প্রেমের_প্রদীপ_জ্বলে [৩৬] প্রভা আফরিন

0
683

#প্রেমের_প্রদীপ_জ্বলে [৩৬]
প্রভা আফরিন

কথিত আছে, বেশি হাসলে কাঁদতে হয়। তাই যেন ফলে গেল দীপশিখায়। হাস্যজ্জ্বল দীপশিখার প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর খুশির প্রদীপটি আকস্মিক দাবানলে পরিণত হলো। বাড়ির বড়ো ও সবচেয়ে বুঝদার সন্তানটি গতকাল গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা বলে দুপুরে বেরিয়ে যায়। এরপর তার সঙ্গে আর কারো যোগাযোগ হয়নি। নিশান্ত বারন করেছিল যেন যোগাযোগ না করে। সে নিজেই ফোন করবে। কিন্তু নিশান্ত আর ফোন করেনি। বাড়ির কেউ তার অপারেশন সম্পর্কে জানত না। স্বাভাবিকভাবেই অপারেশনের কথা গোপন রেখেই কাজ করে ওরা। সকালে যখন সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল কোরের নিশান্তের বন্ধুর কাছ থেকে তার বর্তমান অবস্থা জানিয়ে ফোন এলো, বাড়ির সকলে স্তব্ধ হয়ে গেল।

প্রতিরক্ষা অধিদপ্তরের স্পেশাল ট্রেইনড করা ও বাছাইকৃত চৌকস কর্মকর্তাদের নিয়ে তৈরি সুপার স্পেশালাইজড টিমকে তৈরি করা হয়েছে দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ শত্রুদের দমন করার জন্য। তাদের ইন্টেলিজেন্স দলের কাজ শত্রুর ব্যাপারে ইনভেস্টিগেট করা। অন্য দলটি ময়দানে নামে যখন চূড়ান্ত একশন নিতে হবে। অর্থাৎ সরাসরি অ’স্ত্র যু’দ্ধ। নিশান্ত সেই চূড়ান্ত দলে নিজের যোগ্যতার প্রথম মহড়া দিতে যুক্ত হয়েছিল। লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওসমানীর নেতৃত্বে গতকাল টেকনাফে একটি নাশকতাকারী দলের ওপর তারা অপারেশন পরিচালনা করে। দলটি বার্মা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে অস্ত্র পাচার করত। টেকনাফে আস্তানা গেড়েছিল বেশ কয়েকবছর ধরে। তারা নিজেদের অবস্থান সন্দেহমুক্ত রাখতে নিজেদের ঘাঁটির বাইরে, দেশের অন্যান্য অঞ্চলে নাশকতা করার চেষ্টা করেছে কয়েকবার। পুলিশ কিংবা র‍্যাব তাদের ধরতে পারছিল না। দলটির সর্ববৃহৎ উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড়ো একটি নাশকতা করে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা। সুপার স্পেশালাইজড টিম মাসখানেক ধরে হন্য হয়ে এই দলটিকে খুঁজে বের করে এবং অপারেশনের নীলনকশা প্রণয়ন করে। অবশেষে গতকাল মধ্যরাতে আকস্মিক ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুদের ওপর। প্রতিপক্ষের পালটা আ’ক্র’মণও ছিল জোড়ালো। পাহাড় সংলগ্ন সবুজে ঘেরা স্নিগ্ধ শীতল পরিবেশ হঠাৎ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল অ’স্ত্রের হাড় হিম করা শব্দে। নিদ্রায় নিঝুম বনের শান্তি বিনষ্ট হওয়ায় প্রকৃতির নিরীহ প্রাণীরা হুলুস্থুল বাঁধিয়ে ছোটাছুটি করে পালাচ্ছিল। মধ্যরাত থেকে সকাল অবধি চলা সেই অপারেশনে প্রতিপক্ষের সকলেই মারা পড়েছিল। তবে শত্রুরা ছিল বেপরোয়া। তারা বন্দি হবার বদলে প্রাণঘাতী হতেও পিছপা হয় না। তেমনই প্রাণঘাতী, উগ্র সদস্যের গু’লিতে একজন মেজর নিহত হয়। আহত হয় দুইজন ক্যাপ্টেন ও কর্ণেল। তাদের হেলিকপ্টারে করে দ্রুত সিএমএইচে নেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে, না’শকতাকারী দলের মূলহোতা পলাতক ছিল। মাস্টারমাইন্ডগুলো বেশিরভাগ সময়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে ইশারায় কার্য সম্পাদন করে। তবে ‘এসএসটি’ সদস্যারাও রক্ত দিয়ে তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে সক্ষম হয়। উদ্ধার করে বিপুল পরিমাণে এক্স’প্লো’সিভ ও অবৈধ অ’স্ত্রের ভাণ্ডার।

