অসম্ভবেও আমার তুমি নুসরাত সুলতানা সেজুথি পর্ব–০৪

0
98

#অসম্ভবেও আমার তুমি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–০৪

তোমার গালে এই দাগ কিসের??

আবরারের চোখে মুখে উদ্বীগ্নতা।স্নিগ্ধার ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের স্পষ্ট ছাপ।বাড়ি ফিরেই স্নিগ্ধার এমন চেহারায় অস্থিরতা কয়েকশ গুন। স্নিগ্ধা উত্তর দিলোনা। উল্টে নিজের থেকে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো আবরার।
কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তার পুরো মনোযোগ লেগে আছে স্নিগ্ধার ফর্সা গালে।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আবরারকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথা নিচু করে নিলো স্নিগ্ধা।

“” আজ তনয়া তাকে মেরেছে,,,এ নিয়ে তনয়ার ওপর তার বিন্দুমাত্র ক্ষোভ নেই,,,,হ্যা আছে ঘৃনা,, আর তার পুরো টাই এই নিকৃষ্ট লোকটার ওপর।

স্নিগ্ধার থেকে উত্তর না পেয়ে এগিয়ে এসে ওর দু বাহু চেপে ধরলো আবরার। বেশ ব্যাতিব্যস্ত হয়ে বললো,,

— কে মেরেছে তোমায়?? কি হলো পরি বলো,,,কে গায়ে হাত তুলেছে তোমার??
এবারো আবরারের হাত ঝাড়া মারলো স্নিগ্ধা। ক্রুদ্ধ গলায় বললো,
— যে মেরেছে মেরেছে,,,তাতে আপনার কি?

— আমার কি মানে?? তুমি আমার বউ,,তোমার গায়ে একটা টোকাও পরতে দিতে পারিনা আমি,,বলো কে মেরেছে তোমায়,কার এত স্পর্ধা।
দৃঢ় গলায় জবাব দেয় আবরার।
আবরারের এমন উদগ্রীবতা দেখে স্ফীত হাসলো স্নিগ্ধা।
“” কি বলছে এই লোক,,,একটা টোকাও পরতে দেবেনা? অথচ কাল থেকে তার ওপরে প্রত্যেকটা নির্যাতন নিজ হাতে করেছে লোকটা। খারাপ যা কিছু ঘটছে তার সব কিছুর জন্যেই দ্বায়ী এই লোক।

স্নিগ্ধার চুপ থাকার প্রেক্ষিতে ডান ভ্রু নাঁচালো আবরার।

— কি হলো পরি উত্তর দাও?

আবরারের সামনে থেকে উল্টো ঘুরে গেলো স্নিগ্ধা। ভাঙা গলায় বললো,
— যেই মারুক,,বলবোনা আমি। শুধু এটকু শুনে রাখুন আজ এর জন্যেও আপনিই দ্বায়ী।

স্নিগ্ধার কথায় আবরারের বুঝতে অসুবিধে হলোনা এটা তনয়ার কাজ।
ভাবতেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আবরারের। এত বড় স্পর্ধা ওই মেয়ের,,,
স্নিগ্ধাকে পেছনে রেখেই রুম থেকে একিভাবে দরজা টেনে বেরিয়ে গেলো আবরার। আর উল্টো ঘুরে থাকা অবস্থাতেই হতাশ ভাবে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধা।
,
,
,

— তনয়া ??
রুমে আবরারের অগোছালো কাপড় ভাজ করছিলো তনয়া,,,আবরারের আওয়াজ পেতেই পিছু ফিরলো সে। দরজা থেকে সরে কামড়ার ভেতরে এসে দাড়ালো আবরার।
আবরারের রক্তিম চোখ নজরে আসতেই তনয়ার বোধগম্য হলো আবরার রেগে আছে। কিন্তু আজকের রাগের কারণ সম্পর্কে অবগত না থাকায়,, সেসব নিয়ে না ভেবে তনয়া ঠোঁটে সামান্য হাসি এলিয়ে বললো

— আপনি কখন এলেন?? আমিতো টেরই পাইনি।

এগিয়ে এসে তনয়ার সামনে দাড়ালো আবরার। কোমড়ে হাত ঠেকিয়ে বললো
— আপনি স্নিগ্ধার গায়ে হাত তুলেছেন??

