাগ্য হলো যেন এবার ওমরের। কিন্তু হৃদয় মাঝারে কেমন পু’ড়ে উঠলো যেন তাঁর। এ যেন এক অদ্ভুত পিছুটান। চোখদুটি কেমন ফুলে লাল টমেটো হয়ে আছে। ফ্যা’কাসে মুখ দেখে মনে হয়না সারাদিন কিছু পেটে পরেছে না মেয়েটার। নিজেকে সামলে নিয়ে ধীর গলায় বললো।
— আপনার কি গ’লায় প্রব’লেম? ব্যাঙ ঢুকেছে নাকি? না মানে জোড়ে কথা বলতে পারেন না। নাজ চোখদুটি নামিয়ে রেখে হাতে থাকা টিস্যুটা নিয়ে মো’ড়া>মো’ড়ি করতে থাকলে ওমর পকেট থেকে আরও একটা টিস্যু বের করে নাজের দিকে এগিয়ে দিয়ে আদেশের স্বরে বললো।
— নোং’রা টিস্যু ফেলে দিন। নাজ ওমরের দিকে দৃষ্টিপাত না করেই ওমরের হাত থেকে টিস্যুটা নিয়ে আবারও ধন্যবাদ জানালে ওমর কিছু একটা ভেবে বেঞ্চি থেকে উঠে চলে গেলে, সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ দেখাল না নাজ। তাঁর বুকের মাঝে এখন হাজারো দীর্ঘশ্বা’সের মেলা বসে গেছে যেন। মাথার মাঝে একটা জিনিসই ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে তাঁর।
—রাদিফকে যদি ফিরে পেতাম। সেও যদি তাঁকে এক টু’করো ভালোবাসা দিত। তাহলে কি খুব বেশি অ’পরাধ হয়ে যেত। কিন্তু আফসোস, রাদিফ নিজেই তো ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে।
— পানিটা নিন। নিজের যা হাল করেছেন আপনি। আচ্ছা আপনি না সিলেট থেকে ঢাকা এসেছেন আজ সকালে। আপনার পাশের সিটেই ছিলামতো। দেখেননি আপনি আমাকে? ওমরের প্রশ্নে তাঁর দিকে ড্যা’ব>ড্যা’ব করে তাকিয়ে রইলো নাজ। কেন জানিনা তাঁর এখন ওমরকে দেখে ভয় হচ্ছে না। তবে ভরসার একটা স্থান খুঁজে পেয়েছে বলে উপলব্ধি করতে পারছে সে। ওমরের হাত থেকে বোতলটা নিয়ে চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে একঢোকে পুরো পানিটা শেষ করলো নাজ।
মৃদু হাসলো শুধু ওমর। শীতল কন্ঠে নাজের উদ্দেশ্যে বললো।
— আপনার নামটা। এবারের প্রশ্নটাতে থ’মকে গেল যেন নাজ। ওমরও নাজের বিভ্রা’ন্তিবোধ উপলব্ধি করতে পেরে পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে নাজের সামনে ধরতে পিটপিট করে ওমরের দিকে তাকাল সে। কয়েকটা ঢোক গি’লে ধীর কন্ঠে বললো।
— নাজ, তাসফিয়া তেহনুব নাজ…..

চলবে….

(আসসালামু আলাইক। তারাহুরোই রি-চেক দিতে পারেনি,তারজন্য ভু’ল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং।🖤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here