আহত সদস্যদের একজন হলো ক্যাপ্টেন নাফিউন আজাদ নিশান্ত। শান্তিরক্ষী মিশনে দক্ষিণ সুদান থেকে সদ্য মিশন শেষ করে আসা এই চৌকস কর্মকর্তা তার প্রথম অপারেশনেই জীবন বাজি রেখে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাকি তিন সদস্যের মতোই সীমাহীন সাহসের পরিচয় দিয়েছে। আহত তিনজনের মধ্যে কর্ণেল ওসমানীর অবস্থা সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। কেননা বু’লেট উনার বুকে লেগেছে। উনার ওপর কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করা হবে। নিশান্তও গুরুতর আহত। শান্তিরক্ষী মিশনে আহত হয়ে নিশান্তের পিঠের শিরদাঁড়ায় আগেই একটি চোট ছিল। এবার আহত হয়ে সেটা গুরুতর হয়েছে। ডান হাত জখম হয়েছে। সেখানে অস্ত্রোপচার করা হবে।

ছেলের খবর পেয়েই অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার আশরাফ সাহেব ফ্লাইটে করে চট্টগ্রাম যেতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। তখন জানানো হলো আহতদের ওপর অস্ত্রোপচার করা ও উন্নত চিকিৎসার সুবিধার্থে হেলিকপ্টারে করে তাদের ঢাকায় আনা হচ্ছে।

সেনা পরিবারের সদস্যরা বরাবরই শক্ত প্রাণের হয়। একজন সেনা যেমন দেশের তরে নিজেকে উৎসর্গ করে, তেমনই তার পরিবারও বুকে পাথর চেপে নিজেদের আপন মানুষটাকে ত্যাগ করে। এরপর এক একটা দিন পার করে শঙ্কা, ভয় ও উৎকণ্ঠায়। তাদের প্রস্তুত থাকতে হয় আপনজনের যেকোনো সংবাদ শোনার জন্য। দীপশিখার সদস্যরা সকলেই শক্ত প্রাণের মানুষ। চাঁদনি বেগমের স্বামী ছিলেন একজন আদর্শবান পুলিশ ও মুক্তিযোদ্ধা। দেশের তরে প্রাণ উৎসর্গ করে তিনি বহু আগেই চাঁদনি বেগমকে শক্ত করে গেছিলেন। চাঁদনি বেগম নিজেও একজন সৈনিক। দুই ছেলেকে একা হাতে সামলেছেন। সেই সঙ্গে নিজের ব্যবসাটারও হাল ধরেছেন। এরপর উনার ছেলেরা বড়ো হলে একজন বাবার মতোই দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। ছোটোজনের কাঁধে ব্যবসা তুলে দিয়ে চাঁদনি বেগম যেই না হাঁপ ছাড়তে যাবেন, অমনি ছোটো ছেলেটা মারা গেল। আরেকটি মৃত্যু চাঁদনি বেগমের সত্তাকে কাঁপিয়ে দিলো। তবে তিনি ভেঙে পড়লেন না। জীবনের যাতাকলে পিষতে থাকা মানুষগুলো প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হয়েও টিকে থাকে। তাদের শ্বাস সহজে দেহের মায়া ছাড়ে না। চাঁদনি বেগমও টিকে রইলেন। প্রয়াত ছেলের দুই মেয়েকে আগলে নিলেন বুকে।