প্রশ্ন শুনে বিস্ময়ের সাথে চোখ কপালে উঠে এলো তনয়ার। তার মানে এই মেয়ে কান ভাঙিয়েছে তার স্বামীর? তাও অফিস থেকে ফিরতে না ফিরতেই??
তনয়াকে চুপ দেখে আবরার কপাল কুঁচকে বলে উঠলো,,
— কি হলো কিছু জিজ্ঞেস করছি আপনাকে?

খানিকটা ঘাবড়ালো তনয়া। কোনও রুপ
নিজেকে সামলে স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো,,,
— হ্যা মেরেছি।

রাগ হলেও আবরার পুনরায় শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করে,,
— কেনো মেরেছেন??

হাতের কাপড় রেখে আবরারের দিকে তাকায় তনয়া। স্থির দৃষ্টিতে দৃঢ় গলায় বলে ওঠে,
— মেরেছি বেশ করেছি,,আরো মারবো আমি,,দরকার পরলে মারতে মারতে শেষ করে ফেলবো ওই মেয়েকে। ও আমার সংসার ভাঙতে এসেছে,, কেড়ে নিচ্ছে আপনাকে আমার থেকে আবরার।

কথাগুলো এতোটাই জোরালো ভাবে বললো তনয়া যে ক্রোধে এবার তনয়ার গলা চেপে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরলো আবরার। মুহুর্তেই শ্বাস আটকে ছটফট করতে শুরু করলো তনয়া। হাত দিয়ে ঠেলে বৃথাচেষ্টা করতে লাগলো আবরারের হাত সরাতে,,
,
,

—- আরেকবার এই কথা উচ্চারণ করলে আপনার জ্বিভ টেনে ছিড়ে নেবো,,আমি।
দাঁতে দাঁত চেপে মৃদূ আওয়াজে কথাগুলো বলে তনয়াকে এক ধাক্কায় বিছানার ওপর ছুড়ে ফেলল আবরার। সাথে সাথেই গলায় হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে হাপাতে শুরু করলো তনয়া। সাদা দেয়ালের দিক থেকে ঘাড় বাকিয়ে
তনয়ার দিকে ফিরে তাকালো আবরার। বরফ কন্ঠে বললো,
—- আমি আপনার কোনও দিন ছিলামই না তনয়া,,,সেটা আপনি খুব ভালো করে জানেন। একটা ভিত্তিহীন সম্পর্কের দোহাই দিয়ে আরেকটা নির্দোষ মেয়ের ওপর অত্যাচার করার অজুহাত খুঁজবেন না। আমার পক্ষে আপনাকে কখনও ভালোবাসা সম্ভব নয়।

আবরারের শেষের কথায় ধড়ফড়িয়ে উঠে পরলো তনয়া। দু হাত দিয়ে আবরারের শার্টের কলার চেপে ধরলো। আবরারের চোখের দিকে কান্নাভেজা চোখে তাকিয়ে বেশ উদ্বেগ নিয়ে বললো,,

—- আপনি কেন আমাকে ভালোবাসেন না আবরার।কেন?? কি কমতি আছে আমার মধ্যে?? আমিতো আপনার মন পাওয়ার জন্যে সব করছি,,ভবিষ্যতেও আপনি যা বলবেন আমি ঠিক তাই তাই করবো,,মেনে নিন না আমাকে আপনার স্ত্রী বলে,প্লিজ আবরার।

তনয়ার দিকে শক্ত চোখ মুখে তাকিয়ে নিজের কলার থেকে ওর হাত ছাড়িয়ে নিলো আবরার। এবার অন্যদিক তাকিয়ে বললো,