আজকের দীপশিখা মহল হাস্যজ্জ্বল হলেও এর প্রতিটি মানুষ শক্ত প্রাণের। বাড়ির বড়ো বউ আফিয়াকে সবচেয়ে নিরীহ সাংসারিক মানুষ মনে হলেও তিনি সেই অল্পবয়সে বিয়ে হয়ে এসেই স্বামীর বিপদজনক পেশার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিলেন। যৌবনের সুন্দর দিনগুলোয় তিনি স্বামীকে কাছে পাননি। না কোনো দিবসে, আর না বিবাহবার্ষিকীতে। স্বামী যেমন রণভূমে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে লড়তেন, আফিয়াও তখন নিজের সকল সাধ, আহ্লাদের মায়া ত্যাগ করে দুই ছেলেকে আগলে রাখতেন।

ছোটো বউ শিরীন, শাশুড়ির সঙ্গে বালিকার মতো ঝগড়া করা এই নারীটির জীবনও ত্যাগের মহিমায় ভরপুর। অল্পবয়সে স্বামী হারিয়ে শ্বশুরবাড়িতে দুটি কন্যা নিয়ে টিকে রইলেন। জায়ের সংসারে হীনম্মন্যতার শিকার হতে চাননি বলেই দুধের বাচ্চাকে রেখে চাকরিতে ছুটলেন। বাচ্চাদুটো না পেল বাবার কাঁধ, আর না পর্যাপ্ত মায়ের কোল মিলল। সকলের আদরে, আহ্লাদে বেড়ে উঠলেও বাবা-মায়ের কমতি তাদের অপূরণীয়। তাতে মায়ের দোষ ওরা দেয় না। ছোটোবেলা মাকে ঠিকমতো না পেয়ে শাওন, শোভা অভিমান করত। মায়ের মমতার তৃষ্ণায় পিতৃহীন মেয়ে দুটোর মুখ শুকিয়ে থাকত। মায়ের বুকেও কী কম যন্ত্রণা হতো তখন! বড়ো হয়ে ওরা বুঝতে পেরেছে মা যা করেছেন, ওদের জন্যই করেছেন। সন্তানদের নিয়ে আত্মসম্মানের সঙ্গে মাথা তুলে বাঁচার জন্যই সকল সাধকে বিসর্জন দিয়েছেন।

এ বাড়ির প্রতিটি দেয়াল জানে, ওদের রোজ হেসে খেলে কাটানোর পেছনেও দুঃখ লুকানোর সুপ্ত বাসনা আছে। তারা হাসির আড়ালে মনের ব্যথা লুকিয়ে নিতে জানে। তারা প্রত্যেকেই দক্ষ অভিনেতা। তাই নিশান্তের আহত হবার খবরে দীপশিখায় ক্ষত সৃষ্টি হলেও প্রত্যেকে নিজেদের ইতিবাচকতা দ্বারা সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করল। পারল না দীপশিখার নতুন সদস্যটি। অর্থাৎ নিশান্তের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী। যার সেনা পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয় থাকলেও তাদের মতো কঠোর মনোবল কখনোই ছিল না।

নরম মনের, সরল মানসিকতার মেয়ে মেহযাবীন। তাকে যে কেউ আবেগ দিয়ে দুর্বল করে দিতে পারে। ঠিক যেমনটা বাবা-ভাই মিলে আবেগে আক্রান্ত করে নিশান্তের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিলো। বুদ্ধিমতি হলেও সে শক্ত মানসিকতার নয়। র’ক্ত, ক্ষ’ত, কাটাছেঁড়ায় তার ফোবিয়া আছে। তাই যখন নিশ্চিত হলো নিশান্ত আহতদের একজন, তখন না চাইতেও সে অস্থির হয়ে গেল। শত্রুর ক্ষতিও সে জ্ঞানত চায় না। সেখানে না মানতে চাইলেও নিশান্ত তার স্বামী। সর্বদা খোঁচা মারতে প্রস্তুত ব্যক্তিটার জ্বালায় সে অপ্রসন্ন হলেও তার মরণাপন্ন অবস্থার কথা শুনে যাবীন স্থির থাকতে পারল না। ভারী আবহ ওকে কোনঠাসা করে ফেলল। আবেগের সবটুকু সমর্পণ ঠোঁটে ধারণ করে যাবীনের হাতে চুমু খেয়ে নিশান্ত শেষ যে বাক্যটি উচ্চারণ করেছিল, থেকে থেকে সেই কথাটাই বারবার মনের মাঝে আন্দোলিত হতে লাগল।

“আমি হারিয়ে গেলেও আমার স্পর্শকে কোনোদিন ভুলে যেও না।”

নিশান্তের স্পর্শ কী সে ভুলতে পারবে? কক্ষণো না। কৈশোরবেলার চড়টা যেমন ভোলেনি, তেমনই গতকালের চুমুটাও এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারছে না। ধূর্ত নিশান্ত জানত কীভাবে বউয়ের মনের মাঝে ঢুকে কোন্দল তৈরি করতে হবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অপারেশনে নামার আগেও বিরাট কোন্দল লাগিয়ে গেছে। সাধেই কী যাবীন ওকে জাদরেল মিলিটারি বলে! কোন্দলের কারণেই হোক কিংবা বৈবাহিক অথবা মানবিক কারণে, মেহযাবীন নিশান্তের কাছে যেতে চাইল। তার অবস্থা সম্পর্কে জানতে মরিয়া হলো। তবে সেদিন নিশান্তের কাছে তার বাবা ব্যতীত আর কেউ যেতে পারল না। সারাটা দিন সকলে দুরুদুরু বুক নিয়ে প্রতিক্ষায় রইল। রাতে নিশান্তের হাতে অপারেশন করা হলো। সারারাত অবজারভেশনে রেখে পরদিন সকালে পরিবারের সদস্যদের দেখা করার অনুমতি দেওয়া হলো।

শুরু থেকেই নিশান্তের জ্ঞান ছিল। আহত হবার পরেও সে অজ্ঞান হয়নি। অপারেশনের সময় তাকে এনেস্থিসিয়া দেওয়া হয়। এনেস্থিসিয়া ও কড়া ডোজের ওষুধের প্রভাবেই তার দেহ অসাড়, বিবশ। শালিক, চডুই ও কাক ডাকা শহুরে সকালে বাড়ির সদস্যরা দেখা করতে এলো। আফিয়া কান্নাকাটি করে অস্থির। শোভা ও অনন্ত পর্যন্ত তাদের গম্ভীর, রাগী ভাইয়ার নাজেহাল অবস্থা মানতে না পেরে বিমর্ষ হয়ে গেছে। নিশান্ত উলটো হাসিমুখে সবাইকে সান্ত্বনা দিলো।

শোভা বেডের পাশে বসে কান্না চেপে বলল, “তোমাকে এভাবে মানায় না, বড়ো ভাইয়া। জলদি সেরে ওঠো। ধমক দিলে কলিজায় কাঁপা-কাঁপি শুরু হবে এতটা সুস্থ হও। আমার দুর্বল ভাইয়া চাই না। আমার গম্ভীরমুখো কঠিন ভাইয়া-ই বেস্ট।”

অনন্তও গোমড়ামুখে পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। শোভার কথায় তার ভাই সত্তা ক্ষেপে গিয়ে বলল, “তুই বলতে চাস আমি বেস্ট ভাইয়া না? আমার ধমকে তোর কলিজা কাঁপে না?”

শোভা কান্না চেপেই ড্যাম কেয়ার ভঙ্গিতে জবাব দিলো, “চোখের পাতাও কাঁপে না।”

অনন্ত রাগ নিয়ে বলল, “ভাইয়া, জলদি সুস্থ হও। তোমার কাছে কলিজা কাঁপানো ধমক শিখব। এরপর একটা সেন্টার খুলব। সাইনবোর্ডে লিখে দেব ‘এখানে নিরীহ মানুষদের সুলভ মূল্যে কলিজা কাঁপানো ধমক শেখানো হয়’। ব্যাস! আমার বিজনেস ফকফকা।”

শোভা সে কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেলল। নিশান্ত দুর্বল ও ধীর সুরে একটা কলিজা কাঁপানো বাক্য উচ্চারণ করল, “ফাজিলের দল! দূর হ চোখের সামনে থেকে।”