—- সেটা অসম্ভব।

উত্তরে তেঁতে উঠলো তনয়া। গলার স্বর বড় হয়ে এলো তার,,,

— সম্ভব,,সব সম্ভব আপনি চাইলেই সম্ভব। আপনি যদি একজন মালির মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করতে পারেন তবে আমাকে কেন ভালোবাসতে পারবেন না?? আমিতো…

হাত উঁচু করে থামিয়ে দিলো আবরার। বললো

— আমি জানি আপনি কার মেয়ে,,,,আমাকে মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে স্নিগ্ধার কথা যখন তুললেন -ই তখন বলেই ফেলি, ওকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি,,তাই ও আমার সব কিছু,,, কিন্তু আপনাকে আমি বিয়ে করলেও বিয়েতে ভালোবাসা ছিলোনা।

হতবাক হয়ে আবরারের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো তনয়া। ফিচেল গলায় বললো,

— এতোদিনে এক ফোটাও ভালো বাসেন নি আমায়??
গম্ভীরমুখে জবাব দেয় আবরার,
— নাহ।
তনয়া আবার জিজ্ঞেস করে ওঠে,
— আপনার জীবনে আমার কোনও জায়গা নেই?

— নাহ।
একিভাবে উত্তর দেয় আবরার।দু পা পিছিয়ে যায় তনয়া। তনয়ার মুখ দেখে আবরারের খারাপ লাগা কাজ করার প্রেক্ষিতে বিষয় টা এড়াতে রুম থেকে বেরোনোর উদ্দেশ্যে হাটা ধরে সে,,

দরজা অব্দি আসতেই পেছন থেকে তনয়া বিদ্রুপ করে বলে ওঠে,

— এত ভালোবাসা দেখাচ্ছেন,অথচ সেই মেয়ে তো আপনাকে তিল পরিমান সন্মান ও দেখায় না আবরার।

মুচকি হেসে তনয়ার দিকে ফিরে তাকালো আবরার। শান্ত স্বরে জবাব দিলো,
—- সত্যিটা জানার পর হয়তো বাসবে।

মুহূর্তেই শীতল হয়ে এলো তনয়ার হাত -পা। চোখে মুখে ঘাবড়ে যাওয়ার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠলো, বেশ উদ্বেগ নিয়ে বললো,,

—- সেটা আমি কোনও দিনও হতে দেবোনা,,,আমি ওকে কিছুতেই আপনার ওপর ভাগ বসাতে দেবোনা আবরার, আপনি শুধুই আমার।

তনয়াকে পুনরায় কিছু বলার প্রত্যাশায়
দাঁত চিবিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেলো আবরার।ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে নিলো তনয়া,,,তনয়ার ভীতিকর চেহারা দেখে থেমে গেলো আবরার।
চোখ বন্ধ করে ফোস করে এক নিঃশ্বাস ছেড়ে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলো। এরপর তনয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ শান্ত স্বরে বললো,,

— দেখুন,,আজ অব্দি আপনাকে কখনও অসন্মান করিনি আমি,, করতে চাইওনা।তাই ভালো হবে নিজের সীমার মধ্যে থাকার চেষ্টা করুন। এই বাড়িতে ইচ্ছে মত থাকুন,ঘুরুন ফিরুন শপিং করুন,,যা খুশি আপনি করতে পারবেন আমি কিচ্ছু বলতেও আসবোনা।
কিন্তু

এটুকু বলে থামলো আবরার। তনয়ার সামনে ডান হাতের তর্জনী আঙুল উঁচিয়ে শাষানো স্বরে বললো,,

“” কিন্তু আমার স্নিগ্ধার দিকে ভুল করেও চোখ তুলে তাকাবেন না।
ফল খুব খারাপ হবে তনয়া আই প্রমিস।
কথাগুলো বলে দ্রুত পায়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো আবরার। তীব্র রাগ,,দুঃখ আর ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে,, পা দিয়ে কাঠের সেন্টার টেবিলের কোনায় এক লাথি মারলো তনয়া। ধুপ করে বসে পরলো চেয়ারে,,বহু প্রতীক্ষার পরে যে স্বামী সংসার হাতে পেয়েছে তা কিভাবে হাতছাড়া হতে দেবে? আবরারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছলো তনয়া,,কন্ঠে প্রগাঢ়তা আর ক্রোধ নিয়ে বলতে শুরু করলো,,,