নিশান্তের মন মেজাজ ভালো নেই। একদম ভালো নেই। সকাল থেকে একটা মুখ দেখার অপেক্ষায় আছে সে। একে একে সকলেই দেখা করল, অথচ আল্লাহর সেই বান্দির দেখা নেই। নিশান্ত কী তার জীবনে এতই ফেলনা! গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি শুনেও সে মুখ ফিরিয়ে আছে! স্ত্রী হিসেবেও কী তার উপস্থিত থাকা উচিত ছিল না! প্রতিটা মিনিটে নিশান্তের মেজাজ খারাপ বাড়তেই লাগল।
আরও পাঁচ মিনিট পর একটি শুষ্ক মুখ দরজার আড়াল থেকে উঁকি দিলো। ধীরপায়ে কেবিনে ঢুকে গলা খাকারি টানল। নিশান্ত চোখ বুজেই তার উপস্থিতি অনুভব করল। হাসপাতালের গুমোট, ঔষধি গন্ধের মাঝে একটি মিষ্টি মেয়েলি সুবাসে যেন ওর মেজাজ ক্রমেই স্থির হয়ে এলো। মেহযাবীন নীরবতাকে মিহি সুরে আচ্ছাদিত করে বলল, “আপনি কেমন আছেন?”

সেই কণ্ঠে আবেগ, উৎকন্ঠা নাকি দায়সারাভাব কোনটা ছিল নিশান্তের দুর্বল মস্তিষ্ক ধরতে পারল না। সে চোখ খুলে তাকাল। দৃষ্টিগোচর হলো একটি নির্জীব মুখ। যা ওর মনকে বৃষ্টি সিক্ত ফসলি জমির মতো সজীব করে তুলল। নিশান্ত ইশারায় মেহযাবীনকে বেডে বসতে বলল। আহত, অসুস্থ ব্যক্তির আবদার বলেই বোধহয় মেহযাবীন তা ফেলল না। আলতো করে পাশে বসল।

নিশান্ত ওর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করল, “নিজে থেকেই এলে? নাকি কেউ জোর করে পাঠাল?”

মেহযাবীন বিরূপ চোখে চাইল। বলল, “কেউ পাঠাবে কেন? আমিই এসেছি।”

“কেন এসেছো?” কাট কাট স্বরে জানতে চাইল নিশান্ত।

যাবীন অবাক গলায় বলল, “আসব না! আমি শত্রুরও অনিষ্ট চাই না। সেখানে আপনি তো…”

“আমি কী?”

মেহযাবীন চুপ করে গেল। সে বুঝে গেল নিশান্ত আসলে কী শুনতে চাইছে। চালাকের সঙ্গে চালাকি করার সুযোগটা সে-ও ছাড়ল না। ত্যারচা কণ্ঠে বলল, “আমার বৈধ বেয়াই।”

নিশান্তের ঠোঁটে হাসি ফুটল। স্মিত কণ্ঠে বলল, “বৈধ শব্দটা স্বীকার করলে তবে!”

মেহযাবীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “অস্বীকার করার উপায় থাকলে তখন নিশ্চয়ই করব।”

নিশান্ত সে কথায় পুনরায় মুখ বেজার করল। চোখ বুজে গম্ভীর গলায় বলল, “কী ভেবেছিলে? আমার কিছু হয়ে গেলে সম্পর্ক থেকে নিস্তার পেয়ে যাবে?”

“কিছুই ভাবিনি। আপনি চুপচাপ শুয়ে বিশ্রাম নিন।”

নিশান্ত চোখ মেলে চাইল। মেহযাবীন উঠে যেতে চাইলে বাঁ হাত বাড়িয়ে ওর হাত ধরে ফেলল। বলল, “প্রাণ থাকতে তোমায় আমি ছাড়ছি না। মরে গেলে চলে যেয়ো। তখন আর আফসোস থাকবে না। জান্নাতে আমার সত্তোরজন হুর অপেক্ষায় থাকবে।”

মেহযাবীন নাক ফুলিয়ে, কপাল কুচকে তাকাল। ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, “ওহ তাই বলুন, সত্তোরজনের জন্য বেশ উদগ্রীব আপনি!”

নিশান্ত চোখ বুজে বুকভরে শ্বাস নিয়ে বলল, “একজনের জন্য তার চেয়েও বেশি বোধহয়।”

চলবে…
ছবি: নুসাইবা আরা প্রান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here