— এতো সহজে কি করে ওই মেয়েকে আমি ছেড়ে দেবো আবরার। ওর জন্যে আজ তুমি আমার গায়ে প্রথম বার হাত তুললে,,,ওর শেষ আমি দেখেই ছাড়বো।

,
,
,

জোর করে স্নিগ্ধাকে বুকের মধ্যে নিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে আবরার। প্রবল অস্বস্তি আর রাগে ছেয়ে যাচ্ছে স্নিগ্ধার শরীর। তবুও আবরারের শক্তির সাথে হার মেনে চুপচাপ মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে সে। আবরার একবার হাত ঢিলে করলেই ছুট লাগাবে সেই সুযোগের অপেক্ষায় স্নিগ্ধা। কিন্তু হচ্ছে তার বিপরীত। আবরার নিজের বুকের সাথে এতটাই শক্ত করে তাকে চেপে ধরেছে যে নিঃশ্বাস নেয়াই দুঃসাধ্য এখন।
স্নিগ্ধার কানের কাছে মুখ নিয়ে এলো আবরার। গুমোট পরিবেশ কাটলো আবরারের ফিসফিস আওয়াজে,

— জানো পরি,,,তোমাকে প্রথম আমি কোথায় দেখেছিলাম??

উত্তর দিলোনা স্নিগ্ধা। জবাবে আবরার নিজেই বললো
— তোমাদের উঠোনে,, তুমি তোমার ভেজা চুল মুছছিলে তখন। আমি গাড়ি করে যাচ্ছিলাম হুট করে মনে হলো কি জানো….
একটা জ্বলজ্যান্ত পরী দাড়িয়ে আছে ওখানে,,,চট করে গাড়ির ব্রেক কষেছিলাম আমি,,,,গভীর ভাবে দেখছিলাম তোমাকে। কি সুন্দর তুমি,,,একেবারে হুরের মতো,,,

প্রথম দিকে বিরক্ত হলেও কথার এ পর্যায়ে আর চুপ থাকতে পারলোনা স্নিগ্ধা।বেশ ক্ষিপ্ত স্বরে বললো

— এরপরে আমার থেকেও সুন্দরী কাউকে পেলে তাকে বিয়ে করে নেবেন তাইনা??
অবশ্য আপনি পারবেন ও,,আপনার প্রতি এ বিষয়ে আমার পুরো বিস্বাস আছে,,,,চরিত্রহীন লোক একটা।
স্নিগ্ধার কথায় ওর থুতনী ধরে বুক থেকে ওপরে মুখ ওঠালো আবরার। স্নিগ্ধার চোখে চোখে রেখে জবাব দিলো,,
—- আমি চরিত্রহীন নই,,,,আমি সাইকো, উন্মাদ, পাগল,শুধুমাত্র তোমার প্রেমে।
রাগে গর্জে ওঠে স্নিগ্ধা। মুখ খিচে
কিছু বলতে নেয়ার আগেই পাশ থেকে আবরারের ফোন বেজে উঠলো,,

এবার স্নিগ্ধাকে এক হাতে ধরে অন্যহাত দিয়ে ফোন তুললো আবরার। স্নিগ্ধার বাবার নম্বর স্ক্রিনে দেখে স্নিগ্ধার দিকে একবার তাকালো,স্নিগ্ধা নিজের গা থেকে আবরারের হাত ছাড়াতে ব্যাস্ত।
চুপচাপ স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বারান্দার দিকে এগোলো আবরার। বিষয় টা বেশ অদ্ভূত ঠেকলো স্নিগ্ধার কাছে।

“” কে ফোন করেছে যে এভাবে উঠে গেলো?? পরমুহূর্তে ভাবলো,
‘ ধুর যেই ফোন করুক তাতে আমার কি,,

,
,

— হ্যালো সাহেব…

— বলুন।

আবরারের কথায় মজিদ নম্র ভাবে বলে ওঠে,

— দুঃখিত সাহেব এত রাতে আপনাকে ফোন করে বিরক্ত করলাম।

মুখের ভঙ্গি পাল্টালো না আবরারের।বলল,
—- সমস্যা নেই। কিছু বলবেন ??

জবাবে মজিদ আস্তে করে বলল

— হ্যা মানে,,,সাহেব আমার মেয়েটা কেমন আছে??

আবরার গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,
— ভালো

চুপ মেরে গেলো মজিদ। খানিক বাদে গলায় কিছুটা দৃঢ়তা নিয়ে বললো

—- সাহেব একটা কথা ছিলো,যদি অনুমতি দিতেন।

বাম কান থেকে ফোন নামিয়ে ডান কানে ধরলো আবরার। স্বাভাবিক গলায় উত্তর দিলো,
— বলুন।

মজিদ এবার বেশ জোর ধ্বনি নিয়ে বললো,

—- আসলে সাহেব কাল তো আপনাদের বিয়ের তিন দিন পূরন হবে।তো আমাদের এখানে নিয়ম আছে,,তিন দিনের মাথায় মেয়ে-জামাই কে শ্বশুর বাড়িতে আসতে হয়,আপনি যদি….একবার স্নিগ্ধাকে নিয়ে আসতেন…

আবরার ভ্রু কুঁচকে বললো,
— আর যদি এই নিয়ম পালন না হয় তো..??

মুখ কালো হয়ে এলো মজিদের।তবুও আবরার কে রাজি করাতে মৃদূ গলায় জবাব দিলো,

—– সাহেব এতে আপনাদের সংসারের কল্যান হবে।

উত্তরে কিছুক্ষন চুপ থাকলো আবরার। কিছু একটা ভেবে বললো,
— ঠিক আছে,দেখছি।

মজিদ কে আর কথা বাড়াতে দিলোনা। লাইন কাটলো তাৎক্ষণিক। রুমে এলো । স্নিগ্ধা বিছানায় পা দুলিয়ে বসে সন্দীহান চোখে দেখছে তাকে। আবরার ও তাকালো ভ্রু বাঁকিয়ে

— এভাবে কি দেখছো?

স্নিগ্ধার উত্তর,

— আপনাকে…!

এগিয়ে এলো আবরার। মৃদূ হেসে বললো
— ওয়াও,দ্যাটস গ্রেট।
আমিও তো তাই চাই তুমি আমাকে দেখো আর আমি তোমাকে।

আবরার ঝুঁকে আসায় মাথা টাকে পিছিয়ে নিলো স্নিগ্ধা।ক্ষিপ্তভাবে বললো

— ফালতু কথা ছাড়া কিছুই জানেন না আপনি। আপনাকে দেখে অবাক লাগে আমার,মানুষ এতো টা খারাপ হয়?

— মানে?( ভ্রু বাকিয়ে)

স্নিগ্ধা ভ্রু নাঁচিয়ে বললো,
— মানে,, এতো ফিসফিস করে কার সাথে কথা বলছিলেন আমি বুঝিনা??

আবরার অবাক হওয়ার ভান করে বললো,,
— তাই তুমি বোঝো?? তা কি বুঝেছো তুমি?

স্নিগ্ধা উদ্বেগ হীন গলায় জবাব দেয়,,
— নিশ্চয়ই কোনও মেয়ে ছিলো,আপনি দুর্দান্ত পর্যায়ের মেয়েবাজ লোক কিনা।

কথাটায় শব্দ করে হেসে উঠলো আবরার। সোজা হয়ে দাড়িয়ে বললো,,

—- মেয়ে হলেও বা?তাতে তোমার কি?

স্নিগ্ধা মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো
— আমার কি? কিছুইনা।

ছোট করে নিঃশ্বাস ফেললো আবরার। বললো,
— হুম। তবে সত্যি বলতে কোনও মেয়ে নয়।ফোন টা তোমার বাবার এসেছিলো।

বাবার কথা শুনতেই চকচক করে উঠলো স্নিগ্ধার মুখচোখ।উত্তেজিত হয়ে বললো,

— বাবা! কি বললো বাবা? কেমন আছে ওরা?

আবরার শান্ত ভাবে বললো,
— ভালো।

স্নিগ্ধা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে,,
— আর কি বললো?

এবারো স্বাভাবিক ভাবে আবরার বলে ওঠে,
— কাল আমাদের যেতে বললো তোমাদের বাড়িতে।

স্নিগ্ধা উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
— যাবো আমরা?

আবরার শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে জবাব দিলো,
— নাহ।

চট করে উঠে দাড়ালো স্নিগ্ধা। বড় বড় চোখ করে বলে উঠলো,
— কেন যাবোনা আমরা??

সরু চোখে তাকালো আবরার,,বললো,
— তুমি আমাকে চোখ রাঙাচ্ছো?

চট করে চোখ নামিয়ে নিলো স্নিগ্ধা। বুঝতে পারলো এভাবে লাভ হবেনা। তাই মুখে কাঁদোকাঁদো ভাব এনে বললো,,
— প্লিজ আমাকে নিয়ে চলুন একদিনের জন্যে হলেও প্লিজ।

স্নিগ্ধার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আবরার। জ্বিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললো,,

— তুমি যেতে চাও?

খুব জোরে দুবার মাথা ঝাঁকালো স্নিগ্ধা। যার অর্থ “” সে যেতে চায়”
স্নিগ্ধার থেকে চোখ সরিয়ে আবরার ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ালো। আয়নায় ভেসে থাকা স্নিগ্ধার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে জবাব দিলো,,
— বেশ তোমাকে আমি নিয়ে যাবো,তবে একটা শর্তে।

এগিয়ে এলো স্নিগ্ধা,,সন্দেহী ভাবে তাকিয়ে বলে,,
— কি শর্ত??

স্নিগ্ধার সামনে থেকে সরে এসে বিছানার ওপর পা দুলিয়ে বসলো আবরার।
হাতের ফোন রেখে চুল গুলোকে ওপরের দিকে ঠেলে দিলো।উত্তর না পাওয়ায় ধৈর্য হারিয়ে ওর দিকে এগিয়ে এলো স্নিগ্ধা,,

— বলুন কি শর্ত??

— আগে বলতে হবে তুমি রাজি কি না??

— আশ্চর্য, না শুনে বলবো কি করে?

— উত্তর আগে চাই আমার।

ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধা। এত ঢং দেখে মেজাজ ভীষণ রকম খারাপ হচ্ছে ।শরীরের শিরায় শিরায় রাগ ক্রোধ সব দৌড়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু একবার যদি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের বাড়িতে পৌঁছাতেই পারে তাহলেই কেল্লাফতে। আর এই লোকের মুখ ও- দর্শন করবেনা সে। তাই নিজের স্বার্থে এখন এর শর্ত মেনে নেয়াই উপযুক্ত হবে।

স্নিগ্ধার মুখের সামনে দু আঙুলে নাঁচিয়ে চুটকি বাজালো আবরার। তাৎক্ষণিক ধ্যান ভাঙলো স্নিগ্ধার।আবরার ভ্রু নাঁচিয়ে বললো,

— কি ভাবছো?? রাজি কিনা বললেনা তো।

থতমত খেলো স্নিগ্ধা। এক দমে বললো

— রাজি রাজি। বলুন,

এবার এক হাত দিয়ে স্নিগ্ধার কোমড় জড়িয়ে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো আবরার। আস্তে করে মৃদূ গলায় বললো,

— শর্ত এটাই,,, আজ রাতে তোমাকে ভালোবাসতে দিতে হবে….

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here